Monday, November 4, 2019

সর্বোত্তম দিন কোনটি? শুক্রবার নাকি রসুল সঃ এর জন্মদিন সোমরার? --মিলাদুন্নবী প্রসঙ্গ

মিলাদুন্নবী (ﷺ) নামক ইবাদত পালনকারীদের পক্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল হল "যদি"" শব্দটি!!
সর্বোত্তম দিন কোনটি? শুক্রবার না রাসুলের (ﷺ) জন্মদিন সোমবার? রাসুলের (ﷺ) নিজের মুখনিসৃত হাদিস থেকেই জেনে নিন!!
.
রাসুল (ﷺ) বলেন,,
إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَيِّدُ الأَيَّامِ وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَهُوَ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ يَوْمِ الأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ
জুমুআহর দিন হলো সপ্তাহের দিনসমূহের নেতা এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। এ দিনটি আল্লাহর নিকট কুরবানীর দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে অধিক সম্মানিত।
.
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আহমাদ ১৫১২০ তাহক্বীক্ব আলবানী: হাসান। তাখরীজ আলবানী: মিশকাত ১৩৬৩।
.
রাসুল (ﷺ) বলেন,,
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ قُبِضَ وَفِيهِ النَّفْخَةُ وَفِيهِ الصَّعْقَةُ فَأَكْثِرُوا عَلَىَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَىَّ
দিনসমূহের মধ্যে জুমুআর দিনই সর্বোৎকৃষ্ট। এই দিনই আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয় এবং এই দিন তিনি ইন্তিকাল করেন। ঐ দিনে শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে। ঐ দিন সমস্ত সৃষ্টিকুল বেহুশ হবে। অতএব তোমরা ঐ দিন আমার উপর অধিক দুরূদ পাঠ করবে, কেননা তোমাদের দুরূদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে।
.
আবূ দাউদ ১০৪৭, ১৫৩১, নাসায়ী ১৩৭৪, ইবনু মাজাহ ১৬৩৬, আহমাদ ১৫৭২৯, দারেমী ১৫৭২, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৪৬,
রাসুলের (ﷺ) নিজের কথা থেকেই প্রমাণিত হয়ে গেল সূর্যোদয়ের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল শুক্রবার। রাসুলের (ﷺ) জন্মের দিন সোমবার নয়।
বিঃদ্রঃ
অনেকেই যুক্তি দিয়ে বলতে চাইবেন শুক্রবার দিন যদি আদম আঃ সৃষ্টির কারনে এত মর্যাদাপূর্ণ হয় তাহলে রাসুলের (ﷺ) জন্মদিন আরো বেশি মর্যাদাপূর্ণ।
তাদের উদ্যেশ্যে বলব,,
উপরের দুটি হাদিস স্বয়ং রাসুলই (ﷺ) বলেছেন! এখন যদি সোমবারই সর্বশ্রেষ্ঠ হত তাহলে রাসুল (ﷺ) অবশ্যই আমাদের তা বলে যেতেন!!
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন:
«مَا بَقِيَ شَيْءٌ يُقَرِّبُ مِنَ الْجَنَّةِ، ويُبَاعِدُ مِنَ النَّارِ، إِلَّا وَقَدْ بُيِّنَ لَكُمْ»
”জান্নাতের নিকটে নেওয়ার ও জাহান্নাম থেকে দূরে নেওয়ার সকল বিষয়ই তোমাদেরকে বর্ণনা করে দেওয়া হলো।”
(তাবারানী; হা/১৬৪৭)
এ সকল হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর পরে নতুন কোনো রীতি পদ্ধতি চালু করার কোনো অবকাশ নেই।
এখন যদি আপনারা তা মেনে না নেন তাহলে বুঝা যাবে আপনারাই প্রকৃতপক্ষে রাসুলকে (ﷺ) মানছেন না! আপনারা হাদিস অস্বীকারকারি হিসেবে সাব্যস্ত হবেন।
আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও রাসুলের (ﷺ) কথা মেনে না নিবে সে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল আমল করলেও আল্লাহ তার সেই আমলগুলো বাতিল করে দিবেন!
সূরা মুহাম্মদ (محمّد), আয়াত: ৩৩
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوٓا۟ أَعْمَٰلَكُمْ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।
মনে রাখতে হবে সর্বপ্রথম যুক্তি দিয়েছিল ইবলিশ শয়তান!!
ইবনু সীরীন রাহঃ বলেন,
.
أَوَّلُ مَنْ قَاسَ إِبْلِيسُ، وَمَا عُبِدَتِ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ
ইবলিসই সর্বপ্রথম কিয়াস করেছিল এবং একমাত্র এই কিয়াসের ভিত্তিতেই সূর্য ও চন্দ্রের ইবাদত করা হয়েছিল।
.
তাবারী, আত তাফসীর, ৮/১৩১; ইবনু আব্দুল বার, জামি বায়ানিল ইলম, নং ১৬৭৫; খতীব, আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, নং ৫০৬; সুনান আদ-দারেমী
হাদিস নং ১৯৮
আল্লাহ শয়তানের সে যুক্তির কথাটি কোরআনে এভাবে বলেন,,
وَ قَالَ مَا نَہٰکُمَا رَبُّکُمَا عَنۡ ہٰذِہِ الشَّجَرَۃِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَا مَلَکَیۡنِ اَوۡ تَکُوۡنَا مِنَ الۡخٰلِدِیۡنَ
এবং (শয়তান) বলল,, তোমাদের রব তোমাদেরকে কেবল এ জন্য এ গাছ থেকে নিষেধ করেছেন যে, (খেলে) তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা তোমরা চিরস্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
আরাফ/২০
وَ قَاسَمَہُمَاۤ اِنِّیۡ لَکُمَا لَمِنَ النّٰصِحِیۡنَ
আর সে (শয়তান) তাদের নিকট শপথ করল যে, নিশ্চয় আমি তোমাদের উভয়ের জন্য কল্যাণকামীদের একজন।
আরাফ/২১
কাজেই যুক্তি দিয়ে কোন কিছু ইসলামে প্রবেশ করাবেন না,,
এটা আল্লাহর রাসুলকে (ﷺ) অপমান করারই নামান্তর।
যদি সত্যিই শয়তানের অনুসারী না হয়ে আল্লাহর রাসুলের (ﷺ) অনুুুসারী হয়ে থাকেন আর প্রকৃতপক্ষে রাসুলকেই (ﷺ) ভালবাসেন তাহলে রাসুলের নিচের কথার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে আপনাদের কথার পক্ষে কোরআন ও সহিহ হাদিস থেকে দলিল পেশ করুন।
.
নবী করীম (ﷺ) বলেন,
الْبَيِّنَةُ عَلَى الْمُدَّعِي
যে কোন ব্যাপারে দাবীদারকে দলীল পেশ করতে হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৭৬৯, হাদীছ ছহীহ)।
.
রাসূল (ﷺ) বলেন,
مَنِ ادَّعَى مَا لَيْسَ لَهُ فَلَيْسَ مِنَّا وَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি এমন কিছুর দাবী করে যা তার নয় অথবা তার অবগতিতে নেই, তাহলে সে আমার শরীআতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে তার বাসস্থান জাহান্নামে করে নেয়
(মুসলিম, মিশকাত হা/৩৭৬৫)।
.
আপনাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল হল "যদি" শব্দটি।
.
যদি ওটা হয় তাহলে এটা করলে দোষ কি! যদি শুক্রবার দিন এমন হয় তাহলে সোমবার দিন কেন হবে না!!
যদি আদমের জন্য ওটা হয় তাহলে নবীর (ﷺ) জন্য কেন হবে না?
দেখুন রাসুল (ﷺ) যদি নিয়ে কি বলেন, ,
فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا ‏.‏ وَلَكِنْ قُلْ قَدَّرَ اللَّهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ ‏"‏ لَوْ ‏"‏ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ ‏"‏ ‏.‏
তোমার কোন ক্ষতি হলে বলো না, যদি আমি এভাবে করতাম, বরং তুমি বল, আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। কেননা যদি (লাও) শব্দটি শয়তানের তৎপরতার দ্বার খুলে দেয়।
.
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: মুসলিম ২৬৬৪, আহমাদ ৮৫৭৩, ৮৬১১। তাহক্বীক্ব আলবানী: হাসান। তাখরীজ আলবানী: ফিযাল ৩৫৬।
কাজেই "যদি" শব্দ দিয়ে আপনারা কোন কিছু ইসলামী শরিয়তে অনুপ্রবেশ করাবেন না!
এতে নেকির পরিবর্তে আপনারা শয়তানের ভয়ংকর ফাঁদে আটকে পড়ে ঈমান আমল সবই হারাবেন।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...