Tuesday, May 26, 2020

ঈদ মোবারক বলা কি বিদআত?

👉 ঈদের শুভেচ্ছায় ব্যবহৃত বাক্য এবং ‘ঈদ মোবারক’ বলার বিধান (সংশয় দূর করুন)

উত্তর:
মুসলিমদের জাতীয় জীবনে অনাবিল আনন্দের বার্তাবাহী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল ঈদ। ঈদ আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা ও কৃতজ্ঞতার মাধ্যম। মানব জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে নতুন ভাবে পথ চলার অনুপ্রেরণা। দূরকে কাছে করার এবং সম্পর্কগুলোতে নতুনত্ব দেয়ারে এক চমৎকার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে ছোট একটি শুভেচ্ছা বার্তা, একটি বাক্য বা মেসেজই বিরাট ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এ জন্য কোন বাক্যটি ব্যবহার করা উচিৎ আর কোনটি উচিৎ নয়-এ বিষয়ে আমাদের অনেকেরই মাঝে একটা দ্বিধা বা সংশয় কাজ করে। তাই বিষয়টি পরিষ্কার উদ্দেশ্যে এ সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি তুলে ধরা হল:

❒ ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি এবং শরিয়তে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ঈদ উৎসব উপলক্ষে মুসলিমদের একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো বৈধ। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ সম্পর্কে নির্দেশনাা মূলক কোন (মারফু) হাদিস আসে নি। বরং সাহাবি ও তাবেঈ প্রমুখ সালাফ (পূর্বসূরীদের) থেকে সহিহ সনদে প্রমাণিত হয়েছে যে, ঈদের দিন একে অপরের সাথে সাক্ষাত হলে তারা বলতেন: “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” অর্থ: আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (সৎকর্মগুলো) কবুল করুন। যেমন:
حديث محمد بن زياد ، قال : كنت مع أبي أمامة الباهلي وغيره من أصحاب النبي صلى الله عليه وآله وسلم ، فكانوا إذا رجعوا يقول بعضهم لبعض : ( تقبل الله منا ومنكم ) .
মুহাম্মদ বিন যিয়াদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবু উমামা আল বাহেলী রা. এবং অন্যান্য সাহাবিদের সাথে ছিলাম। তারা ঈদ থেকে ফিরে এসে একে অপরকে বলতেন, “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।” [ইবনুত তুরকুমানী হাদিসটি 'আল জাওহারাতুন নাকী হাশিয়াতুল বায়হাকী' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহমদ বলেন, : إسناده جيد এর সনদ ভালো।

আরও বর্ণিত হয়েছে:
أخرج الأصبهاني في الترغيب والترهيب ( 1/251) عن صفوان بن عمرو السكسكي قال : سمعت عبد الله بن بُسر وعبد الرحمن بن عائذ وجبير بن نفير وخالد بن معدان ، يقال لهم في أيام الأعياد : ( تقبل الله منا ومنكم ) ، ويقولون ذلك لغيرهم . وهذا سند لابأس به .
ইসমাইল বিন মুহাম্মদ ইস্পাহানী (মৃত্যু: ৫৩৫) তার বিখ্যাত ‘তারগিব ওয়াত তারহিব’ গ্রন্থে (১/২৫১) সাফওয়ান বিন আমর আস সিকসিকী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর, আব্দুর রাহমান বিন আয়িয, জুবাইর বিন নুফাইর এবং খালিদ বিন মাদানকে বলতে শুনেছি, তাদেরকে ঈদের দিন বলা হত: “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম”। আর তারাও অন্যদেরকে তা বলতেন।” এ সনদেও কোন সমস্যা নেই।

সুতরাং ঈদের দিন একে অপরকে এভাবে দুআ ও শুভেচ্ছা জানানো জায়েজ। তবে তা শরিয়তের আবশ্য পালনীয় ও ইবাদতের কোন বিষয় নয়। এটি সওয়াব ও ইবাদতের বিষয় হলে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে যেতেন। তখন তা পালন করা উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াত এবং হাদিসে ব্যবহৃত শব্দ ছাড়া অন্য শব্দ ব্যবহারে আপত্তি আসতো। যেমন: মুসলিমদের পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যম সালামের গুরুত্ব এবং সালামে ব্যবহৃত বাক্যাবালী সম্পর্কে বহু সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সে কারণে সালাম দেয়া যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও সওয়াবের কাজ তেমনি সালামের জন্য হাদিসের বাক্য বাদ দিয়ে নতুন কোন বাক্য প্রবর্তন করা জায়েজ নয়।

মোটকথা, ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা ইসলামে জায়েজ হলেও এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো নির্দেশনা বা বিশেষ কোন বাক্য ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আসে নি। তবে কেউ যদি সালাফদের অনুসরণে ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম বলে তাহলে নি:সন্দেহে ভালো।

জ্ঞাতব্য, এ দুআটি কেবল ঈদের সাথেই সম্পৃক্ত নয় বরং হজ্জ, উমরা ইত্যাদি যে কোন নেক আমল করার পর তা বলা জায়েজ।

❒ ‘ঈদ মোবারক’ বা ‘ঈদের শুভেচ্ছা/কনগ্রাচুলেশন’ ইত্যাদি বলা কি বিদআত বা গুনাহের?

আল্লামা ‍মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহঃ কে প্রশ্ন করা হয়, ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি এবং এর জন্য কি বিশেষ কোন বাক্য আছে?
তিনি উত্তরে বলেন,
التهنئة بالعيد جائزة ، وليس لها تهنئة مخصوصة ، بل ما اعتاده الناس فهو جائز ما لم يكن إثماً
“ঈদের শুভেচ্ছা জানানো জায়েজ। তবে এর জন্য বিশেষ কোন শুভেচ্ছা বাক্য নেই। বরং মানুষ যে সব বাক্য বলে অভ্যস্ত সেগুলো ব্যবহার করা জায়েজ যদি তাতে গুনাহ না থাকে।”

তিনি আরও বলেন,

“সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়েছে, ঈদের দিন একে অপরের সাথে দেখা হলে তারা বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ কিন্তু শরিয়তে এ বিষয়ে বিশেষ কোনও বাক্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। অতএব লোকসমাজে যে সকল বাক্য ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে সেগুলো যদি শরিয়তে নিষিদ্ধ না হয়ে থাকে তবে সেগুলো ব্যবহার করা জায়েজ। কেননা শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি মানুষের রীতি-নীতির সাথে সম্পৃক্ত। এটা শরিয়তের কোন বিষয় নয়। বরং তা রীতিনীতি ও আভ্যাসগত বিষয়ের অন্তর্গত যা মানুষ নিজেদের মধ্যে প্রচলন করে নিয়েছে।
সুতরাং মানুষ যদি ‘তাকাব্বালাল্লাহ’ অথবা ‘দুআ করি আল্লাহ তোমার ঈদকে বরকত মণ্ডিত করুন’ বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়-যেগুলো বললে পারস্পারিক ভালবাসা বৃদ্ধি পায় এবং নিজেদের মাঝে দূরত্ব দূর হয় তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ এগুলো সাধারণ রীতিনীতির বিষয়।” (শাইখের লেকচার থেকে অনুদিত। উৎস: ইউটিউব চ্যানেল আল ওয়াহদাহ আল ইসলামিয়া আল ঊলা)

এছাড়াও আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. সহ বড় আলেমগণ ঈদ মোবারক (ঈদ বরকতময় হোক) বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহার করে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে কোন আপত্তি করে নি।

পরিশেষে বলব, ঈদের শুভেচ্ছা ও দুআ সম্বলিত বাক্য ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ (আল্লাহ আামদেরও আপনাদের সৎকর্মগুলো কবুল করুন) ব্যবহার করা নি:সন্দেহে উত্তম। কিন্তু ‘ঈদ মোবারক’ (বরকতময় ঈদ), ‘ঈদের শুভেচ্ছা’, ‘কনগ্রাচুলেশন’, বা এ জাতীয় শব্দ/বাক্য ব্যবহার করায় কোন দোষ নেই-যতক্ষণ না তাতে শরিয়াপরিন্থী বা খারাপ অর্থবোধক কিছু থাকে। এ সব বাক্য ব্যবহার করাকে বিদআত, শরিয়া বিরোধী..গুনাহের বিষয় ইত্যাদি বলা হল দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ির শামিল ও অজ্ঞতার প্রমাণ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং বাড়াবাড়ি থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।

লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

Monday, May 25, 2020

রছুলুল্লহ (ছঃ) এর কওলি হাদিসের বানী

♦♦রছুল ছঃ এর ক্বওলী হাদীস (বাণী):

আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (র.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রছুলুল্লহ (ছ.) বলেছেন,
“...যদি (মুসলিমদের) দু’জন স্বাক্ষ্য দেয় যে, তারা (নতুন চাঁদ উদয়ের ব্যাপারে) দেখেছে, তাহলে তোমরা ছওম (রোজা) ও ঈদ পালন কর”। [নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, হাদিস # ২১১৬।]

এখানে রছুল ছঃ দুইজন স্বাক্ষ্যের কথা বলেছেন। রছুল ছঃ বলেননি শুধু মদীনার বর্ডারের ভিতরের দুইজন বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের দু'জন বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের দুইজন। দুইজন বলতে গোটা বিশ্বের যেকোন দুইজন মুসলিম।

আর "তোমরা" বলতে শুধু মদীনার বর্ডারের ভিতরের মানুষ, বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের মানুষ, বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের মানুষকে নির্দিষ্ট করেননি। বরং "তোমরা" বলতে পৃথিবীর সকল মানুষ।

♦♦রছুল ছঃ এর ফে’লী হাদীস (আমল বা কাজ):

হযরত আবু উমাইর ইবনু আনাস (রঃ) হতে বর্ণিত
রছুলুল্লহ (ছঃ) -এর নিকট একদল আরোহী আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রছুলুল্লহ (ছঃ) মানুষকে ছিয়াম (রোজা) ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন প্রাতঃকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন”। [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ১১৫৭, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ১১৫৩, নাসায়ী, মিশকাত-১২৭)]

সংবাদ শোনার সাথে সাথে রছুলুল্লহ (ছঃ) এবং সাহাবাগণ (রঃ) ছিয়াম ভেঙে ফেললেন। সেই কাফেলা কোন দেশ থেকে এসেছে কিংবা কতদূর থেকে এসেছে রছুলুল্লহ (ছঃ) তা জিজ্ঞাসা করেননি। সুতরাং বুঝা গেল, নিজ এলাকায় চাঁদ দেখা না গেলেও দূর এলাকা থেকে আসা সংবাদ রছুলুল্লহ (ছঃ) গ্রহণ করেছেন। এটাও বুঝা গেল, সেই সংবাদ পৌঁছেছে পরদিন দুপুরের পর এবং এত দেরীতে আসা সংবাদও রছুলুল্লহ (ছঃ) গ্রহণ করে ছিয়াম ভেঙেছেন। শুধু তাই নয়, এটাও বুঝা গেল সংবাদ না পৌছালে কি করতে হবে আর পৌছালে কি করতে হবে।

এ থেকে বুঝা যায় বিষয়টি নির্ভর করে সংবাদ পৌছেছে কিনা তার উপর। দুইজন মুসলিমের সংবাদ পৌছালে আমল জরুরী।

এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরে গ্রহণযোগ্য বলেই মদীনাবাসী চাঁদ না দেখার পরও রছুলুল্লহ (ছঃ) অন্য শহর থেকে আসা সংবাদে ছিয়াম ভেঙেছেন। আর শুধু দেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবে অথবা বর্ডারের বাইরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা, এ মর্মে কোন আয়াত বা হাদীস নেই।

বৃটিশের দেয়া জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার একপাশে লাইলাতুল ক্বদর একরাতে আর অপর পাশে লাইলাতুল ক্বদর তার পরের রাতে, এটা হতে পারেনা। কারণ কুরআন তো দুই রাতে নাযিল হয়নি, বরং একরাতেই হয়েছে। তেমনি জাতিয়তাবাদী বর্ডারের একপাশে প্রধান শয়তানকে যেদিন বাঁধা হয়, অপরপাশে তার পরের দিন বাঁধা হয়, এটাও হতে পারেনা। তেমনিভাবে জাতিয়তাবাদী সীমান্তের একপাশে যেদিন ঈদ, অন্যপাশে সেদিন ছিয়াম (রোজা) এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদের দিন ছিয়াম (রোজা) রাখা হারাম।

মুসলিমদের ভূমি একটাই। হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার দিয়ে একক মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করা হারাম। চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে রছুলুল্লহ (ছঃ) দেশের সীমারেখার কোন শর্ত দেননি আমরাও দেই না।

সুতরাং কেউ পালন করুক আর নাই করুক, রমাদনের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে ২ জন মুসলিমের নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌঁছালে তারিখ পহেলা রমাদন হয়ে যাবে। যতদূর পৌঁছাবে ততদূর হবে। কেউ পালন করুক আর নাই করুক, শাওয়ালের চাঁদের ক্ষেত্রে ২ জন মুসলিমের চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌঁছালে পহেলা শাওয়াল বা ঈদের দিন হয়ে যাবে। যতদূর পৌঁছাবে ততদূর হবে ইংশাআল্লহ।  

আল্লাহ শেষরাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন তা কোন দেশের আকাশে?

কুরআন ও রসূল সঃ এর নির্দেশ ও আমল অনুযায়ী যখন দেশ বা জাতীয়তাবাদী সীমান্তের শর্ত বাদ দিয়ে চাঁদের সংবাদ গ্রহনের কথা বলা হয় তখন কিছু ভাই এই প্রশ্ন করে থাকেন।

♦প্রশ্ন♦আল্লাহ তো শেষ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন,,এখন বাংলাদেশে যখন রাত ১ টা বাজে,,আমেরিকা তখন দুপুর ৩ টা, এখন আপনি বলুন আল্লাহ কি এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য বলেছেন নাকি আমেরিকার জন্য সহ?

♦উত্তর:♦ আল্লাহর অবতরণ তো আল্লাহর সিফাত। আল্লাহর সিফাত আর বৃটিশের ভাগ করা সীমান্ত দিয়ে রোজা ঈদের বিধান আলাদা করা দুটি বিষয় কি এক রকমের জিনিস হলো? আমেরিকার শেষ রাত আর বাংলাদেশের শেষ রাত যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি বাংলাদেশেও শেষ রাত সব জায়গায় একই সময় হয় না কিন্তু বালাদেশে রোজা একই দিনে হয়।

আল্লাহর সিফাত নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিৎ নয়। ইমাম মালিক ইবন আনাস, সুফিয়ান ইবন উআয়না, আবদুল্লাহ ইবন মুবারক (র.) প্রমূখ ইমামদের থেকে এই ধরণের বক্তব্য বর্ণিত আছে। এই ধরণের হাদিসগুলো সম্পর্কে তাঁরা বলেন, “কী ধরণের?” - সে প্রশ্ন না তুলে যেভাবে উল্লিখিত হয়েছে সেভাবেই তা মেনে নাও। ইমাম আবু হানিফা(র.)কে মহান আল্লাহর অবতরণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন: ينزل بلا كيف “[মহান আল্লাহ] অবতরণ করেন, কোনোরূপ পদ্ধতি বা স্বরূপ ব্যতিরেকে।”

সহীহ বুখারীতে সিফাত-সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র.) এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন ইবন রজব হাম্বলী(র.) --- “…আমি আবু আব্দুল্লাহকে [আহমাদ বিন হাম্বল(র.)] বললাম, “আল্লাহ কি দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। আমি বললাম, “তাঁর অবতরণ কি ইলম (জ্ঞান) দিয়ে অথবা কী দিয়ে?” তিনি বললেন, “এই বিষয়ে চুপ করো। তোমার কী দরকার এ বিষয়ে? হাদিসে যেভাবে ‘কীভাবে’ বা সীমা ছাড়া বর্ণিত হয়েছে সেভাবে মেনে নাও। তবে কোন আছার বা হাদিস যদি বর্ণিত হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। অথবা যদি কিতাবে বর্ণিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “অতএব, আল্লাহর কোন সদৃশ সাব্যস্ত করো না।” (সুরা নাহল ১৬ : ৭৪) ” ” এর পরে ইবন রজব হাম্বলী(র.) উল্লেখ করেছেন, “ [আল্লাহর] ‘অবতরণ’ বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে, তার উপর নড়াচড়া, স্থানান্তর, আরশ থেকে খালি হওয়া, না থাকা এ সকল কিছু সাব্যস্ত করা বিদআত। এ ব্যপারে গভীরে অনুসন্ধান করা কোনো প্রশংসনীয় কাজ নয়। ”

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানীফা এবং সালাফগণ আল্লাহর সিফাত নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু চাঁদ এবং ঈদের ব্যপারে তারা ফাতওয়া দিয়েছেন।

‘আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া’ নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে-

“পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা রোযা ফরয হবে । চাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নেই । তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌছতে হবে । তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা র:, ইমাম মালিক র: এবং ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল র: এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরয হয়ে যাবে” । (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়ার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল)

[(আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৪৪৩) অথবা (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৮৭১)]

আল্লাহর সিফাত আর বৃটিশের ভাগ করা সীমান্ত দিয়ে রোজা ঈদের বিধান আলাদা করা দুটি বিষয় কখনো তুলনীয় নয়। বৃটিশের দেয়া জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার একপাশে লাইলাতুল ক্বদর একরাতে আর অপর পাশে লাইলাতুল ক্বদর তার পরের রাতে, এটা হতে পারেনা। কারণ কুরআন তো দুই রাতে নাযিল হয়নি, বরং একরাতেই হয়েছে। তেমনি জাতিয়তাবাদী বর্ডারের একপাশে প্রধান শয়তানকে যেদিন বাঁধা হয়, অপরপাশে তার পরের দিন বাঁধা হয়, এটাও হতে পারেনা। তেমনিভাবে জাতিয়তাবাদী সীমান্তের একপাশে যেদিন ঈদ, অন্যপাশে সেদিন রোজা এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।

মুসলমানদের ভূমি একটাই। হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার দিয়ে একক মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করা হারাম। চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে রসূল সঃ দেশের সীমারেখার কোন শর্ত দেননি আমরাও দেই না।

বীন বায রঃ, উসাইমিন রঃ, নাসিরুদ্দিন আলবানি রঃ এর মত

সৌদী গ্রান্ড মুফতী আবুদুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ কে প্রশ্নকরা হলে তিনি বলেনঃ
"كيف يصوم الناس إذا اختلفت المطالع ؟ وهل يلزم أهل البلاد البعيدة كأمريكا واستراليا أن يصوموا على رؤية أهل المملكة لأنهم لا يتراءون الهلال؟
চন্দ্র উদয় স্থলের বিভিন্নতা থাকায় মানুষ কিভাবে রোযা পলন করবে? আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ার মত দূরবর্তী দেশের বাসিন্দারা কি সৌদি আরবের লোকদের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোযা রাখবে? যদিও তারা চাঁদ দেখে নি?
الجواب: الصواب اعتماد الرؤية وعدم اعتبار اختلاف المطالع في ذلك لأن النبي صلى الله عليه وسلم أمر باعتماد الرؤية ولم يفصل في ذلك فيما صح عنه صلى الله عليه وسلم أنه قال : ্صوموا لرؤيته ، وأفطروا لرؤيته ، فإن غم عليكم فكملوا العدة ثلاثي متفق على صحته ، وقوله صلى الله عليه وسلم :রلا تصوموا حتى تروا الهلال أو تكملوا العدة، ولا تفطروا حتى تروا الهلال أو تكملوا العدة والأحاديث في هذا المعنى كثيرة . ولم يشر صلى الله عليه وسلم إلى اختلاف المطالع، وهو يعلم ذلك.
সঠিক কথা হল চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্যতা। এ বিষয়ে উদয়ের ভিন্নতার গ্রহণযোগ্যতা নেই। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদ দেখার নির্ভর যোগ্যতার নির্দেশ দিয়েছেন এর মধ্যে কোন ভিন্নতার কথা বলেন নি। সহী হাদীসে এসেছে তিনি ইরশাদ করেন :- চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা ভাঙ্গ (ঈদ কর)। যদি চাঁদ তোমাদের কাছে অদৃশ্য থাকে তা হলে চান্দ্রমাসকে ত্রিশ দিনে পূর্ণ কর।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন :- রোযা রাখবে না, যতক্ষণ না নতুন চাঁদ দেখবে অথবা মেয়াদ পূর্ণ করবে। রোযা ভাঙ্গবে না, যতক্ষণ না নতুন চাঁদ দেখবে অথবা মেয়াদ পূর্ণ করবে। এ বিষয়ে অসংখ্য হাদীস রয়েছে যেগুলোতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদ উদয় স্থলের ভিন্নতা জানা সত্তে¡ও ভিন্নতা গ্রহণের কোন ইঙ্গিত দেন নি।

অত্র বিষয়ে ইবনে বা’য তার মাজমুয়ায়ে ফাতওয়ায় আরো লিখেছেন-
والذي يظهر لي أن اختلافها لا يؤثر وأن الواجب هو العمل برؤية الهلال صوما وإفطارا وتضحية متى ثبتت رؤيته ثبوتا شرعيا في أي بلد ما؛ لعموم الأحاديث كما تقدم، وهو قول جمع كثير من أهل العلم. ]مجموع فتاوى ابن باز جزءا – (১৫ / ৭৯)[
অর্থাৎ- আমার মত হলো, নিশ্চয়ই নতুন চাঁদ উদয়ের ভৌগলিক ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। বরং যে কোন দেশে নতুন চাঁদ দেখার দ্বারা সকলের উপরই রোযা, ঈদ, কুরবানীর আ’মল ওয়াজিব হবে। এটা পূর্বে আলোচিত হাদীস সমূহের সাধারণ সম্বোধন দ্বারা সাব্যস্ত। আর এটা ওলামাগনের বিশাল এক জামায়াতের সিদ্ধান্ত।

সৌদী আরবের প্রখ্যাত গ্রন্থকার ও খ্যাতনামা মুফতী মুহাম্মাদ ইবন সলেহ আল উসায়মীন ( ১৩৪৭ - ১৪২১হিঃ / ১৯২৭ - ২০০১ খৃঃ ) তার মাজালিসে শাহরি রামাযান অধ্যাযয়ে বলেছেন ঃ

“ আর যখন রামাযান মাসের আগমন শরয়ীভাবে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হল তখন সেক্ষেত্রে চাঁদ উদয়ের বিভিন্নতা বা চাঁদের বিভিন্ন স্থানের কোন গ্রহণযােগ্যতা নেই । কারণ আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করার হুকুম চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন , চাঁদ উদয়ের বিভিন্ন মঞ্জিলের সাথে সম্পর্ক নয় । ”

ঐ অধ্যায়ে তিনি আরও বলেছেন : “ প্রত্যেক ব্যক্তির চাঁদ দেখা শর্ত নয় , বরং যখন এমন ব্যক্তি রামাযান মাসের আগমনের সংবাদ দেয় যার কথা । গ্রহণযােগ্য তখন সকলের উপর সিয়াম পালন করা আবশ্যক হয়ে যায় । ” পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় চাঁদ উদিত হওয়ার কারণে তারিখের রদবদল হবেনা ।
বরং তা নতুন চাঁদের প্রথম তারিখ হিসাবে গণ্য হবে । তাই তাঁর আদর্শ সবার জন্য সমানভাবে প্রযােজ্য । ( ইরয়ায়ূল গালীল , ৯০২ পৃষ্ঠা )

দূরালাপনীর মাধ্যমে বর্তমানে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে চাঁদ উদয় হলে চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়া কিংবা জ্ঞানে আসা খুবই সহজ । চাঁদ দেখার জন্য দূরবীন ব্যবহার নিষিদ্ধ নয় ; তবে ব্যবহার আবশ্যকও নয় । কারণ হাদীসের বাহ্যিক বর্ণনা দ্বারা আমরা অবগত হই যে , স্বাভাবিক দৃষ্টির উপর ভরসা করাই যথেষ্ট । ( ইবন উসায়মীন , মাজমুউ ফাতওয়া ১৯ / ৩৬ - ৩৭ পৃষ্ঠা )

তাছাড়া আধুনিক মুসলিম বিশ্বে সর্বজন স্বীকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দেস এবং মুসলিম বিশ্বে তিনজন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দেসের একজন শায়খ আলবানী ( র ) ও সর্বজন স্বীকৃত শায়খুল ইসলাম ইবন তায়মিয়ার ( র ) মতামতঃ

মুসলিম মিল্লাতের সকল “ সুনান গ্রন্থের ” সহীহ ও যঈফ পার্থক্য নির্ণয়কারী , আধুনিক মুসলিম বিশ্বের বিখ্যাত সর্বজন স্বীকৃত আল্লামা শায়খ আলবানী ( র ) সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আবদুল্লাহ ইবন আব্ব স ( রাঃ ) র ইজতেহাদের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের বিরােধ দেখা দেয়ায় তার জবাবে “

তামামুল মিন্নাহ ” গ্রন্থের ২৯৮ পৃষ্ঠায় কি সমাধান দিয়েছেন তা দেখুন । তিনি বলেনঃ ইবন আব্বাস ( রাঃ ) র বর্ণনাটি ঐ সকল লােকের জন্য প্রযােজ্য যারা তাদের দেশে চাঁদ দেখে সিয়াম পালন শুরু করেছেন । আর রামাযান মাসের মধ্যভাগে সংবাদ পৌছে যে , অন্য দেশের মুসলিমগণ তাদের এক দিন পূর্বে চাঁদ দেখেছে । এ অবস্থায় তারা ত্রিশ দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাদের সিয়াম পালন করতে থাকবে অথবা যতদিনে তারা নতুন চাঁদ না দেখতে পাবে । এর দ্বারা ইন আব্বাস ( রাঃ ) র থেকে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ইজতেহাদটির সংশয় দূর হল ।

আর আবু হুরায়রা ( রাঃ ) ও অন্যান্যদের বর্ণনাকৃত হাদীসগুলাের প্রতি আমল করা গােটা মুসলিম মিল্লাতের জন্য জরুরী হয়ে গেল । কোন প্রকার দূরত্ব ছাড়াই পৃথিবীর যে কোন স্থানে নতুন চাঁদ দেখা দিলে অথবা এর নিখুঁত সংবাদ যে কোন ব্যক্তির নিকট পৌঁছলে তাদের জন্য সিয়াম পালন করা ফরয হয়ে যাবে ।
যেমনটি শায়খুল ইসলাম ইবুন তায়মিয়া ( র ) তার ফাতওয়া গ্রন্থের ২৫তম খণ্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় বলেছেন ।

মুহাম্মাদ ইবন সলেহ আল উসায়মীন রঃ এর মত

ভিন্ন দিনে সওম ঈদ করার পক্ষে নিকট অতীতের প্রখ্যাত আলিম সৌদী আরবের প্রখ্যাত গ্রন্থকার ও খ্যাতনামা মুফতী মুহাম্মাদ ইবন সলেহ আল উসায়মীন ( ১৩৪৭ - ১৪২১হিঃ / ১৯২৭ - ২০০১ খৃঃ ) তার মাজালিসে শাহরি রামাযান অধ্যাযয়ে বলেছেন ঃ

“ আর যখন রামাযান মাসের আগমন শরয়ীভাবে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হল তখন সেক্ষেত্রে চাঁদ উদয়ের বিভিন্নতা বা চাঁদের বিভিন্ন স্থানের কোন গ্রহণযােগ্যতা নেই । কারণ আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করার হুকুম চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন , চাঁদ উদয়ের বিভিন্ন মঞ্জিলের সাথে সম্পর্ক নয় । ”

ঐ অধ্যায়ে তিনি আরও বলেছেন : “ প্রত্যেক ব্যক্তির চাঁদ দেখা শর্ত নয় , বরং যখন এমন ব্যক্তি রামাযান মাসের আগমনের সংবাদ দেয় যার কথা । গ্রহণযােগ্য তখন সকলের উপর সিয়াম পালন করা আবশ্যক হয়ে যায় । ” পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় চাঁদ উদিত হওয়ার কারণে তারিখের রদবদল হবেনা ।
বরং তা নতুন চাঁদের প্রথম তারিখ হিসাবে গণ্য হবে । তাই তাঁর আদর্শ সবার জন্য সমানভাবে প্রযােজ্য । ( ইরয়ায়ূল গালীল , ৯০২ পৃষ্ঠা )

দূরালাপনীর মাধ্যমে বর্তমানে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে চাঁদ উদয় হলে চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়া কিংবা জ্ঞানে আসা খুবই সহজ । চাঁদ দেখার জন্য দূরবীন ব্যবহার নিষিদ্ধ নয় ; তবে ব্যবহার আবশ্যকও নয় । কারণ হাদীসের বাহ্যিক বর্ণনা দ্বারা আমরা অবগত হই যে , স্বাভাবিক দৃষ্টির উপর ভরসা করাই যথেষ্ট । ( ইবন উসায়মীন , মাজমুউ ফাতওয়া ১৯ / ৩৬ - ৩৭ পৃষ্ঠা )

Saturday, May 23, 2020

ঈদের ছলাতে তাকবীর সংখ্যা: ৬ না কি ১২?

👉 ঈদের ছলাতে তাকবীর সংখ্যা: ৬ না কি ১২?
(১২ তাকবীর উত্তম; ৬ তাকবীর জায়েয)

প্রশ্ন: সহীহ হাদিসের আলোকে কয় তাকবীরে ঈদের ছলাত পড়তে হয়? ৬ তাকবীর না কি ১২ তাকবীর? ৬ তাকবীরে ঈদের ছলাত পড়ায় এমন ঈমামের পেছনে কি ঈদের ছলাত পড়া বৈধ হবে?

উত্তর:
ঈদের তাকবীর কতটি এ মর্মে ওলামাদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ অভিমত হল, তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত সাত তাকবীর (মতান্তরে ৬ তাকবীর) এবং দ্বিতীয় রাকাতে ১ম রাকআত থেকে উঠার তাকবীর ছাড়া পাঁচ তাকবীর দেয়া অধিক হাদিস সম্মত।

এ ব্যাপারে হাদিসের কিতাবগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
✪ তন্মধ্যে একটি হাদিস নিম্নরূপ:
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى فِي الأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا ‏.‏

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে প্রথম রাকআতে সাতবার এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচবার তাকবীর বলতেন।” (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের তাকবীর, হা/১১৪৯, সনদ সহিহ)

✪ আরেকটি হাদিস:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ التَّكْبِيرُ فِي الْفِطْرِ سَبْعٌ فِي الأُولَى وَخَمْسٌ فِي الآخِرَةِ وَالْقِرَاءَةُ بَعْدَهُمَا كِلْتَيْهِمَا ‏"‏ ‏

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ঈদুল ফিতরের সালাতের তাকবীর হচ্ছে প্রথম রাকআতে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি এবং উভয় রাকআতেই তাকবীরের পর কিরাত পড়তে হবে।” (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের তাকবীর, হা/১১৫১, সনদ সহিহ)

এ মর্মে আরও অনেক হাদিস বিদ্যমান।

◉ ইরাকী বলেন: এটি অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও ইমামদের অভিমত।
◉ ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) বলেন: দুই ঈদের নামাযের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ‘হাসান’ সনদে বহু রেওয়ায়েত রয়েছে যে, তিনি প্রথম রাকাতে ৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবীর দিয়েছেন। কিন্তু, সাহাবায়ে কেরাম এ নিয়ে তীব্র মতানৈক্য করেছেন। অনুরূপভাবে তাবেয়ীগণ এ নিয়ে মতভেদ করেছেন। [তামহীদ (১৬/৩৭-৩৯) থেকে সমাপ্ত]

➤ ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়া কি বৈধ?

প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর কিরাতের আগে ৩ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর ৩ তাকবীর। এটি একদল সাহাবী, ইবনে মাসউদ (রাঃ), আবু মুসা (রাঃ) ও আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে এবং এটি ইমাম সাওরী (রহঃ) ও ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অভিমত…[নাইলুল আওতার (৩/৩৫৫) থেকে সমাপ্ত]

মোটকথা, ঈদের সালাত ১২ তাকবীরে পড়া হোক অথবা ৬ তাকবীরে উভয়টি সহীহ। তবে ১২ তাকবীরের হাদিস সংখ্যা প্রচুর এবং অধিক শক্তিশালী হওয়া এটি অধিক উত্তম। (যেমনটি শাইখ আলবানী বলেছেন)।

আরেকটি বিষয় হল, এই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো সুন্নত; রোকন বা ওয়াজিব নয়।

সুতরাং ইমাম ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়ুক অথবা ১২ তাকবীরে পড়ুন সকল অবস্থায় তার পেছনে সালাত পড়া জায়েয। কেবল তাকবীরের সংখ্যাকে কেন্দ্র করে ঈদের মাঠে ঝগড়া-মারামারি করা বা ঈদের মাঠ ভাগ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

Tuesday, May 19, 2020

ঈদ ছিয়াম ও আনুষঙ্গিক

জান্নাত ও জাহান্নাম এবং সেগুলোর দরজা ও স্তরসংখ্যা কয়টি?

প্রশ্ন: জান্নাত ও জাহান্নাম এবং সেগুলোর দরজা ও স্তরসংখ্যা কয়টি?
জান্নাত ৮টি, নাকি জান্নাতের দরজা ৮টি?
জাহান্নাম ৭টি, নাকি জাহান্নামের দরজা ৭টি?

♥♥জান্নাত একটি কিন্তু তার দরজা আটটি।
দলীল নিম্নোক্ত হাদীসটি:
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : فِى الْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ مِنْهَا : بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانَ لَا يَدْخُلُه إِلَّا الصَّائِمُوْنَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
সাহল ইবনু সা‘দ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ‘রইয়্যান’ নামে একটি দরজা রয়েছে। সিয়াম পালনকারীগণ ছাড়া এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
★(সহীহুল বুখারী: ৩২৫৭)
🔸 জান্নাতের স্তরসংখ্যা ১০০টি:
জান্নাতে একশটি স্তর আছে আর প্রত্যেক স্তরের মাঝে এত দূরত্ব আছে যতটা দূরত্ব আছে আকাশ ও জমিনের মাঝে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,في الجنَّةِ مائةَ درجةٍ ما بينَ كلِّ درجَتينِ كما بينَ السَّماءِ والأرضِ ، والفِردوسُ أعلاها درجةً ، ومنها تُفجَّرُ أنهارُ الجنَّةِ الأربعَةِ ، ومِن فوقِها يكونُ العرشُ ، فإذا سألتُمُ اللَّهَ فاسأَلوه الفِردوسَ
“জান্নাতে একশটি স্তর আছে। প্রত্যেক স্তরের মাঝে দূরত্ব হল আকাশ ও জমিনের দূরত্বের সমান। আর ফেরদাউস তার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে আছে। আর সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝর্ণা প্রবহমান। এর উপরে রয়েছে আরশ। তোমরা আল্লাহ্‌র নিকট জান্নাতের জন্য দু’আ করলে জান্নাতুল ফেরদাউসের জন্য দু’আ করবে’। (তিরমিযী- কিতাবুল জান্নাহ, সহীহ-আলবানী, সহীহুত তিরমিযী, হা/২৫৩১) [তাফসীরে মুয়াসসার]
♦♦জাহান্নাম একটি কিন্তু তার দরজা সাতটি:
মহান আল্লাহ বলেন:
وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ - لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ
“তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। এর সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্যে এক একটি পৃথক দল আছে।”
★(সূরা হিজর ৪৩ ও ৪৪ নং আয়াত)
★সুরা আয-যুমার ৩৯:৭১
وَسِيقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا فُتِحَتْ أَبْوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَآ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَتْلُونَ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتِ رَبِّكُمْ وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَاۚ قَالُوا۟ بَلَىٰ وَلَٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ ٱلْعَذَابِ عَلَى ٱلْكَٰفِرِينَ
কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌছাবে, তখন তার #দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বর আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করত এবং সতর্ক করত এ দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে? তারা বলবে, হঁ্যা, কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির হুকুমই বাস্তবায়িত হয়েছে।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেন>>
সুরা আয-যুমার ৩৯:৭২
قِيلَ ٱدْخُلُوٓا۟ أَبْوَٰبَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَاۖ فَبِئْسَ مَثْوَى ٱلْمُتَكَبِّرِينَ
বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্যে। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।
এর পরের আয়াতে আল্লাহ এক জান্নাত ও তার দরজাসমুহের কথা বলেন>>
★আয-যুমার ৩৯:৭৩
وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ رَبَّهُمْ إِلَى ٱلْجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَٱدْخُلُوهَا خَٰلِدِينَ
যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর।
★সুরা আল-হাদীদ ৫৭:১৩
يَوْمَ يَقُولُ ٱلْمُنَٰفِقُونَ وَٱلْمُنَٰفِقَٰتُ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱنظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِن نُّورِكُمْ قِيلَ ٱرْجِعُوا۟ وَرَآءَكُمْ فَٱلْتَمِسُوا۟ نُورًا فَضُرِبَ بَيْنَهُم بِسُورٍ لَّهُۥ بَابٌۢ بَاطِنُهُۥ فِيهِ ٱلرَّحْمَةُ وَظَٰهِرُهُۥ مِن قِبَلِهِ ٱلْعَذَابُ
যেদিন কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারীরা মুমিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা কর, আমরাও কিছু আলো নিব তোমাদের জ্যোতি থেকে। বলা হবেঃ তোমরা পিছনে ফিরে যাও ও আলোর খোঁজ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব।
★আন-নাবা ৭৮:১৯
وَفُتِحَتِ ٱلسَّمَآءُ فَكَانَتْ أَبْوَٰبًا
আকাশ বিদীর্ণ হয়ে; তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হবে।
★সুরা গাফির ৪০:৭৬
ٱدْخُلُوٓا۟ أَبْوَٰبَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَاۖ فَبِئْسَ مَثْوَى ٱلْمُتَكَبِّرِينَ
প্রবেশ কর তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে সেখানে চিরকাল বসবাসের জন্যে। কত নিকৃষ্ট দাম্ভিকদের আবাসস্থল।
মুফাসসিরগণ বলেন: উপর নিচ করে সাতটি স্তরে জাহান্নামের দরজাগুলো অবস্থিত। ইবলিস শয়তানের অনুসারীরা তাদের আমল অনুযায়ী উক্ত দরজাগুলেঅ দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (তাফসীরে মুয়াসসার)
আল্লাহ আামদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Sunday, May 17, 2020

ইসলাম কেন শুধু পুরুষদের সোনা পরিধান করতে নিষেধ করছে?

ইসলাম কেন শুধু পুরুষদের সোনা পরিধান করতে নিষেধ করছে?
.
"আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, “ নবী (সাঃ) সোনার আংটি পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।”
(বুখারী- আদাবুয যিফাফ-২১৪)"
.
পুরুষে সোনার ক্ষতিকর দিক জেনে আমি অবাক হইনি। কিন্তু অবাক হয়েছি এটা ভেবে যে, প্রায় ১৪০০ বছর আগের একজন মানুষ কিভাবে এটা জানতেন! পরক্ষনেই আমার বিবেক তার উত্তর দিলো। তিনি ছিলেন সত্য নবী ও রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। সোনার সৃষ্টিকর্তাই তাকে সোনার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত করিয়েছিলেন। আল্লাহু আকবার। এবার আসুন জেনে নেই পুরুষের জন্য সোনা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ।
.
আপনাদের নিশ্চয়ই এটা অজানা নয় যে নারীর চেয়ে পুরুষের দেহে শ্বেত রক্ত কণিকার(white blood cell) সংখ্যা বেশি।
সোনার সংস্পর্শ পুরুষের দেহে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।ফলে দেহে লোহিত রক্ত কণিকার(red blood cell) প্রয়োজনীয় জায়গা(space) কমতে থাকে। যার কারণে দেহে উভয় রক্ত কণিকার মধ্যকার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।[1]
এটা এনিমিয়া এবং ব্লাড ক্যান্সার এর কারণ হতে পারে।
এই সমস্যাটা শুধুমাত্র পুরুষের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
অন্যদিকে নারীরা এর থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই হাদীসে শুধু পুরুষকে নিষেধ করা হয়েছে।
এবার আসুন জেনে নেই কেন এটা নারীর জন্য ক্ষতিকর নয়।
.
গবেষণায় দেখা গেছে যে,নারী এবং পুরুষের দৈহিক গঠনে কিছু পার্থক্য( minor differences) রয়েছে।
সোনায় এক ধরনের রশ্মি(ray) থাকে যা শরীরের ত্বক এবং রক্ত ​​কোষকে(blood cell) প্রভাবিত করে। আর এটা ঘটে শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে।[2]
কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে না ঘটার কারণ হলো, নারীর দেহে ত্বক এবং মাংসের মধ্যে(between the skin and flesh) চর্বির(fat) স্তর থাকে। এই স্তরটি ক্ষতিকারক রশ্মির বিরুদ্ধে প্রহরীর মতো কাজ করে। ফলে নারীরা সোনার ক্ষতিকর দিক থেকে বেচে যায়।
.
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন হাদীসে পুরুষের জন্য সোনা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ।

রেফারেন্স:
1. Babaee S. Gold Determination In Blood And
Urine Using Atomic Absorption In Tehran
Citizens. Rahavarde Danesh magazine.
2001;3:36-42.
.
2. Malekzadeh shafaroudi M. Gold measured In
Human Biological Fluids. Journal of
Mazandaran University of Medical Sciences.
1995;5(10):74-80.

_সংগৃহীত ও সংযোজিত_

Saturday, May 16, 2020

টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের মর্মে দলীল গুলোর তাহক্বীক্ব

টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের মর্মে দলীল গুলোর তাহক্বীক্ব।
তাহক্বীক্ব:- মুসলেহুদ্দীন মাযহারী

আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
প্রিয় পাঠক! বর্তমানে ফিতরা নিয়ে সর্বত্র ফিতনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আমরা সকলেই জানি যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ খাদ্য দ্রব্য দিয়েই ফিতরা আদায় করেছেন। যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে টাকা বিদ্যমান ছিল।
ফিতরার বিধান হচ্ছে ফরয।আর এটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আর ইবাদত করতে হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পদ্ধতিতে।
সম্মানিত পাঠক!
যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম বন্ধুরা টাকা দিয়ে ফিতরা দেওয়ার মর্মে দলীল গুলো উপস্থাপন করেন অবশ্যই সেগুলোর অবস্থা জেনে নেওয়া আবশ্যক।
কারণ:- এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আর যঈফ হাদীস! যঈফ হাদীস কোন ক্ষেত্রেই আমলযোগ্য নয়।
নিম্নে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় সংক্রান্ত দলীল গুলোর তাহক্বীক্ব করার আগেই বলে রাখি টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় মর্মে একটিও সহীহ হাদীস নেই।

প্রথম যেই দলীল উপস্থাপন করেন সেটি হলো সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত একটি মুআল্লাক্ব হাদীস।
দেখা যাক সেই দলীলের অবস্থা।
বুখারীতে সানাদবিহীন ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেছেন।
দেখুন
প্রথম দলীল:-
كتاب الزكاة
باب العرض في الزكاة
قال طاوس قال معاذ لأهل اليمن ائتوني بعرض ثياب خميص أو لبس في الصدقة مكان الشعير والذرة أهون عليكم وخير لاصحاب النبي بالمدينة
কিতাবুয যাকাত।
অধ্যায়:- পণ্যের যাকাত।
অর্থাৎ:- ত্বঊস রহঃ বলেন,মুআয বিন জাবাল রাঃ ইয়ামানবাসীদেরকে বললেন, তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর ও পরিধেয় বস্ত্র আমার কাছে যাকাত স্বরূপ নিয়ে এসো।ওটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদীনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের জন্যও উত্তম।

তাখরীজ:- সহীহুল বুখারী ২/১১৬ সুনানুদ দারাক্বুতনী ২/৪৮৭ হাদীস নং ১৯৩০ আস সুনানুল কুবরা হাদীস নং ৭৩৭৩ মা'রিফাতুস সুনানি অল আসার হাদীস নং ১৩২৮৪ শারহুস সুন্নাহ লিল বাগাবী ৬/১২ পৃষ্ঠা।

তাহক্বীক্ব:- এই হাদীস যঈফ।

কারণ:- এই হাদীসের সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
এই হাদীসের সানাদে ত্বঊস মুআয রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন।যদিও ত্বঊস মুআয রাঃ থেকে শোনেননি।
ইবনু হাজার আস্কালানী রহঃ বলেন,তাঊস মুআয রাঃ থেকে শোনেননি ( ফাতহুল বারী ১/১৮)।
অনুরূপ কথাই বলছেন ইমাম ক্বাসতালানী ( ইরশাদুশ সারী ১/২৭)।
এই আসারটি যে সমস্ত গ্রন্থে বিচ্ছিন্ন বলা হয়েছে, সেগুলো হলো:-
(ইতহাফুল মাহারাহ লিইবনি হাজার হাদীস নং ১৬৬৫৫ তাগলীক্বুত তা'লীক্ব ৩/১৩ রাওযাতুল মুহাদ্দিসীন হাদীস নং ৬১৩)।
প্রকাশ থাকে যে, এই হাদীস ফিতরা সংক্রান্ত আদৌ নয়। যদিও এই যঈফ আসার থেকে টাকা নয় বরং কাপড় যাকাতের কথা উল্লেখ আছে।
মারে ঘুটনা ফূটে সার।
দ্বিতীয় দলীল:-
حدثنا جرير بن عبد الحميد عن ليث عن عطاء أن عمر كان يأخذ العروض في الصدقة من الورق و غيرها
অর্থাৎ:- নিশ্চয় উমার রাঃ পণ্যদ্রব্য রৌপ্য থেকে এছাড়াও অন্যান্য জিনিস থেকে সাদাকাহ নিতেন।

তাখরীজ:-
( মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হাদীস নং ২/৪০৪ হাদীস নং ১০৪৩৮ জামিউল আহাদীস হাদীস নং ২৯০৬২ কানযুল উম্মাল হাদীস নং ১৭০৮১)।

তাহক্বীক্ব:-
হাদীস যঈফ।
কারণ:- এই হাদীসের সানাদে "লাইস বিন আবী সুলাইম" যঈফ ( আত ত্ববাক্বাতুল কুবরা ১/১২৯ তারীখু ইবনু মাঈন ১/১৫৮ রাবী নং ৫৬০ আহওয়ালুর রিজাল ১/১৪৯ জীবনী নং ১৩২ আয যুআফা অল মাতরূকূন লিন নাসাঈ ১/৯০ রাবী নং ৫১১ আল জারহু অত তা'দীল ৭/১৭৯ আল মাজরূহীন লিইবনি হিব্বান ২/২৩২)।

সে মাতরূকুল হাদীস ( আল কুনা অল আসমা লিইমাম মুসলিম ১/৪১)।
প্রকাশ থাকে যে, এই হাদীসে স্পষ্ট নেই যে, এটা ফিতরা সংক্রান্ত।

তৃতীয় দলীল:-
حدثنا أبو أسامة عن زهير قال سمعت أبا إسحاق يقول ادركتهم وهم يعطون في صدقة رمضان الدراهم بقيمة الطعام.
তাখরীজ:-

অর্থাৎ:- যুহাইর বলেন,আমি আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,আমি তাদের ( তাবিয়ী) এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তাঁরা রমাযানে সাদাকায়ে ফিতর খাদ্যের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন ( মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ২/৩৯৮ হাদীস নং ১০৩৭১)।

তাহক্বীক্ব:- এই হাদীস যঈফ।
কারণ:- এই হাদীসের সানাদে " আবু ইসহাক আস সাবিঈ" এর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল।
আর তাঁর থেকে " যুহাইর বিন মুআবিয়াহ" মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন।
যে সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কিরাম "আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ"এর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল বলেছেন তাদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো।

১) মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে সা'দ মৃত ২৩০ হিজরী বলেন,
ابو إسحاق السبيعي متوفي سنة ١٢٩ه‍ ثقة عابد اختلط بآخره ( الطبقات الكبرى لابن سعد ١/٢٤٠)
আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ মৃত ১২৯ হিজরী বিশ্বস্ত আবিদ ছিলেন। তাঁর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( ত্ববাক্বাতুল কুবরা ১/২৪০)।

২) ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন রহঃ মৃত ২৩৩ হিজরী বলেন,
وقال يحي بن معين سمعت حميد الرؤاسي يقول: إنما سمع إبن عيينة من أبي إسحاق بعد ما اختلط ( المختلطين للعلائ ١/٩٣ راوي/٣٥).
ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন রহঃ বলেন, আমি হুমাইদ আর রাওয়াসী রহঃ কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় ইবনে উয়াইনাহ আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন ( আল মুখতালিত্বীন লিল আলায়ী ১/৯৩ রাবী নং ৩৫)।

৩) আল্লামা ইমাম ইজলী রহঃ মৃত ২৬১হিজরী বলেন,
زهير بن معاوية وكان راويه عن أبي إسحاق السبيعي ويقول: إنه إنما سمع منه بآخره( الثقات للعجلي ١/١٦٦ راوي/٤٦٥)
যুহাইর বিন মুআবিয়াহ আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে শেষে শুনেছেন (আস সিক্বাত লিল ইজলী ১/১৬৬ রাবী নং ৪৬৫)।

৪) আবূ যুরআহ আর রাযী রহঃ মৃত ২৬৪ হিজরী বলেন,
زهير بن معاوية : إنه سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط (المختلطين للعلائ ١/٩٣ ترجمة ٣٥).
যুহাইর বিন মুআবিয়াহ: নিশ্চয় সে আবু ইসহাক থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতি হওয়ার পর শুনেছেন ( আল মুখতালিত্বীন লিল আলায়ী ১/৯৩ রাবী নং ৩৫)।

৫) ইমাম আবু দাউদ আসসাজিস্তানী মৃত ২৭৫ হিজরী বলেন,
ابو إسحاق اختلط بآخره
( سوالات أبي عبيد الاجري أبا داود السجستاني في الجرح والتعديل ١/١٠٦).
আবু ইসহাক আস সাবিইর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( সাওয়ালাত আবী উবায়দিল্লাহ আল আজুর্রী আবা দাউদ ফিল জারহি অত তা'দীল ১/১০৬)।

৬) ইমাম ইবনু আবী হাতিম রহঃ মৃত ৩২৭হিজরী বলেন,
سئل أبو زرعة عن زهير بن معاوية فقال ثقة إلا أنه سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط ( الجرح والتعديل ٣/٥٨٩)
আবূ যুরআহকে যুহাইর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন,সে বিশ্বস্ত কিন্তু আবূ ইসহাক্ব থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতি হওয়ার পর শুনেছেন ( আল জারহু অত তা'দীল লিইবনি আবী হাতিম ৩/৫৮৯)।

৭) ইমাম ক্বুরতুবী আল বাজী আল উন্দুলুসী মৃত ৪৭৪ বলেন,
قال أبو زرعة الرازي زهير بن معاوية ثقة إلا أنه سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط( التعديل والتجريح لمن خرج له البخاري في الجامع الصحيح ٢/٥٩٦ تحقيق أبو لبابة حسين )
আবূ যুরআহ বলেন,যুহাইর বিন মুআবিয়াহ বিশ্বস্ত কিন্তু আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন ( আত তা'দীল অত তাজরীহ লিমান খার্রাজা লাহুল বুখারী ফিল জামিইস সাহীহ ২/৫৯৬)।

৮) ইবনুস স্বলাহ রহঃ মৃত ৬৪৩ হিজরী বলেন,আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( আল ইগতিবাত বিমান রমা মিনার রুআত বিল ইখতিলাত লিইবনিল আজমী মৃত ৮৪১ ১/২৭৩ রাবী নং ৮০ মুক্বাদ্দামাহ ইবনুস স্বলাহ,মা'রিফাতু আনওয়াঈ উলূমিল হাদীস ১/৩৯২ তাহক্বীক্ব নূরুদ্দীন ইতর রহঃ)।
৯) আল্লামাহ ইমাম নববী রহঃ মৃত ৬৭৬ হিজরী বলেন,
فيقبل ما روي عنهم قبل الاختلاط ولا يقبل ما بعده.........سماع عيينة منه بعد اختلاطه ( التقريب والتيسر النووي ١/١٢٠).
ইখতিলাতের আগে বর্ণনা করলে গ্রহণযোগ্য আর ইখতিলাতের পর করলে গ্রহণযোগ্য নয়।
সুফয়ান ইবনে উয়াইনাহ (আবূ ইসহাক্ব) তার থেকে তার মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন ( আত তাক্বরীব অত তাইসীর লিন নববী ১/১২০ তাদরীবুর রাবী ফী শারহি তাক্বরীবিন নববী ২/৮৯৫)।

১০) আল্লামাহ ইমাম ইরাক্বী মৃত ৮০৬ হিজরী বলেন,
أبو إسحاق السبيعي اختلط( شرح التبصرة والتذكرة ألفية للعراقي ٢/٣٣١ التقييد والايضاح شرح مقدمة ابن الصلاح ١/٤٤٥).
আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( শারহুত তাবসিরাহ অত তাযকিরাহ আলফিয়্যাহ লিল ইরাক্বী ২/৩৩১ আত তাক্বয়ীদ অল ঈযাহ শারহ মুক্বাদ্দামাহ ইবনিস স্বলাহ ১/৪৪৫)।

১১) ইবনু হাজার আস্কালানী রহঃ মৃত ৮৫২ হিজরী বলেন,
عمرو بن عبد الله الهمداني أبو إسحاق السبيعي ثقة عابد،من الثالثة اختلط بآخره( تقريب التهذيب جزء الثاني رقم الصفحة ٧٩ ترجمة ٥٦٩٧ تحقيق الشيخ خليل مأمون شيحا تقريب التهذيب ١/٤٢٣ راوي ٥٠٦٥).
আমর বিন আব্দিল্লাহ আল হামদানী আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ বিশ্বস্ত,তৃতীয় স্তরের শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল ( তাক্বরীবুত তাহযীব ২/৭৯ জীবনী নং ৫৬৯৭ তাক্বরীবুত তাহযীব ১/৪২৩ রাবী নং ৫০৬৫)।

১২,১৩) শায়খ আব্দুল কাদির আল আরনাউত রহঃ ও শায়খ আয়মান স্বলেহ শা'বান রহঃ বলেন,আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( তাহক্বীক্ব ও তা'লীক্ব জামিউল উসূল ২/৪২৪ ইবনুল আসীর মৃত ৬০৬ হিজরী)।

১৪) আল্লামাহ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রহঃ মৃত ১৩৫৩ হিজরী বলেন,
وهو مدلس وقد اختلط بآخره( تحفة الاحوذي ٥/٤٣١).
তিনি মুদাল্লিস এবং শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৪৩১)।

১৫) আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ মৃত ১৪২০ হিজরী বলেন,
أبو إسحاق السبيعي وهو ثقة ولكنه مدلس مختلط ( سلسلة الأحاديث الضعيفة ١٢/٤١٢).
আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ বিশ্বস্ত কিন্তু তিনি মুদাল্লিস মস্তিষ্ক বিকৃত ছিলেন ( সিলসিলাতুল আহাদীয যঈফাহ ১২/৪১২)।
এছাড়াও তিনি বলেন,শু'বাহ এর বর্ণনা সুরক্ষিত কেননা তিনি তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতি হওয়ার পূর্বে শুনেছেন ( আত তা'লীক্বাতুল হিসান আলা সহীহ ইবনি হিব্বান ১০/১৬১ হাদীস নং ৭০২৩ এর তাহক্বীক্ব)।
এ ছাড়াও সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ এর একটি আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল ( সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ ৫/৮৭ হাদীস নং ২০৫৫ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

১৬) শায়খ শুআইব আল আরনাউত রহঃ মৃত ১৪৩৮ হিজরী বলেন,
فإن زهير بن معاوية سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط( مسند احمد الرسالة ١٨/٤١٠ مسند احمد ٢/١٧٤).
নিশ্চয়ই যুহাইর বিন মুআবিয়াহ আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন ( মুসনাদ আহমাদ আর রিসালাহ ১৮/৪১০ মুসনাদ আহমাদ ২/১৭৪)।

প্রিয় পাঠক:- লেখনীর কলেবর বৃদ্ধি না করে আরো যে সমস্ত গ্রন্থে আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর মস্তিষ্ক বিকৃতির কথা উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোর উদ্ধৃতি উপস্থাপন করলাম।
আপনারা মিলিয়ে দেখতে পারেন।
( আল মু'জামুস সাগীর লিত ত্ববারী ২/৭০৫ ,শারহু সহীহ মুসলিম হাসান আবুল আশবাল ৫/৯৪ ,আত তাম্বীহাতুল মুজমিলাহ আলাল মাওয়াযিইল মুশকিলাহ লিল আলায়ী ১/৭১ তাহক্বীক্ব মারযুক্ব বিন হায়্যাস আলে মারযূক্ব আল অহরানী, শারহুল মওক্বিযাহ লিয যাহাবী ১/১৫৩ তাহক্বীক্ব আবুল মুনযির মাহমূদ বিন মুহাম্মাদ বিন মুস্তাফা বিন আব্দুল লতীফ আল মানয়াবী,মিসবাহুয যুজাজাহ ফী যওয়াইদী ইবনি মাজাহ ১/১২৫, সওয়ালাত আল বারক্বানী লিদ দারিক্বুতনী মৃত ৪২৫ হিজরী ১/৫২ তাহকীক মাজদী আস সাইয়্যিদ ইব্রাহীম,শারহু ইখতিসারি উলূমিল হাদীস লি ইব্রাহিম বিন আব্দিল্লাহ ১/৪৪৪ মাওক্বিউল ইসলাম সওয়াল ও জওয়াব ১/৪১৮ ইত্যাদি)।
এছাড়াও অনেক রয়েছে।

প্রিয় পাঠক!
এবারে আলোচনা করবো ইমাম যাহাবী রহঃ মৃত ৭৪৮ হিজরী।
তিনি বলেছেন,
عمرو بن عبد الله أبو إسحاق السبيعي من أئمة التابعين بالكوفة واثباتهم إلا أنه شاخ ونسي ولم يختلط.وقد سمع منه سفيان بن عيينة وقد تغير قليلاً( ميزان الاعتدال ٣/٢٧٠ ).
আমর বিন আব্দিল্লাহ আবু ইসহাক আস সাবিঈ তাবিয়ী কূফী বিশ্বস্ত কিন্তু তিনি বার্ধক্য হয়ে গিয়েছিলেন এবং ভ্রম হতো মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়নি এবং সুফয়ান ইবনে উয়াইনাহ তাঁর থেকে অল্প পরিবর্তন শুনেছেন ( মীযানুল ই'তিদাল ৩/২৭০)।

উক্ত উক্তি থেকে বুঝা গেল যে,ইমাম যাহাবী রহঃ এর নিকট তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেনি।
আর এই উক্তি নকল করে অনেকেই লম্বা চওড়া উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন যা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
ইমাম যাহাবী রহঃ হলেন,মুতাআখ্খিরীন আর উপরে অধিকাংশ মুহাদ্দিস যারা মুতাক্বাদ্দিমীন ও মুতাআখ্খিরীন সকলেই বলেছেন আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল।আর যুহাইর বিন মুআবিয়াহ মস্তিষ্ক বিকৃতি হওয়ার পর শুনেছেন।
অতএব ইমাম যাহাবী রহঃ এর কথা সঠিক নয়।
তবুও তিনি স্মৃতিভ্রমের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
যে সমস্ত মুহাক্বিক্ব ইমাম যাহাবী রহঃ এর বই গুলো তাহক্বীক্ব করেছেন তাঁরা সকলেই মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল এটাই উল্লেখ করেছেন।
যেমন,
( সিয়ারু আলামিন নুবালা ৩/১৩১ মান তাকাল্লামা ফীহি অহুয়া মু'সিক্ব ১/৫৬৯ শারহুল মওক্বিযাহ লিয যাহাবী ১/১৫৩ )।

এবারে আসুন উসূলের দিকে।
জমহুর বা অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনে কিরাম মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল বলেছেন আর ইমাম যাহাবী রহঃ বলেছেন মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়নি।
এই অবস্থায় কার কথা গ্রহণযোগ্য হবে?
এবারে দেখুন উসূল বা নীতিমালা কি বলে।

আব্দুল অহ্হাব বিন তাক্বিউদ্দীন আস সুবকী রহঃ মৃত ৭৭১ হিজরী।
তিনি ইজমা নকল করেছেন যে,
যখন জারাহ বা ত্রুটি বর্ণনাকারীদের সংখ্যা বেশি হবে তখন জারাহ প্রাধান্য পাবে।
إن عدد الجارح إذا كان أكثر قدم الجرح إجماعا ( قاعدة في الجرح والتعديل
নিশ্চয় জারাহকারীদের সংখ্যা বেশি হলে সর্বসম্মতিক্রমে জারাহ প্রাধান্য পাবে ( ক্বায়িদাহ ফিল জারহি অত তা'দীল ১/৫৭)।
এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন
ক্বাওয়াইদুত তাহদীস মিন ফুনূনী মুসত্বলাহিল হাদীস
১/১৮৮ ফাতহুল বাক্বী বিশারহি আলফিয়্যাতিল ইরাক্বী ১/৩১১)।
অতএব এই হাদীস যঈফ। কারণ অধিকাংশ মুহাদ্দিস আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ কে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল বলেছেন আর যুহাইর বিন মুআবিয়াহ মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন।
এই হাদীস আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে আর কেউ শুনেনি আর এর কোন সানাদ নেই।
এবারে প্রিয় পাঠক আরো একটি উসূল দেখে নিন।

ডঃ মাহমূদ আত তহ্হান রহঃ বলেন,
وما حدث به بعد الاختلاط: فمردود
ইখতিলাত বা মস্তিষ্ক বিকৃতির পর যা বর্ণনা করবে তা প্রত্যাখ্যাত ( তাইসীরু মুসত্বলাহিল হাদীস ১৫৫ পৃষ্ঠা)।
ইমাম নববী রহঃ একই কথা বলেছেন,
ولا يقبل ما بعده
মস্তিষ্ক বিকৃতির পর বর্ণনা করলে গ্রহণীয় নয় ( আত তাক্বরীব অত তাইসীর লিন নববী ১/১২০)।

এবারে একটি সংশয় এবং তার নিরসন।
ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ বলেছেন,
قال إبن حجر: لم أر في البخاري من الرواية عنه إلا عن القدماء( فتح الباري ١/٤٣١).

ইমাম বুখারী স্বীয় সহীহতে ( আবূ ইসহাক্ব সূত্রে) কারোরই হাদীস সন্নিবেশিত করেননি ক্বাদীমুস সিমা বা ইখতিলাত বা মস্তিষ্ক বিকৃতির আগের ব্যতীত( ফাতহুল বারী ১/৪৩১)।
এটা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহঃ এর ভুল হয়েছে।
কারণ:- তিনি নিজেই আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ কে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল বলেছেন ( তাক্বরীবুত তাহযীব ১/৪২৩ রাবী নং ৫০৬৫)।
আর যুহাইর বিন মুআবিয়াহ মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন এটা প্রমাণিত।
আর ইমাম বুখারী রহঃ যুহাইর বিন মুআবিয়াহ সূত্রে একাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
যেমন,
( সহীহুল বুখারী হাদীস নং ২৭৩৯,৩৬১৫ এবং ৪৯০৩)।
সহীহ মুসলিমেও আছে ।
যেমন,
( সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৬৮৭ ,৪৯৭৬)।
ইবনু হাজার আস্কালানী রহঃ এর এই কথা ভুল।
বিস্তারিত জানতে দেখুন,
শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ আলোচনা করেছেন ( সিলসিলাতুল আহাদীয যঈফাহ ১০/৩৮৮-৩৯১ পৃষ্ঠা)।
এবারে প্রশ্ন হলো যে,
যুহাইর বিন মুআবিয়াহ মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন তারপরও সহীহাইন অর্থাৎ বুখারী মুসলিমে কেন?
বুখারী মুসলিমে আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে যুহাইর বিন মুআবিয়াহ বর্ণনা করলেও সেটা যঈফ নয়।
এর উত্তর জানতে এই বই দুটি পড়ুন:
১) আল কাওয়াকিবুন নায়্যিরাত বিইবনিল কায়্যাল মৃত ৯৩৯ হিজরী।
২) মারবিয়্যাতুল মুখতালিতীন ফিস সহীহায়ন ডঃ জাসিম মুহাম্মদ রাশিদ ঈসাবী রহঃ।

যারা বলেন, এই আসারে হুম (هم) এর অর্থ সাহাবী তাঁদের কাছে আমি একজন সাহাবীর নাম জানতে চাই,যিনি টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করেছেন।
যদিও এই আসার যঈফ।

চতুর্থ দলীল:-
حدثنا وكيع عن سفيان عن هشام عن الحسن ( البصري) قال لا بأس أن تعطي الدراهم في صدقة الفطر.
অর্থাৎ:- হাসান বাসারী রহঃ বলেন, টাকা দ্বারা সাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করা কোন সমস্যা নেই ( মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হাদীস নং ১০৩৭০)।

তাহক্বীক্ব:- এই হাদীস যঈফ।
কারণ:- উক্ত হাদীসের সানাদে " সুফয়ান আস সাওরী" প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস ( আসমাউল মুদাল্লিসীন ১/৫১ রাবী নং ১৮)।
এই আসারে সুফয়ান সাওরী আন দ্বারা বর্ণনা করেছেন।
যা উসূলে হাদীসের মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য নয় ( উমদাতুল ক্বারী ৩/১১২ আর রিসালাহ ১/৩৭৮ আসমাউল মুদাল্লিসীন ২৩ পৃষ্ঠা)।

প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় সংক্রান্ত সমস্ত আসার গুলো যঈফ প্রমাণিত হলো।
লক্ষনীয় বিষয়:- যারা টাকা দিয়ে ফিতরা প্রমাণ করতে খড়গহস্ত তাঁরা আদৌ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন দলীল উপস্থাপন করতে পারেননি বরং কিছু সাহাবীর মাওক্বুফ যঈফ আসার ও কিছু তাবিঈর মাক্বতু যঈফ দলীল পেশ করেছেন।
যা একেবারেই আমলযোগ্য নয়।
প্রকাশ থাকে যে, এই দলীল গুলো সহীহ হলেও আমলযোগ্য হতো না। কারণ এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের পরিপন্থী।
মাওক্বুফ ও মারফু অর্থাৎ সাহাবী ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে মত পার্থক্য হলে অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলই গ্রহণযোগ্য বা প্রণিধানযোগ্য। cld.

Friday, May 15, 2020

লাইলাতুল কদরে পাঠ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সহিহ যিকর ও তাসবিহ

লাইলাতুল কদরে পাঠ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সহিহ যিকর ও তাসবিহ
➖➖➖➖◄◖❂◗►➖➖➖➖
.
❖ [যিকর নং: ০১] সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার—প্রতিটি ১০০ বার করে পড়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
.
► ‘‘যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, সে ১০০ ক্রীতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
.
► যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলবে, সে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের জন্য ১০০ টি সাজানো ঘোড়ায় মুজাহিদ প্রেরণের সওয়াব পাবে;
.
► যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, সে ১০০টি মাকবুল (কবুলকৃত) উট কুরবানির সওয়াব পাবে;
.
► যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে এত সওয়াব পাবে, যার ফলে আসমান ও যমিন পূর্ণ হয়ে যাবে।’’ [ইবনু মাজাহ: ২/১২৫২, মুসনাদ আহমাদ: ৬/৩৪৪, হাদিসটি হাসান]

❖ [যিকর নং: ০২] একটি গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ কমপক্ষে ১০০ বার পড়ার চেষ্টা করা।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার পড়বে—
.
لَا إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘য়া'লা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।]
.
অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা কেবল তাঁরই; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
.
► সে ১০টি গোলাম মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
► তার জন্য ১০০ সওয়াব লেখা হবে;
► তার ১০০ গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে;
► ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে এবং (সন্ধ্যায় বা রাতে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে)
► ওই দিনের হিসেবে কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে বেশি পড়বে।’’ [সহিহ বুখারি: ৩২৯৩, আবু দাউদ: ৫০৭৭]
.
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেকটি দশবার করে বলবে, সে ইসমাঈল (আ.)-এর বংশের চারজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেওয়ার নেকি পাবে।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৪০৪]
.
❖ [যিকর নং: ০৩] লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ খুব বেশি পরিমাণে পড়তে থাকা।
.
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’ ’ [তিরমিযি: ৩৩৮৩, হাদিসটি হাসান]
.
❖ [যিকর নং: ০৪] ‘সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়া বিহামদিহি’ বেশি পরিমাণে পাঠ করা।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি—
سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيْمِ وبِحَمْدِهِ
.
(সুবহানাল্লহিল আযীমি ওয়া বিহামদিহি) পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়।’’ [তিরমিযি: ৩৪৬৪, হাদিসটি হাসান সহিহ]
.
❖ [যিকর নং: ০৫] ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম’ বেশি করে পড়া।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা উচ্চারণে সহজ, আমলের পাল্লায় অনেক ভারী এবং আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তা হলো—
سُبْحَانَ اللّٰهِ وبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيمِ
.
[উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বি‘হামদিহি সুবহানাল্লহিল আযীম।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৪০৬]
.
❖ [যিকর নং: ০৬] ‘সুবহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহি’ ১০০ বার বা আরো বেশি পাঠ করা।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যদি কেউ দিনের মধ্যে ১০০ বার পড়ে—
سُبْحَانَ اللّٰهِ وبِحَمْدِهِ
.
(সুবহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহি) তার সকল (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৪০৫]
.
❖ [যিকর নং: ০৭] লা ‘হাউলা ওয়া লা কুও-ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ বেশি বেশি পাঠ করা।
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ওহে আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস! আমি কি জান্নাতের এক রত্নভাণ্ডার সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না?” আমি বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেন, “তুমি বলো—
لَا ﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ
.
অর্থ: আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় নেই এবং (নেক আমল করার) কোনো শক্তি কারো নেই।’’ [সহিহ বুখারি: ৪২০৬; সহিহ মুসলিম: ২৭০৪]
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’’ [সহিহ বুখারি: ২০২০]
.
সুতরাং আজ রাতেও আমরা সাধ্যানুযায়ী নেক আমল করব ইনশাআল্লাহ্। প্রকৃতপক্ষে, শেষ দশকের প্রতিটি রাতই সম্ভাবনাময়, যদিও বেজোড় রাতগুলোর সম্ভাবনা অনেক বেশি।
.cld

পিরিয়ডে (হায়েয) থাকা নারীরা লাইলাতুল কদরে যেসব আমল করতে পারেন

পিরিয়ডে (হায়েয) থাকা নারীরা লাইলাতুল কদরে যেসব আমল করতে পারেন
◉◉◉◉◉◉◉◉◉►✪◄◉◉◉◉◉◉◉◉◉
.
❑ দু‘আ করা
.
পিরিয়ডকালে দু‘আ করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং, উত্তম হবে—অজু করে লাইলাতুল কদরের মহান রজনীতে আন্তরিকভাবে দু‘আয় মনোনিবেশ করা। এই রাতে দু‘আ কবুল হয়। হাদিসে এসেছে, ‘‘দু‘আই ইবাদত।’’ [আবু দাউদ: ১৪৭৯, হাদিসটি সহিহ]
.
কোনো বিশেষ নিয়ম নয়, স্বাভাবিকভাবে দু‘আর নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে দু‘আ করবেন।
.
❑ তাওবাহ-ইস্তিগফার পড়া
.
এই রাতের গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল হলো আল্লাহর নিকট তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার পড়া। ইস্তিগফারের যত বাক্য মুখস্থ আছে, সবই পড়বেন। পাশাপাশি একটি সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়তে পারেন। সেটি হলো:
.
আয়িশা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে এই ইস্তিগফারটি অধিক মাত্রায় পড়তেন—
.
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
.
অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন: ১৮৮৬]
.
এর পাশাপাশি তাওবাহর শর্তগুলো পূরণ করে অবশ্যই নিজের সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করবেন। তাওবাহর তিনটি শর্ত হলো: কৃত গুনাহ স্বীকার করে সেসব আগে ছেড়ে দিতে হবে, নিজ অপরাধের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে এবং ভবিষ্যতে এসব গুনাহ আর না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। [ইমাম নববী, রিয়াদুস সালেহীন]
.
তাওবাহ্ করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হলো, আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া। তবে, এটি জরুরি নয়। যেহেতু হায়েয অবস্থায় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ, সেহেতু শুধু তাওবাহ ও ইস্তিগফারের কিছু বাক্য পাঠ করে আন্তরিকভাবে দু‘আ করাই যথেষ্ট।
.
❑ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করা
.
সর্বোত্তম দরুদ হলো দরুদে ইবরাহিম। আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে যে দরুদ পড়ি, সেটিই দরুদে ইবরাহিম। এর পাশাপাশি অন্যান্য মাসনূন (হাদিসের) দরুদও পাঠ করা যায়।
.
দুটো সহিহ দরুদ পড়তে পারেন।
.
اللهم صل على محمد، وعلى آل محمد
আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া 'আলা আ~লি মুহাম্মাদ। [নাসাঈ: ১২৯১; হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন শায়খ আলবানি (রাহ.)]
.
اللهم صل على محمدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আরো রহমত প্রেরণ করুন সকল মুমিন নারী-পুরুষ ও সকল মুসলিম নারী-পুরুষের উপর।
.
হাদিসে এসেছে, যে-মুসলমানের দান-সাদাকাহ করার মতো কিছু নেই, সে যেন দু‘আ করার সময় এটি বলে। এটি তার জন্য যাকাতস্বরূপ। [সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯০৩, হাকিম: ৪/১৩০, মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১৩৯৭; হাদিসটিকে হাকিম ও যাহাবি (রাহ.) সহিহ বলেছেন। হাইসামি (রাহ.) হাসান বলেছেন]
.
বিশেষ কোনো সংখ্যা নয়, যতবার ইচ্ছা পড়তে থাকবেন। যত পড়বেন তত লাভ।
.
❑ বিভিন্ন যিকর করা
.
র‍্যান্ডমলি পড়ার যে সকল যিকর আছে, সবই পড়তে পারেন এই রাতে। তবে, উত্তম হবে #সুবহানাল্লাহ্, #আলহামদুলিল্লাহ, #লা ইলাহা ইল্লাহ, #আল্লাহু আকবার এই বাক্যগুলো দিয়ে খুব বেশি পরিমাণে যিকর করা। সহিহ হাদিসে এসেছে, এগুলো আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের সর্বাধিক প্রিয় বাক্য।
.
আরো একটি অসাধারণ যিকর পড়তে পারেন
.
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
.
অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
.
এর মাধ্যমে নেকি লাভ, গুনাহ মাফ এবং দাস মুক্ত করার মতো বিরাট ফজিলত রয়েছে।
.
হাদিসে একটি বাক্যকে বলা হয়েছে জান্নাতের রত্নভাণ্ডার। সেটিও বেশি বেশি পড়তে পারেন—
.
ﻻَ ﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ
.
অর্থঃ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই। [সহিহ বুখারি: ৪২০৬; সহিহ মুসলিম: ২৭০৪]
.
❑ জীবিত ও মৃত সকল মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি করে সওয়াব আল্লাহ তার আমলনামায় লিখে দেন।” [তাবারানি, হাদিসটি সহিহ]
.
এই দু‘আটি পড়তে পারেন
.
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏُ
.
অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল ঈমানদারকে তুমি সেদিন ক্ষমা করে দিও, যেইদিন হিসাব কায়েম করা হবে। [সুরা ইব্রাহিম, আয়াত ৪১]
.
❑ কদরের রাতে পড়ার বিশেষ দু‘আটি বেশি বেশি পড়া
.
আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলব?’ নবীজি বলেন, তুমি বলো—
.
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
.
অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, মহানুভব! তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [তিরমিযি: ৩৫১৩, হাসান সহিহ]
.cld

Thursday, May 14, 2020

সদাকাতুল ফিতর টাকা দিয়ে নাকি খাদ্যদ্রব্য দিয়ে দিতে হবে?

এবারের 'ফিতরা' কত? ৭০ টাকা থেকে ২,২০০ টাকা? নাকি অন্য কিছু !

প্রতিবারই রমাদন এলে মানুষের প্রশ্ন থাকে এবারের ফিতরা কত? যেন এটা প্রতিবছর নির্ধারন করার বিষয়! অথচ আল্লাহ্‌র রসুল (ﷺ) ১৪৫০ বছর আগেই এর পরিমান নির্ধারণ করে গেছেন।।

যারা সুন্নাহর অনুসরন করে ফিতরা আদায় করে থাকেন, তাঁরা কখনো উক্ত প্রশ্নটি তুলেন না যে এবারের ফিতরা কত টাকা! যারা ফিতরা আদায়ের প্রকৃত সুন্নাহ জানেন না এবং সুন্নাহর অনুসরন বাদ দিয়ে দ্রব্য মূল্য দিয়ে তথা টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করেন তারাই মূলত প্রতিবছর এই সময় এলেই প্রশ্ন করেন এবারের ফিতরা কত টাকা দিতে হবে??

সদাকাতুল ফিতর সম্পর্কিত হাদীসসমূহ:
------------------------------------------------------
সদাকাতুল ফিতর বা আমরা যেটিকে ফিতরা বলি তা, মুসলিম নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, সকলের জন্য আদায় করা ফরয/ওয়াজিব । নিন্মোক্ত হাদীসগুলোতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়:

(১) রসূল (ﷺ) ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য দিতে বলেছেন। এ ব্যাপারে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসগুলোতে স্রেফ খাদ্যদ্রব্যের কথা এসেছে, খাদ্যমূল্য বা অর্থের কথা আসেনি। যেমন: ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,

أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَرَضَ زَكَاةَ الفِطرِ صَاعًا مِن تَمرٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ، عَلَى كُلِّ حُرٍّ، أو عَبدٍ ذَكَرٍ أو أُنثَى مِنَ المُسلِمِينَ.

“প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নর-নারী, ছোটো-বড়ো সকল মুসলিমের ওপর আল্লাহ’র রসূল (ﷺ) ফিতরা হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক তা এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪]

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,

كُنَّا نُخرِجُ فِي عَهدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَومَ الفِطرِ صَاعًا مِن طَعَامٍ. وَقَالَ أبُو سَعيدٍ: وَكَانَ طَعَامُنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأقِطُ وَالتَّمرُ.

“আমরা আল্লাহ’র রসূল (ﷺ) এর যুগে ঈদের দিন এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে আদায় করতাম। আবূ সা‘ঈদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর’।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫১০]

রসূল (ﷺ) এর যুগে অর্থ থাকা সত্ত্বেও কোনো বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়নি যে, তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করেছেন।।

(২) রসূল (ﷺ) ফিতরকে মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফরজ করেছেন, অর্থস্বরূপ ফরজ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,

فَرَضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ زَكَاةَ الفِطرِ طُهرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعمَةً لِلمَسَاكِينِ.

“আল্লাহ’র রাসূল (ﷺ) সিয়াম অবস্থায় কৃত অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণ থেকে ছায়িমকে (রোজাদারকে) পরিশুদ্ধকারীস্বরূপ এবং মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফিতরকে ফরজ করেছেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭; সনদ: হাসান]

(৩) ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো তা দলিলনির্ভর হতে হবে। সুতরাং কারও জন্য সেই ইবাদত করা জায়েজ নয়, যেই ইবাদত প্রজ্ঞাবান শরিয়তপ্রণেতা রসূল (ﷺ) থেকে সাব্যস্ত হয়নি।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২০৮; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

(৪) রসূল (ﷺ) এর যুগে মুদ্রার প্রচলন ছিল এবং অভাবী ব্যক্তির বিদ্যমানতাও ছিল। তখন স্বাভাবিকভাবেই অভাবী ব্যক্তিরা অর্থের মুখাপেক্ষী ছিল। এতৎসত্ত্বেও রসূল (ﷺ) এর যুগে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা হয়নি। আর এটি শরিয়তের একটি সুবিদিত মূলনীতি যে, প্রয়োজনের সময় আলোচনাকে বিলম্ব করা না-জায়েজ (لا يجوز تأخير البيان عن وقت الحاجة)। অর্থাৎ, প্রয়োজনের সময় হুকুম বর্ণনা করতে দেরি করা জায়েজ নয়। সুতরাং রসূল (ﷺ) যেহেতু অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করার বৈধতা বর্ণনা করেননি, সেহেতু অর্থ দিয়ে তা আদায় করা শরিয়তসম্মত হবে না।।

সদাকাতুল ফিতর সম্পর্কে আলিমদের মতামত:
----------------------------------------------------------------
এখন আমরা দেখবো খাদ্য দিয়ে ফিতরা দেয়া সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মতামত কি:

(১) শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমামু দারিল হিজরাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ মালিক বিন আনাস আল-আসবাহী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন,

ولا يجزئ أن يجعل الرجل مكان زكاة الفطر عرضًا من العروض وليس كذلك أمر النبي عليه الصلاة والسلام.

“ফিতরার জায়গায় অর্থ বা খাদ্যমূল্য নির্ধারণ করলে তা যথেষ্ট হবে না। নাবী (ﷺ) এভাবে আদেশ দেননি।”
[আল-মুদাওয়্যানাতুল কুবরা, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৮৫; গৃহীত: tasfiatarbia.org]

(২) শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২০৪ হি.] বলেছেন,

ولا يؤدي قيمته (يعني طعام الفطرة).

“আর ফিতরার খাদ্যমূল্য দিয়ে তা আদায় করবে না।” [ইমাম শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) কিতাবুল উম্ম, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৭৪; দারুল ওয়াফা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

(৩) শাইখুল ইসলাম ইমামু আহলিস সুন্নাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেছেন,

ولا يعطي قيمته، قيل له: يقولون: عمر بن عبد العزيز كان يأخذ القيمة، قال: يدعون قول رسول الله ﷺ ويقولون قال فلان؟ قال ابن عمر: فرض رسول الله ﷺ. وقال الله: أطيعوا الله وأطيعوا الرسول. وقال قوم يردون السنن: قال وقال فلان.

“ফিতরার খাদ্যমূল্য প্রদান করবে না।” তখন তাঁকে বলা হলো, “তারা বলে, ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয খাদ্যমূল্য গ্রহণ করতেন।” তখন তিনি (ইমাম আহমাদ) বললেন, “তারা আল্লাহ’র রাসূলের (ﷺ) কথা পরিত্যাগ করেছে, আর বলেছে, অমুক এটা বলেছেন?! ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (ফিতরা) ফরজ করেছেন।” আর আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা আল্লাহ’র আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো।” (সূরাহ নিসা: ৫৯) অথচ একদল লোক সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে বলছে, অমুক বলেছেন, আর তমুক বলেছেন!” [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

(৪) সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করার পর বলেছেন,

ومما ذكرنا يَتَّضِحُ لصاحب الحق أن إخراج النقود في زكاة الفطر لا يجوز ولا يجزئ عمن أخرجه؛ لكونه مخالفا لما ذُكر من الأدلة الشرعية.

“আমরা যে আলোচনা করলাম তা সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট করে দেয় যে, অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়, আর যে ব্যক্তি অর্থ দিয়ে আদায় করে, তার পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে না। যেহেতু তা উল্লিখিত শার‘ঈ দলিল বিরোধী।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২১১; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]

(৫) বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আল-মুজাদ্দিদ আল-ফাক্বীহুন নাক্বিদ ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

الذين يقولون بجواز إخراج صدقة الفطر نقودًا هم مخطئون، لأنهم يخالفون النص.

“যারা বলেন, অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা জায়েজ, তারা ভুলে পতিত হয়েছেন। কেননা তারা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধিতা করছেন।” [ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর; ২৭৪ নং অডিয়ো ক্লিপ; সংগৃহীত: sahab.net]

(৬.) বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

لا يجوز أن تُدفَعَ زكاة الفطر نقودا بأي حال من الأحوال، بل تدفع طعاما، والفقير إذا شاء باع هذا الطعام وانتفع بثمنه.

“অর্থ দিয়ে ফিতরা দেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়। বরং তা খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আদায় করতে হবে। তবে অভাবী ব্যক্তি চাইলে সে খাদ্য বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে উপকৃত হতে পারবে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:১৮; পৃষ্ঠা: ২৭৭; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

(৭) সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,

إخراج القيمة نقودًا عن صدقة الفطر؛ هذا لا يجزئ؛ لأنه خلاف ما أمر به النبي ﷺ، لأن الرسول ﷺ أمر بإخراجه من الطعام. ... هذا قول جمهور أهل العلم، والأئمة الثلاثة: مالكٍ والشافعيِّ وأحمدَ رحمهم الله، وأجاز أبو حنيفة –رحمه الله– إخراج القيمة، ولكن هذا خلاف النص واجتهاد مع النص، ولا يجوز الإجتهاد مع وجود النص، ولهذا لما سئل الإمام أحمد رحمه الله عن إخراج القيمة وأن فلانًا أفتى بإخراج القيمة قال رحمه الله: يدعون قول رسول الله ﷺ ويأخذون بقول فلان. فالواجب العمل بالنص.

“অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা (আদায় হিসেবে) যথেষ্ট হবে না। কেননা তা নাবী (ﷺ) এর নির্দেশ বিরোধী। যেহেতু রাসূল (ﷺ) খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন। এটা অধিকাংশ ‘আলিমের মত। এটা তিন ইমাম তথা মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)’র মত। আবূ হানীফাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অর্থ দিয়ে আদায় করা জায়েজ বলেছেন। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট দলিলের বিরোধী এবং সুস্পষ্ট দলিলের সাথে ইজতিহাদ। আর সুস্পষ্ট দলিলের বিদ্যমানতায় ইজতিহাদ জায়েজ নয়। একারণে যখন ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) কে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং বলা হয় যে, অমুক (‘আলিম) ‘অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ’ ফাতওয়া দিয়েছেন, তখন তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র এর কথা পরিত্যাগ করছে, আর অমুকের কথা গ্রহণ করছে!’ সুতরাং সুস্পষ্ট দলিল অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৩-৩০৫; দারুল ‘আসিমাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

(৮) ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে,

في بلادنا زكاة الفطر تدفع مالًا بحجة أن المساكين لا يريدون حبوبًا وغيرها، فماذا نفعل؟

“আমাদের দেশে অর্থ দ্বারা ফিতরা আদায় করা হয় এ দলিলের ভিত্তিতে যে, মিসকীনরা শস্য চায় না। এক্ষেত্রে আমরা কী করব?”

শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,

ليس الأمر للمساكين، هذه عبادة، تنفذ كما جائت عن الرسول ﷺ، والذي لا يريد الطعام هذا ليس بمحتاج، أعطه المحتاج الذي يريد الطعام.

“এটা মিসকীনদের কথা অনুযায়ী হবে না। এটি একটি ইবাদত। রাসূল (ﷺ) থেকে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই তা সম্পাদন করতে হবে। আর যে খাদ্য চায় না, সে মূলত অভাবীই নয়। সুতরাং ফিতরা অভাবী ব্যক্তিকে দাও, যে খাদ্য চায়।”
[দ্র.: www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/12939.]

(৯) সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,

ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺗﻮﺯﻳﻊ ﺯﻛﺎﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻧﻘﺪًﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻓﻴﻤﺎ ﻧﻌﻠﻢ، ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ.

“আমাদের জানামতে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী অর্থ দ্বারা ফিতরা বণ্টন করা জায়েজ নয়। এটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মত।”
ফাত‌ওয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ),
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ),
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ),
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ক্বা‘ঊদ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ৯২৩১; প্রশ্ন নং: ৪; সংগৃহীত: alifta.net]

(১০) স্থায়ী কমিটির আরেকটি ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,

ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﻨﻘﻮﺩ ﺑﺪﻻً ﻣﻦ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻣﺮ ﺑﺈﺧﺮﺍﺝ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ.

“খাদ্যের পরিবর্তে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ নয়। কেননা নাবী (ﷺ) খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে আদেশ করেছেন।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; আল ইফতা ডট নেটে রমজান মাস সেকশনের ‘যাকাত ও ফিতরা’ অংশের ফাত‌ওয়া; প্রশ্ন নং: ৫; সংগৃহীত: alifta.net]

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, রাসুল (ﷺ) এর জীবদ্দশায় দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। এর প্রমান সুরা মা’য়িদা এর ৩য় আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেন,

‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামাত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম।”

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ এবং এর মধ্যে পালনীয় যাবতীয় বিধি বিধানও পূর্ণাঙ্গ। কোন ইবাদাত তা ফরজ, সুন্নাত বা নফল হোক না কেন, তার ধরনে পরিবর্তন আনার কোন সুযোগ নেই।।

উক্ত হাদীস সমূহ ও কোরআনের আয়াত এবং ওলামায়ে কেরামের ভাষ্যমতে বোঝা যাচ্ছে, ফিতরা আদায় করতে হবে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা। খাদ্যের মূল্য বা টাকা পয়সা অর্থাৎ নগদ অর্থ ফিতরা গ্রহণকারীর হাতে সরাসরি উঠিয়ে দিয়ে নয়! আর তা আদায় করতে হবে প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক সা’ খাদ্যশস্য দিয়ে। সা' হচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের ওজন করার পাত্র।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যেক দেশের প্রধান খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে। মানে যে দেশের মানুষের যেটা প্রধান খাদ্যদ্রব্য সেটা দিয়েই ফিতরা আদায় করা উচিত। আমাদের এই কৃষি প্রধান দেশে প্রধান খাদ্য (طعام) চাল। সে কারনে চাল দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করাই উত্তম। তবে চাইতে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য দিয়েও ফিতর দেওয়া যাবে। খাদ্যশস্যের মূল্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর প্রদানের স্বপক্ষে কুরআন-হাদীসে স্পষ্ট কোন দলীল নেই। সুতরাং মুদ্রা দিয়ে ফিতরা আদায় করা সুন্নাহর বিরোধী কাজ।।


সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ:
--------------------------------------
সা’ হচ্ছে মূলত একটি পাত্রের পরিমাপ !!! এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিম্ন লিংকের ব্লগটি পড়ুনঃ
https://kmarifin.blogspot.com/2019/05/blog-post_81.html?m=1

আসুন আমরা রসুল ছঃ এর আদর্শ অনুসরণ করি।।

Wednesday, May 13, 2020

যে ৫টি কারনে দুয়া কবুল হয় না

৫ টি কারণে আমাদের দু‘আ কবুল হয় না। আসুন, জেনে নিই সেসব কারণ। পাশাপাশি দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় শর্তগুলো সম্পর্কেও জেনে রাখা দরকার।
.
❑ যেসব কারণে দু‘আ কবুল হয় না:
.
[এক.] খাবার, পানীয় ও পোষাক হালাল না হওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ পবিত্র; তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন।...তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন—দীর্ঘ সফরের ফলে যার চুল উশকোখুশকো, চেহারা ধুলোবালিমাখা। সে হাত দুটো আকাশের দিকে উঠিয়ে বলছে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’, কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম আর তার পরিপুষ্টি হয়েছে হারাম দিয়ে; (এমতাবস্থায়) কীভাবে তার দু‘আয় সাড়া দেওয়া হবে?’’ [সহিহ মুসলিম: ১০১৫]
.
সফরে দু‘আ কবুল হয়, হাত উঠিয়ে দু‘আ করলে কবুল হয় এবং নিজেকে হীনজ্ঞান করে আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাকলেও দু‘আ কবুল হয়। এতগুলো শর্ত লোকটি পূরণ করার পরও তার দু‘আ কবুল  হচ্ছে না, কেবল হারাম খাবার, পানীয় ও পোষাকের জন্য। [ইবনু রজব হাম্বলী, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম]
.
[দুই.] সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা বন্ধ করে দেওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে ও অন্যায় কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। নতুবা, অচিরেই এর ফলে আল্লাহ্ তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমরা তাঁর কাছে দু‘আ করবে, কিন্তু তোমাদের দু‘আয় সাড়া দেওয়া হবে না।’’ [তিরমিযি: ২১৬৯, হাদিসটি হাসান]
.
[তিন.] দ্রুত ফল না পাওয়ায় দু‘আ বন্ধ করে দেওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ আল্লাহকে ডাকলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে—‘আল্লাহকে তো ডাকলাম, কিন্তু কোনো সাড়া তো পাওয়া গেলো না।’ [সহিহ বুখারি: ৬৩৪০]
.
[চার.] গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু‘আ করা।
.
[পাঁচ.] মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা: তিনি দু‘আ সাথে সাথে কবুল না করে প্রার্থিত বস্তুর চেয়েও অধিক দেওয়ার জন্য রেখে দেন।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তার প্রার্থনা পূরণ করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন: হয় তার প্রার্থিত বস্তুই তাকে দিয়ে দেন অথবা তার দু'আকে (দু'আর নেকি) তার আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন কিংবা দু'আর পরিমাণ অনুসারে তার অন্য কোনো (অনাগত) বিপদ তিনি দূর করে দেন।’’ [তিরমিযি: ৫/৫৬৬, আহমাদ: ৩/১৮, সহিহ সনদ]
.
❑ দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় শর্তগুলো:
.
❖ শির্কমুক্ত দু‘আ: শর্তহীনভাবে শুধু আল্লাহর কাছেই বলা, মানুষকে দেখানো বা শোনানোর উদ্দেশ্য না থাকা।
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘দ্বীনকে (ইসলামকে) আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করে শুধু আল্লাহকেই ডাকো।’’ [সূরা গাফির, আয়াত: ১৪]
.
❖ দু‘আ কবুলের পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দু‘আ করা
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা দু'আ কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ করো।" [সহিহ আল জামে': ২৪৫, হাদিসটি হাসান]
.
❖ অন্তরকে সজাগ রাখা ও উদাসীনতা পরিহার করা।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘...কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু'আ করলে, আল্লাহ তার দু'আ কবুল করেন না।’’ [সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৩, হাদিসটি হাসান]
.
❖ রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করা।
.
আলি (রা.) বলেন, ‘‘সকল দু'আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবির উপর সালাত পাঠ করবে।’’ [সিলসিলা সহিহাহ: ৫/৫৪-৫৮, সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৮, হাদিসটি হাসান]
.
অন্য রেওয়ায়েতে এই কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।
.
❖ আল্লাহ্ যেকোনো দু‘আ কবুল করতে পারেন, (বৈধ) যেকোনো কিছু দিতে পারেন, এই বিশ্বাস রাখা।
.
এভাবে দু‘আ করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে যে, ‘হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে দাও।’ [সহিহ বুখারি: ৬৩৩৮] সুতরাং, এভাবে দু‘আ করা যাবে না।
.
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘আল্লাহর জন্য কোনো কিছুই এত বড় নয় যে, তিনি তা দিতে পারবেন না।’’ [সহিহ মুসলিম: ২৬৭৯]
.
সুতরাং, দু‘আ করতে হবে দৃঢ়তার সাথে।

Tuesday, May 12, 2020

মানত সম্পর্কে ইসলামিক বিধিবিধান

🏵মানত সম্পর্কে ইসলামিক বিধিবিধান🏵
👉
মানত কি?
মানত বা মান্নত আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। যেমন আমরা কখনো কখনো বলি, যদি আমি পরীক্ষায় পাশ করি তাহলে মাদরাসায় একটি ছাগল দান করব। এটি একটি মানত। অতএব, কোনো বিষয় অর্জিত হওয়ার শর্তে কোনো কিছু করার ওয়াদাকে সাধারণত: আমরা মানত বলে থাকি। কেউ বলে মানত, আবার কেউ বলে মান্নত। তবে এটি শর্তযুক্ত মানত। আবার শর্তহীন মানতও আছে। যেমন, আনন্দের খবর শুনে কেউ বলল, আমি এটা লাভ করেছি? তাই আমি মসজিদে একটি ফ্যান দান করব। এটাও মানত। তবে শর্তহীন।

মানত কাকে বলে?
আমরা বাংলাতে বলি মানত । আরবিতে বলা হয় نذر (নযর) বহুবচনে নুযুর। মানত বা নযরের আভিধানিক অর্থ হল, নিজের দায়িত্বে নেয়া। যা নিজের দায়িত্ব নয় তা অপরিহার্য করে নেয়া।

শরয়ি পরিভাষায় মানত বলা হয় :  নিজের উপর এমন কিছু ওয়াজিব (আবশ্যিক) করে নেয়া যা আসলে ওয়াজিব ছিল না। সেটা শর্তযুক্তও হতে পারে আবার শর্ত মুক্তও হতে পারে।

মানতের হুকুম
মানত করার বিধান কি? ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত না মুস্তাহাব?

আসলে মানত করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং মনে করি মানত করা খুব সওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সওয়াবের কাজ নয়। বরং মাকরূহ। অধিকাংশ ইমাম ও ফেকাহবিদের অভিমত এটাই। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি কেউ মানত করে ফেলে তাহলে তাকে তা পালন করতেই হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী ও নিয়ম-নীতি আছে। খানিক পর আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব।

মানত করা নিষেধ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে : আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫) ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে আগেও করে না, পিছেও করে না। বরং এর দ্বারা কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে বের করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৬, সহিহ সুনান নাসায়ি)

ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এটা শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে মাল খসায়। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৭, আহমাদ)  আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা মানত করবে না। কেননা মানত তাকদীরের কোনো কিছু-কে ফেরাতে পারে না। এটা শুধু কৃপণ থেকে সম্পদ খসায়। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৯, সহিহ সুনান তিরমিজি, সহিহ সুনান নাসায়ি) সাহবি আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যেই বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায়নি।  (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩১)

উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে আমরা  জানতে পারলাম,
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। অতএব মানত করা ঠিক নয়। আমরা অনেকে বিপদ-আপদে পতিত হলে মানত করে থাকি। আর মনে করি এটা সওয়াবের কাজ। আল্লাহ খুশী হবেন। কিন্তু আসলে তা সওয়াবের কাজ নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে আল্লাহ খুশী হবেন না। এবং এতে কোনো সওয়াবও হয় না। তাই আমাদের উচিত হবে কোনো অবস্থায় মানত না করা। অবশ্য মানত করে ফেললে তা পালন করতেই হবে কারণ মানত করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

দুই. মানত করার মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন, মানত করা একটি অনর্থক কাজ। সাধারণত কৃপণ স্বভাবের লোকেরা মানত করে থাকে। তারা সুস্থ ও নিরাপদ থাকা কালে দান-সদকা করে না। কিন্তু বিপদে পড়লে আল্লাহর পথে খরচ বা দান সদকা করার বড় বড় মানত করে।

তিন. তাকদীরে যা লেখা আছে তা হবেই। মানত করার মাধ্যমে তাকদীরের লেখা পরিবর্তন করা যায় না। তাকদীরের প্রতি যাদের যথাযথ ঈমান নেই সাধারণত তারাই মানত করে থাকে।

চার. মানত করা হোক বা না হোক। ফলাফল একই হবে। তাকদীরে যা লেখা আছে সেটাই আসবে অবধারিতভাবে।

পাঁচ. আলোচিত সবগুলো হাদীসই মানত না করার জন্য মুসলিমদের-কে নিরোৎসাহিত ও নিষেধ করেছে। বলেছে, এটি কোনো ফল বয়ে আনে না বরং শুধু কৃপণের সম্পদ খরচ করায়। এ সকল বিষয় জানার পর কোনো মুসলিমের পক্ষে কোনো প্রকার মানত করা উচিত নয় । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, যে কাজটি করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, আমরা সেটাকে সুন্নাত মনে করি। বহু আলেম-ওলামাকে বলতে শুনা যায়: আপনি ওখানে মানত করেন, তাহলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে, বিপদ দূর হয়ে যাবে। অনেক খানকাহ ও দরবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের দরবারে বা খানকায় মানত করার জন্য মুসলিম জনগণকে উৎসাহিত করে থাকে। দরাজ গলায় বলে, আমাদের এই মাদরাসায় বা এই খানকায় মানত করে কেহ বিফল হয়নি। এমনটি যারা করেন তারা নিজেরাও এ বিষয়ে বিভ্রান্ত। সাথে সাথে অন্যদেরও বিভ্রান্ত করে থাকেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিফাজত করুন! দীনে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন!

ছয়. হাদীসগুলো পাঠ করে কেউ বলতে পারেন, এ সকল হাদীসে আর্থিক বিষয়াদি তথা ব্যয় ও দান- সদকা করার মানত করা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অতএব কেউ যদি নামাজ, রোজা, হজ, উমরা কিংবা কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত বিষয়ক মানত করে তবে দোষের কিছু হবে না। আমরা বলব, কথাটি ঠিক নয়। কেননা হাদীসের অর্থ ব্যাপক। তখনকার মানুষ সাধারণত খরচ বা দান-সদকা করার মানত করত। তাই এটাকে সামনে আনা হয়েছে। তাছাড়া আর্থিক মানতের মাঝে বহুবিদ উপকার নিহিত রয়েছে। মানতকারী ছাড়াও অন্য লোকেরা দান-সদাকা গ্রহণ করে উপকৃত হয়। তা সত্ত্বেও এটা যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে যে মানতে এমন বহুমাত্রিক উপকার নেই, তা অনুমোদিত হবার প্রশ্নই আসে না। তাই নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদতের মানত করাও ঠিক নয়।

মানত করলে তা আদায় করতে হবে
মানত করা জায়েয নয়। কিন্তু কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। যাকে আমরা বলি মানত পুরা করা। মানত পুরা করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে। মানত পুরা করা একটি ইবাদত। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : ‌তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে। (সূরা আল হজ, আয়াত ২৯) আল্লাহ আরো বলেন: তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭০) আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন : তারা মানত পূরণ করে। (সূরা আল-ইনসান, আয়াত ৭)

এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত হয়,
এক. মানত করলে তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মানত পূরণ করতে হুকুম করেছেন।

দুই. এ সকল আয়াতের কোথাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানত করতে আদেশ করেননি বা উৎসাহ দেননি। অন্য কোনো আয়াতেও দিয়েছেন এমনটি পাওয়া যায় না।

তিন. মানত পূরণ করা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের একটি গুণ হিসাবে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন। তাই মানত পূরণ করলে সওয়াব অর্জিত হবে, প্রতিদান পাওয়া যাবে।

চার. মানুষ মানত করলে, কিংবা কোনো খরচ করলে আল্লাহ তা ভালভাবেই জানেন। তাই মানত পূরণ না করে কোনো উপায় নেই।

পাঁচ. মানত পূরণ করা যখন একটি ইবাদত, তখন তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে করতে হবে। মানত পূরণ করা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

من نذر أن يطيع الله فليطعه ، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه

যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার মানত করে সে যেন (তা পূরণ করে) তাঁর আনুগত্য করে । আর যে অবাধ্যতার কোনো বিষয়ে মানত করে সে যেন  তাঁর অবাধ্যতা না করে। (সহিহ বুখারি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, নাসায়ি) আমরা এই হাদীস থেকে জানতে পারলাম, ভাল কাজের মানত করলে শর্ত পূরণ হলে সেই মানত পূরণ করতে হয়। তাছাড়া এতে আমরা মানতের প্রকার সম্পর্কেও ইঙ্গিত পেলাম। যা নিম্নে আলোচিত হল।

যে মানত আদায় করা যাবে না:
উপরোক্ত হাদীস থেকে আমরা যেসব বিষয় জানতে পারলাম,
মানত দুই প্রকার।

(ক) মানতের বিষয় হবে শরিয়ত অনুমোদিত ভাল কাজ। যেমন কেউ বলল, যদি আমি সুস্থ হই তাহলে তিনটি রোজা রাখব। এখানে মানতের বিষয়টি শরিয়ত অনুমোদিত একটি ইবাদত ও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের বিষয়। শর্ত পূরণ হলে এ মানত আদায় করতে হবে।

(খ) শরিয়ত নিষিদ্ধ-মন্দ ও আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ করার মানত। যেমন কেউ বলল, আজ যদি অমুক দল খেলায় জিতে যায় তাহলে আমি তোমাদেরকে মদ পান করাব। এ মানত পূরণ করা মোটেই জায়েয নয়। মানতের শর্ত পূরণ হোক বা না হোক। কারণ এতে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা বিদ্যমান।

এ ছাড়াও আরেক প্রকার মানত আছে যা অনর্থক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সেটাও পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন কেউ বলল, আমি যদি রোগমুক্ত হই। তাহলে ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেটে টঙ্গীর ইজতেমায় যোগ দেব। এ মানত একটি অনর্থক। ময়মনসিং থেকে টঙ্গী পর্যন্ত হেটে যাওয়ার মধ্যে নিজেকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। কাজেই এ ধরনের মানত পূরণ করা হবে অর্থহীন কাজ তাই তা পূরণ করা হবে না। যেমন হাদীসে এসেছে : আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এর কি হয়েছে? তারা উত্তরে বলল, তিনি পায়ে হেঁটে চলার মানত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ ব্যক্তি নিজেকে কষ্ট দেয়ায় আল্লাহর কোনো লাভ নেই। এবং তাকে বাহনে চড়ার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম হাদীস নং ৪৩৩৬)

হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, লোকটি এমন একটি কাজের মানত করেছিল, যা আদায়ে তার কোনো লাভ নেই। কিংবা অন্য কারোও কোনো উপকার নেই। এটি একটি অনর্থক কাজ। যা করে নিজেকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ মানত পালন থেকে নিষেধ করেছেন। অতএব এ ধরনের মানত কেউ করলে তা পূরণ করা যাবে না।

আরেকটি হাদীস দেখুন :

عن ابن عباس رضي اللَّه عنهما قال : بيْنما النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَخْطُبُ إِذَا هُوَ بِرجُلٍ قَائِمٍ ، فسأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا : أَبُو إِسْرائيلَ نَذَر أَنْ يَقُومَ فِي الشَّمْس وَلا يقْعُدَ ، ولا يستَظِلَّ ولا يتَكَلَّمَ ، ويصومَ ، فَقالَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ ولْيَستَظِلَّ ولْيُتِمَّ صوْمَهُ » رواه البخاري .

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খোতবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিগণ বললেন, আবু ইসরাইল। মানত করেছে যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না। ছায়ায় (বিশ্রামে) যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোজা রাখবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন: তোমরা তাকে আদেশ দাও যেন কথা বলে, ছায়াতে যা এবং রোজা পূর্ণ করে। (বুখারি)

এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম
এক.নিজ সত্তা বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর এমন মানত করলে তা আদায় করা যাবে না। যেমন আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। পাশাপাশি রোজা রাখারও মানত করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুধু রোজা রাখতে বললেন আর অন্যগুলো পালন করতে নিষেধ করলেন। এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে কোনো বৈধ বিষয়কে নিজের জন্য অবৈধ করা যায় না। তদ্রুপ অবৈধ কোনো কিছুকে বৈধ করা যায় না। যেমন কেউ মানত করল আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয়।

দুই. কৃত মানত যদি সওয়াবের বিষয় হয় তবে তা আদায় করতে হবে। আর যদি অনর্থক কোনো বিষয় হয় তবে আদায় করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

من نذر أن يطيع الله  فليطعه ، ومن نذر أن يعصي الله  فلا يعصه

যে আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানি করার মানত করেছে সে যেন তাঁর নাফরমানি না করে।

তিন. কোনো বিষয়েই মানত করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে। কারণ এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন।

চার. ইবাদত-বন্দেগি ও মানতের নামে নিজের উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করা উচিত নয়। এটি একটি চরমপন্থা। ইসলামের মধ্যপন্থার পরিপন্থী। আবু ইসরাইল ছায়ায় না বসা, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ও কথা না বলার যে মানত করেছিল সেটা ছিল মধ্যপন্থার বিপরীত । তাই তা পরিত্যাগের নির্দেশ দেয়া হল।

পাঁচ. খোতবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। তাইতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।

ছয়. খুতবার সময় খতীব প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন। কাউকে কোনো কিছুর আদেশ বা নিষেধ করতে পারেন।

মাজারে মানত করা শিরক:
এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করার পূর্বে একটি ঘটনা না বলে পারছি না। লোকটি ধর্মপরায়ণ। নিয়মিত নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন। হজ করেছেন। আবার একটি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী। রিকসায় আমারা এক সাথে যাচ্ছিলাম। পথে একটি মাজার পড়ল। তিনি রিকসা চালককে রিকসা থামাতে বললেন। রিকসা থেকে নেমে তিনি মাজারের কাছে গেলেন। পকেট থেকে চারটি মুরগীর ডিম বের করে মাজারে রেখে চলে আসলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার! আপনার মত মানুষ মাজারে ডিম দেয়? তিনি বললেন, আরে আমার স্ত্রী মানত করেছিল মাজারে এক হালি ডিম দেবে। আমি জানি এটা ঠিক নয়। তবুও স্ত্রী বলেছে তাই দিলাম। আমি তাকে বললাম, কাজটি কত মারাত্মক আপনি তা জানেন? এটা তো শিরক। আপনার স্ত্রী কেন, আপনার মা বললেও তো আপনি তা করতে পারেন না। তিনি বললেন, আমার নিয়ত ঠিক ছিল। আমি জানি মাজারে শায়িত ওলী আমার কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না। শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশায়ই ডিম দান করেছি।

আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। মানলাম আপনার কথা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে কাজটা করেছেন। তো মাজারে দান কেন? আল্লাহ কি বলেছেন, মাজারে দিলে আমি সন্তুষ্ট হই? মাজার ব্যতীত কোনো দরিদ্র-অভাবী মানুষকে দান করলে আমি কম সন্তুষ্ট হই? তা ছাড়া মানতকারী আপনার স্ত্রীর নিয়্তটা কি ছিল তা কি জিজ্ঞেস করেছেন? তিনি উত্তর দিলেন, মাজারে দান বা মানত করার মাধ্যমে মাজারে শায়িত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এতে আল্লাহ খুশী হন। আল্লাহর ওলীকে সম্মানও করা হল, আবার দানও করা হল। এক কাজে দুই সওয়াব। আমি বললাম, এই তো আসল কথায় এসেছেন। এ ধারণাটাই তো শিরক। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করার সাথে সাথে ওলীকে সম্মানের নিয়ত করে তাকে ইবাদতে অংশীদার করা হল। যারা মাজারে দান, সদকা, মানত ইত্যাদি করে থাকে তারা তিনটি নিয়তের বাহিরে চতুর্থ কোনো নিয়ত করে না।

প্রথম প্রকার নিয়ত : তারা মনে করে মাজারে মানত বা দান করলে মাজারে শায়িত ওলী খুশী হন। তিনি খুশী হলে আমার মনের আশা পূরণ হবে। বিপদ দূর হবে। মানত কারীর ধারণায় মাজারে মানত করলে মাজারের ওলীর দোয়ায় বা তাঁর নেক নজরে আমার বিপদ কেটে যাবে বা উদ্দেশ্য অর্জন হবে।

দ্বিতীয় প্রকার নিয়ত : মাজারে মানত বা দান করছি আল্লাহর জন্যই। তবে মাজারে শায়িত ওলীর সুপারিশে আমার মনের আশা পূরণ হবে। ওলীর অসীলায় বা  শাফাআতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমি মাজারে মানত বা দান করলাম। তৃতীয় প্রকার নিয়ত: আমি জানি যে ওলী ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন না। তাঁর দোয়া বা নেক নজর পাওয়ার নিয়তও আমি করি না। তাঁর শাফাআত বা অসীলাও আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে তিনি আল্লাহর ওলী, তাকে সম্মান করা সওয়াবের কাজ এ জন্য আমি মাজারে মানত করি। দান-সদকা পাঠাই। সম্মানিত পাঠক! উপরের তিনটির যে কোনো একটি নিয়তে আপনি মাজারে মানত বা দান করবেন তো, তা শিরক হবে। আপনি যখন জীবিত মানুষ বাদ দিয়ে মৃত মানুষের কবর-মাজারে দান করেন, তখন অবশ্যই একটি নিয়ত পোষণ করেন, যদিও তা প্রকাশ করেন না। বা অন্যের কাছ থেকে লুকাতে চান । কিন্তু আল্লাহ তাআলা অন্তর্যামী। তাঁর কাছ থেকে লুকানো কি সম্ভব?

মানত আদায় করা একটি ইবাদত। এটি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক। তেমনি এটা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তের সাথে সাথে অন্যের সুপারিশ, শাফায়াত, অসীলা বা তার মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখানোও শিরক। এটাই তো ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার করা। এমন করলে ইবাদতটি শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয় না। আর যে ইবাদত শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত নয় তা শিরক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মনে রাখতে হবে, যে সকল কথা ও কাজ ইবাদত বলে গণ্য তা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক। এমনিভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদন করার সাথে সাথে অন্য কোনো সত্তার সন্তুষ্টি, সম্মান, দৃষ্টি আকর্ষণের  নিয়ত করাও শিরক। শিরক মানে তো অংশ দেয়া। এ ধরনের কথা ও কাজে আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যকে অংশীদার করা হয়।

হাদীসে এসেছে :

أن رجلا على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم نذر أن ينحر إبلا ببوانة ، فأتى رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم فقال : إني نذرت أن أنحر إبلا ببوانة ، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم : هل كان فيها وثن من أوثان الجاهلية يعبد ؟ قالوا : لا ، قال : فهل كان فيها عيد من أعيادهم ؟ قالوا : لا ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم أوف بنذرك فإنه لا وفاء لنذر في معصية الله ولا فيما لا يملك ابن آدم

الراوي: ثابت بن الضحاك المحدث: أبو داود – المصدر: سنن أبي داود – الصفحة أو الرقم: 3313
خلاصة حكم المحدث: سكت عنه [وقد قال في رسالته لأهل مكة كل ما سكت عنه فهو صالح]

এক ব্যক্তি বাওয়ানা (য়ালামলাম পাহাড়ের পাদ দেশে অবস্থিত) নামক স্থানে একটি উট জবেহ করার মানত করেছিল। সে তার মানত আদায় করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:  যে স্থানের উদ্দেশ্যে মানত করেছ সেখানে কি জাহেলী যুগে কোনো প্রতিমা ছিল? লোকেরা বলল, না, ছিল না। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, সেখানে কি মুশরিকদের কোনো উৎসব বা মেলা হয়? লোকেরা উত্তর দিল, না, তা হয় না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:  তাহলে তোমার মানত পূর্ণ করতে পার। আর আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতায় কোনো মানত পূর্ণ করা হবে না। আর যে মানত পূরণ করতে মানুষ সমর্থ নয় তাও পূরণ করা হবে না। (আবু দাউদ : কিতাব আল আইমান ওয়ান-নুযূর)

হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম,
এক. নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবেহ করার মানত পূর্ণ করা জায়েয। এমনিভাবে নির্দিষ্ট স্থান বা সময়ের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করাও জায়েয। তবে তা যেন কোনো উৎসেবর স্থান, পূজার বেদী, কবর-মাজার, দরবার না হয়। কেননা মাজার ও পীরদের দরবার উৎসব পালনের একটি স্থান। আর এ হাদীসে অনৈসলামিক উৎসব পালনের স্থান বা সময়ে মানত পূর্ণ করার অনুমতি দেয়নি। মনে রাখতে হবে, কবর কেন্দ্রিক সকল উৎসব-অনুষ্ঠান জাহেলি যুগের মেলার মত। এগুলো মুশরিকদের উৎসব।

দুই. মানতের মধ্যে যদি আল্লাহ তাআলার নির্দেশের বিপরীত কিছু থাকে তাহলে সে মানত পূর্ণ করা যাবে না।

তিন. মানত যদি এমন হয় যা পূর্ণ করা মানতকারীর পক্ষে অসম্ভব, তাহলে সে মানত পূর্ণ করার দরকার নেই।

চার. আমাদের দেশে মাজার, দরগা, পীরদের দরবারে যে উরস, ঈসালে সওয়াব মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো মুশরিকদের উৎসব। তাই এ সকল স্থানের জন্য গরু, ছাগল ইত্যাদি জাতীয় কোনো কিছু মানত করা যাবে না। কেননা বর্ণিত হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চেয়েছেন, সেখানে মুশরিকদের কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান হয় কি-না। যদি হত তাহলে তিনি সেখানে মানত পূর্ণ করতে অনুমতি দিতেন না।

মাজার, কবর, দরগা, পূজার বেদীতে  আল্লাহ তাআলার নামে মানত করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনিভাবে ঐ সকল স্থানে পশু জবেহ করলে তা আল্লাহ নামে জবেহ বলে গণ্য হবে না। যদিও জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয়। আমরা দেখলাম বর্ণিত হাদীসে লোকটি কিন্তু আল্লাহর নামেই জবেহ করত, কেননা তিনি ছিলেন সাহাবি। তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থানটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বুঝা গেল আল্লাহর নামে মানত ও জবেহ যদি আপত্তিকর স্থানে অনুষ্ঠিত হয় তবুও তা শিরক।

পাঁচ. এ হাদীসে দেখা যায় মানত পূর্ণ করার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল, কেউ যদি এ রকম স্থান তথা মাজার, দরগা, দরবারের জন্য মানত করে থাকে তাহলেও তা সে স্থানে পূর্ণ করা হবে না। যখন মানত পূর্ণ করার ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা আছে তখন মানত করা তো আরো বড় অন্যায়। তাই এ সকল স্থানে মানত করা যেমন যাবে না। তেমনি মানত করে থাকলে তা পূর্ণও করা যাবে না। তবে অন্য স্থানে মানত পূর্ণ করতে হবে। যেমন কেউ মানত করল, আমার ছেলে পরীক্ষায় পাশ করলে আমি খানজাহান আলীর মাজারে একটি ছাগল দান করব। ছেলে পরীক্ষায় পাশ করল। কিন্তু সে জানতে পারল, মাজারে মানত করা শিরক। এখন কি করবে? এখন সে অন্য স্থানে,  অথবা নিজের এলাকায় গরীবদের মধ্যে একটি ছাগল সদকা করে দেবে।

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর উদ্দেশ্যে মানত করা শিরক :
মানত পূরণ করা একটি ইবাদত। তাই মানত করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে। মানত পূরণ করতে হবে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে। সুতরাং কোনো ওলীআল্লাহ, পীর-বুযুর্গ, নবী-রাসূলদের নামে মানত করা যাবে না। মানত করলে তা শিরক হবে। অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় হল, এখন মুসলমানেরা শুধু মৃত ওলী-আউলিয়া, পীর-দরবেশের নামে মানত করে তৃপ্ত নয়, বরং তাদের মাজারের কচ্ছপ, কুমির, মাছের নামেও মানত করে থাকে। কতবড় নিকৃষ্ট শিরকের দিকে আমাদের জাতি ধাবিত হচ্ছে। শিরক থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম জাতিকে রক্ষা করুন।

মানত করে যদি তা পূর্ণ করতে না পারে :
কোনো ব্যক্তি বড় একটি মানত করল। যেমন বলল, এ কাজটি অর্জিত হলো আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেব। কাজটি অর্জিত হল, কিন্তু দেখা গেল, এত টাকা দিয়ে তার মসজিদ নির্মাণের সামর্থ্য নেই। হয়ত মানত করার সময়ও সামর্থ্য ছিল না। তখন সে কি করবে? তখন সে ব্যক্তি কসম ভাঙ্গার কাফফারার হিসাবে মানতের কাফফারা আদায় করবে।

حديث عقبة بن عامر عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال “كفارة النذر كفارة اليمين”.صحيح مسلم – الصفحة أو الرقم: 1645

সহিহ মুসলিমে উকবা ইবনে আমের রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, মানতের কাফফরা হল কসম ভঙ্গের কাফফারার মত।

কিন্তু যে কোনো মানত পূর্ণ না করলে কি কাফফারা দিতে হয়?
فقد جاء عن ابن عباس – رضي الله عنهما – قال: “من نذر نذراً لا يطيقه فكفارته كفارة اليمين”، رواه أبو داود وقال الحافظ ابن حجر في بلوغ المرام: “إسناده صحيح، والحفّاظ رجحوا وقفه”، وقال شيخ الإسلام ابن تيمية في الفتاوى (33/49): “فإذا قصد الإنسان أن ينذر لله طاعة، فعليه الوفاء به، لكن إذا لم يوف بالنذر لله، فعليه كفارة يمين عند أكثر السلف”.

অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি এমন মানত করল যা পূর্ণ করার সামর্থ্য তার নেই, সে কসমের কাফফারা আদায় করবে। হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বুলুগুল মারাম কিতাবে এর সূত্রকে বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. তার ৩৩/৪৯ নং ফতোয়ায় বলেছেন: যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে থেকে মানত করে তখন তা পূর্ণ করতেই হয়। কিন্তু যদি পূর্ণ করতে অক্ষম হয়ে যায় তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করবে। পূর্ববর্তী অধিকাংশ আলেম-উলামার অভিমত এটাই।

কসম ভঙ্গের কাফফরা,
দশজন অভাবী মানুষকে খাদ্য বা পোশাক দান করা কিংবা একটি দাস মুক্ত করে দেয়া। নিজেদের নিয়মিত খাবারের মধ্যম ধরনের খাবার দশ জনের প্রত্যেককে দিতে হবে। প্রতি জনের খাদ্যের পরিমাণ হবে কমপক্ষে অর্ধ সা অর্থাৎ কাছাকাছি দেড় কেজি। যদি সে এ তিন পদ্ধতির কোনো একটি দিয়ে কাফফারা আদায় করতে না পারে তাহলে তিন দিন রোজা পালন করবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন : আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফ্‌ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা তোমাদের কসম হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৮৯)

তবে মনে রাখতে হবে, যে মানত পূরণ জায়েয নয় তা পালন না করার কারণে কাফফারা দিতে হয় না। কোনো কোনো ইমাম বলেছেন যে মানত নির্দিষ্ট করা হয়নি তারও কাফফারা দিতে হবে। যেমন কেউ বলল, আমি মানত করলাম বা আমার উপরে মানত আছে। কিন্তু কি মানত করল বা তার দায়িত্বে কি মানত আছে তা নির্দিষ্ট করল না। তাহলে তাকে মানত পূর্ণ না করে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। তাদের দলীল হল :

أخرج الترمذي وابن ماجه حديث عقبة بلفظ ” كفارة النذر إذا لم يسم كفارة يمين ” ولفظ ابن ماجه ” من نذر نذرا لم يسمه ” , وفي حديث ابن عباس يرفعه ” من نذر نذرا لم يسمه فكفارته كفارة يمين ” أخرجه أبو داود

অর্থাৎ, তিরমিজি ও ইবনে মাজা উদ্ধৃত, সাহাবি উকবা ইবনে আমের রা. -এর হাদীসে এসেছে, যখন মানত নির্ধারণ করা হয় না তখন তার কাফফারা হল, কসম ভঙ্গের কাফফারা। আবু দাউদ এ রকম একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন ইবনে আব্বাস রা. থেকে। তবে এ মাসআলাটিতে ফিকাহবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। অধিকাংশ ফিকাহবিদের মত হল, যদি কেউ মানত করল কিন্তু নির্ধারণ করল না, তাহলে তার সামনে দু’টো অবকাশ থাকে। সে ইচ্ছা করলে মানত পূর্ণ করতে পারে আবার কাফফারাও দিতে পারে। আর যদি -মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু সামর্থ্য নেই- এমনটি হয়, তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারার মত কাফফারা দেবে। এ মাসআলাটি সর্বসম্মত। ফিকাহবিদদের একটি দল বলেছেন, যে কোনো মানত, গুনাহের কাজের হোক বা অসমর্থ কাজের হোক তা আদায় না করে কাফফারা দিতে হবে। তাদের মতে কোনো মানত বৃথা যাবে না। হয়ত পূর্ণ করতে হবে। পূর্ণ করতে না পারলে কাফফারা দিতে হবে।

আল্লাহ তাআলা ভাল জানেন।

প্রকাশনায় : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

মানত কি ও মানতের বিধিবিধান

★ মানত সম্পর্কে আমরা কি জানি?★
=================================
লেখাটি যদিচ একটু বড়। তবুও সকল মুসলিম ভাই ও বোনদের লেখাটি
সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ করছি। বেশী বেশী কপি, পেস্ট, শেয়ার করুন।
=================================
★মানত কি? : মানত বা মান্নত আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত
একটি শব্দ। যেমন আমরা কখনো কখনো বলি, যদি আমি পরীক্ষায়
পাশ করি তাহলে মাদরাসায় একটি ছাগল
দান করব। এটি একটি মানত। অতএব, কোনো বিষয় অর্জিত হওয়ার
শর্তে কোনো কিছু করার ওয়াদাকে সাধারণত: আমরা মানত বলে
থাকি।
কেউ বলে মানত, আবার কেউ বলে মান্নত। তবে এটি শর্তযুক্ত মানত।
আবার শর্তহীন মানতও আছে। যেমন,
আনন্দের খবর শুনে কেউ বলল, আমি এটা লাভ করেছি? তাই আমি
মসজিদে একটি ফ্যান দান করব। এটাও মানত। তবে শর্তহীন।
→মানত কাকে বলে? : আমরা বাংলাতে বলি মানত ।
আরবিতে বলা হয় ﻧﺬﺭ (নযর) বহুবচনে নুযুর। মানত বা নযরের
আভিধানিক অর্থ হল, নিজের দায়িত্বে নেয়া। যা নিজের দায়িত্ব
নয় তা অপরিহার্য করে নেয়া।
→শরয়ি পরিভাষায় মানত বলা হয় : নিজের উপর এমন কিছু ওয়াজিব
(আবশ্যিক) করে নেয়া যা আসলে ওয়াজিব ছিল না। সেটা
শর্তযুক্তও হতে পারে আবার
শর্ত মুক্তও হতে পারে।
→★ মানতের হুকুম: মানত করার বিধান কি? ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত
না মুস্তাহাব?
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
আসলে মানত করা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে সব
সময় উম্মতদের নিরুৎসাহিত
করেছেন। বিষয়টি আমরা অনেকেই জানি না। বরং মনে করি মানত
করা খুব সওয়াবের কাজ। আসলে এটি কোনো সওয়াবের কাজ নয়।
বরং মাকরূহ। অধিকাংশ ইমাম ও ফেকাহবিদের অভিমত এটাই।
কারণ, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন।
তবে যদি কেউ মানত করে ফেলে তাহলে তাকে তা পালন করতেই
হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী ও নিয়ম-নীতি আছে। খানিক
পর আমরা
সে বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
→★ মানত করা নিষেধ ★←
*******************************************
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ
করেছেন। → হাদীসে এসেছে :
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺧَﺬَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻳَﻨْﻬَﺎﻧَﺎ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ " ﺇِﻧَّﻪُ
ﻻَ ﻳَﺮُﺩُّ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺨْﺮَﺝُ ﺑِﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺤِﻴﺢِ "
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের
মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে
ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের
করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫)।
→ হাদীসে আরো এসেছে :
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ "
ﺍﻟﻨَّﺬْﺭُ ﻻَ ﻳُﻘَﺪِّﻡُ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻻَ ﻳُﺆَﺧِّﺮُﻩُ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺨْﺮَﺝُ ﺑِﻪِ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞِ " .
ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে আগেও করে না,
পিছেও করে না। বরং এর দ্বারা কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে বের
করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৬, সহিহ সুনান নাসায়ি )
→ হাদীসে আরো এসেছে :
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻧَّﻪُ ﻧَﻬَﻰ
ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭِ ﻭَﻗَﺎﻝَ " ﺇِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺨْﺮَﺝُ ﺑِﻪِ
ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞِ
ইবনু উমার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত
কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না।
এটা শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে মাল খসায়। (সহিহ
মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৭, আহমাদ )
→হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﻻَ ﺗَﻨْﺬُﺭُﻭﺍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭَ ﻻَ ﻳُﻐْﻨِﻲ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﻘَﺪَﺭِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺨْﺮَﺝُ ﺑِﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞِ " .
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা মানত করবে
না। কেননা মানত তাকদীরের কোনো কিছু-কে ফেরাতে পারে না।
এটা শুধু কৃপণ থেকে সম্পদ খসায়। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম, হাদীস নং
৪৩২৯, সহিহ সুনান তিরমিজি, সহিহ সুনান নাসায়ি)
→ হাদীসে আরো এসেছে :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭَ ﻻَ ﻳُﻘَﺮِّﺏُ ﻣِﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺁﺩَﻡَ ﺷَﻴْﺌًﺎ
ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻗَﺪَّﺭَﻩُ ﻟَﻪُ ﻭَﻟَﻜِﻦِ ﺍﻟﻨَّﺬْﺭُ ﻳُﻮَﺍﻓِﻖُ ﺍﻟْﻘَﺪَﺭَ ﻓَﻴُﺨْﺮَﺝُ
ﺑِﺬَﻟِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞِ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦِ ﺍﻟْﺒَﺨِﻴﻞُ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺃَﻥْ ﻳُﺨْﺮِﺝَ " .
সাহবি আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যেই বস্তু
মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি
তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই
নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে
খরচ করতে চায়নি। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৩১)
** উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম ,
→® এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত
করতে নিষেধ করেছেন। অতএব মানত করা
ঠিক নয়। আমরা অনেকে বিপদ-আপদে পতিত হলে মানত করে থাকি।
আর মনে করি এটা সওয়াবের কাজ। আল্লাহ খুশী হবেন। কিন্তু
আসলে তা সওয়াবের কাজ নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে আল্লাহ
খুশী হবেন না। এবং এতে কোনো সওয়াবও হয় না। তাই আমাদের
উচিত হবে কোনো অবস্থায় মানত না করা। অবশ্য মানত করে
ফেললে তা পালন করতেই হবে কারণ মানত
করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
→® দুই. মানত করার মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। এ
কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বুঝিয়েছেন, মানত করা একটি অনর্থক কাজ। সাধারণত
কৃপণ স্বভাবের লোকেরা মানত করে থাকে। তারা সুস্থ ও নিরাপদ
থাকা কালে দান-সদকা করে না। কিন্তু বিপদে পড়লে আল্লাহর
পথে খরচ বা দান সদকা করার বড় বড় মানত করে।
→® তিন. তাকদীরে যা লেখা আছে তা হবেই। মানত করার মাধ্যমে
তাকদীরের লেখা পরিবর্তন করা যায় না।
তাকদীরের প্রতি যাদের যথাযথ ঈমান নেই সাধারণত তারাই মানত
করে থাকে।
→® চার. মানত করা হোক বা না হোক। ফলাফল একই হবে। তাকদীরে
যা লেখা আছে সেটাই আসবে অবধারিতভাবে।
→® পাঁচ. আলোচিত সবগুলো হাদীসই মানত না করার জন্য
মুসলিমদের-কে নিরোৎসাহিত ও নিষেধ করেছে।
বলেছে, এটি কোনো ফল বয়ে আনে না বরং শুধু কৃপণের সম্পদ খরচ
করায়।
→→→এ সকল বিষয় জানার পর কোনো মুসলিমের পক্ষে কোনো
প্রকার মানত করা উচিত নয় । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, যে
কাজটি করতে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, আমরা
সেটাকে সুন্নাত মনে করি।
#বহু আলেম-ওলামাকে বলতে শুনা যায়: আপনি ওখানে মানত করেন,
তাহলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে, বিপদ দূর হয়ে যাবে। অনেক খানকাহ ও
দরবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের দরবারে বা খানকায় মানত
করার জন্য মুসলিম
জনগণকে উৎসাহিত করে থাকে। দরাজ গলায় বলে, আমাদের এই
মাদরাসায় বা এই খানকায় মানত করে কেহ বিফল হয়নি। এমনটি
যারা করেন তারা নিজেরাও এ বিষয়ে বিভ্রান্ত। সাথে সাথে
অন্যদেরও বিভ্রান্ত করে থাকেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে
হিফাজত করুন! দীনে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করুন!
→® ছয়. হাদীসগুলো পাঠ করে কেউ বলতে পারেন, এ সকল হাদীসে
আর্থিক বিষয়াদি তথা ব্যয় ও দান- সদকা করার মানত করা থেকে
নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অতএব কেউ যদি নামাজ, রোজা, হজ,
উমরা কিংবা কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত বিষয়ক মানত
করে তবে দোষের কিছু হবে না।
*আমরা বলব, কথাটি ঠিক নয়। কেননা হাদীসের অর্থ ব্যাপক।
তখনকার মানুষ সাধারণত খরচ বা দান-সদকা করার মানত করত। তাই
এটাকে সামনে আনা হয়েছে।
তাছাড়া আর্থিক মানতের মাঝে বহুবিদ উপকার নিহিত রয়েছে।
মানতকারী ছাড়াও অন্য লোকেরা দান-সদাকা গ্রহণ করে উপকৃত হয়।
তা সত্ত্বেও এটা যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে যে মানতে এমন
বহুমাত্রিক উপকার নেই, তা অনুমোদিত হবার প্রশ্নই আসে না। তাই
নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদতের মানত
করাও ঠিক নয়।
★ মানত করলে তা আদায় করতে হবে ★
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
মানত করা জায়েয নয়। কিন্তু কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার
মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। যাকে আমরা বলি
মানত পুরা করা। মানত পুরা করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহ হবে।
মানত পুরা করা একটি
ইবাদত। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
ﻭَﻟْﻴُﻮﻓُﻮﺍ ﻧُﺬُﻭﺭَﻫُﻢْ
‌ তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে। (সূরা আল হজ, আয়াত ২৯)
আল্লাহ আরো বলেন:
ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻧْﻔَﻘْﺘُﻢْ ﻣِﻦْ ﻧَﻔَﻘَﺔٍ ﺃَﻭْ ﻧَﺬَﺭْﺗُﻢْ ﻣِﻦْ ﻧَﺬْﺭٍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻪُ
তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই
আল্লাহ জানেন। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭০)
আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের প্রশংসায় বলেন : ﻳُﻮﻓُﻮﻥَ
ﺑِﺎﻟﻨَّﺬْﺭِ
তারা মানত পূরণ করে। (সূরা আল-ইনসান, আয়াত ৭)
#এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত হয়,
→® এক. মানত করলে তা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মানত
পূরণ করতে হুকুম করেছেন।
→® দুই. এ সকল আয়াতের কোথাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানত
করতে আদেশ করেননি বা উৎসাহ দেননি। অন্য কোনো আয়াতেও
দিয়েছেন এমনটি
পাওয়া যায় না।
→® তিন. মানত পূরণ করা সৎকর্মশীল ঈমানদারদের একটি গুণ
হিসাবে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন।
তাই মানত পূরণ করলে সওয়াব অর্জিত হবে, প্রতিদান পাওয়া যাবে।
→® চার. মানুষ মানত করলে, কিংবা কোনো খরচ করলে আল্লাহ তা
ভালভাবেই জানেন। তাই মানত পূরণ
না করে কোনো উপায় নেই।
→® পাঁচ. মানত পূরণ করা যখন একটি ইবাদত, তখন তা আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে করতে হবে। মানত পূরণ করা
সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻄﻴﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻴﻄﻌﻪ ، ﻭﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻌﺼﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻼ ﻳﻌﺼﻪ
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার মানত করে সে যেন (তা
পূরণ করে) তাঁর আনুগত্য করে । আর যে
অবাধ্যতার কোনো বিষয়ে মানত করে সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না
করে। (সহিহ বুখারি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, নাসায়ি)
আমরা এই হাদীস থেকে জানতে পারলাম, ভাল কাজের মানত করলে
শর্ত পূরণ হলে সেই মানত পূরণ করতে হয়। তাছাড়া এতে আমরা
মানতের প্রকার সম্পর্কেও ইঙ্গিত পেলাম। যা নিম্নে আলোচিত
হল।
★ যে মানত আদায় করা যাবে না ★
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
উপরোক্ত হাদীস থেকে আমরা যেসব বিষয় জানতে পারলাম, →®
এক. মানত দুই প্রকার।
(ক) মানতের বিষয় হবে শরিয়ত অনুমোদিত ভাল কাজ। যেমন কেউ
বলল, যদি আমি সুস্থ হই তাহলে তিনটি
রোজা রাখব। এখানে মানতের বিষয়টি শরিয়ত অনুমোদিত একটি
ইবাদত ও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের বিষয়। শর্ত পূরণ হলে এ মানত
আদায় করতে হবে।
(খ) শরিয়ত নিষিদ্ধ-মন্দ ও আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ করার
মানত। যেমন কেউ বলল, আজ যদি অমুক দল খেলায় জিতে যায়
তাহলে আমি তোমাদেরকে মদ পান করাব। এ মানত পূরণ করা মোটেই
জায়েয নয়। মানতের
শর্ত পূরণ হোক বা না হোক। কারণ এতে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা
বিদ্যমান। এ ছাড়াও আরেক প্রকার মানত আছে যা অনর্থক কাজ
ছাড়া আর কিছু নয়।
সেটাও পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন কেউ বলল, আমি
যদি রোগমুক্ত হই। তাহলে ময়মনসিংহ থেকে
পায়ে হেটে টঙ্গীর ইজতেমায় যোগ দেব। এ মানত একটি অনর্থক।
ময়মনসিং থেকে টঙ্গী পর্যন্ত হেটে যাওয়ার মধ্যে নিজেকে কষ্ট
দেয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। কাজেই এ ধরনের মানত পূরণ করা
হবে অর্থহীন কাজ তাই
তা পূরণ করা হবে না। যেমন হাদীসে এসেছে :
ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺭَﺃَﻯَ ﺷَﻴْﺨًﺎ ﻳُﻬَﺎﺩَﻯ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﺑْﻨَﻴْﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ " ﻣَﺎ ﺑَﺎﻝُ
ﻫَﺬَﺍ " . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻧَﺬَﺭَ ﺃَﻥْ ﻳَﻤْﺸِﻲَ . ﻗَﺎﻝَ " ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻦْ ﺗَﻌْﺬِﻳﺐِ
ﻫَﺬَﺍ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻟَﻐَﻨِﻲٌّ " . ﻭَﺃَﻣَﺮَﻩُ ﺃَﻥْ ﻳَﺮْﻛَﺐَ .
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার দুই ছেলের
কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এর কি হয়েছে? তারা
উত্তরে বলল, তিনি পায়ে হেঁটে চলার মানত করেছেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ ব্যক্তি নিজেকে
কষ্ট দেয়ায় আল্লাহর কোনো লাভ নেই। এবং তাকে বাহনে চড়ার
নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম হাদীস নং ৪৩৩৬)
#হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, লোকটি এমন একটি কাজের মানত
করেছিল, যা আদায়ে তার কোনো লাভ নেই। কিংবা অন্য কারোও
কোনো উপকার নেই। এটি একটি অনর্থক কাজ। যা করে নিজেকে
কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তাই নবী কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তাকে এ মানত পালন থেকে
নিষেধ করেছেন। অতএব এ ধরনের মানত কেউ করলে তা পূরণ করা
যাবে না।
আরেকটি হাদীস দেখুন :
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﺑﻴْﻨﻤﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ ﻳَﺨْﻄُﺐُ ﺇِﺫَﺍ ﻫُﻮَ ﺑِﺮﺟُﻞٍ ﻗَﺎﺋِﻢٍ ، ﻓﺴﺄَﻝَ ﻋَﻨْﻪُ
ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ : ﺃَﺑُﻮ ﺇِﺳْﺮﺍﺋﻴﻞَ ﻧَﺬَﺭ ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮﻡَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲ ﻭَﻻ ﻳﻘْﻌُﺪَ
، ﻭﻻ ﻳﺴﺘَﻈِﻞَّ ﻭﻻ ﻳﺘَﻜَﻠَّﻢَ ، ﻭﻳﺼﻮﻡَ ، ﻓَﻘﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ : « ﻣُﺮُﻭﻩُ ﻓَﻠْﻴَﺘَﻜَﻠَّﻢْ ﻭﻟْﻴَﺴﺘَﻈِﻞَّ ﻭﻟْﻴُﺘِﻢَّ
ﺻﻮْﻣَﻪُ » ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ .
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খোতবা দিচ্ছিলেন।
হঠাৎ দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিগণ বললেন, আবু ইসরাইল। মানত
করেছে যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না। ছায়ায় (বিশ্রামে)
যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোজা রাখবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন:
তোমরা তাকে আদেশ দাও যেন কথা বলে, ছায়াতে যা এবং রোজা
পূর্ণ করে। (বুখারি)
#এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
→® এক. নিজ সত্তা বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর এমন মানত করলে তা
আদায় করা যাবে না। যেমন আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে
থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। পাশাপাশি
রোজা রাখারও মানত করেছিল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুধু রোজা
রাখতে বললেন আর অন্যগুলো পালন করতে নিষেধ করলেন।
এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে কোনো বৈধ বিষয়কে নিজের জন্য
অবৈধ করা যায় না। তদ্রুপ অবৈধ কোনো কিছুকে বৈধ করা যায় না।
যেমন কেউ মানত করল আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি
গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয়।
→® দুই. কৃত মানত যদি সওয়াবের বিষয় হয় তবে তা আদায় করতে
হবে। আর যদি অনর্থক কোনো বিষয় হয় তবে আদায় করবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻄﻴﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻠﻴﻄﻌﻪ ، ﻭﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻌﺼﻲ
ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻼ ﻳﻌﺼﻪ
যে আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য
করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানি করার মানত করেছে সে যেন
তাঁর নাফরমানি না করে।
→® তিন. কোনো বিষয়েই মানত করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে
নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে।
কারণ এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ
দিয়েছেন।
→® চার. ইবাদত-বন্দেগি ও মানতের নামে নিজের উপর কোনো
কঠোরতা আরোপ করা উচিত নয়। এটি একটি চরমপন্থা। ইসলামের
মধ্যপন্থার পরিপন্থী। আবু ইসরাইল ছায়ায় না বসা, রোদে দাঁড়িয়ে
থাকা ও কথা না বলার যে
মানত করেছিল সেটা ছিল মধ্যপন্থার বিপরীত । তাই তা
পরিত্যাগের নির্দেশ দেয়া হল।
→® পাঁচ. খোতবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। তাইতো
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তাকে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
→® ছয়. খুতবার সময় খতীব প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন। কাউকে
কোনো কিছুর আদেশ বা নিষেধ করতে পারেন।
★ মাজারে মানত করা শিরক ★
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করার পূর্বে একটি ঘটনা না বলে পারছি
না। লোকটি ধর্মপরায়ণ। নিয়মিত নামাজ
পড়েন, রোজা রাখেন। হজ করেছেন। আবার একটি মসজিদ কমিটির
সেক্রেটারী। রিকসায় আমারা এক সাথে
যাচ্ছিলাম। পথে একটি মাজার পড়ল। তিনি রিকসা চালককে
রিকসা থামাতে বললেন। রিকসা থেকে
নেমে তিনি মাজারের কাছে গেলেন। পকেট থেকে চারটি মুরগীর
ডিম বের করে মাজারে রেখে চলে আসলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার! আপনার মত মানুষ মাজারে
ডিম দেয়? তিনি বললেন, আরে আমার স্ত্রী
মানত করেছিল মাজারে এক হালি ডিম দেবে। আমি জানি এটা
ঠিক নয়। তবুও স্ত্রী বলেছে তাই দিলাম।
আমি তাকে বললাম, কাজটি কত মারাত্মক আপনি তা জানেন? এটা
তো শিরক। আপনার স্ত্রী কেন, আপনার
মা বললেও তো আপনি তা করতে পারেন না। তিনি বললেন, আমার
নিয়ত ঠিক ছিল। আমি জানি মাজারে শায়িত ওলী আমার কোনো
উপকার বা ক্ষতি করতে
পারবে না। শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশায়ই ডিম
দান করেছি। আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। মানলাম আপনার
কথা, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে কাজটা করেছেন। তো
মাজারে দান কেন? আল্লাহ কি বলেছেন, মাজারে দিলে আমি
সন্তুষ্ট হই? মাজার ব্যতীত কোনো দরিদ্র- অভাবী মানুষকে দান
করলে আমি কম সন্তুষ্ট হই? তা ছাড়া মানতকারী আপনার স্ত্রীর
নিয়্তটা কি ছিল তা কি জিজ্ঞেস করেছেন? তিনি উত্তর দিলেন,
মাজারে দান বা মানত করার মাধ্যমে মাজারে শায়িত ব্যক্তির
প্রতি সম্মান প্রদর্শন
করা হয়। এতে আল্লাহ খুশী হন। আল্লাহর ওলীকে সম্মানও করা হল,
আবার দানও করা হল। এক কাজে দুই সওয়াব। আমি বললাম, এই তো
আসল কথায় এসেছেন। এ ধারণাটাই তো শিরক। আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জনের নিয়ত করার সাথে সাথে ওলীকে সম্মানের নিয়ত করে
তাকে ইবাদতে অংশীদার করা হল।
• যারা মাজারে দান, সদকা, মানত ইত্যাদি করে থাকে তারা
তিনটি নিয়তের বাহিরে চতুর্থ কোনো নিয়ত করে না।
★প্রথম প্রকার নিয়ত : তারা মনে করে মাজারে মানত বা
দান করলে মাজারে শায়িত ওলী খুশী হন। তিনি খুশী হলে আমার
মনের আশা পূরণ হবে। বিপদ দূর হবে। মানত কারীর ধারণায় মাজারে
মানত করলে মাজারের ওলীর দোয়ায় বা তাঁর নেক নজরে আমার
বিপদ কেটে যাবে বা উদ্দেশ্য অর্জন হবে।
★দ্বিতীয় প্রকার নিয়ত : মাজারে মানত বা দান করছি
আল্লাহর জন্যই। তবে মাজারে শায়িত ওলীর সুপারিশে আমার
মনের আশা পূরণ হবে। ওলীর অসীলায় বা শাফাআতের মাধ্যমে
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
আমি মাজারে মানত বা দান করলাম।
★তৃতীয় প্রকার নিয়ত: আমি জানি যে ওলী ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা
রাখেন না। তাঁর দোয়া বা নেক নজর পাওয়ার নিয়তও আমি করি
না। তাঁর শাফাআত বা অসীলাও আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে তিনি
আল্লাহর
ওলী, তাকে সম্মান করা সওয়াবের কাজ এ জন্য আমি মাজারে
মানত করি। দান-সদকা পাঠাই।
সম্মানিত পাঠক! উপরের তিনটির যে কোনো একটি
নিয়তে আপনি মাজারে মানত বা দান করবেন তো, তা শিরক হবে।
আপনি যখন জীবিত মানুষ বাদ দিয়ে মৃত
মানুষের কবর-মাজারে দান করেন, তখন অবশ্যই একটি নিয়ত পোষণ
করেন, যদিও তা প্রকাশ করেন না। বা অন্যের কাছ থেকে লুকাতে
চান । কিন্তু আল্লাহ তাআলা অন্তর্যামী। তাঁর কাছ থেকে লুকানো
কি সম্ভব?
মানত আদায় করা একটি ইবাদত। এটি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য
নিবেদন করা শিরক। তেমনি এটা আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তের সাথে সাথে অন্যের সুপারিশ,
শাফায়াত, অসীলা বা তার মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখানোও
শিরক। এটাই তো ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার করা।
এমন করলে ইবাদতটি শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয় না। আর
যে ইবাদত শতভাগ আল্লাহর জন্য নিবেদিত নয় তা শিরক, এতে
কোনো
সন্দেহ নেই। মনে রাখতে হবে, যে সকল কথা ও কাজ
ইবাদত বলে গণ্য তা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা
শিরক। এমনিভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদন
করার সাথে সাথে অন্য কোনো সত্তার সন্তুষ্টি, সম্মান, দৃষ্টি
আকর্ষণের নিয়ত করাও শিরক। শিরক মানে তো অংশ দেয়া। এ
ধরনের কথা ও কাজে আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যকে অংশীদার
করা হয়। হাদীসে এসেছে :
ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻧﺬﺭ ﺃﻥ ﻳﻨﺤﺮ ﺇﺑﻼ ﺑﺒﻮﺍﻧﺔ ، ﻓﺄﺗﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﺇﻧﻲ ﻧﺬﺭﺕ ﺃﻥ
ﺃﻧﺤﺮ ﺇﺑﻼ ﺑﺒﻮﺍﻧﺔ ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ : ﻫﻞ ﻛﺎﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺛﻦ ﻣﻦ ﺃﻭﺛﺎﻥ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻳﻌﺒﺪ ؟ ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻻ ، ﻗﺎﻝ : ﻓﻬﻞ ﻛﺎﻥ
ﻓﻴﻬﺎ ﻋﻴﺪ ﻣﻦ ﺃﻋﻴﺎﺩﻫﻢ ؟
ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻻ ، ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
ﺃﻭﻑ ﺑﻨﺬﺭﻙ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻭﻓﺎﺀ ﻟﻨﺬﺭ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ
ﻓﻴﻤﺎ ﻻ ﻳﻤﻠﻚ ﺍﺑﻦ ﺁﺩﻡ ﺍﻟﺮﺍﻭﻱ : ﺛﺎﺑﺖ ﺑﻦ ﺍﻟﻀﺤﺎﻙ ﺍﻟﻤﺤﺪﺙ : ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ – ﺍﻟﻤﺼﺪﺭ :
ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ – ﺍﻟﺼﻔﺤﺔ ﺃﻭ ﺍﻟﺮﻗﻢ : 3313
ﺧﻼﺻﺔ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻤﺤﺪﺙ : ﺳﻜﺖ ﻋﻨﻪ [ﻭﻗﺪ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ
ﺭﺳﺎﻟﺘﻪ ﻷﻫﻞ ﻣﻜﺔ ﻛﻞ ﻣﺎ ﺳﻜﺖ ﻋﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺻﺎﻟﺢ ]
এক ব্যক্তি বাওয়ানা (য়ালামলাম পাহাড়ের পাদ দেশে অবস্থিত)
নামক স্থানে একটি উট জবেহ করার মানত
করেছিল। সে তার মানত আদায় করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস
করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে
স্থানের উদ্দেশ্যে মানত করেছ সেখানে কি জাহেলী যুগে কোনো
প্রতিমা ছিল? লোকেরা বলল, না,
ছিল না। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, সেখানে কি মুশরিকদের
কোনো উৎসব বা মেলা হয়? লোকেরা উত্তর দিল, না, তা হয় না।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
তাহলে তোমার মানত পূর্ণ করতে পার। আর আল্লাহ তাআলার
অবাধ্যতায় কোনো মানত পূর্ণ করা হবে না। আর যে মানত পূরণ
করতে মানুষ সমর্থ
নয় তাও পূরণ করা হবে না। (আবু দাউদ : কিতাব আল আইমান ওয়ান-
নুযূর)
#হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
→® এক. নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবেহ করার মানত পূর্ণ করা জায়েয।
এমনিভাবে নির্দিষ্ট স্থান বা সময়ের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করাও
জায়েয। তবে তা যেন কোনো উৎসব এর স্থান, পূজার বেদী, কবর-
মাজার, দরবার না হয়। কেননা মাজার ও পীরদের দরবার উৎসব
পালনের একটি স্থান। আর এ হাদীসে অনৈসলামিক উৎসব পালনের
স্থান বা সময়ে মানত পূর্ণ করার অনুমতি দেয়নি। মনে রাখতে হবে,
কবর কেন্দ্রিক সকল উৎসব-অনুষ্ঠান জাহেলি যুগের মেলার মত।
এগুলো মুশরিকদের উৎসব।
→® দুই. মানতের মধ্যে যদি আল্লাহ তাআলার নির্দেশের বিপরীত
কিছু থাকে তাহলে সে মানত পূর্ণ করা যাবে না।
→® তিন. মানত যদি এমন হয় যা পূর্ণ করা মানতকারীর পক্ষে
অসম্ভব, তাহলে সে মানত পূর্ণ করার দরকার নেই।
→® চার. আমাদের দেশে মাজার, দরগা, পীরদের দরবারে যে উরস,
ঈসালে সওয়াব মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো মুশরিকদের
উৎসব। তাই এ সকল
স্থানের জন্য গরু, ছাগল ইত্যাদি জাতীয় কোনো কিছু মানত করা
যাবে না। কেননা বর্ণিত হাদীসে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে
চেয়েছেন, সেখানে মুশরিকদের কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান হয় কি-
না। যদি হত তাহলে তিনি সেখানে মানত
পূর্ণ করতে অনুমতি দিতেন না। মাজার, কবর, দরগা, পূজার বেদীতে
আল্লাহ তাআলার নামে মানত করলেও
তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনিভাবে ঐ সকল স্থানে পশু জবেহ করলে
তা আল্লাহ নামে জবেহ বলে গণ্য হবে না।
যদিও জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয়। আমরা দেখলাম
বর্ণিত হাদীসে লোকটি কিন্তু আল্লাহর নামেই জবেহ করত, কেননা
তিনি ছিলেন সাহাবি। তা সত্ত্বেও
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থানটি সম্পর্কে
জানতে চেয়েছেন। বুঝা গেল আল্লাহর নামে মানত ও জবেহ যদি
আপত্তিকর স্থানে অনুষ্ঠিত হয়
তবুও তা শিরক।
→® পাঁচ. এ হাদীসে দেখা যায় মানত পূর্ণ করার সম্পর্কে জানতে
চাওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল, কেউ যদি এ রকম স্থান তথা মাজার,
দরগা, দরবারের জন্য মানত করে
থাকে তাহলেও তা সে স্থানে পূর্ণ করা হবে না। যখন মানত পূর্ণ
করার ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা আছে তখন
মানত করা তো আরো বড় অন্যায়। তাই এ সকল স্থানে মানত করা
যেমন যাবে না। তেমনি মানত করে থাকলে তা পূর্ণও করা যাবে
না। তবে অন্য স্থানে মানত পূর্ণ করতে হবে। যেমন কেউ মানত করল,
আমার ছেলে
পরীক্ষায় পাশ করলে আমি খানজাহান আলীর মাজারে একটি
ছাগল দান করব। ছেলে পরীক্ষায় পাশ করল।
কিন্তু সে জানতে পারল, মাজারে মানত করা শিরক। এখন কি
করবে? এখন সে অন্য স্থানে, অথবা নিজের এলাকায় গরীবদের
মধ্যে একটি ছাগল সদকা করে
দেবে।
★ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর উদ্দেশ্যে মানত করা শিরক★
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
মানত পূরণ করা একটি ইবাদত। তাই মানত করতে হবে শুধুমাত্র
আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে। মানত পূরণ করতে হবে তারই সন্তুষ্টি
অর্জনের নিয়তে। সুতরাং কোনো ওলীআল্লাহ, পীর-বুযুর্গ, নবী-
রাসূলদের নামে মানত করা যাবে না। মানত করলে তা শিরক হবে।
অত্যন্ত দু:খজনক বিষয় হল, এখন মুসলমানেরা শুধু মৃত ওলী-আউলিয়া,
পীর-দরবেশের নামে মানত করে তৃপ্ত নয়, বরং তাদের
মাজারের কচ্ছপ, কুমির, মাছের নামেও মানত করে থাকে। কতবড়
নিকৃষ্ট শিরকের দিকে আমাদের জাতি ধাবিত হচ্ছে। শিরক থেকে
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম জাতিকে রক্ষা করুন।
★মানত করে যদি তা পূর্ণ করতে না পারে :
কোনো ব্যক্তি বড় একটি মানত করল। যেমন বলল, এ কাজটি অর্জিত
হলো আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি
অর্জনের জন্য দশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করে
দেব। কাজটি অর্জিত হল, কিন্তু দেখা গেল, এত
টাকা দিয়ে তার মসজিদ নির্মাণের সামর্থ্য নেই। হয়ত মানত করার
সময়ও সামর্থ্য ছিল না। তখন সে কি করবে?
তখন সে ব্যক্তি কসম ভাঙ্গার কাফফারার হিসাবে মানতের
কাফফারা আদায় করবে।
ﺣﺪﻳﺚ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ " ﻛﻔﺎﺭﺓ ﺍﻟﻨﺬﺭ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ". ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ -ﺍﻟﺼﻔﺤﺔ ﺃﻭ ﺍﻟﺮﻗﻢ : 1645
সহিহ মুসলিমে উকবা ইবনে আমের রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে,
মানতের কাফফরা হল কসম ভঙ্গের কাফফারার মত।
★কিন্তু যে কোনো মানত পূর্ণ না করলে কি কাফফারা দিতে হয়?
ﻓﻘﺪ ﺟﺎﺀ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ - ﻗﺎﻝ : " ﻣﻦ
ﻧﺬﺭ ﻧﺬﺭﺍً ﻻ ﻳﻄﻴﻘﻪ ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻪ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ " ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ
ﺩﺍﻭﺩ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻓﻲ ﺑﻠﻮﻍ ﺍﻟﻤﺮﺍﻡ : " ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ
ﺻﺤﻴﺢ، ﻭﺍﻟﺤﻔّﺎﻅ ﺭﺟﺤﻮﺍ ﻭﻗﻔﻪ " ، ﻭﻗﺎﻝ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳﻼﻡ
ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ( 33/49 ) : "ﻓﺈﺫﺍ ﻗﺼﺪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ
ﺃﻥ ﻳﻨﺬﺭ ﻟﻠﻪ ﻃﺎﻋﺔ، ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺍﻟﻮﻓﺎﺀ ﺑﻪ، ﻟﻜﻦ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﻮﻑ
ﺑﺎﻟﻨﺬﺭ ﻟﻠﻪ، ﻓﻌﻠﻴﻪ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻳﻤﻴﻦ ﻋﻨﺪ ﺃﻛﺜﺮ ﺍﻟﺴﻠﻒ ".
অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি
এমন মানত করল যা পূর্ণ করার সামর্থ্য তার
নেই, সে কসমের কাফফারা আদায় করবে। হাদীসটি আবু দাউদ
বর্ণনা করেছেন। আর হাফেজ ইবনে হাজার রহ.
বুলুগুল মারাম কিতাবে এর সূত্রকে বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. তার ৩৩/৪৯ নং ফতোয়ায় বলেছেন:
যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে থেকে মানত করে
তখন তা পূর্ণ
করতেই হয়। কিন্তু যদি পূর্ণ করতে অক্ষম হয়ে যায় তাহলে কসম
ভঙ্গের কাফফারা আদায় করবে। পূর্ববর্তী অধিকাংশ আলেম-
উলামার অভিমত এটাই।
★কসম ভঙ্গের কাফফরা : দশজন অভাবী মানুষকে খাদ্য বা পোশাক
দান করা কিংবা একটি দাস মুক্ত করে দেয়া।
নিজেদের নিয়মিত খাবারের মধ্যম ধরনের খাবার দশ জনের
প্রত্যেককে দিতে হবে। প্রতি জনের খাদ্যের পরিমাণ হবে
কমপক্ষে অর্ধ সা অর্থাৎ কাছাকাছি দেড় কেজি। যদি সে এ তিন
পদ্ধতির কোনো একটি দিয়ে কাফফারা আদায় করতে না পারে
তাহলে তিন দিন রোজা পালন করবে।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻟَﺎ ﻳُﺆَﺍﺧِﺬُﻛُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻓِﻲ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧِﻜُﻢْ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻳُﺆَﺍﺧِﺬُﻛُﻢْ ﺑِﻤَﺎ
ﻋَﻘَّﺪْﺗُﻢُ ﺍﻟْﺄَﻳْﻤَﺎﻥَ ﻓَﻜَﻔَّﺎﺭَﺗُﻪُ ﺇِﻃْﻌَﺎﻡُ ﻋَﺸَﺮَﺓِ ﻣَﺴَﺎﻛِﻴﻦَ ﻣِﻦْ
ﺃَﻭْﺳَﻂِ ﻣَﺎ ﺗُﻄْﻌِﻤُﻮﻥَ ﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢْ ﺃَﻭْ ﻛِﺴْﻮَﺗُﻬُﻢْ ﺃَﻭْ ﺗَﺤْﺮِﻳﺮُ ﺭَﻗَﺒَﺔٍ
ﻓَﻤَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺠِﺪْ ﻓَﺼِﻴَﺎﻡُ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﺫَﻟِﻚَ ﻛَﻔَّﺎﺭَﺓُ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧِﻜُﻢْ ﺇِﺫَﺍ
ﺣَﻠَﻔْﺘُﻢْ ﻭَﺍﺣْﻔَﻈُﻮﺍ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧَﻜُﻢْ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﺁَﻳَﺎﺗِﻪِ
ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺸْﻜُﺮُﻭﻥَ
আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন
কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা
দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং
এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের
খাবার, যা তোমরা স্বীয়
পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন
দাস মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে
না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের
কাফ্ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা
তোমাদের কসম হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য
তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে
তোমরা শোকর আদায় কর। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৮৯)
তবে মনে রাখতে হবে, যে মানত পূরণ জায়েয নয় তা পালন না করার
কারণে কাফফারা দিতে হয় না। কোনো কোনো ইমাম বলেছেন যে
মানত নির্দিষ্ট করা হয়নি তারও
কাফফারা দিতে হবে। যেমন কেউ বলল, আমি মানত করলাম বা
আমার উপরে মানত আছে। কিন্তু কি মানত করল বা তার দায়িত্বে
কি মানত আছে তা নির্দিষ্ট করল না। তাহলে তাকে মানত পূর্ণ না
করে কসম ভঙ্গের
কাফফারা দিতে হবে। তাদের দলীল হল :
ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﺣﺪﻳﺚ ﻋﻘﺒﺔ ﺑﻠﻔﻆ " ﻛﻔﺎﺭﺓ
ﺍﻟﻨﺬﺭ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺴﻢ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻳﻤﻴﻦ " ﻭﻟﻔﻆ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ " ﻣﻦ
ﻧﺬﺭ ﻧﺬﺭﺍ ﻟﻢ ﻳﺴﻤﻪ " , ﻭﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻳﺮﻓﻌﻪ "
ﻣﻦ ﻧﺬﺭ ﻧﺬﺭﺍ ﻟﻢ ﻳﺴﻤﻪ ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻪ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻳﻤﻴﻦ " ﺃﺧﺮﺟﻪ
ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ
অর্থাৎ, তিরমিজি ও ইবনে মাজা উদ্ধৃত, সাহাবি উকবা ইবনে
আমের রা. -এর হাদীসে এসেছে, যখন মানত নির্ধারণ করা হয় না
তখন তার কাফফারা হল, কসম
ভঙ্গের কাফফারা। আবু দাউদ এ রকম একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন
ইবনে আব্বাস রা. থেকে।
তবে এ মাসআলাটিতে ফিকাহবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।
অধিকাংশ ফিকাহবিদের মত হল, যদি কেউ মানত করল কিন্তু
নির্ধারণ করল না, তাহলে তার সামনে দু’টো অবকাশ থাকে। সে
ইচ্ছা করলে মানত পূর্ণ করতে পারে আবার কাফফারাও দিতে
পারে। আর যদি -মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু সামর্থ্য
নেই- এমনটি হয়,
তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারার মত কাফফারা দেবে। এ
মাসআলাটি সর্বসম্মত।
ফিকাহবিদদের একটি দল বলেছেন, যে কোনো মানত, গুনাহের
কাজের হোক বা অসমর্থ কাজের হোক তা আদায় না করে
কাফফারা দিতে হবে। তাদের মতে কোনো মানত বৃথা যাবে না।
হয়ত পূর্ণ করতে হবে। পূর্ণ করতে না পারলে কাফফারা দিতে হবে।
আল্লাহ তাআলা ভাল জানেন।

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...