বিষয়ঃ মিলাদ কিয়াম বা এর অনুষ্ঠান শরিয়াতে পালন করা যাবে কি?
---------------
---------------
আলহামদুলিল্লাহ। দুরুদ ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আমাদের ভালবাসার মানুষ কলিজার টুকরা নবী মুহাম্মাদের (সঃ) উপর। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبٰطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
"আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্য কে গোপন করো না।"
(সূরা বাকারা : ৪২)
-------
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে, যার বিষয়ে আমার কোনো নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ১৭১৮]
সহীহ বুখারীর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
‘‘তোমরা আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জন করো না, যেমন নাসারাগণ অতিরঞ্জন করেছে ইবনু মারইয়াম সম্পর্কে। আমি তো শুধূ আল্লাহর বান্দা। বরং তোমরা বলো – (আমি) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
وتكتموا الحق وأنتم تعلمون أي لا تكتموا ما عندكم من المعرفة برسولي وبما جاء به وأنتم تجدونه عندكم فيما تعلمون من الكتب التي بأيديكم.
এর অর্থ, তোমরা আমার রাসূল মুহাম্মাদ এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা সম্পর্কে যে জ্ঞান তোমাদের নিকট আছে তা গোপন কর না। অথচ তার সম্পর্কে তোমরা তোমাদের কাছে যে গ্রন্থ আছে তাতে নিশ্চিতভাবেই অনেক কিছু পাচ্ছ। (আত-তাফসীরুস সহীহ : ১/১৪৮)
বিখ্যাত তাবেঈন মুজাহিদ (রহঃ) বলেন,
يكتم أهل الكتاب محمداً - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وهم يجدونه عندهم في التوراة والإنجيل.
"আহলে কিতাবগণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গোপন করে থাকে। অথচ তারা তার ব্যাপারে তাওরাত ও ইঞ্জীলে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা পেয়ে থাকে। (জামেউল বায়ান)
বিখ্যাত তাবেঈন কাতাদাহ ও হাসান বসরী (রহঃ) বলেন,
لا تلبسوا اليهودية والنصرانية بالإسلام إن دين الله الإسلام، واليهودية والنصرانية بدعة ليست من الله.
‘হককে বাতিলের সাথে মিশ্রণ ঘটিয়ো না’ এর অর্থ ইয়াহুদীবাদ ও নাসারাবাদকে ইসলামের সাথে এক করে দেখবে না। কেননা, আল্লাহ্র নিকট একমাত্র দ্বীন হচ্ছে, ইসলাম। আর ইয়াহুদীবাদ ও নাসারাবাদ (খৃষ্টবাদ) হচ্ছে বিদ’আত বা নব উদ্ভাবিত বিষয়। সেটি কখনো আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নয়। সুতরাং এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিভিন্ন ধর্মকে একাকার করে এক ধর্মে পরিণত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে নাজায়েয। [আত-তাফসীরুস সহীহ ১/১৪৭]
ইমাম মালেক (রহঃ) স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফেঈকে বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীদের সময়ে যে সব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমান কালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভাল কাজ বা ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন।’
(আল-ইনছাফ, পৃঃ ৩২)।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ কয়েকটি মত হলোঃ
.
(১) রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখ – প্রসিদ্ধ মুহাদ্দীস আবু মা’শার আস-সিনদী(মৃঃ ১৭০ হি) এই মতটি গ্রহন করেছেন।
.
(২) রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ – এই মতটি সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও জুবাইর ইবন মুত’ইয়িম (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম), তাবিয়ী জুবাইর ইবন মুত’ইয়িম, ইমাম ইবন হাযম, আল-হুমাইদি(মৃঃ ৪৮৮ হিজরী) হতে বর্নিত। ইমাম ইবন আব্দুল বার বলেছেনঃ ঐতিহাসিকগন এই মতটিকেই সঠিক বলে মনে করেন।
.
(৩) রবিউল আউয়াল মাসের ১০ তারিখ – এই মতটি সাহাবী হুসাইন ইবন আলী(রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর পৌত্র মুহাম্মাদ ইবন আলী আল-বাকের(মৃঃ ১১৪ হি), ইমাম আশ-শাবী(মৃঃ ১০৪ হিজরী), আল্লামা আল-ওয়াকিদী(মৃঃ ২০৭ হি) গ্রহন করেছেন।
.
(৪) রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ – এই মতটি মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক্ব(মৃঃ ১৫১ হি) গ্রহন করেছেন।
.
অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম কত তারিখের বিষয়ে প্রচুর মতানৈক্য বিদ্যমান এবং সঠিক তারিখ নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।
.
দ্বিতীয়তঃ যারাই ঈদে মিলাদুন্নাবী পালন করেন তারা এটি পালন করেন সাওয়াব অথবা আল্লাহ’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। সুতরাং, এটি একটি “আমল” বা “ইবাদাত”। কিন্তু সাহাবী, তাবিয়ী, তাবি-তাবিয়ী, ৪ ইমাম, তারা কেউই এই “ঈদে মিলাদুন্নাবী” পালন করেন নি, ৪ মাযহাবের মুতাকাদ্দিমীন(পূর্ববর্তী) ফক্বীহগন কেউই এটি উৎযাপন করেন নি, তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব যে, এতো গুরুত্ত্বপূর্ন একটি ইবাদাত তাদের সকলের পক্ষ থেকে ছুটে গেলো??
.
ছুটে যায় নি, বরং তাদের যুগে এটির অস্তিত্বই ছিল না! “ঈদে মিলাদুন্নবী”র সূচনা করে ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্নর ‘আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী’ (মৃঃ ৬৩০ হি.)। মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী ৬০৪ [অন্য বর্ননায় ৬২৫] হিজরীতে সর্বপ্রথম মিলাদুন্নবী উৎযাপন করে। [ইমাম ইবন কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১৩/১৩৭]
.
ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন,
.
(১) রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখ – প্রসিদ্ধ মুহাদ্দীস আবু মা’শার আস-সিনদী(মৃঃ ১৭০ হি) এই মতটি গ্রহন করেছেন।
.
(২) রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ – এই মতটি সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও জুবাইর ইবন মুত’ইয়িম (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম), তাবিয়ী জুবাইর ইবন মুত’ইয়িম, ইমাম ইবন হাযম, আল-হুমাইদি(মৃঃ ৪৮৮ হিজরী) হতে বর্নিত। ইমাম ইবন আব্দুল বার বলেছেনঃ ঐতিহাসিকগন এই মতটিকেই সঠিক বলে মনে করেন।
.
(৩) রবিউল আউয়াল মাসের ১০ তারিখ – এই মতটি সাহাবী হুসাইন ইবন আলী(রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর পৌত্র মুহাম্মাদ ইবন আলী আল-বাকের(মৃঃ ১১৪ হি), ইমাম আশ-শাবী(মৃঃ ১০৪ হিজরী), আল্লামা আল-ওয়াকিদী(মৃঃ ২০৭ হি) গ্রহন করেছেন।
.
(৪) রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ – এই মতটি মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক্ব(মৃঃ ১৫১ হি) গ্রহন করেছেন।
.
অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম কত তারিখের বিষয়ে প্রচুর মতানৈক্য বিদ্যমান এবং সঠিক তারিখ নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।
.
দ্বিতীয়তঃ যারাই ঈদে মিলাদুন্নাবী পালন করেন তারা এটি পালন করেন সাওয়াব অথবা আল্লাহ’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। সুতরাং, এটি একটি “আমল” বা “ইবাদাত”। কিন্তু সাহাবী, তাবিয়ী, তাবি-তাবিয়ী, ৪ ইমাম, তারা কেউই এই “ঈদে মিলাদুন্নাবী” পালন করেন নি, ৪ মাযহাবের মুতাকাদ্দিমীন(পূর্ববর্তী) ফক্বীহগন কেউই এটি উৎযাপন করেন নি, তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব যে, এতো গুরুত্ত্বপূর্ন একটি ইবাদাত তাদের সকলের পক্ষ থেকে ছুটে গেলো??
.
ছুটে যায় নি, বরং তাদের যুগে এটির অস্তিত্বই ছিল না! “ঈদে মিলাদুন্নবী”র সূচনা করে ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্নর ‘আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী’ (মৃঃ ৬৩০ হি.)। মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী ৬০৪ [অন্য বর্ননায় ৬২৫] হিজরীতে সর্বপ্রথম মিলাদুন্নবী উৎযাপন করে। [ইমাম ইবন কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১৩/১৩৭]
.
ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন,
তার মিলাদ মাহফিল-কাহিনী ভাষায় ব্যক্ত করার মত নয়। মিলাদ অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে এমনকি আলজেরিয়া হতেও মানুষের সমাগম ঘটত । মিলাদের দিন তার ও তার স্ত্রীর জন্য সুরম্য কাঠের গম্বুজাকৃতির তাঁবু তৈরী করা হত। সেখানে গান বাজনা ও খেলাধুলার আসর জমত। মুজাফফর প্রত্যহ আসরের পরে সেখানে আসত এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করত। অনুষ্ঠান কয়েক দিন যাবত চলত। অসংখ্য পশু জবাই করে আগত ব্যক্তিদের জন্য ভোজসভার আয়োজন করা হত। এ উপলক্ষে সে তিন লাখ দিনার বাজেট পেশ করত। ফকির-দরবেশদের জন্য দু’ লাখ এবং অতিথিদের জন্য এক লাখ দিনার। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনা করেন, আমি দস্তরখানায় বিশেষ প্রজাতির একশত ঘোড়া, পাঁচ হাজার বকরীর মাথা, দশ হাজার মুরগি, এক লাখ গামলা, এবং তিন হাজার হালুয়ার পাত্র গণনা করেছি।
(আল মিনহাজুল ওয়াজিহ ১৬২)
তৃতীয়তঃ আবেগী মুসলিমগণ এটা ভাবতে পারেন যে, আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মদিন পালন করবো, এ’তে দোষ কোথায়? মূল বিষয় হলো শারী’আতে আপনার আবেগের স্থান নেই, আপনার পছন্দ অনুসারে শারী’আহ চলবে না বরং শারী’আতের বিধান অনুসারে আপনাকে চলতে হবে।
.
ঈদে মিলাদুন্নাবী উৎযাপন করা “রাসুলুল্লাহ (ﷺ)”-এর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ নয়, বরং এটা উৎযাপন না করে এটাকে পরিত্যাগ করাই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) - এর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
.
ঈদে মিলাদুন্নাবী উৎযাপন করা “রাসুলুল্লাহ (ﷺ)”-এর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ নয়, বরং এটা উৎযাপন না করে এটাকে পরিত্যাগ করাই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) - এর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
কেননা যদি ঈদে মিলাদুন্নাবী পালন করা “রাসুলুল্লাহ (ﷺ)” এর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হতো, তাহলে সাহাবীগন তা অবশ্যই পালন করতেন।
.
প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ আল্লামা কাসানী হানাফী মাযহাবের উসূল উল্লেখ করেছেন যে, কোনো 'মুস্তাহাব' আমলও যদি বিদ'আত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে তাহলে সেই 'মুস্তাহাব' আমলটি পরিত্যাগ করা 'ওয়াজিব'।
প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ আল্লামা কাসানী হানাফী মাযহাবের উসূল উল্লেখ করেছেন যে, কোনো 'মুস্তাহাব' আমলও যদি বিদ'আত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে তাহলে সেই 'মুস্তাহাব' আমলটি পরিত্যাগ করা 'ওয়াজিব'।
[.আল্লামা কাসানী, বাদাইউস সানায়ী, ১/১৭৪]
যেহেতু রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মিলাদুন্নবী উৎযাপনের কথা বলেন নি, তার সাহাবীগণ তা করেন নি, তাবিয়ী ও তাবি-তাবিয়ীগন ও ৪ ইমাম তথা সালাফে সালেহীনগন এবং পূর্ববর্তী কোনো মুহাদ্দীস-ফক্বীহ এই আমল করেন নি, বরং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ওয়াফাতের ৬০০ বছর পর আমলটির আবিষ্কার হয়েছে, তাই এটি বিদ’আহ ও প্রত্যাখ্যাত একটি আমল।
সালাফে সালেহীনদের ফাতওয়াঃ
এ প্রসঙ্গে ইমাম শাতেবি (রহঃ) যা বলেছেন বুদ্ধিমান ব্যক্তির সে কথাটি ভেবে দেখা উচিত:
فَإِذَا صَارَ الْمُكَلَّفُ فِي كُلِّ مَسْأَلَةٍ عَنَّتْ3 لَهُ يَتَّبِعُ رُخَصَ4 الْمَذَاهِبِ، وَكُلَّ قَوْلٍ وَافَقَ فِيهَا هَوَاهُ؛ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ التَّقْوَى، وَتَمَادَى فِي مُتَابَعَةِ الْهَوَى، وَنَقَضَ مَا أَبْرَمَهُ الشَّارِعُ وَأَخَّرَ ما قدمه، وأمثال ذلك كثيرة.
“মুকাল্লাফ (শরয়ি ভারপ্রাপ্ত) ব্যক্তি যে সকল মাসয়ালার মুখোমুখি হয় যদি প্রত্যেক মাসয়ালায় মাযহাবগুলোর সহজ অভিমত (রোখসত) এর অনুসরণ করে, যে সব অভিমত নিজের মনোবৃত্তির সাথে খাপ খায় সেটার অনুকরণ করে; তাহলে সে তাকওয়ার রজ্জু খুলে ফেলল এবং নিরন্তর কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলল এবং শরিয়তপ্রণেতা যে সুদৃঢ় নির্দেশ দিয়েছেন সেটা লঙ্ঘন করল, যেটাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সেটাকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল।”[আল-মুওয়াফাকাত : ৩/১২৩]
১.
হাফেজ ফিকহুল ইমাম সাখাবী রহঃ বলেন
হাফেজ ফিকহুল ইমাম সাখাবী রহঃ বলেন
ان عمل المولد الشريف لم ينقل عن احد من السلف الصالح في القرون الثلاثة الفاضلة و انما حدث بعدها و قال و اول من احدثه صاحب اربل الملك مظفر الدين ابو سعيد كوكيري.
অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর আমল সর্বোত্তম তিন যুগের সালফে সালেহীনের কোনো একজন হতেও বর্ণিত নয়, বরং পরবর্তী যুগে আবিস্কৃত। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম যিনি তা আবিস্কার করেন তিনি হলেন আরবলের অধিকারী বাদশাহ মুজাফফর উদ্দিন আবু সাঈদ কুকুরী।{আল-বালাগুল মুবীন পৃ ৪}।
ইমাম আস-সাখাওয়ী রাহিমাহুল্লাহ তার ফাতওয়াতে বলেছেন:
“মাওলীদ (মিলাদুন্নবী/নবীর জন্মদিন) পালন করার ব্যাপারে ইসলামের শ্রেষ্ঠ প্রথম তিন প্রজন্ম থেকে কেউ পালন করেছেন বলে এমন কিছু পাওয়া যায়না, বরঞ্চ এটি (মিলাদুন্নবী/নবীর জন্মদিন) তাদের মৃত্যুর অনেক পরে নতুন উদ্ভাবিত একটি উৎসব।”
['রাসঈল ফী হুকম আল-ইহতীফাল বিল-মাওলীদ আন-নবওয়ী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ;৪৪৪]
২/
প্রখ্যাত আলেম আল্লাম তাজুদ্দীন ফাকেহানী রহঃ লিখেছেন
প্রখ্যাত আলেম আল্লাম তাজুদ্দীন ফাকেহানী রহঃ লিখেছেন
لا اعلم لهذا المولد اصلا في كتاب و سنة و لا ينقل عمله عن احد من العلماء الائمة الذين هم القدوة في الدين المتمسكون باثار المتقدمين بل هو بدعة احدثه البطالون و شهوة نفس اعتني بها الاكالون بدليل انا ادرنا عليه الاحكام الخمسة فقلنا ان يكون واجبا او مندوبا او مباحا او مكروها او حراما و ليس بواجب اجماعا و لا مندوبا لان حقيقة المندوب ما طلبه الشرع من غير ذم علي تركه و هذا لم يأذن فيه الشرع و لا فعله الصحابة و التابعون المتدينون فيما علمت و هذا جوابي عنه بين يدي الله ان عنه سألت و لا جائز ان يكون مباحا لان الابتداع في الدين ليس بمباح باجماع المسلمين فلم يبق الا ان يكون مكروها او حراما الخ
অর্থাৎ এ মিলাদুন্নবী পালনের কোনো দলিল প্রমাণ কুরআন ও সুন্নাহে আছে বলে আমার জানা নেই।আর না তা ধর্মের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কোনো বিজ্ঞ ইমাম থেকে বর্ণিত, যাঁরা নিজেদের পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণে অটল; বরং এটি একটি বিদয়াত। অকর্মা ধূর্তরাই এটা আবিস্কার করেছে, আর পেটুকরাই তা লুফে নিয়েছে।এটি বিদয়াত হওয়ার প্রমাণ এই যে, আমরা পাঁচ প্রকারের হুকুম চক্রে ঘুরিয়ে দেখলাম যে, তা ওয়াজিব, মুসতাহাব, মুবাহ, হারাম বা মাকরূহ এ সবের কোনটিতে পড়ে। পক্ষান্তরে সকলের ঐক্যমতে তা ওয়াজিব আর মুসতাহাব কোনোটি নয়।কেননা মুস্তাহাব বলা হয় শরিয়তে যে কাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে, তবে তা না করলে কোনো তিরস্কার নেই। পক্ষান্তরে শরিয়তে এর (মিলাদ পালন) প্রতি উৎসাহ দিয়েছে কিন্তু না করলে কোনো তিরস্কার নেই।পক্ষান্তরে শরীয়তে এর প্রতি উৎসাহ তো দেয়নি, অনুমতিও নেই।আর আমার জানা মতে ধর্মভীরু সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীনগণ উনারাও তা করেননি। আল্লাহ তায়ালার দরবারে আমাকে জিজ্ঞাস করা হলে সেখানেও আমার একই জবাব। আর মুবাহও হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা ধর্মের মধ্যে বিদয়াতের কোনো স্থান নেই। এ ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেছেন। সুতরাং এবার বাকি থাকল, তা হারাম হবে নাকি মাকরূহ হবে!”
{সূত্র আল-বালাগুল মুবীন পৃ ৪}।
৩.
আল্লামা ইবনে আমীর আল-হাজ্জ মালেকী রহঃ মুদখাল কিতাবে লিখেছেন,
আল্লামা ইবনে আমীর আল-হাজ্জ মালেকী রহঃ মুদখাল কিতাবে লিখেছেন,
ﻭﻣﻦﺟﻤﻠﺔ ﻣﺎ ﺍﺣﺪﺛﻮﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﻣﻊ ﺍﻋﺘﻘﺎﺩﻫﻢ ﺍﻥ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺍﻛﺒﺮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺍﺕ ﻭﺍﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﺸﻌﺎﺋﺮ ﻣﺎ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺸﻬﺮ ﺍﻟﺮﺑﻴﻊ ﺍﻻﻭﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﻭﻗﺪ ﺍﺣﺘﻮﻯ ﺫﻟﻚ ﻋﻠﻰ ﺑﺪﻉ ﻭﻣﺤﺮﻣﺎﺕ ﺍﻟﻰ ﺍﻥ ﻗﺎﻝ ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻟﻤﻔﺎﺳﺪ ﻣﺘﺮﺗﺒﺔ ﻋﻠﻰ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﺍﺫﺍ ﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺴﻤﺎﻉ ﻓﺎﻥ ﺧﻼ ﻣﻨﻪ ﻭﻋﻤﻞ ﻃﻌﺎﻣﺎ ﻓﻘﻂ ﻭﻧﻮﻯ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﻭﺩﻋﺎ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻻ ﺧﻮﺍﻥ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﺫﻛﺮﻩ ﻓﻬﻮ ﺑﺪﻋﺔ ﺑﻨﻔﺲ ﻧﻴﺘﻪ ﻓﻘﻂ ﻻﻥ ﺫﻟﻚ ﺯﻳﺎﺩﺓ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﻟﻴﺲ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﺍﻟﻤﺎﺿﻴﻦ ﻭ ﺍﺗﺒﺎﻉ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﺍﻭﻟﻰ
অর্থাৎ, মানুষ যেসব বিদয়াত আবিস্কার করেছে তন্মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী নামে যে অনুষ্ঠান করে এবং একে অনেক বড় ইবাদত এমনকি ইসলামী নিদর্শনাবলীর প্রদর্শনীও মনে করে। অথচ তা নানা রকম বিদয়াত আর হারাম কাজের সমষ্টিতে পরিণত হয়েছে। অতপর বলেন, এসব খারাবি মিলাদ মাহফীলের ক্ষেত্রে তখন ধর্তব্য হবে, যখন তাতে গান থাকবে। আর যদি এসব হারাম কাজ মুক্ত হয় এবং শুধু খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়, আত্মীয় স্বজন দোস্ত আহবাবদের দাওয়াত করা হয়, আর নিয়ত করা হয় মিলাদ পালনের; তথাপি এ রকম নিয়তের কারণেই তা বিদয়াত হবে। কেননা এটা ধর্মের মধ্যে সংযোজন এবং পূর্বসূরী সলফের অনুসৃত কোনো তরিকা নয়। অথচ সলফের অনুসরনই শ্রেয়।”{সূত্র মুদখাল ১/৮৫, রাহে সুন্নাত ১৬৪, আল-বালাগুল মুবীন
৪।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহঃ “সিরাতুল মুস্তাকিম” কিতাবে লিখেছেন
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহঃ “সিরাতুল মুস্তাকিম” কিতাবে লিখেছেন
و كذا ما احدثه بعض الناس اما مضاهاة للنصاري في ميلاد عيسي عليه السلام و اما محبة للنبي صلعم و تعظيما له والله حثهم علي هذه المحبة و التعظيم باجتهاد في الاتباع لا علي البدع من اتخاذ مولد النبي صلعم عيدا مع اختلاف الناس في مولده فان هذا لم يفعله السلف مع قيام المقتضي له و عدم المانع منه الخ
অর্থাৎ এভাবে কিছু লোক মিলাদুন্নবী (নবীজির জন্মদিবস পালন) নামে যে বিদয়াতের জন্ম দিয়েছে এটা হযরত ঈসা আঃ এর জন্মোৎসব পালনে খৃষ্টানদের অনুকরণে হোক অথবা নবীপাক সাঃ এর মহব্বতে ও তাঁর তাজীমের নামে হোক; তা বিদয়াত। আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাঃ এর অনুকরণ আর অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর প্রতি মহব্বত ও তাজীমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন, মিলাদুন্নবী পালনের ন্যায় বিদয়াতের মাধ্যমে নয়। অন্য দিকে তাঁর জন্ম তারিখ নিয়েও ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।মহব্বত আর তাজীমের দাবি এবং প্রয়োজন আজ যেমন আছে, তেমনি সলফে সালেহিনদের যুগেও ছিল। তা সত্তেও তাঁরা এ কাজ করেননি। অথচ তাদের সামনে কোনো বাধাও ছিল না।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন,
“এ কাজটি পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিগণ করেননি অথচ এ কাজ জায়িয থাকলে সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে তা পালন করার কার্যকারণ বিদ্যমান ছিল এবং পালন করতে বিশেষ কোন বাধাও ছিল না। যদি এটা শুধু কল্যাণের কাজই হতো তাহলে আমাদের চেয়ে তারাই এ কাজটি বেশী করতেন। কেননা তারা আমাদের চেয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম-কে বেশী সম্মান করতেন ও ভালবাসতেন এবং কল্যাণের কাজে তারা ছিলেন বেশী আগ্রহী”
(ইকতিযা আস-সিরাত আল মুস্তাকিম-২/৬১৫)
৫।
“যাদুল মাআদ” নামক কিতাবে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ লিখেছেন
“যাদুল মাআদ” নামক কিতাবে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ লিখেছেন
و لا يخص المكان الذي ابتدء فيه بالوحي و لا الزمان بشيئ، و من خص الامكنة و اللازمنة من عنده بعبادات لاجل هذا و امثال كان من جنس اهل الكتاب الذين جعلوا زمان احوال المسيح مواسم و اعيادا كيوم الميلاد و يوم التعبد و غير ذالك من الاحوال. كذا في البلاغ المبين
অর্থাৎ ওহীর সূচনা স্থল এবং সময়কে কোনো কাজের জন্য নির্দিষ্ট করবেনা, যদি কেউ স্থান সমূহকে নিজ পক্ষ হতে কোনো ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে ওহী বা সে জাতীয় কোনো নেয়ামতকে উপলক্ষ্য করে সে তখন আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে, যারা হযরত মসীহ আঃ এর বিভিন্ন অবস্থার সময়কে মৌসুম ও ঈদ বানিয়ে নিয়েছে; যেমন তাঁর জন্ম দিবসকে তারা উৎসব দিবস এবং তাঁর ইবাদতের দিনকে ইবাদতের দিবস বানিয়ে নিয়েছে।” {সূত্র আল-বালাগুল মুবীন পৃ ৫}
৬।
আল্লামা শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভি রহঃ “তোহফায়ে ইছনা আশারিয়া” কিতাবে লিখেছেন
আল্লামা শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভি রহঃ “তোহফায়ে ইছনা আশারিয়া” কিতাবে লিখেছেন
و روز توالد و وفات هیچ نبی را عید قرار ندارند. البلاغ المبین ۶
অর্থাৎ কোনো নবীর জন্ম বা ওফাত দিবসকে আনন্দ উৎসবের উপলক্ষ্য বানানো স্বীকৃত নয়। {সূত্র আল-বালাগুল মুবীন পৃ ৬}।
৭।
আল্লামা ফাকেহানী রহঃ আল্লামা সুয়ূতী রহঃ এর প্রত্যুত্তরে যে কিতাবটি লিখেছিলেন তাতে তিনি লিখেছেন
আল্লামা ফাকেহানী রহঃ আল্লামা সুয়ূতী রহঃ এর প্রত্যুত্তরে যে কিতাবটি লিখেছিলেন তাতে তিনি লিখেছেন
تعظيم قدر النبي صلعم بوجه مشروع و معهود لا بكل وجه امر محمود، و ما عهدنا في مشروع ذالك العمل و ما امرنا بجمع الناس لاظهار الفرح و الاستبشار لمولد الاكمل.
অর্থাৎ “রাসূল সাঃ এর শান ও মান-মর্যাদার প্রকাশ যেন তেন পন্থায় নয়, বরং শরীয়ত অনুমোদিত পন্থায় হতে হবে।পক্ষান্তরে শরীয়তে এ আমল তথা মিলাদুন্নবী পালন পরিচিত নয়। আমাদের প্রতি রাসূল সাঃ এর জন্মোৎসব পালনের উদ্দেশ্যে লোক সমাগম করারও কোনো নির্দেশ নেই।”
৮।
“শরহে শিরআতুল ইসলাম” কিতাবে স্পষ্টাকারে উল্লেখ রয়েছে
“শরহে শিরআতুল ইসলাম” কিতাবে স্পষ্টাকারে উল্লেখ রয়েছে
فاعلم ان من البدع المذمومة الشائعة في الامصار و البلاد مجلس مولد النبي صلعم لانه لم يثبت من الادلة الشرعية. اما عدم ثبوته من الكتاب و السنة فظاهر و اما من القياس فلان القياس المعتبر هو قياس المجتهدين بالشرائط المقررة في الاصول و لم يذهب المجتهدين الي اباحة فكيف يتصور اجتماعهم علي اباحته و استحسانه علي ان الاجتماع لابد له من سند و خلاف الواحد مانع كخلاف الاكثر و السند منتف ههنا و كثير من العلماء قد بالغوا في تقبيحه.
অর্থাৎ জেনে নাও যে, নিন্দনীয় বিদয়াতগুলোর একটি যা বিভিন্ন দেশ ও শহরে প্রসার লাভ করেছে, তা হল মিলাদুন্নবী তথা নবীজির জন্মদিন পালন। অথচ এটি শরীয়তের কোনো দলিল দ্বারা প্রমাণিত। কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাতে রাসূল দ্বারা প্রমাণিত না হওয়া তো সুবিদিত। কিয়াস দ্বারাও প্রমাণিত না। কেননা গ্রহণযোগ্য কিয়াস হচ্ছে মুজতাহিদদের কিয়াস। তাও শাস্ত্রীয় নীতিমালার শর্ত সাপেক্ষে হতে হবে।অনন্তর কোনো মুজতাহিদ এ বিদয়াত জায়েজ বলে মত দেননি। এবার বাকি থাকল ইজমার দলিল।
এখানেও মুজতাহিদদের দলিল গ্রহণযোগ্য নয়। অনন্তর কোনো মুজতাহিদ যখন এর জায়েজ হওয়ার পক্ষে গেছেন বলে প্রমাণিত না, তো কীভাবে এটি জায়েজ হওয়া কিংবা মুস্তাহসান হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত হতে পারে? উপরন্তু ইজমার জন্যও সনদ থাকা আবশ্যক। ইজমার জন্য আরেক শর্ত হল কারো দ্বিমত না থাকা। কাজেই এক জন মুজতাহিদের দ্বিমত থাকলেও ইজমা প্রতিষ্ঠিত হবেনা, যেমনি ভাবে অধিকাংশের দ্বিমত থাকলে হয় না।অথচ এ (মিলাদ) ক্ষেত্রে ইজমার কোনো সনদই নেই। পরন্তু ইহার সূচনা থেকেই বহু আলেম এর বিরুধিতা করে আসছেন।”
৯।
এখানেও মুজতাহিদদের দলিল গ্রহণযোগ্য নয়। অনন্তর কোনো মুজতাহিদ যখন এর জায়েজ হওয়ার পক্ষে গেছেন বলে প্রমাণিত না, তো কীভাবে এটি জায়েজ হওয়া কিংবা মুস্তাহসান হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত হতে পারে? উপরন্তু ইজমার জন্যও সনদ থাকা আবশ্যক। ইজমার জন্য আরেক শর্ত হল কারো দ্বিমত না থাকা। কাজেই এক জন মুজতাহিদের দ্বিমত থাকলেও ইজমা প্রতিষ্ঠিত হবেনা, যেমনি ভাবে অধিকাংশের দ্বিমত থাকলে হয় না।অথচ এ (মিলাদ) ক্ষেত্রে ইজমার কোনো সনদই নেই। পরন্তু ইহার সূচনা থেকেই বহু আলেম এর বিরুধিতা করে আসছেন।”
৯।
হাম্বলী মাযহাবের বিশিষ্ট শায়খ আল্লামা শরফুদ্দিন রহঃ “সিয়ানাতুন্নাস” কিতাবে লিখেছেন
ان ما يعمل بعض الامراء في كل سنة احتفالا لمولده عليه السلام مع اشتماله علي التكلفات الشنيعة بنفسه بدعة احدثها من يتبع هواه و لا يعلم ما امره صاحب الشريعة و نهاه. البلاغ المبين ٦ .
অর্থাৎ কতিপয় শাসক রাসূলেপাক ا সাঃ এর জন্মদিন (মিলাদ) উপলক্ষে নিন্দাযোগ্য জাঁকজমক আর আড়ম্বরতা শামিল করার মাধ্যমে প্রতি বৎসর যে অনুষ্ঠান করে, তা বিদয়াত। এমন সব লোক এটি আবিস্কার করেছে যারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসারি (মনপূঁজারী)। রাসূলেপাক সাঃ কী আদেশ করেছেন, কী নিষেধ করেছেন; সে খবরও যাদের নেই।” {সূত্র আল-বালাগুল মুবীন পৃ ৬}
১০।
বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা কাজী সিহাব উদ্দিন দৌলতাবাদি রহঃ এর কিতাব “তুহফাতুল কোযাত” এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে
বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা কাজী সিহাব উদ্দিন দৌলতাবাদি রহঃ এর কিতাব “তুহফাতুল কোযাত” এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে
سئل القاضي عن المجلس المولد الشريف قال لا ينعقد لانه محدث و كل محدث ضلالة و كل ضلالة في النار. و ما يفعل الجهال علي رأس كل حول في شهر ربيع الاول ليس بشيئ يقومون عند ذكر مولده عليه وسلم و يزعمون ان روحه عليه السلام يجيئ، فزعمهم باطل بل هذا الاعتقاد شرك و قد منع الائمة عن مثل هذا. البلاغ المبين ٦، البيان الفاصل ٧.
অর্থাৎ (কেউ প্রশ্ন করল) রাসূল সাঃ জন্মদিনের অনুষ্ঠান তথা মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান করা যাবে কিনা? প্রত্যুত্তরে কাজী সাহেব জবাব দিয়েছেন, না; করা যাবেনা। কেননা তা (ধর্মের নামে) নতুন আবিস্কার। পক্ষান্তরে প্রত্যেক নতুন আবিস্কার গোমরাহী।আর সব গোমরাহীর পরিণতি জাহান্নাম। প্রতি বৎসর রবিউল আউয়াল মাসে জাহেল লোকেরা যা করে তা কিছুইনা। তারা রাসূল সাঃ এর জন্মের আলোচনা শুনে দাঁড়িয়ে যায় আর বিশ্বাস করে যে, তাঁর পবিত্র রূহ তথায় উপস্থিত।তাদের ধারণা বাতিল বরং এরূপ বিশ্বাসকরা শিরিক। ইমামগণ এ জাতীয় বিশ্বাস পোষণ করতে নিষেধ করেছেন।” {সূত্র আল-বালাগুল মুবীন ৬, আল-বয়ানুল ফাসিল ৭৪}।
১১।
আল্লামা আহমদ ইবনে মুহাম্মদ মিসরী মালেকী (রহঃ) লিখেন-
আল্লামা আহমদ ইবনে মুহাম্মদ মিসরী মালেকী (রহঃ) লিখেন-
ﻗﺪ ﺍﺗﻔﻖ ﻋﻠﻤﺎﺀ ﺍﻟﻤﺬﺍﻫﺐ ﺍﻻﺭﺑﻌﺔ ﺑﺬﻡ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﻤﻞ – ﺭﺍﻩ ﺳﻨﺔ ﺍﺯ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﻟﻤﻌﺘﻤﺪ ﻓﻰ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ
অর্থাৎ, মাযহাব চতুষ্ঠয়ের উলামায়ে কেরাম এই কাজ (মীলাদ) নিন্দনীয় হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ।
১২।
মুজাদ্দিদে আলফেছানী শায়খ আহমদ সিরহিন্দী রহঃ মাকতুবাত কিতাব লিখেছেন
মুজাদ্দিদে আলফেছানী শায়খ আহমদ সিরহিন্দী রহঃ মাকতুবাত কিতাব লিখেছেন
بنظر انصاف می بینید اگر حضرت ایشاں فرضا دریں زمانہ موجود بودند و در دنیا زندہ بودند و ایں مجالس و اجتماع کہ منعقد می شود آیا بریں راضی می شدید و ایں اجتماع را پسندیدند، یا نہ ؟ یقین فقیر آں ست کہ ہرگز ایں معنی را تجویز نمی فرمودند بلکہ انکار می نمودند.
অর্থাৎ ইনসাফের নজরে দেখুন! হযরাত সাহাবায়ে কেরাম ও সালফে সালেহীনগণ যদি এ যুগে থাকতেন বা জীবিত হতেন আর বর্তমানকালে (মিলাদুন্নবী, ওরশ ইত্যাদি) অনুষ্ঠিত সমাবেশগুলো দেখতেন, তাতে কি তাঁরা সন্তুষ্ট থাকতেন? পছন্দ করতেন? নিষেধ করতেন না? অধমের (শায়খ সিরহিন্দী) দৃঢ় বিশ্বাস যে, কখনো তাঁরা এসব কার্যকলাপকে বৈধতা দিতেন না। বরং অস্বীকার করতেন।”
{সূত্র মাকতুবাত ৫/২২, আল-বয়ানুল ফাসিল পৃ ৭৪, রাহে সুন্নাত ১৭৪}।
১৩।
আল্লামা আলা উদ্দিন বিন ইসমাঈল আশ-শাফেয়ী রহঃ “শরহে বা’আছে ওয়ান-নুশূর” কিতাবে লিখেছেন
আল্লামা আলা উদ্দিন বিন ইসমাঈল আশ-শাফেয়ী রহঃ “শরহে বা’আছে ওয়ান-নুশূর” কিতাবে লিখেছেন
ما یحتفل لمولدہ علیه السلام بدعة يذم فاعلها. تاريخ ميلاد.
অর্থাৎ মিলাদের নামে যে মাহফীল করা হয় তা বিদয়াত বা কুসংস্কার।যারা এটা করে তারা তিরস্কার যোগ্য। {সূত্র তারীখে মিলাদ}
১৪।
হাফেজ আবু বকর বিন আব্দুলগণী বাগদাদী আল-হানাফী রহঃ যিনি ইবনে নোকতা নামে পরিচিত। তিনি তাঁর ফতুয়ার কিতাবে লিখেছেন
হাফেজ আবু বকর বিন আব্দুলগণী বাগদাদী আল-হানাফী রহঃ যিনি ইবনে নোকতা নামে পরিচিত। তিনি তাঁর ফতুয়ার কিতাবে লিখেছেন
ان عمل المولد لم ينقل عن السلف و لا خير فيما لم يعمل السلف.
অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর আমলটি সলফ (পূর্ববতী গ্রহণযোগ্য তিনযুগ) থেকে বর্ণিত নয়।আর সলফ যে কাজ করেননি তাতে কোনো কল্যাণ নেই।”
১৫।
যখীরাতুস সালেকীন কিতাবে আছে
যখীরাতুস সালেকীন কিতাবে আছে
چیزیکہ نام آں مولد می نامند بدعت ست چہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ و سلم ہیچ کس را باین نہ فرمودہ و نہ خلفاۓ او و نہ ائمہ او و نہ خود ایں فعل کردہ اند.
অর্থাৎ মানুষ যে আমলটিকে মিলাদুন্নবী নাম রেখেছে, সেটি বিদয়াত। কেননা রাসূল সাঃ কাউকে এ কাজের আদেশ দেননি, খালিফাগণও দেননি, ইমামগণও দেননি। আর না তিনি নিজে এ কাজ করেছেন।”{তারিখে মিলাদ দ্রষ্টব্য}
১৬।
হানাফী মাযহাবের খাতেমুল ফোকাহা, সবার নিকট বরেণ্য ও নির্ভরযোগ্য আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ লিখেছেন
হানাফী মাযহাবের খাতেমুল ফোকাহা, সবার নিকট বরেণ্য ও নির্ভরযোগ্য আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ লিখেছেন
و اقبح منه النذر بقرأة المولد في المنابر مع اشتماله علي الغناء و اللعب و ايهاب ثواب ذالك الي حضرة المصطفي. فتاوي شامي ٢/١٢٨، مطبوعة مكتبة نعمانية ديوبند.
অর্থাৎ এর চেয়ে জঘন্য হল মঞ্চ ও মিম্বরে মিলাদুন্নবী পাঠের মান্নত করা এবং এর সাওয়াব রাসূল সাঃ এর দরবারে পৌঁছানো।অথচ তাতে গান বাদ্য খেলাধুলা ইত্যাদিও শামিল রয়েছে।” {ফতুয়ায়ে শামী ২য় খণ্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা।}
১৭।
আল্লামা হাসান বিন আলী রহঃ লিখেছেন
আল্লামা হাসান বিন আলী রহঃ লিখেছেন
ما احدثه الصوفية الجهلة من مجلسه المولد في شهر ربيع الاول لا اصل له في الشرع بل هو بدعة مذمومة. كتاب الطريقة في رد عمل البدعة.
অর্থাৎ জাহেল সূফীগণ রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী নামে যে অনুষ্ঠান আবিষ্কার করেছে শরীয়তে তার কোনো ভিত্তি নেই।বরং তা নিন্দনীয় ও বিদয়াত।” {সূত্র কিতাবুত তরিকাহ ফি রদ্দে আমালিল বিদয়াহ}
১৮।
আল্লামা আবুল কাসেম আব্দুর রহমান বিন আব্দুল হামিদ মালেকী রহঃ লিখেছেন
আল্লামা আবুল কাসেম আব্দুর রহমান বিন আব্দুল হামিদ মালেকী রহঃ লিখেছেন
ما يهتم بعمل المولد في ربيع الاول فيليق ان ينكر علي من يهتم به. تكملة التفاسير
অর্থাৎ রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদের আমল নামে যে আয়োজন করা হয়, তার আয়োজকের প্রতি ইনকার বা অনাস্থা জাহির করা বাঞ্চনীয়।” {সূত্র তাকমালাতু তাফসীর}।
১৯।
আল্লামা মুহাম্মদ বিন আবু বকর মাখযুমী রহঃ “কিতাবুল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদিস” গ্রন্থে লিখেছেন
আল্লামা মুহাম্মদ বিন আবু বকর মাখযুমী রহঃ “কিতাবুল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদিস” গ্রন্থে লিখেছেন
و من المنكرات القبيحة و المكروهات الفضيحة في هذه الاعصار ما يعمل بمولد النبي عليه السلام في بعض الاعصار و ما هلك امة من امم المرسلين الا بالابتداع في الدين. القول المعتمد
অর্থাৎ হাল যামানার কোনো কোনো শহরে মিলাদুন্নবী নামে যে সব অনুষ্ঠান হচ্ছে তা কদাকার অসৎকাজ এবং নির্লজ্জজনক মাকরূহ।পূর্ববর্তী কোনো উম্মত ধ্বংস হয়নি, যে যাবত তারা ধর্মে বিদয়াত আবিস্কার করেনি।” {সূত্র আল-কাওলুল মু’তামাদ}
২০।
প্রসিদ্ধ কিতাব “শরহে মাওয়াহিবে লুদূনিয়া” কিতাবে লেখা আছে
প্রসিদ্ধ কিতাব “শরহে মাওয়াহিবে লুদূনিয়া” কিতাবে লেখা আছে
و لقد نص الشارع علي فضيلة ليلة القدر و لم يتعرض لليلة مولده و لا لامثالها بالتفضيل دليلا فوجب علينا ان نقتصر علي ما جاء منه و لا نبتدع شيئا.
অর্থাৎ রাসূল সাঃ শবে কদরের ফজিলতের দলিল তো দ্ব্যার্থহীনভাবে বর্ণনা করেছেন, অথচ তাঁর জন্ম রজনী বা এ জাতীয় দিবসগুলোর ফজিলত সম্বন্ধে কোনো বর্ণনা দেননি।সুতরাং শরিয়তে যতটুকু এসেছে ততটুকুর ওপর সীমাবদ্ধ থাকা আমাদের জন্য ওয়াজিব, নতুন কিছু আবিস্কার করা নয়।”
২১।
আল্লামা আহমদ বিন হাসান রহঃ তার মালফূজাত কিতাবে লিখেছেন
আল্লামা আহমদ বিন হাসান রহঃ তার মালফূজাত কিতাবে লিখেছেন
ان هذا العمل لم ينقل عن السلف و لا خير فيما لم ينقل عن السلف.
মিলাদুন্নবী নামক এ আমল সলফ হতে বর্ণিত নয়।অনন্তর সলফ হতে যা বর্ণিত নয় তাতে কোনো কল্যাণ নেই।”
২২।
“জামেউল মাসায়েল” নামক কিতাবে লেখা আছে
“জামেউল মাসায়েল” নামক কিতাবে লেখা আছে
ان عمل الولد لم ينقل عن السلف الصالح و انما احدث بعد القرون الثلاثة في الزمان الطالح و نحن لا نتبع الخلف فيما اعمل السلف لانه يكفي بهم الاتباع فاي حاجة الي الابتداع.
অর্থাৎ মিলাদী আমল সালফে সালেহীন হতে বর্ণিত নাই, বরং মন্দ লোকদের যুগে আবিস্কৃত।পক্ষান্তরে সলফে সালেহীন (পূর্ববতী তিন স্বর্ণ যুগের বিশিষ্ট মুসলিমগণ) যে কাজ করেননি পরবর্তীদের অনুসরণে আমরা সে কাজ করতে পারিনা।কেননা সলফে সালেহীনের অনুসরণই আমাদের জন্য যথেষ্ট, নতুন করে আবিস্কার করার দরকার কী?
২৩.
হাফেজ শাইখুল ইসলাম ইমাম সুয়ুতি (রহঃ) বলেন:
হাফেজ শাইখুল ইসলাম ইমাম সুয়ুতি (রহঃ) বলেন:
وَقَدْ سُئِلَ شَيْخُ الْإِسْلَامِ حَافِظُ الْعَصْرِ أبو الفضل ابن حجر عَنْ عَمَلِ الْمَوْلِدِ، فَأَجَابَ بِمَا نَصُّهُ: أَصْلُ عَمَلِ الْمَوْلِدِ بِدْعَةٌ لَمْ تُنْقَلْ عَنْ أَحَدٍ مِنَ السَّلَفِ الصَّالِحِ مِنَ الْقُرُونِ الثَّلَاثَةِ، وَلَكِنَّهَا مَعَ ذَلِكَ قَدِ اشْتَمَلَتْ عَلَى مَحَاسِنَ وَضِدِّهَا، فَمَنْ تَحَرَّى فِي عَمَلِهَا الْمَحَاسِنَ وَتَجَنَّبَ ضِدَّهَا كَانَ بِدْعَةً حَسَنَةً وَإِلَّا فَلَا، قَالَ: وَقَدْ ظَهَرَ لِي تَخْرِيجُهَا عَلَى أَصْلٍ ثَابِتٍ وَهُوَ مَا ثَبَتَ فِي الصَّحِيحَيْنِ مِنْ
«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَسَأَلَهُمْ فَقَالُوا: هُوَ يَوْمٌ أَغْرَقَ اللَّهُ فِيهِ فرعون وَنَجَّى مُوسَى فَنَحْنُ نَصُومُهُ شُكْرًا لِلَّهِ تَعَالَى»
، فَيُسْتَفَادُ مِنْهُ فِعْلُ الشُّكْرِ لِلَّهِ عَلَى مَا مَنَّ بِهِ فِي يَوْمٍ مُعَيَّنٍ مِنْ إِسْدَاءِ نِعْمَةٍ أَوْ دَفْعِ نِقْمَةٍ، وَيُعَادُ ذَلِكَ فِي نَظِيرِ ذَلِكَ الْيَوْمِ مِنْ كُلِّ سَنَةٍ، وَالشُّكْرُ لِلَّهِ يَحْصُلُ بِأَنْوَاعِ الْعِبَادَةِ كَالسُّجُودِ وَالصِّيَامِ وَالصَّدَقَةِ وَالتِّلَاوَةِ، وَأَيُّ نِعْمَةٍ أَعْظَمُ مِنَ النِّعْمَةِ بِبُرُوزِ هَذَا النَّبِيِّ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ فِي ذَلِكَ الْيَوْمِ؟ وَعَلَى هَذَا فَيَنْبَغِي أَنْ يُتَحَرَّى الْيَوْمُ بِعَيْنِهِ حَتَّى يُطَابِقَ قِصَّةَ مُوسَى فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ، وَمَنْ لَمْ يُلَاحِظْ ذَلِكَ لَا يُبَالِي بِعَمَلِ الْمَوْلِدِ فِي أَيِّ يَوْمٍ مِنَ الشَّهْرِ، بَلْ تَوَسَّعَ قَوْمٌ فَنَقَلُوهُ إِلَى يَوْمٍ مِنَ السَّنَةِ، وَفِيهِ مَا فِيهِ. فَهَذَا مَا يَتَعَلَّقُ بِأَصْلِ عَمَلِهِ. وَأَمَّا مَا يُعْمَلُ فِيهِ فَيَنْبَغِي أَنْ يُقْتَصَرَ فِيهِ عَلَى مَا يُفْهِمُ الشُّكْرَ لِلَّهِ تَعَالَى مِنْ نَحْوِ مَا تَقَدَّمَ ذِكْرُهُ مِنَ التِّلَاوَةِ وَالْإِطْعَامِ وَالصَّدَقَةِ وَإِنْشَادِ شَيْءٍ مِنَ الْمَدَائِحِ النَّبَوِيَّةِ وَالزُّهْدِيَّةِ الْمُحَرِّكَةِ لِلْقُلُوبِ إِلَى فِعْلِ الْخَيْرِ وَالْعَمَلِ لِلْآخِرَةِ، وَأَمَّا مَا يَتْبَعُ ذَلِكَ مِنَ السَّمَاعِ وَاللَّهْوِ وَغَيْرِ ذَلِكَ فَيَنْبَغِي أَنْ يُقَالَ: مَا كَانَ مِنْ ذَلِكَ مُبَاحًا بِحَيْثُ يَقْتَضِي السُّرُورَ بِذَلِكَ الْيَوْمِ لَا بَأْسَ بِإِلْحَاقِهِ بِهِ، وَمَا كَانَ حَرَامًا أَوْ مَكْرُوهًا فَيُمْنَعُ، وَكَذَا مَا كَانَ خِلَافَ الْأَوْلَى. انْتَهَى.
শাইখুল ইসলাম, যুগশ্রেষ্ঠ হাফেযে হাদিস, ফযলের পিতা, ইবনে হাজারকে মিলাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি যে জবাব দেন সেটার ভাষ্য হল:
“মিলাদ কর্মের মূল বিধান হচ্ছে– বিদাত। সলফে সালেহীন তথা উত্তম তিন প্রজন্মের কারো থেকে এমন আমল বর্ণিত হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর মধ্যে কিছু ভাল ও ভাল এর বিপরীত বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি এর মধ্যে ভাল কাজগুলো করে এবং বিপরীত কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকে তাহলে সেটা ‘বিদাতে-হাসানা’ হবে; অন্যথায় নয়।”
সুয়ুতি (রহঃ) আরও বলেন: “একটি সাব্যস্ত মূল দলিল থেকে এই বিধান নির্ণয়ন আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে সাব্যস্ত হয়েছে যে – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন তিনি দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখে। তখন তিনি তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলল: এই দিন আল্লাহ্ ফেরাউনকে ডুবিয়ে মেরেছেন, মুসাকে রক্ষা করেছেন। তাই আমরা আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই দিনে রোযা রাখি।
এই হাদিস থেকে বিশেষ কোন দিনে আল্লাহ্ কোন নেয়ামত দিয়ে কিংবা কোন বিপদ দূর করে যে দয়া করেছেন সে দয়ার শুকরিয়া আদায় করা এবং প্রতি বছর সেটি পুনঃপুন পালন করার পক্ষে দলিল গ্রহণ করা যায়।
আল্লাহ্র কৃতজ্ঞতা কয়েক প্রকারের ইবাদতের মাধ্যমে আদায় করা যায়। যেমন– সিজদা দেয়া, রোযা রাখা ও কুরআন তেলাওয়াত করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মগ্রহণ করার চেয়ে বড় নেয়ামত ঐ দিনে আর কি হতে পারে?
উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে সে দিনটি নির্দিষ্টকরণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত; যাতে করে আশুরার দিনে মুসা আলাইহিস সালাম এর ঘটনার সাথে তা পুরোপুরি খাপ খায়। আর যারা এ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না তাদের কাছে ঐ মাসের যে কোন দিন মিলাদ পালন করায় কোন সমস্যা নেই। বরং একদল লোক পরিসরটাকে আরও বিস্তৃত করে বছরের যে কোন দিন মিলাদ পালন করার মত দিয়েছেন। অথচ এমন অভিমতে যে দুর্বলতা থাকার তাতো আছেই।
এই হলো মিলাদ পালনের মুল বিধান সংক্রান্ত কথা।
সেই দিন কি কি আমল করা হবে:
সেই দিন এমন কিছু করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, যা দ্বারা আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করা বুঝা যায়। ইতিপূর্বে যে ধরণের ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে ধরণের; যেমন- তেলাওয়াত করা, খাবার খাওয়ানো, দান করা, নাতে-রাসূল ও দুনিয়া-বিরাগতা সংক্রান্ত কিছু সংগীত পেশ করা, যেগুলো মানুষের অন্তরকে ভাল কাজের প্রতি ও আখেরাতের আমলের প্রতি তাড়িত করে।
এই দিনে এসব আমলের সাথে আরও যা কিছু ঘটে থাকে যেমন- গান শুনা, খেল-তামাশা ইত্যাদি: সে সবের ব্যাপারে বলা উচিত: সে সবের মধ্যে যা কিছু আল্লাহ্র শুকরিয়া প্রকাশের উপলক্ষ হিসেবে পালন করা বৈধ সেগুলো করতে কোন অসুবিধা নেই। আর যা কিছু হারাম কিংবা মাকরুহ সেগুলো করতে বাধা দেয়া হবে। অনুরূপভাবে যে সব কর্ম অনুত্তম সেগুলো করা থেকেও বাধা দেয়া হবে।”
[আল-হাওয়ি লিল-ফাতাওয়া (১/২২৯)]
২৪.
ইমাম ইবনে হাজার হাইছামি (মাক্কি) লিখেছেন:
ইমাম ইবনে হাজার হাইছামি (মাক্কি) লিখেছেন:
" ونظير ذلك فعل كثير عند ذكر مولده ( صلى الله عليه وسلم ) ووضع أمه له من القيام وهو أيضاً بدعة لم يرد فيه شيء على أن الناس إنما يفعلون ذلك تعظيماً له ( صلى الله عليه وسلم ) فالعوام معذورون لذلك بخلاف الخواص "
"..এবং এইসব কাজের (বিদআত) উদাহরণ হলো বহু মানুষ দাঁড়িয়ে জিকির করে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিন (মিলাদুন্নবি) পালন করে। এটি একটি বিদআত, কারণ এই বিষয়ে কোনও হাদিছ বর্ণিত হয়নি। যদি লোকেরা তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তেও তা করে তবুও তা বিদআত হবে। সাধারণ জনগণকে তাদের অজ্ঞতার কারণে ক্ষমা করা যেতে পারে, কিন্তু যারা জেনেও করে, তাদেরকে ক্ষমা করা যায় না।"
(দলিল: ফাতাওয়া হাদিছিয়্যাহ; ইবনে হাজার মাক্কি, পৃ. ৬০।)
২৫.
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহঃ “মা সাবাতা বিচ্ছুন্নাত” কিতাবে মিলাদী আমলের বিরুধিতা করার কারণে আল্লামা ইবনুল হাজ্জ রহঃ এর প্রশংসা করে বলেন
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহঃ “মা সাবাতা বিচ্ছুন্নাত” কিতাবে মিলাদী আমলের বিরুধিতা করার কারণে আল্লামা ইবনুল হাজ্জ রহঃ এর প্রশংসা করে বলেন
و قد اطنب ابن الحاج في “المدخل” في الانكار علي ما احدثه الناس من البدع و الاهواء و الغناء بالالات المحرمة عند عمل المولد الشريف فان الله يثيبه علي قصد الجميل و يسلك بنا سبيل السنة.
অর্থাৎ ইবনুল হাজ্জ ‘মুদখাল’ কিতাবে মানব রচিত মিলাদী অনুষ্ঠান ও তার অভ্যন্তরে মানুষ যে সব গান বাদ্য আমোদ প্রমোদের প্রবর্তন করেছে তার প্রতিবাদ ও নিন্দায় দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। আল্লাহপাক তাঁর সদিচ্ছার প্রতিদান দিন। আর আমাদেরকে সুন্নতের পথে পরিচালিত করুন।”
আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রঃ) বলেন,
"বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ ৬০০হিজরীতে ইরবিলের সুলতানের যুগে চালু হয়।শারীয়াতে মুহাম্মাদীতে এর কোনো অস্তিত্ব নেই বরং এই বিদআত সর্ম্পকে এমন কোনো কিতাব নেই যা হাফিজ ও মুহাদ্দিসীনদের হাতে নেবার উপযুক্ত।
(আল-আরফুশ-শাজী ও আল জামে তিরমিযী পৃঃ২৩২)
আল্লামা উমার ইবনু আলী আস সিকান্দারী আল মালেকী রহ বলেন,
قال العلامة عمر بن علي السكندري المالكي، ، رحمه الله تعالى: لا أعلم لهذا المولد أصلًا في كتاب ولا سنة، ولا ينقل عمله عن أحد من علماء الأمة، الذين هم القدوة في الدين. . . بل هو بدعة أحدثها البطالون.
মিলাদের (মিলাদুন্নাবী) ভিত্তি সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে জানিনা, এবং সম্পর্কে উম্মাতের আলেমগণের মধ্যে কারো আমলও বর্নিত হয়নি .যারা হলেন ইসলামের আদর্শ . বরং ঈদে মিলাদুন্নাবী বিদআত যা তৈরি করেছে বাতিল পন্থীরা|
(হাকায়ীকু হাওলিল মাওলিদিন নাবী পৃ: 3)
হাফিয ইবনে রজব হান্বলী বলেছেন:
“নবীজীর (সঃ) বক্তব্য: ‘প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা’ একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক উক্তি যা সবকিছুকেই আওতাভুক্ত করে; এটি দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। এটা তাঁর এই বাণীর মত: ‘যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (বুখারী, আল ফাতহ) যে কেউই এমন নতুন কিছু উদ্ভাবন করে ইসলামের সাথে একে সম্পৃক্ত করতে চায়, যার ভিত্তি এই দ্বীনে নেই, তবে সেটা পথভ্রষ্টতা এবং ইসলামের সাথে এর কোনই সম্পর্ক নেই, তা আক্বীদাহ সংক্রান্তই হোক আর বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ কথা ও কাজ সংক্রান্তই হোক না কেন।
”(জামি’উল উলুম ওয়াল হাকাম, পৃ: ২৩৩)“
আল্লামা শানকীতী (রহঃ) বলেন,
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ الْحَقُّ الَّذِي لَبَسُوهُ بِالْبَاطِلِ هُوَ إِيمَانُهُمْ بِبَعْضِ مَا فِي التَّوْرَاةِ، وَالْبَاطِلُ الَّذِي لَبَسُوا بِهِ الْحَقَّ هُوَ كُفْرُهُمْ بِبَعْضِ مَا فِي التَّوْرَاةِ، وَجَحْدُهُمْ لَهُ، كَصِفَاتِ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَغَيْرِهَا مِمَّا كَتَمُوهُ وَجَحَدُوهُ، وَهَذَا يُبَيِّنُهُ قَوْلُهُ تَعَالَى: (أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ) الْآيَةَ [2 \ 85]
"তারা যে হককে বাতিলের সাথে সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে তা হচ্ছে, তারা তাওরাতের কিছু অংশের উপর ঈমান এনেছে। আর যে বাতিলকে হকের সাথে মিশিয়েছে তা হচ্ছে, তারা তাওরাতের কিছু অংশের সাথে কুফরী করেছে এবং তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যেমন, মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যে সমস্ত গুণাগুণসহ অনুরূপ যা কিছু তারা গোপন করেছে এবং মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। এর বর্ণনায় পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছুর উপর ঈমান আন, আর কিছুর সাথে কুফরী কর" [সূরা আল-বাকারাহ: ৮৫]।
(আদ্উল বায়ান, ১/৩৫)
No comments:
Post a Comment