Wednesday, April 24, 2019

মিসওয়াক করলে কি ৭০ গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়?



ইসলাম পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬১/১১৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪২৫), ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়অনুচ্ছেদ-১মিশকাত হা/২৮১পৃঃ ৩৮বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬২২/৩৭ পৃঃ

 এবং ‘পবিত্রতা ছালাতের চাবি’ বলেও ঘোষণা করেছে। ছহীহ আবুদাঊদ হা/৬১১/৯ পৃঃতিরমিযী হা/৩১/৫ পৃঃমিশকাত হা/৩১২পৃঃ ৪০বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১২/৫১ পৃঃ

 তাই মুসলিম মাত্রই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকবে, যাতে ঈমান জাগ্রত থাকে। বিশেষ করে ছালাতের ওযূর ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে। কারণ ওযূ না হলে ছালাত হবে না। ছহীহ আবুদাঊদ হা/১০১১/১৪ পৃঃছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৯৮ ও ৩৯৯পৃঃ ৩২মিশকাত হা/৪০৪পৃঃ ৪৬বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭০২/৮২, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ

 সুতরাং ওযূ বিষয়ে যে সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, সেগুলো আমাদেরকে সংশোধন করে নিতে হবে।

➤ মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ :
শরী‘আতে মিসওয়াক করার গুরুত্ব অনেক। তবে মিসওয়াক করার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত প্রসিদ্ধ কথাটি জাল।
(أ) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r تَفْضُلُ الصَّلاَةُ الَّتِىْ يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلاَةِ الَّتِى لاَ يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِيْنَ ضِعْفًا.
(ক) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ছালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয়, সেই ছালাতে মিসওয়াক করা বিহীন ছালাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়। বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা হা/১৫৯১ম খন্ডপৃঃ ৬১-৬২হাকেম হা/৫১৫ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩৭মিশকাত হা/৩৮৯পৃঃ ৪৫বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৯২/৭৬ পৃঃ

তাহক্বীক্ব : ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন,
وَقَدْ رَوَاهُ مُعَاوِيَةُ بْنُ يَحْيَى الصَّدَفِىُّ عَنِ الزُّهْرِىِّ وَلَيْسَ بِالْقَوِىِّ وَرُوِىَ مِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَمِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَكِلاَهُمَا ضَعِيْفٌ وَفِىْ طَرِيْقِ الْوَجْهِ الْآخِرِ عَنْ عُرْوَةَ الْعَاقِدِىِّ وَ هُوَ كَذَّابٌ.
মু‘আবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া যুহরী থেকে বর্ণনা করেছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়। অন্য সূত্রে উরওয়া আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারা উভয়েই যঈফ। অন্য সূত্রে উরওয়া আক্বেদী থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু সে মিথ্যুক। আলবানীমিশকাত হা/৩৮৯-এর টীকা দ্রঃ১/১২৪ পৃঃ

(খ) মিসওয়াক করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা- মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাত পড়ার সমান। মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৮০৩মুসনাদে বাযযার ১/২৪৪ পৃঃ
উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী প্রণীত ‘মুন্তাখাব হাদীস’ গ্রন্থে ফযীলত সংক্রান্ত অনেক জাল বা মিথ্যা হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত বর্ণনাটি তার অন্যতম। মুন্তাখাব হাদীসঅনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ সাআদ (ঢাকা : দারুল কুতুবদ্বিতীয় প্রকাশ : আগস্ট ২০১০)পৃঃ ২৯৯
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম বাযযার বলেন, এর সনদে মু‘আবিয়া নামে একজন রাবী রয়েছে। সে ছাড়া আর কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু ওমর নামে আরেকজন রাবী রয়েছে। সে মিথ্যুক। لا نعلم رواه إلا معاوية قلت وهو الصدفي قال الحافظ ضعيف সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫০৩-এর ভাষ্য দ্রঃযঈফুল জামে‘ আছ-ছাগীর হা/৩১২৭
(ج) عَنْ زَيْدِ بنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ r يَخْرُجُ مِنْ ِشَيْءٍ مِنَ الصَّلَوَاتِ حَتَّى يَسْتَاكَ.
(গ) যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক না করে রাসূল (ছাঃ) কোন ছালাতের জন্য বাড়ী থেকে বের হতেন না। ত্বাবারাণী হা/৫২৬১মুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ৩০০
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৪৩
(د) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فِى السِّوَاكِ عَشْرُ خِصَالٍ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ تَعَالَى وَمَسْخَطَةٌ لِلشَّيْطَانِ وَمَفْرَحَةٌ لِلْمَلاَئِكَةِ جَيِّدٌ لِلَّثَةِ وَيُذْهِبُ بِالْحَفْرِ وَيَجْلُو الْبَصَرَ وَيُطَيِّبُ الْفَمَ وَيُقَلِّلُ الْبَلْغَمَ وَهُوَ مِنَ السُّنَّةِ وَيَزِيْدُ فِى الْحَسَنَاتِ.
(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, মিসওয়াকের ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি (২) শয়তানের অসন্তুষ্টি (৩) ফেরেশতাদের জন্য আনন্দ (৪) আলজিভের সৌন্দর্য (৫) দাঁতের আবরণ দূর করে (৬) চোখকে জ্যোতিময় করে (৭) মুখকে পবিত্র করে (৮) কফ হরাস করে (৯) এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত (১০) নেকী বৃদ্ধি করে। দারাকুৎনী ১/৫৮সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬৯/২১ পৃঃফাযায়েলে আমল (বাংলা) ফাযায়েলে নামায অংশপৃঃ ৬৮-৬৯
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, মু‘আল্লা ইবনু মাঈন দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী। مُعَلَّى بْنُ مَيْمُوْنٍ ضَعِيْفٌ مَتْرُوْكٌ দারাকুৎনী ১/৫৮সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬৯/২১ পৃঃ
(ه) عَنِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ وَمَجْلاَةٌ ِللْبَصَرِ.
(ঙ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী, প্রতিপালকের সন্তুষ্টির কারণ ও চোখের জন্য জ্যোতিময়। ত্বাবারাণীআল-মুজামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, হারিছ বিন মুসলিম ছাড়া বাহরে সিক্বা থেকে অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেননি। لم يرو هذا الحديث عن بحر السقاء إلا الحارث بن مسلم –আল-মুজামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৭৬
(و) عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ تَسَوَّكُوْا فَإِنَّ السِّوَاكَ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ مَا جَاءَنِىْ جِبْرِيْلُ إِلَّا أَوْصَانِىْ بِالسِّوَاكِ حَتَّى لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ يُفْرَضَ عَلَيَّ وَعَلَى أُمَّتِىْ وَلَوْلاَ أَنِّىْ أَخَافُ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِىْ لَفَرَضْتُهُ لَهُمْ وَإِنِّىْ لَأَسْتَاكُ حَتَّى لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ أُحْفِيَ مَقَادِمَ فَمِىْ.
(চ) আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা মিসওয়াক কর। নিশ্চয়ই মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। যখনই জিবরীল আমার নিকট আসেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলেন। এমনকি আমি ভয় করি যে, আমার ও আমার উম্মতের উপর তা ফরয করা হয় কি-না। আমার উম্মতের উপর কঠিন হয়ে যাওয়ার ভয় না করলে মিসওয়াক করা আমি উম্মতের উপর ফরয করে দিতাম। আমি মিসওয়াক করতেই থাকি এমনকি আশংকা করি যে, আমি হয়ত আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে ফেলব। যঈফ ইবনু মাজাহ হা/২৮৯পৃঃ ২৫আহমাদ হা/২২৩২৩ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৭৯৬মিশকাত হা/৩৮৬পৃঃ ৪৫বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৬২/৭৫ পৃঃমুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ২৯৮
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ওছমান ইবনু আবীল আতেকা নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন এবং নাসাঈ তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়াও আলী ইবনু যায়েদ আবু আব্দিল মালেক নামের একজন রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন। ইবনু হাতেম এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন। মুগাল্লাত্বঈশরহে সুনানে ইবনে মাজাহ (সঊদী আরব : মাকতাবাহ নিযার মুছত্বফা আল-বায১৪১৯ হিঃ)১/৬২ পৃঃ
(ز) عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِيْنَ الْحَيَاءُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ.
(ছ) আবু আইয়ূব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, চারটি বিষয় নবীদের সুন্নাত। (ক) লজ্জা করা। অন্য বর্ণনায় খাতনা করার কথা রয়েছে (খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা (গ) মিসওয়াক করা ও (ঘ) বিবাহ করা। যঈফ তিরমিযী হা/১০৮০১/২০৬মিশকাত হা/৩৮২পৃঃ ৪৪বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫২২/৭৪ পৃঃ, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদমুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ২৯৭


তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনায় কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। আইয়ূব ও মাকহূলের মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। হাজ্জাজ বিন আরত্বাহ নামক রাবীর দোষ রয়েছে। এছাড়াও এর সনদে আবু শিমাল রয়েছে। তাকে আবু যুর‘আহ ও ইবনু হাজার আসক্বালানী অপরিচিত বলেছেন। মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানীইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজে আহাদীছি মানারিস সাবীল (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী১৪০৫/১৯৮৫)হা/৭৫১ম খন্ডপৃঃ ১১৭

 যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করা ফযীলতপূর্ণ :
যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ এর পক্ষে শারঈ কোন বিধান নেই। এ মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
(أ) عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ نِعْمَ السِّوَاكُ الزَّيْتُوْنُ مِنْ شَجَرةٍ مُبارَكَةٍ  يُطَيِّبُ الْفَمَ ويُذْهِبُ الحَفْرَ  وَهُوَ سِوَاكِىْ وسِوَاكُ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِىْ.
(ক) মু‘আয বিন জাবাল বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, উত্তম মিসওয়াক হল বরকতপূর্ণ যায়তুন গাছ, যা মুখকে পবিত্র করে ও দাঁতের আবরণ দূর করে। এটা আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্বের নবীগণের মিসওয়াক। ত্বাবারাণীআল-আওসাত্বহা/৬৮৯
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আল-উকাশী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম যাহাবী, দারাকুৎনী, ইবনু হাজার আসক্বালানী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মিথ্যুক বলে অভিহিত করেছেন। আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানীতাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ১৪১৫/১৯৯৪)৯/৩৭১ পৃঃ
ইমাম হায়ছামী বলেন, এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মুহছিন উকাশীও আছে। সে চরম মিথ্যাবাদী। সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৩৬০ ও ৫৫৭০
(ب) عَنْ أَبِىْ خَيْرَةَ الصَّبَّاحِىِّ قَالَ كُنْتُ فِى الْوَفْدِ الَّذِيْنَ أَتَوْا رَسُوْلَ اللهِ r مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ فَزَوَّدَنَا الأَرَاكَ نَسْتَاكُ بِهِ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ عِنْدَنَا الْجَرِيْدُ وَلَكِنَّا نَقْبَلُ كَرَامَتَكَ وَعَطِيَّتَكَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ r اللهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ الْقَيْسِ إِذْ أَسْلَمُوْا طَائِعِيْنَ غَيْرَ مُكْرَهِيْنَ إِذْ قَعَدَ قَوْمِىْ لَمْ يُسْلِمُوْا إِلاَّ خَزَايَا مَوْتُوْرِيْنَ.
(খ) আবু খায়রাহ ছববাহী (রাঃ) বলেন, আমি আব্দুল ক্বায়স প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলাম, যারা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়েছিল। তিনি পাথেয় বাবদ মিসওয়াক করার জন্য আমাদেরকে আরাক গাছের ডাল দিলেন, যাতে আমরা তা দ্বারা মিসওয়াক করি। আমরা বললাম, আমাদের নিকট মিসওয়াক করার জন্য খেজুরের ডাল রয়েছে। তবে আমরা আপনার সম্মানজনক দান গ্রহণ করছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আব্দুল ক্বায়েসের প্রতিনিধি দলকে ক্ষমা করুন। কারণ তারা আনুগত্য স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেছে, অসন্তুষ্টিতে নয়। আর আমার সম্প্রদায় অপমানিত ও তীর-ধনুকের কবলে না পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি। ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৮৩৫৯মুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ৩০০
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে দাঊদ ইবনু মাসাওয়ার নামক রাবী রয়েছে। সে অপরিচিত, কেউ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেননি। তার শিক্ষক মুক্বাতিল বিন হুমামও অপরিচিত। ইমাম বুখারীতারীখুল কাবীর ৩/২৪৭ পৃঃ
➤ আঙ্গুল দিয়ে মিসওয়াক করাই যথেষ্ট :
মিসওয়াক দ্বারাই মুখ পরিষ্কার করা সুন্নাত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করা যায়। কিন্তু শুধু আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট, একথা ঠিক নয়। এর পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ يَجْزِئ مِنَ السِّوَاكِ الْأَصَابِعُ.
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট। বায়হাক্বী ১/৪০ইবনু আদী ৫/৩৩৪
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু গাযিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে যঈফ। বরং দারাকুৎনী তাকে হাদীছ জালকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-মুযানী নামক রাবীকেও মুহাদ্দিছগণ মিথ্যুক বলেছেন। তাছাড়া আরো অনেক ত্রুটি রয়েছে। সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৭১ইরওয়াউল গালীল হা/৬৯যঈফুল জামে হা/৬৪১৫

➤ ছিয়াম অবস্থায় কাঁচা ডাল দ্বারা মিসওয়াক না করা :
উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বরং কাঁচা হোক শুকনা হোক যেকোন ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা যাবে। ছহীহ বুখারী হা/১৯৩৪১/২৫৯ পৃঃ, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়-৩৬অনুচ্ছেদ-২৭- بَابُ سِوَاكِ الرَّطْبِ وَالْيَابِسِ لِلصَّائِمِ
উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাআতের ‘ফাযায়েলে আমল’ বইয়ে বলা হয়েছে, ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, মিসওয়াকের এহতেমাম করার মধ্যে সত্তরটি উপকার রয়েছে। তার মধ্যে একটি মৃত্যুর সময় কালেমায়ে শাহাদত নসীব হয়। ফাযায়েলে নামায অংশ৬৯ পৃঃ উক্ত দাবী উদ্ভট ও ভিত্তিহীন। এভাবে শরী‘আতকে হেই প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

⏩ এই বিষয়ে শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী এর আলোচনা হলোঃ ⇓⇓⇓

প্রশ্ন: "মিসওয়াক করে সালাত আদায় করলে ৭০গুন সাওয়াব বেশি হয়" এটা কি সহিহ? উত্তর: ওযুর পূর্বে বা নামাজের পূর্বে মিসওয়াক করার ব্যাপারে একাধিক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ✪ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ﻟﻮﻻ ﺃﻥ ﺃﺷﻖ ﻋﻠﻰ ﺃﻣﺘﻲ ﺃﻭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻷﻣﺮﺗﻬﻢ ﺑﺎﻟﺴﻮﺍﻙ ﻣﻊ ﻛﻞ ﺻﻼﺓ "আমি যদি উম্মতের উপর (কষ্ট হবার) আশংকা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাজেই মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম।" (সহীহ বুখারী, হাদীস নং৮৮৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং২৫২)
✪ মিসওয়াক করা মুখের পরিচ্ছন্নতা অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:, ﺍﻟﺴﻮﺍﻙ ﻣﻄﻬﺮﺓ ﻟﻠﻔﻢ ﻣﺮﺿﺎﺓ ﻟﻠﺮﺏ "মিসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।" (সুনান নাসায়ী, ১/৫০, সহীহ ইববে হিব্বান হা/১০৬৭, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব- ১/১৩৩)
✪ এছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাুহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহির থেকে বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে এবং রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। ➤ কিন্তু ﺻﻼﺓٌ ﺑﺴﻮﺍﻙٍ ﺃﻓﻀَﻞُ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻣﻦ ﺳﺒﻌﻴﻦ ﺻﻼﺓً ﺑﻐﻴﺮ ﺳﻮﺍﻙ "মেসওয়াক করে সালাত আদায় আল্লাহর নিকট মিসওয়াক ছাড়া সালাতের চেয়ে ৭০গুন বেশি উত্তম বা সওয়াব বেশি হয়" মর্মে যে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে হয় তা বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের মতে যইফ বা দুর্বল। এ মর্মে কোনো হাদিস বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়নি।
উপরোক্ত হাদিসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের অভিমত: ● আল কামাল ইবনুল বলেন: এটি শায এবং যঈফ। গ্রন্থ: শরহু ফাতহিল কাদীর ২/৩৫৩। ● ইমাম সুয়ূতী বলেন, এ হাদিসটি যঈফ। গ্রন্থ: আল জামেউস সগির হা/৫০৮৩। ● শাইখ আলবানী বলেন, যঈফ। গ্রন্থ: যঈফুল জামে হা/৩৫১৯, যঈফ তারগীব হা/১৫০। ● এ ছাড়াও বায়হাকী, নওবী সহ বহু মুহাদ্দিস এটিকে যঈফ বা দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। যাহোক, আমাদের কর্তব্য, সুন্নত পালনার্থে যথাসাধ্য ওযুর পূর্বে বা সালাতের পূর্বে মিসওয়াক করা। তবে মিসওয়াক সহকারে সালাত আদায় করলে ৭০গুণ বেশি সওয়াব-এ বিশ্বাস পোষণ করা যাবে না। কেননা, এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহীহ সনদে প্রমাণিত হয় নি। সেই সাথে ঘুম থেকে উঠে, বাহির থেকে বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে বা যখনই মুখে দুর্গন্ধ অনুভূত হয় তখনই মিসওয়াক করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করা। আল্লাহু আলাম ▬▬▬ ▬▬▬ উত্তর প্রদানে: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...