Saturday, January 25, 2020

স্বামী কি স্ত্রীকে আলাদা নাম দিতে পারবে? বা ভিন্ন নামে ডাকতে পারবে?

⏩স্ত্রীকে আদর করে ভিন্ন নামে ডাকা:

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়শা রা. কে আদর করে কোন সময় আয়শু বলে ডাকতেন।
(সহীহ বুখারী হাঃ ৩৭৬৮,৬২০১, সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪৪৭, দারামী হাঃ ২৬৪০, আহমাদ হাঃ ২৪৫৭৪)
কখনো হুমায়রা (সুন্দরী,রূপবতী) বলে ডাকতেন।(ইবনু মাজাহ হাঃ ২৪৭৪)
কখনো উম্মে আব্দুল্লাহ বলে ডাকতেন।
(আবু দাউদ হাঃ ৪৯৭০, ইবনু মাজাহ হাঃ ৩৭৩৯,আহমাদ হাঃ ২৫১৮১,২৫৫৩০,২৬২৪২)

গ্রন্থঃ হাদীস সম্ভার
অধ্যায়ঃ ২৪/ বিবাহ ও দাম্পত্য
হাদিস নম্বরঃ ২৫৮৪
দাম্পত্য ও সংসার
(২৫৮৪) আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা হাবশীরা বর্শা-বল্লম নিয়ে মসজিদে খেলা করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘হে হুমাইরা! তুমি কি ওদের খেলা দেখতে চাও?’’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তখন তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি আমার থুত্নিকে তাঁর কাঁধের উপর রাখলাম এবং আমার চেহারাকে তাঁর গালের সাথে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। (বেশ কিছুক্ষণ দেখার পর) তিনি বললেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে, চল এবারে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াতাড়ি করবেন না।’ তাই তিনি আমার জন্য আবারও দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর আবার বললেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে, চল এবারে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াতাড়ি করবেন না।’ আমার যে তাদের খেলা দেখার খুব শখ ছিল তা নয়, বরং আমি কেবল তাঁর অন্যান্য স্ত্রীদেরকে এ কথাটা জানিয়ে দিতে চাইছিলাম যে, আমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতটা মর্যাদা ছিল এবং তাঁর কাছে আমার কতটা কদর ছিল। (নাসাঈ কুবরা ৮৯৫১, মুসলিম ২১০০-২১০৫) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এখানে,, আয়েশা রাঃ কে রসুল সঃ তাকে ভালোবেসে,, হুমাইরা বলে ডাকতেন,,!!!
এর কারণ আছে,, তাহলো,, হুমাইরা মানে লাল সুন্দরী মহিলা,,,!!
রেগে গেলে,, খুশি হলে যার চল বা মুখ লাল হয়ে যাই,, তাকে হুমাইরা বলে,,,!!

Tuesday, January 21, 2020

খুলা তালাক বলতে কী বুঝায়? স্ত্রী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারবে?

প্রশ্ন: খুলা তালাক বলতে কী বুঝায়? খুলা তালাক প্রয়োগ করার পদ্ধতি কী? যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে না চায় তা সত্ত্বেও কী তালাক সংঘটিত হতে পারে?
আমেরিকান সোসাইটি সম্পর্কে কি বলবেন? যদি স্ত্রীর কাছে তার স্বামী মনপূত না হয় (কোন কোন ক্ষেত্রে; যেহেতু স্বামী দ্বীনদার)। স্ত্রী ধারণা করে যে, তার তালাক দেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।

উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ।
খুলা হচ্ছে: কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক।

এ বিধানের দলিল হচ্ছে, আল্লাহ্‌র বাণী: “আর তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো (বিদায় করার সময়) তা থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তবে এটা স্বতন্ত্র, স্বামী-স্ত্রী যদি আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না বলে আশংকা করে, তাহলে এমতাবস্থায় যদি তোমরা আশংকা করো, তারা উভয়ে আল্লাহ্‌ নির্ধারিত সীমার মধ্যে অবস্থান করতে পারবে না, তাহলে স্ত্রীর কিছু বিনিময় দিয়ে তার স্বামী থেকে বিচ্ছেদ লাভ করায় উভয়ের কোন গুনাহ নেই।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২৯]

সুন্নাহ্‌ থেকে এর দলিল হচ্ছে, সাবেত বিন ক্বাইস বিন শাম্‌মাস এর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি সাবেত বিন ক্বাইসের উপর চারিত্রিক বা দ্বীনদারির কোন দোষ দিব না। কিন্তু, আমি মুসলিম হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হতে অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিবে? সাবেত মোহরানা হিসেবে তাকে বাগান দিয়েছিল। সে বলল: জ্বি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বাগানটি গ্রহণ করে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দাও”[সহিহ বুখারী (৫২৭৩)]

এই ঘটনা থেকে আলেমগণ গ্রহণ করেন যে, কোন নারী যদি তার স্বামীর সাথে অবস্থান করতে না পারে সেক্ষেত্রে বিচারক স্বামীকে বলবেন তাকে তালাক দিয়ে দিতে; বরং স্বামীকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দিবেন।

এর পদ্ধতি হচ্ছে- স্বামী বিনিময় গ্রহণ করবেন কিংবা তারা দুইজন এ বিষয়ে একমত হবেন; এরপর স্বামী তার স্ত্রীকে বলবেন: আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম কিংবা আমি তোমাকে খুলা তালাক দিলাম, কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন শব্দ।

তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে। দলিল হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তালাক তারই অধিকার যার রয়েছে সহবাস করার অধিকার” অর্থাৎ স্বামীর। [সুনানে ইবনে মাজাহ (২০৮১), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (২০৪১) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

এ কারণে আলেমগণ বলেন: যে ব্যক্তিকে তালাক দেয়ার জন্য অন্যায়ভাবে জবরদস্তি করা হয়েছে; সে ব্যক্তি যদি এ জবরদস্তি থেকে বাঁচার জন্য তালাক দেয় তাহলে সে তালাক সংঘটিত হবে না।[দেখুন আল-মুগনী (১০/৩৫২)]

আপনাদের সেখানে মানবরচিত আইনে স্ত্রী নিজেই নিজেকে তালাক দিতে পারার যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন: যদি সেটা এমন কোন কারণে হয় যে কারণে মহিলার জন্য তালাক চাওয়া জায়েয আছে; যেমন- স্ত্রী তার স্বামীকে অপছন্দ করা, স্বামীর সাথে একত্রে থাকতে না পারা, কিংবা স্বামীর দ্বীনদারির ঘাটতি ও হারামে লিপ্ত হওয়ার স্পর্ধাকে অপছন্দ করা ইত্যাদি, তাহলে স্ত্রীর তালাক চাওয়াতে কোন দোষ নেই। তবে, এ অবস্থাতে স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে যে মোহরানা গ্রহণ করেছে সেটা ফেরত দিতে হবে।

আর যদি যথাযথ কারণ ছাড়া স্ত্রী তালাক চায় তাহলে সেটা নাজায়েয। এমতাবস্থায় কোর্ট যদি তালাক কার্যকর করে তাহলে সেটা ইসলামি শরিয়তে গ্রাহ্য হবে না। বরং এ মহিলা এ পুরুষের স্ত্রী হিসেবে বলবৎ থাকবে। এখানে হচ্ছে সমস্যা। সমস্যাটা হলো- এ নারী আইনের দৃষ্টিতে তালাকপ্রাপ্তা; ইদ্দত শেষ হলে সে হয়ত অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সে তালাকপ্রাপ্ত নয়; সে অন্য একজনের স্ত্রী।

শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন এ ধরণের মাসয়ালার ক্ষেত্রে বলেন:

আমরা এখন একটা সমস্যা সংকুল মাসয়ালার সামনে আছি। এ নারী তার স্বামীর বিবাহাধীনে থাকায় অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। কিন্তু, বাহ্যতঃ কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে সে তালাকপ্রাপ্তা নারী; যখনি তার ইদ্দত পূর্ণ হবে তার জন্য অন্য স্বামী গ্রহণ করা বৈধ। এ সমস্যা নিরসনে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কিছু দ্বীনদার ও ভাল মানুষকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; যাতে করে তারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সমঝোতা করতে পারে। সমঝোতা না হলে, স্ত্রী তার স্বামীকে বিনিময় দিতে হবে; যাতে করে এটি ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে খুলা তালাক হিসেবে গণ্য হয়।

শাইখ উছাইমীনের লিকাউল বাব আল-মাফতুহ; নং ৫৪, (৩/১৭৪) দারুল বাছিরা প্রকাশনী, মিশর

Monday, January 20, 2020

পুরুষদের জন্য ব্রেসলেট পরা কি হারাম?

প্রশ্ন: পুরুষদের জন্য ব্রেসলেট পরা কি হারাম?
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর:
হাতে চুরি, ব্রেসলেট, কানে দুল, গলায় মালা ইত্যাদি অলংকারাদি পরিধান করা মহিলাদের বৈশিষ্ট্য। তাই এ সব অলংকার পুরুষদের ব্যবহার করা হারাম। আর এগুলো যদি স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি হয় তাহলে তা আরও বেশি জটিল। অর্থাৎ এ কারণে দ্বিগুণ গুনাহ হবে। কারণ তা একদিকে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন অন্য দিকে পুরুষের জন্য স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয় বরং পুরুষদের অলংকার পরিধান করার রীতি পাশ্চাত্য ও অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বনের ক্ষেত্রে অন্ধ অনুকরণের আরেকটি উদাহরণ।
ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো সবই কঠিন হারাম।
🌀 ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন করা কবিরা গুনাহ:
বিপরীত লিঙ্গের সাদৃশ্য অবলম্বনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বহু হাদিস উল্লেখিত হয়েছে। তন্মধ্যে ৩টি হাদিসে পেশ করা হল:
❖ ১) ইবনে আব্বাস রা . হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنْ النِّسَاءِ وَقَالَ أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ قَالَ فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فُلَانًا وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লা’নত করেছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৮৬)
➤ হাদিসের ব্যাখ্যা:
এ হাদিসের ব্যাখ্যা হল, যে সকল পুরুষ কৃত্রিমভাবে নারীর বেশ-ভুষা অবলম্বন করে হিজড়া সাজে অর্থাৎ যারা পোশাক-পরিচ্ছদ, কণ্ঠস্বর, কথা বলার ধরণ, চলাফেরা, রূপসজ্জা ইত্যাদি দিক দিয়ে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হিজড়া হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে হিজড়াদের কোন দোষ নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কোন হাত নেই। বরং মহান আল্লাহ তাদেরকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন।
অনুরূপভাবে যে সকল মহিলা পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, চুলের স্টাইল, সাজসজ্জা, কথা বলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে পুরুষদের সাদৃশ্য ধারণ করে তাদের প্রতিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন।
❖ ২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
لَيسَ منَّا مَن تشبَّهَ بالرِّجالِ منَ النِّساءِ ولا من تَشبَّهَ بالنِّساءِ منَ الرِّجالِ
“যে সব নারী পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, সহীহুল জামে হা/৪৫৩৩, সহীহ)
❖ ৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ»
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। [আবু দাউদ : ৪০৯৮]
🌀 ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিমদের রীতি-নীতি ও কৃষ্টি-কালচার অনুসরণ করা হারাম:
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
"যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।" [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]
🌀 পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম:
পুরুষদের জন্য স্বর্ণের তৈরি আংটি, হাত ঘড়ি, ব্রেসলেট, গলার মালা, চশমার ফ্রেম, জামার বোতাম, কলম ইত্যাদি ব্যবহার করা বৈধ নয়।
❖ ক. যায়েদ ইবনে আকরাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أحل الذهب والحرير لإناث أمتي وحرم على ذكورهم
"স্বর্ণ ও রেশমি বস্ত্র আমার উম্মতের নারীদের জন্য বৈধ এবং পুরুষের জন্য হারাম করা হয়েছে।" (সিলসিলা সহীহা হা/১৮৬৫/৩০৩০)
❖ খ. অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আলী ইবনে আবু তালিব রা.-কে বলতে শুনেছেন,
إِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَخَذَ حَرِيرًا فَجَعَلَهُ فِي يَمِينِهِ وَأَخَذَ ذَهَبًا فَجَعَلَهُ فِي شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ ‏ "‏ إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي"‏ ‏
"আল্লাহর নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেন: এ দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম।" (সুনানে আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ নারীদের জন্য রেশমি পোশাক বৈধ, সহিহ)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আল্লাহর নিষিদ্ধ কৃত সকল কর্মকাণ্ড থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

ছেলে বা মেয়েকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা কি বৈধ?

ছেলে বা মেয়েকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা কি বৈধ?
▬▬▬●◈●▬▬▬
প্রশ্ন: বিয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই একটা পছন্দ-অপছন্দ থাকে এবং অনেক সময় পছন্দ না হলে বিয়ের পর হয়ত ফিতনা হতে পারে। তাহলে বাবা মা কি ছেলে বা মেয়ে কে নির্দিষ্ট কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার জন্য তাদের ছেলে বা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করা জায়েজ নাই যাকে সে পছন্দ করে না বা যার সাথে তার বিয়েতে আগ্রহ নেই। কারণ বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর পারষ্পারিক আকর্ষণ ও আগ্রহ বোধ থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা যদি না থাকে তাহলে এই পবিত্র বন্ধন দ্রুতই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের পূর্বে বরক ও কনে একে অপরকে দেখে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
➤ জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدِرَ أَنْ يَرَى مِنْهَا بَعْضَ مَا يَدْعُوهُ إِلَيْ نكاحها فَلْيَفْعَلْ
“তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা করে তখন যতদূর সম্ভব তাকে দেখে নিয়ে এ মর্মে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত যে, মেয়েটির মধ্যে এমন কিছু আছে যা তাকে বিয়ে করার প্রতি আকৃষ্ট করে।” (আহমদ ও আবু দাউদ)
➤ অন্য হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন:
انْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا ‏
"তাকে দেখে নাও, তোমাদের মধ্যে এটা ভালবাসার সৃষ্টি করবে।" [তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ সহিহ বলেছেন]
এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
বিয়ের পূর্বে দেখাদেখির বিষয়ে ইসলামে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এ কারণে যে, বর-কনে যেন একে অপরকে দেখে তাদের নিজস্ব পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু যদি কাউকে তার অপছন্দের ব্যক্তির সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেখানে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হল যা তাদের দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে-এ সম্ভাবনাই বেশি।
➤ এ ছাড়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন:
لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ قَالُوا كَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ
"বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা বললেন, তার অনুমতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ তার চুপচাপ থাকা।" [সহিহ বুখারি (তাওহীদ) হাদিস নম্বরঃ [6970] অধ্যায়: ৯০/ কূটচাল অবলম্বন (كتاب الحيل) পাবলিশারঃ তাওহীদ]
অর্থাৎ কুমারী মেয়ের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর সে যদি চুপ থাকে তাহলে তা তার সম্মতি হিসেবে গণ্য হবে। যেমন বাংলা প্রবাদে বলা হয়, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।
এ সব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, বিয়ের ক্ষেত্রে বর ও কনের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারো জন্য আল্লাহ প্রদত্ত তাদের এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার নাই। সুতরাং তাদের সম্মতি ছাড়া জোর পূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা আল্লাহর নাফরমানির শামিল।
✪ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন:
"وليس للأبوين إلزام الولد بنكاح من لا يريد ، فإن امتنع لا يكون عاقاً ، كأكل ما لا يريد"
"الاختيارات" (ص 344)
"বাবা-মার জন্য তাদের সন্তানকে এমন ব্যক্তির সাথে বিবাহে বাধ্য করার সুযোগ নাই যাকে সে বিয়ে করতে চায় না। অত:এব সে যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ না মানে তাহলে সে 'অবাধ্য' হিসেবে গণ্য হবে না- বিষয়টি অনিচ্ছা স্বত্বেও খাওয়ার মত।" (উৎস: আল ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা নং ৩৪৪)
সুতরাং ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক কাউকেই তার ইচ্ছার বাইরে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করার সুযোগ নেই। কেউ যদি তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অথবা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করে তাহলে তাদের অধিকার রয়েছে বিয়ে রাখা অথবা ভঙ্গ করার। আর সন্তান যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাতে তার গুনাহ হবে না বরং বাবা-মা তাদের অনধিকার চর্চার কারণে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

মহিলাদের পুরুষ ডাক্তার দেখালে এবং তার সামনে গোপনাঙ্গ বের করলে কি গুনাহ হবে?

⏩প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য পুরুষ এবং পুরুষদের জন্য মহিলা ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা গ্রহণ করা বৈধ কি?
উত্তর:
ইসলামের সাধারণ নিয়ম হল, পুরুষ রোগী পুরুষ ডাক্তার এবং মহিলা রোগী মহিলা ডাক্তার এর নিকট চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। যথাসম্ভব এর ব্যতিক্রম করা ঠিক নয়। এটা ডাক্তার ও রোগী উভয়ের ঈমান, আখলাক ও ইজ্জত-সম্ভ্রমের জন্য হেফাজতের কারণ। তবে যদি এমন ব্যবস্থা না থাকে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা আবশ্যক হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে বিপরীত লিঙ্গের ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা গ্রহণ করা জায়েজ রয়েছে ইনশাআল্লাহ। কারণ ইসলামের একটি মূলনীতি হল, الضرورات تبيح المحظورات "জরুরি প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে দেয়।"
সুতরাং প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক হল, চিকিৎসার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব বিপরীত লিঙ্গের ডাক্তার এড়িয়ে চলা। বিশেষ করে রোগ যদি এমন হয় যে, তা চিকিৎসার ক্ষেত্রে পর্দা লঙ্ঘনের সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহু আলাম।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জটিল রোগ-ব্যাধী থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

⏩প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য কি একজন অনভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার থেকে অভিজ্ঞ বিশ্বস্ত নন মাহরাম পুরুষ ডাক্তার দেখানো উচিত?
উত্তর:
অনভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করলে যদি আশঙ্কা থাকে যে, সে হয়তো রোগীর কোন ক্ষতি করে ফেলবে বা রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসা হবে না এবং এর বিকল্প কোন অভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তারও না পাওয়া যায় তাহলে কোন অভিজ্ঞ পুরুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করা জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ। কারণ এটা অপারগ অবস্থা।
তবে চিকিৎসা গ্রহণের সময় তার সাথে স্বামী বা কোন মাহরাম পুরুষ থাকবে। মহিলা রোগীকে নি:সঙ্গভাবে পুরুষ ডাক্তারের কাছে আলাদা কক্ষে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া যাবে না। কেননা এতে ফেতনার সম্ভাবনা রয়েছে।
মূলত: ইসলামের দৃষ্টিতে কোন পুরুষের সাথে কোন পরনারীর নির্জনে থাকাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ألا لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ»
“সাবধান! কোন পুরুষ কোনও মহিলার সাথে একান্তে নির্জনে গেলেই তাদের সাথে তৃতীয় জন হবে শয়তান।” (সহিহুল জামে ২৫৪৬-আলবানী)
তিনি আরও বলেন:
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلا يَخْلُوَنَّ بِامْرَأَةٍ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا مَحْرَمٌ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন কোন পরনারীর সাথে নির্জন না হয় যখন তার মাঝে এবং সে নারীর মাঝে কোন মাহরাম পুরুষ না থাকে।” (সহিহুত তারগীব: ১৯০৯-আলবানী)
মোটকথা, একান্ত জরুরি অবস্থা না হলে পর পুরুষ ডাক্তারের নিকট কোন মুসলিম মহিলার জন্য এমন চিকিৎসা করা বৈধ নয়, যেই চিকিৎসা করার জন্য পর্দা লঙ্ঘিত হয়।
আল্লাহু আলাম

▬▬▬🌐পুরুষ ডাক্তার দ্বারা মহিলাদের সন্তান ডেলিভারি ও সিজার করা এবং একটি আহ্বান।
⏩প্রশ্ন: মহিলা ডাক্তার না থাকলে তখন পুরুষ ডাক্তারের সামনে ডেলিভারির সময় মহিলাদের গোপন স্থান বের করা কি গুনাহ হবে?
উত্তর:
মহিলা ডাক্তার এবং মহিলা নার্স এর মাধ্যমেই মহিলাদের সিজার বা সন্তান ডেলিভারি করা উচিত। এটি তাদের ইজ্জত-আব্রুর হেফজত এবং পর্দা রক্ষার জন্য সবচেয়ে উপযোগী একথায় কোনো সন্দেহ নাই।
তবে যদি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার ও নার্স না পাওয়া যায় তাহলে অনন্যোপায় হয়ে পুরুষ ডাক্তার বা নার্সের সাহায্য নেয়া জায়েয রয়েছে। এতে গুনাহ হবে না। কারণ এ ছাড়া আর বিকল্প নাই।
আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই আল্লামা উসাইমীন রহ. মুসলিম মহিলাদের মেডিকেল পড়াকে ফরযে কিফায়া বলেছেন। অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে অবশ্যই কিছু মহিলার এ পেশায় আসা আবশ্যক যেন মহিলা সংক্রান্ত অসুখ-বিসুখ, সিজার, সন্তান ডেলিভারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদেরকে পর পুরুষ বা অমুসলিমদের শরণাপন্ন না হতে হয়।
সুতরাং সমাজের অর্থশালী ও উদ্যোগী ব্যক্তিদের জন্য মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র মেডিকেল কলেজ/ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা ফরজ- যেন আমাদের দ্বীনদার বোনেরা পর পুরুষ থেকে আলাদা থেকে নির্বিঘ্নে এ বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারে।
তবে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা না থাকলেও দীনী বোনেরা পূর্ণ পর্দা ও শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে প্রচলিত সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল বা নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করবেন এবং ভবিষ্যতে মহিলাদের জন্য আলাদা মেডিক্যাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।
সুতরাং এ সংকট থেকে আমাদের দীনী বোনদেরকে রক্ষা করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের দেশের চিন্তাশীল ও দ্বীন দরদী ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার উদাত্ত আহ্বান জানাই।
আল্লাহ সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করেন এবং দ্বীনের সেবায় কাজ করা তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।

--------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

দু জন ব্যক্তি জামাআতে ছলাত পড়ার সময় ইমাম-মুক্তাদি একটু আগে-পিছে হয়ে দাঁড়াবে না কি সমান্তরাল হয়ে দাঁড়াবে?

▬▬▬▬◢✪◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: দু জন মিলে জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পার্শ্বে না কি বাম পার্শ্বে দাঁড়াবে এবং সে ক্ষেত্রে সে কি ইমামের বারাবর দাঁড়াবে না কি কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়াবে?
উত্তর:
দু জন ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। ক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদি পাশাপাশি পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়াবে। মুক্তাদি ইমাম থেকে চার আঙ্গুল বা কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়ানোর প্রচলিত রীতি সুন্নাহ পরিপন্থী।
এ মর্মে একাধিক হাদিস ও সাহাবীদের আমল তুলে ধরা হল:
◉ ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে এ মর্মে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন:
بَاب يَقُومُ عَنْ يَمِينِ الْإِمَامِ بِحِذَائِهِ سَوَاءً إِذَا كَانَا اثْنَيْنِ
পরিচ্ছেদঃ দু জন ব্যক্তি সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।
তারপর তিনি নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করেন:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ بِتُّ فِي بَيْتِ خَالَتِي مَيْمُونَةَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعِشَاءَ، ثُمَّ جَاءَ فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ ثُمَّ نَامَ، ثُمَّ قَامَ فَجِئْتُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَجَعَلَنِي عَنْ يَمِينِهِ، فَصَلَّى خَمْسَ رَكَعَاتٍ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ نَامَ حَتَّى سَمِعْتُ غَطِيطَهُ ـ أَوْ قَالَ خَطِيطَهُ ـ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ‏
ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি আমার খালা মায়মুনা রা. এর ঘরে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাকআত সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর আরও দু রাকআত সালাত আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।”
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان), পরিচ্ছেদঃ ১০/৫৭. দু’জন সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে। হাদিস নং তাওহীদ প্রকাশনী: ৬৯৭ , আধুনিক প্রকাশনী: ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৬৬৩)]
অত্র হাদিসে জানা গেলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস রা. কে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর থেকে চার আঙ্গুল বা কিছুটা পেছনে দাঁড় করান নি। আর এ কারণে ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে অনুচ্ছেদ রচনা করেে বলেছেন: “দু জন ব্যক্তি সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।” (যেমনটি উপরে আলোচনা করা হয়েছে)।
◉ অন্য হাদিসে এসেছে:
عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِالْهَاجِرَةِ فَوَجَدْتُهُ يُسَبِّحُ فَقُمْتُ وَرَاءَهُ فَقَرَّبَنِي حَتَّى جَعَلَنِي حِذَاءَهُ عَنْ يَمِينِهِ فَلَمَّا جَاءَ يَرْفَا تَأَخَّرْتُ فَصَفَفْنَا وَرَاءَهُ.
উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব রা. এর নিকট প্রবেশ করলাম। সময়টা ছিল গরম। আমি তখন তাঁকে নফল সালাত রত (সালাতুয যোহা বা চাশতের সালাত) অবস্থায় পেলাম। তাই আমি তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি আমাকে কাছে আনলেন এবং তাঁর ডান পার্শ্বে তাঁর বরাবর আমাকে দাঁড় করালেন। তারপর ইয়ারফা (উমর রা. এর খাদেম) আসলে আমি পেছনে সরে আসলাম। তারপর আমরা দু’জনেই তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম।
[মুআত্তা মালিক: পরিচ্ছদ-৯, চাশতের সময় বিভিন্ন নফল নামাযের বর্ণনা, হাদিস নং ৩৪৮, সনদ সহিহ]
◉ আব্দুর রাযযাক তার মুসান্নাফ হাদিসগ্রন্থে ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেন,
قلت لعطاء: الرجل يصلي مع الرجل، أين يكون منه؟ قال: إلى شقه الأيمن، قلت: أيحاذي به حتى يصف معه لا يفوت أحدهما الآخر؟ قال: نعم، قلت: أتحب أن يساويه حتى لا تكون بينهما فرجة؟ قال: نعم
তিনি বললেন, আমি আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, একজন ব্যক্তি আরেকজনের সাথে সালাত আদায় করলে সে কোথায় অবস্থান করবে?
তিনি বললেন: তার ডান পাশে।
আমি বললাম: সে কি তার সাথে এমন সমন্তরালভাবে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়াবে যে, একজন অপরজন থেকে দূরে থাকবে না?
তিনি বললেন: হ্যাঁ।
আমি বললাম: আপনি এটা পছন্দ করেন যে, সে তার এমন বরাবর দাঁড়াবে যে, তাদের মাঝ কোনো ফাঁক থাকবে না?
তিনি বললেন: হ্যাঁ।
◉ ইমাম মালিক তার মুআত্তা গ্রন্থে (১/১৫৪) নাফে রা. থেকে বর্ণনা করেন:
قمت وراء عبد الله بن عمر في صلاة من الصلوات وليس معه أحد غيري، فخالف عبد الله بيده، فجعلني حذاءه
তিনি বলেন, আমি এক নামাযে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর পেছনে দাঁড়ালাম। তার সাথে আমি ছাড়া অন্য কেউ ছিলো। তখন তিনি পেছনে হাত নিয়ে আমাকে টেনে তার বরবার দাঁড় করালেন।”
এ ছাড়া এ সম্পর্কে আরও অনেক আসার (সাহাবীদের বক্তব্য ও আমল) বিদ্যমান রয়েছে আল হামদুলিল্লাহ।
▣ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হাদিসে কাতার সোজা করার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে এবং কাতারে বক্রতা থাকার ব্যাপারে সতর্কতা এসেছে। যেমন:
◉ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ
“তোমরা কাতার সোজা কর। কেননা কাতার সোজা করা সালাত প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত।” [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৭, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪]
◉ তিনি আরও বলেন:
اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ
“তোমরা কাতার সোজা কর, বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ো না। তাতে তোমাদের অন্তরগুলো বিভক্ত হয়ে যাবে।”
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৮, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪]
এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং ইমাম ও মুক্তাদি দু জন হলেও যেহেতু এটি একটি কাতার সেহেতু মুক্তাদি এভাবে ইমাম থেকে একটু পেছনে সরে দাঁড়ালে কাতার সোজা হল না। সে কারণে তা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ হবে।
সঠিক পদ্ধতি হল, দু জন ব্যক্তি সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদি সমান্তরালভাবে পাশাপাশি দণ্ডায়মান হবে। তবে মুক্তাদি সতর্ক থাকবে যেন, সে ইচ্ছাকৃত ভাবে ইমাম থেকে কিছুটা সামনে চলে না যায়। কেননা ইচ্ছাকৃত ইমামের সামনে চলে গেলে মুক্তাদির সালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু বেখেয়ালে সামনে চলে গেলে তৎক্ষণাৎ পেছনে সরে আসবে। এতে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬💠🌀💠 ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।

মহিলাদের জুমার সালাতের বিধি-বিধান ও পদ্ধতি


▬▬▬▬◢✪◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: মহিলাদের জুমার সালাতের সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর:
মহিলাদের জুমার সালাত সংক্রান্ত নিময়-পদ্ধতি ও এ সংক্রান্ত মাসায়েলগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল:
◉ ক. জুমার সালাত কেবল পুরুষদের জন্য ফরয; মহিলাদের জন্য নয়। সুতরাং মহিলারা বাড়িতে যথা সময়ে নিয়ম মাফিক যোহরের সালাত আদায় করবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তারিক ইবনে শিহাব রা. থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‏ الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلاَّ أَرْبَعَةً عَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَوْ صَبِيٌّ أَوْ مَرِيضٌ ‏
“জুমুআর নামায প্রত্যেক মুসলমানের উপর জামাআতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য/ফরয)। কিন্তু তা চার প্রকার লোকের উপর ওয়াজিব নয়ঃ ক্রীতদাস, মহিলা, শিশু ও রুগ্ন ব্যক্তি।” [সুনান আবু দাউদ (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة), হা/১০৬৭। হাদিসটিকে ইমাম আলাবানি সহীহুল জামে কিতাবে উল্লেখ করেছেন। হা/৩১১১]
◉ খ. কোন মহিলা যদি বাড়ির সন্নিকটে অবস্থিত মহিলাদের জন্য আলাদা নিরাপদ সালাতের ব্যবস্থা আছে এমন কনো মসজিদে যায় অথবা স্বামী বা মাহরাম পুরুষ (তথা পিতা, ভাই, সন্তান, দাদা, চাচা ইত্যাদি) এর সাথে জুমা সমজিদে যায় তাহলে সেখানে পুরুষদের সাথে তাদের মতই জুমার সালাত কায়েম করবে। যদিও মহিলাদের জন্য মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে সালাত পড়া অধিক উত্তম।
মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে একটি হল:
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَمْنَعُوْا نِسَاءَكُمُ الْـمَسَاجِدَ ، وَبُيُوْتُهُنَّ خَيْرٌ لَـهُنَّ
‘‘তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম’’। [সহিহ আবু দাউদ-শাইখ আলবানী, হা/৫৬৭]
আরেকটি হাদিস: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে।তিনি বলেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَمْنَعُوْا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ إِذَا اسْتَأْذَنَّكُمْ إِلَيْهَا
‘‘তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না যদি তারা তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়’’। [মুসলিম, হাদিস নং ৪৪২]
◉ গ. তারা মসজিদে গেলে অবশ্যই পূর্ণ পর্দা সহকারে যাবে, পরপুরুষদের থেকে দূরে অবস্থান করবে এবং আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لاَ تَمْنَعُوْا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ ، وَلَكِنْ لِيَخْرُجْنَ وَهُنَّ تَفِلاَتٌ
‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা যেন ঘর থেকে বের হয় কোন রকম সাজ-সজ্জা ও সুবাস-সুগন্ধ না লাগিয়ে’’। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৫; আহমদ: (২/৪৩৮),সহীহুল জামে-শাইখ আলবানী, হা/৭৪৫৭]
◉ ঘ. বাড়িতে কেবল মহিলাদের নিয়ে আলাদাভাবে জুমার সালাত অথবা এককভাবে জুমার সালাত বৈধ নয়।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়ায় বলা হয়েছে:
" إذا صلت المرأة الجمعة مع إمام الجمعة كَفَتهَا عن الظهر ، فلا يجوز لها أن تصليَ ظهر ذلك اليوم ، أما إن صلت وحدها فليس لها أن تصلي إلا ظهرا ، وليس لها أن تصلي جمعة " انتهى
“যদি কোন মহিলা ইমামের সাথে জুমার সালাত আদায় করে তাহলে তা যোহর সালাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (অর্থাৎ পরে পুনরায় তার যোহর সালাত পড়ার প্রয়োজন নাই)। আর সে যদি একাকী সালাত পড়ে তাহলে সে কেবল যোহর পড়বে। এককভাবে তার জন্য জুমা পড়া বৈধ নয়।” (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমা/৭৩৩৭)
আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬◢✪◣▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কে ৬টি মারাত্মক অভিযোগ এবং সেগুলোর জবাব

ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কে ৬টি মারাত্মক অভিযোগ এবং সেগুলোর জবাব
অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
▬▬▬▬◢✪◣▬▬▬▬
নিম্নে ইসলাম ও মুসলিমদের সম্পর্কে নাস্তিক ও অমুসলিমদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ছয়টি মারাত্মক ও স্পর্শকাতর অভিযোগ এবং সেগুলোর জবাব তুলে ধরা হল:
১মঃ মুসলিমরা জঙ্গি, সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, সাম্প্রদায়িক!
উত্তর:
অমুসলিমদের নিকট ইসলাম সম্পর্কে এটি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক ভুল ধারণা। এটি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচারের ফলাফল। কোন অস্ত্রধারী যখন ইহুদীবাদের নামে মসজিদে আক্রমণ চালায়, যখন কোন খৃষ্টান ক্যাথলিক অস্ত্রধারী গ্রুপ আয়ারল্যান্ডের শহরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, যখন খৃষ্টান ধর্মের অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের সার্বিয় হিংস্র মিলেশিয়েরা বসনিয় নিরপরাধ মুসলিম নাগরিকদের উপর বর্বর হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট-তরাজ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তখন এসকল জঘন্য কার্যক্রমকে তো সে ধর্মের প্রতিটি অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় না বা সে ধর্মকেও দায়ী করা হয় না? অথচ অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য যে বর্তমানে পৃথিবীর কোথায় হিংসাত্মক কোন ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ইত্যাদি বলে প্রচার মাধ্যমগুলো দোষারোপ করতে শুরু করে।
বর্তমানে যেসব রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সেগুলো হয়ত কোন কোনটি ইসলামী ভিত্তির উপর আদৌ প্রতিষ্ঠিত নয়। বরং সে সকল দেশের একনায়ক রাষ্ট্রশক্তি এবং রাজনৈতিক নেতারা ইসলামকে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছে। সুতরাং একজন নীতিমান মানুষের উচিৎ হবে, ইসলামের মূল উৎস থেকে ইসলামকে বিশ্লেষণ করা। তাকে পার্থক্য করতে হবে, ইসলাম সম্পর্কে বর্তমানে মিডিয়াতে কি বলা হচ্ছে আর কুরআন ও হাদিসে ইসলামের মূল শিক্ষা কী দেয়া হয়েছে?
ইসলাম মানে আল্লাহর আনুগত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করা। শব্দগত বিশ্লেষণ করলে মূলত ইসলাম মানে শান্তি। একজন মানুষ নিজের জীবনে ইসলামকে বাস্তবায়ন করলে আত্মিকভাবে খুঁজে পায় পরম শান্তি ও অনাবিল তৃপ্তি। ইসলাম সর্বদা শান্তির পক্ষে; সন্ত্রাসের বিপক্ষে।
বর্তমানে পাশ্চাত্য সমাজে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের প্রভাব নেই বললেই চলে। যার কারণে তারা ইসলামকে তাদের ধর্মের মতই একটি প্রত্যাখ্যাত বা বিতাড়িত ধর্ম মনে করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। এতে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি সমস্যার জন্য রয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা এবং সর্বোত্তম সমাধান।
ইসলামে মানুষের আত্মরক্ষা করার বৈধতা রয়েছে। রয়েছে দ্বীন রক্ষা করার বৈধতা। ইসলামে রয়েছে বিনা অপরাধে যে সকল মানুষ নিজের ঘর-বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছে সে সকল দুর্বল মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহবান। ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে সুস্পষ্ট যুদ্ধ নীতি। যেখানে বলা হয়েছে, যুদ্ধাবস্থায় সাধারণ মানুষকে হত্যা করা যাবে না। এমনকি তাদেরকে ন্যূনতম কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্ষেত-খামার, গাছ, ফসলাদি, পশু-পাখি ইত্যাদি ধ্বংস করা যাবেনা।
মোটকথা, নিরপরাধ মানুষকে কোন অবস্থায় হত্যা করতে ইসলাম অনুমতি দেয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আর তোমরা আল্লাহর পথে ঐ সমস্ত লোকদের সাথে যুদ্ধ কর যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসে। এবং সীমালঙ্ঘন কর না। আল্লাহ তো সীমালঙ্ঘন কারীদেরকে ভালবাসেন না।” (সূরা বাকারাঃ ১৯০)
ইসলামে যুদ্ধ হল সর্বশেষ পদক্ষেপ। এবং তা ইসলামী শরীয়ত প্রদত্ত এক অলঙ্ঘনীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
জিহাদ শব্দের অর্থ হল, সাধনা করা বা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জিহাদের দুটি অর্থ রয়েছে। একটি হল, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে লড়াই করা । অপরটি হল, মানুষের রিপু, কু প্রবৃত্তি, স্বার্থপরতা, হিংসা, অহংবোধ, নিচুটা ইত্যাদি অন্তরের গোপন শত্রুদের সাথে নিরন্তর সংঘাত।
----------------------------
❖ ২য়ঃ ইসলাম নারীদের প্রতি অত্যাচার করে!
উত্তর:
‘ইসলাম নারীদের প্রতি অত্যাচার করে’ ইসলামের প্রতি এ জাতীয় অপবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। বরং ইসলাম এসেছে নারীদেরকে অত্যাচারের শিকল থেকে মুক্ত করার জন্য । ইসলাম এসেছে নারীর মর্যাদা এবং সম্ভ্রমকে রক্ষা করার জন্য।
পর্দা করার নাম অত্যাচার নয়। বরং পর্দা হচ্ছে নারীর মর্যাদা এবং সম্ভ্রম রক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
নারী ও পুরুষের প্রকৃতি এবং স্বভাবকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। নারী ও পুরুষের স্বভাব ও প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে প্রত্যেককে প্রদান করা হয়েছে আলাদা আলাদা দায়িত্ব। সন্তান গর্ভে ধারণ, প্রসব, দুগ্ধ দান, প্রতিপালন ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতে হয় নারীকে। প্রতিমাসে নির্দিষ্ট দিনে ঋতুস্রাব, রক্তস্রাব ইত্যাদি শুধু মহিলাদের হয়। পক্ষান্তরে পুরুষ এসব থেকে মুক্ত। ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে নারী ও পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র এবং দায়িত্ব আলাদা করা হয়েছে। সুতরাং নারী বাড়িতে থেকে বাড়ির যাবতীয় দায়িত্ব পালন, সন্তান প্রতিপালন ইত্যাদি করার নাম মহিলাদেরকে ‘জেলখানায় বন্দি’ রাখা নয়। বরং এটা তার স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এক বিশাল দায়িত্ব। তাছাড়া পুরুষ থেকে পৃথক শুধু নারী অঙ্গনে নারীরা কাজ করবে, অর্থ উপার্জন করবে তাতে ইসলাম বাঁধা প্রদান করেনি।
ইসলাম নারী-পুরুষের অধিকারকে সমানভাবে সংরক্ষণ করেছে। যা কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। ইসলাম বলেছে, একজন নারী চাই বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক তার রয়েছে ব্যক্তিগত অধিকার। সে তার নিজস্ব সম্পদকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। তার রয়েছে ব্যক্তিগত মতামত, ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশের অধিকার।
একজন মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিবাহের আগে অবশ্যই তার অনুমতি নিতে হবে। তার অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ বৈধ হবে না। তবে অপ্রাপ্ত অবস্থায় মেয়ের অভিভাবক মেয়ের বিয়ে দিলে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিয়ে রাখা না রাখা তার ইচ্ছাধীন। ইচ্ছে করলে সে বিয়ে অটুট রাখতে পারে ইচ্ছে করলে তা ভঙ্গ ও করতে পারে।
বিবাহের পর মিলমিশ না হলে স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করার বা না করাও তার ইচ্ছাধীন। সে ইচ্ছা করলে ‘খোলা তালাক’ নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।
বিবাহের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে সে ‘মোহর’ পাওয়ার হকদার। এ মোহর সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে সর্বোত্তম আচরণ করার জন্য স্বামীকে নির্দেশ প্রদান করেছে ইসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” তিনি আরও বলেছেন, “তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর।”
মা হিসেবে ইসলাম নারীর যে মর্যাদা দিয়েছে তা নজির বিহীন। ইসলাম বলেছে, “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল,
আমার সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বেশী হকদারকে?
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
প্রশ্ন করা হল: তার পর কে?
তিনি বললেন: “তোমার মা।”
আবার প্রশ্ন করা হল: তারপর কে?
তিনি বললেন, “তোমার মা। এরপর তোমার পিতা।”
পিতার তুলনায় এখানে মাকে তিনগুণ অধিকার দেয়া হয়েছে।
ইসলামে উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত ন্যায় ও যুক্তি সংগত।
যে বিষয়টি নিয়ে তথাকথিত নারীবাদীরা বুঝে-না বুঝে চেঁচামেচি করছে তা হল, ইসলাম বলেছে, ‘উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর দ্বিগুণ সম্পদের অধিকারী হবে।’
দেখা যাক ইসলাম কি এ আইনের মাধ্যমে সত্যি কি নারীদের প্রতি অত্যাচার করেছে? দেখা যাবে, না, বরং এটি একটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত আইন। তা কয়েকটি কারণে। যেমন:
● ১) ইসলামী আইনে মেয়ে একদিকে পিতা মৃত্যু বরণ করার পর ছেলের তুলনায় অর্ধেক সম্পদের অধিকারী হবে ।
● ২) অন্যদিকে স্বামী মৃত্যু বরণ করলে স্ত্রী তার পরিত্যক্ত সম্পদের অধিকারী হবে। (সন্তান থাকলে ৮ ভাগের ১ ভাগ আর সন্তান না থাকলে ৪ ভাগের ১ ভাগ)।
● ৩) বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া অপরিহার্য করেছে ইসলাম। এ মোহরানা তার অধিকার।
● ৪) স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সহ পরিবারের যাবতীয় খরচ পুরুষের জন্য আবশ্যক। মহিলাকে কোন খরচ দিতে বাধ্য করা হয় নি।
● ৫) তাছাড়া, স্বামীর বাড়িতে কোন সমস্যা হলে পিতা যদি মারা যাওয়ার পর সাধারণত বোন তার ভাইয়ের বাড়িতেই আশ্রয় নেয়। ভাইকে অনেক সময় বোনের সমস্যায় এগিয়ে আসতে হয় এবং ঝামেলা পোহাতে হয়। ইত্যাদি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে প্রতিভাত হবে, একজন নারীর তুলনায় পুরুষের সম্পদের প্রয়োজন অনেক বেশী। তাই ইসলাম সম্পদ বণ্টনের যে আইন প্রণয়ন করেছে তা অত্যন্ত বিবেক সঙ্গত এবং যুক্তি যোগ্য।
● ৬) সবচেয়ে বড় কথা হল, যে মহান আল্লাহ এই বিশাল ভূমণ্ডল-নভোমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং তা পরিচালনা করছেন তার দেয়া আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করা তো মুসলিম হিসেবে সকলের জন্য অপরিহার্য। আর যে সকল বিধর্মী ইসলামকেই মানে না, আল্লাহ ও রসূলকে বিশ্বাস করে না তাদের তো শুধু এ একটি আইনই নয় বরং গোটা ইসলামই তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য!
মোটকথা, যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করতে চায় সে আল্লাহর আইনকে অবশ্যই ন্যায় সঙ্গত মনে করবে এবং তাঁর দেয়া আইন কানুনের কাছে মাথা নত করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশ মেনে চলবে তাহলেই এ দুনিয়াতে পাবে শান্তি এবং পরকালে পাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
আল্লাহ যেন আমাদেরকে সে পথেরই অনুসারী বানান। আমীন॥
-------------------------------------
❖ ৩য়ঃ ইসলাম তলোয়ারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর মুসলিমগণ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মকে সহ্য করে না!
উত্তর:
বিভিন্ন সামাজিক গ্রন্থে যে দৃশ্যটি দেখানো হয় তা হল, একজন ঘোড় সোওয়ার। যার এক হাতে রয়েছে উন্মুক্ত তলোয়ার আরেক হাতে কুরআন। সে জোর করে মানুষকে ইসলামে দীক্ষিত করার জন্য যুদ্ধে ছুটে যাচ্ছে। মূলত: এ দৃশ্যটি ইসলামের প্রকৃত রূপ নয়। ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টির জন্য এ জাতীয় একটি কল্পিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বরং ইসলাম কখনো অন্য কোন ধর্মাবলম্বীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করতে বলেনি। বরং সকল ধর্মকে সম্মান করতে শিক্ষা দিয়েছে। সকল ধর্মাবলম্বীদেরকে প্রদান করেছে ধর্ম গ্রহণের স্বাধীনতা। ইরশাদ হচ্ছে: “ দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেনি তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়-পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মুমতাহিনা: ৮)
ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য হল:
“ দ্বীনের ক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তী করা যাবে না। হেদায়েত এবং গোমরাহি স্পষ্ট হয়ে গেছে। যে ব্যক্তি ‘তাগুত’ কে অস্বীকার করল সে এমন ‘মজবুত হাতল’ ধরল যা কখনো বিচ্ছিন্ন হবার নয়।” (সূরা বাকারা: ২৫৬)
ইসলামের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল, ইসলামী সমাজে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করা। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন মুসলিম দেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়গুলোকে সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছিল এবং আজ পর্যন্ত রয়েছে। ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস পূর্ণ।
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ৬৩৪ হিজরিতে বিজয়ী বেশে যখন বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করলেন তখন তিনি সেখানে অবস্থানরত প্রতিটি মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দান করেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। আরও ঘোষণা করলেন, প্রতিটি মানুষের জান-মাল নিরাপদ এবং তাদের উপাসনালয়গুলোকে রক্ষা করার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অনুরূপভাবে ইসলামী আইনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করা অনুমোদিত। যেখানে সংখ্যালঘুদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী পারষ্পারিক বিষয়াদির নিষ্পত্তি করা হবে।
মোটকথা, ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের জান-মালকে পবিত্র আমানত হিসেবে গণ্য করা হয়। চাই সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক। ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। কুরআন বলে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নাই; সকল মানুষ সমান। ইরশাদ হচ্ছে:
“হে মানুষগণ, আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মাঝে আল্লাহর নিকট সেই সবচেয়ে বেশী সম্মানিত যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহ ভীরু।” (সূরা হুজুরাত: ৪৯)
------------------------------
❖ ৪র্থঃ ইসলাম শুধু আরবদের জন্য!
উত্তর:
কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী মানুষকে বলতে শোনা যায়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু আরবের অধিবাসী ছিলেন তাই ইসলাম শুধু আরবদের জন্য। তাই তারা ‘আরবের ইসলাম’, ‘মুহাম্মদের ইসলাম’ ইত্যাদি কথা বলে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ায়। কিন্তু এ ধারণা কি ঠিক? উত্তর হল, না। অবশ্যই ঠিক নয়। কারণ, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমগ্র বিশ্ববাসীর নবী। সমগ্র মানবতার নবী। কুরআনে বলা হয়েছে: “আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবতার জন্য সতর্ক কারী এবং সুসংবাদ দানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।” (সূরা সাবাঃ ২৮)
অতএব, ‘ইসলাম শুধু আরবদের জন্য সীমাবদ্ধ’ এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়।
এর প্রমাণ আমরা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের পরিসংখ্যান থেকে পেতে পারি। যেমন, সারা বিশ্বে বর্তমান মুসলিম জন সংখ্যা ১.৪ বিলিয়ন (১৪০ কোটি)। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি চার জনে ১ জন মুসলমান। ইসলাম বর্তমানে উত্তর আমেরিকা সহ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশী ক্রমবর্ধমান ধর্ম। ইসলাম হল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা জাতি-গোষ্ঠী, বর্ণ-গোত্র ও বিভিন্ন সংস্কৃতির বিরাট জনগোষ্ঠীর ধর্ম জীবন ব্যবস্থা। ফিলিপাইন থেকে নাইজেরিয়া পর্যন্ত মুসলমানদেরকে একত্রিত রেখেছে এক অভিন্ন বিশ্বাস এবং চেতনা। আরব বিশ্বে বসবাস করে মাত্র ১৮% মুসলমান। সর্ব বৃহৎ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হল ইন্দোনেশিয়া। মুসলমানদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০% মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশে বাস করে। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে বাস করে প্রায় ২০%। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৭%। আরব বিশ্বে ১৮%। চিন এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১০%। তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যের নন আরব দেশগুলোতে ১০%। এ ছাড়াও পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তে সংখ্যালঘু হিসেবে মুসলিমদের বসবাস রয়েছে। তম্মধ্যে ল্যাটিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি। তবে রাশিয়া এবং রাশিয়া থেকে বিভক্ত প্রজাতন্ত্রগুলো, ভারত এবং মধ্য আফ্রিকায় বিরাট অংকে মুসলমানদের অবস্থান। আর শুধু আমেরিকাতেই রয়েছে প্রায় ৮ মিলিয়ন মুসলমান।
-------------------------
❖ ৫মঃ ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে নারীদেরকে অপমানিত করেছে!
উত্তর:
ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থার নাম যা সকল যুগের জন্য সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য। বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সাথে ইসলাম সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিস্থিতির কারণে মানুষ ২য় বিবাহ করতে বাধ্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার অধিকার সংরক্ষণ করা আবশ্যক।
তাই ইসলাম ২য় বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়েছে যে, সকল স্ত্রীর সাথে ন্যায়পরায়ণতা সুলভ আচরণ করতে হবে। কোন মহিলাকে এ বিয়েতে বাধ্য করা যাবে না এবং এ বিয়েতে ২য় স্ত্রী শর্তারোপ করতে পারে।
ইসলামে একাধিক বিয়ে করা আবশ্যক করা হয়নি, উত্তমও বলা হয়নি। বরং তা শুধু বৈধ বলা হয়েছে।
একজন ব্যক্তি চারটি বিয়ে করতে পারে তবে শর্ত হচ্ছে, তাকে শরীয়ত নির্ধারিত অলঙ্ঘনীয় শর্তাবলী অবশ্যই পূরণ করতে সক্ষম হতে হবে। সেগুলো হল, ন্যায়-পরায়নতা বজায় রাখা, প্রত্যেক স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হওয়া, ভরণ-পোষণ সহ জীবন-যাপনের উপকরণের ব্যবস্থা করা।
মোটকথা, শুধু প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই ইসলাম একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। আর তাও শর্ত সাপেক্ষে। সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের চাহিদা এবং বাস্তব প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে ইসলাম এ অনুমতি প্রদান করেছে।
সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, যারা ইসলামের এ বিধানকে অনৈতিক এবং এতে নারীদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে তারাই যখন নিজের স্ত্রী বাদ দিয়ে অন্য মহিলাকে ‘র্গাল ফ্রেন্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে তখন তার এটাকে অনৈতিক বলতে নারাজ! তারাই নারীদেরক পণ্যের মত পুরুষের উপভোগের বস্তুতে পরিণত করেছে। নারীর প্রতি এর থেকে চরম অপমান আর কী হতে পারে? প্রকৃতপক্ষে এই আইনের মাধ্যমে ইসলাম তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে লাঞ্ছনা ও অপমানের হাত থেকে উদ্ধার করে বৈধ পন্থায় সম্মানের সাথে ঘরে স্থান দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
তাই পরিশেষে বলব, একাধিক বিবাহের বৈধতা দিয়ে ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজন, প্রকৃতিগত চাহিদা এবং নানা সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথকে উন্মুক্ত করেছে। নারীকে পরপুরুষের ভোগ্য বস্তু থেকে উদ্ধার করে তাকে মর্যাদা এবং সম্মানের আসনে আসীন করেছে।
তবে প্রয়োজন, ইসলামী আইনের ব্যাপারে মুসলমানদের গণসচেতনতা এবং সঠিকভাবে তা ব্যবহার করা। তাহলেই যে উদ্দেশ্যে ইসলাম এ আইনকে মানবতার কল্যাণে দান করেছে সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন॥
-------------------------------
❖ ৬ষ্ঠঃ মুসলমানেরা অশিক্ষিত এবং পশ্চাৎপদ!
উত্তর:
ইসলাম এত দ্রুত বিকাশ লাভ করার অন্যতম কারণ হল, ইসলাম উদারতা, সহজ-সরল রীতি ও আদর্শের দিকে আহবান জানায়। ইসলাম মানুষকে তার বিবেক ও জ্ঞানকে কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেছে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি প্রথম বাণী হল, “পড়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।” এই নির্দেশকে পালন করতে গিয়ে অতি অল্প সময়ে বিরাট এক সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। মুসলমানগণ দিকে দিকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিল। প্রতিষ্ঠিত হল বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন আবিষ্কার, চিকিৎসা, অংক, ফিজিক্স, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল, নির্মাণ শিল্প, সাহিত্য ও ইতিহাসে মুসলমানগণ পৃথিবীর নেতৃত্ব প্রদান করেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিভিন্ন শাখায় তাদের রচিত গ্রন্থগুলো শত শত বছর ধরে ইউরোপের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান-গবেষণার মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। মধ্যযুগে মুসলিম মনিষীদের আবিষ্কৃত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইউরোপে প্রবেশ করে। তন্মধ্যে জ্যামিতি, আরবি সংখ্যা, শূন্যের ধারণা (যাকে অংকের প্রাণ বলা হয়) ইত্যাদি। অনুরূপভাবে আধুনিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও মুসলমানগণ ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে যার হাত ধরে আজকের ইউরোপ নব নব আবিষ্কার আর বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। সে সব আবিষ্কারের অন্যতম হল, স্টার ল্যাব, উচ্চতা পরিমাপক যন্ত্র, নৌপথের মানচিত্র ইত্যাদি।
▬▬▬▬◢✪◣▬▬▬▬
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

ছলাতুয যাওয়াল তথা সূর্য ঢলার ছলাত

সালাতুয যাওয়াল তথা সূর্য ঢলার সালাত:
যে নামটি অধিকাংশ মানুষের কাছে অপরিচিত!
▬▬▬▬◢◣▬▬▬▬
এ কথা অনস্বীকার্য যে, সালাতুয যাওয়াল তথা সূর্য ঢলার সালাত নামে কোন সালাতের অস্তিত্ব আছে এ বিষয়টি অধিকাংশ মানুষের কাছে অপরিচিত। অথচ
রাসূল সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ঠিক মাথা বরাবর থেকে পশ্চিম দিগন্তে একটু ঢলে গেলে নিয়মিতভাবে চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। এ সময় আসমানের দরজাগুলো খোলা হয় এবং বান্দাদের আমলগুলো উপরে উত্তোলন করা হয়।
হাদিসের কিতাবগুলোতে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত হাদিস বর্ণিত হয়েছে আছে আর মুহাদ্দিস ও ফকিহগণ সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
নিম্নে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
🔹 ১ম হাদিস:
عَنْ أَبيِْ أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيْ رَضِيَ اللهُ عَنهُ : أُنَّ النَّبِيَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كاَنَ يُدْمِنُ أَرْبَعُ رَكْعَاتٍ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّكَ تُدْمِنُ هَذِهِ الأْرْبَعَ رَكَعَاتٍ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ ؟ فَقَالَ إِنَّ أَبْوَابِ السَّمَاءِ تُفْتَحُ عِنْدَ زَوَالِ الشَّمْسِ فَلاَ تُرَتِّجُ حَتَّى يُصَلِّى الظُّهْرَ فَأُحِبُّ أَنْ يَّصْعَدَ لِيْ فِيْ تِلْكَ السَّاعَةِ خَيْرٌ قُلْتُ : أَفِيْ كُلِّهِنَّ قِرَاءَةٌ ؟ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ : هَلْ فِيْهِنَّ تَسْلِيْمٌ فَاصِلٌ ؟ قَالَ لاَ
আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিনিয়ত সূর্য ঢলার সময় চার রাকআত নামায পড়তেন।
একদা আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি সূর্য ঢলার সময় এই চার রাকআত প্রতিনিয়তই পড়ছেন?’
তিনি বললেন: “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং যোহরের নামায না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। অতএব আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আকাশে আল্লাহর নিকট) উত্তোলন করা হোক।”
আমি বললাম: এ সালাতের প্রত্যেক রাকআতেই কি কিরাআত আছে?’
তিনি বললেন: “হ্যাঁ।”
আমি বললাম: ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’
তিনি বললেন: “না।” (শাইখ আলবানী রচিত মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়াহ, হা/২৪৯, তিনি এটিকে সহিহ বলেছেন)
🔹 ২য় হাদিস:
عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ السَّائِبِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كَانَ يُصَلِّي أَرْبَعاً بَعْدَ أَنْ تَزُولَ الشَّمْسُ قَبْلَ الظُّهْرِ وَقَالَ إِنَّهَا سَاعَةٌ تُفْتَحُ فِيهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ فَأُحِبُّ أَنْ يَصْعَدَ لِي فِيهَا عَمَلٌ صَالِحٌ رواه التِّرمِذِيُّ وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ
আব্দুল্লাহ ইবনুস সায়েব রা. হতে বর্ণিত, সূর্য (পশ্চিম দিগন্তে) ঢলে যাবার পর, যোহরের ফরযের পূর্বে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার রাকআত সালাত পড়তেন। আর বলতেন, “এটা এমন সময়, যখন আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তাই আমার পছন্দ যে, সে সময়েই আমার সৎকর্ম ঊর্ধ্বে উঠুক।” (তিরমিযী ৪৭৮, হাসান, সহিহুত তারগিব হা/ ৫৮৭)
🔹 ৩য় হাদিস:
عَن أَبِى أَيُّوبَ عَن النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ أَرْبَعٌ قَبْلَ الظُّهْرِ لَيْسَ فِيهِنَّ تَسْلِيمٌ تُفْتَحُ لَهُنَّ أَبْوَابُ السَّمَاءِ
আবু আইয়ুব রা. হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যোহরের পূর্বে চার রাকআত-যার মাঝে কোন সালাম নেই-তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়।” (আবু দাউদ ১২৭০, ইবনে মাজাহ ১১৫৭, ইবনে খুযাইমা ১২১৪, সহীহুল জামে’ ৮৮৫নং)
🔹 ৪র্থ হাদিস:
أنهُ كان يُصلِّي أربعَ ركعاتٍ بعدَ الزوالِ لا يُسلِّمُ إلا في آخرِهنَّ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ঢলার পর চার রাকআত পড়তেন। এ ক্ষেত্রে তিনি চার রাকআত শেষ করার পূর্বে সালাম ফেরাতেন না।" [সিলসিলা সহিহাহ ৭/১১৯৭, শাইখ আলবানী বলেন, এর সনদ সহিহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী جيد (ভালো)। এছাড়াও তিনি তাখরীজু মিশকাতিল মাসাবিহ গ্রন্থে এটিকে সহিহ বলেছেন। হা/১২২৬]
উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে স্পষ্ট যে, এ চার রাকআত সালাতে দু রাকআত পড়ে সালাম ফেরানো যাবে না বরং চার রাকআত শেষ করে সালাম ফিরাতে হবে।
🔹 ৫ম হাদিস:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أربعُ ركعاتٍ قبلَ الظهرِ يعْدِلْنَ بصلاةِ السَّحَرِ
"যোহরের পূর্বে চার রাকআত সালাত ভোররাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) সমতুল্য।" (সহিহুল জামে, হা/৮৮২)
এই চার রাকআত কোন সালাত?
এখন এই চার রাকআত কোন সালাত? এগুলো কি যোহরের পূর্বের চার রাকআত সুন্নতে রাতেবা (নিয়মিত সুন্নত) না কি তা স্বতন্ত্র সালাত? এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমগণের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। কতিপয় আলেম বলেন, এই চার রাকআত মূলত: যোহরের চার রাকআত সুন্নত সালাত আর কতিপয় বিদ্বানের মতে, এটি যোহরের পূর্বের চার রাকআত সুন্নত নয় বরং এটি স্বতন্ত্র সালাত।


অজ্ঞতাবশত দুধবোন বিয়ে করলে এরপরে করণীয় কি?

এক মেয়েকে বিয়ে করার পর একটি বাচ্চাও ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারপর জানা গেছে সে তার দুধবোন! এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি?
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমার পরিচিত এক ভাইয়ের দাম্পত্য জীবন আজ আট বছর প্রায়। তার স্ত্রী সম্পর্কে আপন খালাতো বোন। তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে জানা গেছে যে, বিশেষ প্রয়োজনে বা নিরুপায় হয়ে আমার সেই ভাইয়ের মা’ র দুগ্ধ পান করেছিলো তার উক্ত খালাতো বোন বর্তমানে যে তার স্ত্রী। তাদের বিয়ের সময় অভিভাবকদের অজ্ঞতা হোক বা ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবের কারণেই হোক বিষয়টি তখন দৃষ্টিগোচর হয় নি। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কী বলে? পুনরায় উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তাই এক্ষেত্রে ইসলামের শরিয়ত অনুযায়ী সঠিক করণীয় বলে দিলে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো।
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে দুধ ভাই-বোনের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা যে সকল মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধন হারাম করেছেন সেগুলোর মধ্য একজন হল, দুধবোন। যেমন: আল্লাহ বলেন,
وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ
"(তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের সে মা’ দেরকে যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে (দুধ মাগণ) এবং তোমাদের দুধ বোনদেরকে।" (সূরা নিসা: ২৩)
এ ব্যাপারে একাধিক সহিহ হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে।
সুতরাং যদি কোন পুরুষ এবং নারী নির্দিষ্ট কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে একই মায়ের ‘দুধ পান’ করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম।
সম্মানিত ফকিহগণ উল্লেখ করেছেন যে, রাযআত বা দুগ্ধ পান এর কারণে বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। সেগুলো হল:
● ক. দু বছর বয়সের মধ্যে শিশুর দুধ পান করা।
● খ. কমপক্ষে পাঁচ বার তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করা।
● গ. পাঁচ বার দুধ পান করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া।
● ঘ. দুধ শিশুর পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছা।
● ঙ. এবং এ বিষয়ে কমপক্ষে একজন বিশ্বস্ত মহিলা সাক্ষ্য প্রদান করা। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাদা একটি পোস্ট দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ)
.
যদি উপরোক্ত শর্তাবলী অনুযায়ী কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে রাযআত বা দুধ পান জনিত কারণে মাহরামিয়াত সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ উক্ত শিশুর সাথে ওই মহিলা ও তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু নিজের জন্মদাতা পিতামাতার অনুরূপ এবং তাদের সন্তানাদির সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু জন্মসূত্রের ভাই-বোনের অনুরূপ। অর্থাৎ তাদের মাঝে পর্দা করা আবশ্যক নয় এবং তাদের মাঝে চিরতরে বিবাহ বন্ধন হারাম। (এতে সম্পদের উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হবে না।)
কিন্তু যদি কোনো পুরুষ ও নারীর মাঝে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার পরে জানা যায় যে, তারা শিশুকালে একই মায়ের দুধ পান করেছিলো (এবং তা যথাযথ শর্তাবলীর আলোকে সুসাব্যস্ত হয়) তাহলে সাথে সাথে তাদের বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তাদেরকে তৎক্ষণাৎ পৃথক হতে হয়ে যেতে হবে।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিলো। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে, তিনি তাদেরকে আলাদা করে দেন। এ মর্মে হাদিস হল:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ، فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ‏.‏ فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ أَرْضَعْتِنِي وَلاَ أَخْبَرْتِنِي‏.‏ فَأَرْسَلَ إِلَى آلِ أَبِي إِهَابٍ يَسْأَلُهُمْ فَقَالُوا مَا عَلِمْنَا أَرْضَعَتْ صَاحِبَتَنَا‏.‏ فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ ‏"‏‏.‏ فَفَارَقَهَا، وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ‏.‏
উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবু ইহাব ইবনে আজিজের কন্যাকে বিবাহ করলেন। পরে এক মহিলা এসে বলল, আমি তো উকবাহ এবং যাকে সে বিয়ে করেছে দু জনকেই দুধ পান করিয়েছি। উকবাহ রা. তাকে বললেন, এটা তো আমার জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন আর আপনিও এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেন নি।
অতঃপর আবু ইহাব পরিবারের নিকট লোক পাঠিয়ে তিনি তাদের নিকট জানতে চাইলেন। তারা বলল, সে আমাদের মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে বলে তো আমাদের জানা নেই। তখন তিনি মদিনার উদ্দেশে সওয়ার হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “যখন এরূপ বলা হয়েছে তখন এ (বিবাহ) কিভাবে সম্ভব?”
অত:পর উকবাহ রা. তাকে ত্যাগ করলেন। আর সে অন্য জনকে বিয়ে করল।
(সহিহ বুখারি, অধ্যায়: সাক্ষ্যদান, অনুচ্ছেদ: ৫২/৪. অধ্যায়: এক বা একাধিক ব্যক্তি কোন বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করলে আর অন্যরা এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করলে সাক্ষ্য দাতার কথা অনুযায়ী ফায়সালা হবে।)
অজ্ঞতা বশত: এমন বিয়ে হওয়ার পর যদি তাদের সন্তান হয় তাহলে তা পিতার সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং সন্তান হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর সে উত্তরাধিকারী সম্পদ ভাগ পাবে। কারণ এখানে বিবাহটি ছিল শুবহা তথা সংশয়পূর্ণ। (যা অজ্ঞতাবশত সংঘটিত হয়েছিল)
এ কথাই বলেছেন ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.। তিনি বলেন:
فإن المسلمين متفقون على أن كل نكاح اعتقد أنه نكاح سائغ إذا وطئ فيه فإنه يلحقه فيه ولده ويتوارثان باتفاق المسلمين، وإن كان ذلك النكاح باطلاً في نفس الأمر باتفاق المسلمين. انتهى
আর যেহেতু বিষয়টি তাঁদের অজানা বশত: হয়েছিল সেহেতু ইনশাআল্লাহ তারা গুনাহগার হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
"হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।" (সূরা বাকারা: ২৮৬)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA

আরবী তারিখ, ছলাতের সময়সূচী দেখার জন্যঃ


আরবী তারিখ, ছলাতের সময়সূচী দেখার জন্যঃ
➢➤⏩ https://www.islamicfinder.org/

➢➤⏩

➢➤⏩

➢➤⏩

➢➤⏩


শিয়াদের আকীদা বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে কিছু বই

এখনো যারা শিয়াদের আসল রূপ ও আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানেন না, জানেন না তারা আপনার কত ভয়ংকর দুশমন, কিভাবে তারা ইসলামের গোড়া কেটেছে, কিভাবে যুগে যুগে মুসলিমদের সাথে গাদ্দারি ও মুনাফেকি করেছে, কিভাবে মুসলিমদেকে ধ্বংস ও বিপর্যস্ত করেছে... এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য এই কয়েকটা বই যথেষ্ট হবে ইংশাআল্লহ।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের রাবওয়া দাওয়াহ সেন্টার থেকে পরিচালিত আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত ওয়েব সাইট ‘ইসলাম হাউজ ডট কম’ আপনাদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এতগুলো বই উপহার দিয়েছে।
এখানে সব চেয়ে বড় সুবিধা হল, বইগুলোর পিডিএফ ভার্সন দেয়ার পাশাপাশি ওয়ার্ড ফাইলও দেয়া হয়েছে।
----------------------------------
◉ শিয়াদের আকীদা-বিশ্বাস
https://islamhouse.com/bn/books/324697/
◉ শিয়া আকীদার অসারতা
https://islamhouse.com/bn/books/370147/
◉ দ্বাদশ ইমামী শিয়া ধর্মের মূলনীতিসমূহের সুষ্পষ্ট রূপরেখা
https://islamhouse.com/bn/books/145444/
◉ শিয়া মতবাদের বিস্তৃতি
https://islamhouse.com/bn/books/373484/
◉ শিয়া আলেম ও অধিকাংশ মুসলিম আলেমের মধ্যে বিরোধের বাস্তব চিত্র
https://islamhouse.com/bn/books/364836/
◉ নাজাফ সম্মেলন
https://islamhouse.com/bn/books/353681/
◉ কতিপয় প্রশ্ন, শিয়া যুবকদের যা সত্যের দিকে ধাবিত করেছে
https://islamhouse.com/bn/books/340530/


https://salafibd.wordpress.com/2011/12/05/shiah/?fbclid=IwAR17OHgZ-ydsLRaDOLm9_-SQEG62uzlmCunk4BwhjxUM5PdP6U1Vl4Ybqug
--------------------
Collected by:
Abdullahil Hadi Bin Abdul jalil
Daee, at Jubail Dawah and guidance centre, kingdom of Saudi Arabia.


একই ফরজ ছলাত একই দিনে দুইবার পড়া কি জায়েজ?

বিশেষ কারণ ছাড়া একই ফরজ সালাত এক দিনে দু বার পড়া শরিয়ত সম্মত নয়
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমি কি একই সালাত দু বার জামাআতে পড়তে পারব?
উত্তর:
বিশেষ কারণ ছাড়া ফরয সালাত পূণরায় পড়া জায়েয নেই। একাকী হোক অথবা জামাআতে হোক। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«لَا تُصَلُّوا صَلَاةً فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ»
“তোমরা একই দিনে একই সালাত দু বার পড়ো না”।(আবু দাউদ-হাসান/সহিহ, সহিহুল জামে লিল আলবানী, হা/৭৩৫০)
অর্থাৎ একই দিনে একই ফরজ সালাত ফরজের নিয়তে দু বার পড়া। এটা জায়েজ নয়।
তবে বিশেষ কারণে একই ফরজ সালাত দ্বিতীয়বার পড়া জায়েজ আছে। যেমন:
◉ ক. কোনো সালাত একবার একাকী ফরজের নিয়তে পড়ার পর দ্বিতীয়বার নফলের নিয়তে জামাআতের সাথে পড়া। এটা শরিয়ত সম্মত।
যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
جَابِرُ بْنُ يَزِيدَ بْنِ الأَسْوَدِ الْعَامِرِيُّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ شَهِدْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم حَجَّتَهُ فَصَلَّيْتُ مَعَهُ صَلاَةَ الصُّبْحِ فِي مَسْجِدِ الْخَيْفِ ‏.‏ قَالَ فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ وَانْحَرَفَ إِذَا هُوَ بِرَجُلَيْنِ فِي أُخْرَى الْقَوْمِ لَمْ يُصَلِّيَا مَعَهُ فَقَالَ ‏"‏ عَلَىَّ بِهِمَا ‏"‏ ‏.‏ فَجِيءَ بِهِمَا تُرْعَدُ فَرَائِصُهُمَا فَقَالَ ‏"‏ مَا مَنَعَكُمَا أَنْ تُصَلِّيَا مَعَنَا ‏"‏ ‏.‏ فَقَالاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا قَدْ صَلَّيْنَا فِي رِحَالِنَا ‏.‏ قَالَ فَلاَ تَفْعَلاَ إِذَا صَلَّيْتُمَا فِي رِحَالِكُمَا ثُمَّ أَتَيْتُمَا مَسْجِدَ جَمَاعَةٍ فَصَلِّيَا مَعَهُمْ فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ ‏"
ইযাযিদ ইবনুল আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমি হজ্জে হাযির ছিলাম। তাঁর সঙ্গে মসজিদে খায়ফে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি যখন ফিরলেন তখন শেষ প্রান্তে দুই ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। এরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেনি। তিনি বললেন এদেরকে আমার কাছে নিয়ে এস। তাদের নিয়ে আসা হল। তখন ভয়ে তাঁদের ঘাড়ের রগ পর্যন্ত কাঁপছিল।
তিনি তাদের বললেন, আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করতে তোমাদের কিসে বাধা দিল?
তাঁরা বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আমাদের অবস্থান স্থলে সালাত পড়ে নিয়েছিলাম।
তিনি বললেন: “এরূপ করবে না। যদি তোমাদের অবস্থান স্থলে সালাত পড়ে মসজিদে জামা'আতে আস তবে তাদের সঙ্গে জামাআতে শরিক হয়ে যাবে। তোমদের জন্য তা নফল হিসেবে গণ্য হবে।” (সহিহ আবু দাউদ ৫৯০, তিরমিজি, হাদিস নাম্বার: ২১৯ [আল মাদানি প্রকাশনী])
আল ইসতিযকার গ্রন্থে এসেছে যে, আহমদ বিন হাম্বল ও ইসহাক রাহওয়াইহ এ ব্যাপারে একমত যে,
أن معنى قوله صلى الله عليه و سلم ( لا تصلوا صلاة في يوم مرتين ) أن ذلك أن يصلي الرجل صلاة مكتوبة عليه ثم يقوم بعد الفراغ منها فيعيدها على جهة الفرض أيضا ، وأما من صلى الثانية مع الجماعة على أنها نافلة اقتداء بالنبي صلى الله عليه و سلم في أمره بذلك : فليس ذلك من إعادة الصلاة في يوم مرتين لأن الأولى فريضة والثانية نافلة فلا إعادة حينئذ
" عون المعبود " ( 2 / 202 ) :
সুনানে আবু দাউদ এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ আউনুল মাবুদে বলা হয়েছে: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: «لَا تُصَلُّوا صَلَاةً فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ» “তোমরা একই দিনে একই সালাত দু বার পড়ো না।” এ কথার অর্থ হল, ফরজ সালাত একবার আদায় করার পর পুনরায় তা ফরযের নিয়তে আদায় করা। (এটি জায়েজ নয়)। তবে কেউ যদি দ্বিতীয় বার তা নফল হিসেবে জামাআতের সাথে আদায় করে-যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন-তাহলে তা একই দিনে দু বার সালাত আদায় হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা প্রথমটি ফরয আর দ্বিতীয়টি নফল। সুতরাং এটি তখন পুনরাবৃত্তি হবে না।” (আউনুল মাবুদ ২/২০২)
➧ আরেকটি হাদিস:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَبْصَرَ رَجُلاً يُصَلِّي وَحْدَهُ فَقَالَ ‏ "‏ أَلاَ رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّيَ مَعَهُ ‏"‏
আবু সাঈদ আল খুদরী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে (জামাআতের পর) একাকী নামায আদায় করতে দেখে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে, এই ব্যক্তির উপর সদকা করবে এবং তার সাথে জামাতে অংশ গ্রহণ করবে? (অর্থাৎ তার সাথে জামাতে অংশ গ্রহণ করে তার সওয়াব বৃদ্ধি করবে) (তিরমিযী, সহিহ-তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবিহ, হা/১১০৪)।
এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে, একবার জামাআতের সাথে ফরজ সালাত আদায় করার পর একই সালাত দ্বিতীয়বার জামাআতের সাথে আদায় করা জায়েয আছে। তবে ২য়টি নফল এর নিয়তে আদায় করবে; ফরজের নিয়তে নয়। যেমনটি অন্যান্য হাদিস থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায়।
◉ খ. অনুরূপভাবে প্রয়োজন হলে ফরজ সালাত একবার জামআতের সাথে পড়ার পর দ্বিতীয়বার লোকদেরকে নিয়ে ইমাম হিসেবে উক্ত সালাত পড়া জায়েজ আছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
كان معاذٌ يُصلِّي مع النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم العِشاءَ، ثم يَطلُع إلى قومِه فيُصلِّيها لهم؛ هي له تطوُّعٌ، ولهم مكتوبةُ العِشاءِ
واه الشافعيُّ في ((المسند)) (237)، والطحاوي في ((شرح معاني الآثار)) (2360)، والدارقطني في ((السنن)) (1075)، والبيهقي في ((معرفة السنن والآثار)) (4/153)
وقال ابنُ الملقِّن في ((البدر المنير)) (4/476): أصلُه متَّفق عليه، وصححه ابن حجر في ((فتح الباري)) (2/229).
মুআয বিন জাবাল রা. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ইশার সালাত আদায় করার পর নিজে গোত্রে গিয়ে ইমাম হিসেবে উক্ত সালাত আদায় করতেন। এটি তার জন্য নফল হিসেবে আর অন্যান্য লোকদের জন্য ইশার ফরয সালাত হিসেবে গণ্য হত।”
(মুসনাদে শাফেঈ, শারহু মাআনিল আসার লিত ত্বহাবী, দারাকুতনি, বায়হাকি প্রমুখ। এটি সর্বসম্মতভাবে সহিহ)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA

একাধিক মসজিদের আযান শোনা গেলে আযানের জবাব দেয়ার নিয়ম এবং আযান চলাকালীন সময় সালাত শুরু করার বিধান

একাধিক মসজিদের আযান শোনা গেলে আযানের জবাব দেয়ার নিয়ম এবং আযান চলাকালীন সময় সালাত শুরু করার বিধান
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
ক) প্রশ্ন: একাধিক মসজিদ থেকে আযানের আওয়াজ শোনা গেলে কোন মসজিদের আযানের জবাব দিবো?
উত্তর:
বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক আযানের আওয়াজ কানে ভেসে আসলে একজন মানুষ তার নিজস্ব মহল্লা বা এলাকার সব চেয়ে নিকটস্থ মসজিদের আযানের জবাব দিবে এবং সে উক্ত মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করবে। অন্যান্য দূর-দূরান্তের মসজিদের আযানের জবাব দেয়ার প্রয়োজন নাই যেগুলোতে সে সালাত আদায় করার জন্য যাবে না।
খ) প্রশ্ন: আযানের সময় সালাত আদায় করা নিষেধ কি?
উত্তর: আযানের সময় সালাত আদায় করা নিষেধ-এমন কথা হাদিসে বর্ণিত হয় নি। বরং হাদিসে তিনটি সময় সালাত আদায় করায় নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো হল:
◉ ১) ফজর সালাতের পর থেকে তীর বরাবর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ সূর্য উদিত হওয়ার পর ১৫/২০ মিনিটি পর্যন্ত।
◉ ২) ঠিক দুপুরের সময়। অর্থাৎ যোহরের সময় হওয়ার ১০ মিঃ আগে থেকে যোহরের সময় হওয়া পর্যন্ত।
◉ ৩) আছর ছালাতের পর থেকে পরিপূর্ণ রূপে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।
এ মর্মে হাদিস হল:
সাহাবি উকবা বিন আমের জুহানী রা. বলেন,
ثَلاثُ سَاعَاتٍ نَهَانَا رَسُولُ الله صَلَّى الله عَلَيهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُصَلِّي فِيهِنَّ, وَأَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا : حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ, وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ, وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ -رواه مسلم
“তিনটি সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নামায পড়তে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। যখন সূর্য ডুবার আগ মুহূর্তে সূর্য হলুদাভ হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য ডুবা পর্যন্ত।” [সহীহ মুসলিম : ১/৫৬৮]
সুতরাং আযান চলাকালীন সময় সালাত আদায় করলেও তা শুদ্ধ হবে। তবে আযানের জবাব এবং আযানের পরে দরুদ ও দুআ পড়ার পর সালাত শুরু করা উত্তম। কেননা হাদিসে আযানের জবাব ও আযান শেষে দরুদ ও দুআ পড়ার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
এ কারণে অনেক আলেম, আযান চলাকালীন সময়ে নতুন করে নফল সালাত শুরু করাকে মাকরূহ (অ-পছন্দনীয়) বলেছেন।
তবে যেহেতু সময় হওয়ার পরই আযান দেয়া হয় আর সালাতের অন্যতম শর্ত হল, সময় হওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
“নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।” (সূরা নিসা: ১০৩)
সেহেতু কোন ব্যক্তি যদি জরুরি ব্যস্ততার কারণে সময় হওয়ার সাথে সাথে (আযান চলাকালীন সময়ে হলেও) ফরয সালাত শুরু করে তাহলে তা শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে ফরয ছাড়া সুন্নত বা নফল সালাত শুরু করা মাকরূহ (অ পছন্দনীয়)।
কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় আযান শেষ হওয়ার পর আযানের দুআ-দুরুদ পড়ে সালাত শুরু করার চেষ্টা করা উত্তম।
الله أعلم بالصواب
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA

আজানের সময় কথা বলা/ আগে স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া/ সহবাসের সময় জবাব দেয়া যাবে কি?

⏩প্রশ্ন: আজানের সময় কি কথা বলা ঠিক?
---------------------
উত্তর:
আজান এর সময় উত্তম হল, মনোযোগ সহকারে আজান শোনা এবং আজানের জবাব দেয়া। কেননা এটি অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ কাজ। তবে যদি বিশেষ প্রয়োজনে কথা বলার দরকার হয় তাহলে এতে কোনও আপত্তি নেই। সুতরাং আজান চলাকালীন সময়ে দরকারি কথা বলা, হাঁচির জবাব দেওয়া, সালামের উত্তর দেওয়া বা বিশেষ কোনো কাজ করা ইত্যাদি জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ।
আযানের সময় আযানের জবাব ছাড়াও অন্য কথা বলা জায়েজ হওয়ার পক্ষে এ হাদিসটি প্রযোজ্য:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يُغِيرُ إِلاَّ عِنْدَ صَلاَةِ الْفَجْرِ فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا أَمْسَكَ وَإِلاَّ أَغَارَ فَاسْتَمَعَ ذَاتَ يَوْمٍ فَسَمِعَ رَجُلاً يَقُولُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ عَلَى الْفِطْرَةِ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ خَرَجْتَ مِنَ النَّارِ
আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ফজরের সময়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কোন জনপদে) নৈশ হামলা করতেন। তিনি আযান শুনলে হামলা হতে বিরত থাকতেন, অন্যথায় হামলা করতেন। একদিন তিনি কানকে সজাগ রাখলেন।
তিনি একজন লোককে 'আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার’ বলতে শুনে বললেন: “ফিতরাতের (ইসলামের) উপর আছে।”
ঐ লোকটি আবার বলল: “আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই)।
তিনি বললেনঃ “তুমি জাহান্নাম হতে বেরিয়ে গেলে।” (সহীহ, সহীহ আবু দাউদ (২৩৬৮), মুসলিম)
আল্লাহু আলাম।

আজানের সময় আজানের জবাব আগে না কি স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া আগে? সহবাসের সময় আজানের জবাব দেয়া যাবে কি?
-------------------------
⏩প্রশ্ন: আজানের সময় আজানের জবাব দিচ্ছি। এমন সময় স্বামী ডাকল অথবা কল দিল। আমার জন্য উত্তম কোনটা হবে-আজানের জবাব দেওয়া নাকি তার কল ধরা বা ডাকে সাড়া দেয়া? আর সহবাসের সময় আজানের জবাব দেয়া যাবে কি?
উত্তর:
যদি মনে হয়, স্বামীর কল ধরতে বিলম্ব হলে তিনি রাগ করবেন বা মন খারাপ করবেন তাহলে আজানের জবাব বাদ দিয়ে তার সাথে কথা বলা জরুরি।
আর আশেপাশে থাকা অবস্থায় ডাকলে তার ডাকে সাড়া দেয়ার মধ্যেও আজানের জবাব দেয়ার চেষ্টা করা ভালো যদি সম্ভব হয়। কারণ কারো সাথে টুকটাক কথা বলার ফাঁকে বা কাজ করা অবস্থায় মুখে আজানের জবাব দেয়া সম্ভব।
তবে মনে রাখতে হবে, আজানের জবাব দেয়া ফরয বা ওয়াজিব নয় বরং মোস্তাহাব আর স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া ফরয। সুতরাং স্বামীর হক আগে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
অবশ্য স্বামী-স্ত্রী মিলনের সময় আজানের জবাব দেয়া ঠিক নয়:
ইমাম নওবী রহ. সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলেন:
ويكره للقاعد على قضاء الحاجة أن يذكر الله تعالى بشيء من الاذكار فلا يسبح ولا يهلل ولا يرد السلام ولا يشمت العاطس ولا يحمد الله تعالى اذا عطس ولا يقول مثل ما يقول المؤذن. قالوا وكذلك لا يأتي بشيء من هذه الأذكار في حال الجماع، وإذا عطس في هذه الاحوال يحمد الله تعالى في نفسه ولا يحرك به لسانه. وهذا الذي ذكرناه من كراهة الذكر في حال البول والجماع هو كراهة تنزيه لا تحريم فلا إثم على فاعله. انتهى.
والله أعلم.
“হাজত পূরণের জন্য (পেশাব-পায়খানার জন্য) বসা অবস্থায় কোনো ধরণের আল্লাহর জিকির করা মাকরূহ (অ পছন্দনীয় কাজ)। সুতরাং এ অবস্থায় তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করবে না, সালামের জবাব দিবে না, হাঁচির জবাব দিবে না, হাঁচি দিলে আল ‘হামদু লিল্লাহ’ পড়বে না এবং মুয়াজ্জিনের অনুরূপ শব্দ উচ্চারণ করে আজানের জবাব দিবে না।
ফকিহগণ আরও বলেছেন: স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সময়ও এ সব জিকির-আজকার উচ্চারণ করবে না। তবে এ অবস্থায় হাঁচি দিলে মনে মনে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করবে কিন্তু জিহ্বা নেড়ে তা উচ্চারণ করবে না।
তবে এই যে পেশাব-পায়খানা এবং সহবাসের সময় জিকির পাঠ করার
মাকরূহ বা অ পছন্দনীয় হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলাম এটা মাকরূহে তানযিহী; তাহরিমী নয়। সুতরাং কেউ যদি এমনটি করেও তাতে গুনাহ হবে না। আল্লাহু আলাম।”
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
-------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
AbdullaahilHadi
Daee, at jubail dawah & guidance center.KSA

কুরআন কোলে নিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে পাঠ, রাখা, দাগ দেওয়া, থুথু লাগানো, হাত থেকে পরে গেলে ইত্যাদি বিষয়ে করণীয় সমূহ

১.  কুরআন কোলে নিয়ে পড়া যাবে কি?
২. মাসজিদের ফ্লোরের উপর কুরআন রাখা যাবে কিনা বা ভুলে রাখলে পাপ হবে কি?
৩. হেলান দিয়ে বা শুয়ে মোবাইল দেখে কুরআন পাঠ করা যাবে কি? এতে কি সওয়াবের কিছু কমতি হবে?
৪. আমরা অনেক সময় কুরআনের আয়াত মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কলম দিয়ে দাগ দিয়ে থাকি। এটা কি ঠিক হবে?
৫. কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় হাতে মুখ থেকে থুথু নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থাকি। এতে কি কুরআনের অসম্মান হবে?
৬. কুরআনে কারীম হাত থেকে পরে গেলে করণীয় কি?
৭.  কুরআন সম্পর্কে কতিপয় ভুল বিশ্বাস ও আচরণ
⏬⏬⏬⏬⏬

🌀 প্রশ্ন: কুরআন কোলে নিয়ে পড়া যাবে কি?
উত্তর:
কোলের উপরে কুরআন রেখে আদবের সাথে পড়তে কোন আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
سئل الشيخ ابن عثيمين رحمه الله عن وضع المصحف على الحجر وهو يتلو القرآن، هل يتنافى مع الأدب؟
فأجاب : " لا "
কুরআন তিলাওয়াত অবস্থায় মুসহাফ (কুরআন) কোলে রাখা সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রাহ. কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, এটি কি আদবের খেলাপ?
জবাবে তিনি বলেছেন: “না।” (উৎস: ইসলামকিউএ ইনফো)।

🌀 প্রশ্ন: মাসজিদের ফ্লোরের উপর কুরআন রাখা যাবে কিনা বা ভুলে রাখলে পাপ হবে কি?
উত্তর:
কুরআন মাটি থেকে একটু উপরে রাখা উত্তম। যেমন: রেহাল, টেবিল, চেয়ার, তাক, আলমারি, দেয়াল, দেয়ালের ছিদ্র, অন্য সাধারণ বইয়ের উপর ইত্যাদি।
এটি কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শের জন্য অধিক উপযোগী।
তবে যদি দরকার বশত: ــــযদি কুরআনকে অপমান করার উদ্দেশ্যে না থাকেـــــপবিত্র মাটির উপর কুরআন রাখা হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ গুনাহ নেই। যেমন: যদি উঁচু স্থানে রাখার কোন ব্যবস্থা না থাকে অথচ তিলাওয়াতে সেজাদা দিতে হবে। তাহলে এ অবস্থায় পবিত্র মাটির উপর রাখা জায়েয আছে। দরকার বশত: পবিত্র মাটির উপর রাখা নিষেধ এমন কোন হাদিস পাওয়া যায় না। তবে নি:সন্দেহে কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে মাটি থেকে উঁচুতে রাখা অধিক উত্তম। আল্লাহু আলাম
(বিন বায রহ. এর ফতোয়ার সারমর্ম)

🌀 প্রশ্ন: হেলান দিয়ে বা শুয়ে মোবাইল দেখে কুরআন পাঠ করা যাবে কি? এতে কি সওয়াবের কিছু কমতি হবে?
উত্তর:
দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে বা হেলান দিয়ে কুরআন পড়তে কোন অসুবিধা নেই। এমনকি হাঁটতে হাঁটতে পড়লেও কোন অসুবিধা নেই। চাই তা মুসহাফ হাতে নিয়ে হোক, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল থেকে হোক।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. আমার কোলে হেলান দিয়ে (অর্থাৎ কোলে মাথা রেখে) কুরআন তিলাওয়াত করতেন। সে সময় আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম।” (সহীহ বুখারী, অধ্যায়, হায়েয, অনুচ্ছেদ: ঋতুস্রাব চলাকালীন সময় স্ত্রীর কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা)
পড়াটাই মূল কথা। কী দেখে পড়ছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতরাং মুসহাফ দেখে হোক, মোবাইল হোক বা ল্যাপটপ দেখে পড়া হোক তাতে সওয়াবের মধ্যে কমবেশি হবে না ইনশাআল্লাহ।
হাঁটতে হাঁটতে, রান্না করতে করতে বা সাংসারিক কাজের মধ্যে থেকেও মুখস্থ তিলাওয়াত করতে পারেন। এতেও ইনশাআল্লাহ সওয়াব পাবেন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
•••••••••••••••••••••
🌀প্রশ্ন: আমরা অনেক সময় কুরআনের আয়াত মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কলম দিয়ে দাগ দিয়ে থাকি। এটা কি ঠিক হবে?
উত্তর :
কুরআনের সম্মান বজায় রাখার স্বার্থে কুরআনের মধ্যে এমন কোনো চিহ্ন বসানো উচিৎ নয় যাতে তার সৌন্দর্যের বিকৃতি ঘটে। কুরআনে কারীমকে সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।
তবে একান্ত দরকারে (যেমন, মুখস্থ করার সুবিধার্থে) চিহ্ন দেয়ার প্রয়োজন হলে, আয়াতের নিচে বা উপরে সাধারণ কাঠ পেন্সিল ব্যাবহার করা যেতে পারে, যেন তা প্রয়োজন শেষে মুছে ফেলা যায়। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন রাবার ব্যাবহার করা উচিৎ।
কিন্তু বলপেন, সাইনপেন বা এমন কালি ব্যবহার করা উচিৎ নয় যা পরে উঠিয়ে ফেলা সম্ভব হয় না। আল্লাহু আলাম
•••••••••••••••••••••••
🌀প্রশ্ন : কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় হাতে মুখ থেকে থুথু নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থাকি। এতে কি কুরআনের অসম্মান হবে?
উত্তর :
কুরআনের পৃষ্ঠাগুলোকে সহজে উল্টানোর সুবিধার্থে এমনটি করা হয়। এটা দরকারে জায়েয হলেও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উত্তম। কেননা, তা কুরআনের আদবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এমনটি না করাই ভালো। আল্লাহু আলাম।
•••••••••••••••••••••••
🌀প্রশ্ন: কুরআনে কারীম হাত থেকে পড়ে গেলে করণীয় কি?
উত্তর :
অসতর্কতা বশত: হাত থেকে কুরআনুল কারীম পড়ে গেলে আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে আগামীতে সর্তক থাকতে হবে যেন, কোনোভাবেই কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন না করা হয়।
উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, কুরআন হাত থেকে পড়লে এর ওজন বরাবর চাল সদকা করতে হবে। এটি একটি ভুল কাজ। কেননা, ইসলামী শরিয়তে এমন কোন নির্দেশনা আসে নি। তাই তা বর্জনীয়।
•••••••••••••••••••••••
🌀কুরআন সম্পর্কে কতিপয় ভুল বিশ্বাস ও আচরণ:
🔘 ১) অর্ধ শাবানের রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করা। অথচ তা অবতীর্ণ হয়েছে রমাযান মাসের কদরের রাতে। (সূরা বাকারা: ১৮৫ ও সূরা কদর)
🔘 ২) কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কুরআন (সূরা ফাতিহা, নাস, ফালাক, ইখলাস ইত্যাদি সূরা) পাঠ করা। এটি দলীল বহির্ভূত কাজ হওয়ার কারণে বিদয়াত।
🔘 ৩) মৃত শয্যায় শায়িত ব্যক্তির পাশে কুরআন পাঠ করা। এটি বিদআত। অথচ সুন্নত হচ্ছে, মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ র তালকিন দেয়া বা তাকে শুনিয়ে কালিমা পাঠ করা।
🔘 ৪) কুরআন খতম (শবিনা খতম) করে তার সওয়াব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বখশীয়ে দেয়া। এটিও দলীল বহির্ভূত হওয়ার কারণে বিদআত।
🔘 ৫) অসতর্কতা বশত: হাত থেকে কুরআন পড়ে গেলে তার ওজন বরাবর চাল সদকা করা। এটি শরীয়তের কোন বিধান নয়। বরং এজন্য জন্য আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করা প্রয়োজন।
🔘 ৬) না বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করলে সওয়াব হবে না বলে ধারণা করা। এ ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা হচ্ছে, বুঝে হোক অথবা না বুঝে হোক কুরআন পাঠ করলে প্রতিটি অক্ষরে ১টি করে (যা ১০টি নেকীর সমান) সওয়াব অর্জিত হবে। তবে কুরআন বুঝার চেষ্টা করা ও কুরআন নিয়ে গবেষণা করা নি:সন্দেহে উত্তম কাজ।
🔘 ৭) কুরআন তেলাওয়াতের শেষে ‘সাদাকাল্লাহুল আযীম’ "আল্লাহ সত্য বলেছেন" বলাকে সুন্নত মনে করা ঠিক নয়। কারণ, এর কোন শরঈ ভিত্তি নাই। সুতরাং এটিকে নিয়ম করে পাঠ করা ঠিক নয়।
🔘 ৮) কুরআন হাতে নিয়েই তাতে চুমু খাওয়া। এটিকে নিয়ম করে নেয়া ঠিক নয়। তবে হঠাৎ আবেগে চুমু খেলে তাতে সমস্যা নাই।
🔘 ৯) এ বিশ্বাস করা যে, হাদিস মানার প্রয়োজন নাই। কেবল কুরআন মানাই যথেষ্ট। এটি মুসলিম উম্মাহকে পথভ্রষ্ট করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। হাদিস ব্যতিরেকে কুরআন বুঝা আদৌ সম্ভব নয়।
🔘 ১০) সিডি, ক্যাসেট, মোবাইল ইত্যাদিতে কুরআন তিলাওয়াত চালু করে গল্প-গুজবে ব্যস্ত থাকা বা তার প্রতি অমনোযোগিতা প্রকাশ করা। এটি কুরআনের প্রতি অবহেলার শামিল। আল্লাহ তাআলা কুরআন তিলাওয়াত হলে চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শুনার নির্দেশ নিয়েছেন। (সূরা আরাফ: ২০৪)
🔘 ১১) মোবাইলে রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত রাখা উচিৎ নয়। কারণ, তা টয়লেট বা অপবিত্র স্থানে বেজে উঠতে পারে। তাছাড়া রিং বাজলে আল্লাহর কথাকে কেটে দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলা শুরু হয়। আল্লাহর বাণীর সাথে এরূপ আচরণ শোভনীয় নয়। অনুরূপভাবে মোবাইলের ওয়াল পেপার হিসেবে কুরআনের আয়াত সম্বলিত ছবি সেট করা উচিৎ নয়। কারণ, নাপাক স্থানে তা প্রকাশিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
🔘 ১২) কুরআনের আয়াতকে ঘরের শোভা বর্ধন, বরকত নাজিল বা জিন-ভুত, যাদু, অসুখ-বিসুখ বা কোন কিছুর ক্ষতির আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লটকিয়ে রাখা নাজায়েজ। তবে শিক্ষা, মুখস্ত বা স্মরণ করার উদ্দেশ্য হলে তা জায়েজ আছে।
🔘 ১৩) কুরআনের আয়াত দ্বারা ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy) বানানো উচিৎ নয়। কারণ, তা মানুষের ভুল পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া মানুষ তা ঘরের শোভা বর্দ্ধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে।
🔘 ১৪) কুরআন আয়াত লিখে তাবিজ ব্যবহার করা জায়েজ নয়। যদিও এটি মত বিরোধপূর্ণ বিষয়। তবে সঠিক হল তা জায়েজ নয়। কারণ, এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মৌখিক, কর্মগত বা সম্মতি জ্ঞাপক কোন অনুমোদন পাওয়া যায় না। অনুরূপভাবে তথাকথিত ‘কুরআনের নকশা’ দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম। অবশ্য, অসুখ-বিসুখ, জিনের আক্রমণ, যাদু-টোনা ইত্যাদির প্রভাব কাটাতে কুরআনের আয়াত পড়ে ঝাড়-ফুঁক দেয়া শুধু শরীয়ত সম্মতই না বরং তা সর্বোত্তম চিকিৎসা।
----------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...