Monday, May 25, 2020

আল্লাহ শেষরাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন তা কোন দেশের আকাশে?

কুরআন ও রসূল সঃ এর নির্দেশ ও আমল অনুযায়ী যখন দেশ বা জাতীয়তাবাদী সীমান্তের শর্ত বাদ দিয়ে চাঁদের সংবাদ গ্রহনের কথা বলা হয় তখন কিছু ভাই এই প্রশ্ন করে থাকেন।

♦প্রশ্ন♦আল্লাহ তো শেষ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন,,এখন বাংলাদেশে যখন রাত ১ টা বাজে,,আমেরিকা তখন দুপুর ৩ টা, এখন আপনি বলুন আল্লাহ কি এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য বলেছেন নাকি আমেরিকার জন্য সহ?

♦উত্তর:♦ আল্লাহর অবতরণ তো আল্লাহর সিফাত। আল্লাহর সিফাত আর বৃটিশের ভাগ করা সীমান্ত দিয়ে রোজা ঈদের বিধান আলাদা করা দুটি বিষয় কি এক রকমের জিনিস হলো? আমেরিকার শেষ রাত আর বাংলাদেশের শেষ রাত যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি বাংলাদেশেও শেষ রাত সব জায়গায় একই সময় হয় না কিন্তু বালাদেশে রোজা একই দিনে হয়।

আল্লাহর সিফাত নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিৎ নয়। ইমাম মালিক ইবন আনাস, সুফিয়ান ইবন উআয়না, আবদুল্লাহ ইবন মুবারক (র.) প্রমূখ ইমামদের থেকে এই ধরণের বক্তব্য বর্ণিত আছে। এই ধরণের হাদিসগুলো সম্পর্কে তাঁরা বলেন, “কী ধরণের?” - সে প্রশ্ন না তুলে যেভাবে উল্লিখিত হয়েছে সেভাবেই তা মেনে নাও। ইমাম আবু হানিফা(র.)কে মহান আল্লাহর অবতরণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন: ينزل بلا كيف “[মহান আল্লাহ] অবতরণ করেন, কোনোরূপ পদ্ধতি বা স্বরূপ ব্যতিরেকে।”

সহীহ বুখারীতে সিফাত-সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র.) এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন ইবন রজব হাম্বলী(র.) --- “…আমি আবু আব্দুল্লাহকে [আহমাদ বিন হাম্বল(র.)] বললাম, “আল্লাহ কি দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। আমি বললাম, “তাঁর অবতরণ কি ইলম (জ্ঞান) দিয়ে অথবা কী দিয়ে?” তিনি বললেন, “এই বিষয়ে চুপ করো। তোমার কী দরকার এ বিষয়ে? হাদিসে যেভাবে ‘কীভাবে’ বা সীমা ছাড়া বর্ণিত হয়েছে সেভাবে মেনে নাও। তবে কোন আছার বা হাদিস যদি বর্ণিত হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। অথবা যদি কিতাবে বর্ণিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “অতএব, আল্লাহর কোন সদৃশ সাব্যস্ত করো না।” (সুরা নাহল ১৬ : ৭৪) ” ” এর পরে ইবন রজব হাম্বলী(র.) উল্লেখ করেছেন, “ [আল্লাহর] ‘অবতরণ’ বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে, তার উপর নড়াচড়া, স্থানান্তর, আরশ থেকে খালি হওয়া, না থাকা এ সকল কিছু সাব্যস্ত করা বিদআত। এ ব্যপারে গভীরে অনুসন্ধান করা কোনো প্রশংসনীয় কাজ নয়। ”

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানীফা এবং সালাফগণ আল্লাহর সিফাত নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু চাঁদ এবং ঈদের ব্যপারে তারা ফাতওয়া দিয়েছেন।

‘আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া’ নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে-

“পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা রোযা ফরয হবে । চাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নেই । তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌছতে হবে । তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা র:, ইমাম মালিক র: এবং ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল র: এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরয হয়ে যাবে” । (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়ার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল)

[(আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৪৪৩) অথবা (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৮৭১)]

আল্লাহর সিফাত আর বৃটিশের ভাগ করা সীমান্ত দিয়ে রোজা ঈদের বিধান আলাদা করা দুটি বিষয় কখনো তুলনীয় নয়। বৃটিশের দেয়া জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার একপাশে লাইলাতুল ক্বদর একরাতে আর অপর পাশে লাইলাতুল ক্বদর তার পরের রাতে, এটা হতে পারেনা। কারণ কুরআন তো দুই রাতে নাযিল হয়নি, বরং একরাতেই হয়েছে। তেমনি জাতিয়তাবাদী বর্ডারের একপাশে প্রধান শয়তানকে যেদিন বাঁধা হয়, অপরপাশে তার পরের দিন বাঁধা হয়, এটাও হতে পারেনা। তেমনিভাবে জাতিয়তাবাদী সীমান্তের একপাশে যেদিন ঈদ, অন্যপাশে সেদিন রোজা এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।

মুসলমানদের ভূমি একটাই। হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার দিয়ে একক মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করা হারাম। চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে রসূল সঃ দেশের সীমারেখার কোন শর্ত দেননি আমরাও দেই না।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...