Saturday, May 16, 2020

টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের মর্মে দলীল গুলোর তাহক্বীক্ব

টাকা দিয়ে ফিতরা আদায়ের মর্মে দলীল গুলোর তাহক্বীক্ব।
তাহক্বীক্ব:- মুসলেহুদ্দীন মাযহারী

আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
প্রিয় পাঠক! বর্তমানে ফিতরা নিয়ে সর্বত্র ফিতনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আমরা সকলেই জানি যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ খাদ্য দ্রব্য দিয়েই ফিতরা আদায় করেছেন। যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে টাকা বিদ্যমান ছিল।
ফিতরার বিধান হচ্ছে ফরয।আর এটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আর ইবাদত করতে হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পদ্ধতিতে।
সম্মানিত পাঠক!
যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম বন্ধুরা টাকা দিয়ে ফিতরা দেওয়ার মর্মে দলীল গুলো উপস্থাপন করেন অবশ্যই সেগুলোর অবস্থা জেনে নেওয়া আবশ্যক।
কারণ:- এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আর যঈফ হাদীস! যঈফ হাদীস কোন ক্ষেত্রেই আমলযোগ্য নয়।
নিম্নে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় সংক্রান্ত দলীল গুলোর তাহক্বীক্ব করার আগেই বলে রাখি টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় মর্মে একটিও সহীহ হাদীস নেই।

প্রথম যেই দলীল উপস্থাপন করেন সেটি হলো সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত একটি মুআল্লাক্ব হাদীস।
দেখা যাক সেই দলীলের অবস্থা।
বুখারীতে সানাদবিহীন ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেছেন।
দেখুন
প্রথম দলীল:-
كتاب الزكاة
باب العرض في الزكاة
قال طاوس قال معاذ لأهل اليمن ائتوني بعرض ثياب خميص أو لبس في الصدقة مكان الشعير والذرة أهون عليكم وخير لاصحاب النبي بالمدينة
কিতাবুয যাকাত।
অধ্যায়:- পণ্যের যাকাত।
অর্থাৎ:- ত্বঊস রহঃ বলেন,মুআয বিন জাবাল রাঃ ইয়ামানবাসীদেরকে বললেন, তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর ও পরিধেয় বস্ত্র আমার কাছে যাকাত স্বরূপ নিয়ে এসো।ওটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদীনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের জন্যও উত্তম।

তাখরীজ:- সহীহুল বুখারী ২/১১৬ সুনানুদ দারাক্বুতনী ২/৪৮৭ হাদীস নং ১৯৩০ আস সুনানুল কুবরা হাদীস নং ৭৩৭৩ মা'রিফাতুস সুনানি অল আসার হাদীস নং ১৩২৮৪ শারহুস সুন্নাহ লিল বাগাবী ৬/১২ পৃষ্ঠা।

তাহক্বীক্ব:- এই হাদীস যঈফ।

কারণ:- এই হাদীসের সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
এই হাদীসের সানাদে ত্বঊস মুআয রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন।যদিও ত্বঊস মুআয রাঃ থেকে শোনেননি।
ইবনু হাজার আস্কালানী রহঃ বলেন,তাঊস মুআয রাঃ থেকে শোনেননি ( ফাতহুল বারী ১/১৮)।
অনুরূপ কথাই বলছেন ইমাম ক্বাসতালানী ( ইরশাদুশ সারী ১/২৭)।
এই আসারটি যে সমস্ত গ্রন্থে বিচ্ছিন্ন বলা হয়েছে, সেগুলো হলো:-
(ইতহাফুল মাহারাহ লিইবনি হাজার হাদীস নং ১৬৬৫৫ তাগলীক্বুত তা'লীক্ব ৩/১৩ রাওযাতুল মুহাদ্দিসীন হাদীস নং ৬১৩)।
প্রকাশ থাকে যে, এই হাদীস ফিতরা সংক্রান্ত আদৌ নয়। যদিও এই যঈফ আসার থেকে টাকা নয় বরং কাপড় যাকাতের কথা উল্লেখ আছে।
মারে ঘুটনা ফূটে সার।
দ্বিতীয় দলীল:-
حدثنا جرير بن عبد الحميد عن ليث عن عطاء أن عمر كان يأخذ العروض في الصدقة من الورق و غيرها
অর্থাৎ:- নিশ্চয় উমার রাঃ পণ্যদ্রব্য রৌপ্য থেকে এছাড়াও অন্যান্য জিনিস থেকে সাদাকাহ নিতেন।

তাখরীজ:-
( মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হাদীস নং ২/৪০৪ হাদীস নং ১০৪৩৮ জামিউল আহাদীস হাদীস নং ২৯০৬২ কানযুল উম্মাল হাদীস নং ১৭০৮১)।

তাহক্বীক্ব:-
হাদীস যঈফ।
কারণ:- এই হাদীসের সানাদে "লাইস বিন আবী সুলাইম" যঈফ ( আত ত্ববাক্বাতুল কুবরা ১/১২৯ তারীখু ইবনু মাঈন ১/১৫৮ রাবী নং ৫৬০ আহওয়ালুর রিজাল ১/১৪৯ জীবনী নং ১৩২ আয যুআফা অল মাতরূকূন লিন নাসাঈ ১/৯০ রাবী নং ৫১১ আল জারহু অত তা'দীল ৭/১৭৯ আল মাজরূহীন লিইবনি হিব্বান ২/২৩২)।

সে মাতরূকুল হাদীস ( আল কুনা অল আসমা লিইমাম মুসলিম ১/৪১)।
প্রকাশ থাকে যে, এই হাদীসে স্পষ্ট নেই যে, এটা ফিতরা সংক্রান্ত।

তৃতীয় দলীল:-
حدثنا أبو أسامة عن زهير قال سمعت أبا إسحاق يقول ادركتهم وهم يعطون في صدقة رمضان الدراهم بقيمة الطعام.
তাখরীজ:-

অর্থাৎ:- যুহাইর বলেন,আমি আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,আমি তাদের ( তাবিয়ী) এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তাঁরা রমাযানে সাদাকায়ে ফিতর খাদ্যের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন ( মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ২/৩৯৮ হাদীস নং ১০৩৭১)।

তাহক্বীক্ব:- এই হাদীস যঈফ।
কারণ:- এই হাদীসের সানাদে " আবু ইসহাক আস সাবিঈ" এর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল।
আর তাঁর থেকে " যুহাইর বিন মুআবিয়াহ" মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন।
যে সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কিরাম "আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ"এর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল বলেছেন তাদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো।

১) মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে সা'দ মৃত ২৩০ হিজরী বলেন,
ابو إسحاق السبيعي متوفي سنة ١٢٩ه‍ ثقة عابد اختلط بآخره ( الطبقات الكبرى لابن سعد ١/٢٤٠)
আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ মৃত ১২৯ হিজরী বিশ্বস্ত আবিদ ছিলেন। তাঁর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( ত্ববাক্বাতুল কুবরা ১/২৪০)।

২) ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন রহঃ মৃত ২৩৩ হিজরী বলেন,
وقال يحي بن معين سمعت حميد الرؤاسي يقول: إنما سمع إبن عيينة من أبي إسحاق بعد ما اختلط ( المختلطين للعلائ ١/٩٣ راوي/٣٥).
ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন রহঃ বলেন, আমি হুমাইদ আর রাওয়াসী রহঃ কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় ইবনে উয়াইনাহ আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন ( আল মুখতালিত্বীন লিল আলায়ী ১/৯৩ রাবী নং ৩৫)।

৩) আল্লামা ইমাম ইজলী রহঃ মৃত ২৬১হিজরী বলেন,
زهير بن معاوية وكان راويه عن أبي إسحاق السبيعي ويقول: إنه إنما سمع منه بآخره( الثقات للعجلي ١/١٦٦ راوي/٤٦٥)
যুহাইর বিন মুআবিয়াহ আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে শেষে শুনেছেন (আস সিক্বাত লিল ইজলী ১/১৬৬ রাবী নং ৪৬৫)।

৪) আবূ যুরআহ আর রাযী রহঃ মৃত ২৬৪ হিজরী বলেন,
زهير بن معاوية : إنه سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط (المختلطين للعلائ ١/٩٣ ترجمة ٣٥).
যুহাইর বিন মুআবিয়াহ: নিশ্চয় সে আবু ইসহাক থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতি হওয়ার পর শুনেছেন ( আল মুখতালিত্বীন লিল আলায়ী ১/৯৩ রাবী নং ৩৫)।

৫) ইমাম আবু দাউদ আসসাজিস্তানী মৃত ২৭৫ হিজরী বলেন,
ابو إسحاق اختلط بآخره
( سوالات أبي عبيد الاجري أبا داود السجستاني في الجرح والتعديل ١/١٠٦).
আবু ইসহাক আস সাবিইর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( সাওয়ালাত আবী উবায়দিল্লাহ আল আজুর্রী আবা দাউদ ফিল জারহি অত তা'দীল ১/১০৬)।

৬) ইমাম ইবনু আবী হাতিম রহঃ মৃত ৩২৭হিজরী বলেন,
سئل أبو زرعة عن زهير بن معاوية فقال ثقة إلا أنه سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط ( الجرح والتعديل ٣/٥٨٩)
আবূ যুরআহকে যুহাইর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন,সে বিশ্বস্ত কিন্তু আবূ ইসহাক্ব থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতি হওয়ার পর শুনেছেন ( আল জারহু অত তা'দীল লিইবনি আবী হাতিম ৩/৫৮৯)।

৭) ইমাম ক্বুরতুবী আল বাজী আল উন্দুলুসী মৃত ৪৭৪ বলেন,
قال أبو زرعة الرازي زهير بن معاوية ثقة إلا أنه سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط( التعديل والتجريح لمن خرج له البخاري في الجامع الصحيح ٢/٥٩٦ تحقيق أبو لبابة حسين )
আবূ যুরআহ বলেন,যুহাইর বিন মুআবিয়াহ বিশ্বস্ত কিন্তু আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন ( আত তা'দীল অত তাজরীহ লিমান খার্রাজা লাহুল বুখারী ফিল জামিইস সাহীহ ২/৫৯৬)।

৮) ইবনুস স্বলাহ রহঃ মৃত ৬৪৩ হিজরী বলেন,আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( আল ইগতিবাত বিমান রমা মিনার রুআত বিল ইখতিলাত লিইবনিল আজমী মৃত ৮৪১ ১/২৭৩ রাবী নং ৮০ মুক্বাদ্দামাহ ইবনুস স্বলাহ,মা'রিফাতু আনওয়াঈ উলূমিল হাদীস ১/৩৯২ তাহক্বীক্ব নূরুদ্দীন ইতর রহঃ)।
৯) আল্লামাহ ইমাম নববী রহঃ মৃত ৬৭৬ হিজরী বলেন,
فيقبل ما روي عنهم قبل الاختلاط ولا يقبل ما بعده.........سماع عيينة منه بعد اختلاطه ( التقريب والتيسر النووي ١/١٢٠).
ইখতিলাতের আগে বর্ণনা করলে গ্রহণযোগ্য আর ইখতিলাতের পর করলে গ্রহণযোগ্য নয়।
সুফয়ান ইবনে উয়াইনাহ (আবূ ইসহাক্ব) তার থেকে তার মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন ( আত তাক্বরীব অত তাইসীর লিন নববী ১/১২০ তাদরীবুর রাবী ফী শারহি তাক্বরীবিন নববী ২/৮৯৫)।

১০) আল্লামাহ ইমাম ইরাক্বী মৃত ৮০৬ হিজরী বলেন,
أبو إسحاق السبيعي اختلط( شرح التبصرة والتذكرة ألفية للعراقي ٢/٣٣١ التقييد والايضاح شرح مقدمة ابن الصلاح ١/٤٤٥).
আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( শারহুত তাবসিরাহ অত তাযকিরাহ আলফিয়্যাহ লিল ইরাক্বী ২/৩৩১ আত তাক্বয়ীদ অল ঈযাহ শারহ মুক্বাদ্দামাহ ইবনিস স্বলাহ ১/৪৪৫)।

১১) ইবনু হাজার আস্কালানী রহঃ মৃত ৮৫২ হিজরী বলেন,
عمرو بن عبد الله الهمداني أبو إسحاق السبيعي ثقة عابد،من الثالثة اختلط بآخره( تقريب التهذيب جزء الثاني رقم الصفحة ٧٩ ترجمة ٥٦٩٧ تحقيق الشيخ خليل مأمون شيحا تقريب التهذيب ١/٤٢٣ راوي ٥٠٦٥).
আমর বিন আব্দিল্লাহ আল হামদানী আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ বিশ্বস্ত,তৃতীয় স্তরের শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল ( তাক্বরীবুত তাহযীব ২/৭৯ জীবনী নং ৫৬৯৭ তাক্বরীবুত তাহযীব ১/৪২৩ রাবী নং ৫০৬৫)।

১২,১৩) শায়খ আব্দুল কাদির আল আরনাউত রহঃ ও শায়খ আয়মান স্বলেহ শা'বান রহঃ বলেন,আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( তাহক্বীক্ব ও তা'লীক্ব জামিউল উসূল ২/৪২৪ ইবনুল আসীর মৃত ৬০৬ হিজরী)।

১৪) আল্লামাহ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রহঃ মৃত ১৩৫৩ হিজরী বলেন,
وهو مدلس وقد اختلط بآخره( تحفة الاحوذي ٥/٤٣١).
তিনি মুদাল্লিস এবং শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল ( তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৪৩১)।

১৫) আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ মৃত ১৪২০ হিজরী বলেন,
أبو إسحاق السبيعي وهو ثقة ولكنه مدلس مختلط ( سلسلة الأحاديث الضعيفة ١٢/٤١٢).
আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ বিশ্বস্ত কিন্তু তিনি মুদাল্লিস মস্তিষ্ক বিকৃত ছিলেন ( সিলসিলাতুল আহাদীয যঈফাহ ১২/৪১২)।
এছাড়াও তিনি বলেন,শু'বাহ এর বর্ণনা সুরক্ষিত কেননা তিনি তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতি হওয়ার পূর্বে শুনেছেন ( আত তা'লীক্বাতুল হিসান আলা সহীহ ইবনি হিব্বান ১০/১৬১ হাদীস নং ৭০২৩ এর তাহক্বীক্ব)।
এ ছাড়াও সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ এর একটি আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল ( সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ ৫/৮৭ হাদীস নং ২০৫৫ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

১৬) শায়খ শুআইব আল আরনাউত রহঃ মৃত ১৪৩৮ হিজরী বলেন,
فإن زهير بن معاوية سمع من أبي إسحاق بعد الاختلاط( مسند احمد الرسالة ١٨/٤١٠ مسند احمد ٢/١٧٤).
নিশ্চয়ই যুহাইর বিন মুআবিয়াহ আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন ( মুসনাদ আহমাদ আর রিসালাহ ১৮/৪১০ মুসনাদ আহমাদ ২/১৭৪)।

প্রিয় পাঠক:- লেখনীর কলেবর বৃদ্ধি না করে আরো যে সমস্ত গ্রন্থে আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর মস্তিষ্ক বিকৃতির কথা উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোর উদ্ধৃতি উপস্থাপন করলাম।
আপনারা মিলিয়ে দেখতে পারেন।
( আল মু'জামুস সাগীর লিত ত্ববারী ২/৭০৫ ,শারহু সহীহ মুসলিম হাসান আবুল আশবাল ৫/৯৪ ,আত তাম্বীহাতুল মুজমিলাহ আলাল মাওয়াযিইল মুশকিলাহ লিল আলায়ী ১/৭১ তাহক্বীক্ব মারযুক্ব বিন হায়্যাস আলে মারযূক্ব আল অহরানী, শারহুল মওক্বিযাহ লিয যাহাবী ১/১৫৩ তাহক্বীক্ব আবুল মুনযির মাহমূদ বিন মুহাম্মাদ বিন মুস্তাফা বিন আব্দুল লতীফ আল মানয়াবী,মিসবাহুয যুজাজাহ ফী যওয়াইদী ইবনি মাজাহ ১/১২৫, সওয়ালাত আল বারক্বানী লিদ দারিক্বুতনী মৃত ৪২৫ হিজরী ১/৫২ তাহকীক মাজদী আস সাইয়্যিদ ইব্রাহীম,শারহু ইখতিসারি উলূমিল হাদীস লি ইব্রাহিম বিন আব্দিল্লাহ ১/৪৪৪ মাওক্বিউল ইসলাম সওয়াল ও জওয়াব ১/৪১৮ ইত্যাদি)।
এছাড়াও অনেক রয়েছে।

প্রিয় পাঠক!
এবারে আলোচনা করবো ইমাম যাহাবী রহঃ মৃত ৭৪৮ হিজরী।
তিনি বলেছেন,
عمرو بن عبد الله أبو إسحاق السبيعي من أئمة التابعين بالكوفة واثباتهم إلا أنه شاخ ونسي ولم يختلط.وقد سمع منه سفيان بن عيينة وقد تغير قليلاً( ميزان الاعتدال ٣/٢٧٠ ).
আমর বিন আব্দিল্লাহ আবু ইসহাক আস সাবিঈ তাবিয়ী কূফী বিশ্বস্ত কিন্তু তিনি বার্ধক্য হয়ে গিয়েছিলেন এবং ভ্রম হতো মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়নি এবং সুফয়ান ইবনে উয়াইনাহ তাঁর থেকে অল্প পরিবর্তন শুনেছেন ( মীযানুল ই'তিদাল ৩/২৭০)।

উক্ত উক্তি থেকে বুঝা গেল যে,ইমাম যাহাবী রহঃ এর নিকট তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেনি।
আর এই উক্তি নকল করে অনেকেই লম্বা চওড়া উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন যা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
ইমাম যাহাবী রহঃ হলেন,মুতাআখ্খিরীন আর উপরে অধিকাংশ মুহাদ্দিস যারা মুতাক্বাদ্দিমীন ও মুতাআখ্খিরীন সকলেই বলেছেন আবূ ইসহাক্ব আস সাবিইর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল।আর যুহাইর বিন মুআবিয়াহ মস্তিষ্ক বিকৃতি হওয়ার পর শুনেছেন।
অতএব ইমাম যাহাবী রহঃ এর কথা সঠিক নয়।
তবুও তিনি স্মৃতিভ্রমের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
যে সমস্ত মুহাক্বিক্ব ইমাম যাহাবী রহঃ এর বই গুলো তাহক্বীক্ব করেছেন তাঁরা সকলেই মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল এটাই উল্লেখ করেছেন।
যেমন,
( সিয়ারু আলামিন নুবালা ৩/১৩১ মান তাকাল্লামা ফীহি অহুয়া মু'সিক্ব ১/৫৬৯ শারহুল মওক্বিযাহ লিয যাহাবী ১/১৫৩ )।

এবারে আসুন উসূলের দিকে।
জমহুর বা অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনে কিরাম মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছিল বলেছেন আর ইমাম যাহাবী রহঃ বলেছেন মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়নি।
এই অবস্থায় কার কথা গ্রহণযোগ্য হবে?
এবারে দেখুন উসূল বা নীতিমালা কি বলে।

আব্দুল অহ্হাব বিন তাক্বিউদ্দীন আস সুবকী রহঃ মৃত ৭৭১ হিজরী।
তিনি ইজমা নকল করেছেন যে,
যখন জারাহ বা ত্রুটি বর্ণনাকারীদের সংখ্যা বেশি হবে তখন জারাহ প্রাধান্য পাবে।
إن عدد الجارح إذا كان أكثر قدم الجرح إجماعا ( قاعدة في الجرح والتعديل
নিশ্চয় জারাহকারীদের সংখ্যা বেশি হলে সর্বসম্মতিক্রমে জারাহ প্রাধান্য পাবে ( ক্বায়িদাহ ফিল জারহি অত তা'দীল ১/৫৭)।
এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন
ক্বাওয়াইদুত তাহদীস মিন ফুনূনী মুসত্বলাহিল হাদীস
১/১৮৮ ফাতহুল বাক্বী বিশারহি আলফিয়্যাতিল ইরাক্বী ১/৩১১)।
অতএব এই হাদীস যঈফ। কারণ অধিকাংশ মুহাদ্দিস আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ কে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল বলেছেন আর যুহাইর বিন মুআবিয়াহ মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন।
এই হাদীস আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে আর কেউ শুনেনি আর এর কোন সানাদ নেই।
এবারে প্রিয় পাঠক আরো একটি উসূল দেখে নিন।

ডঃ মাহমূদ আত তহ্হান রহঃ বলেন,
وما حدث به بعد الاختلاط: فمردود
ইখতিলাত বা মস্তিষ্ক বিকৃতির পর যা বর্ণনা করবে তা প্রত্যাখ্যাত ( তাইসীরু মুসত্বলাহিল হাদীস ১৫৫ পৃষ্ঠা)।
ইমাম নববী রহঃ একই কথা বলেছেন,
ولا يقبل ما بعده
মস্তিষ্ক বিকৃতির পর বর্ণনা করলে গ্রহণীয় নয় ( আত তাক্বরীব অত তাইসীর লিন নববী ১/১২০)।

এবারে একটি সংশয় এবং তার নিরসন।
ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ বলেছেন,
قال إبن حجر: لم أر في البخاري من الرواية عنه إلا عن القدماء( فتح الباري ١/٤٣١).

ইমাম বুখারী স্বীয় সহীহতে ( আবূ ইসহাক্ব সূত্রে) কারোরই হাদীস সন্নিবেশিত করেননি ক্বাদীমুস সিমা বা ইখতিলাত বা মস্তিষ্ক বিকৃতির আগের ব্যতীত( ফাতহুল বারী ১/৪৩১)।
এটা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহঃ এর ভুল হয়েছে।
কারণ:- তিনি নিজেই আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ কে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল বলেছেন ( তাক্বরীবুত তাহযীব ১/৪২৩ রাবী নং ৫০৬৫)।
আর যুহাইর বিন মুআবিয়াহ মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন এটা প্রমাণিত।
আর ইমাম বুখারী রহঃ যুহাইর বিন মুআবিয়াহ সূত্রে একাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
যেমন,
( সহীহুল বুখারী হাদীস নং ২৭৩৯,৩৬১৫ এবং ৪৯০৩)।
সহীহ মুসলিমেও আছে ।
যেমন,
( সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৬৮৭ ,৪৯৭৬)।
ইবনু হাজার আস্কালানী রহঃ এর এই কথা ভুল।
বিস্তারিত জানতে দেখুন,
শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ আলোচনা করেছেন ( সিলসিলাতুল আহাদীয যঈফাহ ১০/৩৮৮-৩৯১ পৃষ্ঠা)।
এবারে প্রশ্ন হলো যে,
যুহাইর বিন মুআবিয়াহ মস্তিষ্ক বিকৃতির পর শুনেছেন তারপরও সহীহাইন অর্থাৎ বুখারী মুসলিমে কেন?
বুখারী মুসলিমে আবূ ইসহাক্ব আস সাবিঈ থেকে যুহাইর বিন মুআবিয়াহ বর্ণনা করলেও সেটা যঈফ নয়।
এর উত্তর জানতে এই বই দুটি পড়ুন:
১) আল কাওয়াকিবুন নায়্যিরাত বিইবনিল কায়্যাল মৃত ৯৩৯ হিজরী।
২) মারবিয়্যাতুল মুখতালিতীন ফিস সহীহায়ন ডঃ জাসিম মুহাম্মদ রাশিদ ঈসাবী রহঃ।

যারা বলেন, এই আসারে হুম (هم) এর অর্থ সাহাবী তাঁদের কাছে আমি একজন সাহাবীর নাম জানতে চাই,যিনি টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করেছেন।
যদিও এই আসার যঈফ।

চতুর্থ দলীল:-
حدثنا وكيع عن سفيان عن هشام عن الحسن ( البصري) قال لا بأس أن تعطي الدراهم في صدقة الفطر.
অর্থাৎ:- হাসান বাসারী রহঃ বলেন, টাকা দ্বারা সাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করা কোন সমস্যা নেই ( মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হাদীস নং ১০৩৭০)।

তাহক্বীক্ব:- এই হাদীস যঈফ।
কারণ:- উক্ত হাদীসের সানাদে " সুফয়ান আস সাওরী" প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস ( আসমাউল মুদাল্লিসীন ১/৫১ রাবী নং ১৮)।
এই আসারে সুফয়ান সাওরী আন দ্বারা বর্ণনা করেছেন।
যা উসূলে হাদীসের মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য নয় ( উমদাতুল ক্বারী ৩/১১২ আর রিসালাহ ১/৩৭৮ আসমাউল মুদাল্লিসীন ২৩ পৃষ্ঠা)।

প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় সংক্রান্ত সমস্ত আসার গুলো যঈফ প্রমাণিত হলো।
লক্ষনীয় বিষয়:- যারা টাকা দিয়ে ফিতরা প্রমাণ করতে খড়গহস্ত তাঁরা আদৌ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন দলীল উপস্থাপন করতে পারেননি বরং কিছু সাহাবীর মাওক্বুফ যঈফ আসার ও কিছু তাবিঈর মাক্বতু যঈফ দলীল পেশ করেছেন।
যা একেবারেই আমলযোগ্য নয়।
প্রকাশ থাকে যে, এই দলীল গুলো সহীহ হলেও আমলযোগ্য হতো না। কারণ এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের পরিপন্থী।
মাওক্বুফ ও মারফু অর্থাৎ সাহাবী ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে মত পার্থক্য হলে অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলই গ্রহণযোগ্য বা প্রণিধানযোগ্য। cld.

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...