Sunday, June 30, 2019

স্ত্রীর উপর রেগে থাকলে স্ত্রীর ইবাদাত কবুল হয় না

কিছু নামাযী আছে, যারা নামায তো পড়ে; কিন্তু তাদের নামায আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে কবুল ও গৃহীত হয় না। নামাযী অথবা নামাযের অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হন না। এমন কতকগুলি নামাযী নিম্নরুপ:-

১। পলাতক ক্রীতদাস-

২। এমন স্ত্রী, যার স্বামী তার উপর রাগ করে আছে। স্ত্রী স্বামীকে সর্বদা খোশ রাখবে, তার (ভালো কথা ও কাজে) আনুগত্য করবে, তার সব কথা মেনে চলবে, যৌনসুখ দিয়ে তাকে সর্বদা তৃপ্ত রাখবে, কোন বিষয়ে রাগ হলে তা সত্বর মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সব কিছুতে তাকে সন্তুষ্ট রাখবে -এটাই হল স্ত্রীর ধর্ম। মহানবী (সাঃ) বলেন, তোমাদের (সেই) স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে, যে স্ত্রী অধিক প্রণয়িণী, সন্তানদাত্রী, বারবার ভুল করে বারবার স্বামীর নিকট আত্মসমর্পণকারিণী, যার স্বামী রাগ করলে সে তার নিকট এসে তার হাতে হাত রেখে বলে, আপনি রাজী (ঠান্ডা) না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৮৭ নং)

কিন্তু এমন বহু মহিলা আছে, যারা তাদের স্বামীর খেয়ে-পরেও এমন রাগ-রোষকে পরোয়া করে না। নারী-স্বাধীনতার পক্ষপাতিনী স্বামীর সংসারেও পরম স্বাধীনতা-সুখ ভোগ করতে গিয়ে স্বামীকে নারাজ রাখে। ফলে বিশ্বস্বামীও নারাজ হন এবং সেই স্ত্রীর শয্যাসঙ্গী স্বামীকে খোশ করার আগে নামায পড়লেও সে নামাযে তিনি খোশ হন না। কারণ, ‘হুকূকুল ইবাদ’ আদায় না করা পর্যন্ত মহান আল্লাহ বান্দার তাওবাতে সন্তুষ্ট হন না। যার প্রতি অন্যায় করা হয়, তার নিকট আগে ক্ষমা পেলে তবেই মহান আল্লাহ ক্ষমা করেন। নচেৎ না।

সকল ধর্মই সত্য!

❌হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ ❌

দীন শব্দের অর্থ জীবনব্যবস্থা আর কাইয়্যেমাহ শব্দটি এসেছে কায়েম থেকে যার অর্থ প্রতিষ্ঠিত, আদি, শাশ্বত, চিরন্তন। যা ছিল, আছে, থাকবে। সনাতন শব্দের অর্থও আদি, শাশ্বত, চিরন্তন। এই হিসাবে আমরা বলতে পারি, স্রষ্টার প্রেরিত সকল ধর্মই সনাতন ধর্ম। সুতরাং সকল ধর্মের অনুসারীরাই একে অপরের ভাই।(হেযবুত তওহীদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ‘সকল ধর্মের মর্মকথা সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ প্রবন্ধ)
(বই-সকল ধর্মের মর্মকথা সবার ঊর্ধ্বে মানবতাঃপৃষ্ঠা- ৩-৪)
মানবসমাজে একটি ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, ‘পৃথিবীতে এতগুলো ধর্মের মধ্যে মাত্র একটি ধর্ম সত্য হতে পারে (!) অন্য সকল ধর্ম মিথ্যা এবং ঐ সত্য ধর্মই কেবল মানুষকে মুক্তি দিতে সক্ষম।’ এ ধারণা প্রচলিত থাকায় সকল ধর্মের অনুসারীরাই দাবি করে যে, কেবল তাদের ধর্মই সত্যধর্ম। এটা ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মেনে চলে স্বর্গে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো- স্রষ্টা প্রদত্ত সকল ধর্মই সত্যধর্ম। এগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর যে কোনোটি মানুষ মেনে চলতে পারে। তবে মানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে।(হেযবুত তওহীদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ‘মানবসমাজে ধর্ম-অধর্ম ও শান্তি-অশান্তির চিরন্তন দ্বন্দ্ব’ প্রবন্ধ)

কুরআন স্পষ্টভাবে ইসলাম ব্যতীত অন্য যেকোন ধর্মকে সত্য হওয়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছে ।
আল্লহ তা’য়ালা কুরআন মাজীদে বলেনঃ
◾اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰہِ الۡاِسۡلَامُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।(সূরা আল ইমরান-১৯)
◾الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সূরা মায়েদা-৩)
◾ﺃَﻓَﻐَﻴْﺮَ ﺩِﻳﻦِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻪُ ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﻭَﻛَﺮْﻫًﺎ ﻭَﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻳُﺮْﺟَﻌُﻮﻥَ
তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।
(সূরা আল ইমরান- ৮৩)
◾ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺒْﺘَﻎِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺩِﻳﻨًﺎ ﻓَﻠَﻦْ ﻳُﻘْﺒَﻞَ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮِﻳﻦَ
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।(সূরা আল ইমরান-৮৫)
◾یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تُطِیۡعُوۡا فَرِیۡقًا مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ یَرُدُّوۡکُمۡ بَعۡدَ اِیۡمَانِکُمۡ کٰفِرِیۡنَ ﴿۱۰۰﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আহলে কিতাবদের কোন ফেরকার কথা মান, তাহলে ঈমান আনার পর তারা তোমাদিগকে কাফেরে পরিণত করে দেবে।(সূরা আল ইমরান-১০০)
উপরোক্ত আয়াত গুলো দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে আল্লহ সুবাহানাহু ওয়া তা’য়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।
মানবরচিত অন্যান্য ধর্মকে সত্যায়ন করে হিযবুত তাওহীদ স্পষ্টভাবে কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
অন্য ধর্ম অনুসরণ করে নাজাত পাওয়ার জন্য হিযবুত তাওহীদ শর্তারোপ করে বলেছে,”তবে মানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে”।
আমরা জানি কোন ধর্ম অনুসরণ করা হয় সেই ধর্মের ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে ।
ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা নিজেদের ‘তাওরাত ও ইঞ্জিল’ এ দুটি আসমানী কিতাব এর অনুসারী বলে দাবি করে।কিন্তু তারা সত্যিকার আসমানী কিতাবের অনুসারী নয়।বরং তারা তাদের কিতাবকে বিকৃত করে ফেলেছে ।
চলুন দেখে নেই এ ব্যপারে কুরআন হাদীসের বক্তব্য কি
#কুরআনের_বক্তব্যঃ
◾فَوَیۡلٌ لِّلَّذِیۡنَ یَکۡتُبُوۡنَ الۡکِتٰبَ بِاَیۡدِیۡہِمۡ ٭ ثُمَّ یَقُوۡلُوۡنَ ہٰذَا مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ لِیَشۡتَرُوۡا بِہٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ فَوَیۡلٌ لَّہُمۡ مِّمَّا کَتَبَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ وَیۡلٌ لَّہُمۡ مِّمَّا یَکۡسِبُوۡنَ
অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং বলে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে। অতএব তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের জন্যে।(সূরা বাকারাহ-৭৯)
◾مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ أَخْبَرَنَا ابْنُ شِهَابٍ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ قَالَ كَيْفَ تَسْأَلُونَ أَهْلَ الْكِتَابِ عَنْ شَيْءٍ وَكِتَابُكُمْ الَّذِي أُنْزِلَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَحْدَثُ تَقْرَءُونَهُ مَحْضًا لَمْ يُشَبْ وَقَدْ حَدَّثَكُمْ أَنَّ أَهْلَ الْكِتَابِ بَدَّلُوا كِتَابَ اللهِ وَغَيَّرُوهُ وَكَتَبُوا بِأَيْدِيهِمْ الْكِتَابَ وَقَالُوا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أَلاَ يَنْهَاكُمْ مَا جَاءَكُمْ مِنْ الْعِلْمِ عَنْ مَسْأَلَتِهِمْ لاَ وَاللهِ مَا رَأَيْنَا مِنْهُمْ رَجُلاً يَسْأَلُكُمْ عَنْ الَّذِي أُنْزِلَ عَلَيْكُمْ
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, তোমরা কিভাবে আহলে কিতাবদেরকে কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর? অথচ তোমাদের কিতাব (আল-কুরআন) তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এখন অবতীর্ণ হয়েছে, তা তোমরা পড়ছ যা পূত-পবিত্র ও নির্ভেজাল। এ কিতাব তোমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে, আহলে কিতাবরা আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তিত ও বিকৃত করে দিয়েছে। তারা নিজ হাতে কিতাব লিখে তা আল্লাহর কিতাব বলে ঘোষণা দিয়েছে, যাতে এর দ্বারা সামান্য সুবিধা লাভ করতে পারে। তোমাদের কাছে যে ইল্ম আছে তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কোন মাসআলা জিজ্ঞেস করতে নিষেধ করছে না? আল্লাহর কসম! আমরা তো তাদের কাউকে দেখিনি কখনো তোমাদের উপর নাযিল করা কিতাব সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে। (সহীহ বুখারী,ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬০)
উক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হল বর্তমানে প্রচলিত তাওরাত ও ইঞ্জিল বিকৃত করা হয়েছে ।
এছাড়াও বেদে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন শ্লোক যা হিন্দু পণ্ডিতরাই স্বীকার করেন। তারা এও বলে যে তাদের ধর্মগ্রন্থে অনেক কিছু যোগ বিয়োগ করা হয়েছে।
সুতরাং যাদের ধর্মগ্রন্থই বিকৃত,তাদের ধর্ম যে মানবরচিত মিথ্যা ধর্ম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পক্ষান্তরে কুরআন মাজীদ সম্পর্কে আল্লহ সুবাহানাহু ওয়া তা’য়ালার স্পষ্ট ঘোষণাঃ
◾اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَ اِنَّا لَہٗ لَحٰفِظُوۡنَ
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।(সূরা হিজর-৯)
তাই একথাই প্রতিয়মাণ হয় যে পৃথিবীর বুকে একমাত্র সত্যধর্ম হল ইসলাম।ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন আল্লহ তা’য়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।
যারা কুরআনের এমন সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারা কখনও হিযবুত তাওহীদ বা তাওহীদের দল হতে পারে না।বরং তাদের এই বক্তব্য স্পষ্ট কুফরের দিকে আহ্বান ।
হে হিযবুত তাওহীদের সমর্থক ভাই/বোনেরা!
একবারো ভেবে দেখেছেন কি ,তারা আপনাকে তাওহীদের চমকপ্রদ আহ্বানের অন্তরালে কুফরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কিনা?
আপনার সমীপে কুরআনের একটি আয়াত তুলে ধরছি।আশা করি আপনি আপনার মেধার যথাযথ প্রয়োগ করবেন।
আল্লহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ
الَّذِیۡنَ یَسۡتَمِعُوۡنَ الۡقَوۡلَ فَیَتَّبِعُوۡنَ اَحۡسَنَہٗ ؕ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ ہَدٰىہُمُ اللّٰہُ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمۡ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ
যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।(সূরা যুমার-১৮)

Saturday, June 29, 2019

কুরআন সর্বপ্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন কে

পবিত্র কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন কে? 
এমন প্রশ্নে অবাক হতে পারেন অনেকেই। এর কারণ হচ্ছে সকলেই জানেন যে, বাবু গিরিশচন্দ্র সেন কুরআনের প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেছেন। এ তথ্য অনেক বই-পুস্তকে পাওয়া যায়। অনেকে বিভিন্ন সভাসমাবেশ, সেমিনারেও এতথ্য পরিবেশন করে বিভ্রান্তি ছড়ান। এমনকি পাঠ্যপুস্তকেও দুঃখজনকভাবে এতথ্য পাওয়া যায়। শুধু কি তাই? সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত গিরিশচন্দ্র সেনের জীবনী বিষয়ক পুস্তিকাতেও তাঁকে কুরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য এটা নয়। 
সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় কুরআন আংশিক অনুবাদ করেন মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া ১৮০৮ সালে। এরপর বাংলা ভাষায় কুরআন পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন মৌলভী নঈমুদ্দীন ১৮৩৬ সালে। গিরিশচন্দ্র সেন শুধু উক্ত অনুবাদ পুস্তক আকারে সন্নিবেশ করেন। তাই গিরিশচন্দ্র সেন হচ্ছেন প্রকাশক মাত্র। তাও ৫০ বছরপর ১৮৮৬ সালে। সুতরাং কুরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক গিরিশচন্দ্র সেন নন। বরং মৌলভী নঈমুদ্দীনই পূর্ণাঙ্গ কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক। আর মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া হলেন বাংলভাষায় প্রথম কুরআনের আংশিক অনুবাদক।
উল্লেখ্য, গিরিশচন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৩৫ এবং মৃত্যু ১৯১০ সালে। গিরিশচন্দ্রের জন্মেরও আগে অর্থাৎ ১৮০৮ সালে কুরআন বাংলায় অনুবাদের কাজ শুরু করেন মাওলানা আমীর উদ্দীন বসুনিয়া। এরপর গিরিশচন্দ্র সেনের জন্মের এক বছর পরই অর্থাৎ ১৮৩৬ সনে মৌলভী নঈমুদ্দীন পূর্ণাঙ্গ কুরআনের বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করেন। মৌলভী নাঈমউদ্দীন সম্পর্কে তাঁর ছেলে মৌলভী রোকনউদ্দীন আহমদ তাঁদের কুরসিনামা থেকে যেসব তথ্য পরিবেশন করেছেন তাতে দেখা যায়: তাঁদের পূর্বপুরুষ শাহ সৈয়দ মুহাম্মদ খালেদ বাগদাদ থেকে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমন্ত্রণে দিল্লী আসেন। তাঁর অধঃস্তন পঞ্চমপুরুষ সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের দিল্লী থেকে শিক্ষকতার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। এরপর বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং মানিকগঞ্জের গালা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধররা ‘সৈয়দ’ উপাধি পরিত্যাগ করেন এবং গালা গ্রাম থেকে টাঙ্গাইলের করটিয়ার কাছে সুরুজ গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। মৌলভী মুহাম্মদ নঈমউদ্দীন সুরুজ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সলিমউদ্দীন এবং মাতা তাহেরা বানু।
পিতার কাছ থেকে আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষা শিক্ষা লাভের পর উচ্চশিক্ষার জন্য নঈমউদ্দীন ঢাকা চলে আসেন এবং আট বছর কাল এক বিশিষ্ট আলেমের তত্ত্বাবধানে থেকে আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় এবং হাদিস, তাফসির, ফিকাহ ও মান্তেক প্রভৃতি শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। এরপর তিনি বিহার, এলাহাবাদ, মুর্শিদাবাদ, জৌনপুর, আগ্রা, দিল্লি প্রভৃতি স্থানে অবস্থান করেন। এসব স্থানের খ্যাতনামা আলেমদের কাছ থেকে অগাধ দীনিইলম আয়ত্ত করেন। তিনি তাঁর সর্বশেষ উস্তাদের কাছ থেকে আলিম-উদ-দহর বা জ্ঞানসমুদ্র উপাধি লাভ করে ৪১ বছর বয়সে টাঙ্গাইলে ফিরে আসেন। সত্যিকার অর্থেই তিনি ছিলেন  জ্ঞানসুমদ্র। সেসময় হিন্দুসমাজে যেমন ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মুসলিম সমাজে তেমনই ছিলেন মৌলভী মুহাম্মদ নঈমউদ্দীন। 
মৌলভী নঈমউদ্দীনের অর্থসম্পদ ছিল না ঠিক। তবে ছিল জ্ঞান এবং সমাজসেবা করবার মতো তাঁর বিশাল হৃদয়। সেকালের করটিয়ার প্রখ্যাত জমিদার হাফেজ মাহমুদ আলী খান পন্নী তাঁকে সহযোগিতা করবার জন্য এগিয়ে আসেন। করটিয়ায় তিনি স্থাপন করেছিলেন ‘হাফেজ মাহমুদিয়া যন্ত্র’ নামে একটি প্রিন্টিং প্রেস। এ প্রেস তিনি তাঁকে ব্যবহার ও পরিচালনা করতে দিয়েছিলেন। এখান থেকে মৌলভী নঈমউদ্দীন ‘আখবারে এসলামিয়া’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এতে ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে ফিচার ও মুসলিমজাহানের বিশেষ খবরাদি ছাপা হতো। এর প্রতিসংখ্যার সম্পাদকীয় কলামটি ছিল খুব আকর্ষণীয়। তাঁর সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলো পাঠকসমাজে দারুণ সাড়া জাগায়। ‘আখবারে ইসলামমিয়া’ মুসলিম সম্পাদিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল উল্লেখযোগ্য। তৎকালে কোলকাতা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে চলতো এ পত্রিকা।
মীর মশাররফ হোসেন এবং মৌলভী নঈমউদ্দীন ছিলেন সেসময়ের দু’জন বিশাল ব্যক্তিত্ব। চিন্তাচেতনা ও জীবনদর্শনের কারণে পৃথক দু’টি ধারায় সাহিত্য রচনা করেন তাঁরা। বলতে গেলে দু’জন ছিলেন দুই দিগন্তের অধিবাসী। মীর মশাররফ হোসেনের ‘গোজীবন’ নামে ৬৬ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশিত হলে এর কঠোর সমালোচনা করে নঈমউদ্দীন আখবারে এসলামিয়াতে ফতোয়া প্রকাশ করেন। এতে আখবারে এসলামিয়া সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেনের মধ্যে কলমযুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ শুধু টাঙ্গাইল-করটিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বাংলা ভারতের বিভিন্ন স্থানে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তখনকার বিখ্যাত পত্রিকা ‘সুধাকর’ মীর মশাররফ হোসেনকে সমর্থন করেনি। এ বিরোধের কথা উল্লেখ করে মুন্সী মুহাম্মদ রেয়াজুদ্দীন আহমদ বলেন :
‘যখন প্রধান সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন ‘গোজীবন’ নামক পুস্তক লিখিয়া মুসলমানদিগের গোমাংস ভক্ষণ ও গো কুরবানির বিরুদ্ধে অন্যায় দোষারোপ করিয়া তীব্র মন্তব্য প্রকাশ করেন এবং তদুত্তরে অন্যতম সাহিত্যিক ও ধর্মগ্রন্থ প্রণেতা আখবারে এসলানিয়ার সম্পাদক মৌলভী নঈমউদ্দীন সাহেব ঐরূপ গ্রন্থলেখক মুসলমানের ওপর কাফেরী ফতোয়া দিয়া আখবারে এসলামিয়াতে তা প্রকাশ করিলে মীর সাহেব মৌলবী সাহেবের নামে আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করেন। তখন আমরা সুধাকরে অবশ্যই মৌলভী সাহেবের পক্ষ সমর্থন করিতেছিলাম। কিন্তু প-িত (রেয়াজুদ্দীন আহমদ মাশহাদী) সাহেবও এ বিষয়ে আমাদিগকে বিশেষভাবে উজ্জীবিত করিয়া ধর্মের পবিত্র মর্যাদা রক্ষা করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন। তিনি বিপন্ন মৌলভী সাহেবকে নানাপ্রকার সাহায্য করিতে কুণ্ঠিত ছিলেন না। এ ক্ষেত্রে মীর সাহেবের দিকে তিনি আদৌ দৃকপাত করেন নাই।’
মৌলভী নঈমউদ্দীন মীর মশাররফ হোসেনকে কাফের ফতোয়া দিলে টাঙ্গাইল থেকে মীর মশাররফ হোসেন সাহেবের সম্পাদনায় পাক্ষিক হিতকরীতেও বাদানুবাদ শুরু হয় এবং তা দীর্ঘকাল চলে। তারপর পন্ডিত রেয়াজুদ্দীন আহমদ মাশহাদীর চেষ্টাতে শেষপর্যন্ত উভয় পক্ষের একটা মিটমাট হয়ে যায়। মীর সাহেব ‘গৌজীবন’ পুনঃমুদ্রিত করবেন না বলে আশ্বাস দিলে মৌলভী সাহেব তাঁর তারিফ করেন। আদর্শের দিক থেকে দুই সাহিত্যেকের মধ্যে কলমযুদ্ধ হলেও ব্যক্তিজীবনে তাঁদের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল প্রচুর। প্রায়ই তাঁরা একত্র মিলিত হয়ে পারিবারিক সুখ-দুঃখ থেকে মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন।
মৌলভী নঈমউদ্দীনের জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ, আল কুরআনের বঙ্গানুবাদ। তাঁর অনুবাদের প্রত্যেকটি আয়াতের অংশসমূহ আলাদা আলাদাভাবে আরবি হরফে মুদ্রিত করে তার নিচে সে অংশের বাংলা তরজমা এবং অপেক্ষাকৃত ছোট অক্ষরে ব্যাখ্যা ও বিস্তৃত তফসির করেছেন। তাঁর অনূদিত কুরআন শরীফ প্রথম খণ্ড ১৮৯১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম সংস্করণ ১৮৯২ সালে হাফেজ মাহমুদ আলী খান পন্নী জমিদার সাহেবের সহায়তায় করটিয়ার মাহমুদিয়া প্রেস থেকে ছাপা হয়। এই প্রেস থেকে তৃতীয় খণ্ডও প্রকাশিত হয়। তৃতীয় খণ্ড ছাপা হবার পর তিনি কোলকাতা চলে যান এবং জলপাইগুড়ির জমিদার খানবাহাদুর রহিম বক্স খানের অর্থানুকূল্যে তাঁর অনূদিত কুরআন শরীফের ৭ম, ৮ম ও ৯ম পারা পর্যন্ত প্রকাশ করেন। ১০ম পারা মুদ্রণ শেষ হবার আগেই ১৯০৮ সালে ২৩ নবেম্বর মৌলভী নঈমউদ্দীন ইন্তিকাল করেন। তিনি সর্বমোট তেইশ পারা পর্যন্ত অনুবাদ করেন। অবশিষ্ট অংশ তাঁর পুত্র কাসেমউদ্দীন ও ফখরউদ্দীন আহমদকে অনুবাদ ও প্রকাশ করবার নির্দেশ দিয়ে যান।
মৌলভী নঈমউদ্দীন ফতোয়ায়ে আলমগিরি বাংলায় অনুবাদ করে চার খণ্ডে প্রকাশ করেন। তিনি বুখারী শরীফেরও অনুবাদ করেন। 
অন্যান্য রচনাবলী : মৌলভী নঈমউদ্দীন রচিত আরও কিছু পুস্তক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে :
১. কালেমাতল কোফর, ২. এছাবাতে আখের জ্জোহর, ৩. এনসাফ, ৪. রফা-এদায়েন, ৫. আদেল্লায়ে হানিফিয়া, ৬. মায়াদানোল ওলুম, ৭. ইউসুফ সুরার সুবিস্তৃর্ণ তফসির, ৮. সেরাতল মস্তাকিম, ৯. সেরাতল মস্তাকিম (নব পর্যায়), ১০. ধর্মের লাঠি, ১১. বেতের, ১২. তারাবিহ।
এগুলো ছাড়াও পুঁথির ভাষায় এবং পুঁথির আদর্শে আরও কয়েকটি জীবনচরিত লিখেছিলেন। এগুলো হচ্ছে : ১. ছহী শাহ আলমের কিচ্ছা, ২. ছহী শের সাহেবের কিচ্ছা, ৩. ছহী আলমগীরের কিচ্ছা, ৪. ছহী নূরজাহান বেগমের কিচ্ছা, ৫. ছহী আলাউদ্দীনের কিচ্ছা, ৬. ছহী হোসেন শাহের কিচ্ছা, ৭. গোকাণ্ড।
মৌলভী নঈমউদ্দীন তাঁর আরদ্ধ কাজ সম্পন্ন করে যেতে না পারলেও মুসলিমসমাজে আল কুরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদক হিসাবে অক্ষয় হয়ে আছেন। এই মহাপুরুষের কর্মতৎপরতায় বাংলার অনেক অমুসলিম তখন ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং মুসলিমদেরও বহু ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়। সেসময় মুসলিমসমাজে তাঁর মতো অসাধারণ জ্ঞানী আলেম এবং বহু গ্রন্থপ্রণেতা ও অনুবাদক আর কেউ ছিলেন না। সুবক্তা হিসেবেও তিনি সারাদেশে খ্যাতি অর্জন করেন। সব তথ্য-উপাত্ত ইন্টারনেটের।


নিউজ লিংকঃ
http://www.dailysangram.com/post/338654-%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%95-%E0%A6%95%E0%A7%87

সর্বপ্রথম কুরআন বাংলায় অনুবাদ করেন কে

কুরআন এর প্রথম বাংলা অনুবাদ কে করেন?

একটি ভুল প্রচার নিরসন -
সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফের আংশিক অনুবাদ করেন মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া ১৮০৮ সালে। এরপর বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন মৌলভী নাঈমুদ্দীন ১৮৩৬ সালে। গিরিশ চন্দ্র সেন শুধু উক্ত অনুবাদকে পুস্তক আকারে সন্নিবেশ করেছেন, গিরিশ চন্দ্র হচ্ছেন প্রকাশক। তাও অনেক পরে, ১৮৮৬ সালে। সুতরাং কুরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক গিরিশ চন্দ্র নন, বরং মৌলভী নাঈমুদ্দীনই পূর্ণাঙ্গ কুরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক। আর মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া হলেন বাংলা ভাষায় প্রথম কুরআন শরীফের আংশিক অনুবাদক।
গিরিশ চন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৩৫ সালে এবং মৃত্যু ১৯১০ সালে। গিরিশ চন্দ্রের জন্মেরও আগে অর্থাৎ ১৮০৮ সালে কুরআন শরীফের বাংলায় অনুবাদের কাজ শুরু করেন মাওলানা আমীর উদ্দীন বসুনিয়া। এরপর গিরিশ চন্দ্র সেনের জন্মের একবছর পরই অর্থাৎ ১৮৩৬ সনে মৌলভী নাঈমুদ্দীন পূর্ণাঙ্গ কুরআন শরীফের বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করেন। ** আরবি জানেনা আরবি ব্যাকরণ জানেনা এমন ব্যাক্তি কুরআন অনুবাদ করেছে এমন প্রচার মুর্খতা।।।।।।।।
।।।।।।।।।।।।
বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন আল কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক। এ প্রচারণার কিছু কারণ ছিল। বৃটিশ আমলে এদেশে ব্রাহ্মধর্মের একটা জোয়ার এসেছিল। গোঁড়া হিন্দু ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন এক সময় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ব্রহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মধর্ম এ দেশে ছিল একটি নতুন ধর্মমত। তাই এ ধর্মমত আপামর জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের জন্য গিরীশ চন্দ্র নিজে উদ্যোগী হলেন। কিন্তু অর্থকড়ির তো প্রয়োজন। সেটা আসবে কোথেকে! তিনি ফারসী ভাষায়্ পন্ডিত ছিলেন। মুসলমানদের পকেট থেকে টাকা বের করার জন্য বেশকিছু ইসলামী বই রচনা করলেন এবং সেই সাথে পবিত্র আল কুরআনের প্রকাশ করল প্রকাশক হয়ে। মুসলমানরা এ বই কিনলোও প্রচুর। ফলে বাংলা ভাষাভাষী যারাই কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ হাতে পেতে চাইলো তাদের হাতে পৌঁছে গেল তার অনূদিত কুরআন শরীফ। এ ব্যাপারে তাঁকে ব্রাহ্মসমাজ হিন্দু ব্যক্তিবর্গ এমন কি বৃটিশরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। ফলে মানুষ মনে করেছে পবিত্র কুরআন শরীফের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী হচ্ছেন ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন। আসলে পবিত্র কুরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী যে মৌলবী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন সে কথা অল্প কিছু লোক জানলেও ব্যাপকভাবে প্রচার করার সুযোগ আসেনি।
গিরীশ চন্দ্র কুরআনের অনুবাদ বিক্রি করে যে অর্থ লাভ করতেন তা ব্যয় করতেন ব্রহ্মধর্ম প্রচার কাজে। ফলে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের মিশনের সাথে কুরআন বিক্রয়ের একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। মৌলবী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন ছিলেন একজন মুসলমান। তিনি স্বত:প্রণোদিত হয়ে আল কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। তা প্রচারের জন্য গিরীশ চন্দ্র সেনের মতো কোনো মিশন ছিল না। যার কারণে তার প্রচার প্রসার ছিল সীমিত। এমনি করেই আল কুরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী হয়েও মৌলবী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের মতো প্রচার পেতে পারেন নাই।"
বিঃদ্রঃ - গিরীশ চন্দ্র হিন্দু নন, ব্রাহ্ম ছিলো
কাজী মিজানুর রহমান। আল জুবাইল। সৌদি আরব।

বর্তমানের ইসলাম প্রকৃত ইসলাম নয়


হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ 

বর্তমানের ইসলাম প্রকৃত ইসলাম নয়

হিযবুত তাওহীদঃ ঈমান বিধ্বংসী এক ফিরকা
হিযবুত তওহীদ। ১৯৯৫ সালে হোমিও ডাক্তারখ্যাত বায়াজীদ খান পন্নী নামক জনৈক ব্যক্তির দ্বারা টাঙ্গাইল করটিয়ায় এটার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এটি নামধারী একটি ইসলামিক দল হলেও মূলত এটি ইসলাম ধ্বংশ করার গোপন ষড়যন্ত্র।
সম্রাট আকবর যেমন সব ধর্ম মিলিয়ে “দ্বীনে এলাহী” নামক একটি ধর্মের গোড়াপত্তন করেছিল, ঠিক তেমনি বায়েজিদ খান পন্নীও সম্রাট আকবর প্রতিষ্ঠিত “দ্বীনে এলাহী” নামক ধর্মের মতই “হেযবুত তওহীদ” নামক এ নতুন ধর্মটি আবিস্কার করেন।
খুব অল্প সময়ে উদ্ভট সব থিউরী দিয়ে বেশ কিছু ভক্ত যুগিয়ে ফেলেন পন্নী সাহেব।ইসলামের মৌলিক বিধানাবলীর নতুন সব অপব্যাখ্যা করে পুরো দ্বীনটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখার দুষ্কর্ম তিনি আমরণ করে যান।
অবশ্য নবী দাবীদার মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর মতবাদের সাথে বায়াজীদ খান পন্নীর অনেক মতবাদ হুবহু মিলে যায়।
◾তাদের দাবী হলো যে ধর্মটি ইসলাম বলে প্রচলিত আমাদের সমাজে এটা আসল ইসলাম নয়।বরং অন্যন্য ধর্মের মত একটি ধর্ম শুধু।
◾রাসুলুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রহমাতুল্লিল আলামিন বলতে তারা একেবারেই নারাজ হলেও রামকৃষ্ণ,বৌদ্ধ অবতারদের নাম নেয়ার সময় তারা আলাইহিস সালাম বলে থাকে।
◾হেযবুত তওহীদের অন্যতম দাবী হচ্ছে-
৬০/৭০ হিজরীর পর থেকে ১৩০০ হিজরির পর পুরো ইসলাম ধর্মটি বিকৃত হয়ে গিয়েছে এবং সমস্ত মুসলমান কাফের এবং মুশরিক হয়ে গিয়ে। সুৎরাং প্রচলিত ইসলামটি আসল ইসলাম নয় বরং আল্লাহর প্রেরিত ইসলামের বিপরিত এটা।
◾টুপি, দাড়ী,পাগড়ি,জুব্বা এগুলোর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জোর দাবী তুলেছেন তারা।
অথচ বিধর্মীদের মত দাড়ীতে তারা ষ্টাইল করা রুচিসম্মত কাজ মনে করে থাকেন।
◾তাদের দাবী হলো “হেযবুত তওহীদ’ই হলো আল্লাহর পাঠানো আসল দ্বীনুল হক।তাদের এমামুযযামান খ্যাত বায়াজীদ খান পন্নীকে নাকি আল্লাহ পাক মো’জেজার মাধ্যমে বলেছেন যে,”হেযবুত তওহীদ” এ দলটি দিয়ে পুরো বিশ্বে সহীহ ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে।
এজন্য তারা ঘোষণা দিয়ে তাদের বইয়ের মধ্যে লিখেছে-
“যারা হেযবুত তওহীদ করবে তাদের জন্য নিশ্চিত জান্নাত। এনকি যদি কেউ হেযবুত তওহীদে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে দুই শহিদের মর্যাদা পাবে।আর যারা পন্নী সাহেবের মোজেজা বিশ্বাস করবে না তারা মোনাফেক। তাদের কোনো মুক্তি নাই।তারা জাহান্নামী।”[লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।]
অবশেষে ১৬ ই জানুয়ারী ২০১২ ইং সনে তার মৃত্যু হয়।কিন্তু এতদিনে তার ভ্রান্ত দলের কর্মী হাজার ছাড়িয়ে যায়।
বায়জীদ খান পন্নীর এ নতুন ফেরকা হেযবুত তাওহীদ ভ্রান্ত হবার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ।তার ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের জন্য বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে।যেগুলোতে কুরআন হাদীস ও ইসলামের মৌলিক আক্বীদা বিরুদ্ধ কথার ছড়াছড়ি।
আমরা ধারাবাহিকভাবে সেসব ভ্রান্ত মতবাদের ইলমি খন্ডন আপনাদের সামনে তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ………………
বর্তমানের ইসলাম প্রকৃত ইসলাম নয়!
হিযবুত তাওহীদের বক্তব্যঃ

বর্তমান অমরা যে ধর্মটিকে এসলাম হিসেবে দেখছি,যেটাকে ধর্মপ্রাণ মানুষ অতি যত্ন সহকারে পালন করার চেষ্টা কোরছেন, যে এসলামটাকে সর্বত্র স্কুল,কলেজ মাদ্রাসায় ও পীরের খানকায় শেখানো হোচ্ছে সেটা প্রকৃত এসলাম নয়”।(সূত্রঃ এসলাম শুধু নাম থাকবে- পৃঃ ৯)
“যাত্রাদলের বন্দুকের সঙ্গে আসল বন্দুকের যতটা পার্থক্য, প্রকৃত এসলামের সঙ্গে বর্তমান এসলামের ততটাই পার্থক্য। এদু’টির চলার পথ সম্পূর্ণ বিপরীত”।(সূত্রঃ এসলাম শুধু নাম থাকবে- পৃঃ ৯)

হাদীসের বক্তব্যঃ আল্লাহ পাকের মনোনিত দ্বীন ইসলামের হেফাযত তিনি নিজেই করবেন।
যেদিন ইসলাম এবং মুসলিম থাকবে না সেদিন কেয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে।
⏹عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ اللَّهُ الله
অর্থাৎ আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সঃ বলেন- যেদিন দুনিয়াতে কোনো আল্লাহ আল্লাহ বলনেওয়ালা মুমিন থাকবে না সেদিন কেয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে।(সহীহ মুসলিম হাদিস নং- ১৪৮;তিরমিযি হাদিস-২২০৭)
⏹عَنْ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي عَلَى ضَلَالَةٍ ، وَيَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন আমার সকল উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা কখনও ভ্রান্ত (বিকৃত) বিষয়ের উপর ঐক্য করবেন না।
(তিরমিযি হাদিস-২১৬৭;আবু দাউদ হাদিস-৪২৫৩)
⏹عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। এমন কি এভাবে আল্লাহর আদেশ অর্থাৎ কিয়ামত এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটই থাকবে। (সহীহ মুসলিম-ইঃফা,হাদীস নং-৪৭৯৭)
—–
সুতরাং হাদীসের ভাষ্য হচ্ছে উম্মতের একটি দল সবসময় হক্বের উপর থাকবে ।যদি ইসলাম বিকৃত হয়ে যায় তাহলে এ হাদীসকে ভুল বলতে হয়(নাউযুবিল্লাহ)
হিযবুত তাওহীদের সমর্থকদের নিকট প্রশ্ন রইল- আপনি কার দিকে ফিরে যাবেন?
▶রাসূল সল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের দিকে, নাকি
▶পন্নি সাহেবের হাদীস বিরোধী বক্তব্যের দিকে?

নাচ গান ভাষ্কর্য নির্মাণ বাদ্যযন্ত্র চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি হালাল


❌হেযবুত তাওহীদের ভ্রান্ত মতবাদ ❌

নাচ গান ভাষ্কর্য নির্মাণ বাদ্যযন্ত্র চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি হালাল!

তাদের লিখিত বইয়ের ভাষ্য নিম্নরূপঃ
যে কোন জিনিস হারাম কিনা তা জানার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কেতাব দেখতে হবে।কোরআনে যা কিছু নিষিদ্ধ করা হোয়েছে সেগুলি ছাড়া আর সবই বৈধ।এখন কোরআনে দেখুন গান,বাদ্যযন্ত্র,চলচিত্র,নাট্যকলা,অভিনয়,নৃত্য,চিত্রাঙ্কন, ভাষ্কর্য নির্মাণ ইত্যাদি আল্লাহ হারাম কোরেছেন কিনা? যদি না কোরে থাকেন তাহলে এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ।আল্লাহ যেটিকে বৈধ কোরেছেন সেটিকে কোন আলেম,মুফতি,ফকীহ ,মোফাসসের হারাম করার অধিকার রাখেন না।(আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই-১২)




কুরআন হাদীসের বক্তব্যঃ
এখানে খুব সুচতুরভাবে হাদীসকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।অথচ হাদীসও শরীয়ার মানদণ্ড ।
গান বাদ্য হারামঃ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَہَا ہُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।(সূরা লুকমান-৬)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে উক্ত আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’-এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হল গান।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একই কথা বলেন।(তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১)
◾ রসুল (সাঃ) বাজনা শুনতে নিষেধ করেছেন এবং রাসুল (সাঃ)
যখন বাজনার শব্দ শুনতেন তখন আঙ্গুল দিয়ে কান বন্ধ করতেন সহিহ বুখারি ২৯০৬ সহিহ মুসলিম ১৯৩৮ নাম্বার হাদিস 
◾ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে।(সহীহ বুখারী-৫৫৯০)
◾গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।(জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ হাদীস : ২১৬৮)।
◾ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি খেল-তামাশা পছন্দ করি না এবং খেল-তামাশারও আমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। অর্থাৎ আমার সাথে বাতিলের কোন সম্পর্ক নাই। আল আদাবুল মুফরাদ ৭৯০ নাম্বার হাদিস
◾ আব্বাস (রাঃ) বলেন। “এমন কতক লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্ৰষ্ট করার লক্ষ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে”তায়া হচ্ছে গান বাজনা 
আল আদাবুল মুফরাদ ৭৯১ নাম্বার হাদিস
◾ আনসার গোত্রের লোকেরা যে সব গান গেয়ে গর্ব করেছিল সে সব গান আবৃত্তি করছিল। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদর মুড়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলেন। এ অবস্থা দেখে আবূ বাকর বালিকা দু’টিকে ধমক দিলেন
সহীহ : বুখারী ৯৮৭, ৩৫২৯, মুসলিম ৮৯২, নাসায়ী ১৫৯৩, ইবনু হিব্বান ৫৮৭৬ মিসকাত ১৪৩২
◾ ঢোলক হারাম, বাদ্যযন্ত্র হারাম, তবলা হারাম এবং বাঁশীও হারাম।’ গানের জন্য যা কিছু আছে সব হারাম (বাইহাকী ২০৭৮৯)
◾রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।(সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮)
◾বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪৯২৪)
বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।-(ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৯০১)
◾রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।(সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪)
মৃদু আওয়াজের ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা খুব সহজেই বুঝা যায়।
ভাষ্কর্য_হারামঃ কুরআন মজীদের স্পষ্ট নির্দেশ-
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَ اجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِۙ
‘তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ (সূরা হজ্জ : ৩০)
◾হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ‘আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। (সহীহ মুসলিম হা. ৮৩২)
◾আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, আলী ইবনে আবী তালেব রা. আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা এই যে, তুমি সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সকল সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দিবে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে,… এবং সকল চিত্র মুছে ফেলবে।’ (সহীহ মুসলিম হা. ৯৬৯)
◾আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ.
প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।’ (সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫০)
◾আলী ইবনে আবী তালেব রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে, যেখানেই কোনো সমাধি-সৌধ পাবে তা ভূমিসাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোনো চিত্র পাবে তা মুছে দিবে?’ আলী রা. এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্ত্তত হলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ পুনরায় উপরোক্ত কোনো কিছু তৈরী করতে প্রবৃত্ত হবে সে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি নাযিলকৃত দ্বীনকে অস্বীকারকারী।’ (মুসনাদে আহমাদ হা. ৬৫৭)
◾উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ خَلْقًا كَخَلْقِيْ؟ فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً وَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً.
এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’ করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর!’(সহীহ বুখারী হা. ৭৫৫৭, ৭৫৫৮;)
◾আউন ইবনে আবু জুহাইফা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদ ভক্ষণকারী ও সুদ প্রদানকারী, উল্কি অঙ্কণকারী ও উল্কি গ্রহণকারী এবং প্রতিকৃতি প্রস্ত্ততকারীদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) উপর লানত করেছেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫৯৬২)

Wednesday, June 26, 2019

হেজবুত তাওহিদের ভ্রান্ত মতবাদ

‘হেযবুত তওহীদের’- ভ্রান্ত মতবাদের দালিলিক পর্যালোচনা
(০১ - ৩১ তম পর্বের লিংক সংকলন)
----------------------------------------------------
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১ঃ বর্তমানের ইসলাম প্রকৃত ইসলাম নয়
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/7786-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২ঃ কবিরা গুনাহের হিসাব দেয়া নাকি লাগবে না
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/8090/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৩ঃ চলমান ইসলাম বিকৃত এটা হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মের মত এটা আসল ইসলাম নয়
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/1090-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৪ঃ হেযবুত তওহীদের সকল সদস্যদের জন্য জান্নাত নিশ্চিত
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/2220-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৫ঃ নাচ গান ভাষ্কর্য নির্মাণ বাদ্যযন্ত্র চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি হালাল
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/8011-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৬ঃ আল্লাহ তায়ালা প্রভুত্বের আসনে নেই
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/1029/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৭ঃ হঠাৎ করেই মুসলিম জাতির আক্বীদা বিকৃত হয়ে গেছে
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/1999/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৮ঃ বর্তমান ইসলামকে বিকৃত প্রমাণে হাদীসের অপব্যক্ষা
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/2076/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৯ঃ সকল ধর্মই সত্য
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/7700/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১০ঃ হেযবুত তাওহীদ আন্তঃধর্মীয় ঐক্যে বিশ্বাসী
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/6609-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১১ঃ রাসূল ﷺ কে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যের মত কুফরি মতবাদের আহ্বায়ক প্রমাণে কুরআনের আয়াতের অপব্যবহার
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/7221-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১২ঃ হেযবুত তওহীদের সত্যায়নে আল্লাহ মো’জেজা সংঘটিত করেছেন
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/8880/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১৩ঃ পন্নীর বক্তব্যকে আল্লহ ﷻ কুরআনের মত সত্যায়ন করেছেন
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/9777/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১৪ঃ ইসলামে কোন নির্দিষ্ট পোশাক নেই
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/6660-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১৫ঃ বিশ্বনবী ﷺ কে ‘রহমাতুল্লিল আ’লামীন’ বলা যাবে না
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/5001/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১৬ঃ রমজানে রোজা না রাখলে গুনাহ নেই
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/0009-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১৭ঃ হজ্বের উদ্দেশ্য ইবাদাত নয়, নিছক কনফারেন্স
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/5508-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১৮ঃ সালাত মৌলিক ইবাদাত নয়, সালাত হচ্ছে কুচকাওয়াজ,জিহাদের প্রশিক্ষণ
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/6493/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-১৯ঃ হেযবুত তাওহীদের বিদআতী সালাতের পর্যালোচনা
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/7777-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২০ঃ অনেক নবী-রাসূলগণ যেখানে ব্যর্থ সেখানে পন্নী সাহেব সফল
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/8880-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২১ঃ সালাত ইবাদাত নয়
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/1099/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২২ঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে যুক্তির ভিত্তিতে
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/7100-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২৩ঃ নাস্তিকদের বিশ্বাসের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা একজন ধার্মিকের কর্তব্য
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/6544-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২৪ঃ দাজ্জাল কোনো মানুষ নয়,পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ইহুদি খ্রিস্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে দাজ্জাল
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/4199/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২৫ঃ হেযবুত তওহীদে আসলেই দুই শহীদের মর্যাদা
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/8110-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২৬ঃ খ্রিস্টানদের অপকর্মের জন্য ঈসা (আঃ) এর দায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/0101-2/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২৭ঃ বর্তমানে পুরো মানবজাতি কাফের ও মুশরিক
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/8766/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২৮ঃ পন্নী সাহেবের তথাকথিত মু’জিজা বিশ্বাস না করা মুনাফেকি
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/8766/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-২৯ঃ মু’মিন হতে হলে বায়েজিদ খান পন্নীর আনুগত্য আবশ্যক
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/8766/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৩০ঃ নারীদের আপাদমস্তক পর্দায় আবৃত করা মানবাধিকার লংঘন এবং নির্যাতনমূলক
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/6660-3/
◾ভ্রান্ত মতবাদ-৩১ঃ কুরআনের আয়াতের তাফসীরগত মতপার্থক্য ও ফিকহী মতপার্থক্য কুফরী,শিরক ও বিদআত, তাই গোটা মুসলিম উম্মাহ কাফের ও মুশরিক
লিংকঃ https://ahlehaqmedia.com/7227-2/

ঈমান-আক্বীদা হিফাযত ও জনসচেতনতার জন্য পোস্ট টি কপি/শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।

বাচ্চাদের চুল কাযা কি বা কাযা কাকে বলে


ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- نَهَى عَنِ الْقَزَعِ. قَالَ قُلْتُ لِنَافِعٍ وَمَا الْقَزَعُ قَالَ يُحْلَقُ بَعْضُ رَأْسِ الصَّبِىِّ وَيُتْرَكُ بَعْضٌ».
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাযা‘ থেকে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, নাফে‘কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাযা‘ কী? তিনি বললেন, বাচ্চার মাথার কিছু অংশ মুণ্ডানো আর কিছু অমুণ্ডিত রাখা’। [মুসলিম : ৩৯৫৯; বুখারী : ৫৪৬৫; ইবন মাজা : ৩৬২৭; আহমদ : ৪৯২৮।]


গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৮/ চিরুনি করা (كتاب الترجل)
হাদিস নঃ ৪১৪৫

১৩. চুলের গোছা সম্পর্কে।
৪১৪৫. আহমদ ইব্‌ন হাম্বল (রহঃ) .......... ইব্‌ন উমার (রাঃ) থেক বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কায্‌’ঈ’ থেকে নিষেধ করেছেন। আর ‘কায্‌’ঈ’ হ’লো- বাচ্চাদের মস্তক মুণ্ডনের পর মাথার উপরিভাগে কিছু লম্বা চুল রাখা।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس)
হাদিস নঃ ৫৪৯৬

২৪০১. 'কাযা' অর্থাৎ মাথার কিছু চুল মুড়ে ফেলা ও কিছু অংশে চুল রেখে দেয়া
৫৪৯৬। মুহাম্মদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কাযা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। রাবী উবায়দুল্লাহ বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ 'কাযা' কি? তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললেনঃ শিশুদের যখন চুল কামান হয় তখন এই, এই জায়গায় চুল রেখে দেওয়া। এ কথা বলার সময় উবায়দুল্লাহ তার কপাল ও মাথার দু'পাশ দেখালেন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হলঃ বালক ও বালিকার কি একই হুকুম? তিনি বললেনঃ আমি জানি না। এভাবে তিনি বালকের কথা বলেছেন। উবায়দুল্লাহ বলেনঃ আমি এ কথা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ পুরুষ শিশুর মাথার সামনের ও পিছনের দিকের চুল কামান দোষনীয় নয়। আর (অন্য এক ব্যাখ্যা মতে) 'কাযা' বলা হয়, কপালের উপরে কিছু চুল রেখে বাকী মাথার কোথাও চুল না রাখা। অনুরুপভাবে মাথার চুল একপাশ থেকে অথবা অপর পাশ থেকে কাটা।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

পেশাব পায়খানার পর পবিত্রতা অর্জন ও ঢিলা কুলুপ ব্যবহারের বিধিবিধান

নারী ও পুরুষের সবার জন্য পেশাব ও পায়খানার পরে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি কি?

অনেকে মনে করেন, নারী ও পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি আলাদা। তাই অনেকে প্রশ্ন করেন, নারীদের পবিত্রতার পদ্ধতি কি?

আসলে নারী ও পুরুষের, উভয়ের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি একই। সুতরাং, নিচে বর্ণিত এই নিয়ম অনুযায়ী নারী ও পুরুষ, সবাই পবিত্রতা অর্জন করতে পারবেন।
পেশাব-পায়খানার পরে নাপাকী দুইভাবে দূর করা যেতে পারেঃ
(১) পানি দ্বারা এবং (২) ঢিলা-কুলুখ অথবা টিস্যু দ্বারা।
পানি দ্বারা নাপাকী দূর করলে তার পূর্বে ঢিলা বা কুলুখ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা নারী ও পুরষ, উভয়ের জন্য। আমাদের দেশের অনেকে মনে করেন, পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের জন্যে শুধুমাত্র পানি যথেষ্ঠ না, প্রথমে ঢিলা কুলুখ নিয়ে এরপরে পানি দিয়ে ধুইতে হবে। আসলে এটা একটা ভুল ধারণা। ঢিলা-কুলুখের নিয়ম নারী-পুরুষ সবার জন্যই এক। বরং, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে ‘কুবা’ মসজিদের কিছু মুসল্লী ঢিলা-কুলুখ না নিয়ে সরাসরি পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করতো। আর আল্লাহ তাআ’লা এই কাজটিকে পছন্দ করেছিলেন, এজন্য তাদের প্রশংসা করে কুরআনে আয়াতও নাযিল করা হয়েছিলো। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেখানে এমন কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র রাখতে পছন্দ করে।” সুরা তাওবাঃ ১০৮। এই আয়াতটি কুবাবাসী লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিল করা হয়েছে। কারণ, তারা শুধুমাত্র পানি দ্বারা ইসতেঞ্জা করতো।” তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ, হাদীস সহীহ।
পবিত্রতা অর্জনের জন্য পেশাব করার পরে তাড়াহুড়া করে উঠে না পড়ে, একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে, যাতে করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পেশাব আর বের হবেনা। তারপর পানি অথবা ঢিলা-কুলুখ, অথবা টিস্যু দিয়ে নাপাকী পরিষ্কার করতে হবে। শুধু পানি দিয়ে নাপাকী দূর করা উত্তম, সেইক্ষেত্রে আর ঢিলা-কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবেনা। তবে নাপাকী দূর হয়েছে, এটা নিশ্চিত হলে পানি ব্যবহার না করে শুধু টিস্যু বা ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করলেও পবিত্রতা অর্জন হবে। কিন্তু, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবেনা বা শয়তানের ওসওয়াসাকে অন্তরে স্থান দেওয়া যাবেনা। আপনি এটা নিয়ে দুঃশিচন্তা করে আপনার জীবন অতিষ্ট করে তুলবেন না আবার পেশাব থেকে বেঁচে থাকতে অসতর্কও হবেন না। আপনার যতটুকু সাধ্য আছে সে অনুযায়ী চেষ্টা করবেন নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু রোগের কারণে সেটা সম্ভব না হলে, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো বোঝা চাপিয়ে দেন না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুলুখ ও পানি একত্রে ব্যবহার করেছেন, এ মর্মে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি কখনো কেবল পানি ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৩৪২, ৩৬০ ‘টয়লেটের শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ। কখনো তিনি বেজোড় সংখ্যক কুলুখ ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারীঃ ১৫৫, ‘ওযু’ অধ্যায় ‘কুলুখ’ ব্যবহার অনুচ্ছেদ ২০। ওযু শেষে তিনি হালকা পানির ছিটা লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিতেন। আহমাদ, আবু দাঊদ, মিশকাতঃ ৩৬১। এটি ছিল সন্দেহ দূর করার জন্য। এর চেয়ে বেশী কিছু করা বাড়াবাড়ি মাত্র। উল্লেখ্য, ঢিলা ব্যবহার করার পর পানি নেওয়ার যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। ইরওয়াউল গালীলঃ ৪২; সিলসিলা যঈফাহঃ ১০৩১।
____________________________________
ইসলাম আমাদেরকে নির্লজ্জ, বেহায়া হতে শিক্ষা দেয়না
আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন নামায পড়া আমার কাছে খুব কঠিন একটা কাজ মনে হতো। কারণ আমার উস্তাদেরা শিক্ষা দিতো, ছেলেদের পেশাব করার পরে লজ্জাস্থানে ঢিলা-কুলুখ ধরে ৪০ কদম হাটতে হবে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)! বিষয়টা শুনে ঘৃণায় আমার গা কেমন জানি রি রি করে উঠতো। আবার তারা বলতো এটা করা ওয়াজিব, না করলে পবিত্রতা অর্জন হবেনা, আর পবিত্রতা ছাড়া নামাযও হবেনা। তাই ১০ বছর বয়সে আমার উপরে নামায ফরয হওয়ার আগে থেকেই আমার দুঃশ্চিন্তা হতো, কিভাবে আমি এই (জঘন্য) অভ্যাসটা গড়ে তুলবো।  আমাদের দেশের প্রচলিত মসজিদগুলোর বাথরুমের পাশ দিয়ে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, না জানি কখন আপনি সভ্যতা বিরোধী এই নির্লজ্জ কাজের সম্মুখে পড়ে যান। অথচ, যে করছে সে দিব্যি এগুলো নেকীর কাজ মনে করে করে যাচ্ছে, কোনো বিকার নেই (লা হা’উলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)! যাই হোক, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই জঘন্য কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে একবারও করেন নি, এমনকি কোনো সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের কেউই করেন নি। এটা স্রেফ জাহেল (মূর্খ) মুসলিমের ফতোয়া।
আমাদের দেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী দ্বীনের নামে এই নিকৃষ্ট বিদআতের সাথে জড়িত। আপনারা নিজে জানুন, শেয়ার করে অন্যদেরকে এই নোংরা বিদাতী স্বভাব থেকে সতর্ক করুন। এইরকম যত্ত নিকৃষ্ট শিরক ও বেদাত আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, সেইগুলোর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বন্ধু, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের প্রচার প্রসারের জন্য কাজ করার তোওফিক দান করুন, আমিন।
____________________________________

লজ্জাস্থান ধরে রাস্তায় হাটাহাটি করা বেদাত
আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যে, ইবাদতের নামে যেই কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে করেন নি, তাঁর সাহাবীদেরকে করতে বলেননি অথবা, কোনো সাহাবী, তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ী করেননি, সেই কাজটা হলো বেদাত (দ্বীনের মাঝে নতুন আবিষ্কার)। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তিঞ্জার পরে ৪০ কদম হাটেন নি, তাঁর সাহাবীদের এমনটা করতে বলেন নি, কোনো একজন সাহাবী এমনটা করেননি। এমনকি যেসমস্ত সাহাবীদের অসুস্থতার কারণে পেশাব ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তো, তারাও এইরকম বেহায়াপনা কাজ করেন নি।
সুতরাং, কেউ যদি বলে যেঃ পেশাবের পরে ৪০ কদম হাটতে হবে, হাঁটা ফরয/ওয়াজিব, তাহলে, এটা একটা বেদাত। ধর্মের নামে নতুন কোন কথা বা কাজ, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নি সেটাই হচ্ছে বেদাত।
পেশাবের পরে লজ্জাস্থান ধরে ৪০ কদম হাঁটাহাঁটি করা দেখতে এতোটাই দৃষ্টিকটু, লজ্জা শরমের মাথা না খেয়ে কেউই এই নিকৃষ্ট বেদাতী কাজটা করতে পারবেনা। তারপরেও বেদাত করতে করতে যাদের ঘাড় ত্যাড়া হয়ে গেছ, তাদেরকে অনুরোধ করবো, দয়া করে বলবেন কুরআনের কোন আয়াতে, অথবা কোন হাদীসে অথবা কোন সাহাবী এই বেহায়াপনার কাজটা করেছেন, তাঁর দলীল-প্রমান দিন। যদি দলীল দিতে পারেন তাহলে, ইন শা’আল্লাহ, আমরা এই বেহায়াপনাকে মেনে নেবো। আর যদি দলিল দিতে না পারেন, তাহলে দ্বীনি ভাই হিসেবে অনুরোধ, এইসমস্ত বেহায়াপনা ও নোংরামি কাজ বাদ দিন।
____________________________________
পেশাব করার পর মনে হয় কয়েক ফোঁটা বের হয়েছে?
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায রাহিমাহুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি ফতোয়াঃ
প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি পেশাব শেষ করে পেশাবের স্থান ধৌত করে নেয়। কিন্তু যখনই সে নড়াচড়া করে ও দাঁড়ায়, তখন অনুভব হয় যে, কয়েক ফোঁটা পেশাব বের হয়েছে। এ জন্য সে দীর্ঘ সময় পেশাবের স্থানে বসে থাকে, আর বলে কি করব? সে কি তার এ অনুভূতি ও ধারণা ত্যাগ করে ওযু পূর্ণ করে নেবে? নাকি, পরিপূর্ণ পেশাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? আশা করি উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাদের কল্যাণ করুন।
উত্তরঃ আল-হামদুলিল্লাহ। এ বিষয়টি ওয়াসওয়াসা (শয়তানের কুমন্ত্রনা) ও সন্দেহ থেকে সৃষ্টি হয়। আর এগুলো তৈরী হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। তবে কারো কারো ব্যাপারে প্রকৃত পক্ষেই (অসুস্থতার কারণে) পেশাবের পরে দুয়েক ফোঁটা বের হয়।
কারো যদি সত্যিই এমন হয়, তাহলে সে তাড়াহুড়ো করবে না, বরং পেশাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, অতঃপর পানি দ্বারা পেশাবের স্থান ধৌত করবে। এরপর যদি কোন কিছুর আশঙ্কা থাকে, তাহলে লজ্জাস্থানের আশপাশে লুঙ্গি বা পায়জামায় পানি ছিটিয়ে দেবে। অতঃপর অযু শেষ করার পর যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সেই দিকে সে কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না। ওয়াসওয়াসা ত্যাগ করার জন্য এ পদ্ধতি তার জন্য সহায়ক হবে।
আর যদি শুধুই সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা হয়, যার কোন বাস্তবতা নেই, তবে তার প্রতি মোটেই ভ্রক্ষেপ করবে না। মুমিনদের জন্য এ সমস্ত জিনিসে দৃষ্টি না দেওয়া উচিত। কারণ, এগুলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা। শয়তান চায় মানব জাতির সালাত-ইবাদত নষ্ট করতে। অতএব, তার ষড়যন্ত্র ও ওয়াসওয়াসা থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। আল্লাহকে আঁকড়ে থাকা এবং তার উপর ভরসা করা। আর এসব যা কিছু সৃষ্টি হয়, তা শয়তানের পক্ষ থেকে মনে করা, যাতে ওযু এবং তার পরবর্তী সালাতে এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ সৃষ্টি না হয়। আর নিশ্চিতভাবে কিছু বের হলে, পুনরায় পবিত্র হবে ও অযূ করবে।
আর ধারণার কোনই গ্রহণ যোগ্যতা নেই। যদিও ৯৯% ভাগ ধারণা হয়, তার প্রতিও কোন ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। এগুলো শয়তানের প্ররোচনা। যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় বিশ্বাস না হবে, সে তার অযূ, সালাত ও অন্যান্য কাজ করে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ হে আল্লাহর রাসূল, কোন ব্যক্তির ধারণা হয় যে, তার সালাতে কিছু বের হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেন : (لَا يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا) সালাত ত্যাগ করবে না, যতক্ষণ না সে আওয়াজ শোনে, অথবা গন্ধ পায়। এখানে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আওয়াজ বা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত, কেবল ধারণার উপর নির্ভর করে সালাত ত্যাগ করবে না। তদ্রূপ মানুষ যখন অযূ থেকে ফারেগ হয়, অতঃপর কোন কিছু অনুভূত হলে, সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, এবং তার প্রতি ফিরে যাবে না। বরং, সে তার পবিত্রতা, সালাত ও আমল করে যাবে, যতক্ষণ না ১০০% ভাগ ধারণা হয় যে, কিছু বের হয়েছে। কারণ, কিছু বের না হওয়াই নিয়ম। আরো স্মরণ রাখবে যে, শয়তানের ওয়াসওয়াসা, তার প্ররোচনা ও তার সৃষ্ট সন্দেহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুমিনকে ক্লান্ত করা ও তাকে কল্যাণকর এসব কাজ থেকে বিরত রাখা। আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাচ্ছি।
সূত্রঃ ফাতওয়া নূর আ’লা আদ-দারবঃ ২/৫৭৭।
____________________________________
পেশাব করার পরে যার সত্যি সত্যিই পেশাব বের হয় সে কি করবে
এই লেখাটা শায়খ মতিউর রাহমান মাদানী হা’ফিজাহুল্লাহর একটি প্রশ্নোত্তর থেকে নেওয়া। এবং তার সাথে আমি কিছুটা সম্পাদনা ও ব্যখ্যা যোগ করেছি।
(১) পেশাব শেষে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি চাপ দিবে, যাতে করে পেশাব পড়া বন্ধ হয়।
(২) এর পরেও যদি পেশাব বের হতে থাকে, তাহলে টিস্যু বা ঢিলা-কুলুখ নিয়ে পেশাব ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। (সাবধান! কোন হাটাহাটি নয়)। সে শুধু লজ্জাস্থান একটু ঝেড়ে পেশাব ফেলার চেষ্টা করবে, এবং এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। এটা নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়াবাড়ি করে জীবনটাকে কষ্টকর করে তুলবেন না।
(৩) এর পরেও যদি মনে হয় পেশাব বের হচ্ছে, এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। এই অবস্থায় সে পেশাব বের হচ্ছে কি না হচ্ছে, সেইদিকে মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবেনা। ওযু করার পরে সে কাপড়ের উপর দিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ও তার আশেপাশে সামান্য পানির ছিটা দিবে, এতে পেশাব বের হলো কিনা, এই ওয়াসওয়াসায় সে পড়বেনা। আর ওযু করার পরে বা নামাযে পেশাব বের হয়েছে এমন সন্দেহ হলে, একবার ‘আ’উযুবিল্লাহিমিনাশ শাইত্বানির রাযীম’ পড়বে। এরপরে এনিয়ে আর কোনো চিন্তা করবেনা, যদিওবা পেশাব বের হয়ে যায়! এই অবস্থায় সে মাযুর বা অসুস্থ, তাই তার জন্যে ওযু ভাংবেনা। অসুস্থতার কারণে সে এক ওযু দিয়েই এক ওয়াক্তের সমস্ত ফরয, সুন্নত, নফল নামায পড়তে পারবে।
(৪) আর কেউ যদি নিশ্চিত হয় যে, ওযু করার পরে, নামাযে বা এমনিতে যে কোনো সময় পেশাব পড়ে, তাহলে সে চিকিতসা করাবে কারণ এটা একটা রোগ। আর চিকিৎসা করেও উপকার না পেলে, সে লজ্জাস্থানে তুলা/কাপড় বা আন্ডারওয়ার পড়বে যাতে করে পেশাব গায়ে বা কাপড়ে না লাগে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে প্রত্যেক নামাযের পূর্বে এটা পরিবর্তন করে নিবে। আর যদি এই পরিবর্তনকরার মাঝে কিছু পেশাব গায়ে বা কাপড়ে লাগে, অথবা পরিবর্তন করার কোন সুযোগ না থাকে, তাহলে ঐ অবস্থাতেই সেই নামায পড়ে নিবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই নামায ত্যাগ করা যাবেনা।
(৫) আর একটা মাসয়ালা হলো, এই রকম যাদের পেশাব পড়া রোগ, সে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের আগে নতুন করে ওযু করে নিবে, কারণ তার জন্য এক ওযুতে দুই ওয়াক্তের নামায হবেনা। একবার ওযু করে শুধু এক ওয়াক্তের ফরয, সুন্নত, নফল সবগুলো নামায পড়তে পারবে। কিন্তু নতুন ওয়াক্তের নামাযের জন্য নতুন করে ওযু করে নিতে হবে।
সর্বশেষঃ উপরের লেখাগুলোতে আমি চেষ্টা করেছি এটা বুঝানোর জন্যে যে, এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে, নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু যেটা ক্ষমতার বাইরে থাকবে, বা যেটা করা খুব কষ্টকর হয়ে যাবে, সেই ব্যপারে আল্লাহ হচ্ছেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল। কারণ, আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন, “আর আল্লাহ বান্দাদের জন্য সহজ করতে চান, তিনি কঠিন করতে চান না।”
“আল্লাহ সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা কারো উপর চাপিয়ে দেন না।”
লিখার দুর্বলতার কারণে হয়তোবা বোঝাতে পারলাম না। কারো যদি বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে আপনারা স্থানীয় কোন আলেমের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন, আমাদের দেহ ও মনকে পবিত্র রাখুন, আমিন।

বিধর্মী প্রতিবেশিকে কি দান করা যাবে

বিধর্মী প্রতিবেশীকে দান করার বিধান কি?

জবাবে বলা যায় যে, প্রতিবেশী যদি হিন্দু হয়, ইহুদি হয়, খ্রীষ্টান হয় অথবা অন্য কোনো মতাদর্শের হয়ে থাকে তাহলেও তাদেরকে নফল দান করতে, সাহায্য সহযোগিতা করতে ইসলাম অনুমতি প্রদান করেছে। কারন প্রতিবেশীর হকের গুরুত্ব ইসলামে অত্যন্ত বেশি। হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হল। তিনি এসে বললেন, তোমরা কি আমাদের ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি,  প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরীল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে। (আবু দাউদ ৫১৫১, তিরমিযী ১৯৪৩, মিশকাত ৪৯৬৪)।

অন্য হাদীসে এসেছে, নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, তাসদ্দাক্বু আ'লা আহলিল্ আদ্ইয়ান। অর্থাৎ তোমরা সকল ধর্মের লোকদের মাঝে (নফল) দান সদকা করো। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১০৩৯৮)। সুতরাং বিধর্মী প্রতিবেশীদের সাহায্য সহযোগিতা করা যাবে, নফল বা সাধারণ দান করা যাবে।

অল্প বিশুদ্ধ আমল নাজাতের জন্য যথেষ্ঠ

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন কাজের নির্দেশ দিন, যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বললেন, আল্লাহর ‘ইবাদাত করো, তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার করো না, ফারয সলাত কায়িম করো, নির্ধারিত যাকাত আদায় করো এবং রমাযানের সওম পালন করো। সে লোক বলল : সে সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি কখনো এর মধ্যে বৃদ্ধিও করবো না, আর তা থেকে কমাবও না। লোকটি যখন চলে গেলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি কেউ কোন জান্নাতী লোক দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এ ব্যক্তিকে দেখে নেয়। (ই.ফা. ১৫; ই.সে. ১৫)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

সন্দেহযুক্ত আমল করতে স্বয়ং রসুলুল্লহ সঃ ই নিষেধ করেছেন

কোন সন্দেহযুক্ত আমল করতে স্বয়ং রসুলুল্লহ সঃ ই নিষেধ করেছেন।
হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট এবং এ দু‘য়ের মধ্যখানে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয় ।

রাসুল (ﷺ) বলেন,,
دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ
যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। 
অতঃপর নিশ্চয়ই সত্য হলো শান্তি ও স্বস্তি এবং নিশ্চয়ই মিথ্যা হলো দ্বিধা-সন্দেহ। (তিরমিজি / ২৫১৮)

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চার পাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
(বুখারীঃ ২০৫১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯০৮ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯২৩; মুসলিম (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ৩৯৪৯)

Tuesday, June 25, 2019

কুরআন হাতে নিয়ে কসম খাওয়া কি জায়েয

প্রশ্ন: কুরআন হাতে নিয়ে কসম খাওয়া কি জায়েয?

উত্তর: কসম খাওয়ার সঠিক নিয়ম হল, কেবল আল্লাহর নাম বা তার গুণের কসম খাওয়া। যেমন এভাবে বলা, আল্লাহর নামে কসম করছি.., বা আল্লাহর ইজ্জতের কসম করছি...।
আল্লাহর নামে কসম খাওয়ার চেয়ে বড় জিনিস আর কী হতে পারে?!
🔰 কুরআন হাতে নিয়ে কসম খাওয়া বিদআত:
কুরআন হাতে নিয়ে কসম খাওয়া সাহাবীদের আমলে বা কুরআন সংকলিত হওয়ার পরও সাহাবী-তাবেঈদের মধ্যে প্রচলিত ছিল না।
কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “ইবনুল আরাবি বলেছেন, কুরআনুল কারিমের উপর হাত রেখে কসম করা বিদআত। কোনো সাহাবী এরূপ করেননি”।
সুতরাং এ বিদআতী পন্থায় কাউকে কসম করতে বলা বর্জনীয়।
🔰 কাউকে কুরআন হাতে নিয়ে কসম খেতে বাধ্য করা হলে তার জন্য তা বৈধ:
কোন ব্যক্তি যদি মাসআলাটি জানার পরও কাউকে কুরআন হাতে নিয়ে কসম খাওয়ার নির্দেশে দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে। কিন্তু যাকে কসম খেতে বলা হবে সে নিরাপরাধ হলে কসম খেতে পারে বাধ্য হয়ে। কেননা অন্যথায় সে অন্যায় সন্দেহের শিকার হবে।
সুতরাং এ পরিস্থিতিতে সে নিজেকে দোষমুক্ত করার উদ্দেশ্যে কুরআন হাতে নিয়ে কসম খেতে পারে। এতে তার গুনাহ হবে না। কিন্তু যে আদেশ করল সেগুনাহগার হবে।
পদ্ধতি: এ ক্ষেত্রে সে পবিত্র অবস্থায় কুরআন হাতে নিয়ে আল্লাহর নামে কসম খাবে।
অনুরূপভাবে স্বয়ং কুরআনের কসম খাওয়াও জায়েয আছে এই নিয়তে যে, এটি আল্লাহর কালাম বা বাণী। আর আল্লাহর বাণী আল্লাহর সিফাত (গুণ) এর অন্তর্ভূক্ত। ইসলামী শরিয়াতে আল্লাহর সিফাত বা গুণের কসম খাওয়া জায়েয। কারণ, আল্লাহর গুণ আল্লাহর সত্বারই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিন্তু কেউ যদি কুরআন দ্বারা উদ্দেশ্য করে কাগজ, কালি ও আরবি বর্ণমালা, তাহলে এটা জায়েয নয়, বরং শিরকের অন্তর্ভুক্ত; কারণ, কাগজ-কালি ও আরবি বর্ণমালা মাখলুক তথা সৃষ্টিজীব। তাই কুরআনুল কারিমের কসম না করাই ভালো, কারণ তাতে যেরূপ আল্লাহর কালাম রয়েছে, অনুরূপ কাগজ-কালি এবং আরবি বর্ণমালাও রয়েছে।
🔴 আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম খাওয়া শিরক :
মনে রাখা জরুরি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর কসম খাওয়া শিরক।
 ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত কারো নামে শপথ করল সে কুফরি করল, অথবা শিরক করল”।
 ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
لأَنْ أَحْلِفَ بِاللَّهِ كَاذِبًا أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَحْلِفَ بِغَيْرِهِ صَادِقًا
“গায়রুল্লাহর নামে সত্য কসম অপেক্ষা আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করব, এটা আমার নিকট অধিক প্রিয়”।
 ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
لَا تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ مَنْ حَلَفَ بِاللَّهِ فَلْيَصْدُقْ، وَمَنْ حُلِفَ لَهُ بِاللَّهِ فَلْيَرْضَ، وَمَنْ لَمْ يَرْضَ بِاللَّهِ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ
“তোমরা তোমাদের পিতাদের নামে কসম কর না। যে আল্লাহর নামে কসম করে তার উচিত সত্য বলা, আর যার জন্য আল্লাহর নামে কসম করা হল তার উচিত সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, আর যে আল্লাহর নামে সন্তুষ্টি প্রকাশ করল না, তার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক নেই”।
 নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
((مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللَّهِ أَوْ لِيَصْمُتْ)).
“যার কসম করতে হয়, সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে, অথবা চুপ থাকে”।
-----------------
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...