প্রশঃ- ফরয সলাতের ইকামত হয়ে গেলে কি অন্য কোন সুন্নত বা নফল পড়া যাবে?
উত্তর: ফরজ নামাজের ইকামত হয়ে গেলে কোন সুন্নাত নেই।
ফযরের নামাযের সময় মসজিদে অনেককে দেখা যায়, আযানের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেছে অথবা জামাতে নামায পড়ানো হচ্ছে, আর তারা সুন্নত নামায পড়ছেন। অনেকের স্পর্ধা এতো বেশি যে, মসজিদে এসে দেখে ইমাম সাহেব ফরয নামায পড়াচ্ছেন, আর তারা জামাতে শরীক না হয়ে আলাদা সুন্নত পড়া শুরু করে?
নামায কি নিজের ইচ্ছামতো পড়লে কবুল হবে নাকি, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর তরীকা মোতাবেক পড়লে কবুল হবে??
ফরয নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে অন্য কোনো নফল বা সুন্নত নামায সম্পূর্ণ হারাম, সুন্নত বিরোধী!!
ফরয সলাতের একামত হয়ে গেলে জামায়াতে শরীক হওয়া ছাড়া অন্য কোন ধরণের সলাত পড়া যাবে না। কারণ, এ ব্যাপারে রসূল স. এর স্পষ্ট হাদীস হল:
إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة"
''যখন ফরয সলাতের ইকামত হয়ে যায় তখন ফরয ছাড়া অন্য কোন সলাত নেই।'' (মুসলিম, হাদীস নং- ১৫৩১, আবুদাউদ, তিরমিযী, নাসাই ও ইবনে মাজাহ)
সুতরাং আমাদের দেশে ফজর এর ফরয সলাতের ইকামত হয়ে গেলেও অনেকে সুন্নত পড়া শুরু করে এটা উক্ত হাদীসের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।
''যখন ফরয সলাতের ইকামত হয়ে যায় তখন ফরয ছাড়া অন্য কোন সলাত নেই।'' (মুসলিম, হাদীস নং- ১৫৩১, আবুদাউদ, তিরমিযী, নাসাই ও ইবনে মাজাহ)
সুতরাং আমাদের দেশে ফজর এর ফরয সলাতের ইকামত হয়ে গেলেও অনেকে সুন্নত পড়া শুরু করে এটা উক্ত হাদীসের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।
#উক্ত সলাত কাযা করার দুটি সময় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ফজরের পর কোন নফল পড়া নিষিদ্ধ হলেও ফজরের আগে ছুটে যাওয়া সুন্নতকে ফরযের পর পড়া যায়। আর এটি হল ব্যতিক্রম সলাত। একদা এক ব্যক্তি মসজিদে এসে দেখল আল্লহর নাবী (সাঃ) ফজরের ফরয পড়ছেন। সে সুন্নত না পড়ে জামাআতে শামিল হয়ে গেল। অতঃপর জামাআত শেষে উঠে ফজরের ছুটে যাওয়া দুই রাকআত সুন্নত আদায় করল। নাবী (সাঃ) তার কাছে এসে বললেন, “এটি আবার কোন্ সলাত? (ফজরের সলাত কি দুইবার?)” লোকটি বলল, ‘ফজরের দুই রাকআত সুন্নত ছুটে গিয়েছিল।’ এ কথা শুনে তিনি আর কিছুই বললেন না (চুপ থাকলেন)। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১২৬৭, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১১৫৪, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ)
আর এক হাদীসে নাবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের ২ রাকআত (সুন্নত) না পড়ে থাকে, সে যেন তা সূর্য ওঠার পর পড়ে নেয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৮৩, জামে ৬৫৪২নং)
এখন যদি কেউ বলে “আমি হানাফী মাযহাবের আর আমার মাযহাবে আছে ফযরের সুন্নত পড়া যাবে”।
আমি বলবো, আপনি আসল হানাফী মাযহাব অনুসরণ করছেন না, আপনি আসলে “হানাফী মাযহাব” নাম দিয়ে অন্য কারো মাযহাব অনুসরণ করছেন!!
কারণ ইমাম আবু হানীফা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, “ইযা সাহহাল হাদীস, ফাহুয়া মাযহাবি” – জেনে রাখো যখন কোনো সহীহ হাদীস পাবে সেইটাই আমার মাযহাব।
এখন, সহীহ হাদীস মোতাবেক ফরয নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে আর কোনো সুন্নত নামায চলবেনা – সুতরাং ইমাম আবু হানীফার মাযহাবও সেটাই হবে। আর আপনি উলটা কাজ করে “হানাফী মাযহাব” হওয়ার দাবী করবেন, আপনি নিজেই বিবেচনা করুন আপনি কতটুকু সত্যিকারে হানাফী মাযহাব অনুসরণ করছেন? কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তার জন্য দুঃখিত। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সুন্নত জানানো।
বিঃদ্রঃ অনেকে মনে করেন, ফযরের সুন্নত নামায আগে না পড়লে, ফরয বাদে আর পড়া যাবেনা। এধারণাটা ঠিকনা!! যদি ফযরের ফরয নামাযের পর ওয়াক্ত থাকে তাহলে সুন্নত পড়া যাবে। আর ওয়াক্ত না থাকলে সূর্য ওঠার পর পড়া যাবে।
কায়েস বিন আ’মর (রাঃ) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) (ফযরের নামাযের জন্য) বের হয়ে আসলেন আর ইকামত দেয়া হলো। আমি তাঁর (সাঃ) সাথে ফযরের নামায পড়লাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামায শেষ করে দেখলেন আমি নামায পড়ছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, ধীরে কায়েস! দুই রাকাত এক সাথেই? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি ফযরের আগে দুই রাকাত পড়িনাই। তখন রাসুলুল্লাহ “না, তাহলে পরে ঠিক আছে”।
আবু দাউদের বর্ণনায় আছে, “অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নীরব থাকলেন”।
সুনানে আত-তিরমিযী ৪২২, আবু দাউদ ১২৬৭।
এই হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে, ফযরের নামাযের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায পড়তে না পারলে, ফরয নামাযের পরেও পড়া যাবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চুপ থাকা মানে তিনি নীরব থেকে কায়েস (রাঃ) কে মৌন সম্মতি দিলেন। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৌন সম্মতি মানে হলো – সুন্নাহ।
আল্লাহ আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ মেনে জীবন পরিচালনা করার তোওফিক দান করুন, আমীন ইয়া রাব্বুল আ’লামীন।
***মসজিদে যেকোনো নামাযের আগে লক্ষ্য করবেন কতটুকু সময় বাকি আছে, ২-১ মিনিট সময় যাতে করে অন্তত ২ রাকাত পড়া যাবেনা, তাহলে সুন্নত নামায শুরু করবেন না। সুন্নত পড়া শুরু করবেন যদি এতটুকু সময় হাতে থাকে যে ২ রাকাত শেষ করতে পারবেন। আর কখনো যদি এমন হয় সুন্নত পড়া অবস্থায় ইকামত দেওয়া শুরু করলঠা আপনি ২য় রাকাতে আছেন, একটু সময় নিলেই নামায পূর্ণ করে ফেলতে পারবেন তাহলে দ্রুত নামায পূর্ণ করে সালাম ফেরাবেন। আর যদি ১ম রাকাতে থাকেন তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবেন।
No comments:
Post a Comment