Thursday, August 29, 2019

সলাতের খুশুখুজু কি & কেন?

সলাতের খুশু-খুযু কি এবং কেন?

‘খুশু’-এর আভিধানিক অর্থ হ’ল দীনতার সাথে অবনত হওয়া, ধীরস্থির হওয়া ইত্যাদি। ইবনু কাছীর বলেন, খুশু অর্থ- স্থিরতা, ধীরতা, গাম্ভীর্য, বিনয় ও নম্রতা। ইবনুল ক্বাইয়ম বলেন, খুশু হল হৃদয়কে দীনতা ও বিনয়ের সাথে প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থাপন করা। [মাদারিজুস সালেকিন ১/৫১৬]

সার্বিক অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে রসুল স.-এর নিম্নোক্ত হাদিসটি একটি কঠিন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই উম্মত হতে সর্বপ্রথম সলাতের একাগ্রতাকে উঠিয়ে নেয়া হবে, এমনকি তুমি তাদের মধ্যে কোন একাগ্রচিত্ত মুসল্লি খুঁজে পাবে না’। [ত্বাবারাণী; ছহিহুল জামে‘ হা/২৫৬৯]

একই বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে হুযায়ফা রা.-এর নিম্নোক্ত বাণীতে। তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম তোমরা সলাতে একাগ্রতা হারাবে। অবশেষে হারাবে সলাত। অধিকাংশ সলাত আদায়কারীর মধ্যে কোনো কল্যাণ অবশিষ্ট থাকবে না। হয়তো মসজিদে প্রবেশ করে একজন বিনয়ী-একাগ্রতা সম্পন্ন সলাত আদায়কারীকেও পাওয়া যাবে না’। [ইবনুল ক্বাইয়ম, মাদারিজুস সালেকীন বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৬), ১/৫১৭ পৃঃ]

‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে’ [বাকারাহ ২/২৩৮]

তিনি আরো বলেন, ‘ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা সলাতে বিনয়াবনত’ [মুমিনুন ২৩/১-২]

খুশু বা একাগ্রতার স্থান হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে, কিন্তু এর প্রভাব বিকশিত হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। অন্যমনস্ক হওয়ার দরুন আত্মিক জগতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও তার কুপ্রভাব পড়ে। তাই হৃদয় জগতকে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতায় পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হলেই সলাতের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া সম্ভব। সলাতের মধ্যে খুশু কেবল তারই অর্জিত হবে, যে সবকিছু ত্যাগ করে নিজেকে শুধুমাত্র সলাতের জন্য নিবিষ্ট করে নিবে এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে সলাতকে স্থান দিবে। তখনই সলাত তার অন্তরকে প্রশান্তিতে ভরে দিবে।

রসুলুল্লহ স. বলতেন, ‘সলাতেই আমার চোখের প্রশান্তি রাখা হয়েছে’। [আহমাদ, মিশকাত হা/৫২৬১, সনদ হাসান]

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে মনোনীত বান্দাদের আলোচনায় ‘খুশু-খুযু’র সাথে সলাত আদায়কারী নারী-পুরুষের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত ক্ষমা ও সুমহান প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন [আহযাব ৩৩/৩৫]

‘খুশু’ বান্দার উপর সলাতের এই কঠিন দায়িত্বকে স্বাভাবিক ও প্রশান্তিময় করে তোলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই তা বিনয়ী-একনিষ্ঠ ব্যতীত অন্যদের উপর অতীব কষ্টকর’ [বাক্বারা ২/৪৫]

বস্তুত যে কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে যখন রসুল স.-এর নিম্নোক্ত বাণীর অনুসরণ করা হবে, তখনই তা এক সফল ইবাদতে পরিণত হবে। হৃদয়জগতকে অপার্থিব আলোয় উদ্ভাসিত করবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’। [বুখারি হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২]

আল্লহ আমাদের হেফাজত করুন শয়তান এবং মুনাফিকদের থেকে। আহ সবাইকে হেদায়ত ও বোঝার তৌফিক দান করুন।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...