১. কুরআন কোলে নিয়ে পড়া যাবে কি?
২. মাসজিদের ফ্লোরের উপর কুরআন রাখা যাবে কিনা বা ভুলে রাখলে পাপ হবে কি?
৩. হেলান দিয়ে বা শুয়ে মোবাইল দেখে কুরআন পাঠ করা যাবে কি? এতে কি সওয়াবের কিছু কমতি হবে?
৪. আমরা অনেক সময় কুরআনের আয়াত মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কলম দিয়ে দাগ দিয়ে থাকি। এটা কি ঠিক হবে?
৫. কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় হাতে মুখ থেকে থুথু নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থাকি। এতে কি কুরআনের অসম্মান হবে?
৬. কুরআনে কারীম হাত থেকে পরে গেলে করণীয় কি?
৭. কুরআন সম্পর্কে কতিপয় ভুল বিশ্বাস ও আচরণ
⏬⏬⏬⏬⏬
🌀 প্রশ্ন: কুরআন কোলে নিয়ে পড়া যাবে কি?
উত্তর:
কোলের উপরে কুরআন রেখে আদবের সাথে পড়তে কোন আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
২. মাসজিদের ফ্লোরের উপর কুরআন রাখা যাবে কিনা বা ভুলে রাখলে পাপ হবে কি?
৩. হেলান দিয়ে বা শুয়ে মোবাইল দেখে কুরআন পাঠ করা যাবে কি? এতে কি সওয়াবের কিছু কমতি হবে?
৪. আমরা অনেক সময় কুরআনের আয়াত মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কলম দিয়ে দাগ দিয়ে থাকি। এটা কি ঠিক হবে?
৫. কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় হাতে মুখ থেকে থুথু নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থাকি। এতে কি কুরআনের অসম্মান হবে?
৬. কুরআনে কারীম হাত থেকে পরে গেলে করণীয় কি?
৭. কুরআন সম্পর্কে কতিপয় ভুল বিশ্বাস ও আচরণ
⏬⏬⏬⏬⏬
🌀 প্রশ্ন: কুরআন কোলে নিয়ে পড়া যাবে কি?
উত্তর:
কোলের উপরে কুরআন রেখে আদবের সাথে পড়তে কোন আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
سئل الشيخ ابن عثيمين رحمه الله عن وضع المصحف على الحجر وهو يتلو القرآن، هل يتنافى مع الأدب؟
فأجاب : " لا "
কুরআন তিলাওয়াত অবস্থায় মুসহাফ (কুরআন) কোলে রাখা সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রাহ. কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, এটি কি আদবের খেলাপ?
জবাবে তিনি বলেছেন: “না।” (উৎস: ইসলামকিউএ ইনফো)।
🌀 প্রশ্ন: মাসজিদের ফ্লোরের উপর কুরআন রাখা যাবে কিনা বা ভুলে রাখলে পাপ হবে কি?
উত্তর:
কুরআন মাটি থেকে একটু উপরে রাখা উত্তম। যেমন: রেহাল, টেবিল, চেয়ার, তাক, আলমারি, দেয়াল, দেয়ালের ছিদ্র, অন্য সাধারণ বইয়ের উপর ইত্যাদি।
এটি কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শের জন্য অধিক উপযোগী।
তবে যদি দরকার বশত: ــــযদি কুরআনকে অপমান করার উদ্দেশ্যে না থাকেـــــপবিত্র মাটির উপর কুরআন রাখা হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ গুনাহ নেই। যেমন: যদি উঁচু স্থানে রাখার কোন ব্যবস্থা না থাকে অথচ তিলাওয়াতে সেজাদা দিতে হবে। তাহলে এ অবস্থায় পবিত্র মাটির উপর রাখা জায়েয আছে। দরকার বশত: পবিত্র মাটির উপর রাখা নিষেধ এমন কোন হাদিস পাওয়া যায় না। তবে নি:সন্দেহে কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে মাটি থেকে উঁচুতে রাখা অধিক উত্তম। আল্লাহু আলাম
(বিন বায রহ. এর ফতোয়ার সারমর্ম)
🌀 প্রশ্ন: হেলান দিয়ে বা শুয়ে মোবাইল দেখে কুরআন পাঠ করা যাবে কি? এতে কি সওয়াবের কিছু কমতি হবে?
উত্তর:
দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে বা হেলান দিয়ে কুরআন পড়তে কোন অসুবিধা নেই। এমনকি হাঁটতে হাঁটতে পড়লেও কোন অসুবিধা নেই। চাই তা মুসহাফ হাতে নিয়ে হোক, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল থেকে হোক।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. আমার কোলে হেলান দিয়ে (অর্থাৎ কোলে মাথা রেখে) কুরআন তিলাওয়াত করতেন। সে সময় আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম।” (সহীহ বুখারী, অধ্যায়, হায়েয, অনুচ্ছেদ: ঋতুস্রাব চলাকালীন সময় স্ত্রীর কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা)
পড়াটাই মূল কথা। কী দেখে পড়ছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতরাং মুসহাফ দেখে হোক, মোবাইল হোক বা ল্যাপটপ দেখে পড়া হোক তাতে সওয়াবের মধ্যে কমবেশি হবে না ইনশাআল্লাহ।
হাঁটতে হাঁটতে, রান্না করতে করতে বা সাংসারিক কাজের মধ্যে থেকেও মুখস্থ তিলাওয়াত করতে পারেন। এতেও ইনশাআল্লাহ সওয়াব পাবেন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
•••••••••••••••••••••
🌀প্রশ্ন: আমরা অনেক সময় কুরআনের আয়াত মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কলম দিয়ে দাগ দিয়ে থাকি। এটা কি ঠিক হবে?
উত্তর :
কুরআনের সম্মান বজায় রাখার স্বার্থে কুরআনের মধ্যে এমন কোনো চিহ্ন বসানো উচিৎ নয় যাতে তার সৌন্দর্যের বিকৃতি ঘটে। কুরআনে কারীমকে সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।
তবে একান্ত দরকারে (যেমন, মুখস্থ করার সুবিধার্থে) চিহ্ন দেয়ার প্রয়োজন হলে, আয়াতের নিচে বা উপরে সাধারণ কাঠ পেন্সিল ব্যাবহার করা যেতে পারে, যেন তা প্রয়োজন শেষে মুছে ফেলা যায়। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন রাবার ব্যাবহার করা উচিৎ।
কিন্তু বলপেন, সাইনপেন বা এমন কালি ব্যবহার করা উচিৎ নয় যা পরে উঠিয়ে ফেলা সম্ভব হয় না। আল্লাহু আলাম
•••••••••••••••••••••••
♦🌀প্রশ্ন : কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় হাতে মুখ থেকে থুথু নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থাকি। এতে কি কুরআনের অসম্মান হবে?
উত্তর :
কুরআনের পৃষ্ঠাগুলোকে সহজে উল্টানোর সুবিধার্থে এমনটি করা হয়। এটা দরকারে জায়েয হলেও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উত্তম। কেননা, তা কুরআনের আদবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এমনটি না করাই ভালো। আল্লাহু আলাম।
•••••••••••••••••••••••
♦🌀প্রশ্ন: কুরআনে কারীম হাত থেকে পড়ে গেলে করণীয় কি?
উত্তর :
অসতর্কতা বশত: হাত থেকে কুরআনুল কারীম পড়ে গেলে আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে আগামীতে সর্তক থাকতে হবে যেন, কোনোভাবেই কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন না করা হয়।
উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, কুরআন হাত থেকে পড়লে এর ওজন বরাবর চাল সদকা করতে হবে। এটি একটি ভুল কাজ। কেননা, ইসলামী শরিয়তে এমন কোন নির্দেশনা আসে নি। তাই তা বর্জনীয়।
•••••••••••••••••••••••
♦🌀কুরআন সম্পর্কে কতিপয় ভুল বিশ্বাস ও আচরণ:
🔘 ১) অর্ধ শাবানের রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করা। অথচ তা অবতীর্ণ হয়েছে রমাযান মাসের কদরের রাতে। (সূরা বাকারা: ১৮৫ ও সূরা কদর)
🔘 ২) কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কুরআন (সূরা ফাতিহা, নাস, ফালাক, ইখলাস ইত্যাদি সূরা) পাঠ করা। এটি দলীল বহির্ভূত কাজ হওয়ার কারণে বিদয়াত।
🔘 ৩) মৃত শয্যায় শায়িত ব্যক্তির পাশে কুরআন পাঠ করা। এটি বিদআত। অথচ সুন্নত হচ্ছে, মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ র তালকিন দেয়া বা তাকে শুনিয়ে কালিমা পাঠ করা।
🔘 ৪) কুরআন খতম (শবিনা খতম) করে তার সওয়াব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বখশীয়ে দেয়া। এটিও দলীল বহির্ভূত হওয়ার কারণে বিদআত।
🔘 ৫) অসতর্কতা বশত: হাত থেকে কুরআন পড়ে গেলে তার ওজন বরাবর চাল সদকা করা। এটি শরীয়তের কোন বিধান নয়। বরং এজন্য জন্য আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করা প্রয়োজন।
🔘 ৬) না বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করলে সওয়াব হবে না বলে ধারণা করা। এ ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা হচ্ছে, বুঝে হোক অথবা না বুঝে হোক কুরআন পাঠ করলে প্রতিটি অক্ষরে ১টি করে (যা ১০টি নেকীর সমান) সওয়াব অর্জিত হবে। তবে কুরআন বুঝার চেষ্টা করা ও কুরআন নিয়ে গবেষণা করা নি:সন্দেহে উত্তম কাজ।
🔘 ৭) কুরআন তেলাওয়াতের শেষে ‘সাদাকাল্লাহুল আযীম’ "আল্লাহ সত্য বলেছেন" বলাকে সুন্নত মনে করা ঠিক নয়। কারণ, এর কোন শরঈ ভিত্তি নাই। সুতরাং এটিকে নিয়ম করে পাঠ করা ঠিক নয়।
🔘 ৮) কুরআন হাতে নিয়েই তাতে চুমু খাওয়া। এটিকে নিয়ম করে নেয়া ঠিক নয়। তবে হঠাৎ আবেগে চুমু খেলে তাতে সমস্যা নাই।
🔘 ৯) এ বিশ্বাস করা যে, হাদিস মানার প্রয়োজন নাই। কেবল কুরআন মানাই যথেষ্ট। এটি মুসলিম উম্মাহকে পথভ্রষ্ট করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। হাদিস ব্যতিরেকে কুরআন বুঝা আদৌ সম্ভব নয়।
🔘 ১০) সিডি, ক্যাসেট, মোবাইল ইত্যাদিতে কুরআন তিলাওয়াত চালু করে গল্প-গুজবে ব্যস্ত থাকা বা তার প্রতি অমনোযোগিতা প্রকাশ করা। এটি কুরআনের প্রতি অবহেলার শামিল। আল্লাহ তাআলা কুরআন তিলাওয়াত হলে চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শুনার নির্দেশ নিয়েছেন। (সূরা আরাফ: ২০৪)
🔘 ১১) মোবাইলে রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত রাখা উচিৎ নয়। কারণ, তা টয়লেট বা অপবিত্র স্থানে বেজে উঠতে পারে। তাছাড়া রিং বাজলে আল্লাহর কথাকে কেটে দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলা শুরু হয়। আল্লাহর বাণীর সাথে এরূপ আচরণ শোভনীয় নয়। অনুরূপভাবে মোবাইলের ওয়াল পেপার হিসেবে কুরআনের আয়াত সম্বলিত ছবি সেট করা উচিৎ নয়। কারণ, নাপাক স্থানে তা প্রকাশিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
🔘 ১২) কুরআনের আয়াতকে ঘরের শোভা বর্ধন, বরকত নাজিল বা জিন-ভুত, যাদু, অসুখ-বিসুখ বা কোন কিছুর ক্ষতির আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লটকিয়ে রাখা নাজায়েজ। তবে শিক্ষা, মুখস্ত বা স্মরণ করার উদ্দেশ্য হলে তা জায়েজ আছে।
🔘 ১৩) কুরআনের আয়াত দ্বারা ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy) বানানো উচিৎ নয়। কারণ, তা মানুষের ভুল পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া মানুষ তা ঘরের শোভা বর্দ্ধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে।
🔘 ১৪) কুরআন আয়াত লিখে তাবিজ ব্যবহার করা জায়েজ নয়। যদিও এটি মত বিরোধপূর্ণ বিষয়। তবে সঠিক হল তা জায়েজ নয়। কারণ, এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মৌখিক, কর্মগত বা সম্মতি জ্ঞাপক কোন অনুমোদন পাওয়া যায় না। অনুরূপভাবে তথাকথিত ‘কুরআনের নকশা’ দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম। অবশ্য, অসুখ-বিসুখ, জিনের আক্রমণ, যাদু-টোনা ইত্যাদির প্রভাব কাটাতে কুরআনের আয়াত পড়ে ঝাড়-ফুঁক দেয়া শুধু শরীয়ত সম্মতই না বরং তা সর্বোত্তম চিকিৎসা।
فأجاب : " لا "
কুরআন তিলাওয়াত অবস্থায় মুসহাফ (কুরআন) কোলে রাখা সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রাহ. কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, এটি কি আদবের খেলাপ?
জবাবে তিনি বলেছেন: “না।” (উৎস: ইসলামকিউএ ইনফো)।
🌀 প্রশ্ন: মাসজিদের ফ্লোরের উপর কুরআন রাখা যাবে কিনা বা ভুলে রাখলে পাপ হবে কি?
উত্তর:
কুরআন মাটি থেকে একটু উপরে রাখা উত্তম। যেমন: রেহাল, টেবিল, চেয়ার, তাক, আলমারি, দেয়াল, দেয়ালের ছিদ্র, অন্য সাধারণ বইয়ের উপর ইত্যাদি।
এটি কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শের জন্য অধিক উপযোগী।
তবে যদি দরকার বশত: ــــযদি কুরআনকে অপমান করার উদ্দেশ্যে না থাকেـــــপবিত্র মাটির উপর কুরআন রাখা হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ গুনাহ নেই। যেমন: যদি উঁচু স্থানে রাখার কোন ব্যবস্থা না থাকে অথচ তিলাওয়াতে সেজাদা দিতে হবে। তাহলে এ অবস্থায় পবিত্র মাটির উপর রাখা জায়েয আছে। দরকার বশত: পবিত্র মাটির উপর রাখা নিষেধ এমন কোন হাদিস পাওয়া যায় না। তবে নি:সন্দেহে কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে মাটি থেকে উঁচুতে রাখা অধিক উত্তম। আল্লাহু আলাম
(বিন বায রহ. এর ফতোয়ার সারমর্ম)
🌀 প্রশ্ন: হেলান দিয়ে বা শুয়ে মোবাইল দেখে কুরআন পাঠ করা যাবে কি? এতে কি সওয়াবের কিছু কমতি হবে?
উত্তর:
দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে বা হেলান দিয়ে কুরআন পড়তে কোন অসুবিধা নেই। এমনকি হাঁটতে হাঁটতে পড়লেও কোন অসুবিধা নেই। চাই তা মুসহাফ হাতে নিয়ে হোক, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল থেকে হোক।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. আমার কোলে হেলান দিয়ে (অর্থাৎ কোলে মাথা রেখে) কুরআন তিলাওয়াত করতেন। সে সময় আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম।” (সহীহ বুখারী, অধ্যায়, হায়েয, অনুচ্ছেদ: ঋতুস্রাব চলাকালীন সময় স্ত্রীর কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা)
পড়াটাই মূল কথা। কী দেখে পড়ছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতরাং মুসহাফ দেখে হোক, মোবাইল হোক বা ল্যাপটপ দেখে পড়া হোক তাতে সওয়াবের মধ্যে কমবেশি হবে না ইনশাআল্লাহ।
হাঁটতে হাঁটতে, রান্না করতে করতে বা সাংসারিক কাজের মধ্যে থেকেও মুখস্থ তিলাওয়াত করতে পারেন। এতেও ইনশাআল্লাহ সওয়াব পাবেন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
•••••••••••••••••••••
🌀প্রশ্ন: আমরা অনেক সময় কুরআনের আয়াত মুখস্থ রাখার সুবিধার্থে কলম দিয়ে দাগ দিয়ে থাকি। এটা কি ঠিক হবে?
উত্তর :
কুরআনের সম্মান বজায় রাখার স্বার্থে কুরআনের মধ্যে এমন কোনো চিহ্ন বসানো উচিৎ নয় যাতে তার সৌন্দর্যের বিকৃতি ঘটে। কুরআনে কারীমকে সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।
তবে একান্ত দরকারে (যেমন, মুখস্থ করার সুবিধার্থে) চিহ্ন দেয়ার প্রয়োজন হলে, আয়াতের নিচে বা উপরে সাধারণ কাঠ পেন্সিল ব্যাবহার করা যেতে পারে, যেন তা প্রয়োজন শেষে মুছে ফেলা যায়। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন রাবার ব্যাবহার করা উচিৎ।
কিন্তু বলপেন, সাইনপেন বা এমন কালি ব্যবহার করা উচিৎ নয় যা পরে উঠিয়ে ফেলা সম্ভব হয় না। আল্লাহু আলাম
•••••••••••••••••••••••
♦🌀প্রশ্ন : কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় হাতে মুখ থেকে থুথু নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থাকি। এতে কি কুরআনের অসম্মান হবে?
উত্তর :
কুরআনের পৃষ্ঠাগুলোকে সহজে উল্টানোর সুবিধার্থে এমনটি করা হয়। এটা দরকারে জায়েয হলেও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উত্তম। কেননা, তা কুরআনের আদবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এমনটি না করাই ভালো। আল্লাহু আলাম।
•••••••••••••••••••••••
♦🌀প্রশ্ন: কুরআনে কারীম হাত থেকে পড়ে গেলে করণীয় কি?
উত্তর :
অসতর্কতা বশত: হাত থেকে কুরআনুল কারীম পড়ে গেলে আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে আগামীতে সর্তক থাকতে হবে যেন, কোনোভাবেই কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন না করা হয়।
উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, কুরআন হাত থেকে পড়লে এর ওজন বরাবর চাল সদকা করতে হবে। এটি একটি ভুল কাজ। কেননা, ইসলামী শরিয়তে এমন কোন নির্দেশনা আসে নি। তাই তা বর্জনীয়।
•••••••••••••••••••••••
♦🌀কুরআন সম্পর্কে কতিপয় ভুল বিশ্বাস ও আচরণ:
🔘 ১) অর্ধ শাবানের রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলে বিশ্বাস করা। অথচ তা অবতীর্ণ হয়েছে রমাযান মাসের কদরের রাতে। (সূরা বাকারা: ১৮৫ ও সূরা কদর)
🔘 ২) কবর জিয়ারত করতে গিয়ে কুরআন (সূরা ফাতিহা, নাস, ফালাক, ইখলাস ইত্যাদি সূরা) পাঠ করা। এটি দলীল বহির্ভূত কাজ হওয়ার কারণে বিদয়াত।
🔘 ৩) মৃত শয্যায় শায়িত ব্যক্তির পাশে কুরআন পাঠ করা। এটি বিদআত। অথচ সুন্নত হচ্ছে, মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ র তালকিন দেয়া বা তাকে শুনিয়ে কালিমা পাঠ করা।
🔘 ৪) কুরআন খতম (শবিনা খতম) করে তার সওয়াব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বখশীয়ে দেয়া। এটিও দলীল বহির্ভূত হওয়ার কারণে বিদআত।
🔘 ৫) অসতর্কতা বশত: হাত থেকে কুরআন পড়ে গেলে তার ওজন বরাবর চাল সদকা করা। এটি শরীয়তের কোন বিধান নয়। বরং এজন্য জন্য আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার করা প্রয়োজন।
🔘 ৬) না বুঝে কুরআন তিলাওয়াত করলে সওয়াব হবে না বলে ধারণা করা। এ ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা হচ্ছে, বুঝে হোক অথবা না বুঝে হোক কুরআন পাঠ করলে প্রতিটি অক্ষরে ১টি করে (যা ১০টি নেকীর সমান) সওয়াব অর্জিত হবে। তবে কুরআন বুঝার চেষ্টা করা ও কুরআন নিয়ে গবেষণা করা নি:সন্দেহে উত্তম কাজ।
🔘 ৭) কুরআন তেলাওয়াতের শেষে ‘সাদাকাল্লাহুল আযীম’ "আল্লাহ সত্য বলেছেন" বলাকে সুন্নত মনে করা ঠিক নয়। কারণ, এর কোন শরঈ ভিত্তি নাই। সুতরাং এটিকে নিয়ম করে পাঠ করা ঠিক নয়।
🔘 ৮) কুরআন হাতে নিয়েই তাতে চুমু খাওয়া। এটিকে নিয়ম করে নেয়া ঠিক নয়। তবে হঠাৎ আবেগে চুমু খেলে তাতে সমস্যা নাই।
🔘 ৯) এ বিশ্বাস করা যে, হাদিস মানার প্রয়োজন নাই। কেবল কুরআন মানাই যথেষ্ট। এটি মুসলিম উম্মাহকে পথভ্রষ্ট করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। হাদিস ব্যতিরেকে কুরআন বুঝা আদৌ সম্ভব নয়।
🔘 ১০) সিডি, ক্যাসেট, মোবাইল ইত্যাদিতে কুরআন তিলাওয়াত চালু করে গল্প-গুজবে ব্যস্ত থাকা বা তার প্রতি অমনোযোগিতা প্রকাশ করা। এটি কুরআনের প্রতি অবহেলার শামিল। আল্লাহ তাআলা কুরআন তিলাওয়াত হলে চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শুনার নির্দেশ নিয়েছেন। (সূরা আরাফ: ২০৪)
🔘 ১১) মোবাইলে রিংটোন হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত রাখা উচিৎ নয়। কারণ, তা টয়লেট বা অপবিত্র স্থানে বেজে উঠতে পারে। তাছাড়া রিং বাজলে আল্লাহর কথাকে কেটে দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলা শুরু হয়। আল্লাহর বাণীর সাথে এরূপ আচরণ শোভনীয় নয়। অনুরূপভাবে মোবাইলের ওয়াল পেপার হিসেবে কুরআনের আয়াত সম্বলিত ছবি সেট করা উচিৎ নয়। কারণ, নাপাক স্থানে তা প্রকাশিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
🔘 ১২) কুরআনের আয়াতকে ঘরের শোভা বর্ধন, বরকত নাজিল বা জিন-ভুত, যাদু, অসুখ-বিসুখ বা কোন কিছুর ক্ষতির আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লটকিয়ে রাখা নাজায়েজ। তবে শিক্ষা, মুখস্ত বা স্মরণ করার উদ্দেশ্য হলে তা জায়েজ আছে।
🔘 ১৩) কুরআনের আয়াত দ্বারা ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy) বানানো উচিৎ নয়। কারণ, তা মানুষের ভুল পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া মানুষ তা ঘরের শোভা বর্দ্ধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে।
🔘 ১৪) কুরআন আয়াত লিখে তাবিজ ব্যবহার করা জায়েজ নয়। যদিও এটি মত বিরোধপূর্ণ বিষয়। তবে সঠিক হল তা জায়েজ নয়। কারণ, এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মৌখিক, কর্মগত বা সম্মতি জ্ঞাপক কোন অনুমোদন পাওয়া যায় না। অনুরূপভাবে তথাকথিত ‘কুরআনের নকশা’ দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম। অবশ্য, অসুখ-বিসুখ, জিনের আক্রমণ, যাদু-টোনা ইত্যাদির প্রভাব কাটাতে কুরআনের আয়াত পড়ে ঝাড়-ফুঁক দেয়া শুধু শরীয়ত সম্মতই না বরং তা সর্বোত্তম চিকিৎসা।
----------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
No comments:
Post a Comment