Thursday, August 15, 2019

শারীয়াহ বনাম গণতন্ত্র

শারীয়াহ বনাম গণতন্ত্র

শারীয়াহ আর গণতন্ত্রের মধ্যে কি কখনো সমন্বয় সম্ভব? ইসলামী গণতন্ত্র বলে কিছু কি থাকতে পারে? কোনটি শ্রেষ্ঠতর, অধিক ইনসাফপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা, শারীয়াহ নাকি গণতন্ত্র?  আসুন দেখা যাকঃ
১। শারীয়াহঃ আইন প্রণয়নের ভিত্তি হল ওয়াহী
গণতন্ত্রঃ আইন প্রণয়নের ভিত্তি হল অধিকাংশ মানুষের খেয়াল-খুশি
.
২। শারীয়াহঃ একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা
গণতন্ত্রঃ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী যদু-মধু-রাম-বাম
.
দিনশেষে-
শারীয়াহঃ স্রষ্টার আইন অনুযায়ী নিশ্চয়তা দেয়া হয় সৃষ্টির অধিকারের।
গণতন্ত্রঃ সৃষ্টির আইন অনুযায়ী নিশ্চয়তা দেওয়া হয় জনগণের জান-মাল-সম্মানের বিনিময়ে শাসকগোষ্ঠীর জমিদারির।
.
৩। শারীয়াহঃ সুদ হারাম। “যদি তোমরা রিবা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।” [সূরা বাকারা ২ : ২৭৮]
.
গণতন্ত্রঃ ব্যাংকগুলো সরকারের নির্ধারিত হারে সুদ নিলে সেটা হালাল। আর গ্রাহক যদি না দেয় তবে সে অপরাধী।
.
৪। শারীয়াহঃ যার রয়েছে সহস্রাব্দের বেশি সময়ে ধরে সফলতার সাথে পৃথিবীর বিশাল অঞ্চলের উপর শাসনের ইতিহাস। যে শাসনকালে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে – মুসলিম ও কাফির, সকলের অধিকার রক্ষিত হয়েছে। মানুষকে আহবান করা হয়েছে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে।
.
গণতন্ত্রঃ যার রয়েছে কয়েকশো বছর ধরে শুধু ব্যর্থতার ইতিহাস। যা মানুষকে বিভিন্ন রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে শেষপর্যন্ত আবদ্ধ করেছে নব্য-ঔপনিবেশিক দাসত্বে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক যুলুম এবং শোষণের গ্লোবাল সিস্টেম। মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে।
.
৫। শারীয়াহঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।
.
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।
.
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফির [সূরা আলে-ইমরান ১৯ ও ৮৫, সূরা আল মায়’ইদা,৪৪]
.
.
গণতন্ত্রঃ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷
.
জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷” [বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৭ (১) ও (২)]
.
৬। গণতন্ত্রঃ রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান। সবার অধিকার সমান।
.
.
শারীয়াহঃ যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকাজ করে আর যারা পৃথিবীতে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে তাদের কি আমি সমকক্ষ করব? মুত্তাকী ও পাপীগণ কি সমান? [আস-সাদ, ২৮]
.
যে লোক আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত, সে কি ঐ লোকের সমান হতে পারে, যে আল্লাহর রোষ অর্জন করেছে? বস্তুতঃ তার ঠিকানা হল দোযখ। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান! [আলে ইমরান,১৬২]
.
অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি অন্ধকার ও আলো সমান হয়? [আর-রাদ, ১৬]
.
অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়, আর (সমান নয়) যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে আর যারা দুস্কর্ম করে। তোমরা অল্পই অনুধাবন করে থাক। [আল গাফির, ৫৮]
.
যারা দুস্কর্ম উপার্জন করেছে তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সে লোকদের মত করে দেব, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং তাদের জীবন ও মুত্যু কি সমান হবে? তাদের দাবী কত মন্দ। [আল জাসিয়াহ, ২১]
.
ঈমানদার ব্যক্তি কি অবাধ্যের অনুরূপ? তারা সমান নয়। [আস-সাজদাহ, ১৮]
.
বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? [আয যুমার, ৯]
.
জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান হতে পারে না। যারা জান্নাতের অধিবাসী, তারাই সফলকাম। [আল হাশর, ২০]
.
এবং কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না। [আন নিসা, ১৪১]
.
কাফির কখনোই মু’মিনের সমকক্ষ হতে পারে না। যা মহাস্রষ্টা আল্লাহ-র উপর অবিশ্বাস করেছে, আর যে তাঁর উপর বিশ্বাস করে, তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর প্রতি নিজেকে সমর্পন করে – তারা কি কখনো সমান হতে পারে?
.
৭। শারীয়াহঃ আল্লাহ্‌ হারাম করেছেন মদসহ সকল নেশাদ্রব্য এবং জুয়া।
“হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” [আল-মায়’ইদা, ৯০]
.
গণতন্ত্রঃ লাইসেন্স করে নিলে মদ হালাল। ঢাকা ক্লাবে গেলে লাইসেন্স ছাড়াই হালাল। দেবতাদের পানীয় বলে কথা !
.
৮। গণতন্ত্রঃ গণতান্ত্রিক সেনাবাহিনী যুদ্ধ করে দেশ ও সীমান্তের জন্য। মাটির প্রতি প্রেম ও শাসকদের খেয়াল খুশি বাস্তবায়নের জন্য। সংবিধানের সুরক্ষার জন্য, জনগণের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, জাতিসংঘের জন্য, বিশ্বমোড়লদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। আল্লাহ্‌র যমীনে সৃষ্টির বিধান বাস্তবায়নের জন্য। যারা এসব লক্ষ্যে যুদ্ধে করা তারা বীর, দেশপ্রেমিক, সম্মানিত।
.
.
শারীয়াহঃ আল্লাহর সেনাবাহিনী যুদ্ধ করে আল্লাহর যমীনে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, মুসলিমদের নিরাপত্তা দানের জন্য, মুসলিম রক্তের বদলা নেবার জন্য, ইসলামের প্রচারের জন্য।
.
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায়; এবং আল্লাহর দ্বীন সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। [আল আনফাল, ৩৯]
.
যারা এই লক্ষ্যগুলো নিয়ে যুদ্ধ করে তারা মুজাহিদিন ফী সাবিলিল্লাহ – জুন্দুল্লাহ – আল্লাহর সেনাবাহিনী। শুধুমাত্র আল্লাহ-র দ্বীনের জন্যই যুদ্ধ করা ঈমানের শর্ত। যারা আল্লাহ পথে যুদ্ধ করে, আর যারা সৃষ্টির সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা কিংবা নিরাপদ রাখার জন্য যুদ্ধ করে তারা কখনোই সমান না। একদল মু’মিন, আরেকদল কাফির। একদল হল আর-রাহমানের আউলিয়া, আরেকদল হল শাইতানের আউলিয়া।
আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বলেন –
.
যারা ঈমানদার তারা ক্বিতাল (হত্যা) করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফির তারা ক্বিতাল করে ত্বগুতের পক্ষে সুতরাং তোমরা ক্বিতাল করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের (আউলিয়াদের) বিরুদ্ধে, নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল। [আন-নিসা, ৭৬]

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...