Wednesday, May 13, 2020

যে ৫টি কারনে দুয়া কবুল হয় না

৫ টি কারণে আমাদের দু‘আ কবুল হয় না। আসুন, জেনে নিই সেসব কারণ। পাশাপাশি দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় শর্তগুলো সম্পর্কেও জেনে রাখা দরকার।
.
❑ যেসব কারণে দু‘আ কবুল হয় না:
.
[এক.] খাবার, পানীয় ও পোষাক হালাল না হওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ পবিত্র; তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন।...তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন—দীর্ঘ সফরের ফলে যার চুল উশকোখুশকো, চেহারা ধুলোবালিমাখা। সে হাত দুটো আকাশের দিকে উঠিয়ে বলছে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’, কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম আর তার পরিপুষ্টি হয়েছে হারাম দিয়ে; (এমতাবস্থায়) কীভাবে তার দু‘আয় সাড়া দেওয়া হবে?’’ [সহিহ মুসলিম: ১০১৫]
.
সফরে দু‘আ কবুল হয়, হাত উঠিয়ে দু‘আ করলে কবুল হয় এবং নিজেকে হীনজ্ঞান করে আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাকলেও দু‘আ কবুল হয়। এতগুলো শর্ত লোকটি পূরণ করার পরও তার দু‘আ কবুল  হচ্ছে না, কেবল হারাম খাবার, পানীয় ও পোষাকের জন্য। [ইবনু রজব হাম্বলী, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম]
.
[দুই.] সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা বন্ধ করে দেওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে ও অন্যায় কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। নতুবা, অচিরেই এর ফলে আল্লাহ্ তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমরা তাঁর কাছে দু‘আ করবে, কিন্তু তোমাদের দু‘আয় সাড়া দেওয়া হবে না।’’ [তিরমিযি: ২১৬৯, হাদিসটি হাসান]
.
[তিন.] দ্রুত ফল না পাওয়ায় দু‘আ বন্ধ করে দেওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ আল্লাহকে ডাকলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে—‘আল্লাহকে তো ডাকলাম, কিন্তু কোনো সাড়া তো পাওয়া গেলো না।’ [সহিহ বুখারি: ৬৩৪০]
.
[চার.] গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু‘আ করা।
.
[পাঁচ.] মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা: তিনি দু‘আ সাথে সাথে কবুল না করে প্রার্থিত বস্তুর চেয়েও অধিক দেওয়ার জন্য রেখে দেন।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তার প্রার্থনা পূরণ করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন: হয় তার প্রার্থিত বস্তুই তাকে দিয়ে দেন অথবা তার দু'আকে (দু'আর নেকি) তার আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন কিংবা দু'আর পরিমাণ অনুসারে তার অন্য কোনো (অনাগত) বিপদ তিনি দূর করে দেন।’’ [তিরমিযি: ৫/৫৬৬, আহমাদ: ৩/১৮, সহিহ সনদ]
.
❑ দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় শর্তগুলো:
.
❖ শির্কমুক্ত দু‘আ: শর্তহীনভাবে শুধু আল্লাহর কাছেই বলা, মানুষকে দেখানো বা শোনানোর উদ্দেশ্য না থাকা।
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘দ্বীনকে (ইসলামকে) আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করে শুধু আল্লাহকেই ডাকো।’’ [সূরা গাফির, আয়াত: ১৪]
.
❖ দু‘আ কবুলের পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দু‘আ করা
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা দু'আ কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ করো।" [সহিহ আল জামে': ২৪৫, হাদিসটি হাসান]
.
❖ অন্তরকে সজাগ রাখা ও উদাসীনতা পরিহার করা।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘...কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু'আ করলে, আল্লাহ তার দু'আ কবুল করেন না।’’ [সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৩, হাদিসটি হাসান]
.
❖ রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করা।
.
আলি (রা.) বলেন, ‘‘সকল দু'আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবির উপর সালাত পাঠ করবে।’’ [সিলসিলা সহিহাহ: ৫/৫৪-৫৮, সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৮, হাদিসটি হাসান]
.
অন্য রেওয়ায়েতে এই কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।
.
❖ আল্লাহ্ যেকোনো দু‘আ কবুল করতে পারেন, (বৈধ) যেকোনো কিছু দিতে পারেন, এই বিশ্বাস রাখা।
.
এভাবে দু‘আ করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে যে, ‘হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে দাও।’ [সহিহ বুখারি: ৬৩৩৮] সুতরাং, এভাবে দু‘আ করা যাবে না।
.
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘আল্লাহর জন্য কোনো কিছুই এত বড় নয় যে, তিনি তা দিতে পারবেন না।’’ [সহিহ মুসলিম: ২৬৭৯]
.
সুতরাং, দু‘আ করতে হবে দৃঢ়তার সাথে।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...