সলাতুল হাজত (صلاة الحاجة):
বিশেষ কোন বৈধ চাহিদা পূরণের জন্য আল্লহর উদ্দেশ্যে কমপক্ষে যে দু’রাক‘আত নফল সলাত আদায় করা হয়, তাকে ‘সলাতুল হাজত’ বলা হয়। [ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৫, সলাত অধ্যায়-২ অনুচ্ছেদ-১৮৯]
সংগত কোন প্রয়োজন পুরনের জন্য বান্দা নিজ প্রভুর নিকটে ছবর ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রাথনা করবে। এ প্রসংগে মহান আল্লহ বলেন,
হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। [সূরা আল বাক্বরহ, ২ঃ ১৫৩]
এই সন্মন্ধে কয়েকটি হাদিস দেখে নেইঃ
➤
حدثنا محمود بن غيلان، حدثنا عثمان بن عمر، حدثنا شعبة، عن أبي جعفر، عن عمارة بن خزيمة بن ثابت، عن عثمان بن حنيف، أن رجلا، ضرير البصر أتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال ادع الله أن يعافيني . قال " إن شئت دعوت وإن شئت صبرت فهو خير لك " . قال فادعه . قال فأمره أن يتوضأ فيحسن وضوءه ويدعو بهذا الدعاء " اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بنبيك محمد نبي الرحمة إني توجهت بك إلى ربي في حاجتي هذه لتقضى لي اللهم فشفعه في " . قال هذا حديث حسن صحيح غريب لا نعرفه إلا من هذا الوجه من حديث أبي جعفر وهو غير الخطمي وعثمان بن حنيف هو أخو سهل بن حنيف .
উসমান ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আমার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেনঃ তুমি কামনা করলে আমি দুআ করব, আর তুমি চাইলে ধৈর্য্য ধারণ করতে পার, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। সে বলল, তাঁর নিকটে দুআ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে উযূ করার হুকুম করলেন এবং এই দুআ করতে বললেন, “হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি প্রার্থনা করি এবং তোমার প্রতি মনোনিবেশ করি তোমার নাবী, দয়ার নাবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (দু’আর) মাধ্যমে। আমি তোমার দিকে ঝুঁকে পড়লাম, আমার প্রয়োজনের জন্য আমার প্রভুর দিকে ধাবিত হলাম, যাতে আমার এ প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়া হয়। হে আল্লহ! আমার প্রসঙ্গে তুমি তাঁর সুপারিশ ক্ববূল কর”।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৭৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
➤
حدثنا أحمد بن منصور بن سيار، حدثنا عثمان بن عمر، حدثنا شعبة، عن أبي جعفر المدني، عن عمارة بن خزيمة بن ثابت، عن عثمان بن حنيف، أن رجلا، ضرير البصر أتى النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ فقال ادع الله لي أن يعافيني . فقال " إن شئت أخرت لك وهو خير وإن شئت دعوت " . فقال ادعه . فأمره أن يتوضأ فيحسن وضوءه ويصلي ركعتين ويدعو بهذا الدعاء " اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بمحمد نبي الرحمة يا محمد إني قد توجهت بك إلى ربي في حاجتي هذه لتقضى اللهم فشفعه في " .قال أبو إسحق هذا حديث صحيح
উসমান বিন হুনায়ফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
এক অন্ধ লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আপনি আল্লহ্র কাছে আমার জন্য দুআ’ করুন। তিনি যেন আমাকে রোগমুক্তি দান করেন। তিনি বলেন, তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য দুআ’ করতে বিলম্ব করবো, আর তা হবে কল্যাণকর। আর তুমি চাইলে আমি দুআ’ করবো। সে বললো, তাঁর নিকট দুআ’ করুন। তিনি তাকে উত্তমরূপে উযু করার পর দু’ রাকআত সালাত পড়ে এ দুআ’ করতে বলেন, “হে আল্লহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, রহমতের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উসীলা দিয়ে, আমি তোমার প্রতি নিবিষ্ট হলাম। হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার চাহিদা পুরণের জন্য আমি আপনার উসীলা দিয়ে আমার রবের প্রতি মনোযোগী হলাম, যাতে আমার প্রয়োজন মিটে। হে আল্লহ! আমার জন্য তাঁর সুপারিশ কবূল করো”।
ফুটনোটঃ
[১৩৮৫] তিরমিযী ৩৫৭৮ তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: তালীক ইবনু খুযাইসাহ ১২০৯।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
➤
حدثنا محمد بن عيسى، حدثنا يحيى بن زكريا، عن عكرمة بن عمار، عن محمد بن عبد الله الدؤلي، عن عبد العزيز بن أخي، حذيفة عن حذيفة، قال : كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا حزبه أمر صلى .
হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে সলাত আদায় করতেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩১৯, সালাত অধ্যায়-২, অনুচছেদ-৩১২; ছহিহুল জামেঃ হা/৪৭০৩; মিশকাতঃ ১৩১৫।
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে সলাত আদায় করতেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩১৯, সালাত অধ্যায়-২, অনুচছেদ-৩১২; ছহিহুল জামেঃ হা/৪৭০৩; মিশকাতঃ ১৩১৫।
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
⍈ এই বিষয়ে হযরত ইবরাহিম(আঃ) এর ঘটনা সরন করা যেতে পারে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তার নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে ইবরাহীম, তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লহ্র শপথ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মু’মিন নেই। সুতরাং আমি আর তুমি দ্বীনী ভাই বোন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযূ করে করে সলাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দু’আ করলেন, হে আল্লহ্ ! আমিও তোমার উপর এবং তোমার রসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল হতে আমার লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগলো। তখন সারা বললেন, আয় আল্লহ্! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দু’বার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, আল্লহ্র শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। সারাহ ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, আল্লহ্ তা’আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসেবে দিয়েছেন।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২২১৭, কেনা-বেচা অধ্যায়-৩৪, অনুচছেদ-১০০; আহমাদ-৯২৩০।
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
★ উপরোক্ত দলিল প্রমানের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারলাম যে, কোন বিশেষ প্রয়োজনে বা বিপদ হতে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে সলাতুল হাজত পরা জায়েজ ও সহিহ হাদিস সম্মত আমল।
তবে উল্লেখ্য যে, সহিহ হাদিসে সলাতুল হাজত নামে কোন নাম উল্লেখ নেই তবে এই সলাতের ব্যপারে বিস্তারিত ই বলা আছে। নাম না থাকলেও শব্দের অর্থগত দিক থেকে এটাই নির্দেশ করে।
কিন্তু কিছু হাদিস আছে যেখানে, এই সলাতুল হাজত সলাতের বিশেষ কিছু বারতি নিয়মের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে সব জাল & জয়ীফ হাদিস অর্থাৎ তা পরিত্যাজ্য।
এই সলাত সাধারণত সলাতের মতই পড়তে হবে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে 2 রাকায়াত আর সর্বোচ্চ যে যত রাকাআত পারে দুই দুই রাকাআত করে। এক্ষেত্রে সলাতের মধ্যে দুয়া করাই সব চেয়ে উত্তম হবে। মানে শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর আগে ও সিজদাহরত অবস্থায়। কেননা এই সময় দুয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সিজদায় দুয়া করা ও কবুলের ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস হলোঃ
ثم قال: «ألا إني نهيت أن أقرأ راكعا أو ساجدا، فأما الركوع فعظموا فيه الرب، وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء قمن أن يستجاب لكم»
ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্দা উন্মোচন করলেন, তখন লোক আবু বকর (রাঃ)- এর পেছনে কাতারে দাঁড়ানো ছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে লোক সকল! নবুয়তের সুসংবাদ আর অবশিষ্ট থাকবে না, নেক সপ্ন ব্যতিত যা মুসলিম দেখবে এবং তাঁকে দেখানো হবে। এরপর তিনি বললেন, তোমরা শুনে রেখ ! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে রুকু অবস্থায় কিরাআত থেকে এবং সিজদা অবস্থায়। রুকুতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বর্ণনা কর। আর সিজদায় তোমরা দোয়া করতে চেষ্টা কর। তোমাদের জন্য দোয়া কবুল হওয়ার উপযুক্ত সময় এটাই।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১০৪৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
وعن ابن عباس قال قال رسول الله ﷺ ألا إني نهيت أن أقرأ القرآن راكعا أو ساجدا فإما الركوع فعظموا فيه الرب وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء فقمن أن يستجاب لكم. رواه مسلم
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসুলুল্লহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাবধান! আমাকে রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকু’তে তোমাদের ‘রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সিজদায় অতি মনোযোগের সাথে দুয়া করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ কবুল করা হবে।
ফুটনোটঃ
[১] সহীহ : মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৮৭৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসুলুল্লহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাবধান! আমাকে রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকু’তে তোমাদের ‘রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সিজদায় অতি মনোযোগের সাথে দুয়া করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ কবুল করা হবে।
ফুটনোটঃ
[১] সহীহ : মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৮৭৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
সুতরাং আপনি নাম হিসেবে সলাতুল হাজত বলুন বা বিপদ থেকে উদ্ধারের বা বিশেষ দুয়া কবুলের সলাত বলুন যা ই বলেন কোন সমস্যা নেই। উপরোক্ত হাদিসের নির্দেশ মোতাবেক সহিহ পন্থায় আপনি আমল করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আর কোন বিশেষ নিয়ম নির্ধারন করা যাবেনা। আশাকরি সবাই বুঝতে পারছেন।
এই বিষয়ে কারো আরো কোন কনফিউশন থাকলে শাইখ রবিউল ইসলামের দলিল ভিত্তিক বক্তব্যটি শুনতে পারেনঃ
No comments:
Post a Comment