#সংজ্ঞা : ‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি (الإعلام)। পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে ছালাতে আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন হয়।[মির‘আত ২/৩৪৪-৩৪৫, ‘ছলাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযান’ অনুচ্ছেদ-৪।]
🗞#সূচনা : ওমর ফারূক (রঃ) সহ একদল ছাহাবী একই রাতে আযানের একই স্বপ্ন দেখেন ও পরদিন সকালে ‘অহি’ দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট হ’লে রছূলুল্লহ (ছাঃ) তা সত্যায়ন করেন এবং বেলাল (রাঃ)-কে সেই মর্মে ‘আযান’ দিতে বলেন। [ আবুদাঊদ হা/৪৯৯, ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৪৯৪-৪৯৫, ২/১৬৫-৭৫; আবুদাঊদ, দারেমী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৫০।]
ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) সর্বপ্রথম পূর্বরাতে স্বপ্নে দেখা আযানের কালিমা সমূহ সকালে এসে রছূলুল্লহ (ছঃ)-এর নিকটে বর্ণনা করেন। পরে বেলালের কণ্ঠে একই আযান ধ্বনি শুনে হযরত ওমর (রঃ) বাড়ী থেকে বেরিয়ে চাদর ঘেঁষতে ঘেঁষতে ছুটে এসে রছূলুল্লহ (ছাঃ)-কে বলেন, ‘যিনি আপনাকে ‘সত্য’ সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি’। একথা শুনে রছূলুল্লহ (ছাঃ) ‘ফালিল্লা-হিল হাম্দ’ বলে আল্লহর প্রশংসা করেন’।[আবুদাঊদ, (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৬৫০।]
একটি বর্ণনা মতে ঐ রাতে ১১ জন ছাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’। [মিরক্বাত শরহ মিশকাত ‘আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১৪৯ পৃঃ]
উল্লেখ্য যে, ওমর ফারূক (রঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি।[আবুদাঊদ (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৪ ‘আযানের সূচনা’ অনুচ্ছেদ। ]
#আযানের_ফযীলত (فضل الأذان) :
#আবু_ছাঈদ_খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রছূলুল্লহ (ছঃ) এরশাদ করেন,
لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ وَّلاَ إِنْسٌ وَّ لاَ شَيْئٌ إِلاَّ شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رواه البخاريُّ-
🗞‘মুওয়ায্যিনের আযানের ধ্বনি জিন ও ইনসান সহ যত প্রাণী শুনবে, ক্বিয়ামতের দিন সকলে তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে’। [বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযানের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৫।]
🗞 রছূলুল্লহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুওয়ায্যিনের গর্দান সবচেয়ে উঁচু হবে’।[মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৪।]
🗞মুওয়ায্যিনের আযান ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সকল বস্ত্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে। ঐ আযান শুনে যে ব্যক্তি ছলাতে যোগ দিবে, সে ২৫ ছলাতের সমপরিমাণ নেকী পাবে। মুওয়ায্যিনও উক্ত মুছল্লীর সমপরিমাণ নেকী পাবে এবং তার দুই আযানের মধ্যবর্তী সকল (ছগীরা) গুনাহ মাফ করা হবে’।[নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/৬৬৭।]
🗞আযান ও এক্বামতের ধ্বনি শুনলে শয়তান ছুটে পালিয়ে যায় ও পরে ফিরে আসে’।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৫।]
🗞 যে ব্যক্তি বার বছর যাবৎ আযান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তার প্রতি আযানের জন্য ৬০ নেকী ও এক্বামতের জন্য ৩০ নেকী লেখা হয়’। [ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৭৮।]
🗞রছূলুল্লহ (ছঃ) বলেন, ইমাম হ’ল (মুছল্লীদের ছলাতের) যামিন ও মুওয়ায্যিন হ’ল (তাদের ছলাতের) আমানতদার। অতঃপর তিনি তাদের জন্য দআ করে বলেন, হে আল্লহ! তুমি ইমামদের সুপথ প্রদর্শন কর ও মুওয়ায্যিনদের ক্ষমা কর।[ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৭৮।]
🗞আযানের কালেমা সমূহ (كلمات الأذان) : ১৫ টি:
1★★ আল্ল-হু আকবার [اللهُ أَكْبَرُ ....৪ বার]
(অর্থ : আল্লহ সবার চেয়ে বড় বা আল্লহ মহান)
(অর্থ : আল্লহ সবার চেয়ে বড় বা আল্লহ মহান)
2★★ আশ'হাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্ল---হ أَشْهَدُ أَن لاَّ إلَهَ إِلاَّ اللهُ ....[২ বার]
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)
3★★ আশ'হাদু আন্না মুহাম্মাদার রছূ-লুল্ল---হ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ ...[২ বার]
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লহর রছূল)
4★★ হাইয়া ‘আলাছ ছলা-হ (ছলাতের জন্য এসো) حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ .[..২ বার]
5★★ হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ (কল্যাণের জন্য এসো) حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ..[.২বার]
6★★ আল্ল-হু আকবার (আল্লহ সবার চেয়ে বড়) اللهُ أَكْبَرُ ...২ বার
7★★ লা--- ইলাহা ইল্লাল্ল---হ (আল্লহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই) لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ১ বার মোট= ১৫ বার।
[আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) বর্ণিত; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৬৫০; আবুদাঊদ হা/৪৯৯, ‘কিভাবে আযান দিতে হয়’ অনুচ্ছেদ-২৮; মির‘আত হা/৬৫৫, ২/৩৪৪-৩৪৫।]
ফজরের আযানের সময় হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ এর পরে اَلصَّلاَةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ আছছলা-তু খয়রুম মিনান নাঊ--ম’ (নিদ্রা হতে ছালাত উত্তম) ২ বার বলবে।
[আবুদাঊদ হা/৫০০-০১, ৫০৪; ‘আওনুল মা‘বূদ, আবু মাহ্যূরাহ হ’তে, হা/৪৯৬; মিশকাত হা/৬৪৫। ইবনু রাসলান, আমীরুল ইয়ামানী ও শায়খ আলবানী একে তাহাজ্জুদের আযানের সাথে যুক্ত বলেন (সুবুলুস সালাম হা/১৬৭-এর ব্যাখ্যা, ১/২৫০; তামামুল মিন্নাহ ১৪৭ পৃঃ)। আবদুর রহমান মুবারকপুরী বলেন, বরং ফজরের আযানের সাথে হওয়াটাই ‘হক’ (حق) এবং এটাই ব্যাপকভাবে গৃহীত মাযহাব’ (তুহফা ১/৫৯৩, হা/১৯৮-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ); রিয়াদ, লাজনা দায়েমাহ ফৎওয়া নং ১৩৯৬।]
No comments:
Post a Comment