Friday, April 16, 2021

শেষ রাতে আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে আসেন তাহলে কোন দেশের শেষ রাতে?

 প্রশ্নঃ শেষ রাতে আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে আসেন তাহলে কোন দেশের শেষ রাতে? 

জবাব:

আল্লাহর অবতরন তো আল্লাহর সিফাত। আল্লাহর সিফাত আর বৃটিশের ভাগ করা সীমান্ত দিয়ে ছিয়াম ঈদের বিধান আলাদা করা দুটি বিষয় কি এক রকমের জিনিস হলো? আল্লাহর সিফাত নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিদআত পক্ষান্তরে ফিকাহ শাস্ত্রের ইমামগণ চাঁদ দেখা ও সিয়াম ঈদ সংক্রান্ত অনেক মত প্রদান করেছেন। সৌদির শেষ রাত আর বাংলাদেশের শেষ রাত যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি বাংলাদেশেও শেষ রাত সব জায়গায় একই সময় হয় না কিন্তু বাংলাদেশে রোজা একই দিনে/বারে হয়। 


আল্লাহর সিফাত নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিৎ নয়। ইমাম মালিক ইবন আনাস, সুফিয়ান ইবন উআয়না, আবদুল্লাহ ইবন মুবারক (র.) প্রমূখ ইমামদের থেকে এই ধরণের বক্তব্য বর্ণিত আছে। এই ধরণের হাদিসগুলো সম্পর্কে তাঁরা বলেন, “কী ধরণের?” - সে প্রশ্ন না তুলে যেভাবে উল্লিখিত হয়েছে সেভাবেই তা মেনে নাও। 


ইমাম আবু হানিফা (রহমাতুল্লহ আলাইহি) কে মহান আল্লাহর অবতরণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন:


 ينزل بلا كيف 


“[মহান আল্লাহ] অবতরণ করেন, কোনোরূপ পদ্ধতি বা স্বরূপ ব্যতিরেকে।”


(তার কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) 


সহীহ বুখারীতে সিফাত-সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহমাতুল্লহ আলাইহি) এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন ইবন রজব হাম্বলী (রহমাতুল্লহ আলাইহি) --


আমি আবু আব্দুল্লাহকে [আহমাদ বিন হাম্বল(র.)] বললাম, 


“আল্লাহ কি দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন?” 


তিনি বললেন, 


“হ্যাঁ”। 


আমি বললাম, 


“তাঁর অবতরণ কি ইলম (জ্ঞান) দিয়ে অথবা কী দিয়ে?” 


তিনি বললেন, 


“এই বিষয়ে চুপ করো। তোমার কী দরকার এ বিষয়ে? হাদিসে যেভাবে ‘কীভাবে’ বা সীমা ছাড়া বর্ণিত হয়েছে সেভাবে মেনে নাও। তবে কোন আছার বা হাদিস যদি বর্ণিত হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। অথবা যদি কিতাবে বর্ণিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “অতএব, আল্লাহর কোন সদৃশ সাব্যস্ত করো না।” (সুরা নাহল ১৬ : ৭৪) ” ” এর পরে ইবন রজব হাম্বলী(র.) উল্লেখ করেছেন, “ [আল্লাহর] ‘অবতরণ’ বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে, তার উপর নড়াচড়া, স্থানান্তর, আরশ থেকে খালি হওয়া, না থাকা এ সকল কিছু সাব্যস্ত করা বিদআত। এ ব্যপারে গভীরে অনুসন্ধান করা কোনো প্রশংসনীয় কাজ নয়।”


(ইবন রজব হাম্বলী (রহমাতুল্লহ আলাইহি) এর বর্ণনা এ পর্যন্তই এখানে দেয়া হলো।)


ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইমাম মালিক, ইমাম আবু হানীফা এবং সালাফগণ আল্লাহর সিফাত নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু চাঁদ এবং ঈদের ব্যপারে তারা ফাতওয়া দিয়েছেন।


‘আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া’ নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে-


“পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা সিয়াম (রোযা) ফরয হবে । চাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নেই । তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌছতে হবে। তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লহ আলাইহি, ইমাম মালিক রহমাতুল্লহ আলাইহি এবং ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রহমাতুল্লহ আলাইহি এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরয হয়ে যাবে”। (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়ার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল)


(উদ্ধৃতি এপর্যন্তই খানে দেয়া হলো।)

[(আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৪৪৩) অথবা (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৮৭১)]


আল্লাহর সিফাত আর বৃটিশের ভাগ করা সীমান্ত দিয়ে সিয়াম ঈদের বিধান আলাদা করা দুটি বিষয় কখনো তুলনীয় নয়। বৃটিশের দেয়া জাতিয়তাবাদী কাঁটাতারের বেড়ার একপাশে লাইলাতুল ক্বদর একরাতে আর অপর পাশে লাইলাতুল ক্বদর তার পরের রাতে, এটা হতে পারেনা। কারণ কুরআন তো দুই রাতে নাযিল হয়নি, বরং একরাতেই হয়েছে। তেমনি জাতিয়তাবাদী বর্ডারের একপাশে প্রধান শয়তানকে যেদিন বাঁধা হয়, অপরপাশে তার পরের দিন বাঁধা হয়, এটাও হতে পারেনা। তেমনিভাবে জাতিয়তাবাদী সীমান্তের একপাশে যেদিন ঈদ, অন্যপাশে সেদিন ছিয়াম (রোজা) এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদের দিন ছিয়াম (রোজা) রাখা হারাম।


মুসলিমদের ভূমি একটাই। হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার দিয়ে একক মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করা হারাম। চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে রসূল ﷺ দেশের সীমারেখার কোন শর্ত দেননি আমরাও দেই না।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...