Thursday, April 30, 2020

তারাবিহ বা কিয়ামুল লাইল ছলাত নিয়ে আহলে হাদিসের দুই শাইখের বক্তব্য

তারাবিহ / কিয়ামুল লাইল ছলাত প্রসঙ্গে আহলে হাদিসের দুই আলিম যথার্থই বলেছেন কিন্তু মাজহাবিরাতো পরের কথা! অনেক আহলে হাদিসই সেটা ফলো করে না!


https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2678298589070862&id=100006722419436

ছিয়াম অবস্থায় ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেললে কি ছিয়াম ভাঙ্গবে?

❓প্রশ্নঃ ছিয়াম অবস্থায় ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেললে কি ছিয়াম ভাঙ্গবে?

উত্তরঃ না, ভাঙ্গবে না।

باب مَا جَاءَ فِي الصَّائِمِ يَأْكُلُ أَوْ يَشْرَبُ نَاسِيًا حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ، حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الأَحْمَرُ، عَنْ حَجَّاجِ بْنِ أَرْطَاةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ ابْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ أَكَلَ أَوْ شَرِبَ نَاسِيًا فَلاَ يُفْطِرْ فَإِنَّمَا هُوَ رِزْقٌ رَزَقَهُ اللَّهُ ‏"‏ ‏.‏

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লহ (ছঃ) বলেছেনঃ
ভুলবশতঃ যে লোক (ছিয়াম / রোযা থাকা অবস্থায়) কিছু খায় বা পান করে সে যেন ছিয়াম ভেঙ্গে না ফেলে। কেননা, এটা এমন এক রিযিক যা আল্লাহ তা'আলা তাকে ভোজন করিয়েছেন।

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
অধ্যায়ঃ ৬/ রোযা (সাওম) (كتاب الصوم عن رسول الله ﷺ)
হাদিস নম্বরঃ ৭২১
— সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৬৭৩), নাসা-ঈ
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

তবে, স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই খাওয়া বা পান করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। তা না হলে ছিয়াম ভেঙ্গে যাবে।  

ছিয়াম (রোযা) ভঙ্গের কারণসমূহ

প্রশ্ন: ছিয়াম / রোযা ভঙ্গের কারণগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করবেন?

উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী রোযার বিধান জারী করেছেন। তিনি রোযাদারকে ভারসাম্য রক্ষা করে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন; একদিকে যাতে রোযা রাখার কারণে রোযাদারের শারীরিক কোন ক্ষতি না হয়। অন্যদিকে সে যেন রোযা বিনষ্টকারী কোন বিষয়ে লিপ্ত না হয়।

এ কারণে রোযা-বিনষ্টকারী বিষয়গুলো দুইভাগে বিভক্ত:

কিছু রোযা-বিনষ্টকারী বিষয় রয়েছে যেগুলো শরীর থেকে কোন কিছু নির্গত হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- সহবাস, ইচ্ছাকৃত বমি করা, হায়েয ও শিঙ্গা লাগানো। শরীর থেকে এগুলো নির্গত হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়। এ কারণে আল্লাহ তাআলা এগুলোকে রোযা ভঙ্গকারী বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন; যাতে করে এগুলো নির্গত হওয়ার দুর্বলতা ও রোযা রাখার দুর্বলতা উভয়টি একত্রিত না হয়। এমনটি ঘটলে রোযার মাধ্যমে রোযাদার ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং রোযা বা উপবাসের ক্ষেত্রে আর ভারসাম্য বজায় থাকবে না।

আর কিছু রোযা-বিনষ্টকারী বিষয় আছে যেগুলো শরীরে প্রবেশ করানোর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- পানাহার। তাই রোযাদার যদি পানাহার করে তাহলে যে উদ্দেশ্যে রোযার বিধান জারী করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হবে না।[মাজমুউল ফাতাওয়া ২৫/২৪৮]

আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াতে রোযা-বিনষ্টকারী বিষয়গুলোর মূলনীতি উল্লেখ করেছেন:

“এখন তোমরা নিজ স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন তা (সন্তান) তালাশ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো সুতা থেকে ভোরের শুভ্র সুতা পরিস্কার ফুটে উঠে...”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা রোযা-নষ্টকারী প্রধান বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে- পানাহার ও সহবাস। আর রোযা নষ্টকারী অন্য বিষয়গুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদিসে উল্লেখ করেছেন।

তাই রোযা নষ্টকারী বিষয় ৭টি; সেগুলো হচ্ছে-

১। সহবাস

২। হস্তমৈথুন

৩। পানাহার

৪। যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত

৫। শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের করা

৬। ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা

৭। মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া

এ বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে- সহবাস; এটি সবচেয়ে বড় রোযা নষ্টকারী বিষয় ও এতে লিপ্ত হলে সবচেয়ে বেশি গুনাহ হয়। যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলা স্বেচ্ছায় স্ত্রী সহবাস করবে অর্থাৎ দুই খতনার স্থানদ্বয়ের মিলন ঘটাবে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ লজ্জাস্থানের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাবে সে তার রোযা নষ্ট করল; এতে করে বীর্যপাত হোক কিংবা না হোক। তার উপর তওবা করা, সেদিনের রোযা পূর্ণ করা, পরবর্তীতে এ দিনের রোযা কাযা করা ও কঠিন কাফফারা আদায় করা ফরয। এর দলিল হচ্ছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি ধ্বংস হয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: কিসে তোমাকে ধ্বংস করল? সে বলল: আমি রমযানে (দিনের বেলা) স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেন: তুমি কি একটি ক্রীতদাস আযাদ করতে পারবে? সে বলল: না। তিনি বললেন: তাহলে লাগাতার দুই মাস রোযা রাখতে পারবে? সে বলল: না। তিনি বললেন: তাহলে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে? সে বলল: না...[হাদিসটি সহিহ বুখারী (১৯৩৬) ও সহিহ মুসলিমে (১১১১) এসেছে]

স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন কারণে কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয় না।

দ্বিতীয়: হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন বলতে বুঝায় হাত দিয়ে কিংবা অন্য কিছু দিয়ে বীর্যপাত করানো। হস্তমৈথুন যে রোযা ভঙ্গকারী এর দলিল হচ্ছে- হাদিসে কুদসীতে রোযাদার সম্পর্কে আল্লাহর বাণী: “সে আমার কারণে পানাহার ও যৌনকর্ম পরিহার করে” সুতরাং যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলা হস্তমৈথুন করবে তার উপর ফরয হচ্ছে— তওবা করা, সে দিনের বাকী সময় উপবাস থাকা এবং পরবর্তীতে সে রোযাটির কাযা পালন করা। আর যদি এমন হয়— হস্তমৈথুন শুরু করেছে বটে; কিন্তু বীর্যপাতের আগে সে বিরত হয়েছে তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে; তার রোযা সহিহ। বীর্যপাত না করার কারণে তাকে রোযাটি কাযা করতে হবে না। রোযাদারের উচিত হচ্ছে— যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সবকিছু থেকে দূরে থাকা এবং সব কুচিন্তা থেকে নিজের মনকে প্রতিহত করা। আর যদি, মজি বের হয় তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী— এটি রোযা ভঙ্গকারী নয়।

তৃতীয়: পানাহার। পানাহার বলতে বুঝাবে— মুখ দিয়ে কোন কিছু পাকস্থলীতে পৌঁছানো। অনুরূপভাবে নাক দিয়ে কোন কিছু যদি পাকস্থলীতে পৌঁছানো হয় সেটাও পানাহারের পর্যায়ভুক্ত। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তুমি ভাল করে নাকে পানি দাও; যদি না তুমি রোযাদার হও।”[সুনানে তিরমিযি (৭৮৮), আলবানি সহিহ তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] সুতরাং নাক দিয়ে পাকস্থলীতে পানি প্রবেশ করানো যদি রোযাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করত তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল করে নাকে পানি দিতে নিষেধ করতেন না।

চতুর্থ: যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত। এটি দুইটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। ১. যদি রোযাদারের শরীরে রক্ত পুশ করা হয়। যেমন- আহত হয়ে রক্তক্ষরণের কারণে কারো শরীরে যদি রক্ত পুশ করা হয়; তাহলে সে ব্যক্তির রোযা ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু পানাহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে— রক্ত তৈরী। ২. খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ইনজেকশন পুশ করা। কারণ এমন ইনজেকশন নিলে পানাহারের প্রয়োজন হয় না।[শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রমাদান’, পৃষ্ঠা- ৭০] তবে, যেসব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয়; বরং চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়, উদাহরণতঃ ইনসুলিন, পেনেসিলিন কিংবা শরীর চাঙ্গা করার জন্য দেয়া হয় কিংবা টীকা হিসেবে দেয়া হয় এগুলো রোযা ভঙ্গ করবে না; চাই এসব ইনজেকশন মাংশপেশীতে দেয়া হোক কিংবা শিরাতে দেয়া হোক।[শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম এর ফতোয়াসমগ্র (৪/১৮৯)] তবে, সাবধানতা স্বরূপ এসব ইনজেকশন রাতে নেয়া যেতে পারে।

কিডনী ডায়ালাইসিস এর ক্ষেত্রে রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করে সে রক্ত পরিশোধন করে কিছু কেমিক্যাল ও খাদ্য উপাদান (যেমন— সুগার ও লবণ ইত্যাদি) যোগ করে সে রক্ত পুনরায় শরীরে পুশ করা হয়; এতে করে রোযা ভেঙ্গে যাবে।[ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/১৯)]

পঞ্চম: শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে রক্ত বের করা। দলিল হচ্ছে— নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় ও যার শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের রোযা ভেঙ্গে যাবে।”[সুনানে আবু দাউদ (২৩৬৭), আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (২০৪৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

রক্ত দেয়াও শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ভুক্ত। কারণ রক্ত দেয়ার ফলে শরীরের উপর শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব পড়ে। তাই রোযাদারের জন্য রক্ত দেয়া জায়েয নেই। তবে যদি অনন্যোপায় কোন রোগীকে রক্ত দেয়া লাগে তাহলে রক্ত দেয়া জায়েয হবে। রক্ত দানকারীর রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং সে দিনের রোযা কাযা করবে।[শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রামাদান’ পৃষ্ঠা-৭১]

কোন কারণে যে ব্যক্তির রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে— তার রোযা ভাঙ্গবে না; কারণ রক্ত ক্ষরণ তার ইচ্ছাকৃত ছিল না।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/২৬৪)]

আর দাঁত তোলা, ক্ষতস্থান ড্রেসিং করা কিংবা রক্ত পরীক্ষা করা ইত্যাদি কারণে রোযা ভাঙ্গবে না; কারণ এগুলো শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ভুক্ত নয়। কারণ এগুলো দেহের উপর শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব ফেলে না।

ষষ্ঠ: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। দলিল হচ্ছে— “যে ব্যক্তিরঅনিচ্ছাকৃতভাবে বমিএসে যায় তাকে উক্ত রোযা কাযা করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করল তাকে সে রোযা কাযা করতে হবে”[সুনানে তিরমিযি (৭২০), আলবানী সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে (৫৭৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

হাদিসে ذرعه শব্দের অর্থ غلبه।

ইবনে মুনযির বলেন: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বমি করেছে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ অভিমত (ইজমা) হচ্ছে তার রোযা ভেঙ্গে গেছে।[আল-মুগনী (৪/৩৬৮)]

যে ব্যক্তি মুখের ভেতরে হাত দিয়ে কিংবা পেট কচলিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেছে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু শুকেছে কিংবা বারবার দেখেছে এক পর্যায়ে তার বমি এসে গেছে তাকেও রোযা কাযা করতে হবে।

তবে যদি কারো পেট ফেঁপে থাকে তার জন্য বমি আটকে রাখা বাধ্যতামূলক নয়; কারণ এতে করে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে।[শাইখ উছাইমীনের মাজালিসু শাহরি রামাদান, পৃষ্ঠা-৭১]

সপ্তম: হায়েয ও নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন মহিলাদের হায়েয হয় তখন কি তারা নামায ও রোযা ত্যাগ করে না!?”[সহিহ বুখারী (৩০৪)] তাই কোন নারীর হায়েয কিংবা নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া শুরু হলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে; এমনকি সেটা সূর্যাস্তের সামান্য কিছু সময় পূর্বে হলেও। আর কোন নারী যদি অনুভব করে যে, তার হায়েয শুরু হতে যাচ্ছে; কিন্তু সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত রক্ত বের হয়নি তাহলে তার রোযা শুদ্ধ হবে এবং সেদিনের রোযা তাকে কাযা করতে হবে না।

আর হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর রক্ত যদি রাত থাকতে বন্ধ হয়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি রোযার নিয়ত করে নেন; তবে গোসল করার আগেই ফজরহয়ে যায় সেক্ষেত্রে আলেমদের মাযহাব হচ্ছে— তার রোযা শুদ্ধ হবে।

হায়েযবতী নারীর জন্য উত্তম হচ্ছে তার স্বাভাবিক মাসিক অব্যাহত রাখা এবং আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটার উপর সন্তুষ্ট থাকা, হায়েয-রোধকারী কোন কিছু ব্যবহার না-করা। বরং আল্লাহ তার থেকে যেভাবে গ্রহণ করেন সেটা মেনে নেয়া অর্থাৎহায়েয এর সময় রোযা ভাঙ্গা এবং পরবর্তীতে সে রোযা কাযা পালন করা। উম্মুল মুমিনগণ এবং সলফে সালেহীন নারীগণ এভাবেই আমল করতেন।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/১৫১)]

তাছাড়া চিকিৎসা গবেষণায় হায়েয বা মাসিক রোধকারী এসব উপাদানের বহুমুখী ক্ষতি সাব্যস্ত হয়েছে। এগুলো ব্যবহারের ফলে অনেক নারীর হায়েয অনিয়মিত হয়ে গেছে। তারপরেও কোন নারী যদি হায়েয বন্ধকারী ঔষধ গ্রহণ করার ফলে তার হায়েযের রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জায়গাটি শুকিয়ে যায় সে নারী রোযা রাখতে পারবে এবং তার রোযাটি আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখিত বিষয়গুলো হচ্ছে- রোযা বিনষ্টকারী। তবে, হায়েয ও নিফাস ছাড়া অবশিষ্ট বিষয়গুলো রোযা ভঙ্গ করার জন্য তিনটি শর্ত পূর্ণ হতে হয়:

-রোযা বিনষ্টকারী বিষয়টি ব্যক্তির গোচরীভূত থাকা; অর্থাৎ এ ব্যাপারে সে অজ্ঞ না হয়।

-তার স্মরণে থাকা।

-জোর-জবরদস্তির স্বীকার না হয়ে স্বেচ্ছায় তাতে লিপ্ত হওয়া।

এখন আমরা এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করব যেগুলো রোযা নষ্ট করে না:

-এনিমা ব্যবহার, চোখে কিংবা কানে ড্রপ দেয়া, দাঁত তোলা, কোন ক্ষতস্থানের চিকিৎসা নেয়া ইত্যাদি রোযা ভঙ্গ করবে না।[মাজমুউ ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম (২৫/২৩৩, ২৫/২৪৫)]

-হাঁপানি রোগের চিকিৎসা কিংবা অন্য কোন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জিহ্বার নীচে যে ট্যাবলেট রাখা হয় সেটা থেকে নির্গত কোন পদার্থ গলার ভিতরে চলে না গেলে সেটা রোযা নষ্ট করবে না।

-মেডিকেল টেস্টের জন্য যোনিপথে যা কিছু ঢুকানো হয়; যেমন- সাপোজিটর, লোশন, কলপোস্কোপ, হাতের আঙ্গুল ইত্যাদি।

-স্পেকুলাম বা আই, ইউ, ডি বা এ জাতীয় কোন মেডিকেল যন্ত্রপাতি জরায়ুর ভেতরে প্রবেশ করালে।

-নারী বা পুরুষের মুত্রনালী দিয়ে যা কিছু প্রবেশ করানো হয়; যেমন- ক্যাথিটার, সিস্টোস্কোপ, এক্সরে এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রঞ্জক পদার্থ, ঔষধ, মুত্রথলি পরিস্কার করার জন্য প্রবেশকৃত দ্রবণ।

-দাঁতের রুট ক্যানেল করা, দাঁত ফেলা, মেসওয়াক দিয়ে কিংবা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিস্কার করা; যদি ব্যক্তি কোন কিছু গলায় চলে গেলে সেগুলো গিলে না ফেলে।

-গড়গড়া কুলি ও চিকিৎসার জন্য মুখে ব্যবহৃত স্প্রে; যদি কোন কিছু গলায় চলে আসলেও ব্যক্তি সেটা গিলে না ফেলে।

-অক্সিজেন, এ্যানেসথেসিয়ার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস রোযা ভঙ্গ করবে না; যদি না রোগীকে এর সাথে কোন খাদ্য-দ্রবণ দেয়া হয়।

-চামড়া দিয়ে শরীরে যা কিছু প্রবেশ করে। যেমন- তৈল, মলম, মেডিসিন ও কেমিকেল সম্বলিত ডাক্তারি প্লাস্টার।

-ডাগায়নস্টিক ছবি তোলা কিংবা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে কিংবা শরীরের অন্য কোন অঙ্গের শিরাতে ছোট একটি টিউব প্রবেশ করানোতে রোযা ভঙ্গ হবে না।

-নাড়ীভুড়ি পরীক্ষা করার জন্য কিংবা অন্য কোন সার্জিকাল অপারেশনের জন্য পেটের ভেতর একটি মেডিকেল স্কোপ প্রবেশ করালেও রোযা ভাঙ্গবে না।

- কলিজা কিংবা অন্য কোন অঙ্গের নমুনাস্বরূপ কিছু অংশ সংগ্রহ করলেও রোযা ভাঙ্গবে না; যদি এ ক্ষেত্রে কোন দ্রবণ গ্রহণ করতে না হয়।

- গ্যাসট্রোস্কোপ (gastroscope) যদিপাকস্থলীতে ঢুকানো তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না; যদি না সাথে কোন দ্রবণ ঢুকানো না হয়।

- চিকিৎসার স্বার্থে মস্তিষ্কে কিংবা স্পাইনাল কর্ডে কোন চিকিৎসা যন্ত্র কিংবা কোন ধরণের পদার্থ ঢুকানো হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।

আল্লাহই ভাল জানেন।

[দেখুন শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রামাদান’ ও ‘সিয়াম সংক্রান্ত ৭০টি মাসয়ালা’ নামক এ ওয়েব সাইটের পুস্তিকা]

Wednesday, April 29, 2020

জন্মের পরে শিশুর কোন কানে আজান ও ইকামাত দিতে হবে?

নবজাতকের কানে আযান ও ইকামাত দেওয়ার বিধানঃ
🕸~🕸~🕸~🕸~🕸~🕸~🕸~🕸~🕸~🕸

প্রশ্নঃ- মেয়ে শিশুর কানে আযান দেয়া কি শরীয়ত
সম্মত?
কোন কানে আজান দিতে হবে?

উত্তর:- যে কোন নবজাতক (চাই ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক) ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তার কানে হালকা আওয়াজে আযান দেয়া উচিৎ যেন দুনিয়াতে আসার পর সর্বপ্রথম আল্লাহর নাম শুনতে পায় এবং শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু একামত দেয়া ঠিক নয়।

আবু রাফে তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন:

” رأيتُ رسول الله صلى الله عليه و سلم أذّنَ في أُذُنِ الحسنِ ابن عليٍّ حين ولدتهُ فاطمة بالصلاة ” رواه أبو داود والترمذي و قال: هذا حديث صحيح.

“আমি রসূল (ছঃ)-কে আলীর পুত্র হাসানের কানে ছলাতের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি, যখন ফাতেমা (রযি:) তাকে জন্ম দেয়।” হাদীসটিকে আবু দাউদ এবং তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন। [তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, অনুচ্ছেদ নং ১৫, হাদীস নং ১৫৫৩]

কিছু হাদীসে বাম কানে ইকামতের বর্ণনা এসেছে কিন্তু সেই হাদীসগুলি নিতান্তই দুর্বল। [দেখুন, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী, ৫/৯০]
তাই সুন্নত হচ্ছে, নবজাতকের কানে আযান দেয়া। ডান কানে আযান আর বাম কানে একামত এমনটি নয়। আবার নির্দিষ্ট করে ডান কানে আজান দিতে ব্যাপারটা এমন নয়। এখানে কান উদ্দেশ্য নয়। নবজাতক-কে কোলে নিয়ে বা কাছে গিয়ে আজান দিতে হবে। এক্ষেত্রে অতি জোরে আজান দেওয়া ঠিক নয় এতে বাচ্চা ভয় পেতে পারে বা তার সমস্যা হতে পারে। এমন স্বরে আজান দিতে হবে যেন বাচ্চা শুনতে পায় এটাই যথেষ্ট।

প্রকাশ থাকে যে, অনেক আলেমের মতে (যেমন আলবানী রাহ.) নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার হাদীসগুলির মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। তাই তারা এই আযান দেয়াকেও অবৈধ বলেছেন। আর অনেকে হাদীসগুলি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা হওয়ায় ও পৌনঃপুনিক ভাবে উম্মতের মাঝে আমলটি সচল থাকায় জায়েজ বলেছেন।
[বিস্তারিত দেখুন, আউলাদ আউর ওয়ালেদাইন কি কিতাব/৭৭-৭৮]
আল্লাহ আলাম।
➖➖➖➖➖➖➖➖
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল Daee At:
Jubail Dawah & Guidance Center - Bangla Section, K.S.A (সংগৃহীত ও সংযোজিত)

Tuesday, April 28, 2020

সাহারী না খেলে কি ছিয়াম হয়?

#সাহারী না খেলে কি ছিয়াম হয়?
====
#একটি মারাত্মক ভুল আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে। সেটি হলো, কোন কারণে সাহরি খেতে না পারলে আমরা রোযা রাখি না। আমরা ভাবি, সাহরি না খেলে ছিয়াম হয় না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।সবধান। এই ভুলটি কেউ করবেন না।
[এছাড়াও আরো একটি ভুল আছে সাহরির ব্যাপারে, পোস্টের শেষ অংশে দেখুন]
.
তবে, সাহরি খাওয়া সুন্নাত। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।
রছুল (ছঃ.) বলেন, "তোমরা সাহরি খাও, সাহরিতে বরকত আছে।" (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯২৩)
.
তবে পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়।
রছূল (ছঃ) বলেন, "....এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরি করো। কারণ যারা সাহরি খায় আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দু'আ করেন।" (আহমাদ ৩/১২, ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং ৯০১০, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৩৪৭৬)
.
সাহরির ব্যাপারে অনেকে অতি-সতর্কতা দেখাতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করেন। তাঁরা ইচ্ছা করে সাহরির শেষ সময়ের ১০/১৫ মিনিট আগেই সাহরি খেয়ে শেষ করেন ও এরপর কিছু খেতে চান না। তারা এটা অতি সতর্কতার কারণে করে থাকেন। এটি নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি। সাহরির শেষ টাইম পর্যন্ত সাহরি খাবেন। ২/৩ মিনিট আগে সাহরি শেষ করতে পারলে ভালো, সম্ভব না হলে শেষ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু এরপর আর খাওয়া যাবে না।
.
রছুল (ছ.) বলেন, "আমার উম্মাত কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতদিন তারা সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করবে ও শেষ ওয়াক্তে সাহরি খাবে।" (আহমাদ ৫/১৭৪)
.
আমর বিন মায়মূন রাহ. বলেন, "সাহাবাগণ দ্রুত ইফতার করতেন আর বিলম্বে সাহরি খেতেন।" (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস নং ৭৫৯১)
.
** অনেকে আযান পর্যন্ত খান। আযান দিচ্ছে, তবুও খাচ্ছেন; এমনটি করলে রোযা হবে না। সাহরির শেষ টাইমই মূল, আযান নয়। অনেক সময় আযান দিতে লেইট হতে পারে।।

Monday, April 27, 2020

রমাদন মাস দুয়া কবুলের মাস

#রমজান_মাস_দোয়া_কবুলের_মাস 🖤

 রছূলুল্লহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছল্লাম বলেছেন, রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। [মুসনাদে আহমদ]

অন্য হাদিসে এসেছে,
আল্লহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়।
[ সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ]

তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য দোয়া-ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি   পিতামাতার জন্যেও দোয়া করবেন ইং শা আল্লাহ.....

#পিতামাতার_জন্য_দোআঃ

#দোআঃ_১
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا

(রব্বির্ হামহুমা-কামা-রব্বাইয়া-নী ছ্বগীর-।)

হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন
(সূরা আল-ইসরা; আয়াতঃ ২৪)

#দোআঃ_২

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ

(রব্বানাগফিরলি- ওয়ালি ওয়ালিদাইঁয়া ওয়া লিল মু'মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বু-মুল হিছা---ব।)

হে রব্বুল আলামিন! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল মুমিনগণকে কিয়ামতের দিন ক্ষমা করে দিও।
(সূরাঃ ইব্রাহীম; আয়াতঃ ৪১)

#দোআঃ_৩

رَّبِّ اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَّلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِيْنَ إِلَّا تَبَارًا

(রব্বিগ্ ফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইঁয়্যা ওয়ালিমাং দাখলা বাইতিয়া মু'মিনাঁও ওয়ালিল্ মু'মিনীনা ওয়াল্ মু'মিনা-ত্; ওয়ালা-তাঝিদিজ্ জ্ব-লিমীনা ইল্লা-তাবা-র-।)

হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না
(সূরা নূহ; আয়াতঃ ২৮)

[credit: Tumpa binti Yousuf] 

Friday, April 24, 2020

রমাদন বিষয়ক একগুচ্ছ ফাইল

●●●● রমজান বিষয়ক একগুচ্ছ ফাইল ●●●●

• রোযাবস্থায় বীর্যপাত এবং স্বপ্নদোষের বিধান

• সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ (১ম পর্ব)

• সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ (২য় পর্ব)

• সহীহ হাদীসের আলোকে সাওম বিশ্বকোষ (৩য় পর্ব)

• কোনো এক স্থানের চাঁদ দেখা সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য কি?

• লাইলাতুল কদর: রমাদানের উপহার

• ঈদুল ফিতর ও যাকাতুল ফিতর এর সংক্ষিপ্ত বিধি বিধান

• রোযার ফযীলত ও শিক্ষা: আমাদের করণীয়

• রমযানে কিয়ামুল লাইলের বিধান

• তারাবীহ -এর সালাতের রাক্‌‘আত সংখ্যা

• কুরআন ও সুন্নাহ্‌র আলোকে রাতের সালাত

• আমল কবুলের কতিপয় উপায় ও রমযানের পরে করণীয়

• রমযান মাসের সমাপ্তি

• ঈদের বিধিবিধান

• রমজান ও পরবর্তী সময়ে করণীয়

• ফিতরা প্রদানের সময়সীমা ও বণ্টন পদ্ধতি

• ‘লাইলাতুল কদর’ এ কি কি ইবাদত করবেন?

• যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা

• বইঃ সিয়াম - রাসূলুল্লাহ্‌র রোজা (ফ্রি ডাউনলোড)

• বইঃ তারাবীহ ও ই’তিকাফ - ফ্রি ডাউনলোড

• রামাযানের শেষ দশক এবং হাজার মাসের চেয়েও সেরা একটি রাত

• বইঃ রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল - ফ্রি ডাউনলোড

• বইঃ সালাতুত তারাবীহ - ফ্রি ডাউনলোড

• সদকাতুল ফিতর

• সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (১ম পর্ব)

• সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (২য় পর্ব)

• সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (৩য় পর্ব)

• মাহে রামাজানের বিশটি স্পেশাল আমল

• রামাযানের ভুল-ত্রুটি

• জাকাতের গুরুত্ব, ফজিলত ও ব্যয়ের খাতসমূহ

• ফতোওয়া যাকাত: যাকাত বিষয়ক অতি গুরুত্বপূর্ণ ৩৭টি প্রশ্নোত্তর

• রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন (১ম পর্ব)

• রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন (২য় পর্ব)

• রমযান মাসে যদি সব শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে তাহলে এ মাসে মানুষ নিয়মিতভাবে পাপ করতে থাকে কীভাবে?

• সিয়াম ও রমজান : শিক্ষা-তাৎপর্য-মাসায়েল (১ম পর্ব)

• সিয়াম ও রমজান : শিক্ষা-তাৎপর্য-মাসায়েল (২য় পর্ব)

• সাধারণ ভুল যেগুলো রমজানের সময় আমরা করে থাকি

• মাহে রামাযান: অসংখ্য কল্যাণের হাতছানি

• রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল (১ম পর্ব)

• রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল (২য় পর্ব)

• রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল (৩য় পর্ব)

• রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল (৪র্থ পর্ব)

• জাকাত

• তারাবীহর নামাযের রাকআত সংখ্যা

• তারবীহর রাকায়াত সংখ্যা ৮ না ২০?

• ফতোওয়া সিয়াম: রোযা সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৫৬টি প্রশ্নোত্তর

• তারাবীহ্‌ সালাতের রাকা‘আত : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

• রোজার আদব

• রোজাদার বোনদের প্রতি...

• সুস্বাগত মাহে রমযান

• প্রশ্নোত্তরে সিয়াম (১ম পর্ব)

• প্রশ্নোত্তরে সিয়াম (২য় পর্ব)

• নিজ দেশের লোকদের সাথে রোযা রাখবে, না চাঁদ দেখা যে কোনো দেশের সাথে?

• কোনো এক স্থানের চাঁদ দেখা সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য কি?

• মুমিনদের জন্য মাহে রমজানের হাদিয়া

• রমজান বিষয়ক ফতোয়া

• চাঁদ উঠার বিভিন্ন উদয়স্থল সংক্রান্ত মতভেদ কি বিবেচনাযোগ্য? এ ব্যাপারে অমুসলিম দেশে মুসলিম কমিউনিটির অবস্থান

• সিয়াম, তারাবীহ ও যাকাত বিষয়ে কয়েকটি অধ্যায়

• মাহে রমযান : তাৎপর্য ও কর্তব্য

• রমাদান মাসের ৩০ আমল

• আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রামাদান মাসে একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

• রমজানে যা করনীয়

• সিয়ামের ফজিলত

• রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য

• রমজান মাসের ফজিলত

• কেউ যদি তার যিম্মায় থাকা (ছুটে যাওয়া) সালাতের ও ফরয সাওমের সংখ্যা মনে করতে না পারে, তবে সে কী করবে?

ফাইলগুলো বিস্তারিত পড়তে অথবা ডাউনলোড করতে ক্লিক করুনঃ
http://preachingauthenticislaminbangla.blogspot.com/2013/07/ramadan-file.html

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

বাংলাদেশের যখন সন্ধ্যা সাতটা তখন আমেরিকায় সকাল সাতটা, তাহলে কিভাবে সম্ভব পৃথিবীতে একই দিনে সিয়াম ও ঈদ পালন করা ?

বিশ্বব্যাপী একই দিনে সিয়াম ও ঈদ !!!

কোরআন হাদিস ও ফিকাহ কিতাব থেকে দলিল দেওয়ার পর যখন আর কিছু বলার থাকে না তখন এক শ্রেণীর লোক আছে যারা শেষমেষ প্রশ্ন ছুড়ে দেন যে, বাংলাদেশের যখন সন্ধ্যা সাতটা তখন আমেরিকায় সকাল সাতটা, তাহলে কিভাবে সম্ভব পৃথিবীতে একই দিনে সিয়াম ও ঈদ পালন করা ?
 আগে এই প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়া প্রয়োজন মনে করছি।
 কিভাবে সম্ভব সারা পৃথিবীতে একই দিনে ইসলামী দিবস পালন করা ? আসুন এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

যেহেতু জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রমাণ করে যে, মধ্যপ্রাচ্যেই সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ উদয় হয় তাই মধ্যপ্রাচ্যের সাথেই আমরা অন্যান্য দেশের সময়ের হিসেব করে নেব।
মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী সময়ের দেশ জাপানবাসীর জন্য ১ম তারিখের রোযা রাখার সম্ভাব্যতা সর্বাধিক প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিন্তু গবেষণায় সুপ্রমাণিত যে, ঐ দিন জাপানবাসীর জন্যও রোযা রাখা সম্ভব। যেমন বছরের সবচেয়ে ছোট রাত জুলাই মাসকেও যদি আলোচনায় আনা হয় তবে দেখা যাবে, জুলাই মাসে সর্ব শেষ সূর্যাস্ত হয় ৬টা ৫৫ মিনিটে। তাহলে মধ্য প্রাচ্যে সূর্যাস্তের পর পর সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখা গেল। ঐ সময় পৃথিবীর সর্বপূর্ব স্থান জাপানে রাত ১টা ২৮ মিনিট। কারণ মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানের মধ্যে অবস্থানগত দূরত্ব ৯৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। ফলে স্থানীয় সময় মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের চেয়ে ৬ঘন্টা ২৮মিনিট অগ্রগামী। তাহলে ফলাফল দাড়াল মধ্য প্রাচ্যে সন্ধ্যা ৭টায় চাঁদ দেখা গেলে জাপানে সে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছতেছে রাত ১টা ২৮ মিনিটে। অথচ জুলাই মাসে সাহরী খাওয়ার সর্বনিম্ন সময় হলো ৩টা ৪৩ মিনিট। তাহলে জাপানবাসী চাঁদ উদয়ে সংবাদ পাওয়ার পরেও রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্য সময় পাচ্ছেন প্রায় ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট। যা সাহরীর জন্য কোন বিবেচনায়-ই অপ্রতুল নয়। উপরন্ত ঐ সময়ের মধ্যে তারাবীর নামায আদায় করাও সম্ভব। আর পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের জন্য আমল করা কোন ভাবেই কষ্টকর নয়। কারণ যত পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের দিকে আসা হবে তারা চাঁদ উদয়ের সংবাদের পরে সাহরী খাওয়ার জন্য ততবেশী সময় পাবে।

 দুই:-- যদি প্রশ্ন করা হয়, আমরা বাংলাদেশে যখন ইফতার করি তখন আমেরিকায় ভোর, আবার আমরা যখন সাহরী খাই তখন আমেরিকায় বিকাল, তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে একই দিনে আমল করা কি করে সম্ভব?

জবাব: অত্র পশ্নের উত্তর বুঝার জন্য দু’টি মৌলিক বিষয় গভীর ভাবে স্মরণ রাখতে হবে। এক: চাঁদের তারিখ সংশ্লিষ্ট আমলগুলো সমগ্র পৃথিবীতে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবেনা। বরং একই দিনে (অর্থাৎ শুক্র, শনি, রবি----------বুধ বা বৃহস্পতিবারে) এবং একই তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। দুই: যেহেতু সব সময়েই মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখা যাবে তাই চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যে কোন দেশের সময়ের হিসেব মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের সময়ের সঙ্গে নয়।

 তাহলে মনে করা যাক, বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র রমযানের চাঁদ দেখা গেল এবং প্রমাণিত হল শুক্রবার ১ রমযান। এখন সমগ্র বিশ্বে ১ রমযান হিসেবে শুক্রবারে রোযা রাখা যায় কিনা এটাই মূল বিবেচনার বিষয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় যখন মধ্য প্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেল তখন ঐ চাঁদ দেখার সংবাদ ১৪২ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত সর্বপ্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে পৌঁছবে জাপানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২৮মিনিটে। অথচ সাহরীর সর্বশেষ সময় সীমা কখনই ৩টা ৪৩মিনিটের নিম্নে আসেনা। তাহলে জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে শুক্রবারে রোযা রাখার জন্য সাহরী খেতে সময় পাচ্ছেন (৩:৪৩মিঃ - ১:২৮মিঃ) ২ঘন্টা ১৫মিনিট। এমনিভাবে ১২০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমবা, ফ্লোরেস, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের শেংইয়াং, হাইলার, ইনহো, রাশিয়ার টালুমা, খরিনটস্কি, সুখানা এবং অলিনেক অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায়। ফলে বছরের সব চেয়ে ছোট রাতেও চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ রমযানের রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্যে তারা সময় পাবে ৩ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। অতএব তাদের জন্যে শুক্রবার রোযা রাখা সম্ভব। এরপরে ১০৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ তেলাকবেটং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীনের ইপিং, চেংটু, মোঙ্গলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্য সাইবেরিয়ান অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৪ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। তারপরে ৯০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, চীনের লাসা, টুরপান, ফাইয়ুন, রাশিয়ার আবাজা অচিনিস্ক, নগিনস্কি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৫ ঘন্টা ৪৩ মিনিট এভাবে ৭৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ ভারতের দিল্লী, কাশ্মীর, কিরগিজিয়া, পূর্বপাকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐরাত ৯টায় এবং ৬০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ পাকিস্তানের করাচী, আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ওখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত পূর্ব গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার ১ রমযান রোযা রাখা সম্পূর্ণ সম্ভব।

 এবার পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ৪৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রমযানের চাঁদ দেখা গেল তখন ৩০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান, জিম্বাবুই, জাম্বিয়ার বেলা, তানজানিয়ার বরুনডি, সুদান, মিসর, তুরস্কের বুরসা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লেলিন গ্রাদ ইত্যাদি অঞ্চলে উক্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায়। ফলে চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ রমযানের রোযা রাখতে তারা সময় পাবেন ৯ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। এমনি ভাবে ১৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। ০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ টগো, মালি, আলজেরিয়ার রেগান, ওরান, স্পেনের ভ্যালেনসিয়া, ফ্রান্সের বদৌস ও প্যারিস এবং লন্ডন অঞ্চল সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়। আরো পশ্চিমে ১৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সেনেগাল, মৌরতানিয়ার নৌয়াকচট, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব আইসল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায়। এমনি করে ৩০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ২টায়, ৪৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ১টায়, ৬০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে পূর্ব আর্জেটিনায়, প্যারাগুয়ে, মধ্য ব্রাজিলে, পূর্ব ভেনিজুয়েলায়, পূর্ব কানাডায় এবং পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়। এমনি করে ৭৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১১টায়। ৯০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১০টায়। ১০৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ সমূহ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের আলবুক্‌য়ার্ক, ডেনভার, সিয়েন, মাইলস্‌ সিটি এবং মধ্য কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে এসব অঞ্চলের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। এমনি ভাবে সর্বশেষ ১৮০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায়। এবং উল্লেখিত সকল দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ সমূহের অধিবাসীরা জানবে যে, মধ্য প্রাচ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখার কারণে ১ রমযান হচ্ছে শুক্রবার।

 অতএব মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশগুলো যথাক্রমে বৃহস্পতিবার দিনের অংশ ও পূর্ণদিন অতিক্রমের পরে স্থানীয় ভাবে যে দেশে যখন শুক্রবার শুরু হবে সে দেশে তখন শুক্রবারে ১ রমজানের রোযা পালন করবে। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পশ্চিম গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার ১ লা রমজান রোযা করা সম্পূর্ণ সম্ভব।

আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।

Monday, April 20, 2020

সংক্রামক বা ছোয়াচে রোগ সম্পর্কে ইসলাম এবং নাস্তিক্যধর্ম কি বলে ?

প্রশ্নঃ সংক্রামক রোগ সম্পর্কে ইসলাম এবং নাস্তিক্যধর্ম কি বলে ?

✅উত্তরঃ অনেক ইসলাম বিদ্বেষীকে বলতে শোনা যায় যে নবীজি (সা) বলেছেন সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই অথচ আমরা সবাই জানি যে ছোঁয়াচে রোগ অবশ্যই আছে সুতরাং ইসলাম ভুল তথ্য দেয় । আসলে সেসব ইসলাম বিদ্বেষীরা কুরআন হাদিস বিষয় কিছুই জানে না, না জেনে অযথাই ভুল প্রশ্ন করে নিজেদেরকে নাস্তিক্যধর্মের সহিহ বিশ্বাসী ভেবে আত্মতৃপ্তির সুধা পান করে , যা জ্ঞানীদের কাছে হাস্যকর ।

♻️যে হাদিসটি থেকে অভিযোগ করা হয় সেটি হলঃ

নবীজি (সা) বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি বলতে কিছুই নেই । ( বিস্তারিত পড়ুনঃ ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৬৮২, ৫৬৮৩, ৫৬৮৭, ৫৬৮৮, ৫৬৮৯, ৫৬৯০ , ৫৬৯৩, ৫৬৯৪, ৫৬৯৫, ৫৬৯৬ -  > সহিহ হাদিস । এ হাদিসটি আরও আছে সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৯১২,৩৯১৬,৩৯২১ - > সহিহ হাদিস ।

♻️উপরের হাদিসটি দেখেই বিদ্বেষীরা ফলাফল জানিয়ে দেয় অথচ হাদিস শুধু এতটুকুই নয় বরং আরও হাদিস রয়েছে । আমরা সব হাদিস এবং তথ্য একত্রে করে এরপরে ফলাফল বর্ণনা করব । ইসলাম ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করেনিঃ বরং বিদ্বেষীরাই ইচ্ছা করে ভুল বুঝেছে । আসুন এখন আর কিছু তথ্য জেনে নেইঃ

ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৬৩৪, সহিহ হাদিসঃ জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ হারূন ইবনু মা‘রূফ এবং আবূ তাহির ও আহমাদ ইবনু ‘ঈসা (রহঃ) ......জাবির (রাঃ) এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেছেন-প্রতিটি ব্যাধির প্রতিকার রয়েছে। অতএব রোগে যথাযথ ঔষধ প্রয়োগ করা হলে আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ হয়।

সুরা বাকারা ২:১৯৫ = তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না আর মানুষের সাথে ভাল ব্যাবহার করো , নিশ্চয় আল্লাহ্‌ভাল ব্যাবহারকারীদের ভালবাসেন ।

সুরা আরাফ ৭:৫৬ = দুনিয়াতে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না ।

ihadis.com, সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ ৫৪৯৩, সহিহ হাদিসঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি পাগলামী, কুষ্ঠ রোগ এবং শ্বেতরোগ এবং অতি মন্দ রোগ ব্যাধি হতে।

ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৬৮১, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ (এ হাদীস সে সময়ের) যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সংক্রমণ ব্যাধি, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো পোকা (বা সফর মাসের অগ্রপশ্চাৎকরণ) ও মৃত মানুষের আত্না হতে পেঁচার জন্ম বলতে কিছু নেই। সে সময় জনৈক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তাহলে সে উট পালের কি অবস্থা, যা কোন বালুকাময় ভূমিতে থাকে যা ব্যাধিমুক্ত বলবান। অতঃপর সেখানে খোচ-পাঁচড়া আক্রান্ত (কোন) উট এসে তাদের মধ্য প্রবেশ করে তাদের সবগুলোকে পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে দেয়? তিনি বললেন, তাহলে প্রথম (উট) টিকে কে সংক্রমিত করেছিল?

ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১০০১, হাসান হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতদের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি (খারাপ) বিষয় আছে। তারা কখনও এগুলো (পুরোপুরি) ছাড়বে না: মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ সহকারে ক্ৰন্দন করা, বংশ তুলে গালি দেওয়া, সংক্রামক রোগ সংক্রমিত হওয়ার ধারণা, একটি উট সংক্রমিত হলে একশ’টি উটে তা সংক্রমিত হওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? আর নক্ষত্রের প্রভাব মান্য করা অর্থাৎ অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি হলো।

ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৬৭৭, সহিহ হাদিসঃ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া তামীমী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া তামীমী (রহঃ) …..‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, ‘উমার (রাঃ) শামের (সিরিয়ার) দিকে রওয়ানা হলেন। ‘সার্‌গ’ নামক স্থান পর্যন্ত পৌছালে ‘আজনাদ’ অধিবাসীদের (প্রতিনিধি ও অধিনায়ক) আবূ ‘উবাইদাহ্‌ ইবনু জার্‌রাহ্‌ ও তাঁর সহকর্মী গণ তাঁর সাথে দেখা করলেন। তখন তাঁরা সংবাদ দিলেন যে, শামে মহামারী আরাম্ভ হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন-প্রাথমিক যুগের মুহাজিরদের আমার নিকট ডেকে আন। আমি তাদেরকে ডেকে নিয়ে আসলে তিনি তাঁদেরকে সংবাদ দিলেন যে, শামে মহামারী আরাম্ভ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে থেকে পরামর্শ চাইলেন। অতঃপর তাঁরা দ্বন্দে পড়ে গেল। তাঁদের কেউ কেউ বলল, আপনি একটি বিশেষ কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, তাই আমরা আপনার ফিরে যাওয়া যথাযথ মনে করি না। আর কেউ কেউ বললেন, আপনার সঙ্গে অনেক প্রবীণ লোক এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ রয়েছেন। তাই আমরা তাঁদেরকে এ মহামারীর সম্মুখে ছেড়ে দেয়া যুক্তিসঙ্গত মনে করি না। তিনি বললেন, আপনারা উঠুন! তারপর বললেন, আনসারীদের আমার নিকট ডেকে আনো। আমি তাঁদেরকে তাঁর নিকট ডেকে নিয়ে আসলে তিনি তাঁদের কাছেও পরামর্শ চাইলেন। তাঁরা মুহাজিরদের পন্থা অনুকরণ করলেন এবং মুহাজিরগণের মতো তাঁদের মধ্যেও দ্বিমত সৃষ্টি হলো। তিনি বললেন, আপনারা উঠুন! তারপর তিনি বললেন, (মক্কা) বিজয়ের পূর্বে হিজরতকারী কুরায়শের মুরুব্বীদের যারা এখানে আছেন, তাঁদের আমার নিকট পাঠাও। আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁদের দু’জনও কিন্তু ভিন্নমত পোষণ করলেন না। তাঁরা (সকলেই) বললেন, আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করি যে, আপনি লোকদের নিয়ে ফিরে যান এবং তাঁদেরকে এ মহামারীর দিকে ঠেলে দিবেন না। তখন ‘উমার(রাঃ) লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন, আমি ভোরে সাওয়ারীর উপর থাকবো, তোমরাও ভোরে সাওয়ারীর উপর আরোহণ করবে। তখন আবূ ‘উবাইদাহ্‌ ইবুন জার্‌রাহ্‌ (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র তাকদীর হতে ভেগে যাওয়া ? তখন ‘উমার(রাঃ) বললেন, হে আবূ ‘উবাইদাহ্! তুমি ছাড়া অন্য কেউ এমন করলে, (রাবী বলেন) ‘ উমার (রাঃ) তাঁর বিরুদ্ধাচারণ অপছন্দ করতেন। (তিনি বললেন) হ্যাঁ! আমরা আল্লাহ্‌র তাক্‌দীর হতে আল্লাহ্‌রই তাক্‌দীরের দিকে পলায়ন করছি। তোমার যদি একপাল উট থাকে আর তুমি একটি উপত্যকায় অবতীর্ণ হও যার দু’টি প্রান্তর রয়েছে, যার একটি সবুজ শ্যামল, অপরটি তৃণশূন্য; সে ক্ষেত্রে তুমি যদি সবুজ শ্যামল প্রান্তরে (উট) চরাও, তাহলে আল্লাহ্‌র তাকদীরেই সেখানে চরাবে আর যদি তৃণশূন্য প্রান্তরে চরাও, তাহলেও আল্লাহ্‌র তাকদীরেই সেখানে চরাবে। রাবী বলেন, এ সময়ে ‘আবদুল রহমান ইবনু ‘আওফ(রাঃ) এলেন, তিনি (এতক্ষণ) তাঁর কোন প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার নিকট (হাদীসের) ‘ইল্‌ম রয়েছে। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা কোন এলাকায় সেটার খবর শুনতে পাও, তখন তার উপরে (দুঃসাহস দেখিয়ে) এগিয়ে যাবে না। আর যখন কোন দেশে তোমাদের সেখানে থাকা অবস্থায় তা দেখা যায়, তখন তা হতে পলায়ন করে বেরিয়ে পড়ো না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন ‘উমার(রাঃ) আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন। অতঃপর চলে গেলেন।

ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৬৮০, সহিহ হাদিসঃ  আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির ইবনু রাবী‘আহ্‌ থেকে বর্ণিতঃ ‘উমার (রাঃ) শামের দিকে সফরে বের হলেন, ‘সার্‌গ’ পর্যন্ত গমন করলে তাঁর নিকটে (খবর) আসল যে, শামে মহামারী লক্ষ্য করা গেছে। তখন ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু ‘আওফ(রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন অঞ্চলে মহামারীর (সংবাদ) শুনবে, তখন তার দিকে অগ্রসর হবে না। আর যখন কোন অঞ্চলে সেটা দেখা দিবে, আর তোমরা সেখানে রয়েছো, তাহলে সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। অতঃপর ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সার্‌গ হতে প্রত্যাবর্তন করলেন।

ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৫৬৮৪,৫৬৮৫, সহিহ হাদিসঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রমণ (এর অস্তিত্ব) নেই। তিনি আরও বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ব্যাধিযুক্ত উটপালের মালিক (অসুস্থ উটগুলোকে) সুস্থ উটপালের মালিকের (উটের) ধারে কাছে আনবে না।

ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৯১৫, সহিহ হাদিসঃ বাক্বিয়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনু রাশিদ (রহঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী অর্থাৎ পেঁচা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, জাহিলী যুগে লোকেরা ধারনা করতো কাউকে মৃত্যুর পর দাফন করা হলে ঐ মৃত ব্যক্তি কবর থেকে পেঁচা হয়ে বেরিয়ে আসে। অতঃপর তাঁর বাণী অর্থাৎ সফর মাস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, আমরা শুনেছি, জাহিলী যুগে লোকেরা সফর মাসে কোথাও যাত্রা করাকে কুলক্ষুনে মনে করতো। তাই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর মাসকে অশুভ মনে করতে নিষেধ করেন। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে যুগে কেউ যদি বলতো, সফর মাসে পেটে ব্যথা হয়। সবাই বলতো, এটা সংক্রামক। তাই তিনি বলেছেনঃ সফর মাস এরূপ নয় যেরূপ তোমরা ধারনা করে থাকো।

ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৯১১, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই, সফর মাসকেও অশুভ মনে করা যাবে না এবং পেঁচা সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত রয়েছে তাও অবান্তর। তখন এক বেদুঈন বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উটের পাল অনেক সময় মরুভূমির চারন ভূমিতে থাকে, মনে হয় যেন নাদুস-নুদুস জংলী হরিণ। অতঃপর সেখানে কোন একটি চর্মরোগ আক্রান্ত উট এসে আমার সুস্থ উটগুলোর সাথে থেকে এদেরকেও চর্মরোগী বানিয়ে দেয়। তিনি বললেনঃ প্রথম উটটির রোগ সৃষ্টি করলো কে? মা’মার (রহঃ) বলেন, যুহরী (রহঃ) বলেছেন, অতঃপর এক ব্যক্তি আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ রোগাক্রান্ত উটকে যেন সুস্থ উটের সাথে একত্রে পানি পানের জায়গায় না আনা হয়।” আবূ হুরায়রার (রাঃ) এ হাদীস শুনে এক ব্যক্তি বললো, আপনি কি এ হাদীস বর্ণনা করেননি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি বলতে কিছু নেই, সফর মাসকে অশুভ মনে করবে না এবং পেঁচা সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত আছে তা অবান্তর?” তখন আবূ হুরায়রা বলেন, না, আমি তোমাদের নিকট এরূপ হাদীস বলিনি। যুহরী বলেন, আবূ সালামাহ (রাঃ) বলেছেন, তিনি অবশ্যই এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে আমি আবূ হুরায়রা্কে এ হাদীস ছাড়া কখনো কোন হাদীস ভুলে যেতে শুনিনি।

📶উপরের হাদিস সমূহের মুল ব্যাখ্যা হলঃ

"সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই" এই কথার অর্থ হল রোগের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই বরং আল্লাহ সেই রোগের মাঝে সংক্রামকের ক্ষমতা দিয়েছেন । মাওলানা শামশূল হক ফরিদপুরী (রহ) লিখিত, বোখারী শরীফ (বাংলা তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা) ৬ খণ্ড, ৩১৯ থেকে ৩২২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে হাদিসে "কোন ব্যাধি সম্পর্কে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক হওয়ার আকিদা ও বিশ্বাস রাখা নিষিদ্ধ" এবং সর্বশেষ বাক্য "কুষ্ঠ রোগী হতে দূরে থাকো" - এই দুইটি বিষয়ের মধ্যে কোন অসামঞ্জস্যতা নেই । কারন কোন রোগ বা ব্যাধিকে ছোঁয়াচে ও সংক্রামক বিশ্বাস না করার উদ্দেশ্য এই যে - কোন ব্যাধি সম্পর্কে এরুপ আকিদা পোষণ করবে না যে এই ব্যাধিগ্রস্থের সংস্পর্শেই অন্য মানুষ আক্রান্ত হয়ে যায় । উহার জন্য আল্লাহর সৃষ্টিরও আবশ্যক হয় না । আল্লাহ তা'লা কর্তৃক সৃষ্টি করা ব্যাতিরেকে শুধু সংস্পর্শের দরুনই উক্ত ব্যাধির উৎপত্তি হয়ে যায় । ....... প্লেগ, কুষ্ঠ ইত্যাদি কতিপয় রোগ সম্পর্কে জাহেলিয়াতের বা অন্ধকার যুগে মোশরেকদের একটি বদ্ধমুল ধারনা ছিল, যে ধারনা বর্তমান যুগের বিজ্ঞান পূজারীদের মধ্যেও দেখা যায় যে, এই সব রোগ ছোঁয়াচে ও সংক্রামক । অর্থাৎ এই রোগগ্রস্ত রোগীর সংস্পর্শেই অন্য লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় আল্লাহর সৃষ্টির তোয়াক্কা রাখে না । এই ধরনের আকিদা ও বিশ্বাস ইসলাম বিরোধী । আলোচ্য হাদিসে এই শ্রেণীর সংক্রামকতাকেই অলীক ও অবাস্তব বলা হয়েছে ।

বিখ্যাত গ্রন্থ "তিব্বে নববী" ৬০, ৬১, ৬১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছেঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা) বলেছেন একদিন হযরত ইব্রাহীম (আ) আল্লাহর নিকট প্রশ্ন করলেন, হে আমার প্রতিপালক রোগ কার পক্ষ হতে ? আল্লাহ বলেন আমার পক্ষ হতে । আবার তিনি প্রশ্ন করলেন ঔষধ কার পক্ষ হতে ? জবাব এল আমার পক্ষ হতে । ইব্রাহীম (আ) আবার জিজ্ঞাসা করলেন তাহলে চিকিৎসকের প্রয়োজন কি ? আল্লাহ জবাব দিলেন চিকিৎসকের মাধ্যমে ঔষধ পাঠানো হয় ।

উপরোক্ত তিনটি প্রশ্ন ও জবাবের মধ্যে রোগ, নিরাময় চিকিৎসা ও ঔষধপত্র ইত্যাদির পরিপূর্ণ দর্শন এসে গেছে । রোগ যেমন আল্লাহর পক্ষ হতে আসে তেমনি নিরাময়ের ঔষধও সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক মহান আল্লাহ তা'লাই সৃষ্টি করেছেন ।

নবী (সা) এর নিকট এক সাহাবী আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল ! আমরা কি ঔষধপত্র চিকিৎসা গ্রহন করব ? চিকিৎসক কি খোদার বিধান ফিরাতে পারে ? নবী (সা) বললেন চিকিৎসাও খোদায়ী বিধান - মুসতাদরাকে হাকেম ।

ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২৩০৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এরূপ দুটি নিয়ামাত আছে যে ব্যাপারে বেশিরভাগ লোক ধোঁকায় নিপতিত : সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময়।

সুতরাং বিখ্যাত এই হাদিস ব্যাখ্যা গ্রন্থে সেটাই বলা হয়েছে অর্থাৎ রোগের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই বরং আল্লাহ রোগের মাঝে সংক্রামকের ক্ষমতা দিয়েছেন আর এটাই নবিজি (সা) এর "সংক্রামক বলে কিছুই নেই" কথার বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা অথবা সঠিক অর্থ ।

🆗উপরের তথ্য সমূহ সামনে রেখে আমরা স্পষ্ট হলাম যেঃ

১/ প্রত্যেকটি রোগের ঔষধ আছে । অতএব রোগে যথাযথ ঔষধ প্রয়োগ করা হলে আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ হয়।
২/ নিজেদের জীবনকে ধ্বংস করা নিষেধ ।
৩/ দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং এরপরে আর অশান্তি সৃষ্টি করা যাবে না ।
৪/ রাসুল (সা) ছোঁয়াচে এবং ভয়াবহ রোগ থেকে আশ্রয় চেয়েছেন আল্লাহর কাছে ।
৫/ সংক্রামক রোগের ধারনা জাহেলি যুগের ভ্রান্ত ধারনা কারন প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? অর্থাৎ এই প্রশ্নেই উত্তর আছে যে রোগের নিজস্ব ক্ষমতা নেই বরং আল্লাহ রোগের মধ্যে এই ক্ষমতা দিয়েছেন - এটাই ইসলামের আকিদা ।
৬/ রাসুলের সাহাবীরা মহামারীতে নিজেদের সেফ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়েছেন কারন নবীজি (সা) নিজেই বলেছেন যেখানে মহামারী দেখা সেখানে দুঃসাহস দেখিয়ে সামনে যেও না ।
৭/ জাহিলী যুগে লোকেরা ধারনা করতো সংক্রামক রোগের নিজস্ব ক্ষমতা আছে এখানে আল্লাহর ক্ষমতা নিই - ইসলাম এই ভ্রান্ত ধারনাকে সম্পূর্ণ বাতিল ঘোষণা করেছে ।
৮/ সুতরাং ইসলাম ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করে এই কথা ভুল বরং আমরা বলব, আল্লাহ রোগের মাঝে সংক্রামকের ক্ষমতা দিয়েছেন বলেই রোগ সংক্রামক করতে পারে, রোগের নিজস্ব ক্ষমতা নেই ।
৯/ "সংক্রামক রোগ বলতে কিছুই নেই" এই কথার অর্থ রোগের নিজস্ব ক্ষমতা নেই বরন আল্লাহ সেই রোগের মাঝে সংক্রামকের ক্ষমতা দিয়েছেন ।
১০/ ইসলামের দৃষ্টিতে রোগ আল্লাহর পক্ষ হতে, ঔষধও আল্লাহর পক্ষ হতে আমাদেরকে উসিলা অথবা মাধ্যম গ্রহন করতে হবে এটাও আল্লাহরই আদেশ ।
১১/ সুস্থ থাকা একটি বিশাল নিয়ামত অর্থাৎ আল্লাহর দান ।

❓প্রশ্নঃ মহামারীতে মুসলিম মারা গেলে শহীদ তাহলে এই হাদিস কি বলছে না মহামারীতে সকল মুসলিমদের মারা জেতে ?

✅উত্তরঃ ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৮৩০, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। এই হাদিসের কোথায় বলা হচ্ছে যে "সকল মুসলিম মহামারীতে মৃত্যুবরন করো" ? এই হাদিসে সঠিক ব্যাখ্যা হল একজন মুসলিম সমস্ত সচেতনতা অবলম্বন করার পরেও যদি সে মারা যায় তাহলে সে শহীদ হবে কিন্তু এরমানে এই না যে সে ইচ্ছা করে মারা যাবে । দুনিয়াতে এভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে ইসলাম নিষেধ করেছে । সুরা বাকারা ২:১৯৫ = তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও । সুতরাং প্রশ্নকর্তা হাদিসকে ভুল ভাবে বুঝেছে ।

❓প্রশ্নঃ নাস্তিক্যধর্ম কি বলে ?

✅উত্তরঃ স্রষ্টাকে প্রমানের অভাবে, স্রষ্টাকে বাতিল করাকেই নাস্তিক্যবাদ বলা হয় । নাস্তিক্যবাদকে নাস্তিকরা ধারন করে বিধায় একে নাস্তিক্যধর্মও বলা হয় । নাস্তিক্যধর্ম রোগ নিয়ে ডিল করে না এমনকি ইসলামে কি বলা হয়েছে অথবা বলা নেই সেসব নিয়েও নাস্তিক্যধর্ম ডিল করে না । "করোনা ভাইরাস" নাস্তিক্যধর্ম বিশ্বাস মতে একটি অনর্থক বিষয় কারন বিখ্যাত নাস্তিক্যধর্ম প্রচারক হুমায়ুন আজাদ সাহেব তার "আমার অবিশ্বাস" কেতাবের ১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছেঃ তবে সব কিছুই নিরর্থক, জগত পরিপূর্ণ নিরর্থকতায়, রবীন্দ্রনাথ নিরর্থক , আইনস্টাইন নিরর্থক, ওই গোলাপও নিরর্থক, ভোরের শিশিরও নিরর্থক, তরুণীর চুম্বনও নিরর্থক, দীর্ঘ সুখকর সংগমও নিরর্থক, রাষ্ট্রপতি নিরর্থক, কেননা সব কিছুরই পরিনতি বিনাশ ।

"করোনা ভাইরাস"কে যদি নাস্তিকরা বিশ্বাস করে তাহলে তারা অন্ধবিশ্বাসী হিসেবে প্রমানিত হবে । তবে হ্যাঁ যদি কোন নাস্তিক নিজের চোখে সেই ভাইরাস দেখে এবং পরিক্ষা করে শুধুমাত্র তখন সে অন্ধবিশ্বাসী হবে না । এ ছাড়া বাকি খগেনরা বা সমকামীরা সবাই অন্ধ বিশ্বাসী - > নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে । শুধুমাত্র ডাক্তার অথবা বিজ্ঞানীদের মুখের বানী শুনেই সেই অদৃশ্য ভাইরাসের প্রতি বিশ্বাস করা নাস্তিক্যধর্মর আকিদা বিশ্বাস পরিপন্থী কাজ । কারন "আমার অবিশ্বাস" কেতাবের  বইয়ের ভূমিকার শেষের দিকে লেখা আছেঃ মানুষের জন্যে যা ক্ষতিকর , সেগুলোর শুরুতেই রয়েছে বিশ্বাস, বিশ্বাস সত্যের বিরোধী, বিশ্বাসের কাজ অসত্যকে অস্তিত্বশীল করা , বিশ্বাস থেকে কখনো জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না, জ্ঞানের বিকাশ ঘটে অবিশ্বাস থেকে, প্রথাগত সিদ্ধান্ত দ্বিধাহীনভাবে না মেনে তা পরীক্ষা করার উৎসাহ থেকে ।

সুতরাং ছোঁয়াচে অথবা করোনা ভাইরাস জাই হক না কেন নাস্তিক্যধর্ম এসব নিয়ে ডিল করতে অপারগ তাই কোন নাস্তিক যদি এসব নিয়ে মাতাব্বুরি অথবা বিন্দুমাত্র কোন কোথা বলতে আসে তাহলে সে বিশুদ্ধ নাস্তিক হতে পারেনি এমনকি সে নাস্তিক্যধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করলো ।

✅আমার মুক্তমনা প্রশ্নঃ 🤔

১/ "সংক্রামক ব্যাধি বলতে কিছুই নেই" এর অর্থ আল্লাহ রোগ ব্যাধি দেন, রোগের নিজস্ব ক্ষমতা নেই এই অর্থ ভুল, কুরআন হাদিসের আলোকে প্রমান করেন ?

২/  "রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা কর" এই কথা কেন বলা হল যদি সংক্রামক ব্যাধি বলতে কিছুই নেই বুঝানো হয়ে থাকে , কুরআন হাদিস দিয়ে জবাব দিন ?

৩/ "হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি পাগলামী, কুষ্ঠ রোগ এবং শ্বেতরোগ এবং অতি মন্দ রোগ ব্যাধি হতে" এই দুয়া নবীজি (সা) কেন করলেন যদি সংক্রামক রোগের অস্তিত্ব নাই থাকে ?

৪/ নিজের জীবনকে ধ্বংস করতে নিষেধ করেছে ইসলাম তাহলে "সংক্রামক রোগ নেই" এই কথার ভুল অর্থ বুঝে কেউ যদি মহামারীতে নিজেকে সেফ না রাখে এটার দায়ভার ইসলামের কিভাবে হয়?

৫/ দুনিয়াতে শান্তি সৃষ্টি করতে বলেছে তাহলে মহামারীতে দুঃসাহস দেখিয়ে অশান্তি করতে সেটি ইসলামের বিপক্ষে হবে না কিভাবে ?

৬/ নবীজি (সা) দুঃসাহস দেখিয়ে মহামারী এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন তাহলে ইসলাম কিভাবে সংক্রামক রোগকে অস্বীকার করছে ?

৭/ "মহামারীতে সুস্থ থাকার জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়া যাবে না" কুরআন হাদিস থেকে প্রমান করেন?

৮/ কোন সাহাবী "সংক্রামক রোগের অস্তিত্ব নেই" এই কথা সরাসরি আক্ষরিক অর্থে মেনেই মহামারীতে সচেতন না হয়েই মারা গিয়েছে প্রমান দিন ?

৯/ ছোঁয়াচে রোগ কিভাবে শুন্য থেকে নিজেই সৃষ্টি হল ? নাস্তিক্যধর্ম দিয়ে উত্তর দিন ।

১০/ করোনা ভাইরাস কে প্রকৃতি কেন সৃষ্টি করলো ? নাস্তিক্যধর্ম আলোকে জবাব দিন ।

১১/ করোনা ভাইরাসের নিজের কি ক্ষমতা আছে ? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ আছে তাহলে সে তার ক্ষমতা কমাতে পারছে না কেন ? যদি উত্তর হয় না তাহলে সে তার ক্ষমতা কিভাবে পেল  ? নাস্তিক্যধর্ম কি সমাধান দিবে এখানে ? করোনা ভাইরাস কি বিবর্তনের মাধ্যমে সামনে কোন প্রাণীর রুপ ধরতে পারে ? উত্তর হ্যাঁ হলে সেটার প্রমান কি ? উত্তর না হলে বিবর্তন কেন এটা পারবে না ? নাস্তিক্যধর্ম এখানে কি সমাধান দিবে ?

১২/ মহাবিশ্ব দুর্ঘটনার ফসল তাহলে করোনা ভাইরাসে মানুষ মারা যাচ্ছে তাদের জীবন কিভাবে মূল্যহীন হবে না ? আর ডাক্তাররা যে রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছে তারা কি নিরর্থক কাজ করছে না - নাস্তিক্যধর্মর দৃষ্টিতে ?

১৩/ শুন্যতা থেকে সুস্থ এবং অসুস্থতার এই সিস্টেম প্রথম কিভাবে অস্তিত্ব লাভ করে এবং কেন ? নাস্তিক্যধর্ম এখানে কি আকিদা বিশ্বাস করতে বলে এবং কেন ?

১৪/ প্রকৃতি কিভাবে করোনা ভাইরাস শুন্য থেকে সৃষ্টি করলো এবং কেন ? ছোঁয়াচে রোগ কিভাবে নিজে নিজেই এই সংক্রামক ক্ষমতা অর্জন করলো ?

১৫/ যতক্ষণ নাস্তিকরা নিজে "করোনা ভাইরাস" পরিক্ষা না করে বিশ্বাস করছে ততক্ষন কি তারা "অন্ধবিশ্বাসী" হিসেবে গণ্য হচ্ছে না ? কারন ডাক্তার (মানুষ) অথবা বিজ্ঞানীদের (এরাও মানুষ) মুখের কথা বিনা প্রমানে বিশ্বাস করা তো নাস্তিক্যধর্মে অন্ধবিশ্বাসী বলা হয় , তাহলে নাস্তিকরা সবাই অন্ধবিশ্বাসী ? এখন এই "অন্ধবিশ্বাসী"র ট্যাগ থেকে রক্ষা পেতে সকল নাস্তিকদের "করোনা ভাইরাস" পরিক্ষা করতে হবে এরপরে বিশ্বাস করতে হবে ! আচ্ছা বিশ্বাস করাও তো একটি ভাইরাস তাহলে কি নিজেরা পরিক্ষা করার পরেও এই করোনা ভাইরাসের প্রতি বিশ্বাস করা যাবে না ? নাস্তিক্যধর্ম কি বলে?

✍️লিখেছেনঃ এম ডি আলী ।

একাকী ছলাতে কি ইকামাত দিতে হবে?

মহানাবী (ছঃ) বলেন, “যখন সফরে থাকবে, তখন তোমরা আযান দিও এবং ইকামত দিও। আর তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করো।” (বুখারী, মিশকাত ৬৮২নং)

রসুল ছঃ বলেন, “কোন ব্যক্তি যখন কোন বৃক্ষ-পানিহীন প্রান্তরে থাকে, অতঃপর সেখানে নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তখন সে যেন ওযু করে। পানি না পেলে যেন তায়াম্মুম করে। অতঃপর সে যদি শুধু ইকামত দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার সাথে তার সঙ্গী দুই ফিরিশ্‌তা নামায পড়েন। কিন্তু সে যদি আযান দিয়ে ও ইকামত দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার পশ্চাতে আল্লাহর এত ফিরিশ্‌তা নামায পড়েন, যাদের দুই প্রান্ত নজরে আসে না!” (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, সহিহ তারগিব ২৪১নং)

সফরে একা থাকলে অথবা মসজিদ খুবই দূর হলে এবং আযান শুনতে না পাওয়া গেলে একাই আযান ও ইকামত দিয়ে নামায পড়া সুন্নত। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৫৫)

মূলকথা হলো, ইকামাত দেওয়া সুন্নাত তা জামায়াতে হোক বা একাকী। কেউ ইকামাত না দিলে এতে নামাজের কোন ক্ষতি হবেনা বরং উক্ত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।

Wednesday, April 15, 2020

তাওবা ইস্তেগফার করার জন্য কি কি দুয়া করতে পারি?

💞আছছালামু য়ালাইকুম 💞

প্রশ্নঃ তাওবা ইস্তেগফার করার জন্য কি কি দুয়া করতে পারি?
____________________________________________
উওরঃ
হাদিসে বর্ণিত তাওবার দুয়া সমূহ:
=========================
দুয়া-১:
======
মূল আরবীঃ ﺃَﺳﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্ল-হ।
অনুবাদঃ আমি আল্লহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

প্রতি ওয়াক্তের ফরয ছলাতে ছালাম ফিরানোর পর রছূলুল্লাহ (ছঃ) এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। [মিশকাত-৯৬১]
দোয়া-২:
======
মূল আরবীঃ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।

রছূলুল্লাহ (ছঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। [বুখারী-৬৩০৭]
দোয়া-৩:
======
মূল আরবীঃ
 ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ‏( ﺃﻧْﺖَ ‏) ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ ‏( ﺍﻟﻐَﻔُﻮْﺭُ )
উচ্চারণঃ রব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব ‘য়ালাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়া-বুর রহী---ম। দ্বিতীয় বর্ণনয় “রহী---ম”-এর বদলে: ‘গফূ---র’।
অনুবাদঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।

রছূলুল্লহ (ছঃ) মাছজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।
 [আবূ দাঊদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪, মিশকাত-২৩৫২]

দোয়া-৪:
======
মূল আরবীঃ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি।

এই দোয়া পড়লে আল্লহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩]

দোয়া-৫:
======
মূল আরবীঃ
 ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মা আংতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আংতা খলাক্কতানী ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাছতাত’তু আ'উযুবিকা মিং শার্রি মা ছ’নাত। আবূউলাকা বিনি'ইমাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযান্মবী ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্ব যূনূবা ইল্লা আংত্।

অনুবাদঃ হে আল্লহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬]

পবিত্র কোরআনুল কারীমে তাওবা করার ব্যপারে তাগিদঃ
==============================
===========
• যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে পরে আল্লহর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হয়, সে আল্লহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পাবে। [সূরা নিসা ৪/১১০]

• নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে এবং তুমি কখনও তাদের জন্য সাহায্যকারী পাবে না। কিন্তু যারা তওবা করে ও সংশোধন হয় তারা ব্যতীত। [সূরা নিসা ৪/১৪৫-১৪৬]

• যারা ঈমানদান নর-নারীর উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে এবং পরে তওবা করেনি, তাদের জন্যে জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা রয়েছে’ (সূরা বুরূজ ৮৫/১০)।
আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
ﻭَﺗُﻮْﺑُﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﺟَﻤِﻴْﻌﺎً ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮْﻥَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮْﻥَ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার। [সূরা নূর ২৪/৩১]

Monday, April 13, 2020

রাত হওয়ার আগেই নাকি ইফতার করি~ আহলে কুরআন বিভ্রান্তি

এক আহলে কোরআনি ভাই আমাকে বলল যে আমাদের নাকি রোযা হয়না কারন আমরা নাকি রাত হওয়ার আগেই ইফতার করি! আমি জিজ্ঞাস করলাম কি বলছেন ভাই? তিনি বললেন হ্যাঁ, কারন আল্লাহ কুরানে বলেছেন “অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত” (সুরা বাকারা ২:১৮৭) ।
সুতরাং আমাদের করোর রোযা হয় না ।
 উনি হাদিস মানে না । উনাকে বুঝাতে হলে কুরান থেকেই বুঝাতে হবে, যদিও অতিতে অনেকবার কুরান থেকেই বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম- উনি কোন উত্তর দেননি এবং বুঝারও চেষ্টা করেননি ।
তারপরও চেষ্টা করছি- আমাদের কাজ চেষ্টা করা হেদায়াতের মালিক আল্লাহ ।
 আসুন কুরান থেকেই দেখি “রাত” কখন শুরু হয়, ইনশা আল্লাহ ।
.
  কুরানের এই আয়াতের ব্যাখ্যা কুরানের মধ্যেই দেওয়া আছে যার দারা প্রমানিত হয় যে “রাত” শুরু হয় সূর্যাস্তের মাধ্যমে ।
 শুরুতেই আমরা দেখে নেই “রাত” বা night দারা কি বুঝি অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী night  মানে হল “The period from sunset to sunrise in each twenty-four hours”  অর্থাৎ রাত শুরু হয় সূর্যাস্তের সাথে সাথে ।
আর রাত দারা একটা নির্দিষ্ট  সময় কাল বুঝানো হয়- রাত মানেই অন্ধকারময়তা বুঝায় না ।
যেমন সূর্য গ্রহনের সময় দিনের বেলাও যদি অন্ধকার হয় সেটাকে আমরা রাত বলিনা ।
অন্ধকারময়তা হল আলোর অনুপস্থিতি যা রাতের অংশ ।  এখন আসুন দেখি রাতের শুরুর ব্যাপারে কুরআন কি বলে ।

প্রমান ১। “তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন(৩৯:৫)

এই আয়াতে  يُكَوِّرُ শব্দের অর্থ হল কোন কিছুকে মোড়া বা আচ্ছাদিত করা বা কুন্ডলী পাকানো বা কোন জিনিসকে প্যাঁচানো । যেমন করে মাথায় পাগড়ী প্যাঁচানো হয়। এর দারা এটাও প্রমানিত হয় যে পৃথিবী গোলাকার তানাহলে রাত ও দিনের আকস্মিক পরিবর্তন হত । মোড়ান, আচ্ছাদন বা প্যাঁচানো একটি slow process অর্থাৎ এটি আস্তে আস্তে ঘটে । সুতরাং এই আয়াত হতে এটা পরিস্কার যে এই আচ্ছাদনের কাজটি সূর্যাস্তের মাধ্যমে শুরু হয় যেহেতু সূর্যাস্তের ফলে আস্তে আস্তে অন্ধকার হওয়া শুরু হয় আর ঠিক তখনই রাতের শুরু হয় ।
.
 যদি রাতের শুরু বলতে একদম অন্ধকারকে বুঝানো হয় (যেটা সূর্য ডুবার প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিলক্ষিত হয়) তাহলে এই আয়াতের রাত্রিকে দিবস দারা আচ্ছাদিত করার অর্থ কি?
কারন তখন আর এটা আচ্ছাদন হবেনা- এটা হবে আকস্মিক পরিবর্তন কিন্তু আমরা বাস্তবে আচ্ছাদনই দেখতে পাই । নিম্নোক্ত আয়াত থেকেও আমরা এই ধারনা পাই ।

“এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রির মধ্য দাখিল করে দেন এবং আল্লাহ সবকিছু শোনেন, দেখেন”(২২:৬১)
অন্যএ আল্লাহ বলেন...

“আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পূর্ণ কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক” (১১:১১৪)

 এই আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ طَرَفَىِ যার অর্থ দুই প্রান্ত – এর দারা নির্দিষ্ট  মুহূর্ত বা পয়েন্ট বুঝানো হয় ।
সুতরাং এখানে দিনের দুটি প্রান্ত বলতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তকেই বুঝানো হচ্ছে যেহেতু এই দুটি প্রান্তই হল দিনের নির্দিষ্ট  মুহূর্ত বা পয়েন্ট ।
 এর পরক্ষনেই বলা হয়েছে “রাতের প্রান্তভাগে” অর্থাৎ সূর্যাস্তের সংগে সংগে রাতের শুরু হয় যা এই আয়াত দারা স্পষ্টতই প্রতিয়মান ।
যদি ভালো করে আরেকটা সুরা লক্ষ্য করি তবে দেখবে যে;
.
“শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,
 শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে,
- শপথ দিবসের যখন তা (সূর্যকে) প্রকাশ করে,
শপথ রাত্রির যখন তা সূর্যকে ঢেকে দেয়” (৯১:১-৪)

৩ নম্বর আয়াত থেকে স্পষ্ট হচ্ছেঃ দিবস= সূর্যের প্রকাশ

৪ নম্বর আয়াত থেকে স্পষ্ট হচ্ছেঃ রাত্রি= সূর্যের প্রস্থান অর্থাৎ রাতের শুরু হচ্ছে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ।
সুতরাং  “অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত” (২:১৮৭) এর অর্থ দাড়ায় সূর্যাস্তের সাথে রোযা পূর্ণ হয়ে যায় এবং এটাই ইফতারের সঠিক সময় । আর এটাই রাসুলের(সঃ) শিক্ষা ।

আল্লাহ আমাদেরকে ইফতারের সময় বের করার জন্য এত গবেষণামুলক কঠিন পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলেননি । এটা শুধু এই পথভ্রষ্ট একদল “আহলে কুরান” যুবকদের জন্য আমার সামান্য প্রচেষ্টা । আমি কুরআন থেকেই রাসুলের সুন্নাতকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছি । আল্লাহ আমাদের জন্য তার রাসু(সঃ) কে অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জন্য দ্বীনকে সহজ করে দিয়েছেন । আসলে এদেরকে “আহলে কুরান” বলাও ঠিকনা যেহেতু “আহলে কোরআন” মানে হল যারা কুরআনকে অনুসরণ করে কিন্তু এরা কুরআনকে প্রকৃত পক্ষে অনুসরণ করেনা । এরা নিজেরদের মনস্কামনা চরিতার্থ করার জন্য সুবিধামত কুরআনের কয়েকটি আয়াতকে মানে । এরা কুরআনের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশকে মানে না । এদের কথাই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন এভাবে “ তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন” (২:৮৫)
.
আল্লাহ আমাদেরকে তার দ্বীনকে সথিকভাবে বুঝার এবং মানার তাওফিক দান করুক । আমিন । 

আমার আহলে কোরআন ভাইদের কাছে দুইটা প্রশ্নঃ উত্তর নরওয়েতে মে থেকে জুলাই  মাস পর্যন্ত সূর্য ডুবে না সেজন্য রাত হয় না । এখানকার মুসলমানেরা নামাজ রোযা কিভাবে করবে?
২.ধরেন টানা ৫-৬ দিন বৃষ্টির কারনে বিকেলেই রাতের মত হয়ে গেল সেক্ষেত্রে কিভাবে ইফতার করবেন কিংবা সে বৃষ্টির কারনে কোনটা রাতে কালো সুতা আর কোনটা ভোরের শ্রভ্ররেখা সেটা স্পষ্ট নয় তখন কি করবেন???

"নামাজ/সলাত/ছলাত/সলাওয়াতা"-এর বাংলা অর্থ কি?

"নামাজ/সলাত/সলাওয়াতা"-এর বাংলা অর্থ্ কি???

আমরা কথায় কথায় 'নামায' বলি। আসলে 'নামায' হল ফারসি শব্দ। "সলাত/সলাওয়াতা" ٱلصَّلَوٰةَ হল আরবী শব্দ। এর মুল শব্দ হলো صلو  আল্লহ রব্বুল আলামিন কুরআনে ٱلصَّلَوٰةَ বলেছেন - নামায বলেন নাই।

 ★"সলাত/সলাওয়াতা" ٱلصَّلَوٰةَ এর সংগাঃ

"সলাত/সলাওয়াতা"ٱلصَّلَوٰةَ  -এর আভিধানিক অর্থ দুয়া, রহমাত, মাগফিরত/ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে শরী'আত অনুযা্য়ী কাজের পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহ'র নিকট বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের সবচেয়ে উতকৃষ্ট/ভাল ও বড় ইবাদত অনুষ্ঠানকে "সলাত/সলাওয়াতা" বলা হয় যা তাকবিরে তাহরিমা দিয়ে শুরু ও সালামের মাধ্যমে শেষ হয়।

এই সলাতের হুকুম দেয়া হয়েছে ইকামত শব্দের মাধ্যমে। ইসলামের ৫টি রুকনের মধ্যে সলাত/সলাওয়াতা হচ্ছে দ্বিতীয়।

আল্লহ বলেনঃ "আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং ٱلصَّلَوٰةَ "সলাওয়াতা" কায়েম করুন। নিশ্চয় ٱلصَّلَوٰةَ "সলাওয়াতা" অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লহ জানেন তোমরা যা কর"। [সুরা আনকাবুত: আয়াত-৪৫]

ছোঁয়াচে রোগ সংক্রান্ত আকিদা কি?


ছোঁয়াচে রোগ সংক্রান্ত আকিদা : করোনা ভাইরাস যেন আমাদের ঈমানকে নষ্ট না করে


করোনা-ভাইরাস-coronavirus

হাদীস শরীফে হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ، وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الأَسَدِ
“কোন রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই, কোন কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই এবং কোন পেঁচার ডাকে ও সফর মাসে কোন অশুভতা নেই। আর কুষ্ঠ রোগী থেকে পলায়ন করো সেভাবে যেভাবে সিংহ থেকে পলায়ন কর।”
(সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৭০৭)
এ হাদীসের প্রথমাংশ দ্বারা জানা যাচ্ছে–“সংক্রামক রোগ” বা “ছোঁয়াচে রোগ” বলতে কিছু নেই। অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোন রোগের এ ক্ষমতা নেই যে, কাউকে সংক্রমণ করবে।
তবে মহান আল্লাহর হুকুম হলে, কোন রোগীর সংস্পর্শের দ্বারা সেই রোগ কারো মধ্যে নতুন করে পয়দা হতে পারে। এ ভিত্তিতে لا عَدْوَى “কোন রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই”-এর অর্থ হলো–স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোন রোগ সংক্রামক বা ছোঁয়াচে হতে পারে না।
এভাবে এ হাদীসে জাহিলী যুগের সেই বিশ্বাসকে অপনোদন করা হয়েছে যা সেই যুগে লোকেরা বিশ্বাস করতো যে, রোগীর সংস্পর্শে এ রোগ তার নিজস্ব ক্রিয়াতে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। অথচ এরূপে কোন রোগ কারো মধ্যে সংক্রমণের ক্ষমতাকে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী বিশ্বাস। সেই কুফরী বিশ্বাসকে এ হাদীসে বাতিল করা হয়েছে। এ হাদীসের এরূপ ব্যাখ্যা করে “আস-সুনানুল কাবীর” কিতাবে ইমামুল হাদীস আল্লামা আবু বকর বাইহাকী (রহ.) উক্ত হাদীসের অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়ে বলেন–
باب‏:‏ لاَ عَدْوَى عَلَى الْوَجْهِ الَّذِى كَانُوا فِى الْجَاهِلِيَّةِ يَعْتَقِدُونَهُ مِنْ إِضَافَةِ الْفِعْلِ إِلَى غَيْرِ اللَّهِ تَعَالَى
“এ বিষয়ের অধ্যায় যে, কোন রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই–এ নাকচকরণ সেই সূরতের ভিত্তিতে যা জাহিলী যুগে মানুষ বিশ্বাস করতো তথা রোগ হওয়ার সম্বন্ধকে গাইরুল্লাহর দিকে করা। এ ভিত্তিতেই রোগের কোনরূপ সংক্রমণের ক্ষমতাকে নাকচ করা হয়েছে।”
(দ্রষ্টব্য : আস-সুনানুল কাবীর, ১৫৮ পৃষ্ঠা)
অপরদিকে মহান আল্লাহর হুকুম হলে কোন রোগীর সংস্পর্শের দ্বারা অন্যের মধ্যে সেই রোগ পয়দা হতে পারে বিধায় এরূপ রোগী থেকে অন্যদের দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যেমন, সেরকম একটি রোগ হলো কুষ্ঠরোগ। তাই উক্ত হাদীসের শেষাংশে সিংহকে ভয় করে তাত্থেকে দূরে থাকার ন্যায় কুষ্ঠরোগীদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু এক্ষেত্রে ঈমানের এ সুরক্ষা উদ্দেশ্য, যাতে কুষ্ঠরোগীর সংস্পর্শে গিয়ে কারো কুষ্ঠরোগ হলে সে সেই রোগকে স্বয়ংক্রিয় সংক্রামক বলে বিশ্বাস করে তার ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
বলা বাহুল্য, কোন রোগের নিজস্ব বা স্বয়ংক্রিয় কোন ক্ষমতা নেই অন্য কারো মধ্যে সংক্রমণের। বরং সব রোগই মহান আল্লাহই দিয়ে থাকেন বা তাঁর হুকুমে কারো মধ্যে সেই রোগ পয়দা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে কোন রোগীর সংস্পর্শের কারণে আল্লাহর হুকুম হলে, সেই রোগ অন্যের মধ্যে পয়দা হতে পারে। তেমনি মহান আল্লাহ কর্তৃক রোগ দেয়ার ফয়সালা না হলে, কোন ব্যক্তি কোন কুষ্ঠরোগীর সংস্পর্শে থাকার পরও সেই রোগ কোনক্রমেই তার মধ্যে পয়দা হবে না।
এক্ষেত্রে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেক সময় দেখা যায়, কোন সুস্থ ব্যক্তি খুঁজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত কারো সাথে থাকলে, তারও সেরূপ খুঁজলি-পাঁচড়া হয়। তা কীরূপে হয়? এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে–
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ حِينَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا عَدْوَى وَلَا صَفَرَ وَلَا هَامَةَ فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَا بَالُ الْإِبِلِ تَكُونُ فِي الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ فَيَجِيءُ الْبَعِيرُ الْأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ فِيهَا فَيُجْرِبُهَا كُلَّهَا قَالَ فَمَنْ أَعْدَى الْأَوَّلَ
হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন–“রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই, সফর মাসের কোন অশুভতা নেই এবং পেঁচার ডাকে কোন অমঙ্গল নেই”, তখন জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাতে সেই উটপালের অবস্থা কী–যে কোনও বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এ অবস্থায় যে, যেন তা সুস্থ-সবল হরিণ, অতঃপর খুঁজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উটকে আনা হয় এবং সেটা সেখানে প্রবেশ করে, তারপর সেটা সব উটকে খুঁজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে?” তার উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন–“তাহলে প্রথমটাকে কে সংক্রমণ করলো?”
(সহীহু মুসলিম, হাদীস নং ২২২০)
অর্থাৎ সেই অবস্থায় প্রথম উটটিকে যেমন আল্লাহ তা‘আলা কোনকিছুর সংক্রমণ ব্যতিরেকে নতুনভাবে রোগাক্রান্ত করেছেন, ঠিক তেমনি পরেরগুলোও আল্লাহ তা‘আলারই হুকুমে রোগাক্রান্ত হয়েছে। তা কারো সংক্রমণের কারণে হয়নি।
সুতরাং বুঝা গেলো–কোন রোগের স্বয়ংক্রিয় সংক্রমণ দ্বারা কারো সেই রোগ হতে পারে না। যদি সে রকম কিছু দেখা যায়, তা আসলে মহান আল্লাহর হুকুমে সেই রোগ তার মধ্যে নতুনভাবে তৈরি হয়েছে–যেমনভাবে মহান আল্লাহর হুকুমে সেই রোগ নতুনভাবে প্রথমজনের মধ্যে তৈরি হয়েছে। এ বিষয়টিকে প্রত্যেক মুমিনের এরূপেই বিশ্বাস করতে হবে।
কিন্তু সেই প্রকৃত বাস্তবতাকে সম্যকরূপে উপলব্ধি না করে শুধু বাহ্যিক অবস্থা দেখে কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে, সেই রোগীর সংস্পর্শের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মধ্যে সেই রোগ সংক্রামিত হয়েছে এবং এভাবে সে তার ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলতে পারে। এ জন্য এ ধরনের পরীক্ষায় অবতীর্ণ
হওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য হাদীস শরীফে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে–
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ‏:‏ لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ‏.‏
হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন–“রোগগ্রস্ত উট যেন সুস্থ উটের উপরে উপনীত না হয়।”
(সহীহু মুসলিম, হাদীস নং ৫৯০৫)
এ হাদীসে ঈমানের সুরক্ষার জন্য সেরূপ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে নিষেধ করা হয়েছে যে, কেউ তার সুস্থ জন্তুকে কোন রোগাক্রান্ত জন্তুর সাথে রাখবে। কেননা, এতে সেই সুস্থ জন্তু রোগাক্রান্ত হলে হয়তো তার মনে কোনভাবে এ ধারণার উদ্রেক হতে পারে যে, তার সুস্থ জন্তুকে সেই রোগাক্রান্ত জন্তুর সাথে রাখার কারণেই সেই রোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে। অথচ এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও ঈমানের পরিপন্থী। বরং আল্লাহ তা‘আলার হুকুমেই সেই রোগ সুস্থ জন্তুর মধ্যে পয়দা হয়েছে, তা সেই রোগের নিজস্ব সংক্রমণের দ্বারা হয়নি।
এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেলো–ঈমানের সুরক্ষার জন্য এ ব্যবস্থা অবলম্বন করা বিধেয় যে, সুস্থ ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন না হলে দুরারোগ্যে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির নিকটে যাবে না। যাতে তার নিকট যাওয়ার দ্বারা সেই রোগ মহান আল্লাহর হুকুমে তার মধ্যে পয়দা হলে তাতে যেন সে বিভ্রান্তিতে পড়ে সেই রোগকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্রামক মনে করে ঈমানকে নষ্ট করার প্রয়াস না পায়।
এ ভিত্তিতেই একটি হাদীসে সেরূপ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে মানুষের জমায়েত থেকে ফিরে তার আবাসে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উক্ত হাদীসের বিবরণ হলো–
عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ
হযরত আমর ইবনে শারীদ স্বীয় পিতা শারীদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, বনী সাক্বীফের প্রতিনিধি দলে একজন ব্যক্তি কুষ্ঠরোগী ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট সংবাদ পাঠিয়ে বললেন–“নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে বাই‘আত করে নিয়েছি। সুতরাং তুমি ফিরে যাও।”
(সহীহু মুসলিম, হাদীস নং ২২৩১)
কিন্তু প্রয়োজন হলে কোন সুস্থ ব্যক্তির সেরূপ রোগীর নিকট যেতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন রোগই কারো মধ্যে সংক্রমণ করতে পারে না–এ বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুমিনের জন্য জরুরী। অধিকন্তু সেই রোগীর শুশ্রূষার জন্য অন্য কেউ না থাকলে তার জন্য তার নিকট যাওয়া এবং তার শুশ্রূষা করা আবশ্যক। তবে সেক্ষেত্রে ঈমানের সুরক্ষার জন্য তখন সে ইচ্ছা করলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, যেমন, মুখে মাস্ক লাগিয়ে এবং শরীরে জীবানুরোধক পোশাক পরে তার কাছে যেতে পারে। এতে আল্লাহর ‍হুকুমে সে সেই রোগে আক্রান্ত হলে, তখন সেই রোগীর সংস্পর্শের কারণে সেই রোগের সংক্রমণের শিকার হয়েছে বলে কুফরী ভাবনার পরীক্ষার মধ্যে সে পড়বে না।
আবার কেউ যদি প্রবল ঈমানের অধিকারী হয় এবং রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে সেই রোগে আক্রান্ত হলেও ছোঁয়াচের বা সংক্রমণের কুফরী বিশ্বাসে তার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তখন কোনরূপ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেও সেরূপ রোগীর সংস্পর্শে যেতে পারে। এ হিসেবেই হাদীস শরীফে রয়েছে–
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ فَأَدْخَلَهُ مَعَهُ فِي الْقَصْعَةِ ثُمَّ قَالَ كُلْ بِسْمِ اللَّهِ ثِقَةً بِاللَّهِ وَتَوَكُّلًا عَلَيْهِ
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন কুষ্ঠরোগীর হাত ধরলেন, অতঃপর তার হাতকে তার সাথে (খাবার খাওয়ানোর জন্য) স্বীয় বরতনে প্রবিষ্ট করলেন। তারপর বললেন–“আল্লাহর নামে খাও। আল্লাহর উপরে অবিচল নির্ভরতা এবং তাঁর উপরে অনড় ভরসা।”
(জামি‘উত তিরমিযী, হাদীস নং ১৮১৭/ সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৯২৫)
তেমনিভাবে অপর হাদীসে এ ধরনের কুষ্ঠরোগীর নির্দ্বিধায় সুস্থ মানুষের সাথে ঘরে খাওয়া-থাকার বর্ণনা রয়েছে। সেই হাদীসটি হলো–
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ لَنَا مَوْلَى مَجْذُومٌ فَكَانَ يَأْكُلُ فِي صِحَافِي وَيَشْرَبُ فِي أَقْدَاحِي وَيَنَامُ عَلَى فِرَاشِي
হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন–“আমাদের একজন আযাদকৃত গোলাম ছিলো যে কুষ্ঠরোগী ছিলো। সে আমার বরতনে খাবার খেতো, আমার গ্লাসে পানি পান করতো এবং আমার বিছানায় ঘুমাতো।”
(দ্রষ্টব্য : তুহফাতুল আহওয়াযী শারহু জামি‘ তিরমিযী, ৫ম খণ্ড, ৪৩৮ পৃষ্ঠা)
অধিকন্তু মজবুত ঈমানের অধিকারী মুসলিমদের এভাবে সে ধরনের রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে মহান আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে–
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ كُلْ مَعَ صَاحِبِ الْبَلَاءِ تَوَاضُعًا لِرَبِّك وَإِيمَانًا
হযরত আবু যর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন–রোগ-বালাইগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে খাও তোমার প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত হয়ে এবং তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ ঈমান রূপে।”
(আল-জামি‘উস সগীর, হাদীস নং ৬৩৮৯)
বস্তুত এ নির্দেশনা তাদের জন্য যারা মজবুত ঈমানের অধিকারী–যাদের ঈমান ও ইয়াকীনে কোন অবস্থাতেই চিড় ধরতে পারে না এবং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর হুকুমের প্রতি অবিচল আস্থা রাখতে পারে। এ মর্মে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ফাইজুল কাদীর কিতাবে বলা হয়েছে–
فَإِنَّهُ لَا يُصِيبُكَ مِنْهُ شَيْءٌ إِلَّا بِتَقْدِيرِ اللَّهِ تَعَالَى، وَهَذَا خِطَابٌ لِمَنْ قَوِيَ يَقِينُهُ، أَمَّا مَنْ لَمْ يَصِلْ إِلَى هَذِهِ الدَّرَجَةِ فَمَأْمُورٌ بِعَدَمِ أَكْلِهِ مَعَهُ كَمَا يُفِيدُهُ خَبَرُ: (فِرِّ مِنَ الْمَجْذُومِ)
“উক্ত হাদীসে তোমাকে কুষ্ঠরোগী বা সে ধরনের রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে মহান আল্লাহর প্রতি অকুণ্ঠ বিনয় ও ঈমান পোষণ করে খাবার খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে এ কারণে যে, সেই রোগীর থেকে কোনকিছু তোমার নিকট মহান আল্লাহর ফয়সালা ব্যতিরেকে পৌঁছবে না। আর এ সম্বোধন ঐ ব্যক্তির জন্য যার ঈমান ও ইয়াকীন মজবুত। কিন্তু যে ব্যক্তি সেই পর্যায়ে পৌঁছতে পারে নি, তার জন্য হুকুম হলো–সে সেরূপ রোগীর সাথে খাবে না। যেমন সে ব্যাপারে অপর হাদীসে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, তুমি কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন করো।”
(দ্রষ্টব্য : ফাইজুল ক্বাদীর শরহু জামিউস সগীর, ৫ম খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)
বলা বাহুল্য, আল্লাহ তা‘আলা অনেক সময় বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য কোন রোগীর নিকটে যাওয়াকে তাদের মধ্যে সেই রোগ পয়দা হওয়ার ইল্লত বা কারণ বানাতে পারেন। যেমন, পানির সংস্পর্শে যাওয়াকে তাদের ঠাণ্ডা লাগার কারণ বানাতে পারেন। বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করে উপরিউক্ত হাদীসের বর্ণনায় “আস-সুনানুল কাবীর” কিতাবে আল্লামা আবু বকর বাইহাকী (রহ.) সেই হাদীসের অধ্যায়ের শিরোনামে বলেন–
باب‏:‏ لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ فَقَدْ يَجْعَلُ اللَّهُ تَعَالَى بِمَشِيئَتِهِ مُخَالَطَتَهُ إِيَّاهُ سَبَبًا لِمَرَضِهِ
“এ সম্পর্কিত অধ্যায় যে, রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের উপর উপনীত হবে না; যেহেতু কখনো আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় ইচ্ছায় অসুস্থের সাথে সুস্থের মেলামেশাকে তার সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ বানিয়ে থাকেন।”
(দ্রষ্টব্য : আস-সুনানুল কাবীর, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
কিন্তু সেই অবস্থায় সেই ব্যক্তির সেই রোগে আক্রান্ত হওয়া এ কারণে নয় যে, সেই রোগটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে। বরং সেই রোগে তার আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো–আল্লাহ তা‘আলা তাকে পরীক্ষা করার জন্য এ ফায়সালা করেছেন যে, উক্ত রোগীর সংস্পর্শে এসে সেও সেই রোগে আক্রান্ত হবে। এমতাবস্থায় পরীক্ষার বিষয় হলো এটা যে, সেই বান্দা কি সেই রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই রোগকে স্বয়ংক্রিয় সংক্রামক মনে করে তার ঈমানকে নষ্ট করে, নাকি সেই রোগীর সংস্পর্শে সেই রোগ হলেও তা মহান আল্লাহর হুকুমেই হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ফয়সালা হিসেবে হয়েছে বলে বিশ্বাস করে সে স্বীয় ঈমানকে হিফাজত করে।
বলা বাহুল্য, এরূপ ক্ষেত্রে বান্দার এটাই কর্তব্য যে, সেই রোগীর সংস্পর্শে এসে তার রোগ হওয়ার কারণে সে সেই রোগকে স্বয়ংক্রিয় সংক্রামক বলে বিশ্বাস করবে না। বরং সেই অবস্থায়ও তা মহান আল্লাহর হুকুমেই হয়েছে বলে বিশ্বাস করবে এবং নিজের ঈমানকে অটল রাখবে।
এ জন্যই হাদীস শরীফে মহামারি কবলিত স্থানে কেউ থাকলে তাকে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে এবং বাহিরের কাউকে মহামারি কবলিত স্থানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে–
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: إذَا سمِعْتُمْ الطَّاعُونَ بِأَرْضٍ، فَلاَ تَدْخُلُوهَا، وَإذَا وقَعَ بِأَرْضٍ، وَأَنْتُمْ فِيهَا، فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا
হযরত ‍উসামা ইবনে যাইদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–“যখন তোমরা শুনবে যে, কোন স্থানে প্লেগ-রোগ হয়েছে, তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না। আর যখন কোন স্থানে সেই রোগের প্রাদুর্ভাব হয় এবং তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান হতে বের হয়ে যেয়ো না।”
(সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৭২৮/ সহীহু মুসলিম, হাদীস নং ৫৯০৫)
এ হাদীসে মহামারি কবলিত স্থানে কেউ থাকলে তাকে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে এ ঈমানী বিশ্বাসের ভিত্তিতেই যে, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই। অধিকন্তু সেই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো, এমতাবস্থায় যাতে সেখান থেকে চলে আসার দ্বারা তার মনে এ বিশ্বাস স্থান না পায় যে, সে সেখানে থাকলে সেই রোগে আক্রান্ত হবে।
অপরদিকে উক্ত হাদীসে মহামারি কবলিত স্থানে কাউকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে এ জন্য যে, যাতে সেখানে গিয়ে আল্লাহর হুকুমে সেই রোগে আক্রান্ত হলে, সে তার সেই ঈমানী পরীক্ষায় ফেল না করে এবং তার ঈমানকে নষ্ট না করে ফেলে এ কথা ভেবে যে, সেখানে যাওয়ার কারণেই তার এ রোগ হয়েছে। কেননা, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই। বরং সবার সব রোগই মহান আল্লাহর হুকুমে নতুনভাবে হয়।
মোট কথা, মহান আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো সেই রোগ হতে পারে না। সেই ভিত্তিতে প্রথম জনের যেভাবে মহান আল্লাহর হুকুমে সেই রোগ হয়েছে, তেমনি অন্যজনেরও আল্লাহর হুকুম হলে নতুনভাবে সেই রোগ হবে। আর আল্লাহর হুকুম না হলে কিছুতেই তার সেই রোগ হবে না। এ বিশ্বাসই সকল মুমিনের অন্তরে পোষণ করতে হবে।
সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে এভাবে সর্বাবস্থায় ঈমান রক্ষা করে বেশী বেশী ইস্তিগফার করা আমাদের কর্তব্য। আর মহান আল্লাহর নিকট দু‘আ-প্রার্থনা ও ইবাদত-জিকিরে মশগুল থাকা উচিত।

ইসলামে কি ছোঁয়াচে বা সংক্রামিত রোগকে অস্বীকার করা হয়েছে?

ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: ইসলামে কি ছোঁয়াচে বা সংক্রামিত রোগকে অস্বীকার করা হয়েছে?
উত্তর:
এ উত্তরটি ভালোভাবে জানার জন্য নিম্নোক্ত লেখাটি পড়ুন:

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 لا عَدْوَى وَلا طِيَرَةَ وَلا هَامَةَ وَلا صَفَرَ "
“রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাস বলতে কিছু নাই।” (সহীহু বুখারী, হা/৫৭০৭)
মুহাদ্দিসগণ বলেন, উক্ত হাদীসে পেঁচা ও সফর মাসের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয় নি বরং জাহেলী যুগে পেঁচার ডাক এবং সফর মাসকে কুলক্ষণে মনে করা হত (বর্তমানেও মূর্খ লোকদের মাঝে এ কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে) এই বাতিল ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে অস্বীকার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সংক্রমন রোগের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করা হয় নি বরং একটি ভ্রান্ত বিশ্বাসের অনোদন করা হয়েছে। তা হল, জাহেলী যুগে কোনো কোন ব্যাধিকে এমন মনে করা হত যে, তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। কিন্তু ইসলামের সৃষ্টিভঙ্গী হল, রোগ কখনও নিজে নিজে সংক্রমিত হতে পারে না। বরং তা আল্লার ইচ্ছার সাথে সংম্পৃক্ত। তার লিখিত তাকদীর ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না।

❑ উক্ত হাদীসের এই ব্যাখ্যাটি নিন্মোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়:

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নাই বললে জনৈক বেদুঈন আরব জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রসূলুল্লাহ! তবে সেই উটপালের অবস্থা কি যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? অতঃপর তথায় কোনো খুজলী-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট তাদের মধ্যে এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ঐ রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে?
(এর জবাবে) তিনি বললেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিলো?” (সহীহ মুসলিম)

এ হাদীসের অর্থ হল, যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে আক্রান্ত করেছিলেনে তিনিই অন্যান্য উটকেও আক্রান্ত করেছেন। অর্থাৎ রোগ-ব্যাধী নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না যদি আল্লাহর হুকুম না থাকে।

মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমনের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দোষের নয়। বরং কিছু হাদীসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। [বাযলুল মাজহূদ ১৬/২৪২; শরহুন নববী ২/২৩০; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৩৩)

❑ ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি:

ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি তার প্রমাণে অনেক হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে নিচের হাদীসগুলো অন্যতম:
💠 আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لا يورد ممرض على مصح
“অসুস্থ উটগুলোর মালিক তার উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না। (কারণ এতে ঐসুস্থ প্রাণীগুলো রোগাক্রান্ত হতে পারে।) [সহীহ মুসলিম]
💠 তিনি আরও বলেন:
فر من المجذوم فرارك من الأسد
“সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন কর কুষ্ঠরোগী থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।” (সহীহ আল বুখারী)
আবার তিনি কুষ্ঠরোগীর সাথে বসেও খাবার খেয়েছেন আর বলেছেন:
كل بسم الله ثقة بالله
“আল্লাহর উপর আস্থা রেখে আল্লাহর নামে খাওয়া শুরু করো।” (তিরমিযী, অধ্যায়: খাদ্যদ্রব্য, অনুচ্ছেদ: কুষ্ঠরোগীর সাথে খাবার খাওয়া)
এটা তিনি এ জন্য করেছেন যে, কুষ্ঠ রোগীর কাছে গেলেই যে, সে রোগে আক্রান্ত হতে হবে তা জরুরি নয়। বরং কখনও হতে পারে আবার কখনও নাও হতে পারে। এটা আল্লাহ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

সারাংশ:

পোস্টের সারাংশ হল, সংক্রমণ ব্যাধি আছে কিনা এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দুই ধরণের হাদিস পাওয়া যাচ্ছে। উভয় প্রকার হাদিসের মাঝে সমন্বয় পূর্বক যা প্রমাণ করা হয়েছে তা হল, জাহিলী যুগের ধারণা ছিল যে, রোগ-ব্যাধি নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। এখানে আল্লাহর ইচ্ছা বা ক্ষমতা নেই নেই। ইসলাম কেবল এই ধারণাকে রদ করেছে।

সঠিক ইসলামী বিশ্বাস হল, অবশ্যই সংক্রামক ব্যাধি আছে কিন্তু তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয় না বরং তা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতেই ঘটে। অর্থাৎ রোগ-ব্যাধির নিজস্ব শক্তি নেই মহান আল্লাহ যদি ইচ্ছা না করেন।

অতএব, কেউ যদি সংক্রামক ব্যাধিকে অস্বীকার করে তাহলে অনেকগুলো হাদিসকে অস্বীকার করা হবে। এটা নিছক অজ্ঞতা অথবা ইসলাম সম্পর্কে ভুল বুঝ। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে, রোগ-ব্যাধি নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না বরং তা হয় আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে।
এ বিশ্বাসের অর্থ হল, কোন ব্যক্তি আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলেই যে, সেও নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হবে তা জরুরি নয়। বরং হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এটা আল্লাহ ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
এ ক্ষেত্রে এটাই হল, মুসলিম এবং অমুসলিমদের মাঝে মূল পার্থক্য। আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল  দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব

ইসলাম কি ছোঁয়াচে বা সংক্রামিত রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?

ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?

.
আল্লাহর সৃষ্টি এ পৃথিবীতে নানা উপকারী নিয়ামতের পাশাপাশি আছে বহু রোগ-ব্যাধি, অসুখ-বিসুখ। ইসলামবিরোধীরা দাবি করে যে, রোগ সংক্রমণ সম্পর্কে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর হাদিসের বক্তব্য বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। এ দাবি প্রমাণের জন্য তারা কিছু হাদিস দেখায়। ---
 .
আনাস(রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল(ﷺ) বলেছেন, ‘‘রোগের সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই। তবে শুভ লক্ষণ মানা আমার নিকট পছন্দনীয়।”
[লোকেরা] বলল, শুভ লক্ষণ কী?
তিনি বললেন, উত্তম বাক্য।’’ [1]
 .
আমরা দেখছি যে এ হাদিসে বলা হচ্ছে রোগের সংক্রমণ(عدوى) বলতে কিছু নেই। এটা দেখিয়ে অনেকে বলতে চায় – আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের জানায় জীবাণুর বিস্তারের দ্বারা এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে রোগের সংক্রমণ ঘটে; কাজেই হাদিসের বক্তব্য সঠিক নয়। যারা এরূপ বলে, তারা আসলে অর্ধেক সত্য উপস্থাপন করে। আমরা যদি এ সংক্রান্ত আরো হাদিস সামনে আনি তাহলে দেখব যে, এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে রোগের জীবাণু ছড়ানো – এই প্রাকৃতিক নিয়মকে ইসলাম অস্বীকার করে না।
 .
আবু হুরাইরা(রা) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসু্লুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই সফর মাসকেও অশুভ মনে করা যাবে না এবং পেঁচা সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত রয়েছে(هَامَّةَ) তাও অবান্তর। তখন এক বেদুঈন বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমার উটের পাল অনেক সময় মরুভূমির চারণ ভূমিতে থাকে, মনে হয় যেন নাদুস-নুদুস জংলী হরিণ। অতঃপর সেখানে কোনো একটি চর্মরোগে আক্রান্ত উট এসে আমার সুস্থ উটগুলোর সাথে থেকে এদেরকেও চর্মরোগী বানিয়ে দেয়। তিনি বললেনঃ প্রথম উটটির রোগ সৃষ্টি করলো কে?
মা‘মার (রহ.) বলেন, যুহরী (রহ.) বলেছেন, অতঃপর এক ব্যক্তি আবূ হুরাইরা(রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি নবী(ﷺ)কে বলতে শুনেছেনঃ রোগাক্রান্ত উটকে যেন সুস্থ উটের সাথে একত্রে পানি পানের জায়গায় না আনা হয়।’’ ... [2]
 .
“…কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাকো, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো।” [3]
 .
এক উট থেকে অন্য উটে রোগের জীবাণু সংক্রমিত হয়। এ ছাড়া কুষ্ঠ রোগীর নিকটে গেলে এর জীবাণু সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি থাকে। [4] উপরের হাদিসগুলোতে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, “সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই” বলবার সাথে সাথে এটাও বলা হচ্ছে যে, রোগাক্রান্ত উটকে যেন সুস্থ উটের কাছে না আনা হয় এবং কুষ্ঠ রোগীর থেকে যেন দূরত্ব বজায় রাখা হয়। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, রোগের জীবাণু সংক্রমিত হবার প্রাকৃতিক এ প্রক্রিয়া হাদিসে উপেক্ষিত হয়নি। এ প্রক্রিয়া যদি হাদিসে অস্বীকারই করা হত, তাহলে , নবী(ﷺ) কেন কুষ্ঠ রোগীর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বললেন? আর কেনইবা রোগাক্রান্ত উটকে সুস্থ উটের কাছে আনতে নিষেধ করলেন?
 .
আমরা আরো একটি হাদিস দেখতে পারি—
“যখন তোমরা কোন্ অঞ্চলে প্লেগের বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।”[5]
 .
কতই না উত্তম ও কার্যকর একটি ব্যবস্থা। মহামারী আক্রান্ত অঞ্চল থেকে রোগীরা যদি বেরিয়ে না যায় এবং সে অঞ্চলে যদি বাইরে থেকে লোক না আসে, তাহলে রোগের জীবাণু ছড়িয়ে যাবার সুযোগ অনেক কমে যায়। এটা দেখে কি আদৌ মনে হচ্ছে যে হাদিসে রোগের জীবাণু ছড়িয়ে যাবার প্রাকৃতিক নিয়মকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে?
 .
এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে –তাহলে হাদিসে কেন এ কথা বলা হল “সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই” ? এর উত্তর হাদিসের মূল বক্তব্যের মাঝেই লুকিয়ে আছে।
.
পূর্বে উল্লেখিত সুনান আবু দাউদ ৩৯১১ নং হাদিসে সাহাবীগণ যখন এক উটের সংস্পর্শে অন্য উটের রোগাক্রান্ত হবার ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন, তখন নবী(ﷺ) বললেন, “প্রথম উটটির রোগ সৃষ্টি করলো কে?”
.
অর্থাৎ এই রোগের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ। যখন কেউ রোগাক্রান্ত ছিল না, তখন এই রোগ তিনি সৃষ্টি করেছেন। প্রথম রোগাক্রান্ত প্রাণী তো কারো নিকট থেকে সংক্রমণের শিকার হয়নি। রোগের জীবাণু সংক্রমিত হয় বটে, কিন্তু জীবাণু সংক্রমিত হওয়া মানেই রোগ সংক্রমিত হওয়া না। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সুস্থ রাখেন, যাকে ইচ্ছা রোগাক্রান্ত করেন। যদি আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি না থাকে, তাহলে জীবাণু সংক্রমিত হলেও রোগ হয় না। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিত জীবাণুর সংক্রমিত হবারও যেমন সামর্থ্য নেই, আবার সংক্রমিত হয়েও কারো দেহে রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। বিষয়টি তাকদিরের সাথে সম্পর্কিত। [6] সাধারণ পর্যবেক্ষণ ও যুক্তিও এটাই বলে যে – জীবাণু সংক্রমিত হওয়া মানেই রোগ সংক্রমিত হওয়া না। জীবাণু সংক্রমিত হলেও অনেক সময়েই মানুষ রোগাক্রান্ত হয় না। যেমনঃ বসন্ত রোগীর সংস্পর্শে থাকলে কেউ কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয়, আবার কেউ কেউ আক্রান্ত হয় না।
 .
এ প্রসঙ্গে শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র) বলেছেনঃ
 .
“....সুতরাং যদি জানা যায় যে, কোন বস্তু সংঘটিত হওয়াতে সঠিক কারণ রয়েছে, তাহলে তাকে কারণ হিসাবে বিশ্বাস করা বৈধ। কিন্তু নিছক ধারণা করে কোন ঘটনায় অন্য বস্তুর প্রভাব রয়েছে বলে বিশ্বাস করা ঠিক নয়। কোন বস্তু নিজে নিজেই অন্য ঘটনার কারণ হতে পারে না। ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব রয়েছে। নবী(ﷺ) বলেছেন, “অসুস্থ উটের মালিক যেন সুস্থ উটের মালিকের উটের কাছে অসুস্থ উটগুলো নিয়ে না যায়।” সুস্থ উটগুলো অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ে নবী(ﷺ) এ রকম বলেছেন।
.
নবী(ﷺ) আরো বলেনঃ “সিংহের ভয়ে তুমি যেমন পলায়ন কর, কুষ্ঠ রোগী দেখেও তুমি সেভাবে পলায়ন কর।” আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে নবী(ﷺ) কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। এখানে রোগের চলমান শক্তির কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে রোগ নিজস্ব ক্ষমতাবলে অন্যজনের কাছে চলে যায় তা অনিবার্য নয়। নবী(ﷺ) সতর্কতা অবলম্বনের আদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।” (সূরা বাক্বারাহ ২:১৯৫)
এটা বলা যাবে না যে, নবী(ﷺ) রোগের সংক্রমন হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। কেননা বাস্তব অবস্থা ও অন্যান্য হাদিসের মাধ্যমে এ রকম ধারণাকে খণ্ডন করা হয়েছে।

যদি বলা হয় যেঃ--- নবী(ﷺ) যখন বললেন, রোগ সংক্রামিত হয় না, তখন একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল(ﷺ)! মরুভূমিতে সম্পূর্ণ সুস্থ উট বিচরণ করে। উটগুলোর কাছে যখন একটি খুজ্‌লিযুক্ত উট আসে, তখন সব উটই খুজ্‌লিযুক্ত হয়ে যায়। তিনি বললেন, প্রথম উটটিকে কে খুজ্‌লিযুক্ত করল?
.
উত্তর হলঃ--- নবী(ﷺ) এর উক্তি “প্রথমটিকে কে খুজ্‌লিযুক্ত করল?” এর মাধ্যমেই জবাব দিয়েছেন। আল্লাহর ইচ্ছাতেই রোগের জীবাণু অসুস্থ ব্যক্তির নিকট থেকে সুস্থ ব্যক্তির নিকট গমণ করে থাকে। তাই আমরা বলব যে, প্রথম উটের উপরে সংক্রামক ব্যতীত আল্লাহর ইচ্ছাতেই রোগ নাযিল হয়েছে। কোন ঘটনার পিছনে কখনো প্রকাশ্য কারণ থাকে। আবার কখনো প্রকাশ্য কোন কারণ থাকে না। প্রথম উট খুজ্‌লিযুক্ত হওয়ার পিছনে আল্লাহর নির্ধারণ ব্যতীত অন্য কোন কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয় উট খুজ্‌লিযুক্ত হওয়ার কারণ যদিও জানা যাচ্ছে, তথাপি আল্লাহ চাইলে খুজ্‌লিযুক্ত হত না। তাই কখনো খুজলিতে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে ভা্লোও হয়ে যায়। আবার কখনো মারাও যায়। এমনিভাবে প্লেগ, কলেরা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেও একই কথা। একই ঘরের কয়েকজন আক্রান্ত হয়। কেউ মারা যায় আবার কেউ রেহাই পেয়ে যায়। মানুষের উচিৎ আল্লাহর উপর ভরসা করা। বর্ণিত আছে যে, ‘একজন কুষ্ঠ রোগী লোক নবী(ﷺ) এর কাছে আসলো। তিনি তার হাত ধরে বললেন, আমার সাথে খাও।’ আল্লাহর উপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা থকার কারণেই তিনি তাকে খানায় শরীক করেছিলেন। ...” [7]
 .
এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) যে যুগের মানুষ ছিলেন, সে যুগে পুরো পৃথিবী ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন। বিভিন্ন প্রকার কুলক্ষণ, কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস সে যুগে প্রচলিত ছিল। জাহেলী যুগে আরবরা হাম্মাহ(هَامَّةَ) বলতে কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাসকে বুঝে থাকতো। তাদের ধারণামতে ‘হাম্মাহ’ ছিল হুতুম পেঁচা যা গভীর রাতে নিহত ব্যক্তির বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তার পরিবারের লোকদেরকে ডাকাডাকি করে এবং প্রতিশোধ নেয়ার উৎসাহ দেয়। তাদের কেউ কেউ ধারণা করত যে, নিহত ব্যক্তির আত্মা পাখির আকৃতি ধরে উপস্থিত হয়েছে। তৎকালিন আরবরা এ পাখির ডাককে কুলক্ষণ মনে করত। কারো ঘরের পাশে এসে এ পাখি ডাকলে তারা বিশ্বাস করত যে, সে মৃত্যু বরণ করবে।  আরবরা সফর মাসকে অপয়া মাস মনে করত। কোন জিনিস দেখে, কোন কথা শুনে বা জানার মাধ্যমে কুলক্ষণ মনে করাকে ‘ত্বিয়ারাহ’(طِيَرَةَ) বলা হয়। নবী(ﷺ) এর যুগে এই সমস্ত ভ্রান্ত জিনিস আরবরা বিশ্বাস করত। [8]যে হাদিসগুলো দেখিয়ে ইসলামবিরোধীরা বলতে চায় যে এগুলোতে ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে ‘ভুল’(!) তথ্য আছে, সেই হাদিসগুলোতেই প্রাচীন আরবদের এই সমস্ত কুসংস্কারের অপনোদন করা হয়েছে। ভুল তথ্য থাকা তো অনেক দূরের কথা, এই হাদিসগুলোতে কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। এমনকি কুলক্ষণ বিশ্বাস করার মত জিনিসকে ইসলামে শির্ক বলে অভিহীত করা হয়েছে। [9] কিন্তু যাদের অন্তরে ব্যধি আছে, তাদের অন্তর এই হাদিসগুলো থেকে শুধু ভুল(!)ই খুঁজে বের করে।
 .
অতএব হাদিসের বক্তব্য থেকে যারা ভুল বের করার চেষ্টা করে, তাদের উদ্যেশ্য আবারও ব্যর্থ হল। ‘ছোঁয়াচে রোগ’ তো তাদের অন্তরে, যা তারা তাদের অপ্রপচারের দ্বারা মানুষের ভেতর ছড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সফলকাম করেন, আর যাকে ইচ্ছা ব্যর্থ করে দেন।
.
.

তথ্যসুত্রঃ
[1]  সহীহ বুখারী ৫৭৭৬, সহীহ মুসলিম ৫৯৩৩-৫৯৩৪
[2]  সুনান আবু দাউদ ৩৯১১
[3]  সহীহ বুখারী ৫৭০৭
[4]  ‘Park's preventive and social medicine’ by K. Park; Page 316;
স্ক্রীনশটঃ https://goo.gl/P4RuRS
[5]  সহীহ বুখারী ৫৭২৮
[6]  তাকদির প্রসঙ্গে বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য পূর্বের প্রবন্ধটি পড়ুন
[7]   ‘ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম’ — শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র), পৃষ্ঠা ১১৪-১১৬
[8]  “What did the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) mean by “No contagion (‘adwa)”?” --- islamQA(Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/45694
[9]  আল্লাহর রাসুল(ﷺ) বলেন, ‘‘কিছুকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করা শির্ক। কিছুকে কুপয়া মনে করা শির্ক, কিছুকে কুলক্ষণ মনে করা শির্ক। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে কুধারণা জন্মে না। তবে আল্লাহ (তাঁরই উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসার) ফলে তা (আমাদের হৃদয় থেকে) দূর করে দেন।’’ [মুসনাদ আহমাদ ১/৩৮৯, ৪৪০, আবু দাউদ ৩৯১২, তিরমিজী, ইবন মাজাহ, ইবন হিব্বান, হাকিম প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ ৪৩০]

Saturday, April 11, 2020

মহামারী আতঙ্কে মাসজিদে ছলাত বন্ধ করা কি জায়েজ?

করোনা ভাইরাস মহামারী আতংকে জুমার ছলাত ও জামাতবদ্ধ ছলাত পরিত্যাগ করা কি বৈধ হবে ???
🔺🔺🔺🔺🔺🔺🔺
🤍سُئل الشيخ أحمد الكوري الشنقيطي حفظه الله:
শাইখ আহমাদ আল-কাওরী আল শানকিতী হাফিজাহুল্লাহকে করা প্রশ্নের উত্তর:

⁉ هل يجوز للمسلمين الأصحاء ترك الجمعة والجماعة خوفا من المرض (كورونا)؟!
প্রশ্ন: করোনা রোগের ভয়ে জুমা ও জামায়াতবদ্ধ ছলাত পরিত্যাগ করা মুসলিমদের জন্য কি বৈধ?!
✒ *أولا*:
في الخوف من العدو المحقق عند القتال في سبيل الله لم تسقط الجماعة فكيف تسقط بسبب الخوف المتوهم من المرض؟
📖{ *وإذا كنت فيهم فأقمت لهم الصلاة
فلتقم طائفة منهم معك..}* الآية.
#প্রথমত*
আল্লহর রাস্তায় যুদ্ধকালীন প্রত্যক্ষ শত্রুর ভয়ে জামায়াত রহিত হয়নি সুতরাং রোগাক্রান্ত হওয়ার অনিশ্চি আতংকে কিভাবে রহিত হবে ?
আল্লাহ বলেন:
((হে নবী) আপনি যখন তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং তাদের জন্য ছলাতে দন্ডায়মান হন; তখন যেনো তাদের একটি দল আপনার সাথে দন্ডায়মান হয়) {নিসা:১০২}
🤍🤍🤍🤍
*ثانيا*
هذه الأوبئة والأمراض سببها الحقيقي هو الذنوب والمعاصي.
قال تعالى:
📖 *{وما أصابكم من مصيبة فبما كسبت أيديكم}*
وقال تعالى:
📖 *{ظهر الفساد في البر والبحر بما كسبت أيدي الناس ليذيقهم بعض الذي عملوا لعلهم يرجعون}.*
ألم يبين تعالى أن العلاج إنما هو في الرجوع إلى الله بالتوبة والاستغفار والصلاة والتلاوة والدعاء ...
وليس في ترك بعض ما أوجب علينا من جمعة وجماعة ؟!!
#দ্বিতীয়ত:
এসকল মহামারী ও রোগব্যাধির প্রকৃত কারণ হচ্ছে গুনাহসমূহ ও অবাধ্যতা ৷
আল্লহ তাআলা বলেন:
*(তোমাদেরকে যে বিপদাপদ পেয়ে বসে তা তোমাদের হাতেরই কর্মফল)
{শূরা:৩০}
তিনি আরো বলেন:
*{স্থলে ও জলে সংঘটিত বিপর্যয় মানুষের হাতের কর্মফল যাতে তিনি তাদের কৃতকর্মের কিয়দাংশ আস্বাদন করাতে পারেন, সম্ভবত তারা ফিরে আসবে}*
আল্লহ কি বর্ণনা করেননি যে নিশ্চয় রোগব্যাধি সেটা তো কেবলমাত্র আল্লহর দিকে ফিরে আসা; তাওবা, ইস্তিগফার, সালাত, তেলাওয়াত ও দুআ'র মাধ্যমে....
🤍🤍🤍🤍
*ثالثا*:
قول الله تعالى:
📖 *{ما أصاب من مصيبة في الأرض ولا في أنفسكم إلا في كتاب من قبل أن نبرأها}.*
#তৃতীয়ত*
আল্লহর বাণী: {পৃথিবীতে ও তোমাদের অন্তরসমূহে কোনো বিপদাপদ পতিত হয়না তবে সেটা আমরা ঘটানোর পূর্বেই কিতাবে বিদ্যমান}
وقال تعالى:
📖 *{قل لن يصيبنا إلا ما كتب الله لنا}*.
আল্লহর বাণী: হে নাবী আপনি বলুন, আমাদের কাছে কখনোই কিছু পৌছে না তবে উহা ব্যতিত যা আল্লহ আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন}
وقال تعالى:
📖 *{قل لو كنتم في بيوتكم لبرز الذي كتب عليهم القتل إلى مضاجعهم}*.
আল্লহর বাণী: হে নাবী আপনি বলুন, তোমরা যদি তোমাদের বাড়িতেও থাকো তথাপি অবশ্যই যাদের উপর প্রাণঘাত লিখিত হয়েছে তারা তাদের নির্ধারিতস্থলে উপস্থিত হবেই}*
🍃وقال صلى الله عليه وسلم:
" *واعلم أن الأمة لواجمعت على أن ينفعوك لم ينفعوك إلا بشيء قد كتبه الله لك ولو اجتمعوا على أن يضروك لم يضروك إلا بشيء قد كتبه الله عليك.*"
📒رواه أحمد والترمذي
وقال حسن صحيح .
*নাবী ছঃ বলেছেন:
আর জেনে রাখো! নিশ্চয় সমগ্রজাতি যদি তোমার উপকারার্থে সর্বসম্মত হয় তবে ততোটুকুই করতে সক্ষম হবে যা আল্লহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন ৷ আর যদি তারা তোমার ক্ষতি সাধনার্থে সর্বসম্মত হয় তবে তারা তোমার ততোটুকুই ক্ষতিসাধনে সক্ষম হবে যা আলহ তোমার উপর লিখে রেখেছেন ৷*
(আহমাদ, তিরমিযী, ইমাম তিরমিযী হাদিসটি হাসান সহীহ বলেছেন)

فإيماننا بالقضاء والقدر وتوكلنا على الله جل وعلا ألا يمنعنا من ترك ما أوجب علينا من صلاة الجمعة والجماعة خوفا من المرض وغيره؟!!!
সুতরাং তাকদির ও চূড়ান্ত ফায়সালার প্রতি আমাদের আস্থা এবং মহান আল্লহর উপর আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস কখনোই রোগব্যাধি ও অন্যকিছুর ভয়ে আমাদের উপর অত্যাবশ্যকীয় জামায়াত ও জুমার ছলাত বর্জনে বাঁধা হতে পারে না?!!!
🤍🤍🤍🤍
*رابعا*.
ألم يتحدث صلى الله عليه وسلم عن كيفية التعامل مع الطاعون
↙ وأنه لا يجوز دخول الأرض التي فيها الطاعون ولا الخروج من الأرض التي فيها ..
فهل ذكر فيه ترك صلاة الجماعة؟!!
#চতুর্থ*
নাবী ছঃ কি প্লেগ-মহামারীর সাথে আচরণবিধি আলোচনা করেন নি?!!
তা হচ্ছে- প্লেগ ও মহামারীতে আক্রান্ত ভূমিতে প্রবেশ এবং সেই ভূমি হতে বাহির হওয়া উভয়টাই অবৈধ ৷
সুতরাং সেখানে কি তিনি জামায়াত বর্জনের কথা উল্লেখ করেছেন ?!!
🤍🤍🤍🤍
*خامسا.*
وقع الطاعون في عهد عمر بن الخطاب رضي الله عنه وتشاور في أمره مع المهاجرين ثم الأنصار ثم مسلمة الفتح ..
فهل عطلوا بسببه جمعة أو جماعة؟!
#পঞ্চম*
উমার ইবনুল খাত্তাব রযিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে প্লেগ মহামারী সংঘটিত হয়েছিলো ৷ তিনি এ বিষয়ে মুহাজিরীন, আনসার সাহাবীসহ মাসলামাহ আল ফাতহ সাথে পরামর্শ করেছিলেন ৷ তিনি কি এই কারণে জুমা ও জামাত রহিত করেছিলেন?
*سادسا.*
يقول الله سبحانه وتعالى
📖 *{واستعينوا بالصبر والصلاة}*

فهل الإستعانة هنا بإقامة الصلاة في المسجد كما كان النبي صلى الله عليه وسلم يؤديها أم بترك الجمع والجماعات؟
*ষষ্ঠ*
মহান আল্লহ তাআলা বলেন:
*{তোমরা ধৈর্য ও ছলাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও}*
সুতরাং যেভাবে নাবী ছঃ মাসজিদে জামায়াত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাহায্য চেয়েছেন সেটা করবো নাকি জামাআত ও জুমা পরিত্যাগ করবো?
🤍🤍🤍🤍
*سابعا.*
يقول صلى الله عليه وسلم:
" *من صلى الصبح في جماعة فهو في ذمة الله.*."
ألا يكفينا أننا في ذمة الله؟!
{ *أليس الله بكاف عبده*}؟!!
#সপ্তম*
নাবী ছঃ বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজরের ছলাত জামায়াতে পড়বে সে আল্লহর নিরাপত্তাধীন ৷
আমরা আল্লহর নিরাপত্তাধীন এটা কি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয় ?!
*{আল্লহ কি উপাস্য হিসেবে যথেষ্ট নয়}*?!!
🤍🤍🤍🤍
*ثامنا.*
إذا كان صلى الله عليه وسلم لم يأذن للأعمى في التخلف عن الجماعة مع قوله بأنه لا قائد له وأن المدينة كثيرة الهوام والسباع ... كيف يؤذن للصحيح في التخلف عنها لمجرد خوف المرض؟!
#অষ্টম*
নাবী ছঃ একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে যার কোনো পথপ্রদর্শক নেই এমন উযর অবগত হওয়া সত্বেও তাকে জামায়াত থেকে পিছনে থাকার অনুমতি দেননি ৷ যদিও মদিনাতে প্রচুর সিংহ ও চতুষ্পদ জন্তু ছিলো ৷ তাহলে কিভাবে সুস্থ্যদের জন্য শুধুমাত্র রোগব্যাধির আশংকায় জামায়াত থেকে পিছনে থাকার অনুমতি দেওয়া যাবে ?!
🤍🤍🤍🤍🤍
*تاسعا.*
لقد كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا حزبه أمر بادر إلى الصلاة..
فهل إذا حزبنا فيروس الكورونا نترك صلاة الجمعة والجماعة؟!!
#নবম*
রসুলুল্লহ ছঃ এর কাছে কোনো বিষয় কষ্টকর হওয়া মাত্রই তিনি ছলাতের জন্য দ্রুত বের হয়ে যেতেন ৷ আর আমাদের জন্য ভাইরাসস করোনা কষ্টদায়ক হওয়ার কারনে আমরা জুমার ছলাত ও জামায়াত পরিত্যাগ করে চলছি ?!!
🤍🤍🤍🤍
*عاشرا.*
لقد كان في كل مدينة إسلامية جامع واحد يصلي فيه الجميع..
وقد كان يصيب المسلمين الوباء والطاعون من حين لآخر ..
#দশম*
প্রতিটি ইসলামী নগরীতে মাত্র একটি জামে মাসজিদ ছিলো তাতেই সকলে ছলাত পড়তো...যুগ যুগান্তরে মুসলিমদেরকে বহুবার প্লেগ মহামারী গ্রাস করেছে...

فهل أفتى أحد من علماء المسلمين عبر التاريخ بغلق المساجد بسبب وباء أو طاعون؟!!
তথাপি এযাবত ইতিহাসে মুসলিমদের কোনো একজন উলামা কি প্লেগ/মহামারীর কারণে মাসজিদসমূহ বন্ধ করার ফতুয়া দিয়েছে?!!
⁉⁉⁉

((( ماذا فعل المسلمون قديما .. حينما انتشر الطاعون سنة ٦٧٤ھ؟! )))👇
----
قال قاضي (صفد) الإمام محمد بن عبدالرحمن القرشي الدمشقي الشافعي (توفى: بعد ٧٨٠هـ) في كتابه ( شفاء القلب المحزون، في بيان ما يتعلق بالطاعون ) - :
((( প্রাচীনকালে মুসলিমরা কি করেছে....যখন ৬৭৪ হিজরী সনে প্লেগ মহামারীর বিস্তার ঘটেছিলো )?!!
------
কাজী (সাফাভিড) ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান আল কোরাশি, আল দিমাস্কী, আস শাফিঈ (মৃত্যু: ৭৮০ হিজরীর পর) রহিমাহুল্লাহু স্বীয় গ্রন্থে বলেছেন {চিন্তিত হৃদয়ের আরোগ্যলাভ, যা প্লেগ দূরারোগ্যের সাথে সম্পৃক্ত বয়ানে বিদ্যমান}
↙↙↙
( ..وكان الناس به على خير عظيم : مِن إحياء الليل، وصوم النهار، والصدقة، والتوبة؛ ... [ فهجرنا البيوت ، ولزمنا المساجد ] رجالنا وأطفالنا ونساءنا ؛ فكان الناس به على خير .. ) . أ. ه
(.. জনসাধারণ প্লেগের উপস্থিতিতেও মহাকল্যাণে ছিলো: রাত্রি জাগরণ, দিনে সিয়াম পালন, সাদকা প্রদান ও তাওবা করা...{আমরা বাসস্থান ছেড়ে দিয়েছিলাম, মসজিদকে আবশ্যিকভাবে গ্রহণ করেছিলাম} আমাদের পুরুষেরা, আমাদের শিশু কিশোররা, আমাদের মহিলারাসহ; মানুষেরা প্লেগের উপস্থিতিতেও সৎকর্মের উপর অটুট ও অবিচল ছিলো)
অনেকে এটাকে বৈধ করার জন্য যে হাদিসটি পেশ করেন তা হলো-
নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, প্রচণ্ড এক শীতের রাতে ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। অতঃপর তিনি ঘোষণা করলেনঃ তোমরা আবাস স্থলেই সালাত আদায় করে নাও। পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ বাসস্থলে সালাত আদায় কর। (বুখারী ৬৬৬; মুসলিম ৬/৩, হাঃ ৬৯৭, আহমাদ ৪৫৮০) (আ.প্র. ৫৯৬, ই.ফা. ৬০৪) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৩২
কিন্তু উক্ত হাদিস এ ওযরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
মসজিদে যাওয়ার পথে বাধা রয়েছে, এমন অবস্থা হলে এই হাদিস প্রযোজ্য।
কিন্তু এখন মসজিদে যাওয়া অসম্ভব নয়।
বরং শুধুমাত্র অনিশ্চিত আশংকা রয়েছে।
শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য নিষিদ্ধ।
যেমনঃ
একদল লোক নবী সঃ এঁর নিকট বাইয়াত নিতে আসলে সবাইকে হাতে হাত রেখে বাইয়াত নিলেন,ঐ দলে কুষ্ঠ রোগী ছিল। নাবীজি ছঃ তার হাত না ধরে বাইয়াত নিলেন। (মুসলিম-৫৭১৫)

ইবনে মাসউদ র. কখনো রোগাক্রান্ত হলে তার থেকে মুক্তির জন্য দু'আও করতেন না। বলতেন, আল্লহ ভালবেসে দিয়েছেন। আমার লজ্জা হয় আল্লহর হাদিয়া ফেরৎ দিতে!
আজ করোনাভাইরাসে সবাই দিশেহারা। অথচ উমার র. এর শাসনামলে সিরিয়ায় মহামারী দেখা দিয়েছিল। সেখানের শাসক ছিলেন পর্যায়ক্রমে আবু উবাইদা ও মু'আজ ইবনে জাবাল র.। উভয়ে মিম্বারে উঠে বলেছিলেন,
"এটা আল্লহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য তুহফা। এটা রহমাহ"।
এরপর উভয়ে মহামারীতে শহীদ হয়ে যান। তবু 'আরও কিছুদিন বাঁচি, একটু সুস্থ হই' এ দু'আ করেননি।
এ ছিল তাদের ধৈর্য! সর্বোত্তম ধৈর্য!
আর আপনারা মাসজিদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন।
জেনে রাখবেন, সতর্কতা অবলম্বন আল্লহরই নির্দেশ।
তবে অতি সতর্কতা দেখিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে দূরবর্তী হওয়া নয়।
সতর্কতার মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন।
অতি সতর্কতা আযাব কমাবে না, উল্টা বাড়াবে। cld.
🔺🔺🔺🔺🔺🔺

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...