Monday, April 29, 2019

তারাবিহ / কিয়ামুল লাইল শেষ রাত্রে পড়া উত্তম




👉রসূল সঃ সারা জীবনের মাঝে শুধুমাত্র তিন রাত রমাদনের শেষ দশদিনের মাঝে জামাতের সাথে কিয়ামুল লাইল সলাত আদায় করেছেন তাও আবার বেজোড় রাত্রিতে। এরপর আর পড়েননি।
আর প্রচলিতভাবে রমজানের চাঁদ উঠা থেকে নিয়ে প্রতি বছর পুরো রমাদন মাস ইশার সলাতের পরেই কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ) সলাত আদায় করে থাকেন। অথচ ওমর রাঃ বলেছেন, এ সলাত শেষ রাত্রিতে আদায় করার জন্য। দলিলঃ (মেশকাত ১২২৭)

কেননা,রসূল (সঃ) কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ) সলাত তিন দিন আদায় করার পর চতুর্থ দিন বলেছেন, লোকেরা তোমরা নিজেদের ঘরে এ সলাত আদায় কর, নিশ্চই ফরজ সলাত ছাড়া বাকি সব সলাত স্বীয় ঘরে আদায় করা উত্তম। {বুখারী-১/১০১, ২০১০, মুসলিম-১/২৬৬}




عن عبد ألرحمن بن عبد ألقأري (رح.) قأل خرجت مع عمر بن ألخطأب ليلة ألي ألمسجد فأذأ ألنأس يصلون بصلوة قأرءهم قأل عمر نعمت ألبدعة هذه وألتي تنأمون عنهأ أفضل من ألتي تقومون يريد أخر ألليل وكأن آلنأس يقومون أوله- {روأه ألبخأري}

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে অব্দুল কারী (তাবেয়ী) রহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমি খলিফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাবের সাথে মসজিদে নববীতে গেলাম। তখন দেখলাম, লোকজন তাদের ইমামের পেছনে (কিয়ামুল লাইল/ তারাবীহের) সলাত পড়ছে। তা দেখে উমর রা. বললেন, এ (কিয়ামুল লাইল/ তারাবির) সলাত জামাআতে পড়া কি চমৎকার বিদ`য়াত। অত:পর তিনি তাদেরকে বললেন, লোক সব তোমরা এ (তারাবাহ) নামাজ শেষ রাত্রিতে পড়বে;যা তোমাদের ঘুম থেকে উত্তম।
রাবী বলেন, তখন লোকেরা প্রথম রাতেই তারাবীহ পড়ত।{সহিহুল বুখারী} হাদীসটি

মেশকাত শরীফে পাবেন রমজান মাসের কিয়ামূল লাইল অধ্যায় ১২২৭

চেয়ারে বসে সলাত পড়া কি ঠিক?

যদি কেউ দাঁড়াতে সক্ষম না হয় তাহলে সে বসে নামাজ আদায় করবে। বসতে সক্ষম না হলে শুয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। বসে নামাজ আদায় করা মানেই জমিনে, ফ্লোরে বসে আদায় করা। বুখারি শরিফসহ হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে, সওয়ারি থেকে পড়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আহত হয়েছিলেন, তখন তিনি জমিনে বসে নামাজ আদায় করেছেন। নবীর যুগেও কিন্তু চেয়ার বা চেয়ার সদৃশ বস্তু ছিল। নবী করিম (সা.) মাজুর অবস্থায় চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেননি। হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, আমি হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে। তা সম্ভব না হলে বসে। তাও সম্ভব না হলে শুয়ে নামাজ আদায় করবে। (বুখারি ১/১৫০ তিরমিজি ১/৮৫) এ হাদিস দ্বারাও বোঝা যায়, দাঁড়াতে সক্ষম না হলে (জমিনে) বসে তাও সম্ভব না হলে শুয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। সুতরাং হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে, চেয়ারে বসে নামাজ কোনো অবস্থাতেই সহি নয়।
সুতরাং যিনি দাঁড়াতে সক্ষম কিন্তু নিয়ম মতো, রুকু সিজদা করতে অক্ষম তিনি দাঁড়িয়ে-ইশারা করে নামাজ আদায় করবেন। চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলে সহি হবে না। (বাদায়ে ১/২৮৬)

যারা দাঁড়াতে ও রুকু সিজদা করতে অক্ষম তারা জমিনে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করবেন। তাশাহুদের নিয়মে বসতে না পারলে যেভাবে বসতে পারেন সেভাবেই বসবেন। চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলে নামাজ সহি হবে না।

কোনোভাবে বসতে না পারলে শুয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। চেয়ারে বসে নয়।



★★★

অসুস্থ ব্যক্তির সালাত আদায়ঃ

অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল-ফরয সালাত দাড়িয়ে আদায় করা। যদিও কিছুটা বাকা হয়ে দাঁড়াক বা কোন দেয়ালে হেলান দিয়ে কিংবা লাঠি ভর দিয়ে।যদি কোন ভাবেই দাঁড়াতে সক্ষম না হয় তবে বসে সালাত আদায় করবে। উত্তম হলো দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থার ক্ষেত্রে চারজানু হয়ে বসবে।
(আরকানুল ইসলাম বঙ্গঃ ৩১৬ পৃঃ)

মুহাম্মদ বিন আত তুয়াইজুরি বলেন যদি দাড়িয়ে না পারে তবে চতুষ্পদ (চারজানু) হয়ে বসে বা তাশহুদের বৈঠকের ন্যায় বসে। তাও যদি না পারে তবে ডান পার্শে¦র উপর হয়ে। এও যদি কষ্টকর হয় তবে বাম পার্শ্বের উপর হয়ে আদায় করবে। এ ভাবেও যদি না পারে তবে কিবলার দিকে পা করে চিত হয়ে শুয়ে মাথা দ্বারা বুকের দিকে ইশারা করত রুকু ও সেজদা করবে। সেজদাকে রুকুর চেয়ে বেশি নিচু করবে, যদি ইশারা করতে সক্ষম না হয় তবে মনে মনে সালাত আদায় করবে,মুখে তাকবীর বলবে, কির‘আত পাঠ করবে এবং দাঁড়ানো , রুকু করা সিজদা করা, তাশাহুদে বসা ইত্যাদি মনে মনে নিয়্যত করবে। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যার সে নিয়্যত করে। (কোরআন সুন্নাহর আলোকে ফিকাহ ২/২১পৃঃ;আরকানুল ইসলাম বঙ্গঃ ৩১৬ পৃঃ)

অসুস্থ ব্যক্তি দাড়াতে না পারলে বা অসুখ বৃদ্ধি আশঙ্কা থাকলে বসে, শুয়ে বা কাত হয়ে সালাত আদায় করতে পারবে। ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাওয়াসারী রুগী ছিলাম। সালাত প্রসঙ্গে নবী করিম (ছাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন,দাড়িয়ে আদায় করতে পারলে দাড়িয়ে আদায় করো, বসে আদায় করতে পারলে বসে আদায় করো অথবা শুয়ে আদায় করতে পারলে শুয়ে আদায় করো।(বুখারী; মুসলিম হা/১২৪৮)।



সহীহ দলিল:-
সিজদার সময় সামনে বালিশ, টুল বা অন্য কিছুর ওপর মাথা ঠেকিয়ে সিজদাহ দেওয়া যাবে না। আব্দুলাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) এক রুগীকে দেখতে যান রুগীটি বালিশের ওপর সালাত আদায় করছিলেন। তিনি বালিশটি ফেলে দেন। তারপর রুগীটি সালাত আদায়ের জন্য একটি কাঠ নেন তিনি কাঠটিও ফেলে দেন এবং বলেন, সক্ষম হলে মাটির ওপরে সালাত আদায় কর। নচেৎ ইশারা দ্বারা সালাত আদায় কর। এবং রুকুর তুলনায় সাজদাহয় অধিকতর ঝুকে পড়। (বাযযার, তাবারানী, বায়হাক্বী, সিলসিলা সহিহা হা/৩২৩)।

আত্বা (রাঃ) বলে, ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরাতে অক্ষম ব্যক্তি যেদিকে সম্ভব সেদিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে। (বুখারী, বঙ্গানুবাদ বুখারী হা/-১১১৭, আঃ প্রকাশ)।

আনাস (রাঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কিছু রোগীর কাছে গেলেন যারা বসে বসে সালাত আদায় করছিলেন। তিনি বলেন বসে সালাত আদায় করলে দাঁড়িয়ে করার অর্ধেক সওয়াব।
(আহমদ ও ইবনে মাজাহ,সনদ সহীহ: রাসূলুল্লাহ নামায পৃঃ৪৮)।

অসুস্থ ব্যক্তি যতদিন সুস্থ না হবে ততদিন ওয়াক্তের সালাত একসঙ্গে করে পড়তে পারবেন। দুই ওয়াক্তের সালাতকে জমা করে পড়বেন। যোহরকে বিলম্ব করে এবং আসরকে এগিয়ে নিয়ে একত্রে পড়তে হবে। অনুরুপ মাগরীবকে দেরি করে এবং ঈশাকে এগিয়ে নিয়ে একত্রে পড়তে হবে।
(বঙ্গানুবাদ বুখারী হা/ ১১১২ আঃ প্রকাশ)।

আর বিবেক থাকা পর্যন্ত কোন ক্রমে সালাত মাফ নেই। (চেয়ারে,টুল বা উচু স্থানে বসে সালাত আদায় করার কোন মাসয়ালা বা দলীল পাওয়া যায়না; অতএব এ থেকে বিরত থাকা উত্তম এবং গুনাহ বা বিদ‘আত মুক্ত থাকা যায়)

Saturday, April 27, 2019

কিছু আহলে হাদিস শাইখ ও ভাইদের মধ্যে কি শির্কে আকবার রয়েছে?

সত্য কথার ভাত নেই! সত্য কথা যারাই বলে তারাই সমালোচিত ও নিন্দিত হয় এটা ইতিহাস ও বর্তমান থেকে প্রমানিত। কাজী সাহেব যদি কিছু ভুল বলে থাকেন তাহলে তার প্রমান দেন। সত্যিই তিনি সৎ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন যা অনেকেই পারেনা। ইসলামে ব্যক্তি পুজা ও অন্ধ অনুসরণের কোন সুযোগ নেই। প্রিয় দীনি ভাইয়েরা আসুন আমরা সবাই হক কে হক বলে মেনে নেই। ব্যক্তি অনুসরণ ও গোড়ামী পরিত্যাগ করে প্রকৃত ইসলামের ছায়াতলে চলে আসি। আল্লহর রজ্জুকে শক্তকরে আকড়ে ধরি। (আল ইমরানঃ১০৩)     

সহিহ আকিদাহ পোষণকারী জনপ্রিয় বক্তা শাইখ মুফতি কাজী ইব্রাহীম সাহেবের বর্তমানে ভাইরাল হওয়া বক্তব্যটি দেখে নিন সবাই।


Wednesday, April 24, 2019

সালাতুত হাজত সলাত / নামাজ

সলাতুল হাজত (صلاة الحاجة):
বিশেষ কোন বৈধ চাহিদা পূরণের জন্য আল্লহর উদ্দেশ্যে কমপক্ষে যে দু’রাক‘আত নফল সলাত আদায় করা হয়, তাকে ‘সলাতুল হাজত’ বলা হয়। [ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৫, সলাত অধ্যায়-২ অনুচ্ছেদ-১৮৯] 
সংগত কোন প্রয়োজন পুরনের জন্য বান্দা নিজ প্রভুর নিকটে ছবর ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রাথনা করবে। এ প্রসংগে মহান আল্লহ বলেন,
হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। [সূরা আল বাক্বরহ, ২ঃ ১৫৩]  
এই সন্মন্ধে কয়েকটি হাদিস দেখে নেইঃ
حدثنا محمود بن غيلان، حدثنا عثمان بن عمر، حدثنا شعبة، عن أبي جعفر، عن عمارة بن خزيمة بن ثابت، عن عثمان بن حنيف، أن رجلا، ضرير البصر أتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال ادع الله أن يعافيني ‏.‏ قال ‏"‏ إن شئت دعوت وإن شئت صبرت فهو خير لك ‏"‏ ‏.‏ قال فادعه ‏.‏ قال فأمره أن يتوضأ فيحسن وضوءه ويدعو بهذا الدعاء ‏"‏ اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بنبيك محمد نبي الرحمة إني توجهت بك إلى ربي في حاجتي هذه لتقضى لي اللهم فشفعه في ‏"‏ ‏.‏ قال هذا حديث حسن صحيح غريب لا نعرفه إلا من هذا الوجه من حديث أبي جعفر وهو غير الخطمي وعثمان بن حنيف هو أخو سهل بن حنيف ‏.

উসমান ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আমার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেনঃ তুমি কামনা করলে আমি দুআ করব, আর তুমি চাইলে ধৈর্য্য ধারণ করতে পার, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। সে বলল, তাঁর নিকটে দুআ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে উযূ করার হুকুম করলেন এবং এই দুআ করতে বললেন, “হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি প্রার্থনা করি এবং তোমার প্রতি মনোনিবেশ করি তোমার নাবী, দয়ার নাবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (দু’আর) মাধ্যমে। আমি তোমার দিকে ঝুঁকে পড়লাম, আমার প্রয়োজনের জন্য আমার প্রভুর দিকে ধাবিত হলাম, যাতে আমার এ প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়া হয়। হে আল্লহ! আমার প্রসঙ্গে তুমি তাঁর সুপারিশ ক্ববূল কর”।

জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৭৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

حدثنا أحمد بن منصور بن سيار، حدثنا عثمان بن عمر، حدثنا شعبة، عن أبي جعفر المدني، عن عمارة بن خزيمة بن ثابت، عن عثمان بن حنيف، أن رجلا، ضرير البصر أتى النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ فقال ادع الله لي أن يعافيني ‏.‏ فقال ‏"‏ إن شئت أخرت لك وهو خير وإن شئت دعوت ‏"‏ ‏.‏ فقال ادعه ‏.‏ فأمره أن يتوضأ فيحسن وضوءه ويصلي ركعتين ويدعو بهذا الدعاء ‏"‏ اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بمحمد نبي الرحمة يا محمد إني قد توجهت بك إلى ربي في حاجتي هذه لتقضى اللهم فشفعه في ‏"‏ ‏.‏

قال أبو إسحق هذا حديث صحيح

উসমান বিন হুনায়ফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

এক অন্ধ লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আপনি আল্লহ্‌র কাছে আমার জন্য দুআ’ করুন। তিনি যেন আমাকে রোগমুক্তি দান করেন। তিনি বলেন, তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য দুআ’ করতে বিলম্ব করবো, আর তা হবে কল্যাণকর। আর তুমি চাইলে আমি দুআ’ করবো। সে বললো, তাঁর নিকট দুআ’ করুন। তিনি তাকে উত্তমরূপে উযু করার পর দু’ রাকআত সালাত পড়ে এ দুআ’  করতে বলেন, “হে আল্লহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, রহমতের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উসীলা দিয়ে, আমি তোমার প্রতি নিবিষ্ট হলাম। হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার চাহিদা পুরণের জন্য আমি আপনার উসীলা দিয়ে আমার রবের প্রতি মনোযোগী হলাম, যাতে আমার প্রয়োজন মিটে। হে আল্লহ! আমার জন্য তাঁর সুপারিশ কবূল করো”।

ফুটনোটঃ
[১৩৮৫] তিরমিযী ৩৫৭৮ তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: তালীক ইবনু খুযাইসাহ ১২০৯। 

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস



حدثنا محمد بن عيسى، حدثنا يحيى بن زكريا، عن عكرمة بن عمار، عن محمد بن عبد الله الدؤلي، عن عبد العزيز بن أخي، حذيفة عن حذيفة، قال ‏:‏ كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا حزبه أمر صلى ‏.‏

হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে সলাত আদায় করতেন।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩১৯, সালাত অধ্যায়-২, অনুচছেদ-৩১২; ছহিহুল জামেঃ হা/৪৭০৩; মিশকাতঃ ১৩১৫।
হাদিসের মান: হাসান হাদিস

⍈ এই বিষয়ে হযরত ইবরাহিম(আঃ) এর ঘটনা সরন করা যেতে পারে। 

حدثنا أبو اليمان، أخبرنا شعيب، حدثنا أبو الزناد، عن الأعرج، عن أبي هريرة ـ رضى الله عنه ـ قال قال النبي صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ هاجر إبراهيم ـ عليه السلام ـ بسارة، فدخل بها قرية فيها ملك من الملوك، أو جبار من الجبابرة، فقيل دخل إبراهيم بامرأة، هي من أحسن النساء‏.‏ فأرسل إليه أن يا إبراهيم، من هذه التي معك قال أختي‏.‏ ثم رجع إليها، فقال لا تكذبي حديثي فإني أخبرتهم أنك أختي، والله إن على الأرض مؤمن غيري وغيرك‏.‏ فأرسل بها إليه، فقام إليها، فقامت توضأ وتصلي فقالت اللهم إن كنت آمنت بك وبرسولك وأحصنت فرجي، إلا على زوجي فلا تسلط على الكافر‏.‏ فغط حتى ركض برجله ‏"‏‏.‏ قال الأعرج قال أبو سلمة بن عبد الرحمن إن أبا هريرة قال قالت اللهم إن يمت يقال هي قتلته‏.‏ فأرسل ثم قام إليها، فقامت توضأ تصلي، وتقول اللهم إن كنت آمنت بك وبرسولك، وأحصنت فرجي، إلا على زوجي، فلا تسلط على هذا الكافر، فغط حتى ركض برجله‏.‏ قال عبد الرحمن قال أبو سلمة قال أبو هريرة فقالت اللهم إن يمت فيقال هي قتلته، فأرسل في الثانية، أو في الثالثة، فقال والله ما أرسلتم إلى إلا شيطانا، ارجعوها إلى إبراهيم، وأعطوها آجر‏.‏ فرجعت إلى إبراهيم ـ عليه السلام ـ فقالت أشعرت أن الله كبت الكافر وأخدم وليدة‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তার নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে ইবরাহীম, তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লহ্‌র শপথ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মু’মিন নেই। সুতরাং আমি আর তুমি দ্বীনী ভাই বোন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযূ করে করে সলাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দু’আ করলেন, হে আল্লহ্‌ ! আমিও তোমার উপর এবং তোমার রসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল হতে আমার লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগলো। তখন সারা বললেন, আয় আল্লহ্‌! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দু’বার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, আল্লহ্‌র শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। সারাহ ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি  জানেন কি, আল্লহ্‌ তা’আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসেবে দিয়েছেন।
  
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২২১৭, কেনা-বেচা অধ্যায়-৩৪, অনুচছেদ-১০০; আহমাদ-৯২৩০।
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

★ উপরোক্ত দলিল প্রমানের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারলাম যে, কোন বিশেষ প্রয়োজনে বা বিপদ হতে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে সলাতুল হাজত পরা জায়েজ ও সহিহ হাদিস সম্মত আমল।
তবে উল্লেখ্য যে, সহিহ হাদিসে সলাতুল হাজত নামে কোন নাম উল্লেখ নেই তবে এই সলাতের ব্যপারে বিস্তারিত ই বলা আছে। নাম না থাকলেও শব্দের অর্থগত দিক থেকে এটাই নির্দেশ করে।
কিন্তু কিছু হাদিস আছে যেখানে, এই সলাতুল হাজত সলাতের বিশেষ কিছু বারতি নিয়মের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে সব জাল & জয়ীফ হাদিস অর্থাৎ তা পরিত্যাজ্য।
এই সলাত সাধারণত সলাতের মতই পড়তে হবে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে 2 রাকায়াত আর সর্বোচ্চ যে যত রাকাআত পারে দুই দুই রাকাআত করে। এক্ষেত্রে সলাতের মধ্যে দুয়া করাই সব চেয়ে উত্তম হবে। মানে শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর আগে ও সিজদাহরত অবস্থায়। কেননা এই সময় দুয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সিজদায় দুয়া করা ও কবুলের ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস হলোঃ

 أخبرنا قتيبة بن سعيد، قال: حدثنا سفيان، عن سليمان بن سحيم، عن إبراهيم بن عبد الله بن معبد بن عباس، عن أبيه، عن ابن عباس قال: كشف النبي صلى الله عليه وسلم الستارة والناس صفوف خلف أبي بكر رضي الله عنه، فقال: «أيها الناس، إنه لم يبق من مبشرات النبوة إلا الرؤيا الصالحة يراها المسلم أو ترى له»
ثم قال: «ألا إني نهيت أن أقرأ راكعا أو ساجدا، فأما الركوع فعظموا فيه الرب، وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء قمن أن يستجاب لكم»

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্দা উন্মোচন করলেন, তখন লোক আবু বকর (রাঃ)- এর পেছনে কাতারে দাঁড়ানো ছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে লোক সকল! নবুয়তের সুসংবাদ আর অবশিষ্ট থাকবে না, নেক সপ্ন ব্যতিত যা মুসলিম দেখবে এবং তাঁকে দেখানো হবে। এরপর তিনি বললেন, তোমরা শুনে রেখ ! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে রুকু অবস্থায় কিরাআত থেকে এবং সিজদা অবস্থায়। রুকুতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বর্ণনা কর। আর সিজদায় তোমরা দোয়া করতে চেষ্টা কর। তোমাদের জন্য দোয়া কবুল হওয়ার উপযুক্ত সময় এটাই।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১০৪৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

وعن ابن عباس قال قال رسول الله ﷺ ألا إني نهيت أن أقرأ القرآن راكعا أو ساجدا فإما الركوع فعظموا فيه الرب وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء فقمن أن يستجاب لكم. رواه مسلم

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসুলুল্লহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাবধান! আমাকে রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকু’তে তোমাদের ‘রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সিজদায় অতি মনোযোগের সাথে দুয়া করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ কবুল করা হবে।

ফুটনোটঃ
[১] সহীহ : মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬। 

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৮৭৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

সুতরাং আপনি নাম হিসেবে সলাতুল হাজত বলুন বা বিপদ থেকে উদ্ধারের বা বিশেষ দুয়া কবুলের সলাত বলুন যা ই বলেন কোন সমস্যা নেই। উপরোক্ত হাদিসের নির্দেশ মোতাবেক সহিহ পন্থায় আপনি আমল করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আর কোন বিশেষ নিয়ম নির্ধারন করা যাবেনা। আশাকরি সবাই বুঝতে পারছেন।           


এই বিষয়ে কারো আরো কোন কনফিউশন থাকলে শাইখ রবিউল ইসলামের দলিল ভিত্তিক বক্তব্যটি শুনতে পারেনঃ

“সালাতুত্ তাসবীহ” সলাত / নামাজ


অধিক তাসবীহ পাঠের কারনে এই সালাতকে “সালাতুত্ তাসবীহ” বলা হয়। এটি ঐচছিক সালাত হিসাবে গণ্য। তবে এ বিষয়ে কোন সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। আমাদের দেশে তথা ভারত, পাকিসতানে এই সালাতের বিষয়টি লক্ষ্যনিয়। আমাদের দেশের আলেম সমাজ এই সালাতকে গোনাহ মাফের সালাত হিসাবে গন্য করে থাকেন। আসুন আমরা হাদিসের আলোকে এই সালাতের তাৎপয্য কি একটু আলোচনা করে দেখি।
“সালাতুত্ তসবীহ” নামায সম্পর্কে একটি হাদীস-এর আলোকে এই নামাযের বিবরণ উপস্থাপন করলামঃ
আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, বায়হাকী ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে এবং তিরমিজি আবু রাফে থেকে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) কর্তৃক তার চাচা আব্বাস(রাঃ)-কে চার রাকাত অদ্ভুত ধরনের নামাযের কথা উল্লেখ করেছেন| এই নামায “সালাতুত্ তাসবীহ” হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে| এই নামায সংক্রান্ত হাদীসটি নিম্নরূপঃ
ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেন, একদিন নবী করিম(সাঃ) আমার পিতা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুততালিবকে বললেনঃ হে আব্বাস! হে আমার চাচা! আমি কী আপনাকে প্রদান করব না? আমি কী আপনাকে দেব না? আমি কী আপনাকে সংবাদ জানাব না? আমি কী আপনাকে শিখিয়ে দেব না দশটি কাজ? আপনি যদি তা করেন, তবে আল্লাহ আপনার অপরাধ মাফ করে দিবেন| আগের, পরের, নতুন-পুরাতন, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, ছোট বড় এবং গোপন ও প্রকাশ্য সব অপরাধ আল্লাহ মাফ করে দিবেন| সেই কাজ হলঃ আপনি চার রাকাত নামায পড়বেন| যথারীতি প্রথমে নিয়ত করে তাআঊজ, তসমিয়াহ, সানা পাঠ করে প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং আর একটি সূরা পড়বেন| এইভাবে- প্রথম রাকাতের কিরাত শেষ করার পর দাড়ান অবস্থাতেই রুকুতে যাবার আগে পনর বার এই বাক্যটি পড়বেনঃ ‘সুবহনআল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর’| অতঃপর রুকুতে যাবেন| রুকুতে গিয়ে এই বাক্যটি দশবার পড়বেন| রুকু থেকে দাড়িয়ে সোজা হয়ে দশবার এই বাক্যটি পড়বেন| তারপর সিজদহ-তে যাবেন| সিজদাহতে গিয়ে দশবার এই বাক্যটি দশবার পড়বেন| তারপর সিজদাহ থেকে মাঠ উঠিয়ে বসে দশবার এই বাক্যটি পড়বেন এবং দিতিয় সিজদাহতে যাবেন এবং এই সিজদাহতে গিয়েও বাক্যটি দশবার পড়বেন| এইভাবে এক রাকাতে বাক্যটি মোট পচাত্তর বার পাঠ করা হল| এই প্রথম রাকাতের মত একই নিয়মে চার রাকাত নামায পড়বেন| আপনার পক্ষে সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে একবার পড়বেন| তাও সম্ভব না হলে প্রতি মাসে একবার পড়বেন| সেটাও সম্ভব না হলে বছরে একবার পড়বেন| তাও সম্ভব না হলে জীবনে একবার হলেও পড়বেন|
হাকিম ইবনে খুজাইমা ও দারু কুতনি এটিকে সহীহ হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন| তবে ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম আল জাওজী এটাকে ‘মউদু'(মনগড়া) হাদীস বলেছেন|
সহীহ আতা-তিরমিজিঃ অনুচ্ছেদ-১৯; “সালাতুত্ তাসবীহ” – থেকে সংগৃহীত হাদীসটি নিম্নরূপঃ আনাস ইবনু মালিক(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, উম্মে সুলাইম(রাঃ) একদিন সকালবেলা রাসূল(সাঃ)এর নিকট আসলেন| তিনি বললেন, আমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দিন যা আমি নামাজে পাঠ করব| তিনি বললেনঃ দশবার আল্লাহু আকবর, দশবার সুবহানআল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ কর| অতপর তোমার যা খুশি তাই চাও| তিনি(আল্লাহ’তা’আলা) বলবেনঃ হ্যা হ্যা (কবুল করলাম)| ***সনদ সহীহ|
এই অনুচ্ছেদে ইবনু আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনু আম’র, ফজল ইবনু আব্বাস ও আবু রাফি(রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে| আবু ঈসা বলেন, আনাসের হাদীসটি হাসান গারিব|
“সালাতুত্ তসবীহ” সম্পর্কে রাসূল(সাঃ) হতে আরও কয়েকটি হাদীস বর্ণিত আছে। কিন্তু ঐগুলো খুব একটা সহীহ নয়| ইবনুল মুবারক ও অন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ “সালাতুত্ তাসবীহ” ও তার ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন| যথারীতি প্রথমে নিয়ত করে তা’আঊজ, তাসমিয়াহ, সানা পাঠ করে প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং আর একটি সূরা পড়তে হবে| এইভাবে- প্রথম রাকাতের কিরাত শেষ করার পর দাড়ানো অবস্থাতেই রুকুতে যাবার আগে পনর বার এই বাক্যটি পড়তে হবেঃ ‘সুবহনআল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর’| অতঃপর রুকুতে যাবেন| রুকুতে গিয়ে এই বাক্যটি দশবার পড়তে হবে| রুকু থেকে দাড়িয়ে সোজা হয়ে দশবার এই বাক্যটি পড়তে হবে| তারপর সিজদাহ-তে যেতে হবে| সিজদাহতে গিয়ে দশবার এই বাক্যটি দশবার পড়তে হবে| তারপর সিজদহ থেকে মাথা উঠিয়ে বসে দশবার এই বাক্যটি পড়তে হবে এবং দিতিয় সিজদাহতে যাবে এবং এই সিজদাহতে গিয়েও বাক্যটি দশবার পড়তে হবে| এইভাবে এক রাকাতে বাক্যটি(দু’আটি) মোট পচাত্তর(৭৫) বার পাঠ করা হল| এই প্রথম রাকাতের মত একই নিয়মে চার রাকাত নামায পড়তে হবে|
যদি এই নামায রাতের বেলা আদায় করা হয় তবে প্রতি দুই রাকাত পর পর সালাম ফিরান ভাল| আর যদি দিনের বেলায় আদায় করা হয় তবে চাইলে দুই রাকাত পর পর বা চার রাকাত পরও সালাম ফিরাতে পারে|
আবু ওয়াহ’ব বলেনঃ ‘আব্দুল আজিজ আমাকে জানিয়েছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেছেন, রুকু, সিজদাহতে পর্যায়ক্রমে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম ও সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পাঠ করার পর উল্লিখিত দু’আ পাঠ করবে| আব্দুল আজিজ বলেন, আমি ইবনুল মুবারককে প্রশ্ন করলাম, যদি এই নামাজে ভুল হয়ে যায় তাহলে সিজদাহতে কী উক্ত দু’আ (‘সুবহনআল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর’) পাঠ করতে হবে? তিনি বললেন, না, এই দু’আ-তো মোট তিনশত বার পাঠ করতে হবে|
সুত্রঃ সহীহ তালিফুর রাগীব(১/২৩৯)|
টিকাঃ
আবদুললাহ ইবনু আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসটিকে কেউ ‘মুরসাল’ কেউ ‘যঈফ’ কেউ ‘মওযু/মওদু’ বা জাল বলেছেন। সৌদি আরবের ফতোয়া কমিটি ‘লাজনা দায়েমাহ’ এই সালাতকে বিদ’আত বলে ফতোয়া দিয়েছেন। যদিও শায়খ আলবানি(রহঃ) ঐ হাদিসের যঈফ সুএ সমুহ পরষপরকে শকতিশালি মনে করে তাকে ‘সহিহ’ বলেছেন এবং ইবনু হাজার আসকালানি ও ছাহেবে মির’আত একে ‘হাসান’ পযায়ে উন্নিত বলেছেন।
*** ইবনু হাজার আসকালানি(রহঃ) এর বিসতারিত আলোচনা; আলবানি, মিশকাতঃ ৩ নং হাদিস; ৩/১৭৭৯-৮২ পৃঃ; আবু দাউদ, ইবনু মাযাহ, মিশকাত হা/১৩২৮ হাশিয়া; বায়হাকিঃ ৩/৫২; আবদুললাহ ইবনু আহমাদ, মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, মাসয়ালা নং ৪১৩, ২/২৯৫ পৃঃ; মির’আতঃ ৪/৩৭২-৭৫; রিয়াদ; লাজনা দায়েমাহঃ ফতোয়া নং ২১৪১, ৮/১৬৪ পৃষঠা।
মন্তব্যঃ
এরুপ বিতকিত, সন্দেহযুকত ও দুবল ভিততির উপর কোন ইবাদত বিশেষ করে সালাত প্রতিষঠা করা যায় না- বিধায় বিষয়টি থেকে দুরে থাকাই উততম।


facebook post link: https://www.facebook.com/kmarifin98/posts/518346685585848?__tn__=K-R


মিসওয়াক করলে কি ৭০ গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়?



ইসলাম পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬১/১১৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪২৫), ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়অনুচ্ছেদ-১মিশকাত হা/২৮১পৃঃ ৩৮বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬২২/৩৭ পৃঃ

 এবং ‘পবিত্রতা ছালাতের চাবি’ বলেও ঘোষণা করেছে। ছহীহ আবুদাঊদ হা/৬১১/৯ পৃঃতিরমিযী হা/৩১/৫ পৃঃমিশকাত হা/৩১২পৃঃ ৪০বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১২/৫১ পৃঃ

 তাই মুসলিম মাত্রই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকবে, যাতে ঈমান জাগ্রত থাকে। বিশেষ করে ছালাতের ওযূর ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে। কারণ ওযূ না হলে ছালাত হবে না। ছহীহ আবুদাঊদ হা/১০১১/১৪ পৃঃছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৯৮ ও ৩৯৯পৃঃ ৩২মিশকাত হা/৪০৪পৃঃ ৪৬বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭০২/৮২, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ

 সুতরাং ওযূ বিষয়ে যে সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, সেগুলো আমাদেরকে সংশোধন করে নিতে হবে।

➤ মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ :
শরী‘আতে মিসওয়াক করার গুরুত্ব অনেক। তবে মিসওয়াক করার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত প্রসিদ্ধ কথাটি জাল।
(أ) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r تَفْضُلُ الصَّلاَةُ الَّتِىْ يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلاَةِ الَّتِى لاَ يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِيْنَ ضِعْفًا.
(ক) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ছালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয়, সেই ছালাতে মিসওয়াক করা বিহীন ছালাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়। বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা হা/১৫৯১ম খন্ডপৃঃ ৬১-৬২হাকেম হা/৫১৫ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩৭মিশকাত হা/৩৮৯পৃঃ ৪৫বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৯২/৭৬ পৃঃ

তাহক্বীক্ব : ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন,
وَقَدْ رَوَاهُ مُعَاوِيَةُ بْنُ يَحْيَى الصَّدَفِىُّ عَنِ الزُّهْرِىِّ وَلَيْسَ بِالْقَوِىِّ وَرُوِىَ مِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَمِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَكِلاَهُمَا ضَعِيْفٌ وَفِىْ طَرِيْقِ الْوَجْهِ الْآخِرِ عَنْ عُرْوَةَ الْعَاقِدِىِّ وَ هُوَ كَذَّابٌ.
মু‘আবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া যুহরী থেকে বর্ণনা করেছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়। অন্য সূত্রে উরওয়া আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারা উভয়েই যঈফ। অন্য সূত্রে উরওয়া আক্বেদী থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু সে মিথ্যুক। আলবানীমিশকাত হা/৩৮৯-এর টীকা দ্রঃ১/১২৪ পৃঃ

(খ) মিসওয়াক করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা- মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাত পড়ার সমান। মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৮০৩মুসনাদে বাযযার ১/২৪৪ পৃঃ
উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী প্রণীত ‘মুন্তাখাব হাদীস’ গ্রন্থে ফযীলত সংক্রান্ত অনেক জাল বা মিথ্যা হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত বর্ণনাটি তার অন্যতম। মুন্তাখাব হাদীসঅনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ সাআদ (ঢাকা : দারুল কুতুবদ্বিতীয় প্রকাশ : আগস্ট ২০১০)পৃঃ ২৯৯
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম বাযযার বলেন, এর সনদে মু‘আবিয়া নামে একজন রাবী রয়েছে। সে ছাড়া আর কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু ওমর নামে আরেকজন রাবী রয়েছে। সে মিথ্যুক। لا نعلم رواه إلا معاوية قلت وهو الصدفي قال الحافظ ضعيف সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫০৩-এর ভাষ্য দ্রঃযঈফুল জামে‘ আছ-ছাগীর হা/৩১২৭
(ج) عَنْ زَيْدِ بنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ r يَخْرُجُ مِنْ ِشَيْءٍ مِنَ الصَّلَوَاتِ حَتَّى يَسْتَاكَ.
(গ) যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক না করে রাসূল (ছাঃ) কোন ছালাতের জন্য বাড়ী থেকে বের হতেন না। ত্বাবারাণী হা/৫২৬১মুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ৩০০
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৪৩
(د) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فِى السِّوَاكِ عَشْرُ خِصَالٍ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ تَعَالَى وَمَسْخَطَةٌ لِلشَّيْطَانِ وَمَفْرَحَةٌ لِلْمَلاَئِكَةِ جَيِّدٌ لِلَّثَةِ وَيُذْهِبُ بِالْحَفْرِ وَيَجْلُو الْبَصَرَ وَيُطَيِّبُ الْفَمَ وَيُقَلِّلُ الْبَلْغَمَ وَهُوَ مِنَ السُّنَّةِ وَيَزِيْدُ فِى الْحَسَنَاتِ.
(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, মিসওয়াকের ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি (২) শয়তানের অসন্তুষ্টি (৩) ফেরেশতাদের জন্য আনন্দ (৪) আলজিভের সৌন্দর্য (৫) দাঁতের আবরণ দূর করে (৬) চোখকে জ্যোতিময় করে (৭) মুখকে পবিত্র করে (৮) কফ হরাস করে (৯) এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত (১০) নেকী বৃদ্ধি করে। দারাকুৎনী ১/৫৮সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬৯/২১ পৃঃফাযায়েলে আমল (বাংলা) ফাযায়েলে নামায অংশপৃঃ ৬৮-৬৯
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, মু‘আল্লা ইবনু মাঈন দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী। مُعَلَّى بْنُ مَيْمُوْنٍ ضَعِيْفٌ مَتْرُوْكٌ দারাকুৎনী ১/৫৮সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬৯/২১ পৃঃ
(ه) عَنِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ وَمَجْلاَةٌ ِللْبَصَرِ.
(ঙ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী, প্রতিপালকের সন্তুষ্টির কারণ ও চোখের জন্য জ্যোতিময়। ত্বাবারাণীআল-মুজামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, হারিছ বিন মুসলিম ছাড়া বাহরে সিক্বা থেকে অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেননি। لم يرو هذا الحديث عن بحر السقاء إلا الحارث بن مسلم –আল-মুজামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৭৬
(و) عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ تَسَوَّكُوْا فَإِنَّ السِّوَاكَ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ مَا جَاءَنِىْ جِبْرِيْلُ إِلَّا أَوْصَانِىْ بِالسِّوَاكِ حَتَّى لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ يُفْرَضَ عَلَيَّ وَعَلَى أُمَّتِىْ وَلَوْلاَ أَنِّىْ أَخَافُ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِىْ لَفَرَضْتُهُ لَهُمْ وَإِنِّىْ لَأَسْتَاكُ حَتَّى لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ أُحْفِيَ مَقَادِمَ فَمِىْ.
(চ) আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা মিসওয়াক কর। নিশ্চয়ই মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। যখনই জিবরীল আমার নিকট আসেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলেন। এমনকি আমি ভয় করি যে, আমার ও আমার উম্মতের উপর তা ফরয করা হয় কি-না। আমার উম্মতের উপর কঠিন হয়ে যাওয়ার ভয় না করলে মিসওয়াক করা আমি উম্মতের উপর ফরয করে দিতাম। আমি মিসওয়াক করতেই থাকি এমনকি আশংকা করি যে, আমি হয়ত আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে ফেলব। যঈফ ইবনু মাজাহ হা/২৮৯পৃঃ ২৫আহমাদ হা/২২৩২৩ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৭৯৬মিশকাত হা/৩৮৬পৃঃ ৪৫বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৬২/৭৫ পৃঃমুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ২৯৮
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ওছমান ইবনু আবীল আতেকা নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন এবং নাসাঈ তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়াও আলী ইবনু যায়েদ আবু আব্দিল মালেক নামের একজন রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন। ইবনু হাতেম এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন। মুগাল্লাত্বঈশরহে সুনানে ইবনে মাজাহ (সঊদী আরব : মাকতাবাহ নিযার মুছত্বফা আল-বায১৪১৯ হিঃ)১/৬২ পৃঃ
(ز) عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِيْنَ الْحَيَاءُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ.
(ছ) আবু আইয়ূব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, চারটি বিষয় নবীদের সুন্নাত। (ক) লজ্জা করা। অন্য বর্ণনায় খাতনা করার কথা রয়েছে (খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা (গ) মিসওয়াক করা ও (ঘ) বিবাহ করা। যঈফ তিরমিযী হা/১০৮০১/২০৬মিশকাত হা/৩৮২পৃঃ ৪৪বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫২২/৭৪ পৃঃ, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদমুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ২৯৭


তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনায় কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। আইয়ূব ও মাকহূলের মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। হাজ্জাজ বিন আরত্বাহ নামক রাবীর দোষ রয়েছে। এছাড়াও এর সনদে আবু শিমাল রয়েছে। তাকে আবু যুর‘আহ ও ইবনু হাজার আসক্বালানী অপরিচিত বলেছেন। মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানীইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজে আহাদীছি মানারিস সাবীল (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী১৪০৫/১৯৮৫)হা/৭৫১ম খন্ডপৃঃ ১১৭

 যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করা ফযীলতপূর্ণ :
যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ এর পক্ষে শারঈ কোন বিধান নেই। এ মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
(أ) عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ نِعْمَ السِّوَاكُ الزَّيْتُوْنُ مِنْ شَجَرةٍ مُبارَكَةٍ  يُطَيِّبُ الْفَمَ ويُذْهِبُ الحَفْرَ  وَهُوَ سِوَاكِىْ وسِوَاكُ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِىْ.
(ক) মু‘আয বিন জাবাল বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, উত্তম মিসওয়াক হল বরকতপূর্ণ যায়তুন গাছ, যা মুখকে পবিত্র করে ও দাঁতের আবরণ দূর করে। এটা আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্বের নবীগণের মিসওয়াক। ত্বাবারাণীআল-আওসাত্বহা/৬৮৯
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আল-উকাশী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম যাহাবী, দারাকুৎনী, ইবনু হাজার আসক্বালানী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মিথ্যুক বলে অভিহিত করেছেন। আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানীতাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ১৪১৫/১৯৯৪)৯/৩৭১ পৃঃ
ইমাম হায়ছামী বলেন, এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মুহছিন উকাশীও আছে। সে চরম মিথ্যাবাদী। সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৩৬০ ও ৫৫৭০
(ب) عَنْ أَبِىْ خَيْرَةَ الصَّبَّاحِىِّ قَالَ كُنْتُ فِى الْوَفْدِ الَّذِيْنَ أَتَوْا رَسُوْلَ اللهِ r مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ فَزَوَّدَنَا الأَرَاكَ نَسْتَاكُ بِهِ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ عِنْدَنَا الْجَرِيْدُ وَلَكِنَّا نَقْبَلُ كَرَامَتَكَ وَعَطِيَّتَكَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ r اللهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ الْقَيْسِ إِذْ أَسْلَمُوْا طَائِعِيْنَ غَيْرَ مُكْرَهِيْنَ إِذْ قَعَدَ قَوْمِىْ لَمْ يُسْلِمُوْا إِلاَّ خَزَايَا مَوْتُوْرِيْنَ.
(খ) আবু খায়রাহ ছববাহী (রাঃ) বলেন, আমি আব্দুল ক্বায়স প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলাম, যারা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়েছিল। তিনি পাথেয় বাবদ মিসওয়াক করার জন্য আমাদেরকে আরাক গাছের ডাল দিলেন, যাতে আমরা তা দ্বারা মিসওয়াক করি। আমরা বললাম, আমাদের নিকট মিসওয়াক করার জন্য খেজুরের ডাল রয়েছে। তবে আমরা আপনার সম্মানজনক দান গ্রহণ করছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আব্দুল ক্বায়েসের প্রতিনিধি দলকে ক্ষমা করুন। কারণ তারা আনুগত্য স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেছে, অসন্তুষ্টিতে নয়। আর আমার সম্প্রদায় অপমানিত ও তীর-ধনুকের কবলে না পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি। ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৮৩৫৯মুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ৩০০
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে দাঊদ ইবনু মাসাওয়ার নামক রাবী রয়েছে। সে অপরিচিত, কেউ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেননি। তার শিক্ষক মুক্বাতিল বিন হুমামও অপরিচিত। ইমাম বুখারীতারীখুল কাবীর ৩/২৪৭ পৃঃ
➤ আঙ্গুল দিয়ে মিসওয়াক করাই যথেষ্ট :
মিসওয়াক দ্বারাই মুখ পরিষ্কার করা সুন্নাত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করা যায়। কিন্তু শুধু আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট, একথা ঠিক নয়। এর পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ يَجْزِئ مِنَ السِّوَاكِ الْأَصَابِعُ.
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট। বায়হাক্বী ১/৪০ইবনু আদী ৫/৩৩৪
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু গাযিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে যঈফ। বরং দারাকুৎনী তাকে হাদীছ জালকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-মুযানী নামক রাবীকেও মুহাদ্দিছগণ মিথ্যুক বলেছেন। তাছাড়া আরো অনেক ত্রুটি রয়েছে। সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৭১ইরওয়াউল গালীল হা/৬৯যঈফুল জামে হা/৬৪১৫

➤ ছিয়াম অবস্থায় কাঁচা ডাল দ্বারা মিসওয়াক না করা :
উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বরং কাঁচা হোক শুকনা হোক যেকোন ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা যাবে। ছহীহ বুখারী হা/১৯৩৪১/২৫৯ পৃঃ, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়-৩৬অনুচ্ছেদ-২৭- بَابُ سِوَاكِ الرَّطْبِ وَالْيَابِسِ لِلصَّائِمِ
উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাআতের ‘ফাযায়েলে আমল’ বইয়ে বলা হয়েছে, ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, মিসওয়াকের এহতেমাম করার মধ্যে সত্তরটি উপকার রয়েছে। তার মধ্যে একটি মৃত্যুর সময় কালেমায়ে শাহাদত নসীব হয়। ফাযায়েলে নামায অংশ৬৯ পৃঃ উক্ত দাবী উদ্ভট ও ভিত্তিহীন। এভাবে শরী‘আতকে হেই প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

⏩ এই বিষয়ে শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী এর আলোচনা হলোঃ ⇓⇓⇓

প্রশ্ন: "মিসওয়াক করে সালাত আদায় করলে ৭০গুন সাওয়াব বেশি হয়" এটা কি সহিহ? উত্তর: ওযুর পূর্বে বা নামাজের পূর্বে মিসওয়াক করার ব্যাপারে একাধিক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ✪ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ﻟﻮﻻ ﺃﻥ ﺃﺷﻖ ﻋﻠﻰ ﺃﻣﺘﻲ ﺃﻭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻷﻣﺮﺗﻬﻢ ﺑﺎﻟﺴﻮﺍﻙ ﻣﻊ ﻛﻞ ﺻﻼﺓ "আমি যদি উম্মতের উপর (কষ্ট হবার) আশংকা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাজেই মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম।" (সহীহ বুখারী, হাদীস নং৮৮৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং২৫২)
✪ মিসওয়াক করা মুখের পরিচ্ছন্নতা অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:, ﺍﻟﺴﻮﺍﻙ ﻣﻄﻬﺮﺓ ﻟﻠﻔﻢ ﻣﺮﺿﺎﺓ ﻟﻠﺮﺏ "মিসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।" (সুনান নাসায়ী, ১/৫০, সহীহ ইববে হিব্বান হা/১০৬৭, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব- ১/১৩৩)
✪ এছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাুহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহির থেকে বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে এবং রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। ➤ কিন্তু ﺻﻼﺓٌ ﺑﺴﻮﺍﻙٍ ﺃﻓﻀَﻞُ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻣﻦ ﺳﺒﻌﻴﻦ ﺻﻼﺓً ﺑﻐﻴﺮ ﺳﻮﺍﻙ "মেসওয়াক করে সালাত আদায় আল্লাহর নিকট মিসওয়াক ছাড়া সালাতের চেয়ে ৭০গুন বেশি উত্তম বা সওয়াব বেশি হয়" মর্মে যে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে হয় তা বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের মতে যইফ বা দুর্বল। এ মর্মে কোনো হাদিস বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়নি।
উপরোক্ত হাদিসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের অভিমত: ● আল কামাল ইবনুল বলেন: এটি শায এবং যঈফ। গ্রন্থ: শরহু ফাতহিল কাদীর ২/৩৫৩। ● ইমাম সুয়ূতী বলেন, এ হাদিসটি যঈফ। গ্রন্থ: আল জামেউস সগির হা/৫০৮৩। ● শাইখ আলবানী বলেন, যঈফ। গ্রন্থ: যঈফুল জামে হা/৩৫১৯, যঈফ তারগীব হা/১৫০। ● এ ছাড়াও বায়হাকী, নওবী সহ বহু মুহাদ্দিস এটিকে যঈফ বা দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। যাহোক, আমাদের কর্তব্য, সুন্নত পালনার্থে যথাসাধ্য ওযুর পূর্বে বা সালাতের পূর্বে মিসওয়াক করা। তবে মিসওয়াক সহকারে সালাত আদায় করলে ৭০গুণ বেশি সওয়াব-এ বিশ্বাস পোষণ করা যাবে না। কেননা, এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহীহ সনদে প্রমাণিত হয় নি। সেই সাথে ঘুম থেকে উঠে, বাহির থেকে বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে বা যখনই মুখে দুর্গন্ধ অনুভূত হয় তখনই মিসওয়াক করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করা। আল্লাহু আলাম ▬▬▬ ▬▬▬ উত্তর প্রদানে: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...