Monday, April 13, 2020

রাত হওয়ার আগেই নাকি ইফতার করি~ আহলে কুরআন বিভ্রান্তি

এক আহলে কোরআনি ভাই আমাকে বলল যে আমাদের নাকি রোযা হয়না কারন আমরা নাকি রাত হওয়ার আগেই ইফতার করি! আমি জিজ্ঞাস করলাম কি বলছেন ভাই? তিনি বললেন হ্যাঁ, কারন আল্লাহ কুরানে বলেছেন “অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত” (সুরা বাকারা ২:১৮৭) ।
সুতরাং আমাদের করোর রোযা হয় না ।
 উনি হাদিস মানে না । উনাকে বুঝাতে হলে কুরান থেকেই বুঝাতে হবে, যদিও অতিতে অনেকবার কুরান থেকেই বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম- উনি কোন উত্তর দেননি এবং বুঝারও চেষ্টা করেননি ।
তারপরও চেষ্টা করছি- আমাদের কাজ চেষ্টা করা হেদায়াতের মালিক আল্লাহ ।
 আসুন কুরান থেকেই দেখি “রাত” কখন শুরু হয়, ইনশা আল্লাহ ।
.
  কুরানের এই আয়াতের ব্যাখ্যা কুরানের মধ্যেই দেওয়া আছে যার দারা প্রমানিত হয় যে “রাত” শুরু হয় সূর্যাস্তের মাধ্যমে ।
 শুরুতেই আমরা দেখে নেই “রাত” বা night দারা কি বুঝি অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী night  মানে হল “The period from sunset to sunrise in each twenty-four hours”  অর্থাৎ রাত শুরু হয় সূর্যাস্তের সাথে সাথে ।
আর রাত দারা একটা নির্দিষ্ট  সময় কাল বুঝানো হয়- রাত মানেই অন্ধকারময়তা বুঝায় না ।
যেমন সূর্য গ্রহনের সময় দিনের বেলাও যদি অন্ধকার হয় সেটাকে আমরা রাত বলিনা ।
অন্ধকারময়তা হল আলোর অনুপস্থিতি যা রাতের অংশ ।  এখন আসুন দেখি রাতের শুরুর ব্যাপারে কুরআন কি বলে ।

প্রমান ১। “তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন(৩৯:৫)

এই আয়াতে  يُكَوِّرُ শব্দের অর্থ হল কোন কিছুকে মোড়া বা আচ্ছাদিত করা বা কুন্ডলী পাকানো বা কোন জিনিসকে প্যাঁচানো । যেমন করে মাথায় পাগড়ী প্যাঁচানো হয়। এর দারা এটাও প্রমানিত হয় যে পৃথিবী গোলাকার তানাহলে রাত ও দিনের আকস্মিক পরিবর্তন হত । মোড়ান, আচ্ছাদন বা প্যাঁচানো একটি slow process অর্থাৎ এটি আস্তে আস্তে ঘটে । সুতরাং এই আয়াত হতে এটা পরিস্কার যে এই আচ্ছাদনের কাজটি সূর্যাস্তের মাধ্যমে শুরু হয় যেহেতু সূর্যাস্তের ফলে আস্তে আস্তে অন্ধকার হওয়া শুরু হয় আর ঠিক তখনই রাতের শুরু হয় ।
.
 যদি রাতের শুরু বলতে একদম অন্ধকারকে বুঝানো হয় (যেটা সূর্য ডুবার প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিলক্ষিত হয়) তাহলে এই আয়াতের রাত্রিকে দিবস দারা আচ্ছাদিত করার অর্থ কি?
কারন তখন আর এটা আচ্ছাদন হবেনা- এটা হবে আকস্মিক পরিবর্তন কিন্তু আমরা বাস্তবে আচ্ছাদনই দেখতে পাই । নিম্নোক্ত আয়াত থেকেও আমরা এই ধারনা পাই ।

“এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রির মধ্য দাখিল করে দেন এবং আল্লাহ সবকিছু শোনেন, দেখেন”(২২:৬১)
অন্যএ আল্লাহ বলেন...

“আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পূর্ণ কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক” (১১:১১৪)

 এই আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ طَرَفَىِ যার অর্থ দুই প্রান্ত – এর দারা নির্দিষ্ট  মুহূর্ত বা পয়েন্ট বুঝানো হয় ।
সুতরাং এখানে দিনের দুটি প্রান্ত বলতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তকেই বুঝানো হচ্ছে যেহেতু এই দুটি প্রান্তই হল দিনের নির্দিষ্ট  মুহূর্ত বা পয়েন্ট ।
 এর পরক্ষনেই বলা হয়েছে “রাতের প্রান্তভাগে” অর্থাৎ সূর্যাস্তের সংগে সংগে রাতের শুরু হয় যা এই আয়াত দারা স্পষ্টতই প্রতিয়মান ।
যদি ভালো করে আরেকটা সুরা লক্ষ্য করি তবে দেখবে যে;
.
“শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,
 শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে,
- শপথ দিবসের যখন তা (সূর্যকে) প্রকাশ করে,
শপথ রাত্রির যখন তা সূর্যকে ঢেকে দেয়” (৯১:১-৪)

৩ নম্বর আয়াত থেকে স্পষ্ট হচ্ছেঃ দিবস= সূর্যের প্রকাশ

৪ নম্বর আয়াত থেকে স্পষ্ট হচ্ছেঃ রাত্রি= সূর্যের প্রস্থান অর্থাৎ রাতের শুরু হচ্ছে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ।
সুতরাং  “অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত” (২:১৮৭) এর অর্থ দাড়ায় সূর্যাস্তের সাথে রোযা পূর্ণ হয়ে যায় এবং এটাই ইফতারের সঠিক সময় । আর এটাই রাসুলের(সঃ) শিক্ষা ।

আল্লাহ আমাদেরকে ইফতারের সময় বের করার জন্য এত গবেষণামুলক কঠিন পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলেননি । এটা শুধু এই পথভ্রষ্ট একদল “আহলে কুরান” যুবকদের জন্য আমার সামান্য প্রচেষ্টা । আমি কুরআন থেকেই রাসুলের সুন্নাতকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছি । আল্লাহ আমাদের জন্য তার রাসু(সঃ) কে অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জন্য দ্বীনকে সহজ করে দিয়েছেন । আসলে এদেরকে “আহলে কুরান” বলাও ঠিকনা যেহেতু “আহলে কোরআন” মানে হল যারা কুরআনকে অনুসরণ করে কিন্তু এরা কুরআনকে প্রকৃত পক্ষে অনুসরণ করেনা । এরা নিজেরদের মনস্কামনা চরিতার্থ করার জন্য সুবিধামত কুরআনের কয়েকটি আয়াতকে মানে । এরা কুরআনের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশকে মানে না । এদের কথাই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন এভাবে “ তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন” (২:৮৫)
.
আল্লাহ আমাদেরকে তার দ্বীনকে সথিকভাবে বুঝার এবং মানার তাওফিক দান করুক । আমিন । 

আমার আহলে কোরআন ভাইদের কাছে দুইটা প্রশ্নঃ উত্তর নরওয়েতে মে থেকে জুলাই  মাস পর্যন্ত সূর্য ডুবে না সেজন্য রাত হয় না । এখানকার মুসলমানেরা নামাজ রোযা কিভাবে করবে?
২.ধরেন টানা ৫-৬ দিন বৃষ্টির কারনে বিকেলেই রাতের মত হয়ে গেল সেক্ষেত্রে কিভাবে ইফতার করবেন কিংবা সে বৃষ্টির কারনে কোনটা রাতে কালো সুতা আর কোনটা ভোরের শ্রভ্ররেখা সেটা স্পষ্ট নয় তখন কি করবেন???

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...