Thursday, August 8, 2019

কাফির মুশরিকদের বিরোদ্ধে জিহাদ করতে শাসকের অনুমতি লাগবে কি?

কাফির মুশরিকদের বিরোদ্ধে জিহাদ করতে শাসকের অনুমতি শর্ত এর কোন প্রমাণ কোরআন হাদিসের কোথাও নেই!!
.
জিহাদ ছেড়ে দেয়া মুসলিমদের ধ্বংসের কারণ
মহান আল্লাহ বলেন;
وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা ইহ্‌সান কর। নিশ্চয় আল্লাহ মুহ্‌সীনদেরকে ভালবাসেন। (আল-বাকারাহ্‌: ২/১৯৫)
“ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা” বলতে কি বোঝানো হয়েছে? এ প্রসঙ্গে মুফাসসিরগণের অভিমত বিভিন্ন প্রকার। কারো নিকট এর অর্থ হল, আল্লাহর পথে ব্যয় না করা। কেউ বলেছেন, জিহাদ না করা। আবার কেউ বলেছেন, অব্যাহতভাবে পাপ করা। আর এর সবগুলোই ধ্বংস ডেকে আনে। যদি জিহাদ পরিত্যাগ কর অথবা জিহাদে সম্পদ ব্যয় করা থেকে বিরত থাকো, তাহলে শত্রুরা শক্তিশালী হবে এবং তোমরা হবে দুর্বল, ফলে ধ্বংস হতে হবে।
.
এ আয়াত নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সহীহ হাদীসে এসেছে; আবূ আইয়ুব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন;
إِنَّمَا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فِينَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ لَمَّا نَصَرَ اللَّهُ نَبِيَّهُ، وَأَظْهَرَ الْإِسْلَامَ قُلْنَا: هَلُمَّ نُقِيمُ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحُهَا، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ} فَالْإِلْقَاءُ بِالْأَيْدِي إِلَى التَّهْلُكَةِ أَنْ نُقِيمَ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحَهَا وَنَدَعَ الْجِهَادَ ، قَالَ أَبُو عِمْرَانَ: فَلَمْ يَزَلْ أَبُو أَيُّوبَ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى دُفِنَ بِالْقُسْطَنْطِينِيَّةِ
এ আয়াত আমাদের আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর নবী (ﷺ)-কে সাহায্য করলেন এবং দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন। তখন আমরা বললাম, এসো! ‘এখন আমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করে ধন-সম্পত্তির দেখাশুনায় মনোযোগী হই।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন; “তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।” (আল-বাকারাহ, ২/১৯৫)
আমাদের নিজের হাতকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করা অর্থ হচ্ছে, ধন-সম্পদ নিয়েই ব্যস্ত থাকা। এর পরিবৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা এবং জিহাদ ছেড়ে দেয়া। আবূ ইমরান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর থেকে আবূ আইয়ূব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু সর্বদা মহান আল্লাহর পথে জিহাদে অংশ নিতেন, অবশেষে তিনি জিহাদ করতে করতে ইস্তাম্বুলে শহিদ হন।
(আবু দাউদ ২৫১২, তিরমিযী ২৯৭২, সহীহ)
.
এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ‘ধ্বংসের’ দ্বারা এখানে জিহাদ পরিত্যাগ করাকেই বোঝানো হয়েছে। আর এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, জিহাদ পরিত্যাগ করা মুসিলমদের জন্য ধ্বংসেরই কারণ।
.
অপর হাদীসে ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ، وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ
যখন তোমরা ঈনাহ [1] পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না।
(আবূ দাউদ ৩৪৬২, সহিহ)
[1]. ঈনাহঃ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ধারে অধিক মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করা। যেমন কেউ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দশ টাকায় কিছু বিক্রি করলো এবং ঐ সময় শেষ হওয়ার পর তা আট টাকায় কিনে নিলো।
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের মতে (রহঃ) জিহাদের জন্য শাসকের অনুমতির প্রয়োজন নেই!!
অর্থাৎ শাসক শর্ত নয়!!
তিনি বলেন,,
‏إذ كانوا يخافون على أنفسهم وذراريهم فلا بأس أن‎
‏يقاتلوا من قبل أن يأذن الإمام» ولكن لا يقاتلون إذا لم بخافوا على أنفسهم وذراريهم إلا أن يأذن‎
‏الإمام.‎
জনগণ নিজ ও পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার আশংকা করলে শাসকের অনুমতি
ব্যতীত শক্রর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে । কিন্ত নিজ ও পরিবার-পরিজনের জন্য কোন ভয়ভীতি না থাকলে শাসকের অনুমতি ব্যতীত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে না।
(মানহাজুল জমঈয়ত, পৃষ্ঠা ৫০, টীকা নং ১)
.
ইবনে তাইমিয়া রাহঃ বলেন কাফির মুশরিকদের বিরোদ্ধে জিহাদ করতে কোন শর্ত লাগে না!!
ইমাম তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
وَأَمَّا قِتَالُ الدَّفْعِ فَهُوَ أَشَدُّ أَنْوَاعِ دَفْعِ الصَّائِلِ عَنْ الْحُرْمَةِ وَالدِّينِ فَوَاجِبٌ إجْمَاعًا فَالْعَدُوُّ الصَّائِلُ الَّذِي يُفْسِدُ الدِّينَ وَالدُّنْيَا لَا شَيْءَ أَوْجَبَ بَعْدَ الْإِيمَانِ مِنْ دَفْعِهِ فَلَا يُشْتَرَطُ لَهُ شَرْطٌ بَلْ يُدْفَعُ بِحَسَبِ الْإِمْكَانِ.
“আত্মরক্ষার জন্য জিহাদ হলো সবচেয়ে জরুরী যাতে আগ্রাসী শক্তিকে মুসলিমদের পবিত্র স্থান ও দ্বীন থেকে হটিয়ে দেয়া হয়। আর এটি সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। ঈমান আনার পর সবচেয়ে বড় ওয়াজিব হলো- আগ্রাসী শত্রু যে এই দ্বীন ও জীবনকে কলুষিত করে তাকে প্রতিহত করা। এক্ষেত্রে কোন শর্ত নেই। বরং একে যে কোন উপায়ে প্রতিহত করতে হবে।
.
নবী মোহাম্মাদ (ﷺ) বলেন,
لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ – قَالَ – فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে কিতাল করতে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন । 
(সহিহ মুসলিম,২৯২,ইফাঃ) 
.
যারা কাফির মুশরিকদের বিরোদ্ধে লড়াই করার জন্য রাষ্ট্রের শর্ত আরোপ করে বলছেন রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া লড়াই করা যাবে না আল্লাহর ওয়াস্তে তারা বলবেন কি আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কেন কোন শাসকের কথা না বলে একটি দলের তথা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কথা বললেন? 
.
আল্লাহর রাসুল কেন বললেন না যে, রাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে এই লোকগুলি লড়াই করবে?
কেন বললেন না একজন বা দুজন শাসক হকের পথে থেকে বাতিলের বিরোদ্ধে লড়াই করতে থাকবে?
.
তারা যদি শাসকের অনুমতি নিয়ে শাসকের অধীনেই লড়াই করে থাকে তাহলে ঈসা আঃ কে কেন মুসলিমদের শাসক হিসেবে পাঠানো হবে?
.
যে দলটি কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে সেই দলটি কোন শাসকের অনুমতি নিয়ে লড়াইই করবে? 
বর্তমানে আদৌ কি তারা কোন শাসকের অধীনে আছে?
.
যদি রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া লড়াই করা হারাম হয় তাহলে কি রাসুল (ﷺ) কিছু হারাম মানুষকে হক বলে সার্টিফাইড করলেন? 

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...