Saturday, August 31, 2019

রজব মাসে সিয়াম/রোজা রাখার বিশেষ কোন ফজিলতের কথা বর্ণিত আছে কী?

প্রশ্ন: রজব মাসে সিয়াম বা রোজা রাখার বিশেষ কোন ফজিলতের কথা বর্ণিত আছে কী?
.
উত্তরঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরজন্য।
এক:
রজব মাস হারাম মাসসমূহের একটি। যে হারাম মাসসমূহের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:....[সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৬] হারাম মাসগুলো হচ্ছে- রজব, যুলক্বদ, যুলহজ্জ ও মুহররম মাস।
.
বুখারি (৪৬৬২) ও মুসলিম (১৬৭৯) আবু বকরা (রাঃ) থেকে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “বছর হচ্ছে- বার মাস। এর মধ্যে চার মাস- হারাম (নিষিদ্ধ)। চারটির মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক: যুলক্বদ, যুলহজ্জ, মুহররম ও (মুদার গোত্রের) রজব মাস; যে মাসটি জুমাদাল আখেরা ও শাবান মাস এর মধ্যবর্তী।”
.
এ মাসগুলোকে ‘হারাম’ আখ্যায়িত করা হয় দুইটি কারণে:

১. এ মাসগুলোতে যুদ্ধ হারাম হওয়ার কারণে। তবে শত্রু যদি প্রথমে যুদ্ধের সূত্রপাত করে সেটা ভিন্ন ব্যাপার।

২. এ মাসগুলোতে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া অন্য মাসে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে বেশি গুনাহ।
.
তাই আল্লাহ তাআলা এ মাসগুলোতে গুনাতে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “এগুলোতে তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না”[সূরা তওবা, আয়াত: ৩৬] যদিও এ মাসগুলোতে পাপে লিপ্ত হওয়া যেমন নিষিদ্ধ তেমনি অন্য যে কোন মাসে পাপে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ; তদুপরি এ মাসগুলোতে পাপে লিপ্ত হওয়া অধিক গুনাহ।
.
শাইখ সা’দী (রহঃ) (পৃষ্ঠা-৩৭৩) বলেন:

“এগুলোতে তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না” এখানে সর্বনামের একটা নির্দেশনা হতে পারে- বার মাস। আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি এ মাসগুলো মানুষের হিসাব রাখার সুবিধার্থে সৃষ্টি করেছেন। এ মাসগুলোতে তাঁর ইবাদত করা হবে। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে এবং মানুষের কল্যাণের মাধ্যমে অতিবাহিত করা হবে। অতএব, এ মাসগুলোতে স্বীয় আত্মার উপর জুলুম করা থেকে সাবধান হোন।
.
আরেকটি সম্ভাবনা রয়েছে এখানে সর্বনামটি চারটি হারাম মাসকে নির্দেশ করছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে- এ মাসগুলোতে জুলুম করা থেকে বিরত থাকার বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারী করা। যদিও যে কোন সময় জুলুম করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এ মাসগুলোতে জুলুমের গুনাহ বেশি মারাত্মক। সমাপ্ত
.
দুই:
কিন্তু রজব মাসে রোজা রাখা বা রজব মাসের কিছু অংশে রোজা রাখার ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। কিছু কিছু মানুষ রজব মাসের বিশেষ ফজিলত রয়েছে মনে করে এ মাসের বিশেষ কিছু দিনে যে রোজা রাখে এ ধরণের বিশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই।
.
তবে হারাম মাসসমূহে (রজব একটি হারাম মাস) রোজা রাখা মুস্তাহাব মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখ; এবং রোজা ভঙ্গও কর”[আবু দাউদ, হাদিস নং- ২৪২৮, আলবানী হাদিসটিকে যয়ীফ বা দুর্বল বলেছেন]
.
এ হাদিসটি যদি সাব্যস্ত হয় তাহলে হারাম মাসে রোজা রাখা মুস্তাহাব প্রমাণ হবে। অতএব, যে ব্যক্তি এ হাদিসের ভিত্তিতে রজব মাসে রোজা রাখে এবং অন্য হারাম মাসেও রোজা রাখে এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে রজব মাসকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে রোজা রাখা যাবে না।
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) মাজমুউল ফাতাওয়া (২৫/২৯০) গ্রন্থে বলেন:

পক্ষান্তরে রজব মাসে রোজা রাখা সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস দুর্বল; বরঞ্চ মাওযু (বানোয়াট)। আলেমগণ এর কোনটির উপর নির্ভর করেন না। ফজিলতের ক্ষেত্রে যে মানের দুর্বল হাদিস বর্ণনা করা যায় এটি সে মানের নয়। বরং এ সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস মাওজু (বানোয়াট) ও মিথ্যা।
.
মুসনাদে আহমাদ ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি হারাম মাসসমূহে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হারাম মাসগুলো হচ্ছে- রজব, যুলক্বদ, যুলহজ্জ, মুহাররম। এটি চারটি মাসের ব্যাপারেই এসেছে। বিশেষভাবে রজব মাসের ব্যাপারে নয়। সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত
.
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:

“রজব মাসে রোজা রাখা ও নফল নামায পড়ার ব্যাপারে যে কয়টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে সব ক’টি মিথ্যা”[আল মানার আল-মুনিফ, পৃষ্ঠা- ৯৬]
.
ইবনে হাজার (রহঃ) ‘তাবয়িনুল আজাব’ (পৃষ্ঠা- ১১) বলেন:

রজব মাসের ফজিলত, এ মাসে রোজা রাখা বা এ মাসের বিশেষ বিশেষ দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। অথবা এ মাসের বিশেষ কোন রাত্রিতে নামায পড়ার ব্যাপারে সহিহ কোন হাদিস নেই। সমাপ্ত
.
শাইখ সাইয়্যেদ সাবেক (রহঃ) “ফিকহুস সুন্নাহ’ গ্রন্থে (১/৩৮৩) বলেন:

অন্য মাসগুলোর উপর রজব মাসের বিশেষ কোন ফজিলত নেই। তবে এটি হারাম মাসসমূহের একটি। এ মাসে রোজা রাখার বিশেষ কোন ফজিলত কোন সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়নি। এ বিশেষ যে ক’টি বর্ণনা রয়েছে এর কোনটি দলিল হিসেবে গ্রহণ করার উপযুক্ত নয়। সমাপ্ত
.
শাইখ উছাইমীনকে ২৭ শে রজব সিয়াম ও কিয়াম পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন: “সবিশেষ মর্যাদা দিয়ে ২৭ শে রজব সিয়াম ও কিয়াম পালন- বিদআত। আর প্রত্যেকটি বিদআতই ভ্রান্তি।” সমাপ্ত [মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ উছাইমীন, (২০/৪৪০)]
.
.
রজব মাসের দুয়া সম্পর্কে পড়তে ও জানতে নিম্ন পোস্ট লিংকে প্রবেশ করুনঃ👇👇👇
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=2354456868121704&id=100006722419436


Friday, August 30, 2019

ছোট বাচ্চার প্রসাব/ পেশাব কাপড়ে লাগলে করনীয় কি?

ছোট বাচ্চার প্রসাব কাপড়ে লাগলে করনীয়, মেয়ে বাচ্চা হলে যা করতে হবে।


সুনানে আবু দাউদ -374।
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসলামা ............ উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) থেকে উম্মে কায়েস (রাঃ) -র সূত্রে বর্ণিত। তিনি তাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদ্মতে আগমন করেন । রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুটিকে কোলে নেয়ার পর সে তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দেয় । অতঃপর তিনি পানি নিয়ে কাপড়ের উক্ত স্থানে ঢেলে দেন কিন্তু তা ধৌত করেন নি ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)
আবু দাউদ
376। মুজাহিদ ইবনু মূসা .......... মুহিল্ল ইবনু খলীফা (রহঃ) থেকে আবূ সাম্হ (রাঃ) -র সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম ছিলাম। তিনি যখনে গোসলের ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে বলতেনঃ তুমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাড়াও । তখন আমি অপরদিকে পর্দা স্বরূপ মুখ ফিরিয়ে দাড়াতাম। একদা। হাসান অথবা হুসাইন (রাঃ) -কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আনা হলে তাদের একজন তাঁর বুকের উপর প্রসাব করেন । আমি তা ধৌত করতে যাই তখন তিনি বলেনঃ মেয়ে শিশুদের পেশাব ধৌত করতে হয় এবং ছেলে শিণ্ডদের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই চলে । ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আবূল যা'রা নামে পরিচিত। হারুন ইবনু তামীম (রহঃ) হাসান (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, ছেলে শিশু ও মেয়ে শিশুর পেশাবের হুকুম শরীআতের দৃষ্টিতে একই ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)

আবু দাউদ 377।
মূসা'দ্দাদ .......... আবূ হারব থেকে তাঁর পিতার সূত্রে এবং তিনি। আলী (রাঃ) -র সূত্রে বর্ণনা করেন। আলী (রাঃ) বলেন, খাদ্য গ্রহণে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে শিশুর পেশাব ধৌত করতে হবে এবং ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটালেই (ঢাললে) যথেষ্ট।
হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)
আবু দাউদ 378।
ইবনুল মুছান্না ............ আবূল হারব্ থেকে তার পিতার সূত্রে এবং তিনি। আলী (রাঃ) -র সূত্রে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ... পূর্বোক্ত হাদীছের অনুরূপ। এই সনদে 'মালাম ইয়াতআম' (যতক্ষণ খাদ্য গ্রহণ না করে) এ শব্দটির উল্লেখ নাই। হিশাম আরো বর্ণনা করেছেন যে, আবূ কাতাদার মতে শিশুকন্যা ও পুত্রদের ব্যাপারে যে মতানৈক্য আছে- তা কেবলমাত্র এ খাদ্যাভাসের পূর্ব পর্যন্ত। খাদ্য গ্রহণের পর- উভয়ের পেশাব ভালভাবে ধৌত করতে হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)


https://youtu.be/LJv62rKfwfw


নিজের জন্মদাতা বাবা মা বা পিতামাতা ছাড়া অন্য কাউকে বাবা মা ডাকা যাবে কি?

নিজের জন্মদাতা বাবা/মা ছাড়া অন্য কাউকে বাবা/মা বলা জায়েয আছে কি?

প্রশ্ন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: " যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। "।
(সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ১২৩)
এখন আমরা যারা শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা বলি তাদের ক্ষেত্রেও এই হাদিসটি প্রযোজ্য হবে?

উত্তর:
শশুরকে ‘বাবা’ আর শাশুড়িকে ‘মা’ বলা আমাদের সমাজের একটি বহুল প্রচলিত রীতি। আবার অনেক সময় শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, আলেম, মুরব্বী, বয়স্ক ব্যক্তি, শিক্ষক, সম্মানিত নেতা ইত্যাদি ব্যক্তিকে ‘পিতা’ বা ’বাবা’ বলা হয়।
 শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি নাজায়েয নয়। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই তা বলা হয়।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদেরকে আমাদের মা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যদিও তারা আমাদের জন্মদাত্রী মা নয় এবং ইবরাহীম আ. কে আমাদের পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদিও তিনি আমাদের জন্মদাতা পিতা নয়।

অনুরূপভাবে ছোটদের প্রতি স্নেহ ও মমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে ‘ছেলে’ বা বৎস বলাও প্রচলিত রয়েছে। এটিও দূষণীয় নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনাস রা. কে বলেন, يا بُنيِّ إذا دخلت على أهلك فسلم  “হে আমার বৎস, তুমি বাড়িতে প্রবেশ করলে বাড়ির লোকদেরকে সালাম দিবে।” (সহীহ মুসলিম)

হাদীসটির ব্যাখ্যা:

 অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
" যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। "।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১২৩)

উক্ত হাদীসের অর্থ হল, যে ব্যক্তি নিজের জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে মেনে নয় বা অন্য কারও সাথে জন্মগত সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার দাবী করে তার জন্য জান্নাত হারাম। যেমন অন্য হাদীসের ভাষায়:

مَنِ ادَّعى إِلى غَيْرِ أَبيهِ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبيهِ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرامٌ

“যে ব্যক্তি জেনে-শুনে নিজের পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে দাবী করে তার জন্য জান্নাত হারাম।” (বুখারী ও মুসলিম) অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে কুফুরী করবে। কেননা, তখন এতে নানা ধরণের বিধি-বিধান জড়িয়ে যাবে। যেমন, বৈবাহিক সম্পর্কিত হালাল-হারাম, পর্দা, উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ বণ্টন, ভরণ-পোষণ ইত্যাদি।
আল্লাহু আলাম।
➖➖➖➖➖➖➖➖➖
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

গাজওয়ায়ে হিন্দ যুদ্ধ কি হয়ে গিয়েছে?

যারা বলে গাজওয়াতুল হিন্দ যুদ্ধ ১২০০ সালে ইবনে কাসিমের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়ে গেছে , সুতরাং তাদের উদ্দেশ্যে আমি
গাজওয়াতুল হিন্দ যুদ্ধ সম্পর্কে একটি সহীহ হাদীসের রেফারেন্স সহকারে দিলাম :-

🔴 হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, “ অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে । এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন)”। এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবন-ই-মারিয়াম কে সিরিয়ায় (শাম) পাবে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, “ আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন অ পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম । যখন আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম; যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আঃ) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত । ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আঃ) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম, আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী ।”বর্ণনাকারী বলেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ ‘ খুব কঠিন, খুব কঠিন ’ ।

Source  :- 
১.মুসনাদে আহমাদ, শাইখ নাসের উদ্দিন আলবানী রহঃ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন ।
২. আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯
৩. মুসনাদে আহমাদ, আস সুনান আল মুজতাবা, আস সুনান আল কুবরা, আল মজাম আল অস্ত, আল জাম্য আল কাবীর।

রেফারেন্স :-
• ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) ‘মুসনাদ’
• ইমাম নিসাই (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আস সুনান আল মুজতাবা’
• শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন
• তদ্রূপ ‘আস সুনান আল কুবরা’
• ইবনে আবি আসিম (রাহিমাহুল্লাহ) ‘কিতাবুল জিহাদ’
• ইবনে আদি (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আল কামিল ফী যাউফা আর রীযাল’
• তাবরানী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আল মজাম আল অস্ত’
• বায়হাকী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আস সুনান আল কুবরা’
• ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’
• ইমাম ওয়েলমি (রাহিমাহুল্লাহ) ‘মুসনাদ আল-ফিরদাউস’
• ইমাম সুয়ুতি (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আল জাম্য আল কাবীর’
• ইমাম মানভী (রাহিমাহুল্লাহ) আল জামায় আল কাবীরের তাফসীর ‘ফায়েয আল কাদের’
• ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আল তারীক আল কাবীর’
• ইমাম মাযী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘তেহজিব আল কামাল’
• ইবনে আসাকার (রাহিমাহুল্লাহ) ‘দামাস্কাসের ইতিহাস’

Noted :- এই সহীহ হাদীসটি পড়ার পর এরপরেও যারা বলবে, গাজওয়াতুল হিন্দ যুদ্ধ ১২০০ সালে ইবনে কাসিমের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়ে গেছে । আমি তাদের বলব তারা মুনাফেক , তারা মুনাফেক , তারা মুনাফেক ।

তাছাডা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে ইসলাম বিদ্ধেষী মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য আদেশ দিয়েছেন সর্ব অবস্থায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ।

🔴 হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমাদের সম্পদ, তোমাদের হাত, তোমাদের জিহ্বা (কথার মাধ্যমে) জিহাদ কর"।

(হাদীসের মানঃ সহিহ, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং - ৩০৯৬)

#আস্তাগফিরুল্লাহ

কোন বিষয়ে মতবিরোধ হলে করণীয় কি?

কোন বিষয়ে মতবিরোধ হলে করণীয় কি??
আসুন আকাবির ও সালাফদের এই বিষয়ের মতামত জেনে নেইঃ
 
ইমাম সুফয়ান ইবনু উয়ায়না, ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক, ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. থেকে শুরু করে অসংখ্য আকাবির ও সালাফ এই কথা বলে গেছেন :
 
إذَا اخْتَلَفَ النَّاسُ فِي شَيْءٍ فَانْظُرُوا مَاذَا عَلَيْهِ أَهْلُ الثَّغْر فَإِنَّ الْحَقَّ مَعَهُمْ ؛ لِأَنَّ اللَّهَ يَقُولُ : { وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا } .

যখন মানুষজন কোনো বিষয়ে মতবিরোধ করে, তখন তোমরা লক্ষ করো, মুজাহিদগণ কোন মতের ওপর রয়েছেন। যেহেতু নিশ্চয়ই হক তাদের সঙ্গে আছে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, যারা আমার পথে জিহাদ করল, অতি অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথসমূহে উপনীত করব।
 
দ্রষ্টব্য : মাজমুউল ফাতাওয়া (২৮/৪৪২)

নাবী পত্নী সাফিয়া রঃ সম্পর্কে নাস্তিকদের অভিযোগের জবাব

হযরত সাফিয়া (রা) সম্পর্কে খগেনদের বিখ্যাত ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাব

অভিযোগ সমূহঃ

১/ হযরত সাফিয়া (রা) এর পিতা ও স্বামীকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছিল ?

২/ কোন নারী কি তার স্বামীকে, বাবাকে হত্যাকারীকে নিজের ভালবাসার স্বামী হিসেবে গ্রহন করবেন ? তাই সাফিয়া (রা) নবী মুহাম্মদ (সা)কে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নেননি ?

৩/ সাফিয়া (রা) কে জোর করে বিয়ের নামে ধর্ষণ করেছেন - নবী মুহাম্মদ (সা) ? কেমন ছিল সাফিয়া (রা) এবং নবী মুহাম্মদ (সা) এর দাম্পত্য জীবন ? এবং ইসলামের প্রতি হযরত সাফিয়া (রা)এর অন্তর থেকে ভালবাসা ছিল কি  ?

৪/ হযরত সাফিয়া (রা)কে বিয়ের আগে নবী মুহাম্মদ (সা) ইদ্দত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন নি ?

জবাবঃ আমরা ধারাবাহিক ভাবে উপরের ৪ টি অভিযোগ খণ্ডন করব । 

 ১/ হযরত সাফিয়া (রা) এর পিতা ও স্বামীকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছিল ?

উত্তরঃ প্রথমে এই বিষয়ে হাদিসের তথ্য গুলো জেনে নিবঃ

* সীরাতুর রাসুল (সা),লেখক মোঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব, পৃষ্ঠা ৪৯৪। এছাড়াও বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থে যেমন আর রাহীকুল মাখতুম, ইবনে হিশাম, সীরাতুন্নবি (সা) পাবেনঃ খয়বর যুদ্ধ শেষে যখন যুদ্ধবন্দীদের একত্রিত করা হয় তখন দাহিয়া কালবি (রা) এসে বলল ,হে আল্লাহ্‌র রাসুল (সা) আমাকে বন্দীদের থেকে একটা দাসী প্রদান করুন । নবীজি (সা) বললেন যাও একজন দাসী নিয়ে যাও । তখন তিনি সাফিয়া (রা)কে নিয়ে যান । এক ব্যাক্তি রাসুল (সা) কে বললেন, আপনি কি সাফিয়াকে দাহিয়া কালবিকে প্রদান করলেন ? সাফিয়া বিনতে হুয়াই ছিলেন কুরাইজা ও নাজীর গোত্রের সর্দারের কন্যা , তিনি তো আপনারই যোগ্য । তখন রাসুল (সা) দাহিয়াকে ডেকে এনে বলল তুমি এর বদলে তথা সাফিয়া ছাড়া অন্য যে কোন দাসী নিয়ে নাও । পরিশেষে নবী (সা) সাফিয়াকে ইসলামের দাওয়াত দেন । সাফিয়া (রা) কবুল করেন ও নবীজি তাঁকে মুক্ত করে বিয়ে করেন ।

*=* খয়বরের যুদ্ধের মুল কারনঃ

১/ খয়বারে যারা বাস করত তারা ছিল বনু নাজীরের বাসিন্দা তথা ইহুদী । বনু নাজীরের সাথে আগে থেকেই মুসলিমদের সাথে শান্তি চুক্তি ছিল । বনু নাজীরের বস্তীতে একবার রাসুল (সা) এক বাড়ির দেয়ালে ঘেঁষে বসেছিলেন । বনু নাজীরের লোকেরা বাহ্যিকভাবে খুবই ভাল ব্যাবহার করছিল কিন্তু তলে তলে একজন ঠিক করল যে ছাঁদের উপর থেকে বড় একটি পাথর নবী মুহাম্মদ (সা)এর মাথার ওপর ফেলবে । ফলে তিনি মারা যাবেন।এ সংবাদ রাসুল (সা) কে আল্লাহ্‌ জানিয়ে দেন । ফলে রাসুল (সা) সেখান থেকে উঠে চলে যান । ফলে তাদের ষড়যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায় । (উয়ুনুর আছার ২/৭০,৭১ পৃষ্ঠা, দারুল কলম প্রকাশনী, বৈরুত এবং সিরাতে ইবনে হিসাম ২/১৯০ পৃষ্ঠা )

২/ শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করে এমনকি রাষ্ট্র প্রদান নবী মুহাম্মদ (সা) কে হত্যার চেষ্টা করে ।

৩/ ফাতহুল বারি ৭/৫৮১ , খণ্ডক যুদ্ধঃ খয়বারের অধিবাসী বনু নাজীরের সর্দার হুয়াই বিন আখতাব মক্কায় গিয়ে কুরাইশদের এবং কিনানা বিন রবি বনু গাফতানকে উস্কানি দিয়ে ১০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে মদীনা অবরোধ করেছিল খণ্ডন যুদ্ধে ।

৪/ আগে থেকে মুসলমানদের সাথে সন্ধিতে চুক্তিবদ্ধ থাকা বনু কুরাইজাকেও বিদ্রোহ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজি করায় এ খয়বারের ইহুদী নেতা হুহাই বিন আখতাব ।

৫/ সীরাত ইবনে হিশাম ২/৩৩৬,৩৩৭ পৃষ্ঠাঃ সাফিয়ার স্বামী ছিল কিনান বিন রাবি , যে ছিল বনু নাজীরের একজন নেতা । এ গাদ্দার বনু গাফতানকে উস্কানি দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উৎসাহ দিয়েছিল । তারপরেও রাসুল (সা) সন্ধি করে, শান্তি চুক্তি করে তাদের নিরাপদ স্থানে যেতে বলেন কিন্তু তারা সেখানেও বেইমানি করে সেখানের সম্পদ চুরি করে পালাচ্ছিল যার নেতৃত্ব দিচ্ছিল কিনানা বিন রাবি । শুদু তাই না এই কিনানা বিন রাবি সাহাবী মাহমুদ বিন মাসলামা (রা) কে হত্যা করেছিল ।

৬/ এই যুদ্ধে মুসলিমদের ১৬ জন শহীদ হয় এবং ইহুদী পক্ষে ৯৩ জন মারা যায় । (সিরাতুল রাসুল (সা),৪৮৫ পৃষ্ঠা, আসাদুল্লাহ আল গালিব)

উপরের বিশুদ্ধ তথ্য সমূহ হাতে রেখে আমরা দাবি করছিঃ

* সাফিয়া (রা) এর স্বামী ও পিতা ছিল দেশদ্রোহী ।

* সাফিয়া (রা) এর স্বামী ও পিতা ছিলেন মুসলিম বিদ্বেষী এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী ছিল ।

* সাফিয়া (রা) এর স্বামী ও পিতা নবী মুহাম্মদ (সা) কে হত্যা করতে ছেয়েছিলেন।

* সাফিয়া (রা) এর স্বামী ও পিতা মুসলিমদের ধ্বংস করতে ছেয়েছিলেন ।

* সাফিয়া (রা) এর স্বামী ও পিতা ছিলেন জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী ।

* সুতরাং নবী মুহাম্মদ (সা) এর সাথীরা সাফিয়া (রা) এর জঙ্গি ও সন্ত্রাসী স্বামীকে কিনানা ও পিতাকে হুয়াই বিন আখতাবকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েই মানবতার উচিৎ কাজটাই করেছেন ।

২/ কোন নারী কি তার স্বামীকে, বাবাকে ভাইকে হত্যাকারীকে নিজের ভালবাসার স্বামী হিসেবে গ্রহন করবেন ? তাই সাফিয়া (রা) নবী মুহাম্মদকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নেননি ?

উত্তরঃ জবাব হলঃ বুঝলে বুঝা পাতা, না বুঝলে তেস পাতাঃ

* প্রশ্নকর্তা পুরা সিনেমার কাহিনীই বদলাইয়া দিসে । আচ্ছা ধরুন যদি ন্যায়পরায়ন নারী জানতে পারে যে  তার বাবা , ভাই, তার স্বামী সন্ত্রাসী এবং এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করছেন তারাই সত্যবাদী ভাল মানুষ তখন কি আর বাপ ভাইয়ের বিরুদ্ধে যেতে কোন আপত্তি আছে ? উত্তর হচ্ছে না যদি সেই নারী ন্যায়বাদী হয় । সাফিয়া (রা)ও একজন সত্যবাদী ও ন্যায়বাদী নারী ছিলেন । তখন কি আর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেই নেতা যুদ্ধ করছেন তার পক্ষে যাওয়া কি পসিবল ঐ নারীর ? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। একই ঘটনা সাফিয়া (রা) এর বেলায় ঘটেছে।

* উদাহরণঃ ধরুন দুই রাজার মধ্যে যুদ্ধ বেধেছে আর ছেলে মেয়ে একে ওপরকে ভালবাসে এরকম কাহিনী তো আমরা পড়েছি, সিনেমাতেও দেখেছি যে এখানে মেয়ে ছেলের বাবার পক্ষে থাকে কারন মেয়ে জানে যে মেয়ের নিজের বাবাই একজন অপরাধী । মেয়ের বাবা অন্যায় ভাবে ছেলের বাবার রাজত্ব ধ্বংস করতে চাইছে । এখানেও মেয়ে কিন্ত ছেলের বাবার পক্ষেই থাকে ।  এই উদাহরণ থেকে আমি বুঝাইতে চাইলাম যে সাফিয়া (রা) এর বাবা হুহাই বিন আখতাব ও নবী মুহাম্মদ (সা) এর যুদ্ধ অনেকটি উপরের উদাহরণ এর মত শুদু পার্থক্য হচ্ছে যে সাফিয়া (রা) যখন জানতে পারে যে তাঁর নিজের বাবা ও স্বামী সন্ত্রাসী যারা মুসলিমদের ধ্বংস করতে চেয়েছিল এরপরেই সাফিয়া (রা) নবী (সা) এর ব্যাপারে সত্য জেনে নবীকেই গ্রহণ করে নেন । ব্যাস ।

সুতরাং সাফিয়া (রা) নবী (সা) এর পক্ষেই ছিলেন কারন তিনি জানতেন যে নবী (সা) সত্যবাদী নবী এবং ভাল মানুষ এবং নবী মুহাম্মদ (সা) এর উপর হুহাই বিন আখতাব অন্যায় ভাবে ক্ষমতা অপব্যাবহার করে নবী মুহাম্মদ (সা) এবং সমগ্র মুসলিমদের পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল । প্রমান হিসেবে এই হাদিস পড়ুনঃ

* সীরাতুল রাসুল (সা), পৃষ্ঠাঃ ৪৯৪, আসাদুল্লাহ আল গালিবঃ হযরত সাফিয়া (রা) বলেন, আমার নিকট রাসুল (সা) এর চাইতে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি কেউ ছিল না কারন তিনি আমার পিতা ও স্বামীকে হত্যা করেছেন । অতপর রাসুল (সা) আমার নিকট বার বার ওজর পেশ করেন এবং বলেন হে সাফিয়া তোমরা পিতা আমার বিরুদ্ধে আরবদের জমা করেছিলেন । তাছাড়া অমুক অমুক (অন্যায়) কাজ করেছিলেন, অবশেষে আমার অন্তর থেকে তাঁর উপরে বিদ্বেষ দূর হয়ে যায় । - খেয়াল করুন সাফিয়া (রা) এর পিতা ও স্বামীকে তাদের অন্যায়ের কারনে নবী (সা) মৃত্যুদণ্ড দিলে , সাফিয়া (রা) প্রথমে নবীর প্রতি বিদ্বেষ থাকলেও যখন সাফিয়া (রা) বুঝতে পারলেন যে তার পিতা ও স্বামী সন্ত্রাসী ছিলেন ঠিক তখনই সে নবী (সা) কাজকে সাপোর্ট করেন এবং নবীর প্রতি যেই বিদ্বেষ সেটা দূর হয়ে যায় ।

* হযরত সাফিয়া (রা) যদি নবীকে স্বামী হিসেবে যদি মন থেকে ঘৃণাই করতে তাহলে স্বামীর ইসলামের পক্ষে কেন কথা বলতেন সাফিয়া (রা)? এর থেকেই প্রমান হচ্ছে যে নবীজি (সা) কে তিনি ভালবাসতেন ।

প্রমান = ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯৯৪, সহিহ হাদিসঃ  উম্মুল মু’মিমীন সাফিয়্যাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই’তিকাফ অবস্থায় ছিলেন। এক রাতে আমি তাঁর সাথে দেখা করতে তাঁর নিকট গেলাম। কথাবার্তা শেষ করে আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালে তিনিও আমাকে এগিয়ে দিতে দাঁড়ালেন। তার (সাফিয়া (রাঃ)) বসবাসের স্থান ছিল উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ)-এর ঘর (সংলগ্ন)।এ সময় আনসার গোত্রের দুই ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা থামো! ইনি (আমার স্ত্রী) সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াই। তারা দু’জনে বললেন, “সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শয়তান মানুষের মধ্যে রক্তের মত চলাচল করে। তাই আমার ভয় হচ্ছিল যে, সে তোমাদের দু’জনের মনে মন্দ কিছু নিক্ষেপ করবে।

৩/ হযরত সাফিয়া (রা) কে জোর করে বিয়ের নামে ধর্ষণ করেছেন - নবী মুহাম্মদ (সা) ? কেমন ছিল সাফিয়া (রা) এবং নবী মুহাম্মদ (সা) এর দাম্পত্য জীবন ? এবং ইসলামের প্রতি হযরত সাফিয়া (রা)এর অন্তর থেকে ভালবাসা ছিল কি ?

উত্তরঃ জোর করে বিয়ে করেন নি । সম্মতিতেই বিয়ে করেছেন । সাফিয়া (রা) এবং নবী মুহাম্মদ (সা)এর সম্পর্ক উত্তমই ছিল । ইসলাম ধর্মের প্রতি হযরত সাফিয়া (সা) এর অন্তর থেকেই ভালবাসা ছিল, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত । 

= ধর্ষণ প্রমান করতে হলে নারীর অভিযোগ লাগে , হযরত সাফিয়া (রা) কি অভিযোগ দিয়েছিল কোন ? যদি না দেন তাহলে এখানে ধর্ষণের প্রশ্নই আসে না । সুতরাং নোংরা খগেন মশাইদের প্রশ্নটিই ভিত্তিহীন ।

= রাসুলুল্লাহ (সা)এর স্ত্রীগণ যেমন ছিলেন, পৃষ্ঠা ১৫০, পিস পাবলিকেশনঃ খয়বার যুদ্ধ বিজয়ের পর সাফিয়া (রা) বন্ধী হয়ে আসলে এক সময় তাঁকে রাসুল (সা) জিজ্ঞেস করলেন, আমার ব্যাপারে তুমার কোন আগ্রহ আছে কি ? তিনি উত্তরে বললেন, শিরিকের মধ্যে নিমজ্জিত থাকার সময় আমি এই আশা পোষণ করতাম । সুতরাং ইসলাম গ্রহনের দ্বারা আল্লাহ্‌ আমাকে আপনার সাহচর্য লাভের যে সুযোগ দিয়েছেন , সে সুযোগ আমি কি ভাবে হারাতে পারি ? - সাফিয়া (রা)কে তাঁর ব্যাক্তিগত সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার পরেও সাফিয়া (রা) নবী (সা)কেই অন্তর থেকে মেনে নেন।

* রাসুলুল্লাহ (সা) স্ত্রীগণ যেমন ছিলেন, পৃষ্ঠা ১৫২ ও ১৫৩, পিস পাবলিকেশনঃ নবী মুহাম্মদ (সা) সাফিয়া (রা) লে বললেন তুমি যা ইচ্ছা পছন্দ করো, বেছে নেও। যদি তুমি ইসলামকে পছন্দ করো তাহলে আমি তোমাকে আমার জন্য রেখে দিব আর যদি তুমি ইহুদী ধর্ম মতকে পছন্দ করো তাহলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দিব , যাতে তুমি তোমার কওমের সাথে মিলিত হতে পারো । তিনি বললেন হে আল্লাহ্‌র রাসুল আমি ইসলামকে ভালবেসেছি । আপনি আমাকে দাওয়াত দেওয়ার আগেই আমি আপনাকে সত্য বলে স্বীকার করেছি। এমনকি আমি আপনার সওয়ারীতে চড়েছি । ইহুদী ধর্মের প্রতি আমার  আর কোন আকর্ষণ, আগ্রহ নাই আর সেখানে আমার পিতা ভাই কেউই নাই । আপনি কুফুরি বা ইসলাম যে কোনটি গ্রহনের এখতেয়ার (স্বাধীনতা) দিয়েছেন । আল্লাহ ও রাসুলই আমার নিকট অধিক প্রিয় , স্বাধীন হওয়ার চেয়ে। তখন রাসুল (সা) সাফিয়াকে নিজের জন্য রেখে দিলেন । মুক্ত করে বিয়ে করেন । - খেয়াল করুন সাফিয়া (রা) সম্পর্ক স্বাধীনতা দেওয়ার পরেও তাঁর ব্যাক্তিগত ইচ্ছাই ছিল নবী মুহাম্মদ (সা) এর সাথে থাকা ।

= রাসুলুল্লাহ (সা) স্ত্রীগণ যেমন ছিলেন, পৃষ্ঠা ১৫২, পিস পাবলিকেশনঃ সাফিয়া (রা) কোথাও যেতে রাজি হলেন না । তিনি নবী মুহাম্মদ (সা)এর কাছে বিনীত আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) খয়বার যুদ্ধে আমার পিতা ও স্বামী নিহত হয়েছেন । আমার নিকটতম আত্মীয় স্বজনরাও যুদ্ধে প্রান হারিয়েছে আর আমি ইহুদী ধর্ম ত্যাগ করে পবিত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছি । বর্তমানে আমার ইহুদী আত্মীয় স্বজন যারা বেঁচে আছে তাদের কেউই আমাকে আশ্রয় দিবে না এবং গ্রহণও করবে না । এ আশ্রয়হীন অবস্থায় আমি কোথায় যাবো ? কে আমাকে স্থান দিবে ? ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি আর কোথাও যাবো না , আমি আপনার আন্তঃপুরে একজন দাসী হয়ে থাকতে চাই । আপনি আমাকে আশ্রয় প্রদান করুন। - খেয়াল করুন সাফিয়া (রা) নিজেই নবী মুহাম্মদ (সা)এর কাছে থাকার প্রস্তাব দিচ্ছেন ।

= সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩/৩০৬, আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ): একবার মহানবী (সা) এর মৃত্যুরোগের সময় সমস্ত নবী সহধর্মিণী তাঁর খেদমতে একত্র হলেন । তখন হযরত সাফিয়া (রা) বললেন, হে আল্লাহ্‌! রাসুল (সা) এর রোগ তাঁর পরিবর্তে আমাকে দাও । বিবিগন এ কথা শুনে পরস্পরের দিকে তাকাচ্ছিল, তখন নবী মুহাম্মদ (সা) বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ নিশ্চয়ই সে সত্যবাদী । - যদি সাফিয়া (রা) নবী মুহাম্মদ (সা) কে ঘৃণা করতেন তাহলে তিনি কেন নবী (সা) এর রোগের পরিবর্তে নিজের রোগ হক এই দুয়া করবেন ?

= আল ইসাবা,৪/৩৪৭ এবং সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩/৩০৬, আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ): হযরত উমর (রা) বলেন সাফিয়ার এক দাসী হযরত উমর (রা) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলো যে, হযরত সাফিয়া ইহুদী সংস্কৃতি অনুকরনে শনিবারকে গুরুত্ব দেন এবং ইহুদীদের সাথে ভাল আচরণ করেন । হযরত উমর (রা) , হযরত সাফিয়া (রা) থেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন। হযরত সাফিয়া (রা) জবাবে জানালেন! যখন আল্লাহ্‌ তা'লা হযরত মুহাম্মদ (সা) কে শনিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দান করেছেন তখন থেকে আমি শনিবারকে আর পছন্দ করি না ।অন্যদিকে আমার কিছু ইহুদী আত্মীয় আছে । আমি তাদের আত্মীয়তার হক অনুযায়ী ভাল আচরণ করি । তিনি হযরত উমর (রা) কে এই জবাব জানিয়ে পাঠালেন অন্যদিকে সেই বাদীকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে আমার বিরুদ্ধে এই কাজে কে উস্কে দিয়েছে ? সে সত্যি সত্যি জবাব দিল শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিয়েছে । হযরত সাফিয়া (রা) বললেন ঠিক আছে । আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম । - এই তথ্য থেকে প্রমান হল হযরত সাফিয়া (রা) ইসলামকে অন্তর থেকেই ভালবাসতেন ।

= সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩/৩০৫, আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ): একদিন নবী মুহাম্মদ (সা) হযরত সাফিয়া (রা) নিকট আগমন করে দেখলেন,সাফিয়া কাঁদছে । তিনি তাঁকে কান্নার কারন জিজ্ঞাসা করলে, তিনি জানান হযরত আয়েশা এবং হজরত হাফসা তাঁকে অপমান করে বলেছে - আমরা রাসুল (সা) এর নিকট অধিক মর্যাদাবান । কেননা আমরা তাঁর বিবি হওয়ার সাথে সাথে তাঁর চাচাদের কন্যাও বটে। নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁকে বললেন, তুমি তাঁদেরকে কেন এভাবে বলতে পারলে না যে, তোমরা আমার থেকে কিভাবে মর্যাদাবান হতে পারো, আমার আদি পিতা হচ্ছেন হযরত হারুন (আ) আর আমার চাচা হচ্ছেন হযরত মুসা (আ) এবং আমার স্বামী হযরত মুহাম্মদ (সা) ।  - এই তথ্য থেকে প্রমাণিত হচ্ছে হযরত সাফিয়া (রা) নবীকে ভালবাসতেন তানা হলে কেন তিনি নবীর অন্য স্ত্রীদের কোথায় কান্না করবেন ? তিনি যদি নবী (সা) কে ঘৃণাই করতেন তাহলে তো তিনি আয়েশা ও হাফসা (রা) এর কথায় খুশিই হতেন যেহেতু তারাই নবীর কাছে মর্যাদাবান সাফিয়া (রা) না অথচ তাঁকে নবী কাছে কম মর্যাদা কেন বলা হল এর জন্য তিনি কান্না পর্যন্ত করেছেন ? আপনি একজন মানুষকে ভাল না বাসলে তাঁর জন্য কান্না করবেন কেন ?

= সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩/ ৩০৬ , আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ): হযরত সাইদ ইবনে মুসায়াব (রা) বর্ণনা করেন, হযরত সাফিয়া (রা) যখন মদীনায় আগমন করেন তখন তাঁর কিছু সোনার গহনা ছিল। তিনি কিছু হযরত ফাতিমা (রা) কে দিলেন এবং কিছু অন্যান্য মহিলাদেরকে দিয়ে দিলেন । - এই তথ্য থেকে প্রমান হল নবী মুহাম্মদ (রা) এর পরিবারের প্রতিও সাফিয়া (রা) মমতা মায়া ছিল ।

= ইবনে সা’আদ-তাবাকাত, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-১০০: একবার কিছু লোক রাসূল (সা) এর স্ত্রী সাফিয়া(রা:) এর ঘরে জড় হয়েছিল। তারা আল্লাহকে স্মরণ করে কুরআন তিলওয়াত করছিল এবং সিজদা করছিল। সাফিয়া(রাঃ) তাদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা সিজদা করলে আর কুরআন তিলওয়াত করলে। কিন্তু (আল্লাহর ভয়ে) তোমাদের (চোখে) অশ্রু কোথায়?”. - তিনি কেন ইসলামের পক্ষে ছিলেন মৃত্যু পর্যন্ত ?

= যারকানী,৩/২৫৭ এবং আল ইসাবা,৪/৩৪৭ এবং সীরাতুল মুস্তফা (সা), ৩/৩০৫, আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ): হযরত সাফিয়া (রা) যখন নবী (সা) এর স্ত্রীর মর্যাদা পেলেন, নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখের উপর একটু নীল দাগ দেখতে পেলেন,তিনি তাঁকে প্রশ্ন করলেন, এ দাগ কিভাবে হয়েছে ? তখন সাফিয়া (রা) বর্ণনা করলেনঃ একদিন আমি আমার পূর্ব স্বামীর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আকাশের চাঁদ আমার কোলে এসে পড়েছে । আমি ঘুম থেকে উঠে আমার স্বামীকে আমার সপ্নের কথা বলার পরে সাথে সাথে সে আমাকে প্রচণ্ডভাবে একটি চড় মারল এবং বলল , তুমি (ইয়াসরিব) মদীনার শাসককে কামনা করছ অর্থাৎ সে মহানবী (সা) এর দিকে ইঙ্গিত করেছিল। সাফিয়া (রা) মদীনায় আগমনের পরে তিনি হারিস ইবনে নুমানের গৃহে উঠেন। হজরত সাফিয়া (রা) অনেক সুন্দর ছিলেন। আনসারী মহিলারা তাঁকে দেখতে ভিড় করেন । হযরত আয়েশা (রা) তাঁকে দেখতে যান কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁকে চিনে ফেলেন । পরক্ষনে তিনি ফিরে আসলে নবী (সা) তাঁকে প্রশ্ন করলেন, আয়েশা! কেমন দেখলে ? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ , এই ইহুদীকে দেখে এলাম । রাসুল (সা) বলেন তুমি এভাবে বল না । সে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম গ্রহণ উত্তমভাবেই করেছে । - সুতরাং এই তথ্য থেকে প্রমান হচ্ছে সাফিয়া (রা) নিজের ইচ্ছাতেই ইসলাম মন থেকেই গ্রহণ করেছেন এবং নবী মুহাম্মদ (সা) সম্পর্কে তাঁর আকর্ষণ ছিল ।

=  ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৮৭৫, সহিহ হাদিসঃ  আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বললাম, সাফিয়্যাহ (রাঃ)-এর ব্যাপারে আপনার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে এরূপ অর্থাৎ তিনি খাটো। তিনি বললেনঃ তুমি এমন একটি কথা বলেছো, যা সমুদ্রে মিশিয়ে দিলে তাতে সমুদ্রের রং পাল্টে যাবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নকল করলাম। তিনি বললেন, আমাকে এতো এতো সম্পদ দেয়া হলেও আমি কারো অনুকরণ পছন্দ করবো না। - নবী মুহাম্মদ (সা) সাফিয়া (রা) কেও ভালবাসতেন তাঁকে সম্মান করতেন ।

= Abu Nu’aym al Asbahani, Hilyat al-Awliya, Vol-2, page-55: মুহাম্মদ (সা) আজীবন সাফিয়া(রাঃ) এর প্রতি ভালোবাসা ও মমতা দেখিয়েছেন। তাইতো সাফিয়া(রাঃ) বলতেন, ‘আমি রাসূল (সা) থেকে উত্তম ব্যক্তি কখনো দেখিনি।’

৪/ সাফিয়া (রা) কে বিয়ের আগে ইদ্দত পালন করেননি ?

উত্তরঃ নবী (সা) অবশ্যই সাফিয়া (রা)কে বিয়ের করার আগে ইদ্দতের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন। প্রমান হলঃ

* ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১৮৭, সহিহ হাদিসঃ আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেও সঙ্গম করা যাবে না।

* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৪২১১, সহিহ হাদিসঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা খাইবারে এসে পৌঁছলাম। এরপর যখন আল্লাহ তাঁকে খাইবার দূর্গের বিজয় দান করলেন তখন তাঁর কাছে (ইয়াহূদী দলপতি) হুয়াঈ ইবনু আখতারের কন্যা সফিয়্যাহ (রাঃ)-এর সৌন্দর্যের ব্যাপারে আলোচনা করা হল। তার স্বামী (এ যুদ্ধে) নিহত হয়। সে ছিল নববধূ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নিজের জন্য মনোনীত করেন এবং তাকে সঙ্গে করে (খাইবার থেকে) যাত্রা করেন। এরপর আমরা যখন সাদ্দুস সাহবা নামক স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম তখন সফিয়্যাহ (রাঃ) তাঁর মাসিক ঋতুস্রাব থেকে মুক্ত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গে বাসর করলেন। তারপর একটি ছোট দস্তরখানে (খেজুর-ঘি ও ছাতু মিশ্রিত) হায়স নামক খানা সাজিয়ে আমাকে বললেন, তোমার আশেপাশে যারা আছে সবাইকে ডাক। আর এটিই ছিল সফিয়্যাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে বিয়ের ওয়ালীমা। তারপর আমরা মাদীনাহ্‌র দিকে রওয়ানা হলাম, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর সাওয়ারীর পেছনে সফিয়্যাহ (রাঃ)-এর জন্য একটি চাদর বিছাতে দেখেছি। এরপর তিনি তাঁর সাওয়ারীর ওপর হাঁটুদ্বয় মেলে বসতেন এবং সফিয়্যাহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাঁটুর উপর পা রেখে সাওয়ারীতে উঠতেন।

* ইবনে সা’আদ, তাবাকাত। খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ১০১, সহিহ হাদিসঃ ইদ্দতের সময়টুকু অপেক্ষা করেছিলেনঃ আনাস ইবনে মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল (সা) সাফিয়া(রাঃ)কে নিজের জন্য পছন্দ করলেন এবং তাঁকে নিয়ে রওনা দিলেন। একসময় আমরা সাদ-আস-সাহবা নামক স্থানে পৌঁছালাম। এসময় সাফিয়া(রাঃ) তাঁর মাসিক অবস্থা থেকে পবিত্র হলেন। অতঃপর রাসূল(সাঃ) তাঁকে বিয়ে করলেন।’

উপরের বিশুদ্ধ তথ্য প্রমান হাতে রেখে প্রশ্ন ছুড়ে দিলামঃ

১/ প্রমান করুন যে "নবী মুহাম্মদ (সা)কে সাফিয়া (রা) মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অন্তর থেকে ঘৃণা করতেন" ?

২/ প্রমান করুন যে "হযরত সাফিয়া (সা) তার আগের স্বামীদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে ভালবাসতেন ?

৩/ প্রমান করুন যে "হযরত সাফিয়া (রা) কে জোর করে বিয়ে করেছেন নবী মুহাম্মদ (সা) ?

৪/ যদি সাফিয়া (রা) নবী মুহাম্মদ (সা) কে ঘৃণাই করতেন তাহলে তিনি কেন নবী (সা)এর পক্ষে কথা বলবেন ? কেন সাফিয়া (রা) এর মর্যাদা কোন নবীর কাছে এই কথা শুনে তিনি কেন কান্না করবেন ?

৫/ হযরত সাফিয়া (রা) যদি নবী মুহাম্মদ (সা) ঘৃণাই করতেন তাহলে নবিজির আদরের কন্যা ফাতিমাকে কেন নিজের সোনার গহনা উপহার দিলেন সাফিয়া (রা)?

৬/ নবী মুহাম্মদ (সা) কি কোন কাজে সাফিয়া (রা) জবরদস্তী করেছেন ? প্রমান কই ? 

৭/  সাফিয়া (রা) মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ইসলামের পক্ষেই ছিলেন কিন্তু কেন ? যদি বলেন, সাহাবীদের ভয়ে তাহলে এর পক্ষে সাফিয়া (রা) এর জবানের প্রমান দেখান ? সাফিয়া (রা) থেকে এমন কোন কাজ দেখান যেটা তিনি ইসলামের ক্ষতি করার জন্য করেছেন ?

৮/ নবী মুহাম্মদ (সা) যদি সাফিয়া (রা) কে জবরদস্তীই করবেন তাহলে তিনি কেন সাফিয়া (রা) কে নিজের মতামতের ব্যাক্তি স্বাধীনতা দিলেন ?

৯/ নবী মুহাম্মদ (সা) কেন সাফিয়া (রা) কে বললেন যে তুমি ইচ্ছা করলে ইহদি ধর্ম মত গ্রহন করতে পারো এতে তুমি তোমার ইহুদী কওমের কাছে ফিরে যেতে পারবে ? কোন জবরদস্তী করা মানুষ কি এইভাবে কাউকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেয় ? আমি তো জীবনেও দেখি নাই ।

১০/ নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা যে বলেন নবী মুহাম্মদ (সা) অন্যায় ভাবে সাফিয়ার পিতা ও স্বামীকে হত্যা করেছিল এর মানে কি আপনারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদকে সাপোর্ট দিচ্ছেন ? কারন হুহাই বিন আখতাব ও কেনানা এরা সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ছিল আর নবী (সা) এদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যোগ্য কাজটাই করেছেন - আপনারা এখানে দ্বিমত করছেন কেন ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

Thursday, August 29, 2019

সলাতের খুশুখুজু কি & কেন?

সলাতের খুশু-খুযু কি এবং কেন?

‘খুশু’-এর আভিধানিক অর্থ হ’ল দীনতার সাথে অবনত হওয়া, ধীরস্থির হওয়া ইত্যাদি। ইবনু কাছীর বলেন, খুশু অর্থ- স্থিরতা, ধীরতা, গাম্ভীর্য, বিনয় ও নম্রতা। ইবনুল ক্বাইয়ম বলেন, খুশু হল হৃদয়কে দীনতা ও বিনয়ের সাথে প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থাপন করা। [মাদারিজুস সালেকিন ১/৫১৬]

সার্বিক অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে রসুল স.-এর নিম্নোক্ত হাদিসটি একটি কঠিন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই উম্মত হতে সর্বপ্রথম সলাতের একাগ্রতাকে উঠিয়ে নেয়া হবে, এমনকি তুমি তাদের মধ্যে কোন একাগ্রচিত্ত মুসল্লি খুঁজে পাবে না’। [ত্বাবারাণী; ছহিহুল জামে‘ হা/২৫৬৯]

একই বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে হুযায়ফা রা.-এর নিম্নোক্ত বাণীতে। তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম তোমরা সলাতে একাগ্রতা হারাবে। অবশেষে হারাবে সলাত। অধিকাংশ সলাত আদায়কারীর মধ্যে কোনো কল্যাণ অবশিষ্ট থাকবে না। হয়তো মসজিদে প্রবেশ করে একজন বিনয়ী-একাগ্রতা সম্পন্ন সলাত আদায়কারীকেও পাওয়া যাবে না’। [ইবনুল ক্বাইয়ম, মাদারিজুস সালেকীন বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৬), ১/৫১৭ পৃঃ]

‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে’ [বাকারাহ ২/২৩৮]

তিনি আরো বলেন, ‘ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা সলাতে বিনয়াবনত’ [মুমিনুন ২৩/১-২]

খুশু বা একাগ্রতার স্থান হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে, কিন্তু এর প্রভাব বিকশিত হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। অন্যমনস্ক হওয়ার দরুন আত্মিক জগতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও তার কুপ্রভাব পড়ে। তাই হৃদয় জগতকে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতায় পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হলেই সলাতের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া সম্ভব। সলাতের মধ্যে খুশু কেবল তারই অর্জিত হবে, যে সবকিছু ত্যাগ করে নিজেকে শুধুমাত্র সলাতের জন্য নিবিষ্ট করে নিবে এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে সলাতকে স্থান দিবে। তখনই সলাত তার অন্তরকে প্রশান্তিতে ভরে দিবে।

রসুলুল্লহ স. বলতেন, ‘সলাতেই আমার চোখের প্রশান্তি রাখা হয়েছে’। [আহমাদ, মিশকাত হা/৫২৬১, সনদ হাসান]

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে মনোনীত বান্দাদের আলোচনায় ‘খুশু-খুযু’র সাথে সলাত আদায়কারী নারী-পুরুষের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত ক্ষমা ও সুমহান প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন [আহযাব ৩৩/৩৫]

‘খুশু’ বান্দার উপর সলাতের এই কঠিন দায়িত্বকে স্বাভাবিক ও প্রশান্তিময় করে তোলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই তা বিনয়ী-একনিষ্ঠ ব্যতীত অন্যদের উপর অতীব কষ্টকর’ [বাক্বারা ২/৪৫]

বস্তুত যে কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে যখন রসুল স.-এর নিম্নোক্ত বাণীর অনুসরণ করা হবে, তখনই তা এক সফল ইবাদতে পরিণত হবে। হৃদয়জগতকে অপার্থিব আলোয় উদ্ভাসিত করবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’। [বুখারি হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২]

আল্লহ আমাদের হেফাজত করুন শয়তান এবং মুনাফিকদের থেকে। আহ সবাইকে হেদায়ত ও বোঝার তৌফিক দান করুন।

আল্লাহ্‌র আরশ কি এতই দুর্বল যে কেঁপে উঠে ?

প্রশ্নঃ আল্লাহ্‌র আরশ এতই দুর্বল যে কেঁপে উঠে ?

উত্তরঃ প্রথমে আমরা এই বিষয়ে হাদিস সমূহ জেনে নিব আসুন ,
* ই,ফাঃ বুখারি,৬/৩৫৩, পরিচ্ছেদ ২১২২: সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) এর মর্যাদা ।
* ই,ফাঃ বুখারি, ৬/ ৩৫৪ , হাদিসঃ ৩৫৩১, সহিহ হাদিসঃ জাবির (রা) বলেন আমি নবী (সা)কে বলতে শুনেছি , সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) এর মৃত্যুতে আল্লাহ্‌র আরশ কেঁপে উঠেছিল । আমাশ (রহ) ... নবী (সা) থেকে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে । এক ব্যাক্তি জাবির (রা) কে বলল , বারা ইবনে আযিয (রা) তো বলেন জানাজার খাট নড়েছিল । তদুত্তরে জাবির (রা) বললেন, সাদ ও বারা (রা) এর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল । (কিন্তু এটা টিক নয়) কেননা, নবী (সা) কে "আল্লাহ্‌র আরশ সাদ ইবনে মুয়াজের মৃত্যুতে কেঁপে উঠল বলতে শুনেছি ।
* ই,ফাঃ বুখারি, ৬/৩৫৩, হাদিসঃ৩৫৩০, সহিহ হাদিসঃ বারা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , নবী করীম (সা) কে এক জোড়া রেশমি কাপড় হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হল । সাহাবা কেরাম (রা) তা স্পর্শ করে এর কোমলতা অবাক হয়ে গেলেন, নবী (সা) বললেন এর কমলতায় তোমরা অবাক হচ্ছ ? অথচ সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) এর জান্নাতের প্রদত্ত রুমাল এর চেয়ে অনেক উত্তম অথবা বলেছেন অনেক মুলায়েম ।
* ই,ফাঃ বুখারি, ৬/৩৫৪,৩৫৫ হাদিসঃ৩৫৩২, সহিহ হাদিসঃ বনু কুরাইজা সন্ত্রাসীদের শাস্তি দিতে সাদ ইবনে মুয়াজ এমন ফয়সালা করেন যেটা আল্লাহ্‌র ফয়সালার সাথে মিলে যায় ।
উপরের হাদিস সমূহ থেকে আমরা বুঝতে পারলামঃ
১/ হাদিসটি হযরত সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) এর মর্যাদা বর্ণনা করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে ।
২/ সাহাবীর মর্যাদা বুঝাতে রূপক অর্থে "আল্লাহ্‌র আরশ কেঁপে উঠেছে বুঝানো হয়ছে" ।
৩/ দুনিয়ার কমল রুমাল থেকে জান্নাতের রুমাল অনেক গরজিয়াস এবং মুলায়েম ।
৪/ হযরত সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) বনু কুরাইজা সন্ত্রাসীদের এমন এক শাস্তি নির্ধারণ করেছিলেন যেটা সরাসরি আল্লাহ্‌র ফয়সালার সাথে মিলে গিয়েছে ।
৫/ কোন কিছু কেঁপে উঠা মানে, এটা প্রমান হয় না যে সেটি দুর্বল,নরম শক্তিহীন ।
৬/ উদাহরণঃ মোবাইলে আমরা অনেক সময় ভাইব্রেশন অন করে রাখি যাতে কল এলে মোবাইলে আওয়াজ না হয় এবং মোবাইল কেঁপে উঠে , আচ্ছা এর মানে কি মোবাইল তুলার মত নরম ? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং কেঁপে উঠা মানেই সেট দুর্বল এই কথা ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক ।
৭/ উদাহরণঃ আমরা অনেক সময় বলি "বন্ধু তুমি ক্রিকেট খেলায় এমন ভাবে চার ছক্কা মেরেছ যে পুরা মাঠ তুমার খেলায় কাঁপছিল" আচ্ছা এখন কি কোন খগেন বলবেন যে, এর মানে ক্রিকেট খেলার মাঠ তুলার মত দুর্বল মানুষ সেখানে খেলতে পারে না ? হাহাহাহাহা
৮/ উদাহরণঃ বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের জন্য আয়েশা বেগম এমন কাজ করেছেন এবং এতে সরকার এত খুশি হয়েছেন সে সরকারের পুরো ভবন কেপে উঠেছিল । আচ্ছা এর মানে কি সরকারের ভবন তুলার মত নরম সেটি বাতাসে উড়ে যাবে, সরকারের ভবনের কোন ক্ষমতা নাই ?
৯/ উদাহরণঃ মুক্তিযোদ্ধারা এমন ভাবে দেশেকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করছিলেন যে পুরো দেশ কাঁপছিল ,আচ্ছা এর মানে একটি দেশ নরম তুলার মত ? দেশের মাটি দুর্বল ? যেহেতু দেশ কাঁপছিল সেহেতু কি মুক্তিযোদ্ধারা দুর্বল ?
১০/ প্রশ্ন আসতে পারে আল্লাহ্‌র আরশের চেয়ে একজন মুমিন বান্দার মর্যাদা কিভাবে বেশি হতে পারে ? এর উত্তর সহজঃ কোন মর্যাদাবান জিনিসকে দিয়ে অন্য কাউকে মর্যাদার উদাহরণ দেয়া হলে এর মানে এটি প্রমান হয় না যে ঐ মর্যাদারবান জিনিসকে ছোট করা হয়েছে । ঠিক একই ভাবে হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) এর মৃত্যুতে আল্লাহ্‌র আরশ কেঁপে উঠেছিল এর মানে এটি প্রমান হয় না যে আল্লাহ্‌র আরশের মর্যাদা কমে গিয়েছে । ধরুন আপনাকে বলা হল, "ভাই আপনি তো দেখি সাকিব আল হাসানের মত ক্রিকেট খেলেন" এর মানে এই না যে সাকিব আল হাসানকে ছোট করা হয়েছে ।
ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ১৫৯৭, সহিহ হাদিসঃ উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি হাজ্‌রে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। - দেখুন কাবা ঘরের মতন একটি পবিত্র স্থানের পাথরকে হজরত ওমর (রা) বলছেন - এই হাদিসের হাজ্‌রে আসওয়াদ পাথরের কোন ক্ষমতা নেই বলা হয়েছে কিন্ত এরমানে এই না যে হাজ্‌রে আসওয়াদ পাথরের কোন গুরুত্ব নাই । যেহেতু আমাদের নেতা নবী মুহাম্মদ (সা) এই পাথরকে চুম্বন করতেন তাই অবশ্যই এই পাথরের মর্যাদা আমাদের কাছে রয়েছে কিন্তু কোন মানুষের কল্যাণ অথবা অকল্যাণ করার ক্ষমতা এই পাথরের নাই । এর মানে এই না যে পাথরকে অসম্মান করা হয়েছে ।
১১/ সুতরাং প্রশ্নকর্তা যে প্রশ্ন করেছেন সেটির মৌলিক উত্তর হবে হযরত সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) এর মর্যাদা বুঝাতে রূপক অর্থে নবী (সা) আরশ কেপে উঠেছিল বুঝিয়েছেন ।

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

Wednesday, August 28, 2019

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যেরকম হওয়া উচিত

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যেরকম হওয়া উচিতঃ 
১।আল্লাহ পাক তিনি একজন স্ত্রী দিয়েছেন, সেজন্য স্বামীকে শুকরিয়া করা উচিত। অনুরূপ স্ত্রীর ক্ষেত্রেও তা করা উচিত।
২।স্বামীদের উচিত সময় ও সুযোগ বুঝে স্ত্রীর সাথে মুহব্বত ও ভালোবাসা মিশ্রিত কথা বার্তা বলা।স্ত্রীর ভালো গুনাবলীর কথাগুলো উল্লেখ করা। স্ত্রীর জন্যও অনুরূপ করা।
৩।স্ত্রী যদি কোনো নেককাজ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে তাকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করার কোশেশ করা এবং উৎসাহ দেয়া। আর স্ত্রীরও উচিত সেক্ষেত্রে স্বামীকে সহযোগিতা করা, উৎসাহ দেয়া।
৪।এমন অনেক স্বামী রয়েছে- যারা বাইরে ভালো খাবার খেয়ে থাকে এবং বাসায় এসে সট স্ত্রীকে আজ এমন এমন খেয়েছি। মূলত,স্বামীদের উচিত স্ত্রীর জন্য নিজে যা খাবে তা আনার চেষ্টা করা।
৫। স্ত্রী ভালো কোনো কথা বা পরামর্শ দিলে, স্বামীদের উচিত- তা গুরুত্ব দেয়া। স্বামী এমন রয়েছে যারা স্ত্রীর কোনো কথা-বার্তা বা পরামর্শকে গুরুত্ব দেয় না এবং তারা এমনও বলে- মেয়ে মানুষ এত কি বুঝবা? এতে স্ত্রীর মন খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
৬। সুযোগ-সুবিধা বুঝে স্ত্রীর উচিত স্বামীকে নিজহাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো এবং মাঝে মাঝে পরস্পর পরস্পরকে হাদিয়া করা।
৭। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি কোনো কারণে মনমালিন্য দেখা দেয়, বা ফিতনা-ফাসাদ হয় সেক্ষেত্রে স্ত্রীর উচিত স্বামী রেগে গেলে স্ত্রীকে চুপ থাকা। আর স্ত্রী যদি অভিমান করে স্বামীর উচিত স্ত্রীর রাগ ভাঙ্গানো।
৮।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম স্বামী যে তার স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে। আমি আমার স্ত্রীদের সঙ্গে সবার চাইতে ভাল ব্যবহার করি।
৯।স্বামী বাইরে থেকে ফিরলে সম্ভব হলে দরজাটা নিজেই খুলে দেন, একটি হাসি উপহার দিয়ে দুহাত বাড়িয়ে দিন।

হিন্দু ধর্মেও নারীদের পর্দার বিধান

অনেকেই হয়তো শুনে অবাক হবেন যে, হিন্দু ধর্মেও নারীদের পর্দার কথা বলা হয়েছে।
যেমন- “যেহেতু ব্রহ্মা তোমাদের নারী করেছেন তাই দৃষ্টিকে অবনত রাখবে, উপরে নয়। নিজের পা সামলে রাখো। এমন পোশাক পড়ো যাতে কেউ তোমার দেহ দেখতে না পায়।”
(ঋকবেদ- ৮/৩৩/১৯)
আরো বলা হয়েছে, “মহিলা পুরুষের মতো পোশাক পড়বে না এবং পুরুষরাও স্ত্রী লোকদের মতো পোশাক পরবে না।”
(ঋকবেদঃ অনুচ্ছেদ-৮৫, পরিচ্ছেদ-৩০)
বেদে আরও বলা হয়েছে- “মহান ঈশ্বর তোমাদের নারী বানিয়েছেন। তোমাদের দৃষ্টি সংযত রাখবে। পর্দার আড়ালে থাকবে।”
(ঋকবেদঃ অনুচ্ছেদ-৩৩, পরিচ্ছেদ-১৯)
আরও কঠিন কথা বলা হয়েছে মহাভারতে- “ন চন্দ্রসূর্যৌ ন তরুং পুন্নো যা নিরীক্ষতে/ ভর্তৃবর্জং বরারোহা সা ভবেদ্ধর্মচারিণী।”
(মহাভারতঃ ১২/১৪৬/৮৮)
অর্থাৎ যে নারী স্বামী ব্যতীত কোন পুংলিঙ্গান্ত (নামের বস্তু), চন্দ্র, সূর্য, বৃক্ষও দর্শন করে না সেই ধর্মচারিণী।
উপরে উল্লেখিত বিষয়ে স্পষ্ট যে, হিন্দু ধর্মেও হিজাব তথা পর্দার গুরুত্ব অনেক!

সগীরা (ছোট) গুনাহ কাকে বলে?

🌀 সগীরা (ছোট) গুনাহ কাকে বলে?
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন: এ মাসআলায় (সগীরা বা ছোট গুনাহের পরিচয়ের ব্যাপারে ) ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত কথাটি সবচেয়ে সঠিক। এটি আবু উবাইদ ও ইমাম আহমদ প্রমুখ উল্লেখ করেছেন। আর তা হল:
أن الصغيرة ما دون الحدين: حد الدنيا وحد الآخرة
“সগীরা বা ছোট পাপ বলা হয় ঐ পাপকে যা দুনিয়ার দণ্ড ও আখিরাতে দণ্ড অবধারিত হয় এমন পাপ থেকে নিম্ন পর্যায়ের।"
[অর্থাৎ ছোট গুনাহ বলতে বুঝায়, যে সকল অপরাধের ক্ষেত্রে দুনিয়ায় আইনগত দণ্ড বিধি নেই (যেমন, হাত কাটা, পাথর মেরে মৃত্যু দণ্ড দেয়া, বেত্রাঘাত করা ইত্যাদি) অনুরূপভাবে আখিরাতেও নির্ধারিত কোনো দণ্ড বা শাস্তির কথা বলা হয় নি। যেমন: কবরের আযাব, জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ ইত্যাদি]
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রহ. বলেন:
الكبائر هي ما رتب عليه عقوبة خاصة بمعنى أنها ليست مقتصرة على مجرد النهي أو التحريم، بل لا بد من عقوبة خاصة مثل أن يقال من فعل هذا فليس بمؤمن، أو فليس منا، أو ما أشبه ذلك، هذه هي الكبائر، والصغائر هي المحرمات التي ليس عليها عقوبة. انتهى
.
"কবীরা বা বড় গুনাহ বলা ঐ সকল গুনাহকে যেগুলোর ব্যাপারে বিশেষ কোনো শাস্তি আরোপের বিধান রয়েছে। অর্থাৎ যেগুলো শুধু নিষেধ বা হারামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তাতে অবশ্যই বিশেষ শাস্তি রয়েছে। যেমন: যে এ কাজ করবে সে ইমানদার নয় অথবা সে আমাদের দলভুক্ত নয় ইত্যাদি। এগুলো হল কাবীরা গুনাহ। আর সগীরা বা ছোট গুনাহ হল ঐ সকল হারাম কাজ যেগুলোর জন্য শাস্তি নাই।"
সুতরাং আলেমদের বক্তব্যের আলোকে আমরা বলতে পারি, যে সকল গুনাহ কবীরা পর্যায়ের নয় সেগুলোই সগীরা গুনাহ। তাহলে সগীরা গুনাহ সম্পর্কে জানতে হলে আগে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানতে হবে।
কোনো কোনো আলেম বলেন: "যে সব গুনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না সেগুলো কবীরা গুনাহ আর যে সব গুনাহ তওবা ছাড়া বিভিন্ন প্রকার নেক আমলের দ্বারা মাফ হয় সেগুলো সগীরা গুনাহ।"
🌀 সগীরা বা ছোট গুনাহের ভয়াবহতা:
➤ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّمَا مَثَلُ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَقَوْمٍ نَزَلُوا فِي بَطْنِ وَادٍ، فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ، وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى أَنْضَجُوا خُبْزَتَهُمْ، وَإِنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يُؤْخَذْ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكْهُ».
‘সাবধান! গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার ব্যাপারে সর্তক হও। কেননা গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার উদাহরণ হল:
একদল লোক কোন এক পাহাড়ের উপত্যকায় যাত্রা বিরতি করলো। এরপর সেখানে কেউ একটা কাঠি নিয়ে এলো, আরেকজন আরেকটা কাঠি নিয়ে এলো।তারপর তারা (এই ছোট ছোট কাঠিগুলো জমা করে সেগুলো দ্বারা) রুটি পাকালো।
ঠিক তদ্রূপ যে সব গুনাহকে তুচ্ছ ভাবা হয় সেগুলোই এতে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।“ [মুসনাদ আহমাদ ৫/৩৩১। সহীহুল জামে‘, নাসিরুদ্দিন আলবানী, আল মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় প্রকাশ, হাদিস নং: ২৬৮৬।]
➤ বিজ্ঞ আলিমগণ বলেছেন: ছোট গুনাহকে যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে বারবার করে বা তুচ্ছ মনে করে করে তখন তা আর ছোট থাকে না বরং তা বড় গুনাহে পরিণত হয়।
যেমন: ইমাম নওবী রহ. সহীহ মুসলিম এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন:
رُوِيَ عَنْ عُمَر وَابْن عَبَّاس وَغَيْرهمَا رَضِيَ اللَّه عَنْهُمْ : لا كَبِيرَة مَعَ اِسْتِغْفَارٍ ، وَلا صَغِيرَة مَعَ إِصْرَار
مَعْنَاهُ : أَنَّ الْكَبِيرَة تُمْحَى بِالاسْتِغْفَارِ , وَالصَّغِيرَة تَصِير كَبِيرَة بِالإِصْرَارِ اهـ
উমর রা. এবং ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত আছে। তারা বলেছেন: ইস্তিগফার তথা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা হলে কোনো কবীরা (বড়) গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আর কোনো গুনাহ বারবার করা হলে তা আর সগীরা (ছোট) থাকে না।"
এ কথার অর্থ হল: বড় গুনাহ ইস্তিগফার (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) এর মাধ্যমে মুছে যায় আর ছোট গুনাহ বারবার করার মাধ্যমে বড় গুনাহে পরিণত হয়।"
➤ ছোট গুনাহগুলোকে তুচ্ছ মনে না করাও আল্লাহর নির্দেশনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নামান্তর। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّـهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ“আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্যে উত্তম।” (সূরা হজ্জ: ৩০)
➤ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বলেন:
إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ ، فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ
“তোমারা ছোট গুনাহ থেকেও দূরে থাকবে। কেননা, এগুলো জমা হয়ে মানুষকে ধ্বংস করে ছাড়ে।”
➤ কবি বলেন: (আরবি কবিতা)
خل الذنوب صغيــــــرها
وكبيـرها فهو التـــــقى
واصنع كمـــــــاش فوق أرض
الشــــوك يحذر ما يرى
لا تحــــقرن صغيـــــرة
إن الجبـــال من الحــصى
সরল অর্থ:
ছোট -বড় সকল পাপকর্ম পরিত্যাগ কর।
এরই নাম ‘আল্লাহ ভীতি’।
আর পথ চল ঠিক সেভাবে যেভাবে একজন মানুষ
কণ্টকময় রাস্তা দিয়ে সর্তকতার সাথে পথ চলে।
ছোট বলে কোন পাপকেই তুচ্ছ মনে করো
পরিশেষে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই জনৈক মনিষীর চমৎকার একটি বাণী:
لا تَنْظُرْ إِلَى صِغَرِ الْخَطِيئَةِ ، وَلَكِنِ انْظُرْ إِلَى عَظَمَةِ مَنْ تَعْصِي
"পাপের ক্ষুদ্রতার দিকে না তাকিয়ে যার অবাধ্যতা করছ তার বিশালত্বের দিকে তাকাও।"

খাবার খাওয়ার ও পানি পান করার আদবসমূহ

খাবার খাওয়ার ও পানি পান করার ২৯ টি আদব & সুন্নাত ঃ

খাবার খাওয়ার আদব সমূহঃ
(১)উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।আবু দাউদ ৩৭৬১
(২)দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার খাওয়া।বুখারী ৫৩৮৬
(৩) খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলাঃ
#হুযাইফা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, শয়তান ঐ খাবারকে নিজের জন্য হালাল মনে করে যার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয় নি।[ মুসলিম : ৩৭৬১]
«بِسْمِ اللَّهِ»(বিসমিল্লাহ) “আল্লাহর নামে।”
(৪) #খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে নিচের দোয়া পড়া,
«بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ»
(বিস্‌মিল্লাহি ফী আওওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী)।
“এর শুরু ও শেষ আল্লাহ্‌র নামে।”[ আবূ দাঊদ ৩/৩৪৭, নং ৩৭৬৭; তিরমিযী, ৪/২৮৮, নং ১৮৫৮।
(৫)#যাকে আল্লাহ কোনো খাবার খাওয়ায় সে যেন বলে,
« اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْراً مِنْهُ».
(আল্লা-হুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়া আত‘ইমনা খাইরাম-মিনহু)।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দিন এবং এর চেয়েও উত্তম খাদ্য আহার করান।”
(৬) #আল্লাহ্‌ কাউকে দুধ পান করালে সে যেন বলে:
«اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ».
(আল্লা-হুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়াযিদনা মিনহু)।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দিন এবং আমাদেরকে তা থেকে আরও বেশি দিন।”তিরমিযী ৫/৫০৬, নং ৩৪৫৫। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৫৮।
(৭) কেউ কিছু পান করালে বা খাওয়ালে তার জন্য দুআ
اللَّهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَني وَاسْقِ مَنْ سَقَانيউচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা আত্বইম মান আত্বআমানী অসকি মান সাক্বা-নী।।
অর্থ - হে আল্লাহ! তাকে তুমি খাওয়াও, যে আমাকে খাওয়াল এবং তাকে পান। করাও, যে আমাকে পান করাল। (মুঃ ৩ ১২৬)
(৮) ডান হাত দিয়ে খাওয়া। (বুখারী ৫৩৭৬)
#আমর বিন আবু সালামা থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন:হে বৎস! বিসমিল্লাহ বল এবং ডান হাত দিয়ে খাও। আর খাবার পাত্রের যে অংশ তোমার সাথে লাগানো সে অংশ থেকে খাও।
[বোখারি : ৪৯৫৮]
(৯) খাদ্য এক ধরনের হলে নিজের সম্মুখ হতে খাওয়া। (বুখারী ৫৩৭৬)
#বান্দা খাবার পাত্রের যেদিক তার সাথে লাগানো সেদিক থেকে খাবে। উপরে বর্ণিত উমর বিন আবু সালামা রা.-এর হাদীসের কারণে। আর খাবার যদি বিভিন্ন ধরনের হয় তা হলে অন্যদিক -যা তার সাথে লাগোয়া নয়- থেকে খাওয়াতে কোন দোষ নেই।
(১০) খানার মজলিসে বয়সের দিক দিয়ে যিনি বড় এবং বয়স্ক, তাঁর দ্বারা খানা শুরু করানো। (মুসলিম ২০১৭)
#যখন অনেক লোকের সাথে বসে পান করবে আর পান করার পর কাউকে দিতে চাইবে তাহলে ডান পাশ্বে বসা ব্যক্তিকে দিবে, সে যদি বয়সে ছোট হয় আর বাম পার্শ্বস্থজন তার থেকে বড়, তবুও। হ্যাঁ; যদি ছোট থেকে অনুমতি নিয়ে বড়কে দেওয়া হয় তাহলে কোন দোষ নেই। আর যদি অনুমতি না দেয় তাহলে তাকেই দিবে কারণ সেই আগে পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে।
এর প্রমাণ হল সাহাবী সাহল বিন সা'দ রা.-এর হাদীস :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু পানীয় আনা হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। রাসূলের ডান দিকে একটি ছোট ছেলে বসা ছিল এবং বামদিকে বয়স্ক লোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে বললেন―তুমি কি আমাকে তোমার আগে তাদেরকে দেয়ার অনুমতি দিবে ? তখন ছেলেটি বলল, না, কখনও নয়। আল্লাহ শপথ! আমি আমার অংশের উপর আপনি ব্যতীত অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না। বর্ণনাকারী বলেন―রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পানপাত্র) ছেলেটির হাতে দিয়ে দিলেন।
[ বোখারি : ২৪১৫]
.(১১) খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে উঠিয়ে (প্রয়োজনে পরিষ্কার করে) খাওয়া। (মুসলিম)
(১২) হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া। (বুখারী ৫৩৯৮)
(১৩) খাদ্যের ত্রুটি বের না করা। (বুখারী ৫৪০৯)
#খাবারের প্রশংসা করা মুস্তাহাব, কেননা এর মাধ্যমে খাবার আয়োজন ও প্রস্তুত কারীর উপর একটা ভাল প্রভাব পড়বে। সাথে সাথে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো এমন করতেন―জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পরিবারের নিকট তরকারী চাইলেন। তারা বললেন, আমাদের কাছে সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি সিরকা আনতে বললেন এবং তার দ্বারা খেতে লাগলেন। অতঃপর বললেন, সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী; সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী।
(১৪) জুতা পরিহিত থাকলে জুতা খুলে খানা খাওয়া। (মুস্তাদরাকে হাকেম ৭১২৯)
(১৫) #খানার_সময়_তিনভাবে_বসা_যায়ঃ
ক. উভয় হাঁটু উঠিয়ে এবং পদ যুগলে ভর করে। (মুসলিম-২০৪৪)
খ. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে। (শরহুস্ সুন্নাহ-৩৫৭৭)
গ. উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাত নামাযে বসার ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে আহার করা। (আবু দাউদ ৩৭৭৩)
(১৬) খাবার গ্রহণ শেষে খাবার পাত্রসমূহ আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে পরিস্কার করে খাওয়াঃ
#জাবের রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুল এবং বর্তন চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন তোমরা জানো না কোনটায় বরকত রয়েছে।
[মুসলিম : ৩৭৯২]
#প্লেট পরিস্কার করে খাওয়া মানে মুখ লাগিয়ে চেটে খাওয়া নয় বরং আঙ্গুল দিয়ে পরিস্কার করে খাবে
(১৭) আঙুল ধোয়ার পূর্বে চেটে খাওয়াঃ
#কা'ব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি তিন আঙুল দিয়ে খাচ্ছেন এবং খাওয়া শেষে আঙুল চেটে খাচ্ছেন।
[মুসলিম : ৩৭৯০]
আবু হুরাইরা রা. থেকে মারফু হাদীসে বর্ণিত, যখন তোমরা কেউ খাবার খাবে তার উচিত আঙুল চেটে খাওয়া কেননা সে জানে না কোন আঙুলে বরকত রয়েছে।
[ মুসলিম : ৩৭৯৩]
(১৮) খাবার খাওয়া শেষ করার পর দোয়াঃ
(ক)
«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقَنِيهِ، مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ».
(আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাউলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন)।
“সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি আমাকে এ আহার করালেন এবং এ রিযিক দিলেন যাতে ছিল না আমার পক্ষ থেকে কোনো উপায়, ছিল না কোনো শক্তি-সামর্থ্য। ”হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সকল সুনান গ্রন্থকারগণ সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, নং ৪০২৫; তিরমিযী, নং ৩৪৫৮; ইবন মাজাহ, নং ৩২৮৫। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৫৯।
(খ) দস্তরখানা ও অবশিষ্ট খাবার উঠানোর সময় এই দু‘আ পড়াঃ
«الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيهِ، غَيْرَ [مَكْفِيٍّ وَلاَ ] مُوَدَّعٍ، وَلاَ مُسْتَغْنَىً عَنْهُ رَبَّنَا».
(আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান তায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি, গইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুয়াদ্দা‘ইন, ওয়ালা মুসতাগনান ‘আনহু রব্বানা)।
“আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা; এমন প্রশংসা যা অঢেল, পবিত্র ও যাতে রয়েছে বরকত; [যা যথেষ্ট করা হয় নি], যা বিদায় দিতে পারব না, আর যা থেকে বিমুখ হতে পারব না, হে আমাদের রব্ব!”
বুখারী ৬/২১৪, হাদীস নং ৫৪৫৮; তিরমিযী, আর শব্দটি তাঁরই, ৫/৫০৭, নং ৩৪৫৬।
(১৯) আহারের আয়োজনকারীর জন্য মেহমানেরদোয়াঃ
«اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا رَزَقْتَهُم، وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ».
(আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম ফীমা রাযাক্তাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম)।
“হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছেন তাতে তাদের জন্য বরকত দিন এবং তাদের গুনাহ মাফ করুন, আর তাদের প্রতি দয়া করুন।”মুসলিম ৩/১৬১৫, নং ২০৪২।
(২০) খাবার খাওয়া শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা। (ইবনে মাজাহ-৩২৯৫)
(২১) খাবার খেয়ে উভয় হাত ধোয়া। (তিরমিযী ১৪৬৪)
(২২) কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা।(বুখারী-৫৪৫৫)
(২৩) খাবার খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। এজন্য খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পরে ভাল কথা আলোচনা করা। কিন্তু যে ধরনের কথা বা সংবাদে দুশ্চিন্তা বা ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে, তা খানার সময় বলা অনুচিত। (বুখারী-৫৩৭৬)
==========================
(২৪) পানি পান করার ৬টি সুন্নাতি পদ্ধতিঃ
১- ডান হাতে পান করা। (মুসলিম-২০২০)
২- বসে পান করা। (মুসলিম-২০২৫)
৩- পান করার পূর্বে বিসমিল্লাহ্ বলা। (সহীহুত তিরমিযী, ২/১৬৭)
৪- পান করার পূর্বে পানি দেখে পানকরা। (মুসলিম-১৬০৯)
৫- ৩ নিঃশ্বাসে পান করা অর্থাৎ এক ঢোকে পান না করে ৩ বারে পান করা উত্তম। (মুসলিম-২০২৮)
৬- পান করা শেষে কমপক্ষে আলহামদুলিল্লাহ্ বলা। (মুসলিম-২৭৩৪)
তিন শ্বাসে পান করা। একটু পান করার পর পাত্র মুখ থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে শ্বাস নিবে। অতঃপর দ্বিতীয়বার এরপর একই ভাবে তৃতীয়বার।
যেমন আনাস রা.-এর হাদীসে এসেছ―
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার মাঝে তিনবার শ্বাস নিতেন। মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলতেন: এইভাবে পান করা অধিক পিপাসা নিবারণকারী অধিক নিরাপদ অধিক তৃপ্তিদায়ক।
পানাহারের শেষে আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাঁর প্রশংসা করবে। সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে অন্তত আলহামদুলিল্লাহ বলা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি খাবারের পর আল্লাহর প্রশংসা করে।অনুরূপ পান করার পর আল্লাহর প্রশংসা করে। আল্লাহ সে বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন।


ছেঁড়া-ফাটা ও টেপ লাগানো টাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে কী করণীয়?


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: বাসে, বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেক সময় হেল্পার ও বিক্রেতা টাকা চেঞ্জ করার সময় ছেঁড়া ও টেপ দেওয়া টাকা দিয়ে থাকে।
আমরাও অনেক সময় খেয়াল না করে তা নিয়ে নেই। পরবর্তীতে আমাদের উদ্দেশ্য থাকে কোনভাবে টাকা টা চালিয়ে দেওয়ার।

এটি কতটুকু শরিয়ত সম্মত এবং এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

উত্তর
টাকাটা যদি এমন ছেঁড়া-ফাটা, আঠা বা কস্টেপ দিয়ে জোড় লাগানো হয় যে, কোনো সচেতন ব্যক্তির দৃষ্টিগোচর হলে সে নিতে চাইবে না বা আসলেই তা বাজারে অচল তাহলে এমন টাকা অন্যান্য ভালো টাকার মধ্যে ভরে কৌশল করে কোনোমতে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা প্রতারণার শামিল। এমনটি করা জায়েজ নেই। বরং উক্ত টাকাটা অন্যান্য টাকার উপরে রাখতে হবে যেন, গ্রহীতা তা দেখতে পারে। ইচ্ছে হলে তা গ্রহণ করবে অন্যথায় পরিত্যাগ করবে।

এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ، فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا، فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلًا، فَقَالَ: «مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ» ? قَالَ: أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَارَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: «أَفَلَا جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ; كَيْ يَرَاهُ النَّاسُ? مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي» رَوَاهُ مُسْلِمٌ
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক খাদ্য স্তূপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি খাদ্য স্তূপে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে দেখলেন তার হাতর আঙ্গুল ভিজে গেছে।
তিনি বললেন: হে খাদ্যের মালিক! ব্যাপার কি?
উত্তরে খাদ্যের মালিক বলল: হে আল্লাহর রাসূল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তাহলে ভেজা অংশটা শস্যের উপরে রাখলে না কেন? যাতে ক্রেতারা তা দেখে ক্রয় করতে পারে। নিশ্চয়ই যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।” (সহিহ মুসলিম; মিশকাত হা/২৮৬০)

অবশ্য যদি টাকার নোট সামান্য ছেঁড়া-ফাটা বা টেপ লাগানো হয় যা সাধারণত: মানুষ গ্রহণ করে বা বাজারে প্রচলিত তাহলে তাতে সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। তবুও তা অন্যান্য টাকার উপরে রাখা বা গ্রহীতাকে জানিয়ে দেয়া উত্তম।

➤  কোনো টাকা বেশি পরিমাণে ছেঁড়া-ফাটা হলে কৌশলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা না করে একটু কষ্ট করে দেশের যে কোনো ব্যাংকের শাখায় গিয়ে তা পরিবর্তন করে নিন। কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী (শর্ত সাপেক্ষে) দেশের যে কোনো ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে ছেঁড়া–ফাটা, খণ্ডিত, আগুনে পোড়া ও ময়লা টাকার নোট বদল করা যায়।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
▶উত্তর প্রদানে:আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (আল্লাহ লেখককে উত্তম বিনিময় দান করুক..)

@Islamic Lifes Diary (সঠিক ইসলামকে জানুন..)
▶www.facebook.com/islamiclifesdiary/

➡লেখাটি ভালো লাগলে এবং উপকৃত হলে শেয়ার করে পৌঁছিয়ে দিন অন্যের কাছে  এবং  পেজে লাইক দিয়ে পাশেই থাকুন ইংশাআল্লাহ।
কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

জিহাদ বা আত্মরক্ষামূলক জিহাদে কি শাসকের অনুমতি শর্ত?

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য কি নেতার অনুমতি শর্ত ?
————————————————————
যখন শত্রুরা মুসলিমদের উপর হামলা চালায়, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলিমের উপর জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায় । আর এহেন পরিস্থিতিতে (শত্রুর মোকাবেলায় জিহাদে শরিক হতে) ইমাম বা নেতার অনুমতি শর্ত বা জরুরী নয় ।

পক্ষান্তরে ইসলামের বিজয় , কুফফারদের ইসলামের দিকে আহবান এবং আল্লাহর হুকুম অবনত চিত্তে মেনে নিতে অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইমাম বা নেতার অনুমতি জরুরী ।

#শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
ইসলাম : জিজ্ঞাসা ও জবাব ( নং- ৬৯৭৪৬)
অনুবাদ : সালাহউদ্দীন আহমাদ মাক্কী


দিফায়ী বা আত্মরক্ষামূলক জিহাদের জন্য 'শাসক' শর্ত কী?
.
শাইখ ইবন উছাইমীন বলেছেনঃ

فلا يجوز لأحد أن يغزو دون إذن الإمام إلا على سبيل الدفاع

ইমামের(শাসকের) অনুমতি ছাড়া কারও জন্য জিহাদ করা জায়েয নয়, তবে দিফায়ী বা আত্মরক্ষামূলক জিহাদ ব্যাতীত। [১]
.
শাইখ মুনাজ্জিদ বলেছেনঃ

যখন মুসলিমদের উপর আক্রমণ হয়, তখন জিহাদ ফারদ্বে আঈন হয়, আর এক্ষেত্রে শাসকের অনুমতি জরুরী নয়। [২]
.
দিফায়ী বা আত্মরক্ষামূলক জিহাদের ক্ষেত্রেও শাসক শর্ত, এই কথা যারা বলেন, আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, যদি 'কাফির' শাসক বা কুফরে লিপ্ত 'শাসক' নিজেই আপনার উপর আক্রমণ করে বসে, তখন কোন শাসকের অনুমতির অপেক্ষায় থাকবেন?!
.
.
১. শারহুল মুমতী, ২/৮৮
২. https://islamqa.info/ar/answers/69746



⏩  শাসক ছাড়া জিহাদের বিধানঃ https://alihasanosama.com/sasok-chara-jihad/?fbclid=IwAR387vYzNWfyzItt7bGagnoqoJgAuHTFnpkpmNlF_JghGjreqxsFV5r6gj4



⏪⏩এই বিষয়ে আরেকটি আর্টিকেলঃঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=895496247515992&id=100011668752215
এই আর্টিকেলের পিডিএফ লিংকঃ
https://drive.google.com/file/d/104v78QA-kdPm2xovE81FRe9qZ5wKz-gJ/view?usp=drivesdk





Tuesday, August 27, 2019

বোরকা মডেলিং কতটুকু শরিয়ত সম্মত?


▬▬▬●◈●▬▬▬
প্রশ্ন: বর্তমানে ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইটে দেখা যাচ্ছে, কিছু যুবতী নারী হরেক রকম ডিজাইনের দৃষ্টি নন্দন বোরকা পরিধান করে আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে মডেলিং করে ছবি পোস্ট করছে। যদিও তাতে তার কেবল দুটি চোখ ছাড়া সব কিছু পরিপূর্ণভাবে ঢাকা থাকে। উদ্দেশ্য হল, বোরকা বিক্রয়। এ কাজটা কতটুকু শরিয়ত সম্মত?
উত্তর:
মহিলারা যত বেশি নিজেদেরকে পর পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে রাখবে ততই উত্তম-চাই বাস্তবে হোক অথবা ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে হোক। বোরকা সহ হোক অথবা বোরকা ছাড়া হোক।
হাদিসে তাওহীদের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাতের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়ার চেয়ে নিজ বাড়িকে অধিক উত্তম বলা হয়েছে। নিজ বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে গোপনীয় স্থানে নামায পড়াকে আরও অধিক উত্তম বলা হয়েছে। মহিলাদের জন্য জুমা ও জামাতে সালাত আবশ্যক করা হয় নি। যেন তারা তাদেরকে পরপুরুষদের দৃষ্টি থেকে সংরক্ষণ করতে পারে এবং ফেতনা-ফ্যাসাদ থেকে রক্ষা পায়। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে প্রথমত: বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু জাহেলি জামানার মত পর্দা হীনভাবে নয়। আল্লাহ বলেন:
قَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ ۖ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
"তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা আহযাব: ৩৩)
সব মিলিয়ে কথা হল, নারীরা যথাসম্ভব পরপুরুষ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে নিজেদের ইজ্জত-সম্ভ্রম সংরক্ষণ করবে এবং একান্ত জরুরি না হলে পরপুরুষের সামনে যাবে না-বাস্তব জগতে হোক বা ভার্চুয়াল জগতে হোক। এটা তাদের পবিত্রতা ও নিরাপত্তার জন্য জন্য অধিক উপযোগী এবং ইসলামের বিধান।
➤ সুতরাং এখান থেকে বলব, ফেসবুক ও অনলাইনের এ ফেতনাময় জগতে বোরকা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বোরকা পরিধান করে আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে মহিলাদের মডেলিং করা ছবি পোস্ট করা উচিৎ নয়। আর যদি কোনও সুন্দর গঠনধারী যুবতী মেয়ের মাধ্যমে বোরকা ব্যবসার জন্য মডেলিং করা হয় (সাধারণ এমটাই হয়) তাহলে তা তার নিজের জন্য যেমন ফেতনার কারণ অন্যের জন্যও ফেতনার কারণ-তাতে কোনও সন্দেহ নাই।
তবে বোরকা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যদি পোশাক ডিসপ্লে করার জন্য বর্তমানে
যেকল আধুনিক উপায়-উপকরণ রয়েছে (যেমন মস্তকবিহীন ডামি বা ডল) সেগুলো ব্যবহার করা হয় তাহলে তাতে কোনো আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
❖ এছাড়াও বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক বহু ফ্যাশন শপের পক্ষ থেকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ফেসবুক ও ইউটিউটবে সুন্দরী তরুণীদের মাধ্যমে বোরকা পরিধানের লাইভ কলা-কৌশল দেখানো হচ্ছে। চেহারা খোলা মডেলদের মাধ্যমে বেরাকা প্রদর্শনী করা হচ্ছে-যেগুলো মহিলাদের পাশাপাশি দেখছে বিভিন্ন শ্রেণীর পুরুষ। এ কাজগুলো যে শরিয়া পরিপন্থী এবং নাজায়েয তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
❖ আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, বোরকা বা হিজবের উদ্দেশ্য হল, পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে নিজের সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখা। কিন্তু বর্তমানে অনেক বোরকা/হিজাব এতটা কালারফুল, ফ্যাশনেবল, কারুকার্য খঁচিত ও টাইট-ফ্টি যে, সেটা নারীকে আরও আকর্ষণীয় ও মোহনীয় করে তুলে ধরে। কোনো মুসলিম নারীর জন্য এ ধরণের বোরকা পরা জায়েয নয়। কারণ এ দ্বারা বোরকার মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হয়। জনৈক মনিষী যর্থাথই বলেছেন: "এ ধরণের বোরকাকে ঢাকার জন্য প্রয়োজন আরেকটি বোরকা।"
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব ধরণের ফেতনা-ফ্যাসাদ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬●◈●▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব
কল্কি ও মোহাম্মাদ সা পর্বতে ধ্যান করেন। কিন্ত হিন্দুদের মিথ্যাচার কল্কি হিমালয়ে ধ্যান করিবেন'।
হিন্দু সহ বিভিন্ন ধর্মে মোহাম্মাদ সা সহ অন্যান্য নবি স্বিকৃতি- ধারাবাহিক,২২ তম পোস্ট।
**** Md Rashidul ****22/০7/18
★ চ্যালেন্জিং জবাব-' হিমালয়' সম্পর্কিত ডাহা মিথ্যাচর।
ওপেন চ্যালেঞ্জ করিলাম যদি কেহ সংস্কৃত সহ
দেখাতে পারেন তবে মেনে নেব। বরং আমি
সংস্কৃত সহ দেখাচ্ছি, পর্বতে ধ্যান করিবেন কিন্ত
কোন পর্বতের নাম নাই এবং পর্বত সম্পর্কিত
উভয়ে আশ্চর্য মিল।
★ মিথ্যাচারের মূল হোতা' অগ্নিবীর নামক ওয়েব
সাইট, যার কল্কি ও মোহাম্মাদ সা সম্পর্কিত ১৪ টি
পর্যবেক্ষণের সাড়ে ১৩ টিই ভুয়া, যা হিন্দু
ধর্মগ্রন্থ হতে মিলে না। আর হিন্দু বন্ধুরা ও
অগ্নিবীর হতে কপি করে প্রচার করে।
★ডাহা মিথ্যাচার। কল্কিপুরানের কোথাও এই হিমালয়ের
কথা
নেই। (কল্কিপুরান ৩/১) এ বলা আছে, কল্কি দীক্ষা
নিবেন মহেন্দ্র পর্বতে। এই মহেন্দ্র পর্বত
একটিই কাল্পনিক পর্বত যার অস্তিত্ত পাওয়া যায়
মহাভারতে।এবার দেখুন কি অসাধারন মিল।মহেন্দ্র
শব্দের অর্থ, মহান যে ইন্দ্র, অর্থাৎ যাহা মহা
আলোকিত। ইন্দ্র আলোর প্রতীক কারন ইন্দ্রই
হচ্ছে সুর্য (রিগবেদ ১/১২১/২) তাই মহেন্দ্র
মানে মহা আলোকিত স্থান।অপরদিকে নবিজি মুহাম্মদ
সঃ দীক্ষা নিয়েছিলেন হেরা গুহায়, যাকে বলা হয়
“জাবাল এ নূর” অর্থাৎ আলোকিত গুহা।
★ আসুন সত্য এবার যযুর্বেদ,১৬ অধ্যায়,(১-৫) নং
মন্ত্র হতে দেখি।
" নমস্তে রুদ্র মন্যব উতো ত ইষবে নম:।
বাহুভ্যামুত তে নম:।।
যাতে রুদ্র শিবা তনুরঘোরাহ পাপকাশিনী।
তয়া নস্তুন্বয়া শন্তময়া গিরিশন্তাভি চাকশীহি-
তিনি গিরীশ তথা পর্বতে ধ্যান করিবেন। কিন্ত হিমালয়
নাম কোথাও নেই।
★ এখানে ২ টি বিষয় লক্ষনীয় (১) যিনি আসিবেন -
দু: খ নাশক, জ্ঞানপদ ও মংগলময় কিন্ত ধর্মশত্রুদের
প্রতি কঠোর হবেন,(২) তার ভৃত্য তথা শিষ্য
থাকিবে।
★ এর দ্বারা প্রমানিত হয় যে, তিনি উর্ধ্বলোকের
দেবতাগনের মধ্যে কেহ নন, বরং পৃথিবীর
মানবদের মধ্য হতে হবেন। কারন দেবতাদের
পূজক হয়, ভৃত্য হয় না। ভৃত্য মালিকের সাহচর্য্যে
থাকে, তার সেবা করে।দেবতাদের ক্ষেত্রে
ইহা সম্ভব নয়।
★ উক্ত ঋষি পর্বতে তপস্যা করিবেন, আমরা জানি
মোহাম্মাদ সা হেরা পর্বতে তপস্যা করেন।
* উভয়ের জীবনিতে সকল মিল। আর মিলগুলো
কখনো তারা দেখায় না।
নিচে স্কীনশট সহ দলিল দিলাম-
------------------------------------------------------------
" ইসলামের সাদৃশ্য প্রায় সব ধর্মগ্রন্থে দেখা যায় কিন্তু অন্য ধর্মের সাদৃশ্য কুরআনে নেই।
" ঐ সকল ধর্মাবলম্বিরা তাদের ধর্মগ্রন্থে স্বিকৃতগুলো কেন মানেনা?
নিচে স্কিনশটে পোস্ট সত্যতা দেখুন-
আমার পূর্ববর্তী পোস্ট সহ সকল পোস্ট সংগ্রহ,কপি করুন। না পেলে ইনবক্সে আসুন বা প্রফাইলে দেখুন)।
-------------------------------------------------------------
★ ১ম পোস্ট
কল্কি আসবেন না,এসে গেছেন,
তিনি হলেন বিশ্বনবী
মোহাম্মাদ সা:? এ সত্য সর্বপ্রথম ফাস করেছেন
খ্যাতিমান হিন্দু পন্ডিতবর্গই। যাদের অধিকাংশ বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সংস্কৃত পন্ডিতবর্গ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=469069723946299&id=100025298252988
★২য় পোস্ট
----------------------------------------------------------
আজকের বিষয়:-পুরানে কি মোহাম্মাদ সা এর নাম ও স্বিকৃতি আছে?
https://m.facebook.com/groups/522603105150840?view=permalink&id=523107945100356
★৩য় পোস্ট
----------------------------------------------------------
★বেদ সহ হিন্দু ধর্মগ্রন্থে নাম মোহাম্মাদ, ও অন্যান নবি রাসূল স্বিকৃতি
https://m.facebook.com/groups/522603105150840?view=permalink&id=523114518433032
---------------------------------------------------------
★৪র্থ পোসট
কল্কি ও মোহাম্মাদ সা এর বার বধু ও আশ্চর্য মিল এবং এ নিয়ে অপপ্রচার ও ভুল ধারনার জবাব স্কিনশট সহ
https://m.facebook.com/groups/522603105150840?view=permalink&id=523123841765433
----------------------------------------------------------
৫ম পোস্ট
কল্কি ও মোহাম্মাদ সা এর জন্মতারিখ ১০০% মিল ও এনিয়ে ওয়েব অগ্নবীর ও হিন্দুদের
তথ্যগোপনের স্কিনশট সহ জবাব
https://m.facebook.com/groups/522603105150840?view=permalink&id=523129311764886
------------------------------------------------------------
★৬ষ্ঠ পোস্ট
আজকের বিষয়:- হিন্দু ধর্মগ্রন্থে মোহাম্মাদ সা
এর কি পরিচয়ে স্বিকৃতি? ও ভারতীয় রাজা ভোজ
মোহাম্মাদ সা কে সাদরে বরণ, ইসলামে প্রচারে
সহযোগীতা এবং হিন্দুদের প্রভুর মোহাম্মাদ সা এর দাসত্ব স্বিকার।
https://m.facebook.com/groups/522603105150840?view=permalink&id=523133715097779
-----------------------------------------------------------
★৭ম পোসট
বেদে কল্কি ও মোহাম্মাদ সা সম্পর্কিত মক্কা বিজয় সম্পর্কে ঐতিহাসিক সত্য
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/524682961609521/
★৮ম পোস্ট
-----------------------------------------------------------
হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মে নবি নূহ স্বিকৃতি
https://m.facebook.com/groups/522603105150840?view=permalink&id=525185674892583
★৯ম পোসট
--------------------------------------------------------------
: কুরআনে স্বিকৃত নবী ঈসা( যীশু
খ্রীস্ট),কুমারী মাতা মরিয়ম স্বিকৃতি,রাজা ভোজের
অভিবাদন নবী ঈসা কে ও মোহাম্মাদ সা এর আগমন
ভবিষ্যত বানি দেয় হিন্দু ধর্মগ্রন্থে।।
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/525628191514998/
------------------------------------------------------------
★ ১০ম পর্বের জন্য।
: কুরআনে স্বিকৃত আদি মানব, আদম ও
তার স্ত্রী হাওয়া স্বিকৃতি দেয় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ।
★https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/525543234856827/
---------------------------------------------------------------
★১১ তম পোস্ট
হিন্দু ধর্মে নবি মূসা আ: স্বিকৃতি-
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/527336354677515/
---------------------------------------------------------------
★১২ তম পোস্ট
হিন্দু ধর্মে নবি মোহাম্মাদ সা স্বিকৃতির সাথে - মরুবাসি, লিঙ্গচ্ছেদ( খাৎনা), আজান,সর্বভুক,মেরাজ সহ ---- স্বিকৃতি
https://m.facebook.com/groups/522603105150840?view=permalink&id=528590757885408
-------------------------------------------------------------
★১৩ তম পর্ব-
বন্ধুদের আজ দেখাব,সামবেদে মোহাম্মাদ সা
স্বিকৃতি এবং আরেক নাম আহমদ ও এ নিয়ে
হিন্দুদের ভুল ধারনা, অপব্যাখ্যার জবাব।
" আশ্চর্য মিল- মায়ের দুধ পান করেন নাই"
https://m.facebook.com/groups/522603105150840?view=permalink&id=529872587757225
---------------------------------------------------------------
১৪ তম পোসট
যযুর্বেদে মোহাম্মাদ সা ও
যুদ্ধ ঘটনা, সৈন্য, বদর,ওহুদ যুদ্ধ সম্পর্কিত মিল।
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/529872587757225/
---------------------------------------------------------
১৫ তম পোস্ট
কল্কি ও মোহাম্মাদ সা এর মেরাজ( ঊর্ধ্বগমন) সত্যতা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদে ও আশ্চর্য মিল।
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/530508837693600/
---------------------------------------------------------
★১৭ তম পোসট
কল্কি ও মোহাম্মাদ সা উভয়ের শরীরে অপূর্ব ঘ্রাণ। যা সম্ভবত পৃথিবির তৃতীয় কাউকে পরিলক্ষিত হয় না।
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/531686914242459/
-----------------------------------------------------------
★১৮ তম পোস্ট
অথর্ববেদে মোহাম্মাদ সা স্বিকৃতি-
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/532754240802393/
-------------------------------------------------------------
★১৯ তম পোস্ট-
হিন্দু ধর্মে স্পষ্ট - মূর্তিপুজা রহিত করতে আসবেন কল্কিঅবতার।
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/533437914067359/
--------------------------------------------------------------
★২০ তম পোস্ট-
কল্কি ও মোহাম্মাদ সা এর নাম, আরেক নাম, নামের অর্থ,পিতা- মাতা, জন্মতারিখ, তিথি, জন্মস্থান, সংগি সাথি সহ মিল।
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/534682670609550/
------------------------------------------------------------
★২১ তম পোসট
কল্কি ও মোহাম্মাদ সা উভয়ের দ্রুতগামী  শ্বেত অশ্ব হবে বাহন, তলোয়ার যুগে। মেরাজ গমন মিল।
https://www.facebook.com/groups/522603105150840/permalink/535359457208538/



Monday, August 26, 2019

ইসলাম কি অমুসলিমদের হেয় করছে?

বিষয়ঃ ইসলাম অমুসলিমদের হেয় করেছে ?

টিকাঃ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন । মুল পয়েন্ট বুঝার চেষ্টা করুন, মনে রাখার চেষ্টা করুন । তাহলে অন্ধ বিশ্বাসী খগেনরা আর ধোঁকা দিতে পারবে না ।

প্রশ্ন ১/ সুরা বাকারা ২:১৭১ =  বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না। - এই আয়াতে থেকে প্রমান হচ্ছে অমুসলিমরা বয়রা,অন্ধ এবং মূর্খ এটি তো অন্যায় ?

উত্তরঃ প্রশ্নকর্তা হয়ত চোখে সমস্যা কারন আপনি যেই আয়াত দিয়ে প্রশ্ন করেছেন এর উত্তর আগের আয়াতেই আল্লাহ্‌ বলে দিয়েছেন ।

যেমনঃ সুরা বাকারা ২:১৭০ = আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কে দেখেছি। যদিও তাদের বাপ দাদাদের কোন জ্ঞানই ছিল না এবং তারা সত্য পথে ছিল না তবুও ?

খেয়াল আল্লাহ্‌ কুরানের বলেছেন যে তোমরা আল্লাহ্‌র আইন মেনে চল তখন কাফেররা বলল যে আমরা মানব না কারন আমাদের বাপ দাদারা যেই পথে ছিল সেই পথে আমরাও চলব। এরপরেই আবার কুরআন বলছে যদি তোমাদের বাপ দাদারা ভুল পথে চলে এরপরেও > এর মানে হল কাফেরদের বাপ দাদারা মূর্তি পূজা করতো এবং আরও অনেক নোংরা কাজ করত যা কুরআন সরাসরি নিষেধ করেছে এরপরেও তারা জেনে বুঝেও করত । সুতরাং এইসব কাফেরদের উদাহরণ দিতে গিয়েই কুরান বলেছে তারা বধির, মূর্খ তারা কিছুই বুঝে না ।

উদাহরণঃ ধরুন একজন লোকের নাম আসিফ মহিউদ্দিন । তাকে বার বার বলা হচ্ছে যে তুমি চুরি করো না । এটি খারাপ । সে বলল আমার বাপ দাদাদের নীতিমালায় যা পেয়েছি আমি তাই করব । জবাবে ঐ ভদ্র লোকটি বলল যদি তোমার বাপ দাদা খারাপ পথে থাকে এরপরেও ? ফলে লোকটি বলল আসলে জনাব আপনার উদাহরণ ঐ গাধার মত যে গাধাকে পানির কাছে নিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু পানি খাওয়ানো যায় না । আচ্ছা আমার প্রশ্ন হল এই লোক যে আসিফ নামের লোকটিকে গাধার সাথে উদাহরণ দিয়েছে সে কি ভুল করেছে ? উত্তর হচ্ছে না । কারন আমরা সবাই জানি চুরি করা একটি খারাপ কাজ । আর যে জেনে বুঝেও চুরি করে সে আর সভ্য মানুষ হতে পারে না । 

প্রশ্ন ২/ সুরা বাকারা ২:২৫৪ =  হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম।  - এই আয়াতে কাফেরদের জালেম বলেছেন কেন এটি তো অমানবিক ?
উত্তরঃ হাস্যকর প্রশ্নই । চোরকে চোর বলা কি অমানবিক ? ডাকাতকে খারাপ বলা কি অন্যায় ? ধর্ষককে অপরাধী বলে কি অপরাধ ? যারা দেশের বিরুদ্ধে বেইমানী করে তাদেরকে দেশদ্রোহী পাপী বলা কি অমাবিক ? যারা সন্ত্রাস তাদেরকে কি সন্ত্রাসী বল খারাপ ?

যেমন ধরুন কোন পিতা ৫ কোটি টাকা তার কোন এক ছেলেকে আমানত রাখতে দিলেন এখন সে ছেলে টাকাটি খেয়ানত করেছেন এখন পিতা রেগে দিয়ে ছেলেকে ধমক দিলেন যে তুই একটি জালেম । কারন তুই খেয়ানত কারী । একই যুক্তিতে আল্লাহ্‌ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এখন কেউ যদি আল্লাহকে না মেনে বরং তাঁর বিরোধিতা করে আবার মনে করে সে আল্লাহ্‌ ছাড়া পরকালে নাজাত পেয়ে যাবে এখন এই টাইপের বলদদের যদি আল্লাহ্‌ জালেম বলেন এখানে অন্যায়ের কি হয়েছে ? বুঝান তো একটু !

তাফহিমুল কুরআনে সুরা বাকারার ঐ আয়াতের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে, এখানে কুফুরি নীতি অবলম্বনকারী বলতে বুঝানো হয়েছে এমন সব লোককে যারা আল্লাহ্‌র হুকুম মেনে চলতে অস্বীকার করে । আল্লাহকে খুশি করার পরিবর্তে নিজেদের ধন সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে করে । কিয়ামতকে বিশ্বাস করে না । তারা আরও ভিত্তিহীন চিন্তা করে যে পরকালে তারা নিজেদের মুক্তির জন্য নাজাত কিনে নিতে সক্ষম হবে ।

সুতরাং আল্লাহ্‌ তাদেরকে জালেম বলেছেন যারা কুফুরি অবলম্বন করেছেন  এবং আল্লাহকে অস্বীকার করেছেন আর আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের জালেম বলতেই পারেন যেহেতু তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা ।

প্রশ্ন ৩/ সুরা জুম’য়া ৬২:৫ =  যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। - এখানে অমুসলিমদের গাধা ও নিকৃষ্ট বলা হচ্ছে ?

উত্তরঃ আয়াতেই উত্তর দেয়া আছে , আল্লাহ্‌র দেয়া কিতাব তাওরাত অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহ্‌র আয়াতকে মিথ্যা বলেছে তাই আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের গাধার সাথে উদাহরণ দিয়েছেন এবং নিকৃষ্ট বলেছেন ।

উদাহরণঃ অনেক সময় ক্লাসের পড়া না পারার কারনে অথবা ক্লাসে পরিক্ষায় বার বার ফেল করলে টিচার আমাদের বলেন কিরে তুই কি গাধা নাকি যে পড়াশোনা করিস না নাহ! তুই অনেক নিকৃষ্টরে । এখানে কি টিচার ছাত্রকে অপমান করেছে নাকি ছাত্রর ভালর জন্য শাসন করেছেন ।

একই ভাবে আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের ভাল চান তাই আল্লাহ্‌ তাদেরকে গাধা ও নিকৃষ্ট বলে শাসন করলেন যারা তাকে অস্বীকার করেছেন এবং তাঁর দেয়া আইন মেনে চলে নাই । 

প্রশ্ন ৪/  সুরা ফুরকান ২৫:৪৪ = আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে ? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত । - এই আয়াত অমুসলিমদের পশু বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ আয়াতের আগের আয়াতে বলা হয়েছে যে, সুরা ফুরকান ২৫:৪৩ =  আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?

ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদক, তাফসীরে ইবনে কাসিরে ১৫ খণ্ড, ২৬০ থেকে ২৬২ পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, নবী (সা) কে নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করত । নবী মুহাম্মদ (সা) কে কাফেররা ছোট করে কথা বলব । অপমান করত । কাফেররা এত বর্বর ছিল যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ অজ্ঞতার যুগে একজন লোক কিছু কাল সাদা পাথরের ইবাদর করত । আবার যখন দেখত ঐ পাথরের থেকে অন্যটি আরও উৎকৃষ্ট তখন প্রথম পাথরের পূজা ছেড়ে দ্বিতীয় পাথরের পূজা করত ।

যেহেতু কাফেররা নবী মুহাম্মদ (সা) কে নিয়ে ঠাট্টা করত , অপমান করত , ছোট করত এবং তৎকালীন যুগে কাফেররা পাথর পূজা করত এবং সত্যকে অস্বীকার করত তাই আল্লাহ্‌ তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তুর মত বলেছেন । কারন একজন মানুষ হয়ে কিভাবে একটি পাথরের পূজা করে তাদেরকে বুঝানোর পরেও তারা বুঝতে চায় না যেমন একটি চতুষ্পদ প্রাণী তাকে আপনি যতই উপদেশ দেন সে মানতে চাইবে না ।

এখানে আমার একটি প্রশ্ন তৎকালীন সময়ে কাফেররা পাথরের পূজা করত , কন্যা সন্তানদের জীবিত কবর দিত আরও অনেক আকাম করত এখন কুরানের কাফেরদের সমালোচনা করা হয়েছে সে তারা যা করট সেটি অন্যায় । এখন নাস্তিকরা যে দাবি করছে যে কুরআনে অন্যায় ভাবে অমুসলিমদের খারাপ বলা হয়েছে তাহলে আমরা কি বলতে পারি না যে নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা পরোক্ষ ভাবে কাফেরদের নিকৃষ্ট অপরাধ প্রমোট করছেন ?

প্রশ্ন ৫/ সুরা তাওবা ৯:২৮ = হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল-হার ামের নিকট না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্রে?র আশংকা কর, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ করুনায় ভবিষ্যতে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। - এই আয়াতে মুশরিক বা অমুসলিমদের নাপাক বলা হচ্ছে ?

উত্তরঃ ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসিরের, ৮ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৬৭৩ এখানে বলা হয়েছে যে, সহিহ হাদিসে আছে, মুমিন অপবিত্র হয় না। বাকি থাকলো এই কথাটি যে মুশরিকদের দেহ ও সত্তাও কি অপবিত্র ? এই ব্যাপারে জমহুরের (বেশির ভাগ) উক্তি এই যে তাদের দেহ নাপাক বা অপবিত্র নয় । কারন আল্লাহ্‌ আহলে কিতাবদের জবেহ করা প্রাণী হালাল করেছেন ।

মুশরিক মানে হচ্ছে যে, আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক করে । ধরুন একটি পিতার ৭ টি সন্তান । একটি সন্তান তার বাবাকে পিতা বলে পরিচয় দেয় না , অন্যলোককে নিজের বাপ বলে সম্বোধন করে । এখন এই কথা পিতা জানতে পেরে তার ছেলেকে বললেন তুই হলি একটি নোংরা নাপাক বাজে ছেলে । আচ্ছা এখানে কি পিতা তার ছেলের দেহকে নোংরা বলেছেন নাকি তার ছেলের বাজে চিন্তা বা বাজে কাজকে নোংরা বলেছে ? উত্তর হচ্ছে ছেলের বাজে চিন্তাকে নোংরা বলেছেন কারন নিজের পিতাকে বাবা না বলে অন্যকে বাপ বলে ডাকা তো অন্যায় এবং অপরাধ বটে ।
সুতরাং এখানে মুশরিকদের যেহেতু তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আরও হাজার দেব দেবির উপাসনা করত তাই এদের আকিদা বা বিশ্বাসকে অপবিত্র বলা হয়েছে তাদের দেহ বা সত্তাকে নয় । 

প্রশ্ন ৬/ সুরা আনফাল ৮:৫৫ = সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি।  আবার সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৬ = আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। - এই দুই আয়াতে অমুসলিমদের নিকৃষ্ট বলা হচ্ছে ?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌র কাছে নিকৃষ্ট হল তারা যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, ইমান আনে নি এবং কাফের । আবার আল্লাহ্‌র কাছে সব থেকে শ্রেষ্ঠ হল তারা যারা, সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৭ = যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।
ধরুন আমি একটি দেশের প্রধান । আমি আইন করলাম যারা দেশের জন্য কাজ করবে দেশকে ভাল বাসবে তারা আমার কাছে শ্রেষ্ঠ এবং যারা নিজ দেশকে অস্বীকার করে, নিজ দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে, অন্যায় করে তারাই আমার কাছে সব থেকে নিকৃষ্ট । এখানে কি আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি ? আমি কি কাউকে মন্দ বলেছি ? উত্তর হচ্ছে , আমি সঠিক কথাই বলেছি ।

একই ভাবে আল্লাহ্‌ যেহেতু আমাদের সৃষ্টিকর্তা তাই তাঁকে কেউ অস্বীকার করলে আল্লাহ্‌ অবশ্যই সেসব মানুষদের নিকৃষ্ট বলতেই পারেন এতে ঐ মানুষের কেন কষ্ট লাগবে যেখানে সে আল্লাহকে নিজেই  মানছে না ? আল্লাহ্‌র নিকৃষ্ট বলাতে যদি সেই লোক কষ্ট পায় তাহলে আল্লাহ্‌র খুশির জন্য অথবা সৃষ্টির সেরা হওয়ার জন্য সে আল্লাহকে মানলেই তো হয় ? বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে তেসপাতা ।

প্রশ্ন ৭/ সুরা তাওবা ৯:২৯ = তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবে র ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। - এই আয়াতে অসম্মান করে অমুসলিমদের জিজিয়া কর দিতে বলা হচ্ছে কেন ?

উত্তরঃ ধরুন এম ডি আলী নামের একজন দেশপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা । সে ঘোষণা করলেন যে , তোমরা যুদ্ধ করো ঐ বর্বর পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে চায় না এবং বাংলাদেশে একজন দেশপ্রেমী শাসন করুন এটি চায় না এবং তারা বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশীরা দুর্বল । যদি পাকিস্তানীরা বিনয় এবং করজোড় করে আমাদের দাবি মেনে নেয় এবং ক্ষতি পূরণ দেয় তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ করো না । আপনারাই এখন বলুন এখানে কি পাকিস্তানীদের অসম্মান করা হয়েছে ?

সুরা তওবাতে যাদের সাথে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছিল তাদের অপরাধ সমূহ জানলে আপনারাই তাদের জুতা দিয়ে সাইজ করতেন । আসুন দেখে আসি কাফেররা কত বড় বেইমানী করেছিল মুসলিমদের সাথে । সুরা তওবার আগের আয়াত সমূহ যেমনঃ

সুরা তওবার ৯:৫ আয়াতে কি কাফেরদের অন্যায়ভাবে যুদ্ধ করতে বলা হলা হয়েছে ? সুরা তওবার ৯:৫ আয়াত হলঃ তোমরা মুশরিকদের যেখানেই পাও হত্যা করো এবং তাদের পাকড়াও করো, তাদেরকে অবরোধ করো এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাটিতে বসে থাক ।

মুশরিকদের কেন হত্যা করতে বলা হয় এর জবাব সুরা তওবা ৯:৭ আয়াতের তাফসীরে দেয়া আছে,ডঃমুজিবুর রহমান অনুবাদঃ তাফসীরে ইবনে কাসির ৮/৬৪৮ পৃষ্ঠাঃ মুশরিকদের চার মাসের অবকাশ দেয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি এই কারনে যে তাদের অপরাধ ছিলঃ

 ১/ তারা শিরক ও কুফুরি পরিত্যাগ করবে না এমনকি সন্ধি ও চুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিতও থাকবে না । 

২/ কাফের কুরাইশরা শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করেছিল ।

৩/ তাদের তথা কাফেরদের মিত্র বনু বকর রাসুল (সা) এর মিত্র খুযাআর ওপর আক্রমণ চালিয়ে দেয় । এমনকি হারাম শরিফের মধ্যেও তাদেরকে হত্যা করে।

৪/ এর উপরেই ভিত্তি করেই রাসুল (সা) কুরাইশদের উপর আক্রমণ চালান ।
সুতরাং বর্বর কাফেরদের অপরাধের জন্যই তাদেরকে করজোড় করে জিজিয়া দিতে বলা হয়েছে ।

প্রশ্নঃ ৮/ নিচের আয়াত সমূহ থেকে প্রমান হচ্ছে যে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না ?

 * সুরা মায়েদা ৫:৫১ = হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।

* সুরা ইমরান ৩:২৮  = মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।

* সুরা নিসা ৪:৮৯ = তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।

* সুরা নিসা ৪:১৩৯ = যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য।

* সুরা নিসা ৪:১৪৪ = হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে?

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:১৩ = মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে।

উত্তরঃ প্রথমে আমরা উপরের আয়াতেই মুল উদ্দেশ্য বর্ণনা করব এরপরে শেষে আমাদের দাবি উপস্থাপন করবঃ

 = সুরা মায়েদা ৫:৫১ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসিরে, ৪ খণ্ড, ৮৫১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, এখানে আল্লাহ্‌ ইসলামের শত্রু ইহুদী ও খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন । তিনি বলেছেন তারা কখনো তোমাদের বন্ধু হতে পারে না । কেননা তোমাদের ধর্মের প্রতি তাদের হিংসা ও শত্রুতা রয়েছে । হ্যাঁ, তারা নিজেরা একে অপরের বন্ধু বটে । সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে ।

= সুরা ইমরান ৩:২৮ এই আয়াতের জবাব পরিষ্কার ভাবে বিস্তারিত দেয়া আছে, সুরা ইমরান ৩:১১৮ =  হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।

এবং সুরা ইমরান ৩:১১৯ = দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন।

এবং সুরা ইমরান ৩:১২০ = তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।

আয়াত সমুহে পরিষ্কার হচ্ছে যে, যেহেতু অমুসলিমরা মুসলিমদের ভাল চায় না , মুসলিমদের ক্ষতিতে অমুসলিমরা খুশি হয়, ক্ষতি চায়, এবং মুসলিমদের ক্ষতি হলে অমুসলিমরা আনন্দিত হয় তাই আল্লাহ্‌ তাদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধু স্থাপন করতে নিষেধ করেছেন ।

=  সুরা নিসা ৪:৮৯ আয়াতেই পরিষ্কার বলা হচ্ছে যে কাফেররা চায় মুসলিমরাও তাদের সাথে কাফের হয়ে যাক তাই আল্লাহ্‌ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন । তবে পরের আয়াতেই আবার আল্লাহ্‌ বলছেন তথা সুরা নিসা ৪:৯০ = কিন্তু যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে অথবা তোমাদের কাছে এভাবে আসে যে, তাদের অন্তর তোমাদের সাথে এবং স্বজাতির সাথেও যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন, তবে তোমাদের উপর তাদেরকে প্রবল করে দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। অতঃপর যদি তারা তোমাদের থেকে পৃথক থাকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সাথে সন্ধি করে, তবে আল্লাহ তোমাদের কে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ দেননি। - এই আয়াত থেকে এটি বুঝা যাচ্ছে যে যদি অমুসলিমরা শান্তি চুক্তি করে তাহলে তাদের সাথে চুক্তি করা যাবে ।

= সুরা নিসা ৪:১৩৯ = এই আয়াতের ব্যাখ্যা , ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসির, ৪ খণ্ড, ৫৯৮ পৃষ্ঠাঃ হযরত আলী (রা) এই আয়াত পাঠ করে ধর্মত্যাগীদের বলতেন তওবা করে নেও ? এরপরে আল্লাহ্‌ বলেন এই মুনাফিকদের অবস্থা এই যে শেষে তাদের অন্তরে মোহর লেগে যায় । তাই তারা মুমিনদের ছেড়ে কাফেরদের বন্ধু রুপে গ্রহণ করে ।এই দিকে বাহ্যত মুমিনদের সাথে মিলামিশা করে ঐ দিকে কাফেরদের সাথে বসে মুমিনদের নিয়ে উপহাস মূলক কথা বলে বেশ আনন্দ উপভোগ করে । তাদেরকে বলে আমরা মুসলমানদের বোকা বানিয়ে দিয়েছি । আসলে আমরা তোমাদেরই সঙ্গী । - সুতরাং আয়াতটি মুনাফিক মুরতাদদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে যারা মুসলিমদের ছাড়া কাফেরদের বন্ধু রুপে গ্রহণ করেছে । এবং মুসলিমদের নিয়ে হাঁসি তামাশা করেছেন ।

=  সুরা নিসা ৪:১৪৪ এই আয়াতের ব্যাখ্যা , ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসিরের, ৪ খণ্ড , ৬০৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে, তাদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা রাখতে, তাদের সাথে সর্বদা উঠাবসা করতে, মুসলিমদের গুপ্ত কথা তাদের নিকট প্রকাশ করতে, তাদের সাথে গোপন সম্পর বজায় রাখতে আল্লাহ্‌ মুসলিমদের নিষেধ করেছেন ।

= সুরা মুমতাহিনা ৬০:১৩ সঠিক কথাই কুরআন বলেছে । আল্লাহ্‌ যে জাতির প্রতি অখুশি আমরা তাঁর বান্দা হয়ে কেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব করব। উদাহরণ স্বরূপ ধরুন কোন এক দেশের প্রধান ঘোষণা দিল যে আমি মায়ানমারের সরকারের প্রতি অখুশি কোন মানবতাবাদী যেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব না করে কারন তারা অন্যায়ভাবে মুসলিমদের হত্যা করেছেন । আচ্ছা এখানে কি আমরা মায়ানমারের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করে ভুল করেছি? উত্তর হচ্ছে না । একই উত্তর কুরানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌কে যারা অস্বীকার করে আবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে, মুসলিমদের হত্যা করতে চায় তাদের সাথে আমরা কেন বন্ধুত্ব করব ? 

= সুরা মায়েদা ৫:৫৭ = হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। - যেহেতু অমুসলিমরা ইসলাম নিয়তে হাঁসি তামাশা করে, উপহাস করে তাই এদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না ।

= সুরা আন’য়াম ৬:৭০ = তাদেরকে পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। কোরআন দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দিন, যাতে কেউ স্বীয় কর্মে এমন ভাবে গ্রেফতার না হয়ে যায় যে, আল্লাহ ব্যতীত তার কোন সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী নেই এবং যদি তারা জগতের বিনিময়ও প্রদান কবে, তবু তাদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। একাই স্বীয় কর্মে জড়িত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে-কুফরের কারণে।
আপনাকে নিয়ে , আপনার বাবা মাকে নিয়ে, আপনার দেশ নিয়ে যদি কেউ অন্যায় ভাবে হাঁসাহাঁসি করে, তামাশা করে, অপমান করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

সামাজিকতার খাতিরে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা,চলা ফেরা ইত্যাদি জায়েজঃ

* নবী মুহাম্মদ (সা) অমুসলিমদের সাথে রাষ্ট্রীয় শান্তি চুক্তি করেছেন যাকে আমরা "মদিনা সনদ" বলা হয় ।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে। - এখানে ইহুদীদের প্রতিবেশি বলা হয়েছে ।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৫১৩, সহিহ হাদিসঃ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ইয়াহুদী হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তার কাছে নিজের বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৯২, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।

*  সুরা মুমতাহিনা ৬০:৮ = ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:৯ = আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।

সুতরাং অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে, কি যাবে না এর কারন হিসেবে আমরা জানতে পারলামঃ

১/ ইহুদী খৃষ্টান এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মুসলিমদের ক্ষতি করতে চান । ইসলামের ধ্বংস চায় ।

২/ মুসলিমদের দুক্ষে অমুসলিমরা খুশি হত , মুসলিমরা যদি তাদের সাথে ভাল ব্যাবহার করত এরপরেও অমুসলিমরা তাদের অমঙ্গল চাইত ।

৩/ কাফেররা ইসলাম নিয়ে হাঁসি তামাসা করত  মুসলিমদের অপমান করত, নবী মুহাম্মদ (সা) কে নিয়ে ব্যাঙ বিদ্রূপ করত ।

৪/ কাফেররা চাইত মুসলিমরাও তাদের মত কাফের হয়ে যাক, তাদের মত পাথরের পূজা করুক ।

৫/ কাফেররা মুসলিম সেজে , মুসলিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত এবং আবার কাফেরদেড় দলে যোগ দিয়ে বলত আমরা মুসলিমদের ধোঁকা দিয়েছি আসলে আমরা কাফেরদের দলের লোক ।

৬/ যেসব অমুসলিমরা শান্তি প্রিয় , তাদের সাথে সামাজিকতার সম্পর্ক , চলাফেরা করা ইসলামে বৈধ ।

৭/ ইসলাম উগ্র অমুসলিমদের সাথে সব রকমের বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছে । ব্যাস ।

প্রশ্ন ছুড়ে দিলামঃ

১/ যারা সমাজের ক্ষতি চায় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

২/ যারা আপনার পরিবার নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৩/ যারা আপনাকে অপমান করে, আপনার দেশ নিয়ে অপমান করে আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৪/ যারা আপনার খুশিতে, কষ্ট পায় আর আপনার দুক্ষে আনন্দিত হয় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ত করবেন ?

৫/ আপনি কি ধর্ষকদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৬/ যারা চায় আপনিও তাদের মত পাথর পূজা করেন এবং এর জন্য আপনাকে জবরদস্তী করে আপনি কি এদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৭/ যারা দেশের আইন মানে না আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৮/ যারা চোর, ডাকাত , লুইচ্চা আপনি কি এদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?

৯/ যারা আপনাকে ওয়াদা দিয়ে , কথা রাখে না আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবেন ?

১০/ যারা সর্বদা মিথ্যা কথা বলে , মানুষকে ধোঁকা দেয় আপনি কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন ?   

প্রশ্ন ৯/ নিচের আয়াত দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে অমুসলিম পিতামাতা বা আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না ?

* সুরা তওবা ৯:২৩ = হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী।

* সুরা আনকাবুত ২৯:৮ = আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।

* সুরা লুকমান ৩১:১৫ = পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।
উত্তরঃ উপরের কোন আয়াতেই এই কথা নাই যে অমুসলিমদের পিতামাতাদের সাথে আত্মীয়ার সম্পর্ক রাখা যাবে না বরং উপরের আয়াতে বলা হচ্ছে যে অমুসলিম পিতামাতা যদি এমন কোন কাজ করতে বলে যেটা ইসলামের খেলাফ সেই কথা মানা যাবে না । উদাহরণ মুসলিম পিতা মাতা যখন কোন নাস্তিক সন্তানকে বলে যে বাবা ইসলামে ফিরে আয় তখন কি সে ইসলামে ফিরে আসে ? উত্তর হচ্ছে না । কারন নাস্তিকের বিশ্বাস হচ্ছে নাস্তিক ধর্ম সত্য ! একই ক্ষেত্রে ইসলামের ব্যাপারেও । ইসলাম মনে করে ইসলাম সত্য । তাই যদি কোন পিতা মাতা ইসলামের খেলাফ কিছু করতে জবরদস্তী করে তাহলে তাদের কথা মানা জানে না কিন্তু তাদের সাথে খারাপ আচরনও করা যাবে না । তাদের সাথে সর্বদা ভাল ব্যাবহার করতে হবে ।  যেমন সুরা আনকাবুত ২৯:৮ = আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি।

* সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৩ = তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহা র কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে `উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা ।

* সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৪ = তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।

* সুরা লুকমান ৩১:১৪ = আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৯৭৯, সহিহ হাদিসঃ আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।

পিতামাতার সাথে যদি সম্পর্ক করা না যায় তাহলে তাদের সাথে ভাল ব্যাবহার , তাদেরকে সেবা যত্নের কথা আসে কিভাবে ?

প্রশ্ন ছুড়ে দিলামঃ

১/ আপনার পিতামাতা যদি আপনাকে অন্যায় কাজ করতে বলে আপনি কি সেটা করবেন ?

২/ আপনার পিতামাতা যদি আপনাকে চুরি করতে বলে তাহলে কি আপনি করবেন?

৩/ আপনার পিতামাতা যদি আপনাকে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে বলে আপনি কি করবেন ?

সুস্থ উত্তর হচ্ছে না । আপনি তাদেরকে বুঝাবেন যে এসব অন্যায় কাজ । একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে এসব করা অন্যায় । এখান থেকে প্রমাণিত হল যে সব সময় পিতামাতার কথা মানা যায় না । ইসলামও তাই মনে করে । ইসলাম বিরুধি কাজে পিতামাতার কথা মানা যাবে না তবে এরপরেও তাদের সাথে উত্তম ব্যাবহার করা যাবে । ব্যাস ।

প্রশ্ন ১০/ সুরা কাসাস ২৮:৮৬ = আপনি আশা করতেন না যে, আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীর্ণ হবে। এটা কেবল আপনার পালনকর্তার রহমত। অতএব আপনি কাফেরদের সাহায্যকারী হবেন না। - এই আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে কাফেরদের সাহায্য করা যাবে না ?

উত্তরঃ কেন কাফেরদের সাহায্য করা যাবে না এই কারন আল্লাহ্‌ সামনের আয়াতেই বলেছেন যে, সুরা কাসাস ২৮:৮৭ =  কাফেররা যেন আপনাকে আল্লাহর আয়াত থেকে বিমুখ না করে সেগুলো আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হওয়ার পর আপনি আপনার পালনকর্তার প্রতি দাওয়াত দিন এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।

উপরের আয়াত সমুহের মুল ব্যাখ্যা বিস্তারিত, ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদ, তাফসীরে ইবনে কাসিরের, ১৫ খণ্ড, ৫৪৮ , ৫৮৯ পৃষ্ঠায় বলা হুয়েছেঃ আল্লাহ্‌ তালা তাঁর এক বড় নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে রাসুল (সা) এর উপরে ওহী আসার আগে তিনি এই কথা কখনো ভাবেননি যে তাঁর উপরে আল্লাহ্‌র ওহী অবতীর্ণ হবে এটি আল্লাহ্‌র একটি অনুগ্রহ । সুতরাং কাফেরদের সাহায্য করা হওয়া তাঁর জন্য মোটেও সমীচীন নয়।তাদের থেকে পৃথক থাকাই তাঁর জন্য উচিৎ । তাঁর ঘোষণা দেয়া উচিৎ যে তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধাচরনকারী । অতপর আল্লাহ্‌ বলেন, যে নবী (সা) তোমার প্রতি আল্লাহ্‌র আয়াত নাজিল হওয়ার পর এই কাফেররা যেন কিছুতেই তোমাকে সেগুলা থেকে বিমুখ না করে । অর্থাৎ এই লোক গুলো যে তোমার এবং তোমার দ্বীনের বিরুদ্ধাচারন করছে এবং তোমার অনুসরন হতে জনগণকে ফিরিয়ে রাখছে এতে তুমি যেন তোমার কাজ হতে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বিরত না হও । বরং তুমি তুমার কাজ চালিয়ে যাও । আল্লাহ্‌ তোমার কালেমাকে পুরোপুরি , তোমার দ্বীনের পৃষ্ঠপোষকতাকারী, তোমার রিসালাতকে জয়যুক্তকারী । এবং তোমার দ্বীনকে সমস্ত দ্বীনের উপর বুলন্দকারী । সুতরাং তুমি জনগণকে তোমার রবের দিকে আহ্বান করতে থাকো যিনি এক এবং শরীকবিহীন । তোমার জন্য এটি উচিৎ নয় যে তুমি কাফেরদের সাহায্য করবে।

সুতরাং যেহেতু কাফেররা নবী মুহাম্মদ (সা)কে ইসলাম প্রচারে বাধা দিত, নবী মুহাম্মদ (সা)এর ব্যাক্তি স্বাধীনতায় বাধা দিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিত তাই আল্লাহ্‌ নবী (সা) কে এইসব উগ্র কাফেরদেরকে সাহায্য করতে নিষেধ করেছেন । আচ্ছা আপনার কোন কাজে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে আপনি কি তাকে সাহায্য করবেন ? ধরুন একটি বিড়ির দোকান আপনি বন্ধ করতে চাইছেন এখন যারা বিড়িখর তারা আপনার এই কাজে বাধা দিচ্ছে এবং আপনাকে নিয়ে তারা ষড়যন্ত্র করছে এখন আপনি কি এই টাইপের উগ্র মানুষদের সাহায্য করবেন?

ভদ্র অমুসলিমদের বিপদে সাহায্য করা জায়েজঃ

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না তাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও দয়া করেন না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৩, হাসান হাদিসঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবুল কাসিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয়।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২৪, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা দয়ালুদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা যমীনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৯২, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।

* সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৭০৭, সহিহ হাদিসঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের প্রতিটি হাতের জোড়ার জন্য তার উপর সদকা রয়েছে। সূর্য উঠে এমন প্রত্যেক দিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সদকা।’

* সহিহ বুখারি, ৫৬৪৯, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর ।

* সুরা নিসা ৪:৫৮ = নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তাদের প্রাপকদের পৌঁছে দিতে । তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তখন ন্যায় পরায়নতার সাথে বিচার করবে ।

* সুরা তাওবা ৯:৬ = আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না।

* জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯৪৩, সহিহ হাদিসঃ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।

প্রশ্ন ১১/ সুরা ফাতাহ ৪৮:১৬ = গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। তখন যদি তোমরা নির্দেশ পালন কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন। আর যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর যেমন ইতিপূর্বে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছ, তবে তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিবেন। - এই আয়াতে অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে যদি না তারা মুসলিম হয় ?

উত্তরঃ পাকিস্তানীরা যখন বাংলাদেশের উপর নির্যাতন চালাচ্ছিল । তখন যদি কোন বাংলাদেশ প্রেমী সাহসী নেতা বলতেন যে , তোমাদেরকে খুব দ্রুত যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দেয়া হবে , তখন ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তানীরা আমাদের কাছে পরাজয় স্বীকার না করে । আচ্ছা এই ঘোষণা কি অন্যায় ? নিজের দেশকে বাঁচানর জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়া কি অন্যায় হয়েছে ?
ইসলামে যুদ্ধনীতির আইন হলঃ

* সুরা বাকারা ২:১৯০ = তোমরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সীমালঙ্ঘন করো না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করে না।

* সুরা বাকারা ২: ১৯৪= যে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে, তোমরাও তার উপর আক্রমণ করো। যেরূপ সে তোমাদের উপর আক্রমণ করেছে ।

* সুরা তওবা ৯:১৩= তোমরা কেন এমন কওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না , যারা তাদের কসম ভঙ্গ করেছে এবং রাসুলকে বহিষ্কার করার ইচ্ছা পোষণ করেছে । আর তারাই প্রথমে তোমাদের সাথে শুরু করেছে । তোমরা কি তাদের ভয় করছ ? অথচ আল্লাহ্‌ অধিক উপযুক্ত যে, তোমরা তাঁকে ভয় করবে । যদি তোমরা মুমিন হও ।

* সুরা তওবা ৯:৩৬= তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই করো যেমনিভাবে তারা সকলেই তোমাদের সাথে লড়াই করে।

* সুরা মুমতাহিনা ৬০:৮ = দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি ঘর থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি সদয়,ভাল,উত্তম ব্যাবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ্‌ তোমাদের নিষেধ করেন না । নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ন্যায় পরায়ণদের ভালবাসেন ।

প্রশ্ন ১২/ নিচের আয়াত গুলো থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে আল্লাহ্‌ কাফেরদেরকে অন্যায় ভাবে অপমান করছেন ?

* সুরা বাকারা ২:১৬১ = নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা'নত।

* সুরা ইমরান ৩:১২ = কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান।

* সুরা আরাফ ৭:১৭৯ = আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।

* সুরা ইমরান ৩:১৫১ = খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।

উত্তরঃ আমাদের সহজ উত্তর হলঃ

১/ উপরের আয়াতে অন্যায় ভাবে মোটেও কাফেরদের অপমান করা হয়নি। তাদের উপযুক্ত সমালোচনা করা হয়েছে । আরও হলে ভাল হত।কারন,কাফেররা প্রচুর বেইমানী করেছে মুসলিমদের সাথে ।

২/ আপনি তো নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসী তাই না , আপনি তো এসব লানতে বা আজাবে বিশ্বাস করেন না, যেখানে আপনি আল্লাহ্‌কেই মানেন না । তাহলে আল্লাহ্‌ যদি তাঁকে অস্বীকার করার জন্য তাঁর বান্দাদের উপর অভিশাপ দেন, জাহান্নাম দেন এখানে আপনি জনাব আপত্তি করার যে ? আপনার যদি এতই কষ্ট লাগে তাহলে আপনি এই আয়াতের উপর আমল করুন যেখানে আল্লাহ্‌ বলছেন । * সুরা বাকারা ২:১৬০ = যারা তওবা করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সে সমস্ত লোকের তওবা আমি কবুল করি এবং আমি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু।

৩/  কাফের মানে হল যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে । এখন আল্লাহ্‌র জাহান্নামের কথা শুনে যদি আপনার কষ্ট লাগে তাহলে আপনি ইমান এনে ফেলুন এখনি , জান্নাতে যেতে পারবেন তবে আপনাকে তওবা করতে হবে । নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা জাহান্নামের কথা বিশ্বাস করে না আবার জাহান্নামের কথা শুনলে ভয় পান কেন ? আপনারা কি সিজফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত নাকি ?

৪/   সুরা বাকারা ২:২৫৭ = যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। - এমান আনুন উপরের আজাব আপনি পাবেন না ।

৫/ সুরা আরাফ ৭:১৭৭ = তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে। - এই আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে কাফেররা আয়াত অস্বীকার করে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছে । তাই কাফেররা যদি তওবা করে তাহলে তারা মাফ পাবে ।

৬/  তাই আল্লাহ্‌র আজাবকে যদি ভয় পান বা আপনার কাছে অপমান মনে হয় তাহলে  আপনি এখনি ইমান এনে তওবা করুন তাহলেই আল্লাহ্‌র প্রিয় হয়ে যাবেন ।আল্লাহ্‌র কাছে অনেক ভাল বান্দা হতে পারবেন ।আপনি ফেরেশতাদের কাছে সেলেব্রেটি হতে পারবেন। গ্যারান্টি দিলাম ।

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...