⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব-১
........
বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দীস মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীসের সাবেক অধ্যাপক নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহমাতুল্লহি আলাইহি) তার তামামুল মিন্নাহ কিতাবে হাদিসে কুরাইব সম্পর্কে লিখেছেন,
“ইবনে আব্বাসের হাদীস তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা তাদের শহরের চাঁদ দেখে রোজা রেখেছে কিন্তু রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে জানতে পেরেছে অন্য শহরে/দেশে একদিন আগে চাঁদ দেখা গিয়েছে, এই অবস্থায় তারা তাদের শহরের লোকদের সাথে রোজা চালিয়ে যেতে পারেন চাঁদ দেখা অথবা ৩০ পূর্ণ করা পর্যন্ত। এইভাবে হলে সকল সংশয় দূর হয়ে গেল এবং চাঁদ দেখলে রোজা রাখা ও ছাড়ার নির্দেশ সাধারনভাবে সকল মুসলমানের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং তাদেরকেও শামিল করবে যারা চাঁদ দেখার সংবাদ পেয়েছে যে কোনো দেশে, যে কোনো শহরে, বা অঞ্চলে, কোনো দূরত্ব বিবেচনা না করে।…“
শাইখ আলবানীর কথা এ পর্যন্তই এখানে দেয়া হলো।
(-নাসিরুদ্দীন আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ২৯৮ কিংবা ৩৯৮)।
.
এরপর শাইখ আলবাণী (রহমাতুল্লহি আলাইহি) বলেন
“যেমনটি শায়খুল ইসলাম ইবুন তায়মিয়া (রহমাতুল্লহি আলাইহি) তার ফাতওয়া গ্রন্থের ২৫তম খণ্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় বলেছেন ।“
(আলবানীর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল)
.
উক্ত উদ্ধৃতির পর শাইখ আলবানী (রহমাতুল্লহি আলাইহি) বলেছেনঃ
“ ইবনুল কাইয়িম (রহমাতুল্লহি আলাইহি) তাঁর ‘তাহযীবুস সুনানে’ ও অনুরূপ বলেছেন । ”
(আলবানীর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল)
[ আলবানী ' র আস - সহীহাহা ১ / ২২৪ নং হাদীসের আলোচনা দ্রষ্টব্য ] ।
.
তখনকার যুগের বাস্তবতায় হাদীসে কুরাইবের মধ্যে
(i) রমজানের শুরুর চাঁদের সংবাদ পৌছেছে প্রায় একমাস পর ঈদের আগে
(ii) সিরিয়া কিংবা এইরকম দূর এলাকা থেকে ঈদের চাঁদের সংবাদ মদীনায় পৌছানোর সম্ভাবনা ছিল না যে তার ভিত্তিতে তারা ঈদ করতে পারবেন
(iii) কুরাইব (রহমাতুল্লহি আলাইহি) ছিলেন একজন সাক্ষী এবং রমজানের শুরুর চাঁদের সাক্ষী, ঈদের চাঁদের নয়।
.
এক্ষেত্রে নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহমাতুল্লহি আলাইহি) ব্যাখ্যা করেছেন যে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লহু আনহু এর ইজতিহাদ তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা তাদের শহরের চাঁদ দেখে রোজা রেখেছে কিন্তু রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে জানতে পেরেছে অন্য শহরে/দেশে একদিন আগে চাঁদ দেখা গিয়েছে।
.
অর্থাৎ যারা রমজানের শুরুর চাঁদের সংবাদ ঈদের আগে পায় আর ঈদুল ফিতরের চাঁদের সংবাদ সময়মত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। আর রসূল ﷺ এর চাঁদ দেখার ভিত্তিতে সিয়াম রাখা ও ছাড়ার নির্দেশ সাধারনভাবে সকল মুসলমানের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং তাদেরকেও শামিল করবে যারা চাঁদ দেখার সংবাদ সময়মত পেয়েছে যে কোনো দেশে, যে কোনো শহরে, বা অঞ্চলে, কোনো দূরত্ব বিবেচনা না করে। কারণ রসূল ﷺ চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো দূরত্ব কিংবা কোন শহর দেশ মহাদেশের সীমারেখার কথা উল্লেখ করেননি বা শর্ত দেননি।
.
আমাদের এটাও দেখা উচিৎ এবং বিবেকের কাছে প্রশ্ন করা উচিৎ এই যুগে সিরিয়া ও অন্য পার্শ্ববর্তি দেশ ঐ হাদিসের উপর আমল করছে কি?
.
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের বিবেকের কাছে আগে এই প্রশ্ন করতে হবে যে, এইযুগে কি এমন বাস্তবতা আছে যে একমাস পর চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছায়?
.
ঐ হাদীসের উপর আমল হতে হলে একমাস পর নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছার বাস্তবতা থাকতে হবে। একমাস পর চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছার বাস্তবতা বর্তমান প্রযুক্তি তথা বিদ্যুৎ, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোনের এই যুগে বিরল এবং খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য।
.
যারা প্রশ্ন করেন প্রযুক্তি না থাকলে আমরা কি করব তাদের উত্তর হচ্ছে বিষয়টি নির্ভর করে সংবাদ পৌছেছে কিনা তার উপর। নির্ভরযোগ্য, শরীয়াতসম্মত সংবাদ পেলে আমল জরুরী, অন্যথায় নয়। আমরা আবু দাউদের হাদীস থেকে রসূল ﷺ এর আমল সম্পর্কে জেনেছি। সংবাদ না পেলে রসূল ﷺ নিজেও আমল করতেন না। সংবাদ যতদূর পৌছাবে ততদূরই আমল জরুরী হবে। সংবাদ না পৌছালে নয়।
⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব- ২
........
ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু তো কুরাইবের কথা শুনে প্রথমেই বলে দিতে পারতেন সিরিয়ার চাঁদ দেখা মদীনার জন্য প্রযোজ্য নয় কিংবা একথা বলতে পারতেন দূরবর্তী এলাকার চাঁদ দেখা কিংবা ভিন্ন উদয়স্থলের চাঁদ দেখার সংবাদ অনুযায়ী আমল করা যাবেনা। তিনি তা না করে চাঁদ দেখার ব্যপারটিকে যাচাই করলেন এই প্রশ্নদুটি করে "তুমি এটা কখন দেখেছ? এবং “তুমি কি এটা নিজে দেখেছ?”
.
অর্থাৎ,
(i) ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু একথা বলেননি যে সিরিয়ার চাঁদ দেখা মদীনার জন্য প্রযোজ্য নয়।
(ii) ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহু একথাও বলেননি যে দূরবর্তী এলাকার চাঁদ দেখা অনুযায়ী আমল করা যাবেনা
(iii) ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহু একথাও বলেননি যে ভিন্ন উদয়স্থলের চাঁদ দেখার সংবাদ অনুযায়ী আমল করা যাবেনা।
(iv) ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহু একথাও বলেননি যে অন্য শহর কিংবা দেশের চাঁদ দেখার সংবাদ অনুযায়ী আমল করা যাবেনা।
(v) বরং ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহু প্রশ্নদু’টি করে গুরুত্বের সাথে সিরিয়া থেকে আসা সংবাদটি যাচাই করেছেন।
.
এরপর বিবেচনার বিষয়, কুরাইব রহমাতুল্লহি আলাইহি ছিলেন রমজানের শুরুর চাঁদের সাক্ষী, ঈদের চাঁদের নয়। যেহেতু তার কাছে সিরিয়া কিংবা অন্য দূর কোথাও থেকে ঈদের চাঁদের সাক্ষী সময়মত আসার সম্ভাবনা ছিলনা অথচ ঈদের চাঁদের সংবাদ অনুযায়ী ঈদ করাই রসূল সঃ এর নির্দেশ তাই হয়তো তিনি রসূল ﷺ এর নির্দেশের কথা বলেছেন।
.
কুরাইব রহমাতুল্লহি আলাইহি সিরিয়ায় রমজানের শুরুর চাঁদ এর সংবাদ মদীনায় এনেছিলেন ঈদের কয়েকদিন পূর্বে। ঈদের চাঁদ অনুযায়ী ঈদ করাই রসূল ﷺ এর নির্দেশ। সিরিয়ার রমজানের শুরুর চাঁদে মদীনায় ঈদ করা যায় না কারণ মাস ফিক্সড নয়, মাস যদি শুধু ২৯ দিনে হতো কিংবা শুধু ৩০ দিনে হতো তাহলে সম্ভব হতো, কিন্তু মাস ২৯ বা ৩০ যে কোনোটি হতে পারে। ইবনে আব্বাস কিভাবে জানবেন যে সিরিয়াতে রমজান মাস ২৯ নাকি ৩০ হচ্ছে? ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহুর কাছে ঈদের চাঁদের কোন সংবাদ ছিল না, সিরিয়া বা অন্য দূর অঞ্চল থেকে সময় মত আসার সম্ভাবনাও ছিল না। ফলে তিনি মদীনায় চাঁদ দেখেই ঈদ করা অথবা মদীনার রোজা শুরু হিসেবেই ৩০ পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ঈদের চাঁদের সংবাদ অনুযায়ী ঈদ করাই রসূল ﷺ এর নির্দেশ বিধায়ই হয়তো ইবনে আব্বাস রসূল ﷺ এর নির্দেশ এর কথা বলেছিলেন।
.
রসূল ﷺ এর নির্দেশের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই
(i) রসূল ﷺ একথা বলেননি যে সিরিয়ার চাঁদ দেখা মদীনার জন্য প্রযোজ্য নয়।
(ii) রসূল ﷺ একথাও বলেননি যে দূরবর্তী এলাকার চাঁদ দেখা অনুযায়ী আমল করা যাবেনা
(iii) রসূল ﷺ একথাও বলেননি যে ভিন্ন উদয়স্থলের চাঁদ দেখার সংবাদ অনুযায়ী আমল করা যাবেনা।
(iv) রসূল ﷺ একথাও বলেননি যে অন্য শহর কিংবা দেশের চাঁদ দেখার সংবাদ অনুযায়ী আমল করা যাবেনা।
(v) বরং রসূল ﷺ দুজন সাক্ষীর চাঁদ দেখার সংবাদে রোজা ঈদ করতে বলেছেন। রাসূল ﷺ দুইজন স্বাক্ষ্যের কথা বলেছেন। রাসূল ﷺ বলেননি শুধু মদীনার বর্ডারের ভিতরের দুইজন বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের দু'জন বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের দুইজন। দুইজন বলতে গোটা বিশ্বের যেকোন দুইজন মুসলিম। আর "তোমরা" বলতে শুধু মদীনার বর্ডারের ভিতরের মানুষ, বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের মানুষ, বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের মানুষকে নির্দিষ্ট করেননি। বরং "তোমরা" বলতে পৃথিবীর সকল মানুষ।
(vi) শুধু তাই নয় রসূল ﷺ মদীনায় চাঁদ না দেখা যাওয়ায় ৩০ তম রোজা শুরু করা স্বত্তেও দূর শহর থেকে ইফতারীর কিছু পূর্বে আসা কাফেলা কর্তৃক গতদিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার সংবাদ অনুযায়ী রোযা ভেঙ্গেছেন।
⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব- ৩
........
হাদীসে কুরাইবের ব্যাখ্যায় হিজরী ৭ম শতাব্দীর হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকিহ ও মুজতাহিদ সমসাময়িক সিরীয় আলিমগণের মুকুটমণি আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনু কুদামা আল মাকদিসী আল দিমাশকী আল হাম্বলী রহমাতুল্লহি আলাইহি তার মুগণী কিতাবে লিখেছেন,
“তারা শুধুমাত্র কুরাইব রহমাতুল্লহি আলাইহি এর কথায় রোযা বন্ধ করতে (ঈদ করতে) পারতেন না”।
(আল মুগনী, অধ্যায়- "যখন এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখবে, সকল দেশের অধিবাসীদের জন্যই রোজা জরুরী হবে")
পাকিস্তানের মুফতিয়ে আজম, মুফতি রফী উসমানী, তার "মাছাবাহ" এর মধ্যে এটা উল্লেখ করেছেন এবং কানাডার বিশিষ্ট আলিম, শাইখ ইউসুফ বাদাত, তা ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন।
তারা শুধুমাত্র কুরাইব রহমাতুল্লহি আলাইহি এর কথায় রোযা বন্ধ করতে পারতেন না কারন ঈদ করতে হলে ঈদের চাঁদের দুইজন সাক্ষী প্রয়োজন। দু’জনের সাক্ষী ছাড়া রোযা ছেড়ে ঈদ করা যায়না। কুরাইব ছিলেন একজন সাক্ষী তাও রমজানের শুরুর চাঁদের, ঈদের চাঁদের নয়। সিরিয়ার রমজানের শুরুর চাঁদে মদীনায় ঈদ করা যায় না কারণ মাস ফিক্সড নয়, মাস যদি শুধু ২৯ দিনে হতো কিংবা শুধু ৩০ দিনে হতো তাহলে সম্ভব হতো, কিন্তু মাস ২৯ বা ৩০ যে কোনোটি হতে পারে। ইবনে আব্বাস কিভাবে জানবেন যে সিরিয়াতে রমজান মাস ২৯ নাকি ৩০ হচ্ছে? ইবনে আব্বাসের কাছে ঈদের চাঁদের কোন সংবাদ ছিল না, সিরিয়া বা অন্য দূর অঞ্চল থেকে সময় মত আসার সম্ভাবনাও ছিল না। ফলে তিনি মদীনায় চাঁদ দেখেই ঈদ করা অথবা মদীনার রোজা শুরু হিসেবেই ৩০ পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ঈদের চাঁদের সংবাদ ছাড়া ঈদ করা যায়না বিধায়ই হয়তো ইবনে আব্বাস রসূল ﷺ এর নির্দেশ এর কথা বলেছিলেন এবং শুধু কুরাইবের কথায় রোযা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেননি। এটা ছিল সেই পরিস্থিতিতে তার নিজস্ব ইজতিহাদ।
কিন্তু রসূল ﷺ এর নির্দেশ সাধারনভাবে সকল মুসলমানের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং তাদেরকেও শামিল করবে যারা চাঁদ দেখার সংবাদ সময়মত পেয়েছে যে কোনো দেশে, যে কোনো শহরে, বা অঞ্চলে, কোনো দূরত্ব বিবেচনা না করে। কারণ রসূল ﷺ চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো দূরত্ব কিংবা কোন শহর দেশ মহাদেশের সীমারেখার কথা উল্লেখ করেননি বা শর্ত দেননি।
জ্ঞানের সুবিশাল স্তম্ভ ইমাম ইবনে কুদামাহ্ রহমাতুল্লহি আলাইহি তার মতামত উল্লেখ করে বলেন,
“কোনো এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখলে সকল দেশের মানুষের জন্য সিয়াম (রোযা) রাখা জরুরী হবে। ফকিহ আবুল লাইছ এবং কিছু শাফেয়ী ফকিহগণও এ মত দিয়েছেন। ”
(ইবনে কুদামাহ এর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হলো। )
[মুগণী, দারুল হাদীস কায়রো মিশর, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা - ১২১]
জ্ঞানের উজ্জল নক্ষত্র ইমাম ইবনে কুদামা রহমাতুল্লহি আলাইহি বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন,
“আমাদের এই আয়াত রয়েছে ‘তোমাদের যে কেউ এ (পবিত্র রমযান) মাসের সাক্ষ্য/প্রমাণ পাবে সেই যেন তাতে (এ মাসে) রোযা রাখে,’ এবং রাসূল সঃ এর বেদুঈনকে দেয়া সেই বাণী যখন সে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ‘তিনি কি আল্লাহ যিনি আপনাকে বছরের এই মাসে রোযা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি জবাব দিলেন ‘হাঁ’ এবং অন্য একজনকে দেয়া তাঁর সেই বাণী যখন তিনি জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন ‘রোযার ব্যাপারে আল্লাহ আমাদের উপরে কি বাধ্যতামূলক করেছেন?’ তিনি জবাব দিলেন ‘রমজান মাস’ । এটা মুসলিমদের সম্মিলিত মত যে রমজান মাসের রোযা বাধ্যতামূলক এবং এ মাসের প্রথম দিন ধার্য হয় নির্ভরযোগ্য মুসলিমদের সাক্ষ্য দ্বারা যখন এর পরে রোযা রাখা সকল মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এবং এটাও যে রমজান মাস হচ্ছে দুই চাঁদের মধ্যবর্তী, এবং এটাও প্রতিষ্ঠিত যে, এর প্রথম দিন প্রত্যেকের জন্য একটাই সুনির্দিষ্ট দিন বিবেচিত হবে সকল আহকাম (আইন কানুন) এর ব্যাপারে যেমন ঋণ পরিশোধের শেষ সীমা, তালাকের কার্যকারিতা, দাস মুক্ত করা, কসম পূর্ণ করা এবং এধরণের অন্যান্য আইন। সুতরাং ‘নস’ (কুরআন ও হাদিসের পরিষ্কার ভাষ্য) অনুযায়ী এবং মুসলিমদের ঐকমত্য ও ঐক্যবদ্ধতার জন্যেও। এটাও যে, নির্ভরযোগ্য-সাক্ষ্য প্রমানিত হবে চাঁদ দেখার দ্বারা, সুতরাং রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হবে নিকটবর্তি দুই শহরের মতই ”।
(ইমাম ইবনে কুদামাহ রহমাতুল্লহি আলাইহি এর বর্ণনা এ পর্যন্তই এখানে দেয়া হল )
পাকিস্তানের মুফতিয়ে আজম মুফতি রফী উসমানী তার মাছাবাহ এর মধ্যে এটা উল্লেখ করেছেন এবং কানাডার বিশিষ্ট আলিম শাইখ ইউসুফ বাদাত তা ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন।
সুতরাং রমজানের প্রথম দিন সকলের জন্য একটাই সুনির্দিষ্ট দিন হওয়া উচিৎ। কারণ এটা তারিখের সাথে সম্পর্কিত। আর তারিখ আইনের সাথে সম্পর্কিত।
এলাকা ভেদে তারিখ ভিন্ন হলে এক এলাকার তারিখ অনুযায়ী রোযা রেখে অন্য তারিখের এলাকায় ঈদ করলে রোযা ২৮ বা ৩১ হয়ে যায় অথচ রাসূল ২৮ বা ৩১ রোজা রাখতে বলেননি।
এলাকা ভেদে তারিখ ভিন্ন হলে সর্বশেষ যে সীমা পর্যন্ত একই তারিখ হলো এবং তার পাশের এলাকায় ভিন্ন তারিখ হলো সেই সীমার একপাশে রোজা অন্যপাশে ঈদ হবে ফলে দুই এলাকার সীমান্তের মানুষ রোজা নাকি ঈদ করবে তা নিয়েও সমস্যা হবে এবং একই দিন রোজা ও ঈদ উভয়টির আমল হয়ে যাবে আর ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।
তাছাড়াও কুরআন তো একরাত্রেই নাযিল হয়েছে। মূল শয়তান কে তো একদিনেই বাঁধা হয়। জান্নাতের দরজা একদিনেই খোলা হয়, জাহান্নামের দরজা একদিনেই বন্ধ হয়।
সম্ভবত এসকল দিক বিবেচনা করেই ইমাম ইবনে কুদামা রহ. বলেছেন যে রমজানের প্রথম দিন প্রত্যেকের জন্য একটাই সুনির্দিষ্ট দিন বিবেচিত হবে, কোনো এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখলে সকল দেশের মানুষের জন্য রোযা রাখা জরুরী হবে এবং রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হবে নিকটবর্তি দুই শহরের মতই।
⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব- ৪
........
হাদীসে কুরাইবের ব্যাখায় ইমাম শাওকানী রহমাতুল্লহি আলাইহি তাঁর নাইলুল আওতার কিতাবে লিখেছেন:
وَاعْلَمْ أَنَّ الْحُجَّةَ إنَّمَا هِيَ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ رِوَايَةِ ابْنِ عَبَّاسٍ لَا فِي اجْتِهَادِهِ الَّذِي فَهِمَ عَنْهُ النَّاسُ وَالْمُشَارُ إلَيْهِ بِقَوْلِهِ : " هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " هُوَ قَوْلُهُ : فَلَا نَزَالُ نَصُومُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلَاثِينَ ، وَالْأَمْرُ الْكَائِنُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ مَا أَخْرَجَهُ الشَّيْخَانِ وَغَيْرُهُمَا بِلَفْظِ : { لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْا الْهِلَالَ ، وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ } وَهَذَا لَا يَخْتَصُّ بِأَهْلِ نَاحِيَةٍ عَلَى جِهَةِ الِانْفِرَادِ بَلْ هُوَ خِطَابٌ لِكُلِّ مَنْ يَصْلُحُ لَهُ مِنْ الْمُسْلِمِينَ
“জেনে রাখ, (আমাদের কাছে) হুজ্জত (সুস্পষ্ট প্রমাণ) সাব্যস্ত হয় ইবন আব্বাস (রদিআল্লহু আনহু) -এর মারফু' রেওয়ায়াত থেকে, তার ইজতিহাদ থেকে নয় লোকজন যা তার থেকে বুঝেছে এবং তাঁর বর্ণনায় যেটি এসেছে "এভাবে রাসূল ﷺ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন" সেটি তারই মন্তব্য; (এজন্যই তিনি বলেছেন): "আমরা সিয়াম পালন করে যাচ্ছি ত্রিশদিন পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত"। রাসূল ﷺ এর নির্দেশটি নিহিত রয়েছে সেই হাদীসটিতে যা শায়খাইন (বুখারী ও মুসলিম) ও অন্যান্যদের কর্তৃক সংকলিত হয়েছে: "নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন শুরু করবে না এবং তা না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন বন্ধ করবে না; যদি গোপন থাকে তাহলে ত্রিশ দিনে (গণণা) পূর্ণ করবে"।
(ইমাম শাওকানীর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হয়েছে)
[নাইলুল আওতার ৪র্থ খন্ড]
.
ইমাম শাওকানী রহমাতুল্লহি আলাইহি এরপর বলেন,
“ইবনে আব্বাস রাদিললহু আনহু বলেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর কোনো শব্দ বা তার শব্দের কোনো অর্থ বর্ণনা করেননি, যার ফলে তার বাণীর বৈশিষ্ট্য ও ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যাবে।
তাছাড়া রমাজান মাসের প্রথম দিকে ইবনে আব্বাস রাঃ এর নিকট সিরিয়াবাসীর নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছেনি। বরং রমাজান মাসের শেষের দিকে তার নিকট এর সংবাদ পৌঁছে।“
(ইমাম শাওকানীর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হয়েছে)
[নাইলুল আওতার ৪র্থ খন্ড]
.
সুতরাং এ থেকে বুঝা যায়
(i) সেই পরিস্থিতিতে ইবনে আব্বাসের নিজস্ব ইজতিহাদ সার্বজনীন আইনের জন্য হুজ্জত বা সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে প্রযোজ্য নয়।
(ii) তার ইজতিহাদ থেকে কিছু লোক যেই বুঝ নিয়েছে যে, “দূর থেকে সময়মত চাঁদ দেখার সংবাদ আসলেও নিজের এলাকার সীমারেখার ভিতর আলাদা চাঁদ না দেখলে মাস শুরু করা যাবেনা”, কিছু লোকের এই বুঝ, সার্বজনীন আইনের জন্য হুজ্জত বা সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে প্রযোজ্য নয়।
(iii) বরং সার্বজনীন আইনের জন্য হুজ্জত বা সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে প্রযোজ্য হবে রসূল ﷺ এর মারফু হাদীস "চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোজা রাখ এবং চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোজা ছাড়ো এবং এর ভিত্তিতেই কুরবানী করো। যদি গোপন থাকে ত্রিশ পূর্ণ করো এবং যদি (মুসলিমদের) দু’জন স্বাক্ষ্য দেয় যে, তারা (নতুন চাঁদ উদয়ের ব্যাপারে) দেখেছে, তাহলে তোমরা রোজা রাখো ও ছাড়ো"। [নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, হাদিস # ২১১৬।]
(iv) এখানে রাসূল ﷺ দুইজন স্বাক্ষ্যের কথা বলেছেন। রাসূল ﷺ বলেননি শুধু মদীনার বর্ডারের ভিতরের দুইজন বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের দু'জন বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের দুইজন। দুইজন বলতে গোটা বিশ্বের যেকোন দুইজন মুসলিম।
(v) আর "তোমরা" বলতে শুধু মদীনার বর্ডারের ভিতরের মানুষ, বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের মানুষ, বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের মানুষকে নির্দিষ্ট করেননি। বরং "তোমরা" বলতে পৃথিবীর সকল মানুষ।
(vi) কাজেই চাঁদ দেখা ও সিয়াম শুরুর বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো একটি জাতিয়তাবাদী সীমারেখার লোকজনকে বুঝাচ্ছে না বরং সমস্ত মুসলিমদেরকেই বুঝাচ্ছে।
.
তাই ইমাম শাওকানী বলেছেন,
“রাসূলুল্লাহর ﷺ আদেশ আঞ্চলিক বিভিন্নতার জন্য পৃথক পৃথক হয়নি, সকল মুসলমান উক্ত আদেশে সম্বোধিত হয়েছেন, সুতরাং এক নগরের রূয়ত (দেখা) অন্য নগরের প্রতি প্রযোজ্য হওয়ার ব্যবস্থা – না হওয়ার ব্যবস্থা অপেক্ষা সুস্পষ্ট। কারণ এক শহরের মুসলমানের চাঁদ দেখা, সকল মুসলমানের দেখার মতোই, সুতরাং সেই শহরের মুসলমানগণের উপর যা প্রযোজ্য হবে, অপর স্থানের মুসলমানদের উপর ও তাই বলবৎ হবে”।
(ইমাম শাওকানীর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হয়েছে)
[(নাইলুল আওতার)(৪/১৬৬)]
.
ইমাম শাওকানীর বক্তব্য থেকে আমরা আরও বুঝলাম
(i) ইবনে আব্বাস নাবী ﷺ এর নির্দেশের কথা বলেছেন কিন্তু সেই নির্দেশ কি অথবা তার সেই নির্দেশ থেকে কোনো শব্দ বা বাক্য উল্লেখ করেননি যা থেকে বোঝা যাবে সিরিয়ার চাঁদ দেখা মদীনার জন্য প্রযোজ্য নয়। সিরিয়ার চাঁদ দেখা মদীনার জন্য প্রযোজ্য নয় অথবা দূরবর্তী অঞ্চল কিংবা ভিন্ন উদয়স্থলের চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য নয় এই মর্মে রসূল ﷺ এর কোনো বাণী ইবনে আব্বাস বলেননি।
(ii) তাছাড়া ইবনে আব্বাস তো সময়মত সংবাদ পাননি। তিনি রমজানের শুরুর চাঁদের সংবাদ পেয়েছেন ঈদের পূর্বে। হযরত কুরাইব রহমাতুল্লহি আলাইহি-এর সংবাদ এবং শামবাসীর চাঁদ দেখাকে গ্রহণ না করা এটা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদিআল্লহু আনহু-এর সেই পরিস্থিতিতে নিজস্ব ইজতিহাদ (গবেষণা বা সিদ্ধান্ত)। আর সেই পরিস্থিতিতে ইবনে আব্বাসের নিজস্ব ইজতিহাদ সার্বজনীন আইনের জন্য হুজ্জত বা সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে প্রযোজ্য নয়। আর তার ইজতিহাদ থেকে কিছু লোক যেই বুঝ নিয়েছে যে, “দূর থেকে সময়মত চাঁদ দেখার সংবাদ আসলেও নিজের এলাকার সীমারেখার ভিতর আলাদা চাঁদ না দেখলে মাস শুরু করা যাবেনা”, কিছু লোকের এই বুঝ, সার্বজনীন আইনের জন্য হুজ্জত বা সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে প্রযোজ্য নয়।
.
নবাব সিদ্দীক হাসান খান তার রওযাতুন নাদীয়াহ গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ৩৩১ পৃষ্ঠায় ইমাম শাওকানীর এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন।
.
ইমাম শাওকানী (রহমাতুল্লহি আলাইহি) (১১৭৩-১২৫৫ হিজরী.) সংকলিত মা'রিফা, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত الدراري المضية شرح الدرر البهية গ্রন্থের ১ম খন্ডের ২১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন
واما کونه اذا رآه اهل بلد لزم سائر البلاد الموافقة)۱(، فوجه الأحاديث أاصرحنة بالصيام لرؤيته، والأمطار لرقبته: وهي خطاب لجميع الأمة ، فن رآه منهم في اي كان ، كان ذلك رؤية م -م
অর্থাৎ:- “যখন কোনো দেশবাসী নতুন চাঁদ দেখবে তখন সকল দেশের সমস্ত অধিবাসীর উপর নতুন চাঁদ দেখা দেশটির অনুরূপ আমল লাযেম (আবশ্যক) হবে। কেননা অনেক সুস্পষ্ট হাদীস বিশ্লেষণ করেছে যে, চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই রোযা রাখতে হবে এবং ঈদ করতে হবে। হাদীসে রোযা রাখার ও ঈদ করার উক্ত সম্বোধন সকল উম্মতের জন্য। অতএব, উম্মতের যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো স্থান হতে নতুন চাঁদ দেখবে, উক্ত নতুন চাঁদ দেখাই সকল উম্মতের দেখা হিসেবে গণ্য হবে।“
(তার কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল)
⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব-৫
........
সম্মানিত পাঠক, আসুন প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদ এর লেখক, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহমাতুল্লহি আলাইহি)., যিনি হাম্বলী মাযহাবের প্রধান ইমাম, এবং যাকে ইমামু আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতও বলা হয়, তার মতামত জেনে নেই।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহমাতুল্লহি আলাইহি) (২৪১ হি.)-এর ছাত্র ইমাম আবু দাউদ সিজিস্তানী (রহমাতুল্লহি আলাইহি) (২৭৫ হি.) যিনি ‘‘আসুসনান’’-এর সংকলক, ইমাম আহমদ রাহ.-এর কাছে যেসব ফিকহী মাসাইল সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন বা তাঁর উপস্থিতিতে অন্য কেউ করেছিলেন তা একটি আলাদা কিতাবে সংকলিত হয়েছে। ‘মাসাইলু আহমদ’ নামে তা মুদ্রিত ও প্রকাশিত। এই কিতাবে লিখিত হয়েছে-
ইমাম আবু দাউদ সিজিস্তানী (রহমাতুল্লহি আলাইহি) বর্ণনা করেছেন,
আমি আহমদ (রহমাতুল্লহি আলাইহি) কে বলতে শুনেছি, তাঁকে কেউ প্রশ্ন করলেন,
“আপনার মতামত কি কুরাইবের হাদীস অনুযায়ী? অর্থাৎ, ঐ হাদীস যাতে আছে যে, কুরাইব শাম থেকে মদীনায় এলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লহু আনহু) তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন (তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?)”
আহমদ ইবনে হাম্বল (রহমাতুল্লহি আলাইহি) বললেন,
“না। (অর্থাৎ আমার মতামত সে অনুযায়ী নয়)”।
আহমদ ইবনে হাম্বল (রহমাতুল্লহি আলাইহি) বললেন,
“যখন (এ এলাকার লোকদের) পরিষ্কার জানা হয়ে যাবে যে, (ঐ এলাকার লোকেরা) এক দিন আগে চাঁদ দেখেছে তখন এদেরকে সেদিনের রোযা কাযা করতে হবে। “
(এরপর আবু দাউদ (রহমাতুল্লহি আলাইহি) এ হাদীসের পুরা মতন উল্লেখ করেন।)
(আবু দাউদ সিজিস্তানীর বর্ণনা এ পর্যন্তই এখানে দেয়া হল)
[(মাসাইলু ইমাম আহমদ, আবু দাউদ সিজিস্তানী পৃষ্ঠা: ১২৮, বর্ণনা: ৬১৬, আবু মুয়ায তারিক সম্পাদিত এডিশন)]
কুরাইবের এই হাদীসকে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহমাতুল্লহি আলাইহি) সার্বজনীন দলীল হিসেবে গ্রহণ করেননি বা এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেননি। হাদীসে কুরাইব হচ্ছে সাহাবীর কথা ও কাজ অর্থাৎ মাওকুফ হাদীস বা আছার। এটা ইবনে আব্বাস রাঃ এর সেই পরিস্থিতিতে নিজস্ব ইজতিহাদ ছিল। আর রাসূল ﷺ এর কথা ও কাজ হচ্ছে মারফু হাদীস। মাওকুফ হাদীস এর বিপরীতে মারফু হাদীস পাওয়া গেলে আমল এর ক্ষেত্রে মারফু হাদীস প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ আছার বা সাহাবীর কথা কাজ বা নিজস্ব ইজতিহাদের বিপরীতে রাসূল ﷺ এর কথা ও কাজ পাওয়া গেলে, আমল এর ক্ষেত্রে রাসূল ﷺ এর কথা ও কাজ প্রাধান্য পাবে। আর কুরআনের আয়াত হচ্ছে আল্লাহর কথা। তাই কুরআনের আয়াত, আমল এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে।
সম্ভবত এসকল দিক বিবেচনা করেই আহমদ বিন হাম্বল (রহমাতুল্লহি আলাইহি) হাদীসে কুরাইব যা সাহাবীর কথা-কাজ বা মাওকুফ হাদীস এর পরিবর্তে কুরআনের আয়াত ও রাসূল ﷺ এর কথা-কাজ বা মারফু হাদীসকে প্রাধান্য দিয়ে এর উপরে আমল করার মতামত দিয়েছেন এবং হাম্বলী মাযহাবে সেটাই সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহিত হয়েছে।
⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব- ৬
........
হাদীসে কুরাইব হচ্ছে সাহাবীর কথা ও কাজ অর্থাৎ মাওকুফ হাদীস অথবা আছার। আর রসূল ﷺ এর কথা ও কাজ হচ্ছে মারফু হাদীস। আছার অথবা মাওকুফ হাদীসের বিপরীতে মারফু হাদীস পাওয়া গেলে আমল এর ক্ষেত্রে মারফু হাদীস প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ সাহাবীর কথা ও কাজের বিপরীতে রসূল ﷺ এর কথা ও কাজ পাওয়া গেলে, আমল এর ক্ষেত্রে রসূল ﷺ এর কথা ও কাজ প্রাধান্য পাবে। আর কুরআনের আয়াত হচ্ছে আল্লাহর কথা। তাই কুরআনের আয়াত সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে।
.
♦রাসূল ﷺ এর ক্বওলী হাদীস (বাণী):
আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ রাদিআল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,
“...যদি (মুসলিমদের) দু’জন স্বাক্ষ্য দেয় যে, তারা (নতুন চাঁদ উদয়ের ব্যাপারে) দেখেছে, তাহলে তোমরা সাওম (রোজা) ও ঈদ পালন কর”।
[নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, হাদিস # ২১১৬।]
.
এখানে রাসূল ﷺ দুইজন স্বাক্ষ্যের কথা বলেছেন। রাসূল ﷺ বলেননি শুধু সৌদির জাতিয়তাবাদী সীমান্তের ভিতরের দু'জন বা শুধু বাংলাদেশের জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের দুইজন।
.
আর "তোমরা" বলতে শুধু সৌদির জাতিয়তাবাদী সীমান্তের ভিতরের মানুষ, বা শুধু বাংলাদেশের জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের মানুষকে নির্দিষ্ট করেননি। বরং "তোমরা" বলতে পৃথিবীর সকল মানুষ।
.
♦রাসূল ﷺ এর ফে’লী হাদীস (আমল বা কাজ):
হযরত আবু উমাইর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
“রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট একদল আরোহী আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মানুষকে রোযা ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন প্রাতঃকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন”।
[(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ১১৫৭, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ১১৫৩, নাসায়ী, মিশকাত-১২৭)]
.
সংবাদ শোনার সাথে সাথে রসূল ﷺ এবং সাহাবাগণ (রাঃ) রোজা ভেঙে ফেললেন। সেই কাফেলা কোন দেশ থেকে এসেছে কিংবা কতদূর থেকে এসেছে রসূল ﷺ তা জিজ্ঞাসা করেননি। সুতরাং বুঝা গেল, নিজ এলাকায় চাঁদ দেখা না গেলেও দূর এলাকা থেকে আসা সংবাদ রসূল ﷺ গ্রহণ করেছেন। এটাও বুঝা গেল, সেই সংবাদ পৌঁছেছে পরদিন দুপুরের পর এবং এত দেরীতে আসা সংবাদও রসূল ﷺ গ্রহণ করে রোজা ভেঙেছেন। শুধু তাই নয়, এটাও বুঝা গেল সংবাদ না পৌছালে কি করতে হবে আর পৌছালে কি করতে হবে।
.
এ থেকে বুঝা যায় বিষয়টি নির্ভর করে সংবাদ পৌছেছে কিনা তার উপর। দুইজন মুসলিমের সংবাদ পৌছালে আমল জরুরী।
.
এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরে গ্রহণযোগ্য বলেই মদীনাবাসী চাঁদ না দেখার পরও রাসূল সঃ অন্য শহর থেকে আসা সংবাদে সিয়াম ভেঙেছেন। আর শুধু দেশের জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবে অথবা জাতিয়তাবাদী বর্ডারের বাইরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা, এ মর্মে কোন আয়াত বা হাদীস নেই। ইবনে আব্বাস কিংবা রসূল ﷺ কোথাও এমনটি বলেননি। ভিন্ন উদয়স্থলের চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা একথাও ইবনে আব্বাস কিংবা রসূল ﷺ কোথাও বলেননি।
.
যেখানে মদীনাবাসী চাঁদ না দেখা স্বত্তেও শরীয়ত প্রবর্তক রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই অনেক দূর থেকে আসা কাফেলার সংবাদ গ্রহণ করে রোজা ভেঙ্গেছেন, সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু কুরাইব রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সংবাদ গ্রহণ করলেন কি করলেন না, তা ধর্তব্য নয়।
.
♦কুরআনের বক্তব্য:
আর আল্লাহ কুরআনে সূরা বাকারার ১৮৯ নং আয়াতে বলেছেন
"এগুলো (অর্থাৎ নতুন চাঁদসমূহ বা ১২ মাসের ১২টি চাঁদ) মানবজাতির জন্য সময়সূচী (অর্থাৎ মাসের শুরু) নির্দেশক এবং হজ্জের (সময়সূচী অর্থাৎ তারিখ নির্ধারণকারী)”।
.
"মানবজাতি" হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ। হজ্জের তারিখ তো মানবজাতির জন্য একটাই হয়। আল্লাহ একথা বলেননি যে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী সীমান্তের ভিতরের নতুন চাঁদ বাংলাদেশী জাতির জন্য মাসের শুরু নির্দেশক এবং বাংলাদেশী জাতির জন্য হজ্জের তারিখ নির্দেশক। আর কুরআন নাযিলের সময়ে সৌদি আরব নামে আলাদা জাতি রাষ্ট্রের জাতিয়তাবাদী সীমান্ত কিংবা বাংলাদেশ নামে আলাদা জাতি রাষ্ট্রের জাতিয়তাবাদী সীমান্ত ছিলনা।
.
পৃথিবীর আকাশে “নতুন চাঁদ” উদয়ের দিনে সকল এলাকা, দেশ, মহাদেশের বাসিন্দারাই “মানুষ” ছিলেন, আছেন, থাকবেন। পৃথিবীর আকাশে “নতুন চাঁদ” উদয়ের দিনে তারা মানবজাতির বাহিরে অন্য কোনো জাতি বা অন্য কোনো প্রাণী হয়ে যান না বরং মানবজাতির অন্তর্ভুক্তই থাকেন।
.
সুতরাং পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে এবং তার নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌছে গেলে পৃথিবীর গোটা মানবজাতির জন্যই চান্দ্রমাসের তারিখ নির্ধারন হয়ে যায়।
.
সুতরাং আমল করার ক্ষেত্রে আছার বা মাওকুফ হাদীস অর্থাৎ সাহাবীর কথা ও কাজ এর পরিবর্তে মারফু হাদীস অর্থাৎ রসূল ﷺ এর কথা ও কাজ এবং কুরআনের আয়াতে আল্লাহর নির্দেশ প্রাধান্য পাবে।
⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব- ৭
........
বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সাবেক সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরাইশী (রহমাতুল্লহি আলাইহি) হাদীসে কুরাইব সম্পর্কে লিখেছেন,
“রাসূলুল্লাহ ﷺ কি আদেশ করিয়াছেন, ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লহু আনহু) তাহা উল্লেখ করেন নাই, রাসূলুল্লাহর ﷺ আদেশের যে তাৎপর্য তিনি উপলদ্ধি করিয়াছেন, তিনি কেবল তাহাই উল্লেখ করিয়াছেন, সুতরাং (সেই পরিস্থিতিতে) এক প্রদেশের রূয়ত অন্য প্রদেশের জন্য প্রযোজ্য না হওয়া হযরত ইবনে আব্বাসের নিজস্ব ইজতিহাদ মাত্র। রাসূলুল্লাহর ﷺ নির্দেশ ইমাম আহমাদ, মুসলিম ও তিরমিযি প্রভৃতি ইবনে উমর ও আবু হুরায়রার (রাঃ) বাচনিক রেওয়ায়েত করিয়াছেন:
‘হিলাল (চাঁদ) দর্শন করার পর রোযা রাখিবে আর উহা দর্শন করিয়া ফিতর (ঈদ) করিবে, যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়, তাহা হইলে দিন গণনা করিবে’।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলিলেন,
‘আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইলে ত্রিশের সংখ্যা পূর্ণ করিবে’।
(বুখারী (১) ২১৫, মুসলিম (১) ৩৪৭, তিরমিযী (২) ৩৪ পৃঃ)
রাসূলু্ল্লাহর ﷺ এই আদেশ ব্যাপক, কোন অঞ্চল বা ভূভাগকে তাঁর আদেশে সীমাবদ্ধ করা হয় নাই সুতরাং একস্থানের রূয়ত (দেখা) দ্বারা সকল স্থানে উহার বিধান বলবৎ করার আদেশ অধিকতর স্পষ্ট এবং নস্সের ব্যাপক আদেশকে ইবনে আব্বাসের ইজতিহাদ সীমাবদ্ধ করিতে সক্ষম নয়।
বুখারী ও মুসলিমের উল্লিখিত হাদীস প্রসঙ্গে ইমাম শাওকানী লিখিয়াছেন:
‘রাসূলুল্লাহর ﷺ আদেশ আঞ্চলিক বিভিন্নতার জন্য পৃথক পৃথক হয় নাই, সকল মুসলমান উক্ত আদেশে সম্বোধিত হইয়াছেন, সুতরাং এক নগরের রূয়ত (দেখা) অন্য নগরের প্রতি প্রযোজ্য হইবার ব্যবস্থা – না হইবার ব্যবস্থা অপেক্ষা সুস্পষ্ট। কারণ এক শহরের মুসলমানের চন্দ্র দর্শন সকল মুসলমানের দর্শনের অনুরূপ, সুতরাং সেই শহরের মুসলমানগণের উপর যাহা প্রযোজ্য হইবে, অপর স্থানের মুসলমানদের উপর ও তাহা বলবৎ হইবে’। (ইমাম শাওকানীর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হয়েছে) [(নাইলুল আওতার ৪/১৬৬)]
তারপর এক শহরের রূয়ত (দেখা) অন্য শহরের জন্য অনুসরণীয় না হওয়াই যদি ইবনে আব্বাসের ইঙ্গিতকৃত হাদীসের তাৎপর্য হয়, তাহা হইলে দূরত্বের পরিমাণ এবং মাত্লার পার্থক্য ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে উহাতে কোন উল্লেখ নাই। আবার ইহাও লক্ষ্য করার বিষয় যে শাম ও মদীনার দূরত্ব এত দূর নয় যাহাতে মাতলার পার্থক্য ঘটিতে পারে, সুতরাং ইবনে আব্বাসের শামের রূয়ত(দেখা) অস্বীকার করার হেতুবাদ তাহার ইজতিহাদ মাত্র”।
(মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরাইশী (রঃ) এর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) ।
মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরাইশী (রঃ) আরও লিখেছেন,
“ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লহু আনহু) রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বাচনিক এমন কোন হাদীস রেওয়ায়েত করেন নাই, যদ্বারা আমরা বিবেচনা করিয়া দেখিতে পারি যে, উহা হযরতের (সঃ) ব্যপক আদেশকে সীমাবদ্ধ করিতে পারে কিনা। সর্বশেষ কথা এই যে, ইবনে আব্বাসের ইজতিহাদকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ব্যপক আদেশের সংকোচক বলিয়া মানিয়া লইলে বেশীর বেশী এইটুকু সাব্যস্ত হইতে পারে যে, মদীনা হইতে দামেশকের দূরত্ব যতখানি ততখানি দূরত্বে অবস্থিত কোন শহরের রূয়ত অন্য শহরের উপর প্রযোজ্য নয়, কিন্তু ইবনে আব্বাসের (রাঃ) ইজতিহাদকে মারফু হাদীসের সংকোচক স্বীকার করার উপায় নাই।
ইমাম কুরতুবী তাঁহার উস্তাদগনের উক্তি উদ্ধৃত করিয়াছেন যে,
‘এক নগরীর অধিবাসীরা হিলাল দর্শন করিলে সকল প্রদেশের অধিবাসীগণের জন্য উহা অনুসরণীয় হইবে ইহাই ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমাদের সিদ্ধান্ত’। (ইমাম কুরতুবীর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হয়েছে) [গায়াতুল আমানী (৯) ২৭২ পৃষ্ঠা]
রাসূলুল্লাহর (ﷺ) স্পষ্ট নির্দেশের সহিত এই সিদ্ধান্তই সুসামঞ্জস্য এবং আমরা ইহাকেই অনুসরণযোগ্য মনে করি।”
(মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরাইশী (রঃ) এর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) ।
⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব- ৮
.......
হাদীসে কুরাইব দ্বারা “সিরীয়ার চাঁদ দেখা মদীনার জন্য প্রযোজ্য নয়” এমন বুঝ নিলেও এটি প্রত্যেক শহরভিত্তিক আলাদা চাঁদ দেখার দলীল। এটা রাষ্ট্রভিত্তিক বা দেশভিত্তিক বা জাতীয়তাবাদী বর্ডার ভিত্তিক চাঁদ দেখার দলীল নয়। সে সময় মদীনা ও সিরিয়া একই রাষ্ট্রের দুটি শহর ছিল।
হাদীসে কুরাইব থেকে এই বুঝ অনুযায়ী শহরভিত্তিক আমল করলে এক ইউনিয়নে চাঁদ দেখলে শুধু সেই ইউনিয়নেই ঈদ হবে অথবা এক থানায় চাঁদ দেখলে শুধু সেই থানায়ই ঈদ হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে শুধু সেই গ্রামে হবে নাকি সেই ইউনিয়নে হবে নাকি সেই থানায় নাকি সেই জেলায় নাকি সেই বিভাগে?
এক শহরে চাঁদ দেখার ফলে ঈদ হলে এবং পাশের শহরে শাওয়ালের নতুন চাঁদ না দেখার ফলে ঐদিন রোজা হলে দুই শহরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত মানুষ ঈদ করবে না রোজা রাখবে সেটা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। দেশের সীমান্ত ভিত্তিক দলীল হিসেবে নিলেও একদেশে চাঁদ দেখার ফলে ঈদ হলে এবং পাশের দেশে শাওয়ালের চাঁদ না দেখার ফলে ঐদিন রোজা হলে, দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসরত মানুষ ঈদ করবে না রোজা রাখবে সেটা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এমন হলে দেখা যাবে বর্ডারের একপাশে ঈদ হচ্ছে অন্যপাশে রোজা হচ্ছে একই বারে/ দিনে, অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।
বাংলাদেশে প্রত্যেক শহরভিত্তিক আলাদা চাঁদ দেখার উপর আমল হচ্ছেনা। বাংলাদশের সীমান্তের ভিতরে যেকোনো জায়গায় চাঁদ দেখার সংবাদ পেলে গোটা বাংলাদেশেই সিয়াম কিংবা ঈদ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়, অর্থাৎ রাষ্ট্রভিত্তিক বা দেশভিত্তিক বা জাতীয়তাবাদী বর্ডার ভিত্তিক চাঁদ দেখার উপরে আমল হচ্ছে কিন্তু হাদীসে কুরাইব রাষ্ট্রভিত্তিক বা দেশভিত্তিক বা জাতীয়তাবাদী বর্ডার ভিত্তিক চাঁদ দেখার দলীল নয়। সে সময় সিরিয়া ও মদীনা একই রাষ্ট্রের অন্তভূক্ত ছিল।
আর এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরের জন্য গ্রহণযোগ্য বলেই রাসূল ﷺ মদীনায় চাঁদ না দেখা যাওয়া স্বত্তেও, অনেক দূর থেকে আসা কাফেলার চাঁদ দেখার সংবাদে রোযা ভেঙ্গেছেন। এ সম্পর্কে সহীহ মারফু হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।
আর শুধু হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্তের ভিতরের সংবাদই গ্রহণ করা যাবে অথবা হারাম জাতীয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার বাইরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা এ মর্মে কোন আয়াত বা হাদীস নেই। ইবনে আব্বাস কিংবা রসূল ﷺ কোথাও এমনটি বলেননি। দূরবর্তী অঞ্চলের কিংবা ভিন্ন উদয়স্থলের চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা একথাও ইবনে আব্বাস কিংবা রসূল ﷺ কোথাও বলেননি।
বৃটিশের দেয়া জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার একপাশে লাইলাতুল ক্বদর একরাতে আর অপর পাশে লাইলাতুল ক্বদর তার পরের রাতে, এটা হতে পারেনা। কারণ কুরআন তো দুই রাতে নাযিল হয়নি, বরং একরাতেই হয়েছে। তেমনি জাতিয়তাবাদী বর্ডারের একপাশে প্রধান শয়তানকে যেদিন বাঁধা হয়, অপরপাশে তার পরের দিন বাঁধা হয়, এটাও হতে পারেনা। তেমনিভাবে জাতিয়তাবাদী সীমান্তের একপাশে যেদিন ঈদ, অন্যপাশে সেদিন রোজা এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।
মুসলমানদের ভূমি একটাই। হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার দিয়ে একক মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করা হারাম। চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে রসূল ﷺ দেশের জাতীয়তাবাদী সীমারেখার কোন শর্ত দেননি আমরাও দেই না।
সুতরাং চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে ২ জন মুসলিমের নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌঁছালে তারিখ পহেলা রমজান হয়ে যাবে। যতদূর পৌঁছাবে ততদূর হবে। শাওয়াল জিলহজ্জ সবই তাই।
⏩ হাদীসে কুরাইব প্রসঙ্গে আলোচনা, পর্ব- ৯
.......
হযরত ইবনু আব্বাস রদি আল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সেই পরিস্থিতির আমলকে দলীল গ্রহণ করে, যে সকল পূর্ববর্তী আলেমগণ এলাকা ভিত্তিক আলাদা চাঁদ দেখে আমলের সপক্ষে মতামত দিয়েছেন তারা প্রায় সকলেই একথা বলেছেন যে, “নিকটবর্তী দেশ বা অঞ্চলে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে না। এক স্থানের দেখা দ্বারাই সকল স্থানে আমল করতে হবে। আর যদি চাঁদ দেখার দেশটি চাঁদ না দেখার দেশ থেকে অনেক দূরে হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে যার যার দেখা অনুযায়ী আমল করতে হবে।” একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে সকলের নিকটই একথা সূর্যালোকের মত পরিষ্কার যে, এক দেশের চাঁদ দেখার সংবাদ অন্য দেশ থেকে গ্রহণ করা না করার দিক থেকে ঐ সকল সম্মানিত ওলামাই কিরাম পৃথিবীকে নিকটবর্তী ও দূরবর্তী এ দু’ভাগে ভাগ করার কারণ হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা। তাদের যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তাদের এ মতামত ঐ যুগের জন্য যুক্তিযুক্ত এবং যথার্থ ছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী সম্মানিত ওলামাই কিরামের ঐ মতামত (উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী আমল বা প্রত্যেক শহরভিত্তিক আমল) এর বিপরীত মত (উদয়স্থলের অভিন্নতা Global moon sighting) বর্তমানে দু’টি কারণে প্রাধান্য পাওয়া উচিত। এক: যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে বর্তমান পৃথিবীর বিপরীত মেরুর দেশ দু’টিও তাদের যুগের পাশাপাশি অবস্থিত দু’টি জেলা শহরের চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। সুতরাং আজকের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দূরবর্তী দেশ বলতে আর কোন কথা নেই। দুই: তারা যে ওজর বা বাধ্যবাধকতার কারণে এ মতামত দিয়েছেন আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় সে ওজর সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
.
যখন যোগাগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিলোনা, রেডিও, টিভি, মোবাইল ফোন ছিলোনা তখন চাঁদ দেখার সংবাদ আদান প্রদান কষ্টসাধ্য ছিল তখন যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে চাঁদ উদয়ের সংবাদ দেয়া-নেয়ার সমস্যার সমাধান কল্পেই হয়তো অনেক সম্মানিত ইমাম নিকটবর্তী ও দূরবর্তী স্থান কিংবা উদয়স্থলের ভিন্নতা কিংবা প্রত্যেক শহর বিবেচনা করেছেন। কিন্তু এখন মুহুর্তেই সারা পৃথিবীতে সংবাদ পৌঁছে যাচ্ছে ফলে অনেক দূরতম দেশও এখন নিকটবর্তী দেশের মতোই হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন অসুবিধা না থাকায় যে সকল ইমামগন উদয়স্থলের অভিন্নতার ফাতওয়া দিয়েছেন সেটাই প্রাধান্য পাওয়া উচিত।
.
ইবনে আব্বাস রমজানের চাঁদ দেখার সংবাদ পেয়েছিলেন ঈদের পূর্বে অর্থাৎ প্রায় একমাস পর। সেই যুগের বাস্তবতা আর বর্তমান যুগের বাস্তবতা এক নয়। এরপরেও যদি কেউ বর্তমান যুগে নিকটবর্তী - দূরবর্তী, উদয়স্থলের ভিন্নতা, প্রত্যেক শহর কিংবা প্রত্যেক দেশ অনুযায়ী আলাদা চাঁদ দেখার কথা বলেন তাহলে তাদেরকে আমি নিম্নোক্ত (1), (2), (3), (4) চারটি পয়েন্ট বিবেচনা করতে অনুরোধ করছি।
.
(1) বর্তমান বিশ্বের প্রখ্যাত আলিম পাকিস্তানের শাইখ মুফতি আল্লামা তাক্বী উসমানী সাহেব (হাফিজাহুল্লহ) বলেন,
(i) “উদয়স্থলের ভিন্নতা বা একতা নির্ভর করে দূরত্বের উপর নয় বরং দেখা যাওয়ার উপর।“
(ii) “চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা (অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে আমল করার নীতি) কে গ্রহন করলে একই এলাকার সাক্ষ্য একে অপরের জন্য গ্রহনযোগ্য হয় না। এটা পরিষ্কারভাবে রাসূল (সঃ) এর আমল ও নির্দেশের বিপরীত।“
(iii) “নিকটবর্তী ও দূরবর্তী শহর বলে যে পার্থক্য পরবর্তী হানাফি উলামাগন করেছেন তা চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতার বাস্তবতার বিরুদ্ধে যায় কারন (চাঁদ দেখার ভিত্তিতে) নিকটবর্তী ও দূরবর্তী শহরের প্রকৃত (বা নির্ধারিত) কোন দূরত্ব নাই।
(তাক্বি উসমানী সাহেবের (হাফিজাহুল্লহ) কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ইনআম আল বারী শরহে সহীহ বুখারী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৮৯ )]
.
(2) যারা বলেন ভিন্ন উদয়স্থলের এলাকার চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণীয় নয় তাদের জবাব এই যে, চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী আপনি কি নিখুঁতভাবে এলাকার সীমারেখা তৈরী করতে পারবেন? চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী নিশ্চিতভাবে সঠিক স্থায়ী সীমানা নির্ধারন করা যায়না। এছাড়া উদয় স্থল সর্বদা একই রকম থাকেনা। যে কোন বছরে যে কোন মাসের চাঁদ পৃথিবীতে প্রথম উদিত হলে যে এলাকাসমূহ তার আওতাভূক্ত থাকে তার সীমানা প্রতিমাসে একরকম থাকেনা, প্রতি বছরেও একরকম হয়না। তারপরেও যদি চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতার ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার সীমানা নির্ধারন করে সেই কথিত সীমানার এক পাশে রোযা অন্য পাশে ঈদ হয়, তবে সেই সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ কি রোযা করবে নাকি ঈদ করবে? দলিল সহ জানতে চাই।
.
অনেক এলাকা আছে যেখান থেকে চাঁদ খালি চোখে দেখা যায়, অনেক এলাকা থেকে খালি চোখে দেখা না গেলেও দুর্বল টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যায়। অনেক এলাকা থেকে দুর্বল টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা না গেলেও শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যায়। এই অবস্থায় কিসের ভিত্তিতে উদয়স্থল নির্ণয় করবেন? টেলিস্কোপের পাওয়ারের ভিন্নতার কারণে কি কুরআন নাযিলের রাত আলাদা হতে পারে?
.
উদয়স্থলের ভিন্নতার কারণে কি কুরআন নাযিলের রাত আলাদা হতে পারে? কুরআন তো এক রাতেই নাযিল হয়েছিল।
.
নিকটবর্তী দূরবর্তী বিবেচনার কারণে কি প্রধান শয়তানকে পরপর দুইদিন দুইবার বাঁধা হয়?
.
একই উদয়স্থল মনে করে যে এলাকায় রোযা আগে শুরু হলো সেই এলাকা থেকে সিয়াম (রোজা) শুরু করে ভিন্ন উদয়স্থল মনে করে যে এলাকায় পরেরদিন রোজা শুরু হলো সেই এলাকায় গিয়ে ঈদ করলে অন্যদের সিয়াম ২৯ টি হলে তার সিয়াম ৩০ এবং অন্যদের সিয়াম ৩০ টি হলে তার সিয়াম ৩১ টি হয়ে যাবে। আবার যে এলাকায় পরেরদিন সিয়াম শুরু হলো সেই এলাকা থেকে সিয়াম শুরু করে যে এলাকায় সিয়াম আগে শুরু হলো সেই এলাকায় গিয়ে ঈদ করলে অন্যদের সিয়াম ২৯ টি হলে তার সিয়াম ২৮ টি হয়ে যাবে এবং অন্যদের সিয়াম ৩০ টি হলে তার সিয়াম ২৯ টি হয়ে যাবে। অথচ রাসূল ﷺ এর হাদীস অনুযায়ী মাস ২৯ অথবা ৩০। ২৮ ও ৩১ সিয়াম ইসলামে নাই।
.
সুতরাং উদয় স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী আমল করলে এসকল সমস্যা দেখা দেয়।
.
উপরন্তু রাসূল ﷺ এর ক্বওলী ও ফেলী হাদীসে এমন কোন শর্ত পাওয়া যায় না যে একই উদয় স্থলের সংবাদ গ্রহণযোগ্য, ভিন্ন উদয় স্থলের সংবাদ গ্রহণযোগ্য নয়, এই রকম কোনো শর্ত রাসূল সঃ এর ক্বওলী ও ফেলী হাদীসে পাওয়া যায়না।
.
রসূল ﷺ তো চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে শুধু একই উদয়স্থলের সংবাদ গ্রহণ করা যাবে কিংবা ভিন্ন উদয়স্থলের চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা এমন শর্ত দেন নি, আমরাও দেই না।
.
(3) যারা বলেন নিকটবর্তী এলাকায় চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য দূরবর্তী এলাকায় নয় তাদেরকে প্রশ্ন, দূরত্ব কতটুকু হলে সংবাদ গহণযোগ্য হবে আর কতটুকু হলে গ্রহণযোগ্য হবেনা কুরআন হাদীস অনুযায়ী জানতে চাই।
.
সেই দূরত্ব মাপা শুরু করবেন কোন পয়েন্ট থেকে? যেমন বাইতুল মোকাররমে চাঁদ দেখা গেল, আবার কাঁচপুর ব্রীজের কাছেও চাঁদ দখা গেল আবার স্মৃতি সৌধ থেকেও দেখা গেল। তাহলে সেই দূরত্ব মাপা শুরু করবেন কোন পয়েন্ট থেকে?
.
তাছাড়া পৃথিবীর সকল দেশই ক্রমান্বয়ে একের পর এক নিকটবর্তী দেশ। উদাহরণ স্বরূপ মরক্কোতে চাঁদ দেখা প্রমানিত হলে তার নিকটবর্তী সীমান্ত সংলগ্ন দেশ আলজেরিয়া, স্পেন, মৌরিতানিয়া, আবার তাদের নিকটবর্তী সীমান্ত সংলগ্ন অন্যান্য দেশ। এভাবে সারা পৃথিবীর দেশগুলোই ক্রমান্বয়ে একের পর এক নিকটবর্তী।
.
সেই কথিত নিকটবর্তী এলাকার শেষ সীমা এবং দূরবর্তী এলাকার শুরু যেখানে, উভয়ের সীমান্ত এলাকার মানুষ কি সিয়াম (রোজা) করবে নাকি ঈদ করবে দলীল সহ জানতে চাই। এই সীমান্তের দুইপাশে একই বার একই দিন। এতে কি একই দিনে সিয়াম (রোজা) ও ঈদ উভয়টির আমল করা হচ্ছেনা? অথচ ঈদের দিন সিয়াম (রোজা) রাখা হারাম।
.
নিকটবর্তী দূরবর্তী বিবেচনার কারণে কি কুরআন নাযিলের রাত আলাদা হতে পারে? কুরআন তো এক রাতেই নাযিল হয়েছিল।
.
নিকটবর্তী দূরবর্তী বিবেচনার কারণে কি প্রধান শয়তানকে পরপর দুইদিন দুইবার বাঁধা হয়?
.
নিকটবর্তী কিংবা একই উদয়স্থল মনে করে যে এলাকায় রোযা আগে শুরু হলো সেই এলাকা থেকে সিয়াম শুরু করে দূরবর্তী কিংবা ভিন্ন উদয়স্থল মনে করে যে এলাকায় পরেরদিন সিয়াম শুরু হলো সেই এলাকায় গিয়ে ঈদ করলে অন্যদের সিয়াম ২৯ টি হলে তার সিয়াম ৩০ এবং অন্যদের সিয়াম ৩০ টি হলে তার সিয়াম ৩১ টি হয়ে যাবে। আবার যে এলাকায় পরেরদিন সিয়াম শুরু হলো সেই এলাকা থেকে সিয়াম শুরু করে যে এলাকায় সিয়াম আগে শুরু হলো সেই এলাকায় গিয়ে ঈদ করলে অন্যদের সিয়াম ২৯ টি হলে তার সিয়াম ২৮ টি হয়ে যাবে এবং অন্যদের সিয়াম ৩০ টি হলে তার সিয়াম ২৯ টি হয়ে যাবে। অথচ রাসূল সঃ এর হাদীস অনুযায়ী মাস ২৯ অথবা ৩০। ২৮ ও ৩১ সিয়াম ইসলামে নাই।
.
সুতরাং নিকটবর্তী দূরবর্তী অনুযায়ী আমল করলে এসকল সমস্যা দেখা দেয়।
.
উপরন্তু রাসূল সঃ এর ক্বওলী ও ফেলী হাদীসে এমন কোন শর্ত পাওয়া যায় না যে শুধু নিকটবর্তী অঞ্চলের সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য কিংবা দূরবর্তী অঞ্চলের সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য নয়, এই রকম কোনো শর্ত রাসূল ﷺএর ক্বওলী ও ফেলী হাদীসে পাওয়া যায়না।
.
রসূল ﷺ তো চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে শুধু নিকটবর্তী এলাকার সংবাদ গ্রহণ করা যাবে কিংবা দূরবর্তী এলাকার চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা এমন শর্ত দেন নি, আমরাও দেই না।
.
(4) যারা বলেন এক এলাকার চাঁদ দেখার সংবাদ অন্য এলাকায় প্রযোজ্য নয় তাদেরকে বলি সেই এলাকা বলতে কি গ্রাম নাকি ইউনিয়ন নাকি থানা নাকি উপজেলা নাকি জেলা নাকি বিভাগ নাকি প্রদেশ নাকি দেশ নাকি মহাদেশ বুঝায়? যদি জেলা হয় তবে সর্বশেষ যে জেলায় সংবাদ গ্রহনের কারণে ঈদ হলো আর পাশের জেলায় গ্রহণ না করার কারণে সিয়াম হলো এই দুই জেলার সীামান্ত অঞ্চলের মানুষ কি করবে? যদি দেশ হয় তবে সর্বশেষ যে দেশে সংবাদ গ্রহনের কারণে ঈদ হলো আর পাশের দেশে সংবাদ গ্রহণ না করার কারণে সিয়াম হলো এই দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ কি করবে? বৃটিশের দেওয়া হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত অনুযায়ী কেন মুসলিমদের রোযা ঈদের দিন আলাদা হবে?
.
২০২০ সালে পাকিস্তানে রবিবার ঈদুল ফিতর হয়েছে। ভারতে সোমবার ঈদুল ফিতর হয়েছে। অর্থাৎ একই দিনে একই বার (রবিবার) এ পাকিস্তানে ঈদুল ফিতর আর ভারতে সিয়াম (রোজা)। সীমান্ত ১৯৪৭ সালে বৃটিশরা যেখান দিয়ে দিয়েছে ঈদ সিয়ামও সেই কাঁটাতারের বেড়া অনুযায়ী শাসকের ঘোষণায় আলাদা হয়েছে!!
.
ধরুন ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তের মাঝামাঝি কিছু মুসলমান অবস্থান করছে যারা ভারতের বা পাকিস্তানের নাগরিক নয়। তাহলে তারা রবিবার কি সিয়াম (রোজা) রাখবে নাকি ঈদ করবে? দলিল সহ জানতে চাই।
.
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ঈদের দিন সিয়াম (রোযা) রাখা হারাম। বৃটিশের দেওয়া হারাম জাতিয়তাবাদী সীমান্তের দুইপাশে পা দিয়ে দাঁড়ালে রবিবার সে সিয়াম (রোজা) রাখবে নাকি ঈদ করবে?
.
সীমান্ত বৃটিশরা যেখান দিয়ে দিয়েছে ঈদ রোজাও সেই কাঁটাতারের বেড়া অনুযায়ী শাসকের ঘোষণায় আলাদা হয়েছে। এই সীমান্ত যদি বৃটিশরা ৪৭ সালে না দিতো তাহলে কি সিয়াম (রোজা) করতে হতো নাকি ঈদ করতে হতো?
.
এখন যদি সীমান্ত মুছে দিয়ে একদেশ বানিয়ে দিলে কি সিয়াম (রোজা) করতে হবে নাকি ঈদ করতে হবে? দলিল সহ জানতে চাই।
.
পাক ভারত সীমান্তের দুইপাশে একই বার একই দিন। এতে কি একই দিনে সিয়াম ও ঈদ উভয়টির আমল করা হচ্ছেনা? অথচ ঈদের দিন সিয়াম রাখা হারাম।
.
আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একেবারে পাশাপাশি অর্থাৎ একই ভূমি, মুসলিম জাতির ভূমি। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মাঝে এই কৃত্রিম বর্ডার আল্লাহ দেননি, রসূল ﷺ ও দেননি। তাহলে দুই দেশের আরাফার দিন কেন দুই দিনে হবে? দুই দেশের ঈদুল আযহা কেন দুই দিনে হবে?
.
অনেক বছরেই আফগানিস্তানে যেদিন ঈদ হচ্ছে পাকিস্তানে সেদিন সিয়াম (রোজা) রাখা হচ্ছে। সীমান্ত যেখান দিয়ে মানুষ দিয়েছে ঈদ সিয়ামও সেই কাঁটাতারের বেড়া অনুযায়ী শাসকের ঘোষণায় আলাদা হয়েছে। এই হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত যদি মানুষ না দিতো তাহলে কি উভয় দেশের ঈদের দিন ভিন্ন হতো?
.
আফগানিস্তানে যেদিন ঈদ আর পাকিস্তানে সিয়াম রোজা সেদিন মাঝখানের হারাম জাতিয়তাবাদী সীমান্তের দুইপাশে পা দিয়ে দাঁড়ালে কি রোজা রাখতে হবে নাকি ঈদ করতে হবে?
.
এ সীমান্ত মুছে দিয়ে একদেশ বানিয়ে দিলে কি সিয়াম করতে হবে নাকি ঈদ করতে হবে?
.
পাক আফগান সীমান্তের দুইপাশে একই বার একই দিন। এতে কি একই দিনে সিয়াম ও ঈদ উভয়টির আমল করা হচ্ছেনা? অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।
.
কুরআন হাদীসে কোথায় আছে দেশের শর্ত? কুরআন হাদীসে কোথায় আছে নিজ দেশের হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্তের বাহিরের চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য নয়?
.
দেশের সীমা কতটুকু হবে, কুরআন হাদীস অনুযায়ী জানতে চাই।
.
এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরে গ্রহণযোগ্য বলেই মদীনাবাসী চাঁদ না দেখার পরও রাসূল সঃ অন্য শহর থেকে আসা সংবাদে সিয়াম ভেঙেছেন। আর শুধু দেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবে অথবা বর্ডারের বাইরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা, এ মর্মে কোন আয়াত বা হাদীস নেই।
.
বৃটিশের দেয়া জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার একপাশে লাইলাতুল ক্বদর একরাতে আর অপর পাশে লাইলাতুল ক্বদর তার পরের রাতে, এটা হতে পারেনা। কারণ কুরআন তো দুই রাতে নাযিল হয়নি, বরং একরাতেই হয়েছে। তেমনি জাতিয়তাবাদী বর্ডারের একপাশে প্রধান শয়তানকে যেদিন বাঁধা হয়, অপরপাশে তার পরের দিন বাঁধা হয়, এটাও হতে পারেনা। তেমনিভাবে জাতিয়তাবাদী সীমান্তের একপাশে যেদিন ঈদ, অন্যপাশে সেদিন সিয়াম (রোজা) এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদের দিন সিয়াম (রোজা) রাখা হারাম।
.
মুসলমানদের ভূমি একটাই। হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার দিয়ে একক মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করা হারাম। চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে রসূল ﷺ দেশের সীমারেখার কোন শর্ত দেননি আমরাও দেই না।
No comments:
Post a Comment