Thursday, November 7, 2019

নাবী সঃ সৃষ্টি না হলে আসমান জমিন কিছুই সৃষ্টি হতো না! -এটা কি সত্য?

“হুজুররা ওয়াজে বলেন, যদি নবী না হতেন তাহলে আসমান জমিন কিছুই সৃষ্টি করা হত না”। এটা কি সহিহ হাদিস??

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ,
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আসমান ও জমিন সৃষ্টি করা হয়নি!
নবী সঃ না হলে আসমান যমিন কিছুই সৃষ্টি করা হত না বলে বিশ্বাস করা সুস্পষ্টভাবে কুফরি!
কারন, এটা সরাসরি কোরআন বিরোধী কথা!
বরং আসমান ও জমিন সৃষ্টির কারণ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই নিম্নের আয়াতে বলে দিয়েছেন:
اَللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ وَّ مِنَ الۡاَرۡضِ مِثۡلَہُنَّ ؕ یَتَنَزَّلُ الۡاَمۡرُ بَیۡنَہُنَّ لِتَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ۬ۙ وَّ اَنَّ اللّٰہَ قَدۡ اَحَاطَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عِلۡمًا
“তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ জমিন সৃষ্টি করেছেন, এগুলির মাঝে তার নির্দেশ অবতীর্ণ হয় যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে”।
[সুরা আত তালাক,আয়াত ১২]
অর্থাৎ আমরা যাতে আল্লাহর নির্দেশ জানতে পারি সেই কারনেই আসমান জমিন সৃষ্টি করা হয়েছে নবীর জন্য নয়..
কুরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ(6
আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।
[সুরা যারিয়াত,আয়াত ৫৬]
অর্থাৎ মানুষ ও জিনকে আল্লাহ তার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন নবীর জন্য নয়…
অর্থাৎ আসমান জমিন মানুষ জিন কিছুই আল্লাহ নবীর জন্য সৃষ্টি করেননি …
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা অপবাদ, তার কোনো ভিত্তি নেই।
অর্থাৎ নবীর সঃ নামে বানানো জাল হাদিস l

”আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি আসমান জমিন (কোন কিছুই) সৃষ্টি করতাম না” (হাদিসে কুদসি)
-- এই জাল হাদিসটি সাধারন মানুষদের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে এবং এর উপর ভিত্তি করে এই কথাটিকে আকিদাহ তথা মৌলিক বিশ্বাস বানিয়ে রেখেছে, যা অপ্রমাণিত।
হাদীস বিশেষজ্ঞরা এ ব্যপারে একমত যে, এটি ভিত্তিহিন রেওয়ায়েত, মিথ্যুকদের বানানো কথা। রসুল (সঃ) এর হাদীসের সাথে এর সামান্যতম সম্পর্কও নেই।
কাজেই এটি দলিল হিসেবে কখনো গ্রহণযোগ্য হবেনা।
√ ইমাম সাগানী,
√আল্লামা পাটনী,
√মোল্লা আলী কারী হানাফি
√আল-আজুলানী,
√শাওকানি,
√আবদুল হাই লাখনবী হানাফি
√আল্লামা কাওকাজী,
√ইমাম শাওকানী,
√ আল্লামা সুয়ুতি,
√ইবনুল জাওযী,
√আলবানি,
√মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ ইবন সিদ্দিক আল-গুমারী এবং
√শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী (রাঃ) প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীসটিকে জাল বলেছেন।
তথ্য সূত্র –
√ আল-মাউদু’আত পৃষ্ঠা নঃ ৫২;
√ আল-আসরার, পৃষ্ঠা নঃ ১৯৪;
√ আল-মাসনু ১১৬,১৫০;
√ কাশফুল খাফা ২/২১৪, ২/১৬৪;
√ আল-ফাওয়াইদ, ২/৪৪১;
√ আল-আসারুল মারফুআ, পৃষ্ঠা নঃ ৪৪
√ রিসালাতুল মাওযুআতঃ ৯,
√ তাযকিরাতুল মাওযুআতঃ ৮৬,
√ আল-লু’লু’উল মারসুঃ ৬৬,
√ আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমুআঃ ২/৪১০,
√ আল- বুসীরী মাদেহুর রাসুলিল আযম
সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামঃ ৭৫,
√ ফাতাওয়া আযীযিয়াঃ ২/১২৯,
√ ফাতাওয়া মাহমুদিয়াঃ ১/৭৭

হে আল্লাহ আমাদের নাবী, তার পরিবারবর্গ ও তার সকল সাথীর উপর সালাত ও সালাম নাযিল করুন।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...