Wednesday, July 31, 2019

আলী রঃ এর চেহারা দেখা কি ইবাদত?

১.
سیدنا علی رضی للہ عنہ کا چہرہ دیکھنا عبادت ؟
(النظر إلى وجه علي عبادة)

"علی رضی اللہ عنہ کے چہرے کا دیدار عبادت ہے۔"
(المستدرك على الصحيحين للحاكم : 4682، 4683)
یہ روایت ضعیف ہے کیو نکہ سند میں تدلیس و اختلاط وغیرہ کے مسائل ہیں۔
حافظ ذہبی رحمہ اللہ نے اس روایت کو من گھڑت قرار دیا ہے۔
(مختصر تلخیص الذھبی : 3/1505، ت : 573، 574)

প্রশ্ন: সাইয়্যেদুনা আলী রা: এর চেহারা দেখা কি ইবাদত?

"আলী রাঃ এর চেহারা দেখা ইবাদত।" (মুস্তাদরাক আলাস সহীহাঈন লিল হাকেম, হাদীস নং ৪৬৮৩, ৪৬৮২)

এই রেওয়ায়াত দ্বঈফ। কেননা এর সনদে তাদলীস ও ইখতিলাত  ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে।
হাফেজ যাহাবী রহঃ এই রিওয়ায়েত কে মনগড়া আখ্যা দিয়েছেন
(মুখতাসার তালখিসুয যাহাবী: ৩/১৫০৫; ৫৭৪,৫৭৩)

Tuesday, July 30, 2019

আল্লহ কুরআনে নিজেকে বুঝাতে "আমরা" শব্দ কেন ব্যবহার করলেন

কুরআনে বিভিন্ন স্থানে আল্লহ নিজেকে বোঝাতে “আমরা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন কেন?
.
পবিত্র কুরআনে বহুবচনের ব্যবহার এবং একটি সন্দেহের জবাব
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লহর জন্য।
আমরা এমন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যে বিষয়টি শুধু অমুসলিম নয়, অনেক মুসলিমের কাছেও স্পষ্ট নয়। অনেক অমুসলিম প্রশ্ন করে থাকেন, ইসলাম কি একের চেয়ে অধিক সংখ্যক আল্লহতে বিশ্বাসী? কারণ পবিত্র কুরআনে প্রায়ই আল্লহ সুবহানুওয়া তায়ালার বক্তব্যে "আমরা" শব্দটির বহুল প্রচলন প্রদর্শিত হয়।
এবিষয়ে অনেকের বাড়াবাড়ি তো এ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তারা বলে, কুরআনে আসলে ত্রিতত্ত্ব বা ট্রিনিটির কথা বলা হয়েছে আর মুসলিমরা নাকি গত ১৪০০ বছর ধরে এর ভুল ব্যাখ্যা করে যাচ্ছে! আবার অামেরিকার একদল ভ্রান্ত লোক এতে নাকি এশিয়ান কালো মানুষদের প্রতি ইংগিত খুঁজে পাচ্ছেন! আসলে ব্যাপারটা কি?
আমরা তো জানি ইসলাম একটি কঠিন মনোথিস্টিক (শুধুমাত্র একজন আল্লহতে গভীর বিশ্বাস)
ধর্ম। ইসলাম বিশ্বাস করে যে- আল্লহ তাঁর যোগ্যতায় এক এবং অদ্বিতীয় । তাহলে? এর ব্যাখ্যা কি?
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যা এর ব্যাখ্যয় বলেছেন, "আরবি সাহিত্যের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, কোন ব্যক্তি নিজের সম্মান বা গৌরব বুঝাতে নিজেকে নাহনু (আমরা) সর্বনাম দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন। আবার তিনি একত্ব বুঝাতে আনা (আমি) অথবা তৃতীয় পুরুষ হুয়া (সে) সর্বনামগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। আল্লহ আরবদের যখন তাদের ভাষাতেই সম্বোধন করছেন, তিনি কুরআনে এই তিন ধরনের স্টাইলই ব্যবহার করেছেন।
আল্লহ সুবহানুওয়া তায়ালা নিজেকে কিংবা নিজের নাম এবং গুণসমূহ প্রকাশ করার জন্য কখনো একবচন আবার কখনো বহুবচন ব্যবহার করেছেন। যেমন, "নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে এক সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।" [সূরা ফাতহ্ ৪৮:১] বা এধরনের আরো অনেক আয়াত। কিন্তু আল্লহ কখনোই দ্বৈত বা দ্বিবচন ব্যবহার করেননি। কারণ বহুবচন যেখানে আল্লহর মর্যাদা, তাঁর নাম এবং গুণসমূহের মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করে, দ্বিবচনাত্মক শব্দ সেখানে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকেই (দুই) নির্দেশ করে, যা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। [আল আকিদাহ আল তাদমুরিয়্যা, পৃষ্ঠা ৭৫]
ইমাম তাইমিয়্যা আরো বলেন, "ইন্না (নিশ্চয়ই আমরা) বা নাহনু (আমরা) এবং বহুবচনাত্মক অন্যান্য শব্দগুলোর বিভিন্ন রূপ যেমন একটি দল বা সমষ্টির পক্ষে একজনের বক্তব্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তেমনি কোন ব্যক্তির সম্মান এবং মর্যাদা প্রকাশেও ব্যবহৃত হয়। যেমন কোন সম্রাট যখন কোন আদেশ জারি করেন, তখন সেখানে বলা হয়, 'আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে … …' এক্ষেত্রে যদিও একজন মানুষই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিন্তু তার সম্মানার্থে বহুবচন ব্যবহার করা হচ্ছে। যিনি সবার চেয়ে বেশি সম্মানিত হবার যোগ্য, তিনি হলেন আল্লহ সুবহানুওয়া তায়ালা। তাই তিনি যখন কুরআনে ইন্না বা নাহনু ব্যবহার করেন তা তাঁর সম্মান আর মর্যাদাকেই প্রকাশ করে, সংখ্যাধিক্যকে নয়।
যদি এধরনের কোন আয়াত কারো মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে তাহলে তার উচিত হবে অন্যান্য স্পষ্ট এবং পরিষ্কার আয়াতগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া। যেমন একজন খৃষ্টান যদি উদাহরণস্বরূপ কুরআনের এই আয়াত সামনে নিয়ে আসে যে, "আমরাই উপদেশ (সম্বলিত কুরআন) নাজিল করেছি এবং আমরাই তার সংরক্ষণকারী।" [সূরা হিজর ১৫:৯] এখানে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে আমরা "বলো, তিনি আল্লহ, এক ও অদ্বিতীয়।" [সূরা ইখলাস ১১২:১] এবং এধরনের আরো যেসব সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে সেগুলো দ্বারা এসব যুক্তি খন্ডন করবো, যে আয়াতগুলোর অন্য কোন ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। এর ফলে যে আসলেই সত্যের সন্ধান করছে তার মনের সব সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। প্রতিবার আল্লহ যখন বহুবচন ব্যবহার করেন, তা তাঁর মহান মর্যাদা আর তাঁর অসংখ্য নাম এবং গুণকেই বুঝায়।" [আল আকিদাহ আল তাদমুরিয়্যা, পৃষ্ঠা ১০৯]
আমরা এই সম্মানসূচক বহুবচন কিন্ত অন্যান্য ভাষায়ও দেখতে পাই। যেমন বৃটেনের রাণী এলিজাবেথের লিখিত বক্তব্যগুলোতে সবসময় We এর ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। ইংরেজিতে একে Royal We বলা হয়। এছাড়া অন্যান্য দেশের প্রধানদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তগুলো জানানোর সময়ও বহুবচন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আল্লহই সর্বজ্ঞানী এবং তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন।

Sunday, July 28, 2019

কুররবানীর পশু জবাই করার সময় কি বলবে?

প্রশ্ন: কোরবানীর পশু জবাই করার সময় পড়তে পারি এমন কোন সুনির্দিষ্ট দোয়া আছে কি?

উত্তরঃ যবেহকালে আল্লাহর নাম নেওয়া (‘বিসমিল্লাহ’ বলা) ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘যদি তোমরা তাঁর নিদর্শনসমূহের বিশ্বাসী হও তবে যাতে (যে পশুর যবেহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা আহার কর।’’ (কুঃ ৬/১১৮) ‘‘এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা হতে তোমরা আহার করো না; উহা অবশ্যই পাপ।’’ (কুঃ ৬/১২১)

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যা খুন বহায় এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ কর।’’[বুখারী ২৩৫৬, মুসলিম ১৯৬৮নং]

‘বিসমিল্লাহ’র সাথে ‘আল্লাহু আকবার’ যুক্ত করা মুস্তাহাব। অবশ্য এর সঙ্গে কবুল করার দুআ ছাড়া অন্য কিছু অতিরিক্ত করা বিধেয় নয়। অতএব (কুরবানী কেবল নিজের তরফ থেকে হলে) বলবে,
بِسْمِ اللّٰهِ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ اللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ اللّٰهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّيْ
‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিংকা ওয়ালাক, আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী।’ [তিরমিযী ৫/৮২, নং ২৭৪১; আহমাদ ৪/৪০০, নং ১৯৫৮৬; আবু দাউদ, ৪/৩০৮, নং ৫০৪০। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ২/৩৫৪।]

নিজের এবং পরিবারের তরফ থেকে হলে বলবে,‘---তাক্বাববাল মিন্নী ওয়ামিন আহলি বাইতী।’ অপরের নামে হলে বলবে, ‘---তাক্বাববাল মিন (এখানে যার তরফ থেকে কুরবানী তার নাম নেবে) [মানাসিকুল হাজ্জ, আলবানী ৩৬পৃঃ]

এই সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করা বিধেয় নয়; বরং তা বিদআত। [আল-মুমতে ৭/৪৯২]
যেমন ‘বিসমিল্লাহ’র সাথে ‘আর-রহমানির রহীম’ যোগ করাও সুন্নত নয়। যেহেতু এ সম্বন্ধে কোন দলীল নেই। যেমন যবেহ করার লম্বা দুআ ‘ইন্নী অজ্জাহ্তু’ এর হাদীস যয়ীফ। [যয়ীফ আবূ দাঊদ ৫৯৭নং]

বাংলায় এভাবে বলা যেতে পারেঃ
বিসমিল্লাহ। আল্লহু আকবার। হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে; আপনারই জন্য। এটি আমার পক্ষ থেকে উৎসর্গিত (আর অপরের পক্ষ থেকে হলে বলবে: অমুকের পক্ষ থেকে)। হে আল্লাহ্‌, অমুকের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কবুল করুন।

এই দোয়ার মধ্যে শুধু ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলা ওয়াজিব। বিসমিল্লাহ্‌ এর অতিরিক্ত যে কথাগুলো আছে সেগুলো বলা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়।

ইমাম বুখারী (৫৫৬৫) ও ইমাম মুসলিম (১৯৬৬) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকালো ডোরাকাটা লম্বা শিংওয়ালা দুইটি দুম্বা দিয়ে কোরবানী দিয়েছেন। তিনি দুম্বার ঘাড়ের পার্শ্বদেশের উপর পা রেখে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিজ হাতে জবাই করেছেন।”

সহিহ মুসলিমে (১৯৬৭) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি লম্বা শিংওয়ালা দুম্বা আনার নির্দেশ দিলেন। কোরবানী করার জন্য দুম্বাটি আনা হল। তখন তিনি আয়েশাকে বললেন: আয়েশা, ছুরিটি নিয়ে আস। এরপর বললেন: পাথর দিয়ে ছুরিটি ধার দাও। আয়েশা ধার দিলেন। এরপর তিনি ছুরিটি নিলেন এবং দুম্বাটিকে ধরে শোয়ালেন। এরপর ‘বিস্‌মিল্লাহ্‌; আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন মুহাম্মদ, ওয়া আলে মুহাম্মদ, ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মদ’ বলে পশুটিকে জবাই্ করা শুরু করলেন এবং কোরবানী দিলেন”।

ইমাম তিরমিযি (১৫২১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। তিনি খোতবা শেষ করে মিম্বর থেকে নেমে আসলেন। এরপর দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে পশুটিকে জবাই্ করলেন। তিনি বললেন: বিসমিল্লাহ্‌, ওয়া আল্লাহু আকবার, হাযা আন্নি ওয়া আম্মান লাম ইউযাহ্‌হি মিন উম্মাতি’ (অর্থ- আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি। আল্লাহ্‌ই মহান। এটি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মধ্যে যারা কোরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে)।[আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

কোন কোন রেওয়ায়েতে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়া লাকা’ (হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনারই জন্য) অতিরিক্ত এসেছে।[দেখুন: ইরওয়াউল গালিল (১১৩৮ ও ১১৫২)]

“আল্লাহুম্মা মিনকা” (অর্থ- হে আল্লাহ্‌, এটি আপনার পক্ষ থেকে): এ কথার অর্থ হচ্ছে এ কোরবানীর পশুটি আপনারই দান। এ রিযিক আপনার পক্ষ থেকে আমার কাছে পৌঁছেছে।

“ওয়া লাক” (অর্থ- আপনার জন্য): এ কথার অর্থ হচ্ছে- এটি একনিষ্ঠভাবে আপনারই জন্য।[দেখুন: ‘আল-শারহুল মুমতি’ (৭/৪৯২)]

কুরবানি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যে সকল কর্ম থেকে বিরত থাকবেন

প্রশ্ন: যে মুসলিম হজ্জ আদায় করছেন না যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনে তার উপর কি কি করা ওয়াজিব? অর্থাৎ নখ কাটা, চুল কাটা, মেহেদি দেওয়া ও নতুন জামা-কাপড় পরা ইত্যাদি কি কুরবানি করার আগে জায়েয নয়?

উত্তর: এক:

যদি যিলহজ্জ মাসে প্রবেশ করা সাব্যস্ত হয় তাহলে যিনি কুরবানি করতে ইচ্ছুক তার জন্যে তার শরীরের কোন চুল কাটা, নখ কাটা কিংবা চামড়া কাটা হারাম। কিন্তু, নতুন জামা-কাপড় পরিধান করা, মেহেদি দেয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা, স্ত্রী উপভোগ করা কিংবা সহবাস করা নিষিদ্ধ নয়।

এ বিধান শুধুমাত্র কুরবানিকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যাকে কুরবানির পশু জবাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়। এ কারণে কুরবানিকারীর স্ত্রী-পুত্র কিংবা প্রতিনিধির উপর এসব কিছু হারাম হবে না।

এ হুকুমের ক্ষেত্রে নর-নারীর মাঝে কোন ভেদ নেই। তাই কোন নারী তিনি বিবাহিত হন কিংবা অবিবাহিত হন তিনি যদি কুরবানি করতে চান তাহলে তিনি তার শরীরের চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবেন; যেহেতু এগুলো থেকে নিষেধকারী হাদিসের দলিল সাধারণ।

এ বিরত থাকাকে ইহরাম বলা হয় না। কারণ হজ্জ ও উমরা ব্রত ছাড়া কোন ইহরাম নেই। ইহরামকারী ইহরামের পোশাক পরেন। সুগন্ধি ব্যবহার, স্ত্রী সহবাস ও শিকার করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু কুরবানিকারীর জন্য যিলহজ্জ মাস প্রবেশ করার পরও এগুলো করা জায়েয। কোরবানিকারী শুধু চুল কাটা, নখ কাটা ও চামড়া কাটা থেকে বিরত থাকেন।

উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের কেউ যখন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখে এবং সে ব্যক্তি যদি কোরবানি করতে ইচ্ছুক হয় তাহলে সে যেন চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে”।[সহিহ মুসলিম (১৯৭৭)] অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, “সে যেন তার চুল ও চামড়ার কোন কিছু (কর্তন বা উপড়ে ফেলার মাধ্যমে) স্পর্শ না করে”।

স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:

“যে ব্যক্তি কোরবানি করতে ইচ্ছুক তার ক্ষেত্রে বিধান হচ্ছে- সে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে নিজের চুল, নখ ও চামড়ার কোন কিছু কাটবে না; যতক্ষণ না সে কুরবানি সম্পন্ন করে। দলিল হচ্ছে একদল সংকলক (বুখারী ছাড়া) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা যখন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখ এবং তোমাদের কেউ কুরবানি করার সংকল্প রাখে তখন সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে”। সুনানে আবু দাউদ, সহিহ মুসলিম ও সুনানে নাসাঈ এর ভাষা হচ্ছে- “কেউ যদি জবাই করার জন্য কোন পশু প্রস্তুত রাখে এবং সে যিলহজ্জ মাসে প্রবেশ করে তখন সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে; যতক্ষণ না সে কোরবানি সম্পন্ন করে”। এক্ষেত্রে সে নিজ হাতে জবাই করুক কিংবা অন্য কাউকে জবাই করার দায়িত্ব দিক উভয়টা সমান। আর যাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করা হচ্ছে তাদের জন্য এসব বিধান নেই। যেহেতু এই মর্মে কোন দলিল নেই। তাছাড়া এটাকে ইহরাম বলা হয় না। মুহরিম হচ্ছে- হজ্জ কিংবা উমরা কিংবা উভয়টি পালনেচ্ছু ব্যক্তি”।[সমাপ্ত]

[ফাতাওয়াল লাজনাহ্‌ আদ-দায়িমা (১১/৩৯৭ ও ৩৯৮)]

স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়:

“হাদিস: ‘যে ব্যক্তি কুরবানি করতে চায় কিংবা তার পক্ষ থেকে কুরবানি করা হবে সে যিলহজ্জ মাসের শুরু থেকে তার চুল, চামড়া ও নখের কোন কিছু কাটবে না; যতক্ষণ না কোরবানি শেষ হয়।’ এ নিষেধাজ্ঞা কি পরিবারের ছোটবড় সকল সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করবে নাকি ছোটদের পরিবর্তে শুধু বড়দেরকে অন্তর্ভুক্ত করবে?”

জবাবে তারা বলেন:

প্রশ্নকারী যে ভাষায় উল্লেখ করেছেন সে ভাষায় আমরা কোন হাদিস জানি না। বরং যে ভাষায় হাদিসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে মর্মে আমরা জানি সেটা হচ্ছে- “তোমরা যখন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখ এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করার সংকল্প রাখে তখন সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে”। সুনানে আবু দাউদ, সহিহ মুসলিম ও সুনানে নাসাঈ এর ভাষা হচ্ছে- “কেউ যদি জবাই করার জন্য কোন পশু প্রস্তুত রাখে এবং সে যিলহজ্জ মাসে প্রবেশ করে তখন সে যেন তার চুল, নখ না কাটে; যতক্ষণ না সে কুরবানি সম্পন্ন করে”। এ হাদিসে যিলহজ্জ মাস প্রবেশ করার পর যে ব্যক্তি কুরবানি করতে ইচ্ছুক তার জন্য চুল ও নখ কাটা থেকে নিষেধাজ্ঞার প্রমাণ রয়েছে। আর প্রথম রেওয়ায়েতটিতে বর্জন করার নির্দেশ রয়েছে। নির্দেশের মূল বিধান হচ্ছে- ওয়াজিব বা আবশ্যকতা সাব্যস্ত করা। এ হাদিসের এ মূল বিধানকে রহিত করতে পারে এমন কোন পাল্টা দলিল আমাদের জানা নেই। দ্বিতীয় রেওয়ায়েতে রয়েছে কর্তন করার নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞারও মূল বিধান হচ্ছে- হারাম সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ কর্তন করার নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞাকে শিথিল করতে পারে এমন কোন পাল্টা দলিল আমাদের জানা নেই। অতএব, এর মাধ্যমে সাব্যস্ত হল যে, এ হাদিসটি শুধু ঐ ব্যক্তির জন্য খাস যিনি নিজে কুরবানি করতে ইচ্ছুক। কিন্তু যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা হবে (যেমন কুরবানিকারীর স্ত্রী-পুত্র) তিনি বড় হন কিংবা ছোট হন তার ক্ষেত্রে চুল কাটা, চামড়া তোলা কিংবা নখ কাটতে কোন বাধা নেই। যেহেতু আসল বিধান হচ্ছে- এগুলো জায়েয হওয়া। এ আসল বিধানের বিপরীত কোন দলিল আমাদের জানা নেই।[সমাপ্ত]

[ফাতাওয়াল লাজনা আদ-দায়িমা (১১/৪২৬ ও ৪২৭)]

দুই:

যে ব্যক্তির সামর্থ্য না থাকার কারণে তার কুরবানি করার ইচ্ছা নেই তার জন্য এগুলো কাটা হারাম নয়। আর কুরবানি করতে ইচ্ছুক এমন কেউ যদি এগুলো কেটে ফেলে তার উপর ফিদিয়া আবশ্যক হবে না। বরং তার উপর তাওবা ও ইস্তিগফার করা আবশ্যক হবে।

ইবনে হাযম বলেন:

যে ব্যক্তি কুরবানি করতে ইচ্ছুক যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলে সে তার দেহের চুল বা নখ ইত্যাদি হাত দিবে না; অর্থাৎ কামাবে না কিংবা ছাটবে না কিংবা অন্য কোন ভাবে দূর করবে না। আর যে ব্যক্তির কুরবানি করার সংকল্প নেই তার উপর এগুলো অবধারিত নয়।[আল-মুহাল্লা (৩/৬)]

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:

এটা যখন সাব্যস্ত হল তখন সে ব্যক্তি চুল কাটা, নখ কাটা বর্জন করবে। যদি করে ফেলে তাহলে আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করবে। তাকে ফিদিয়া দিতে হবে না মর্মে ইজমা সংঘটিত হয়েছে; চাই সে সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে করুক কিংবা ভুলক্রমে করুক।[আল-মুগনি (৯/৩৪৬)]

টীকা:

শাওকানি বলেন:

এ নিষেধাজ্ঞার হেকমত হলো, কুরবানিকারীর শরীরের সম্পূর্ণ অংশ অটুট থাকুক; যাতে করে গোটা দেহ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পায়। কারো কারো মতে, ইহরামকারীর সাথে সাদৃশ্যস্বরূপ এ বিধান। এ দুটি হেকমত ইমাম নববী উল্লেখ করেছেন। ইমাম শাফেয়ির ছাত্রবর্গ থেকে বর্ণিত আছে যে, দ্বিতীয় হেকমতটি ভুল। কারণ ইহরামকারী আরও যেসব জিনিস বর্জন করে থাকে কুরবানিকারী তো সেগুলো বর্জন করে না; যেমন- নারী, সুগন্ধি, সাধারণ পোশাক ইত্যাদি।[নাইলুল আওতার (৫/১৩৩)]

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

Saturday, July 27, 2019

ফরয সলাতের ইকামত হয়ে গেলে কি অন্য কোন সুন্নত বা নফল পড়া যাবে?


প্রশঃ- ফরয সলাতের ইকামত হয়ে গেলে কি অন্য কোন সুন্নত বা নফল পড়া যাবে?

উত্তর: ফরজ নামাজের ইকামত হয়ে গেলে কোন সুন্নাত নেই।
ফযরের নামাযের সময় মসজিদে অনেককে দেখা যায়, আযানের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেছে অথবা জামাতে নামায পড়ানো হচ্ছে, আর তারা সুন্নত নামায পড়ছেন। অনেকের স্পর্ধা এতো বেশি যে, মসজিদে এসে দেখে ইমাম সাহেব ফরয নামায পড়াচ্ছেন, আর তারা জামাতে শরীক না হয়ে আলাদা সুন্নত পড়া শুরু করে?

নামায কি নিজের ইচ্ছামতো পড়লে কবুল হবে নাকি, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর তরীকা মোতাবেক পড়লে কবুল হবে??

ফরয নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে অন্য কোনো নফল বা সুন্নত নামায সম্পূর্ণ হারাম, সুন্নত বিরোধী!!
 ফরয সলাতের একামত হয়ে গেলে জামায়াতে শরীক হওয়া ছাড়া অন্য কোন ধরণের সলাত পড়া যাবে না। কারণ, এ ব্যাপারে রসূল স. এর স্পষ্ট হাদীস হল:
إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة"
''যখন ফরয সলাতের ইকামত হয়ে যায় তখন ফরয ছাড়া অন্য কোন সলাত নেই।'' (মুসলিম, হাদীস নং- ১৫৩১, আবুদাউদ, তিরমিযী, নাসাই ও ইবনে মাজাহ) 

সুতরাং আমাদের দেশে ফজর এর ফরয সলাতের ইকামত হয়ে গেলেও অনেকে সুন্নত পড়া শুরু করে এটা উক্ত হাদীসের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।

#উক্ত সলাত কাযা করার দুটি সময় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ফজরের পর কোন নফল পড়া নিষিদ্ধ হলেও ফজরের আগে ছুটে যাওয়া সুন্নতকে ফরযের পর পড়া যায়। আর এটি হল ব্যতিক্রম সলাত। একদা এক ব্যক্তি মসজিদে এসে দেখল আল্লহর নাবী (সাঃ) ফজরের ফরয পড়ছেন। সে সুন্নত না পড়ে জামাআতে শামিল হয়ে গেল। অতঃপর জামাআত শেষে উঠে ফজরের ছুটে যাওয়া দুই রাকআত সুন্নত আদায় করল। নাবী (সাঃ) তার কাছে এসে বললেন, “এটি আবার কোন্‌ সলাত? (ফজরের সলাত কি দুইবার?)” লোকটি বলল, ‘ফজরের দুই রাকআত সুন্নত ছুটে গিয়েছিল।’ এ কথা শুনে তিনি আর কিছুই বললেন না (চুপ থাকলেন)। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১২৬৭, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১১৫৪, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ)

আর এক হাদীসে নাবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের ২ রাকআত (সুন্নত) না পড়ে থাকে, সে যেন তা সূর্য ওঠার পর পড়ে নেয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৮৩, জামে ৬৫৪২নং)

এখন যদি কেউ বলে “আমি হানাফী মাযহাবের আর আমার মাযহাবে আছে ফযরের সুন্নত পড়া যাবে”।
আমি বলবো, আপনি আসল হানাফী মাযহাব অনুসরণ করছেন না, আপনি আসলে “হানাফী মাযহাব” নাম দিয়ে অন্য কারো মাযহাব অনুসরণ করছেন!!
কারণ ইমাম আবু হানীফা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, “ইযা সাহহাল হাদীস, ফাহুয়া মাযহাবি” – জেনে রাখো যখন কোনো সহীহ হাদীস পাবে সেইটাই আমার মাযহাব।
এখন, সহীহ হাদীস মোতাবেক ফরয নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে আর কোনো সুন্নত নামায চলবেনা – সুতরাং ইমাম আবু হানীফার মাযহাবও সেটাই হবে। আর আপনি উলটা কাজ করে “হানাফী মাযহাব” হওয়ার দাবী করবেন, আপনি নিজেই বিবেচনা করুন আপনি কতটুকু সত্যিকারে হানাফী মাযহাব অনুসরণ করছেন? কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তার জন্য দুঃখিত। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সুন্নত জানানো।

বিঃদ্রঃ অনেকে মনে করেন, ফযরের সুন্নত নামায আগে না পড়লে, ফরয বাদে আর পড়া যাবেনা। এধারণাটা ঠিকনা!! যদি ফযরের ফরয নামাযের পর ওয়াক্ত থাকে তাহলে সুন্নত পড়া যাবে। আর ওয়াক্ত না থাকলে সূর্য ওঠার পর পড়া যাবে।

কায়েস বিন আ’মর (রাঃ) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) (ফযরের নামাযের জন্য) বের হয়ে আসলেন আর ইকামত দেয়া হলো। আমি তাঁর (সাঃ) সাথে ফযরের নামায পড়লাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামায শেষ করে দেখলেন আমি নামায পড়ছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, ধীরে কায়েস! দুই রাকাত এক সাথেই? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি ফযরের আগে দুই রাকাত পড়িনাই। তখন রাসুলুল্লাহ “না, তাহলে পরে ঠিক আছে”।
আবু দাউদের বর্ণনায় আছে, “অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নীরব থাকলেন”।
সুনানে আত-তিরমিযী ৪২২, আবু দাউদ ১২৬৭।

এই হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে, ফযরের নামাযের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায পড়তে না পারলে, ফরয নামাযের পরেও পড়া যাবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চুপ থাকা মানে তিনি নীরব থেকে কায়েস (রাঃ) কে মৌন সম্মতি দিলেন। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৌন সম্মতি মানে হলো – সুন্নাহ।

আল্লাহ আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ মেনে জীবন পরিচালনা করার তোওফিক দান করুন, আমীন ইয়া রাব্বুল আ’লামীন।

***মসজিদে যেকোনো নামাযের আগে লক্ষ্য করবেন কতটুকু সময় বাকি আছে, ২-১ মিনিট সময় যাতে করে অন্তত ২ রাকাত পড়া যাবেনা, তাহলে সুন্নত নামায শুরু করবেন না। সুন্নত পড়া শুরু করবেন যদি এতটুকু সময় হাতে থাকে যে ২ রাকাত শেষ করতে পারবেন। আর কখনো যদি এমন হয় সুন্নত পড়া অবস্থায় ইকামত দেওয়া শুরু করলঠা আপনি ২য় রাকাতে আছেন, একটু সময় নিলেই নামায পূর্ণ করে ফেলতে পারবেন তাহলে দ্রুত নামায পূর্ণ করে সালাম ফেরাবেন। আর যদি ১ম রাকাতে থাকেন তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবেন।

নখ কাটার কোন সুন্নতি বিশেষ নিয়ম আছে কি?

প্রশ্ন:-নখ কাটার কোন সুন্নতি নিয়ম আছে কি??
মানে কোন আজ্ঞুল থেকে কাটা শুরু করতে হয় আর কোন আজ্ঞুলে শেষ??
আর রাতের বেলা নখ কাটা কি ঠিক?

উত্তরঃ নখ কাটা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারনা :
নিয়মিত নখ কাটা ইসলামের অন্যতম বিধান ও সুন্নাত। নখ কাটার জন্য কোন নির্ধারিত নিয়ম রসুল (সঃ) শিক্ষা দেননি। বিভিন্ন বই এ নখ কাটার বিভিন্ন নিয়ম, উল্টোভাবে নখ কাটা, অমুক নখ থেকে শুরু করা ও অমুক নখে শেষ করা, অমুক দিনে নিখ কাটা বা না কাটা, রাতে নখ না কাটা ইত্যাদির ফযীলত বা ফলাফল বর্ণনা করা হয়েছে।
এগুলি সবই পরবর্তী যুগের প্রবর্তিত নিয়ম। মুহাদ্দিস গণ একমত যে, এ বিষয়ে যা কিছু প্রচলিত আছে সবই বাতিল, বানোয়াট ও মিথ্যা। নখ কাটার জন্য এ সকল নিয়ম পালন করাও সুন্নাত বিরোধী কাজ। রসুল (সাঃ) নখ কাটতে নির্দেশ দিয়েছেন। কোন বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দেননি। কাজেই যে কোন ভাবে যে কোন দিন নখ কাটলেই এই নির্দেশ পালিত হবে।

নাবী (স) বলেন "কেউ এমন কোন আমল করলো যা আমার থেকে প্রমানিত নয় সেইটা সেই ব্যক্তির উপর প্রত্যাক্ষিত হবে" (সাহিহুল মুসলিম-১৭১৮)

কিন্তু কেউ চাইলে সর্ব প্রথম ডান হাতের নখ কাটা শুরু করতে পারে
যেহেতু নাবী (স) সকল কাজ ডান দিক দিয়ে শুরু করতেন। আর এইটা আম আমল অর্থাৎ যে কোন কাজের ক্ষেত্রে। হাদীস শরীফে এসেছে-
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الأَشْعَثِ بْنِ سُلَيْمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي شَأْنِهِ كُلِّهِ فِي طُهُورِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَتَنَعُّلِهِ‏.‏

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডানদিক হতে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। তাহারাত অর্জন, মাথা আঁচড়ানো এবং জুতা পরার সময়ও।

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪১৪, সহীহ বুখারী ১/২৯; মুসনাদে আহমদ ১৭/৬২২; সুনানে বায়হাকী ১/৮৬; শরহুল মুহাযযাব ১/৩৩৯; ফাতহুল বারী ১০/৩৫৭; উমদাতুল কারী ২২/৪৫; ফাতহুল মুলহিম ১/৪১৯; আলমাসনূ’ ফী মারেফাতিল হাদীসিল মাওযূ’ পৃ. ১৩০; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০৫)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

তাই কোন বিশেষ দিনে বা কোন বিশেষ পদ্ধতিতে নখ কাটার কোন ফযীলত কল্পনা করার অর্থ রসুলুল্লহ (সঃ) এর শিক্ষাকে অপূর্ণ মনে করা এবং তাঁর শিক্ষাকে পূর্ণতা দানের দুঃসাহস দেখানো।
আল্লহ যেন আমাদের সহীহ সুন্নাতের মধ্যে জীবন যাপনের তওফীক প্রদান করেন

Friday, July 26, 2019

বাচ্চাদের জন্য খেলনা পুতুল ও ঘরে সৌন্দর্য্যের জন্য ছবি রাখা কি জায়েজ?

#প্রশ্নঃ   ছোট বাচ্চাদের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাটারী চালিত হাঁস, মুরগী, মনূষ্য আকৃতির পুতুল ইত্যাদি খেলনা দেয়া জায়েজ হবে কিনা?
উত্তরঃ
যে সকল বস্তুর প্রাণ আছে, এমন প্রাণীর চোখ,কান, মুখ থাকা অবস্থায় উক্ত প্রাণীর ছবি আঁকা, তা ব্যবহার করা, তার ঘরে রাখা এবং তা দিয়ে খেলাধুলা করা কোনটিই জায়েজ নয়। তাই বাচ্চাদের জন্য প্রাণীর পুতুল দিয়ে খেলা জায়েজ হবে না। চোখ-মুখ না থাকলে তথা প্রাণির অবস্থান পরিস্ফুটিত না হলে ব্যবহার করার সুযোগ আছে। যেমন হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ কাপড়ের পুতুল দিয়ে খেলেছিলেন। এসবের চোখ-কান তথা মুখের অবয়ব ছিল না।
হযরত আবু তালহা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ ঐ ঘরে ফেরেস্তা প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৯৪৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৭৭২}
হযরত আয়শা রাঃ বর্ণনা করেন। আমাদের একটা পর্দা ছিল। এতে পাখির ছবি ছিল। যখন কেউ ভিতরে আসত তখন এ ছবি তার সামনে পড়ত। রাসূল সাঃ আমাকে বললেনঃ এটি উল্টিয়ে দাও, কেননা, যখনই আমি ভিতরে আসি, আর এটা দেখি, দুনিয়ার কথা মনে পড়ে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৪৩}
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ সফর থেকে ফিরে আসলেন। আমি আমার দরজায় ডানাযুক্ত ঘোড়ার ছবি সম্বলিত একটি রেশমি পর্দা টানিয়ে রেখেছিলাম। রাসূল সাঃ আমাকে নির্দেশ দিলেন, এবং আমি তা সরিয়ে ফেললাম। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৪৫}
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ একদিন আমার কাছে আসলেন। আমি তখন ছবিযুক্ত একটি পর্দা টানাতে ব্যস্ত ছিলাম। তা দেখে তাঁর চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে গেল। অতঃপর পর্দাটা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেনঃ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি তাদের হবে যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য তৈরী করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং৫৬৪৭)
হযরত সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে এসে বলল, আমি চিত্রকর। এবং চিত্র অংকন করি। এতএব এ সম্পর্কে আমাকে শরীয়তের বিধান বলে দিন। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তাঁর কাছে গেল। তিনি পুনরায় বললেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তার এত কাছে গেল যে, ইবনে আব্বাস রা তাঁর হাত ঐ ব্যক্তির মাথার উপর রাখলেন, এবং বললেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনাচ্ছি, যা আমি রাসূল সাঃ এর কাছে শুনেছি। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, “সকল চিত্রকরই দোযখে যাবে। আর প্রত্যেক চিত্রের পরিবর্তে জীবিত এক ব্যক্তিকে বানানো হবে, যা দোযখে তাকে শাস্তি দেবে”। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, যদি তোমাকে এরূপ করতেই হয়, তাহলে গাছ-পালা বা এমন বস্তুর ছবি তৈরী কর যা প্রাণী নয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৬২}

#প্রাণীর ছবি ও মূর্তি কেবল সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ঘরে স্থাপন করা বৈধ কি?
ছবি ও মূর্তিতে যেহেতু পৌত্তলিকতা আছে, সেহেতু তা ঘরে ও রাস্তার মোড়ে স্থাপন করা বৈধ নয়। মূর্তি থেকেই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মূর্তিপূজা শুরু হয়েছে নূহ (আঃ) এর যুগে। তাই ইসলাম মূর্তি ও মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী। সে জন্যই শরিয়তের নির্দেশ হোল, “ কোন (বিচরণশীল প্রাণীর)  ছবি বা মূর্তি দেখলেই তা নিশ্চিহ্নকরে দেবে এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দেবে।” (মুসলিম ৯৬৯ নং )

রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “ কিয়ামতের  দিনে ছবি বা মূর্তি নির্মাতাদের সর্বাধিক কঠিন শাস্তি হবে” (বুখারি ৫৯৫০, মুসলিম ২১০৯) ।

সে ঘরে (রহমতের)  ফিরিশতা প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং সে ঘরেও নয়, যে ঘরে ছবি ও মূর্তি থাকে। (বুখারি ও মুসলিম )

Thursday, July 25, 2019

আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির জন্য দুয়া, দান, তার পক্ষ থেকে উমরাহ করা যাবে কি

প্রশ্ন: আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির জন্য দো‘আ, দান-ছাদাক্বা বা তার পক্ষ থেকে ওমরা ইত্যাদি করা যাবে কি?


উত্তর : করা যাবে। আত্মহত্যা করা জঘন্য অপরাধ হ’লেও এর কারণে সে কাফের হয়ে যায় না, বরং মুসলমানই থাকে। আর যেকোন মুসলমানের জন্য দান-খয়রাত ও দো‘আ করা যায়। জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় হিজরত করেন, তখন তুফায়েল বিন আমরের সঙ্গে অন্য আরেকজন লোকও হিজরত করে। মদীনার আবহাওয়া অনুকূলে না হওয়ায় অসহ্য হয়ে লোকটি স্বীয় হাতের আঙ্গুলসমূহের গিরা কেটে ফেলে। ফলে অধিক রক্ত ক্ষরণে সে মৃত্যুবরণ করে। তারপর তুফায়েল বিন আমর একদিন স্বপ্নযোগে লোকটিকে খুব ভাল অবস্থায় দেখেন। কিন্তু তার হাত দু’খানা ছিল আবৃত। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার হাত দু’টি আবৃত কেন? জবাবে সে বলল, মদীনায় হিজরত করার কারণে মহান আল্লাহ হাত দু’টি ছাড়া আমার সবকিছুই ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তুফায়েল স্বপ্নের ঘটনা নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে বললে তিনি আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন। ফলে তার হাত দু’টিও ভাল হয়ে যায় (মুসলিম হা/১১৬; ‘আত্মহত্যাকারী কাফের না হওয়া’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৩৪৫৬)।

উল্লেখ্য, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত অন্য হাদীছে এসেছে ‘কেউ আত্মহত্যা করলে সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে’ (মুসলিম হা/১০৯)। ছহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নববী (রহঃ) উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে خالدًا مخلدًا এর মর্ম হ’ল সুদীর্ঘকাল ও অধিককাল, চিরস্থায়ী নয় (মুসলিম শরহ নববী ২/১২৫, হা/১১৩-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। অর্থাৎ দীর্ঘকাল সে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে এবং পরে জান্নাতে যাবে। আর চিরস্থায়ী শাস্তি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে আত্মহত্যাকে হালাল বলে বিশ্বাস করে। এরূপ বিশ্বাস করার কারণে সে কাফের হয়ে যাবে। আর কাফের নিঃসন্দেহে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। অতএব উভয় হাদীছের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।

আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী?


যাবতীয় প্রশংসা আল্লহর। দুরুদ সালাম আল্লহর রসূল () এর উপর। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লহর নামে শুরু করছি।

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা একটি জঘন্য পাপ এবং কবীরা গুনাহ।এ কারণে,তার শাস্তিও অতি ভয়ানক। যেভাবেই সে আত্মহত্যা করুক না কেন।

আল্লাহ্ তাআলা বলেন:

«وَلَا تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا»

‘‘এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু’’ (নিসা : ২৯)

জুন্দাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

كَانَ بِرَجُلٍ جِرَاحٌ فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَقَالَ اللهُ: بَدَرَنِيْ عَبْدِيْ بِنَفْسِهِ، حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْـجَنَّةَ.

‘‘জনৈক ব্যক্তি গুরুতর আহত হলে সে তার ক্ষতগুলোর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করলো। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বললেন: আমার বান্দাহ্ স্বীয় জান কবযের ব্যাপারে তড়িঘড়ি করেছে অতএব আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিলাম’’ (বুখারী ১৩৬৪)

সাবিত্ বিন্ যাহ্হাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَيْءٍ فِيْ الدُّنْيَا عَذَّبَهُ اللهُ بِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ.

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন বস্ত্ত দিয়ে আত্মহত্যা করলো আল্লাহ্ তাআলা তাকে জাহান্নামে সে বস্ত্ত দিয়েই শাস্তি দিবেন’’

(বুখারী ১৩৬৩, ৬০৪৭, ৬১০৫, ৬৬৫২; মুসলিম ১১০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيْدَةٍ فَحَدِيْدَتُهُ فِيْ يَدِهِ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِيْ بَطْنِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا، وَمَنْ شَرِبَ سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَحَسَّاهُ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا، وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيْهَا أَبَدًا.

‘‘যে ব্যক্তি কোন লোহা বা লোহা জাতীয় বস্ত্ত দিয়ে আত্মহত্যা করলো সে লোহা বা লোহা জাতীয় বস্ত্তটি তার হাতেই থাকবে। তা দিয়ে সে জাহান্নামের আগুনে নিজ পেটে আঘাত করবে এবং তাতে সে চিরকাল থাকবে। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করলো সে জাহান্নামের আগুনে বিষ পান করতেই থাকবে এবং তাতে সে চিরকাল থাকবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করলো সে জাহান্নামের আগুনে লাফাতেই থাকবে এবং তাতে সে চিরকাল থাকবে’’ (বুখারী ৫৭৭৮; মুসলিম ১০৯)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الَّذِيْ يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِيْ النَّارِ، وَالَّذِيْ يَطْعَنُهَا يَطْعَنُهَا فِيْ النَّارِ.

‘‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলো সে জাহান্নামে গিয়ে এভাবেই করতে থাকবে এবং যে ব্যক্তি নিজকে বর্শা অথবা অন্য কোন কিছু দিয়ে আঘাত করে আত্মহত্যা করলো সেও জাহান্নামে গিয়ে এভাবেই করতে থাকবে’’ (বুখারী ১৩৬৫)

আত্মহত্যা জাহান্নামে যাওয়ার একটি বিশেষ কারণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে আগাম সংবাদ দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হুনাইন্ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। পথিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মুসলিম সম্পর্কে বললেন: ব্যক্তি জাহান্নামী। যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো তখন লোকটি এক ভয়ানক যুদ্ধে লিপ্ত হলো এবং সে তাতে প্রচুর ক্ষত-বিক্ষত হলো। জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্ রাসূল! যার সম্পর্কে আপনি ইতিপূর্বে বললেন: সে জাহান্নামী সে তো আজ এক ভয়ানক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে মৃত্যু বরণ করলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন: সে জাহান্নামী। তখন মুসলিমদের কেউ কেউ ব্যাপারে সন্দিহান হলো। এমতাবস্থায় সংবাদ এলো: সে মরেনি; সে এখনো জীবিত। তবে তার দেহে অনেকগুলো মারাত্মক ক্ষত রয়েছে। যখন রাত হলো তখন লোকটি আর ধৈর্য ধরতে না পেরে আত্মহত্যা করলো। ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ দেয়া হলে তিনি বলেন: আল্লাহ্ সুমহান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্ তাআলার বান্দাহ্ তাঁর প্রেরিত রাসূল। অতঃপর তিনি বিলাল (রাঃ) কে মর্মে ঘোষণা দিতে বললেন যে,

إِنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ إِلاَّ نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، وَإِنَّ اللهَ يُؤَيِّدُ هَذَا الدِّيْنَ بِالرَّجُلِ الْفَاجِرِ.

‘‘একমাত্র মুমিন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে আল্লাহ্ তাআলা কখনো কখনো কোন কোন গুনাহ্গার ব্যক্তির মাধ্যমেও ইসলামকে শক্তিশালী করে থাকেন’’ (মুসলিম ১১১)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عن أنس عن النبي صلى الله عليه و سلم قال يخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن شعيرة من خير ويخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن برة من خير ويخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن ذرة من خير

যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫)

সুতরাং আত্মহত্যাকারীও চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। অতএব, হাদিসে যে আত্মহত্যাকে চিরকাল জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। যেমন হাদিসে এসেছে,

ﻣَﻦْ ﺗَﺮَﺩَّﻯ ﻣِﻦْ ﺟَﺒَﻞٍ ﻓَﻘَﺘَﻞَﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓَﻬْﻮَ ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻳَﺘَﺮَﺩَّﻯ ﻓِﻴﻪِ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ، ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺤَﺴَّﻰ ﺳَﻤًّﺎ ﻓَﻘَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓَﺴَﻤُّﻪُ ﻓِﻰﻳَﺪِﻩِ ﻳَﺘَﺤَﺴَّﺎﻩُ ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ،ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﺤَﺪِﻳﺪَﺓٍ ﻓَﺤَﺪِﻳﺪَﺗُﻪُ ﻓِﻰ ﻳَﺪِﻩِ ﻳَﺠَﺄُ ﺑِﻬَﺎﻓِﻰ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﻓِﻰ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻣُﺨَﻠَّﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ

আবূ হুরাইরাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর  আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৪২)

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আহলুসসুন্নাহ ওয়ালজামাতের আলেমগণ বলেন,

.ইবনে খুজাইমা রহ. বলেন, কোরআন-হাদিসে মুমিনদের ব্যাপারে যত প্রকার শাস্তির বিবরণ এসেছে সবগুলো শর্তসাপেক্ষে। আর তা এই যে, বর্ণিত শাস্তি আল্লাহ চাইলে মাফ হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন,إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ  وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاءনিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। (সূরা নিসা-১১৬) সুতরাং আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত শাস্তিও আল্লাহ চাইলে কমিয়ে দিতে কিংবা মাফ করে দিতে পারেন। অন্যথায় আত্মহত্যাকারীর অপরাধটা এমনই যে, সে চিরকালের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত। (কিতাবুত তাওহিদ /৮৬৯)

. আরবের পরিভাষায় خالدا مخلداশব্দ, যার অনুবাদ করা হয়, ‘চিরকাল মূলত এর দ্বারা আরবের লোকেরা কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থাকে বুঝিয়ে থাকেন। উক্ত হাদীসেও উদ্দেশ্যও দীর্ঘস্থায়ী হওয়া। চিরস্থায়ী হওয়া নয়। (আজইবা মুফিদাহ, সুওয়াল নং ৩১১৭৪)

. হাদীসে যে বলা হয়েছে আত্মহত্যাকারী চিরদিন জাহান্নামে থাকবে, তা ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যে হালাল মনে করে আত্মহত্যা করেছে। কেননা আহলুসসুন্নাহ ওয়ালজামাতের নিকট যে কবিরা গোনাহকে বৈধ মনে করে সে কাফের হয়ে যাবে। আর কাফের তো চিরদিন জাহান্নামে থাকবে এতে কোন সন্দেহ নাই।(আদ্দুররুল মুখতার /১২৫)

তারপরও যে জিনিসটি আমাদের বুঝতে হবে, আত্মহত্যা একটি কবীরা গুনাহ এবং কোন কবীরা গুনাহই কিন্ত শির্ক বা কুফরের সমান পাপ নয়।

আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত,মুসনাদে আহমাদে এসেছে যে,"আল্লাহ বলেছেনঃ

'হে আমার বান্দারা,তোমরা পৃথিবীপূর্ণ পাপ নিয়েও যদি আমার সাথে সাক্ষাত করতে আস,আমি পৃথিবীপূর্ণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সাথে সাক্ষাত করব শুধু এই শর্তে যে,তুমি আমার সাথে কখনো শির্ক করো নি।'"

অতএব, কোন মুসলিম যদি আত্মহত্যা করেন,তাহলে তার ভাগ্য solely আল্লহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। যদি তিনি চান, ব্যক্তিকে মাফ করে দিতে পারেন,তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন, আবার চাইলে তাঁকে শাস্তিও দিতে পারেন। আর সর্বশেষ কথা হলো যে, আমরা কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলার ক্ষমতা রাখিনা। এটা মহান আল্লহ কাল কিয়ামতের দিন নির্ধারন করবেন। তাই এই বিষয়টা মহান আল্লহর উপর ছেড়ে দেওয়াই সর্বোত্তম।

সর্বোপরি মহান আল্লহই সবচেয়ে ভাল জানেন।



বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...