Sunday, May 12, 2019

৫ জি স্পিড কি ইসলাম সমর্থন করে



দ্রুততার সাথে কোরআন পড়া হারাম!!
সুন্দর করে তিলাওয়াত করা ফরজ!!
.
সকল প্রকার গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ) সালাত পড়ুয়া সকল মুসল্লী ও হুফফাজদের লিখাটি পড়ার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি!!
.
রামাদান মাস হল কোরআন নাযিলের মাস। এই মাসে মহান রব রাসুলের (ﷺ) উপর কোরআন নাযিল করেন যেন আমরা সে অনুসারে আমল করে নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচিয়ে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারি।
.
রামাদানের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল কিয়ামুল লাইল। রামাদান মাসে কিয়ামুল লাইল সালাত আদায় করলে মানুষের জীবনের অগ্র পশ্চাতের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
.
রাসূল (ﷺ) বলেনঃ:

«مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যে ব্যক্তি রমযানের রাতে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
.
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৯।
.
আমরা জানি স্বয়ং রাসুল (ﷺ) ও তার সাহাবীগণ বিশেষ গুরুত্বসহকারে রামাদানের রাতের সালাত আদায় করতেন। এর জন্য রাসুল (ﷺ) ও আমাদের বিশেষ তাগাদা দিয়েছেন। তাই পৃথিবীর সকল ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই মাসে রাত জেগে হাফিজদের দিয়ে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রাতের সালাত আদায় করে থাকেন।
.
 রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
 صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ،
 ‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ’...
.
 (সহিহ বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘সালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬)''।
.
তাই যেকোনো ধরনের সালাত আদায় করতে গেলেই আমাদেরকে রাসুল (ﷺ) ও সাহাবীদের সুন্নাতের অনুসরণ করতে হবে। যদি কেউ রাসুলের (ﷺ) সুন্নাতের বাইরে গিয়ে কোন ইবাদত করে তাহলে তার মত হতভাগা পৃথিবীতে আর কেউ হবেনা। তার এমনই  পোড়া কপাল যে, সে রাসুলের (ﷺ) উম্মাত থেকে বের হয়ে যাবে।
.
রাসূল (ﷺ) বলেনঃ
.
 فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে দূরে সরে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়” ।
.
(গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ৩২৭৩)
.
রাসূল (ﷺ) বলেনঃ
، فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
যে আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
.
 সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১৮৪৬
.
কাজেই সালাতে ঠিক সেভাবেই কোরআন পাঠ করতে হবে যেভাবে রাসুল (ﷺ) পাঠ করতেন।
.
এবার আসুন কোরআন পাঠ সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশনা কি তা একটু যাচাই করে দেখি...
.
মহান আল্লাহ বলেন,
 وَرَتِّلِ الْقُرْءَانَ تَرْتِيلًا
.
আর কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে।
.
(সূরা মুযযাম্মিল : ৪)
.
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুল (ﷺ) বলেছেন ..
.
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ، وَابْتَغُوا بِهِ اللهَ، مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ قَوْمٌ يُقِيمُونَهُ إِقَامَةَ الْقِدْحِ، يَتَعَجَّلُونَهُ، وَلَا يَتَأَجَّلُونَهُ "

“তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর এবং এ তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা কর। এ আমল কর ওই সম্প্রদায়ের আগমনের পূর্বে , যারা কুরআন তীরের মত সোজা করে পড়ে, কুরআন দ্রুত পড়বে তথা এর দ্বারা দুনিয়ার প্রতিদান তালাশ করবে। তারা কুরআন ধীরস্থিরভাবে তিলাওয়াত করবে না।”
.
[মুসনাদে আহমাদ, হা/14855, সনদ সহিহ]
.
ইমাম ইবনু কাছীর ৭০০ - ৭৭৪ হি, (রহঃ) বলেন,
.
اقْرَأْهُ عَلَى تَمَهُّلٍ فَإِنَّهُ يَكُونُ عَوْنًا عَلَى فَهْمِ الْقُرْآنِ وَتَدَبُّرِهِ. وَكَذَلِكَ كَانَ يَقْرَأُ صَلَوَاتُ اللَّهِ وَسَلَامُهُ عَلَيْهِ
.
এখানে বলা হয়েছে যে, তারতীল সহকারে পড়তে হবে। ترتيل বলে উদ্দেশ্য হলো ধীরে ধীরে সঠিকভাবে বাক্য উচ্চারণ করা। অর্থাৎ কুরআনের শব্দগুলো ধীরে ধীরে মুখে উচ্চারণ করার সাথে সাথে তা উপলব্ধি করার জন্য গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনাও করতে হবে। [তাফসীরে ইবনু কাসীর, ৮/২৬১]
.
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-

 الَّذِيۡنَ اٰتَيۡنٰهُمُ الۡكِتٰبَ يَتۡلُوۡنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖؕ اُولٰٓٮِٕكَ يُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖؕ وَمَنۡ يَّكۡفُرۡ بِهٖ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ

(২/১২১.) যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাকে যথাযথভাবে পাঠ করে। তারা তার ওপর সাচ্চা দিলে ঈমান আনে। আর যারা তার সাথে কুফরীর নীতি অবলম্বন করে তারাই আসলে ক্ষতিগ্রস্ত।

 وَقُرۡاٰنًا فَرَقۡنٰهُ لِتَقۡرَاَهٗ عَلَى النَّاسِ عَلٰى مُكۡثٍ وَّنَزَّلۡنٰهُ تَنۡزِيۡلاً‏

(১৭/১০৬) আর এ কুরআনকে আমি সামান্য সামান্য করে নাযিল করেছি, যাতে তুমি থেমে থেমে তা লোকদেরকে শুনিয়ে দাও এবং তাকে আমি (বিভিন্ন সময়) পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি।
.
কাতাদাহ রাহঃ বলেনঃ
حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ سَأَلْتُ أَنَسًا عَنْ قِرَاءَةِ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم فَقَالَ كَانَ يَمُدُّ مَدًّا
.
একদা আমি আনাস (রাঃ)কে রাসূলের (ﷺ) কিরাআত পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করি। তিনি বলেন, তিনি (স.) যেখানে যতটুকু টেনে পড়ার প্রয়োজন, সেখানে ততটুকুই লম্বা করে টেনে পড়তেন-
.
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ১৪৬৫
অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة)
হাদিসের মানঃ সহিহ
.
উপরের হাদিস থেকে আমরা রাসুলের (ﷺ) কোরআন পাঠ পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা লাভ করতে পারি। আমরা দেখতে পেলাম যে রাসুল (ﷺ) কোরআনের হক আদায় করেই তিলাওয়াত করতেন। যেখানে টেনে পড়ার প্রয়োজন সেখানে টেনে পড়তেন অর্থাৎ ঠিকমত মাখরাজসহ কোরআন তিলাওয়াত করতেন।
.
রাসুলের (ﷺ) কোরআন পাঠ সম্পর্কে হুযাইফা রাঃ বলেনঃ
.
يَقْرَأُ مُتَرَسِّلاً إِذَا مَرَّ بِآيَةٍ فِيهَا تَسْبِيحٌ سَبَّحَ وَإِذَا مَرَّ بِسُؤَالٍ سَأَلَ وَإِذَا مَرَّ بِتَعَوُّذٍ تَعَوَّذَ
.
রাসুল (ﷺ) ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করতেন। যদি তিনি এমন কোন আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন যাতে কোন তাসবীহ রয়েছে তবে তাসবীহ পাঠ করতেন, যদি কোন যাঞ্ছা করার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন তবে যাঞ্ছা করতেন। যদি কোন বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন, তবে অশ্রেয় প্রার্থনা করতেন।
.
গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ) হাদিস নং ১৬৬৭
.
এই হাদিসে দেখতে পাচ্ছি রাসুল (ﷺ) ধীরে ধীরে থেমে থেমে সুন্দর সুরে কোরআন পাঠ করতেন।
.
রাসুল (ﷺ) বলেনঃ
زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ
তোমরা তোমাদের ধ্বনির সাহায্যে কুরআনকে সুষমামন্ডিত কর,অর্থাৎ  সুন্দরভাবে পাঠ কর-
.
 সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ১৪৬৮
হাদিসের মানঃ সহিহ
.
কিভাবে কোরআন পাঠ করতে হবে এই হাদিসে রাসুল (ﷺ) আমাদের সেই সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ সুন্দর ও সুললিত কন্ঠে ধীরস্থিরতার সাথে কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে।
.
উপরে কোরআনের কয়েকটি আয়াত ও রাসুলের (ﷺ) সহিহ হাদিস থেকে জানতে পারলাম যে,কোরআন ধীরে ধীরে সুন্দর করে তার মাখরাজসহ সুললিত কন্ঠে তিলাওয়াত করা প্রত্যেক তিলাওয়তকারীর জন্য ফরজ তথা বাধ্যতামূলক।
.
যদি কেউ আল্লাহ ও রাসুলের (ﷺ) নির্দেশনা না মেনে নিজের মনমত তিলাওয়াত করে তাহলে কি হবে তার ভয়াবহ পরিনতি আসুন কোরআন ও হাদিস থেকে তা জেনে নিই।
.
রাসুল (ﷺ) বলেনঃ
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْآن
ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে স্পষ্টভাবে উত্তম সুরে কুরআন পাঠ করে না।
.
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ১৪৭১
.
আল্লাহ বলেনঃ
ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻤُﺆْﻣِﻦٍ ﻭَﻻ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻣْﺮًﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺨِﻴَﺮَﺓُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻫِﻢْ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻌْﺺِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻼﻻ ﻣُﺒِﻴﻨًﺎ
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফয়সালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্তের এখতিয়ার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হল। আল-আহযাব, ৩৩/৩৬
.
আল্লাহ বলেনঃ
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تُقَدِّمُوا۟ بَيْنَ يَدَىِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
.
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
.
সূরা আল হুজুরাত আয়াত: ১
.
আল্লাহ বলেনঃ
وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدْخِلْهُ نَارًا خَٰلِدًا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٌ مُّهِينٌ
.
যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
.
সূরা আন নিসা আয়াত: ১৪

পরিশেষে বলব...
আল্লাহ যেন আমাদেরকে রাসুলের সুন্নাতের উপর আমল করার তাওফীক দেন..
.
আমীন...

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...