♥আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
:
#প্রশ্ন: তাবীজ কবজ করা কি শিরক? ইসলাম তাবিজ কবজ কতটুকু সমর্থন করে?
এই তাবিজ বত'মান সমাজের মানুষ tablat/capsul. এর মত মনে করছে 🌍সমস্যা হল, এই সব আবার এক দরণের হুজুর ও মুল্লারাই দিয়ে থাকে।এখানেই যত সমস্যা 📍📍📍👇
আসলে এই বিষয়ে 📚শরীয়ত📖কি বলে?
শরীরে একটা তাবিজ বেধে আপনি নামায পড়ছেন, সিয়াম পালন করছেন, তাহাজ্জুদ পড়ছেন। এই তাবিজের উপর আপনার যদি কানাকড়িও আস্থা বিশ্বাস থেকে থাকে আপনি আপনার মরা পর্যন্ত রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়লেও তার কিছুই কবুল হবে না।
তাবিজ ব্যবহার স্পষ্টভাবে শির্ক।
রসুল (সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ ''যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো, সে শির্ক করলো'' [মুসনাদে আহমাদ - সনদ সহীহ]
আর শির্কের ফল কি, সে ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেনঃ ''যদি তারা শির্ক করে তাহলে তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।'' [সূরাহ আন'আমঃ ৬/৮৮]
তিনি আরও বলেনঃ ''নিশ্চয়ই যে আল্লাহ'র সঙ্গে শির্কে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং জাহান্নামকে অবধারিত করে দেন।''
[#সূরাহ মায়েদাহঃ ৫/৭২]
-
তাবিজ ব্যবহার করলে আল্লাহ'র উপর আর ভরসা থাকে না। আপনি যখনই আচমকা কোন বিপদে পতিত হবেন, সাথে সাথে আপনার খেয়াল তখন তাবিজের দিকে যাবে। এই উদ্দেশ্যে যে, তাবিজ থাকতেও কেন বিপদ আসলো? আপনার এই ২-৩ সেকেন্ডের খেয়ালই যথেষ্ট আপনার সমস্ত আমল বরবাদ করে দেয়ার জন্য। তাই আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি এখুনি তাবিজ খুলে ফেলুন। কোন বিপদ এলে শুধু আল্লাহ'র কাছেই সাহায্য চান এবং তার উপরই ভরসা রাখুন। অন্তত এটুকু তো মানেন যে, আল্লাহই আপনার সমস্ত বিপদ থেকে উদ্ধারকারী। তাহলে শুধু আল্লাহ'র উপর ভরসা করতে আপনার সমস্যা কোথায়?
★তাবিজ ও তাবিজ জাতীয় বস্তুর ব্যবহার
:
এ শিরোনামের অধীন চারটি বিষয় আলোচনা করব:
ক. ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ,
খ. কুরআন-হাদিসের তাবিজ,
গ. তাবিজ ঝুলানো কোন প্রকার শিরক,
ঘ. চিকিৎসা পদ্ধতি, শরয়ী ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজের পার্থক্য।
:
ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির হাতে তামা/ স্বর্ণের আংটি দেখে বললেন,
«وَيْحَكَ مَا هَذِهِ ؟ " قَالَ: مِنَ الْوَاهِنَةِ، قَالَ: " أَمَا إِنَّهَا لَا تَزِيدُكَ إِلَّا وَهْنًا، انْبِذْهَا عَنْكَ، فَإِنَّكَ لَوْ مِتَّ وَهِيَ عَلَيْكَ مَا أَفْلَحْتَ أَبَدًا»
“ধ্বংস তোমার, এটা কী? সে বলল: অহেনার[1] অংশ। তিনি বললেন: মনে রেখ, এটা তোমার দুর্বলতা ব্যতীত কিছু বৃদ্ধি করবে না, এটা তোমার থেকে ছুড়ে মার, কারণ তুমি যদি মারা যাও আর এটা তোমার উপর থাকে, তুমি কখনো সফল হবে না”[2]
উকবা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً، فَلَا أَتَمَّ اللَّهُ لَهُ، وَمَنْ تَعَلَّقَ وَدَعَةً، فَلَا وَدَعَ اللَّهُ لَهُ»
“যে তামিমাহ[3] ঝুলালো, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে শঙ্খ ঝুলালো আল্লাহ তাকে নিরাপত্তা দিবেন না”।[4]
উকবা বিন আমের আল-জোহানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে একদল লোক উপস্থিত হল। তাদের নয়জনকে তিনি বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন, আর তাকে ত্যাগ করলেন? তিনি বললেন:
«إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيمَةً "، فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا، فَبَايَعَهُ، وَقَالَ: " مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ »
“তার উপর তাবিজ রয়েছে, তিনি স্বীয় হাত বের করে তা ছিঁড়ে ফেললেন, অতঃপর তাকে বায়আত করলেন, এবং বললেন যে তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করল।[5]
একদা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জনৈক ব্যক্তির হাতে জ্বরের তাগা দেখে কেটে ফেললেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন:
﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾ [يوسف: ١٠٥]
“তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে শিরক করা অবস্থায়”।[6]
এ ঘটনা প্রমাণ করে তাগা ব্যবহার করা শিরক।
আবু বশির আনসারি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফর সঙ্গী ছিলেন। তিনি জনৈক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, -মানুষেরা তখন ঘুমের বিছানায় ছিল-,
«أَنْ لَا يَبْقَيَنَّ فِي رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلَادَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلَادَةٌ إِلَّا قُطِعَتْ»
“কোনো উটের গলায় সুতার মালা (ধনুকের ছিলা) বা কোনো প্রকার মালা রাখা যাবে না, অবশ্যই কেটে ফেলা হবে”।[7]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের গলার সুতা ও মালা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তাবিজ ঝুলানোর উপায় অবশিষ্ট না থাকে।
আবু ওয়াহহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وَارْتَبِطُوا الْخَيْلَ، وَامْسَحُوا بِنَوَاصِيهَا وَأَكْفَالِهَا، وَقَلِّدُوهَا وَلَا تُقَلِّدُوهَا الْأَوْتَارَ»
“তোমরা ঘোড়া বেঁধে রাখ, তার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুলাও এবং তাকে লাগাম পরাও, তবে সুতা/ মালা পরিয়ো না।[8]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী জয়নব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বলেন, এটা কী? আমি বললাম, এটা পড়া তাগা, এতে ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে। তিনি তা কেটে ফেললেন এবং বললেন, আব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি::
«إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ»
“ঝাড়-ফুঁক,[9] তাবিজ ও তিওয়ালাহ[10] নিঃসন্দেহে শিরক”।[11]
এসব দলিল বলে, রোগ-ব্যাধি দূর বা প্রতিরোধ করার জন্য মানুষ বা জীব-জন্তুর শরীরে, কিংবা ক্ষেত-খামারে তাবিজ, তাগা, কড়ি ও সুতা ইত্যাদি ব্যবহার করা শিরক। কারণ, তামিমাহ ও তামিমাহ জাতীয় বস্তুর উপর নিষেধাজ্ঞার হাদিসগুলো ব্যাপক, তাই সবধরণের তাবিজ শিরক। কুরআন/ গায়রে কুরআন কোনো বিভেদ নেই।
দ্বিতীয়ত যেসব দলিলে তাবিজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাতে কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ বলা হয়নি, যেমন শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুঁক বৈধ বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ»
“তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার কাছে পেশ কর, ঝাড়-ফুঁকে কোনো সমস্যা নেই, যদি তাতে শিরক না থাকে”।[12]
এ হাদিসে যেরূপ কুরআনুল কারিমের তাবিজকে পৃথকভাবে বৈধ বলা হয়নি, যেমন শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুককে বৈধ বলা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিদের জীবনে তাবিজের কোনো প্রমাণ নেই। হাদিসের পাঠকমাত্র দেখবে, দোয়া ও যিকর সংক্রান্ত সকল হাদিসের ভাষা হচ্ছে, ‘যে ইহা বলবে’, অথবা ‘যে ইহা পড়বে’ ইত্যাদি; একটি হাদিসেও নেই ‘যে ইহা লিখে রাখবে’, অথবা ‘যে ইহা ঝুলাবে’। ইবনে আরাবি বলেন: “কুরআন ঝুলানো সুন্নত নয়, কুরআন পাঠ করা সুন্নত”।
ইব্রাহিম নখয়ি রহ. বলেন, “আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের সাথীগণ কুরআন ও গায়রে কুরআন সর্বপ্রকার তাবিজ অপছন্দ করতেন, যেমন আলকামা, আসওয়াদ, আবু ওয়ায়েল, মাসরুক ও রাবি বিন খায়সাম প্রমুখ তাবেয়িগণ”।[13]শিরক ও পাপের পথ বন্ধ করার স্বার্থে সকল তাবিজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি। কুরআনের তাবিজ শিরকী তাবিজের পথ উন্মুক্ত করে। আদর্শ মনীষীগণ তাবিজ অপছন্দ করতেন, অথচ তাদের যুগ ছিল বিদআত ও শিরক মুক্ত, ওহী ও ঈমানের নিকটবর্তী। আমাদের যুগ মূর্খতা ও বিদআত সয়লাবের যুগ, এতে তাবিজ বৈধ বলার অর্থ উম্মতকে শিরকের দিকে ঢেলে দেওয়া। দ্বিতীয়ত তাবিজে ব্যবহৃত কুরআন নাপাক বস্তু বা স্থানের সম্মুখীন হয়, বিশেষত বাচ্চাদের গলার তাবিজ, যা থেকে কুরআনকে পবিত্র রাখা জরুরি।
তাবিজ ব্যবহারকারীরা সাধারণত কুরআন-হাদিসের ঝাড়-ফুঁক করে না, তাবিজকেই যথেষ্ট ভাবে। তাদের অন্তর তাবিজের সাথে ঝুলন্ত থাকে, যদিও তারা স্বীকার করে না, তবে তাবিজ খুললে তার সত্যতা প্রকাশ পায়! কারো চেহারা বিবর্ণ হয়, কারো শরীরে কাঁপুনি উঠে। যদি তাদের অন্তর আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত থাকত ও তাতে পূর্ণ বিশ্বাসী হত, কখনো তারা মন এমন বস্তুর দিকে ধাবিত হত না, যার সম্পর্ক কুরআন-হাদিসের সাথে নেই। বস্তুত তাবিজ ব্যবহার করে তারা কুরআনের সাথে নয়, বরং কাগজ ও জড় বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত হয়।
তাবিজ একটি জড়-বস্তু, তার সাথে রোগ-মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। তাবিজকে রোগ মুক্তির উপায় সাব্যস্ত করার জন্য অবশ্যই দলিল প্রয়োজন, তার পক্ষে কোনো শরীয় দলিল নেই। কারো রোগ-ব্যাধি হলে শরয়ী ঝাড়-ফুঁক করা সুন্নত, যেমন জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের করেছেন। এটাই বৈধ ও শরীয়ত অনুমোদিত পন্থা।বৈধ ঝাড়-ফুঁকের বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ, যদি তার দ্বারা আরোগ্য লাভ হয় এবং সুন্নত মোতাবেক ঝাড়-ফুঁক করা হয়; যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বিনিময় গ্রহণ করেছেন, কিন্তু আমাদের সমাজের একশ্রেণীর আলেম তাবিজ দেন ও আরোগ্য লাভের পূর্বে বিনিময় গ্রহণ করেন। তারাও দলিল হিসেবে বুখারি শরীফের হাদিসটি পেশ করেন, অথচ সেখানে স্পষ্ট আছে সাহাবিগণ তাবিজ দেননি, বরং সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন এবং আরোগ্য লাভ করার পর বিনিময় গ্রহণ করেছেন, আগে নয়। অতএব এ হাদিসকে তাবিজ দেয়া ও তার বিনিময় গ্রহণ করার দলিল হিসেবে পেশ করা অপব্যাখ্যা ব্যতীত কিছু নয়।
কুরআন-হাদিসের তাবিজ সম্পর্কে আলেমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। পূর্বোক্ত দলিলের ভিত্তিতে একদল আলেম বলেন, কুরআন-গায়রে কুরআন সর্বপ্রকার তাবিজ শিরক। কতক আলেম বলেন, কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ। তারা দলিল হিসেবে আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ব্যক্তিগত আমল পেশ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুমে ঘাবড়ে যায়, তার বলা উচিত:
«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ، فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ»
“আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহ দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তাঁর গজব ও শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানসমূহের কুমন্ত্রণা ও তাদের উপস্থিতি থেকে”।[14] ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন: “হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর সম্পর্কে আছে, তিনি তার সাবালক বাচ্চাদের দোয়াটি শিক্ষা দিতেন, আর যারা সাবালিগ হয়নি কাগজে লিখে তাদের গলায় দোয়াটি ঝুলিয়ে দিতেন”।[15]
ইমাম আবু দাউদ রহ. বলেন, “আব্দুল্লাহ বিন আমের বর্ণিত হাদিসের সনদ মুহাদ্দিসদের নিকট বিশুদ্ধ নয়। বিশুদ্ধ মানলেও এটা তার ব্যক্তিগত আমল, অসংখ্য সাহাবির বিপরীত তার ব্যক্তিগত আমল দলিল যোগ্য নয়।
ইমাম শাওকানি রহ. বলেন: এ হাদিসের সনদে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রয়েছে, তার সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের অভিযোগ প্রসিদ্ধ।
আলবানি রহ. বলেন, হাদিসের শেষাংশ: আব্দুল্লাহর ঘটনা ব্যতীত অবশিষ্টাংশ সহি”।[16]
অতএব আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের নাবালিগ বাচ্চাদের গলায় দোয়াটি লিখে ঝুলাতেন কথাটি সঠিক নয়।
উক্ত আলোচনার পর তাবিজ ত্যাগ করার জন্য কারো ফতোয়ার প্রয়োজন হয় না, তাবিজ ব্যবহার করা ছোট-শিরক, না বড় শিরক। কুরআনুল কারিমের তাবিজ ব্যবহার করা কারো নিকট শিরক, কারো নিকট শিরক নয়, কুরআন ব্যতীত অন্যান্য তাবিজ সবার নিকট শিরক। যারা বলেন কুরআনের তাবিজ শিরক নয়, তাদের নিকট তাবিজ ত্যাগ করার কারণে কেউ গুনাগার হবে না, কিন্তু যারা শিরক বলেন, যদি তাদের ফতোয়া ঠিক হয়, তাহলে তাবিজ ব্যবহারকারীর পরিণতি কী হবে!?অতএব তাবিজে কোনো কল্যাণ নেই। বর্তমান মুসলিমদের শরীরে যে, তাবিজ-কবচ, মাদুলি-কড়ি, শামুক-ঝিনুক, প্রাণীর হাড়, গাছের ছাল, তামা-লোহা-সুতা-রাবার-তাগা ও অন্যান্য ধাতব বস্তু দেখা যায়, আবার কখনো জীব-জন্তুর শরীরে, ঘরের খুঁটি ও গাছের ডালে; মাটির ভিতর ও বিছানার নিচে এসব বস্তু পুঁতে রাখতে দেখা যায়, তার অধিকাংশ বৈধ! তাবিজের পথে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে, সন্দেহ নেই। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মাদুলি, তাবিজ ও তাগা ইত্যাদি কতক অমুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতীক ছিল। আল্লাহ মুসলিম সমাজকে এসব বস্তু থেকে পবিত্র করুন।
আল্লাহ তা‘আলা রোগ নাযিল করেছেন, রোগের সাথে ওষুধও নাযিল করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا أَنْزَلَ اللَّهُ دَاءً إِلَّا أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً »
“আল্লাহ কোনো রোগ নাযিল করেননি, তবে অবশ্যই তার জন্য আরোগ্য নাযিল করেছেন”।[17]
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءُ الدَّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللَّهِ »
“প্রত্যেক রোগের জন্য ওষুধ রয়েছে, যখন রোগের সাথে ওষুধের মিল হয়, আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ হয়”।[18]
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ اللَّهَ لَمْ يُنْزِلْ دَاءً إِلا أَنَزَلَ مَعَهُ دَوَاءٌ، جَهِلَهُ مَنْ جَهِلَهُ، وَعَلِمَهُ مَنْ عَلِمَهُ»
“নিশ্চয় আল্লাহ কোনো রোগ নাযিল করেননি, তবে অবশ্যই তার সাথে ওষুধ নাযিল করেছেন, যে জানতে পারেনি সে জানেনি, আর যে জানতে পেরেছে সে জেনেছে”।[19]উসামাহ ইবনে শারিক বলেন, গ্রামের লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করব না? তিনি বললেন:
«نَعَمْ يَا عِبَادَ اللَّهِ، تَدَاوَوْا، فَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ شِفَاءً، أَوْ قَالَ: دَوَاءً، إِلَّا دَاءً وَاحِدًا، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا هُوَ؟ قَالَ: الْهَرَمُ»
“অবশ্যই হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, কারণ আল্লাহ কোনো রোগ রাখেননি, তবে অবশ্যই তার জন্য নিরাময় রেখেছেন, অথবা বলেছেন: ওষুধ রেখেছেন, তবে একটি রোগ ব্যতীত, তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল, সে রোগটি কী? তিনি বললেন: বার্ধক্য”।[20]
অবশ্য কোনো হারাম বস্তুতে আল্লাহ্ তার বান্দাদের জন্য আরোগ্য রাখেননি। উম্মে সালামাহ বলেন, আমার এক মেয়ে অসুস্থ হয়েছিল, আমি একটি পাত্রে তার জন্য ‘নাবিজ’[21] তেরি করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন, তখন পাতিলটি উতরাতে ছিল, তিনি বললেন: এটা কী? উম্মে সালামাহ উত্তর দিলেন: আমার মেয়েটা অসুস্থ, আমি তার জন্য ইহা তৈরি করছি। তিনি বললেন:
«إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِي حَرَامٍ»
“নিশ্চয় আল্লাহ হারাম বস্তুতে তোমাদের আরোগ্য রাখেননি”।[22]
অতএব আল্লাহ তা‘আলা রোগের জন্য আরোগ্য রেখেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই, তবে আরোগ্য লাভের জন্য অবশ্যই হালাল বস্তু ও বৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।বৈধ চিকিৎসা দু’প্রকার:
১. কুরআনুল কারিম বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বিভিন্ন বস্তুর গুণাগুণের ভিত্তিতে চিকিৎসা করা; অনুরূপ কুরআন বা হাদিসের দোয়া দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা, এ জাতীয় তদবিরকে নববী চিকিৎসা ও শরয়ী ঝাড়-ফুঁক বলা হয়; যার বর্ণনা হাদিসের কিতাবে রয়েছে। এ জাতীয় চিকিৎসা দ্বারা আল্লাহর ইচ্ছায় বান্দা আরোগ্য লাভ করে।
২. জেনারেল চিকিৎসা তথা বস্তুর গুণাগুণ ও তার প্রভাবের উপর পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে চিকিৎসা করা। বস্তুর প্রভাব স্পষ্ট ও উপলব্ধি করা যায়, যেমন কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি ওষুধের প্রভাব। এ জাতীয় চিকিৎসা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ। কারণ, এ চিকিৎসা গ্রহণ করার অর্থ আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া, তিনি এতে কিছু গুণাগুণ রেখেছেন, যখন ইচ্ছা তা বাতিল করতে পারেন, যেমন ইব্রাহিম ‘আলাইহিস সালামের জন্য প্রজ্বলিত অগ্নির দাহন ক্রিয়া বাতিল করেছিলেন।
পক্ষান্তরে তাবিজ-কবচ ও অন্যান্য জড়-বস্তু শরীরে ঝুলানোর ফলে কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না, গবেষণার দ্বারা তার ক্রিয়া প্রমাণিত হয়নি এবং কুরআন-হাদিসে তার স্বীকৃতি নেই। যেমন ভাত খেলে খিদে নিবারণ হয়, কিন্তু পেটের উপর ভাত রেখে খিদে নিবারণের আশা করা মিথ্যা। শরয়ী ঝাড়-ফুঁক ও ওষুধের চিকিৎসা ভাত খাওয়ার ন্যায়, আর তাবিজের চিকিৎসা পেটের উপর ভাত রেখে খিদে নিবারণের চেষ্টা করার ন্যায়।
তাবিজ-কবচ ও এ জাতীয় জড়-বস্তুকে আল্লাহ তা‘আলা রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির উপায় করেননি, আবার তার উপকারিতা মানুষের অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত নয়। বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব দেখা যায় না, অনুভবও করা যায় না। তাই অনেকে বলেন, এসব বস্তুর ওপর ভরসা করার অর্থ মুশরিকদের ন্যায় মৃত ব্যক্তি ও মূর্তির ওপর ভরসা করা; যা শুনে না-দেখে না, উপকার বা অপকারের ক্ষমতা রাখে না, অথচ তারা ভাবে এগুলো তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, অথবা তাদের থেকে অকল্যাণ প্রতিহত করবে।1] অহেনা অর্থ এক প্রকার হাড়, যার অংশ বিশেষ তাবিজে ব্যবহার করা হয়।
[2] মুসনাদে আহমদ: (১৯৫৪৯), নাসায়ী: (৯/৩৪৯), ইবনে মাজাহ: (৩৫৩১), ইবনে হিব্বান: (৬২২২), হাদিসটি সহিহ্।
[3] তামিমার সংজ্ঞা: রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ অথবা বদ-নজর প্রতিরোধ অথবা সম্ভাব্য কোনো অনিষ্ট দূর করার জন্য শরীরে ঝুলানো বস্তুকে তামিমাহ বলা হয়, হোক সেটা কড়ি, অথবা লাকড়ি, অথবা তাগা, অথবা কাগজ কিংবা কোনো বস্তু। ইসলাম পূর্বযুগে বদ-নজর থেকে সুরক্ষা এবং গৃহ-পালিত পশু-পাখী ও দুষ্ট প্রাণীকে বশ করার জন্য, কখনো আত্মরক্ষার জন্য মুশরিকরা তামিমাহ গলায় বা শরীরের কোনো অংশে ঝুলাত। তাদের বিশ্বাস ছিল, তাকদির প্রতিরোধ ও অনাগত অনিষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখে তামিমাহ। তারা কখনো তামিমাহ দ্বারা গায়রুল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করত, যা ছিল সরাসরি শিরক ও তাওহীদ পরিপন্থী। ইসলাম তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
[4] আহমদ: (১৬৯৫১), হাকেম: (৪/২১২), মুসনাদে আবি ইয়ালা আল-মুসিলি: (১৭৫৯)
[5] সহি মুসনাদে আহমদ: (১৬৯৬৯), সহি হাদিস সমগ্র : (৪৯২), হাকেম।
[6] ইউসুফ: (১০৬) তাফসিরে ইবনে কাসির।
[7] বুখারি: (৩০০৫), মুসলিম: (২১১৮)
[8] সুনানে নাসায়ী সুগরা: (৩৫৬৫), মুসনাদে আহমদ: (১৮৫৫২)
[9] রুকা অর্থ নিষিদ্ধ ঝাড়-ফুঁক, আউনুল মাবুদ, হাদিস নং: (৩২৭২)
[10] আসমায়ি বলেন: তিওয়ালাহ: একপ্রকার যাদু, স্বামীর নিকট স্ত্রীকে প্রিয় করার জন্য যার ব্যবহার করা হয়। মোল্লা আলি কারি বলেন: ‘তিওয়ালাহ’ একপ্রকার যাদু, অথবা যাদুর মন্ত্র পাঠ করা তাগা, অথবা কাগজ, তাতে মহব্বত সৃষ্টির মন্ত্র পাঠ করা হয়। আউনুল মাবুদ, হাদিস নং: (৩২৭২)[11] আবু দাউদ: (৩৮৮৩), আহমদ: (৩৬০৪), ইবনে হিব্বান: (৬০৯০), ইবনে মাজাহ: (৩৫৩০), সহি হাদিস সমগ্র: (১৩১)
[12] মুসলিম : (২২০২), ইবনে হিব্বান: (৬০৯৪)
[13] ফতহুল মজিদ।
[14] আহমদ : (১৬১৩৭), তিরমিযি : (৩৫২৮), আবু দাউদ: (৩৮৯৩)
[15] তিরমিযি: (৩৫২৮), আহমদ: (৬৬৫৭) এ হাদিস সহি হলে সাবালিগ বাচ্চা কিংবা বড়দের গলায় তাবিজ ঝুলানো বৈধ প্রমাণ হয় না, শুধু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বৈধ বলা যায় তাও যারা দোয়া পড়তে পারে না।
[16] সহি তিরমিযি: (৩৫২৮), সহি হাদিস সমগ্র: (১/৫২৯), আত-তালিক আলা-মুসনাদি আহমদ: (১১/২৯৬), ‘আন-নাহজুজ সাদিদ’ লিদ-দুসারি: (১১১)
[17] বুখারি: (৫৬৭৮),
[18] মুসলিম: (২২০৬)
[19] সহি ইবনে হিব্বান: (১৩/৪২৭)
[20] তিরমিযি: (২০৩৮)
[21] আঙ্গুরের রস দ্বারা তৈরি নেশা জাতীয় পানীয়।
[22] সহি ইবনে হিব্বান: (১৩৯১), আস-সুনানুস সাগির লিল-বায়হাকি: (৪৩২৪), হাকিম: (৪/৪০৭)
★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★


No comments:
Post a Comment