প্রশ্ন: কোরবানীর পশু জবাই করার সময় পড়তে পারি এমন কোন সুনির্দিষ্ট দোয়া আছে কি?
উত্তরঃ যবেহকালে আল্লাহর নাম নেওয়া (‘বিসমিল্লাহ’ বলা) ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘যদি তোমরা তাঁর নিদর্শনসমূহের বিশ্বাসী হও তবে যাতে (যে পশুর যবেহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা আহার কর।’’ (কুঃ ৬/১১৮) ‘‘এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা হতে তোমরা আহার করো না; উহা অবশ্যই পাপ।’’ (কুঃ ৬/১২১)
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যা খুন বহায় এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা ভক্ষণ কর।’’[বুখারী ২৩৫৬, মুসলিম ১৯৬৮নং]
‘বিসমিল্লাহ’র সাথে ‘আল্লাহু আকবার’ যুক্ত করা মুস্তাহাব। অবশ্য এর সঙ্গে কবুল করার দুআ ছাড়া অন্য কিছু অতিরিক্ত করা বিধেয় নয়। অতএব (কুরবানী কেবল নিজের তরফ থেকে হলে) বলবে,
بِسْمِ اللّٰهِ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ اللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ اللّٰهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّيْ
‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিংকা ওয়ালাক, আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী।’ [তিরমিযী ৫/৮২, নং ২৭৪১; আহমাদ ৪/৪০০, নং ১৯৫৮৬; আবু দাউদ, ৪/৩০৮, নং ৫০৪০। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ২/৩৫৪।]
بِسْمِ اللّٰهِ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ اللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ اللّٰهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّيْ
‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিংকা ওয়ালাক, আল্লাহুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী।’ [তিরমিযী ৫/৮২, নং ২৭৪১; আহমাদ ৪/৪০০, নং ১৯৫৮৬; আবু দাউদ, ৪/৩০৮, নং ৫০৪০। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ২/৩৫৪।]
নিজের এবং পরিবারের তরফ থেকে হলে বলবে,‘---তাক্বাববাল মিন্নী ওয়ামিন আহলি বাইতী।’ অপরের নামে হলে বলবে, ‘---তাক্বাববাল মিন (এখানে যার তরফ থেকে কুরবানী তার নাম নেবে) [মানাসিকুল হাজ্জ, আলবানী ৩৬পৃঃ]
এই সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করা বিধেয় নয়; বরং তা বিদআত। [আল-মুমতে ৭/৪৯২]
যেমন ‘বিসমিল্লাহ’র সাথে ‘আর-রহমানির রহীম’ যোগ করাও সুন্নত নয়। যেহেতু এ সম্বন্ধে কোন দলীল নেই। যেমন যবেহ করার লম্বা দুআ ‘ইন্নী অজ্জাহ্তু’ এর হাদীস যয়ীফ। [যয়ীফ আবূ দাঊদ ৫৯৭নং]
বাংলায় এভাবে বলা যেতে পারেঃ
বিসমিল্লাহ। আল্লহু আকবার। হে আল্লাহ্, এটি আপনার পক্ষ থেকে; আপনারই জন্য। এটি আমার পক্ষ থেকে উৎসর্গিত (আর অপরের পক্ষ থেকে হলে বলবে: অমুকের পক্ষ থেকে)। হে আল্লাহ্, অমুকের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কবুল করুন।
বিসমিল্লাহ। আল্লহু আকবার। হে আল্লাহ্, এটি আপনার পক্ষ থেকে; আপনারই জন্য। এটি আমার পক্ষ থেকে উৎসর্গিত (আর অপরের পক্ষ থেকে হলে বলবে: অমুকের পক্ষ থেকে)। হে আল্লাহ্, অমুকের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কবুল করুন।
এই দোয়ার মধ্যে শুধু ‘বিসমিল্লাহ্’ বলা ওয়াজিব। বিসমিল্লাহ্ এর অতিরিক্ত যে কথাগুলো আছে সেগুলো বলা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়।
ইমাম বুখারী (৫৫৬৫) ও ইমাম মুসলিম (১৯৬৬) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকালো ডোরাকাটা লম্বা শিংওয়ালা দুইটি দুম্বা দিয়ে কোরবানী দিয়েছেন। তিনি দুম্বার ঘাড়ের পার্শ্বদেশের উপর পা রেখে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিজ হাতে জবাই করেছেন।”
সহিহ মুসলিমে (১৯৬৭) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি লম্বা শিংওয়ালা দুম্বা আনার নির্দেশ দিলেন। কোরবানী করার জন্য দুম্বাটি আনা হল। তখন তিনি আয়েশাকে বললেন: আয়েশা, ছুরিটি নিয়ে আস। এরপর বললেন: পাথর দিয়ে ছুরিটি ধার দাও। আয়েশা ধার দিলেন। এরপর তিনি ছুরিটি নিলেন এবং দুম্বাটিকে ধরে শোয়ালেন। এরপর ‘বিস্মিল্লাহ্; আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন মুহাম্মদ, ওয়া আলে মুহাম্মদ, ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মদ’ বলে পশুটিকে জবাই্ করা শুরু করলেন এবং কোরবানী দিলেন”।
ইমাম তিরমিযি (১৫২১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। তিনি খোতবা শেষ করে মিম্বর থেকে নেমে আসলেন। এরপর দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে পশুটিকে জবাই্ করলেন। তিনি বললেন: বিসমিল্লাহ্, ওয়া আল্লাহু আকবার, হাযা আন্নি ওয়া আম্মান লাম ইউযাহ্হি মিন উম্মাতি’ (অর্থ- আল্লাহ্র নামে শুরু করছি। আল্লাহ্ই মহান। এটি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মধ্যে যারা কোরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে)।[আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
কোন কোন রেওয়ায়েতে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা মিনকা ওয়া লাকা’ (হে আল্লাহ্, এটি আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনারই জন্য) অতিরিক্ত এসেছে।[দেখুন: ইরওয়াউল গালিল (১১৩৮ ও ১১৫২)]
“আল্লাহুম্মা মিনকা” (অর্থ- হে আল্লাহ্, এটি আপনার পক্ষ থেকে): এ কথার অর্থ হচ্ছে এ কোরবানীর পশুটি আপনারই দান। এ রিযিক আপনার পক্ষ থেকে আমার কাছে পৌঁছেছে।
“ওয়া লাক” (অর্থ- আপনার জন্য): এ কথার অর্থ হচ্ছে- এটি একনিষ্ঠভাবে আপনারই জন্য।[দেখুন: ‘আল-শারহুল মুমতি’ (৭/৪৯২)]
No comments:
Post a Comment