শব্দে শব্দে অর্থ ও উচ্চারণসহ গুরুত্বপূর্ণ দু'আ সিরিজঃ
.
#বিঃদ্রঃ আরবি দেখে উচ্চারণ করবেন নচেত বাংলা দেখে উচ্চারণ করলে ভূল হবে শিওর।
.
(পর্বঃ ১)
.
বিশেষ করে সিজদায় পড়ুন এই মহিমান্বিত দু‘আটি। এক দু‘আতেই সবকিছু অন্তর্ভুক্ত। আমরা শব্দে শব্দে অর্থসহ উপস্থাপন করছি।
.
اَللّٰهُمَّ أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا فِي الأُمُورِ كُلِّهَا، وَأجِرْنَا
مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الآخِرَةِ
.
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ‘হসিন ‘আক্বিবাতানা, ফিল উমূরি কুল্লিহা, ওয়া আজিরনা— মিন খিযয়িদ দুনইয়া, ওয়া ‘আযাবিল আ~খিরাহ (আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়; তাই আরবির সাথে মিলিয়ে পড়ুন)
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! সকল কাজে আমাদের উত্তম পরিণতি দাও। আর আমাদের রক্ষা করো—দুনিয়ার লাঞ্ছনা-অপমান থেকে ও আখিরাতের আযাব থেকে]
.
এবার শব্দে শব্দে অর্থ:
.
اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ
أَحْسِنْ উত্তম করো
عَاقِبَتَنَا আমাদের পরিণতি
فِي الأُمُورِ কাজের মধ্যে
كُلِّهَا সকল
وَأجِرْنَا এবং রক্ষা করো
مِنْ হতে
خِزْيِ লাঞ্ছনা-অপমান
الدُّنْيَا দুনিয়ার
وَعَذَابِ এবং আযাব
الآخِرَةِ আখিরাতের
.
এবার এভাবে সহজে মুখস্থ করুন—
.
اَللّٰهُمَّ - হে আল্লাহ
أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا - আমাদের উত্তম পরিণতি দাও
فِي الأُمُورِ كُلِّهَا - সকল কাজে
وَأجِرْنَا - এবং রক্ষা করো
مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا - দুনিয়ার লাঞ্ছনা-অপমান হতে
وَعَذَابِ الآخِرَةِ - ও আখিরাতের আযাব হতে
.
বুসর ইবনু আরতাআ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘‘আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে দু'আ পড়তে শুনেছি...(অতপর তিনি উপরের দু'আটি বর্ণনা করেন)।’’
[বুখারি, আত তারিখুল কাবির: ১/৩০, ২/১২৩, হাদিসটি হাসান]
.
আপনারা অর্থটি খেয়াল করে, বিভিন্ন অবস্থাকে অন্তরে ধারণ করে দু'আটি পড়বেন।
.
.
(পর্বঃ ২)
.
স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝি ও বন্ধু-বান্ধবের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দূর করতে এই দু'আটি পড়তে পারেন নামাজের সিজদায় অথবা সালাম ফেরানোর পূর্বে।
.
اللّٰهُمَّ أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا وَاهْدِنَا سُبُلَ السَّلاَمِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আল্লিফ বাইনা ক্বুলূবিনা, ওয়া আসলিহ যা~তা বাইনিনা, ওয়াহদিনা সুবুলাস সালাম
(আরবির উচ্চারণ বাংলায় লেখা কখনই সম্ভব নয়; সুতরাং আরবি দেখে মিলিয়ে শিখুন। না হয় ভুল শিখবেন)]
———————————————————
শব্দে শব্দে মনে রাখুন—
.
اللّٰهُمَّ হে আল্লাহ
أَلِّفْ সম্প্রীতি-মহব্বত দাও
بَيْنَ মাঝে
قُلُوبِنَا আমাদের অন্তরের
وَ এবং
أَصْلِحْ সংশোধন করে দাও
ذَاتَ بَيْنِنَاআমাদের মধ্যকার(বিষয়াবলী)
وَاهْدِنَا আর দেখাও
سُبُلَ পথসমুহ
السَّلاَمِ শান্তির
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
এবার মুখস্থ করুন এভাবে—
.
[আল্লাহুম্মা]
اللّٰهُمَّ
হে আল্লাহ!
.
[আল্লিফ বাইনা ক্বুলূবিনা]
أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا
আমাদের অন্তরসমূহের মাঝে সম্প্রীতি ও মিল-মহব্বত দাও।
.
[ওয়া আসলিহ যা~তা বাইনিনা]
وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا
এবং আমাদের মধ্যকার বিষয়াবলী সংশোধন করে দাও
.
[ওয়াহদিনা সুবুলাস সালাম]
وَاهْدِنَا سُبُلَ السَّلاَمِ
আর আমাদের দেখাও তুমি—শান্তির পথসমূহ।
.
সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সালাতে (নামাযে) বসে কী পড়ব, তা আমরা জানতাম না। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেখানো হয়েছে ব্যাপক অর্থবোধক ও সর্বোত্তম বাক্যসমূহ।’ এরপর তিনি তাশাহহুদের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহহুদের মত করে আমাদের আরো কিছু বাক্য শেখাতেন। এরপর তিনি উপরের বাক্যগুলোসহ অনেকগুলো বাক্য উল্লেখ করেন। [আবু দাউদ, হাদিস: ৯৬৯; হাদিসটি সহিহ]
.
‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোমালিন্য হলে এই দু'আ পড়তে হবে’ এমন কথা নবীজি বলেননি। আমরা কেবল অর্থের দিক থেকে মিল থাকায় আপনাদের নিকট এই বাক্যগুলো তুলে ধরছি। উদ্দেশ্য দুটো: এক. সিজদায় আরবিতে দু'আ করার জন্য কিছু বাক্য উল্লেখ করা; দুই. সেই বাক্যগুলো সরাসরি সুন্নাহ্ থেকে নেওয়ার চেষ্টা করা। ইনশাআল্লাহ্, এতে বরকত হবে। আপনারা অন্তরে আপনাদের সমস্যা চিন্তা করে উপরে বর্ণিত দু'আটি সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে সালাম ফেরানোর পূর্বে পড়তে থাকবেন।
-----------------------------------------------------
সিজদায় দু'আর ক্ষেত্রে:
.
• প্রথমে তিনবার সিজদার তাসবিহ পড়ুন।
• এরপর দু'আ করুন নিজের মত করে।
• ফরয নামাজের সিজদায় দু'আ না পড়াই উত্তম; তবে পড়লেও নামায হবে।
.
.
(পর্বঃ ৩)
.
মুমিনদের মা ও রাসূলের স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.) বলেন—রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দু'আটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন, তা হলো–
.
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব! সাব্বিত ক্বালবী ‘আলা দীনিকা (আরবি হরফের উচ্চারণ বাংলায় লেখা অসম্ভব, মূল আরবির সাথে মিলিয়ে পড়ুন। না হয় ভুল পড়বেন)]
.
[অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল রাখুন।]
.
এবার শব্দে শব্দে শিখে নিন—
.
يَا ইয়া [হে]
مُقَلِّبَ মুক্বাল্লিব [পরিবর্তনকারী]
الْقُلُوبِ আল-ক্বুলূব [অন্তরসমূহ]
ثَبِّتْ সাব্বিত [অটল-অবিচল রাখুন]
قَلْبِي ক্বালবী [আমার অন্তর]
عَلٰي আলা [উপরে]
دِيْنِكَ দীনিকা [আপনার দ্বীন(-এর)]
.
এভাবে মুখস্থ করুন—
.
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব
[হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী!]
.
ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ সাব্বিত ক্বালবী আলা দীনিকা
[আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল-অবিচল রাখুন।] [তিরমিযি, হাদিস: ৩৫২২, হাসান]
.
আরেকটি দু'আ একই ভাব ও মর্মের। তবে, সেটি আরো বেশি হৃদয়গ্রাহী। সেই দু'আটি পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আ~লে ইমরানের ৮ নং আয়াতে এসেছে।
.
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
.
আরবি উচ্চারণ বাংলায় লেখা সম্ভব নয়, তবুও আমরা হাদিসের ক্ষেত্রে লেখি। কিন্তু কুরআনের ক্ষেত্রে লিখি না। কারণ এটা আলেমগণ নিষেধ করেছেন। ভুল উচ্চারণে অর্থ বিকৃতির আশঙ্কা থাকে।
.
[অর্থ: হে আমাদের রব! যখন তুমি আমাদের সঠিক পথে চালিয়েছো, তখন আর আমাদের অন্তরকে (সত্যপথ থেকে) বাঁকা করে দিও না। তোমার রহমতের ভান্ডার হতে আমাদের জন্য রহমত দাও। নিশ্চয়ই প্রকৃত দাতা তো তুমিই।]
.
رَبَّنَا হে আমাদের রব
لاَ না
تُزِغْ বাঁকা করো
قُلُوبَنَا আমাদের অন্তর
بَعْدَ পরে
إِذْ যখন
هَدَيْتَنَا সঠিক পথে চালিয়েছো
وَهَبْ দান করো
لَنَا আমাদের জন্য
مِن হতে
لَّدُنكَ তোমার নিকট
رَحْمَةً রহমত
إِنَّكَ নিশ্চয়ই তুমি
أَنتَ তুমি
الْوَهَّابُ প্রকৃত দাতা
.
মুখস্থ করুন এভাবে—
.
رَبَّنَا হে আমাদের রব
.
لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا আমাদের অন্তরকে (সত্যপথ থেকে) বাঁকা করে দিও না।
.
بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا যখন তুমি আমাদের সঠিক পথে চালিয়েছো
.
وَهَبْ لَنَا আমাদের জন্য রহমত দাও
.
مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً তোমার রহমতের ভান্ডার হতে রহমত
.
إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ নিশ্চয়ই প্রকৃত দাতা তো তুমিই
.
দু'আ দুটোর গুরুত্ব:
হাদিসে এসেছে—শেষ যামানায় নিজের ঈমানকে ধরে রাখা, হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার চেয়েও কঠিন হবে। আমরা জানি না—সেই সময়েই আমরা আছি কীনা। তবে, বর্তমান সময়েও দীনের উপর অটল-অবিচল থাকা-যে কত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমানকে হরণ করার জন্য শয়তানি তৎপরতার শেষ নেই। এমতাবস্থায় আমাদের মত দুর্বল মুমিনদের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
.
হাদিসে এসেছে—মানুষের অন্তর আল্লাহর দুই আঙুলের মাঝে। তিনিই সেটিকে এদিক-ওদিক করেন। [আহমাদ: ৬/৩০২, সহিহ]
সুতরাং আমরা তো জানি না, আমাদের কোন্ অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ্ রাগ করে আমাদের অন্তরকে বক্রতার দিকে ঘুরিয়ে দেন আর আমরা হয়ে যাই চিরস্থায়ীভাবে মহাক্ষতিগ্রস্ত। তাই, নিজের ঈমানকে নিরাপদ রাখতে, এই দু'আ দুটো নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর আগে, সাধারণ দু'আয় ও সদা-সর্বদা পাঠ করতে হবে খুব বেশি বেশি। এই দুটো দু'আ পাঠের সময় মনে মনে ভাবতে থাকবেন—‘‘আল্লাহ! আমি তোমার খুবই দুর্বল এক বান্দা। আমি সহজেই শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যাই। আমার অন্তর দ্রুত পাল্টে যায়। আর তোমার হাতেই তো অন্তরের চাবি। যদি তুমি আমার অন্তরকে দ্বীনের উপর অটল না রাখো, তাহলে তো আমি ধ্বংস হয়ে যাব!’’ এভাবে নিজের মত করে ভাবতে থাকবেন আর আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরবেন।
.
.
(পর্বঃ ৪)
.
দু'আ তিনটির মাধ্যমে দুনিয়াতে অবিচ্ছিন্ন নিয়ামত, মানসিক প্রশান্তি এবং আখিরাতে স্বাচ্ছন্দময় জীবন—সবই অন্তর্ভুক্ত আছে, আলহামদুলিল্লাহ!
.
নবীজির প্রিয় সাহাবি আম্মার ইবনু ইয়াসার (রা.) নামাজে এসব বাক্য দিয়ে দু'আ করেছিলেন আর বলেছিলেন, এগুলো তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিখেছেন। [নাসাঈ, হাদিস: ১৩০৪, সহিহ]
.
দু'আটি ছিলো অনেক অনেক লম্বা। সেখান থেকে আমরা সহজ তিনটি বাক্য তুলে ধরছি, যাতে সবাই শিখতে পারেন।
.
اللّٰهُمَّ أَسْأَلُكَ نَعِيْماً لَا يَنْفَدُ وَأَسْأَلُكَ الرِّضٰى بَعْدَ الْقَضَاءِ وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসআলুকা না‘ঈমান লা ইয়ানফাদ, ওয়া আসআলুকার রিদ্বা বা‘অদাল ক্বাদ্বা, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘অদাল মাওত]
(আরবি ع ‘আইন’সহ বিভিন্ন হরফের উচ্চারণ বাংলায় লেখা যায় না। সুতরাং আমরা অনুরোধ করব—আপনারা আরবির সাথে মিলিয়ে পড়ুন। না হয়, নিশ্চিত ভুল শিখবেন)
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার কাছে এমন নিয়ামত (অনুগ্রহ) চাই, যা কখনো শেষ হবে না; তোমার কাছে চাই, যেন তোমার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারি এবং তোমার কাছে মৃত্যুর পর আরামদায়ক জীবন চাই]
.
এবার শব্দে শব্দে অর্থ মুখস্থ করুন—
.
اللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
أَسْأَلُكَ আসআলুকা [আমি তোমার কাছে চাই]
نَعِيْماً না‘ঈমান [নিয়ামত বা অনুগ্রহ]
لَا يَنْفَدُ লা ইয়ানফাদ [শেষ হবে না]
وَأَسْأَلُكَ ওয়া আসআলুকা [তোমার কাছে চাই]
الرِّضٰى আর-রিদ্বা [সন্তুষ্টি/খুশি]
بَعْدَ বা‘অদা [পরে]
الْقَضَاءِ আল-ক্বাদ্বা [সিদ্ধান্ত]
وَأَسْأَلُكَ ওয়া আসআলুকা [তোমার কাছে চাই]
بَرْدَ বারদা [শীতল (আরাম]
الْعَيْشِ আল-‘আইশ [জীবন]
بَعْدَ বা‘অদা [পরে]
الْمَوْتِ আল-মাওত [মৃত্যু]
.
এবার মুখস্থ করুন এভাবে—
.
اللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
.
أَسْأَلُكَ نَعِيْماً لَا يَنْفَدُ আসআলুকা না‘ঈমান লা ইয়ানফাদ
[তোমার কাছে এমন নিয়ামত (অনুগ্রহ) চাই, যা কখনো শেষ হবে না]
.
وَأَسْأَلُكَ الرِّضٰى بَعْدَ الْقَضَاءِ ওয়া আসআলুকার রিদ্বা বা‘অদাল ক্বাদ্বা
[তোমার কাছে চাই, যেন তোমার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারি]
.
وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘অদাল মাওত
[তোমার কাছে মৃত্যুর পর আরামদায়ক জীবন চাই]
.
কয়েকটি কথা:
--------------------
[এক.] প্রথম বাক্যটি দিয়ে দুনিয়ার সকল নিয়ামতই সম্পৃক্ত করা যায়। অন্তত দু'আর সময় মাথায় এমনটিই রাখবেন।
.
[দুই.] আমরা বিভিন্ন খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে হতাশ হয়ে যাই; আল্লাহর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে পারি না। এমনটি করা খুবই খারাপ অভ্যাস। তাই এ থেকে মুক্তি পেতে আমরা দু'আ করব ‘তোমার কাছে চাই, যেন তোমার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারি'। আর, যে সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকতে পারে, তার চেয়ে সুখী মানুষ পৃথিবীতে নেই।
.
[তিন.] তৃতীয় বাক্যে মৃত্যুর পর আরামদায়ক জীবন চাওয়া হচ্ছে। এটা তো জরুরি। কারণ কেউ সর্বাধিক আনন্দে জীবন কাটাক অথবা সর্বাধিক দুঃখী জীবন কাটাক, তাদের প্রত্যেকের মৃত্যু আছে। আসলে মৃত্যুর পরের জীবনটাই মূল জীবন। তাই, সেই জীবনটা সুন্দর হওয়ার জন্যও এখানে দু'আ করা হচ্ছে।
.
[চার] তাশদিদের উপরের হরকত যবর হয় এবং তাশদিদের নিচের হরকত যের হয় (যদিও তা হরফের উপরে হোক না কেন)।
.
.
(পর্বঃ ৫)
.
এই বাক্যগুলো এত চমৎকার, যা প্রত্যেকের দু'আর মধ্যে থাকা উচিত। আমরা শুরু করছি ইনশাআল্লাহ্—
.
اللَٰهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ، وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ، غَيرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِينَ
.
[মোটিমুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা তাওয়াফফানা মুসলিমীন, ওয়া আ‘হয়িনা মুসলিমীন, ওয়া আলহিক্বনা বিস স-লিহীন, গায়রা খাযা-য়া ওয়া লা মাফতূ-নীন] (আরবিটা দেখে দেখে শিখুন, শুধু বাংলা শিখলে নিশ্চিত ভুল উচ্চারণ শিখবেন)
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! মুসলিম অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিও; মুসলিম অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো; (মৃত্যুর পর) ভালো মানুষদের সাথে আমাদের জুড়ে দিয়ো; আমাদের অপদস্থ করো না এবং পরীক্ষায় ফেলো না]
.
এবার শব্দার্থগুলো শিখে নিন—
.
اللَٰهُمَّ আল্লা-হুম্মা [হে আল্লাহ]
تَوَفَّنَا তাওয়াফফানা [আমাদের মৃত্যু দিও]
مُسْلِمِينَ، মুসলিমীন [মুসলিম (অবস্থায়)]
وَأَحْيِنَا ওয়া আহয়িনা [আমাদের বাঁচিয়ে রেখো]
مُسْلِمِينَ، মুসলিমীনা [মুসলিম অবস্থায়]
وَأَلْحِقْنَا ওয়া আলহিক্বনা [আমাদের জুড়ে দিয়ো]
بِالصَّالِحِينَ، বিস স-লিহীন [ভালো মানুষদের সাথে]
غَيرَ গায়রা [ব্যতীত]
خَزَايَا খাযা-য়া [অপমান-অপদস্থতা]
وَلَا ওয়া লা [এবং নয়]
مَفْتُونِين মাফতূ-নীন [পরীক্ষায় আক্রান্ত]
.
মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
اللَٰهُمَّ আল্লা-হুম্মা [হে আল্লাহ্]
.
تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ তাওয়াফফানা মুসলিমীন
[মুসলিম অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিও]
.
وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، ওয়া আ‘হয়িনা মুসলিমীন
[মুসলিম অবস্থায় আমাদের বাঁচিয়ে রাখো]
.
وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ، ওয়া আলহিক্বনা বিস স-লিহীন
[(মৃত্যুর পর) ভালো মানুষদের সাথে আমাদের জুড়ে দিয়ো]
.
غَيرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِين গায়রা খাযা-য়া ওয়া লা মাফতূ-নীন
[আমাদের অপদস্থ করো না এবং পরীক্ষায় ফেলো না]
.
উহুদ যুদ্ধের দিন মুশরিকরা চলে যাওয়ার পর, সাহাবাদেরকে পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করেছিলেন ও অনেকগুলো দু'আ করেছিলেন। সেগুলো থেকে মাত্র চারটি বাক্য (দু'আ) উপরে উপস্থাপন করা হয়েছে। [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ৬৯৯, সহিহ]
.
দুটো কথা:
ঈমানি হালতে চলতে পারা এবং ঈমানি হালতে মরতে পারার মত সৌভাগ্য এই পৃথিবীতে আর নেই। উপরের দু'আর মধ্যে এ দুটো চাওয়াই আছে। ভালো মানুষদের সঙ্গে থাকার দু'আর মধ্যে মনে মনে ভাববেন—নবী, সিদ্দিক, শুহাদা, সালিহিনের সাহচর্যের আকাঙ্ক্ষা। সর্বশেষ— অপদস্থতা ও পরীক্ষায় যাতে না পড়তে হয়, তার দু'আ। এটিও অত্যন্ত জরুরি। কারণ অপদস্থতা বা অপমান যেমন দুনিয়াতেও খারাপ, তেমনি আখিরাতে আরো খারাপ আর শেষ যামানায় ঈমানের পরীক্ষা হবে ভয়াবহ কঠিন, যা আমরা ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারছি।
.
অতএব, আমরা নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর আগে, সাধারণ দু'আর মধ্যে এবং সর্বাবস্থায় উপরের বাক্যগুলো বেশি বেশি বলতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্।
.
.
(পর্বঃ ৬)
.
আমরা কঠিন কোনো বিপদ-আপদে পড়লে নামাজের সিজদায় গিয়ে এটি পড়তে পারব। দু'আটি শব্দে শব্দে অর্থসহ উপস্থাপন করা হলো—ইনশাআল্লাহ্।
.
اللَّهُمَّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً وَ أَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ إِذَا شِئْتَ سَهْلً.
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জা'আলতাহু সাহলান, ওয়া আনতা তাজ'আলুল হাযনা ইযা শিঅ্তা সাহলান] আরবি দেখে উচ্চারণ শিখুন, না হয় নির্ঘাত ভুল শিখবেন!
.
[অর্থ: হে আল্লাহ্! আপনি যা সহজ করেন, তা ছাড়া কিছুই সহজ নয়। আর আপনি যখন চান, পেরেশানিকে সহজ করে দেন।]
.
[সহিহ ইবনু হিব্বান: ৩/২৫৫, সিলসিলা সহিহাহ: ৬/৯০২, হাদিসটি সহিহ]
.
শব্দে-শব্দে, ভেঙে-ভেঙে শিখুন—
.
اللَّهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
لاَ লা [নয়]
سَهْلَ সাহলা [সহজ]
إِلاَّ ইল্লা [ব্যতীত]
مَا মা [যা]
جَعَلْتَهُ জা‘আলতাহু [তুমি যেটিকে করো]
سَهْلاً সাহলান [সহজ]
وَ ওয়া [এবং]
أَنْتَ আনতা [তুমি]
تَجْعَلُ তাজ‘আলু [করো]
الْحَزْنَ আল-হাযন [পেরেশানি/দুশ্চিন্তা]
إِذَا ইযা [যখন]
شِئْتَ শিঅ্তা [তুমি চাও]
سَهْلً. সাহলান [সহজ]
.
এবার মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
اللَّهُمَّ لاَ سَهْلَ আল্লাহুম্মা লা সাহলা
[হে আল্লাহ! কোনো কিছুই সহজ নয়]
.
إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً ইল্লা মা জা'আলতাহু সাহলান
[তুমি যেটি সহজ করে দাও, সেটি বাদে]
.
وَ أَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ ওয়া আনতা তাজ'আলুল হাযনা
[আর তুমি পেরেশানিকে করে দাও]
.
إِذَا شِئْتَ سَهْلً ইযা শিঅ্তা সাহলান
[সহজ, যখন তুমি চাও]
.
ধরুন, কোনো টার্গেটে কাজ করছেন বা বিপদে পড়েছেন। সেখানে আপনার নিকট পর্যাপ্ত উপকরণ নেই, ফলে কাজটি সমাপ্ত করা কঠিন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর আগে বা যেকোনো দু'আর মধ্যে খুব দরদ দিয়ে এই দু'আটি অর্থের দিকে লক্ষ রেখে বেশি করে পড়বেন। নিজেকে আল্লাহর সামনে খুবই তুচ্ছ, মিসকিন হিসেবে উপস্থাপন করবেন, সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবেন।
.
.
(পর্বঃ ৭)
.
দু‘আ দুটো করেছিলেন দুজন নবী। এগুলো কীভাবে পড়বেন, সেটিও ইনশাআল্লাহ্ বলা হবে।
.
প্রথম দু‘আটি পড়ার সময় আমি প্রচণ্ড আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। অর্থ বোঝে পড়লে যে কেউ এটা অনুভব করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্। এটি মূসা (আ.)-এর দু‘আ। তিনি এমন এক সময় এই দু‘আটি করেছিলেন, যখন তিনি ফেরারি ছিলেন। পুরো দুনিয়া তাঁর জন্য সংকীর্ণ হয়ে আসছিলো। দু‘আটি হলো—
.
رَبِّ إِنِّيْ لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
.
[কুরআনের আয়াতের বাংলা উচ্চারণ লিখতে ‘আলিমগণ নিষেধ করেন। কারণ উচ্চারণের বিকৃতির কারণে এতে অর্থ বিকৃত হতে পারে।]
.
[অর্থ: (হে আমার) রব! আপনি আমার প্রতি যে-অনুগ্রহই অবতীর্ণ করবেন, আমি তারই মুখাপেক্ষী। (সূরা ক্বাসাস, আয়াত: ২৪)]
.
এবার শব্দে শব্দে অর্থসহ—
.
رَبِّ হে আমার রব (প্রতিপালক)
إِنِّيْ নিশ্চয়ই আমি
لِمَا যা
أَنْزَلْتَ আপনি অবতীর্ণ করবেন
إِلَيَّ আমার প্রতি
مِنْ হতে
خَيْرٍ অনুগ্রহ
فَقِيْرٌ মুখাপেক্ষী
.
সহজে মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
رَبِّ إِنِّيْ
[হে আমার রব! আমি]
.
لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ
[যা আমার প্রতি অবতীর্ণ করবেন]
.
مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
[সেই অনুগ্রহেরই মুখাপেক্ষী]
.
দু‘আর সময় নিজেকে তুচ্ছ, হীন ও ক্ষুদ্র হিসেবে উপস্থাপন করবেন আর বলতে থাকবেন উপরের দু‘আটি। কারণ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত আমাদের একটি সেকেন্ডও চলা সম্ভব নয়। দু‘আর মধ্যে আবেগ তৈরি করতে এবং আল্লাহর প্রতি ভালবাসা অনুভব করতে দু‘আটি নামাজের সিজদায় এবং অন্যান্য সময়ে পড়তে পারেন।
.
দ্বিতীয় (যা নীচে উল্লেখ করা হচ্ছে) দু‘আটি বিশেষত যখন কোনো গুনাহ করে ফেলবেন, তখন অর্থের দিকে লক্ষ রেখে পড়বেন। এই দু‘আটি মোটামুটি প্রত্যেকেরই মুখস্থ, মাশাআল্লাহ!
.
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
.
[অর্থ: (হে আল্লাহ!) আপনি ব্যতীত কোন সার্বভৌম সত্তা নেই। আপনি পবিত্র। আমি তো জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭)]
.
এবার শব্দে শব্দে অর্থ শিখে নিন—
.
لَا নেই
إِلٰهَ সার্বভৌম সত্তা
إِلَّا ব্যতীত
أَنْتَ আপনি
سُبْحَانَكَ আপনি পবিত্র
إِنِّيْ নিশ্চয়ই আমি
كُنْتُ ছিলাম
مِنَ হতে
الظَّالِمِيْنَ জালিমদের
.
সহজে মুখস্থ করতে চাইলে—
.
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ
[আপনি ব্যতীত কোন সার্বভৌম সত্তা নেই]
.
سُبْحَانَكَ
[আপনি পবিত্র]
.
إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
[আমি তো জালিমদের অন্তর্ভুক্ত]
.
ইউনুস (আ.) তাঁর অবাধ্য সম্প্রদায়ের ব্যাপারে একপর্যায়ে রাগান্বিত ও বিরক্ত হয়ে তাদের ছেড়ে চলে যান। কারণ তারা আল্লাহর আযাবের অপেক্ষায় ছিলো। ইউনুস (আ.) এক্ষেত্রে একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেন—আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসার অপেক্ষা করেননি। ফলে, আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর উপর কঠিন এক মুসিবত চাপিয়ে দেন। সমুদ্রের বিশাল এক মাছ তাঁকে গিলে ফেলে! কল্পনা করে দেখুন! একজন মানুষের জীবনে এরচেয়ে বড় মুসিবত কী হতে পারে? ইউনুস (আ.) হতাশ হননি। নিজের ভুল বোঝতে পেরে নিঃশর্তভাবে আল্লাহর কাছে ভুল স্বীকার করেন।
.
এই দু‘আটিকে বলা হয় ‘দু‘আ ইউনুস’।
আমরা তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করতে চাই।
.
এক.
যে দু‘আর মধ্যে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা থাকে এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করা হয়, সেটি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই দু‘আর মধ্যে দুটোই আছে।
.
দুই.
দু‘আ মানেই ‘আল্লাহ্ আমাকে এই দাও সেই দাও’ এমনই হতে হবে, সেটা জরুরি নয়। অনেক সময় স্রেফ নিজের ভুলটা মন থেকে স্বীকার করাটাই যথেষ্ট হয়। বিভিন্ন নবীর ঘটনাতে এমন অনেক উদাহরণ আছে।
.
তিন.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম যে বিষয়েই দু‘আ ইউনুস দিয়ে আল্লাহকে ডেকেছে, আল্লাহ্ তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। [তিরমিযি: ৩৫০৫]
.
সুতরাং, বুঝতেই পারছেন—এর গুরুত্ব কত। যেকোনো বিপদ-আপদে দু‘আর মধ্যে এবং নামাজের সিজদায় এই দু‘আটি পড়তে ভুলবেন না। কোনো গুনাহ করলেও এই দু‘আটি দিয়ে ক্ষমা চাবেন।
.
.
(পর্বঃ ৮)
.
একটি গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ শিখুন। দু‘আটি নবীজি তাঁর অতি প্রিয় কন্যা ফাতিমা (রা.)-কে সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার জন্য তাগিদ দিয়ে গেছেন, ওসিয়ত করেছেন। শব্দে শব্দে অর্থসহ সেই দু‘আটি আমরা উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ্।
.
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইয়া ‘হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আসতাগীস, আসলিহ লী শাঅ্নী কুল্লাহ, ওয়া লা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বরফাতা ‘আইন]
.
[অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের উসিলায় আপনার কাছে সাহায্য চাই; আপনি আমার সার্বিক অবস্থার সংশোধন করে দিন; আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের দায়িত্বে ছেড়ে দেবেন না।]
.
এবার শব্দে শব্দে শিখুন—
.
يَا ইয়া [হে]
حَيُّ হাইয়ু [চিরঞ্জীব]‘
يَا ইয়া [হে]
قَيُّوْمُ ক্বাইয়ূমু [চিরস্থায়ী]
بِرَحْمَتِكَ বিরাহমাতিকা [আপনার রহমত দ্বারা]
أَسْتَغِيْثُ আসতাগীস [আমি সাহায্য চাই]
أَصْلِحْ আসলি‘হ [সংশোধন করুন]
لِيْ লী [আমার]
شَأْنِيْ শাঅ্নী [আমার বিষয়গুলো]
كُلَّهُ কুল্লাহ [সকল]
وَلاَ ওয়া লা [এবং না]
تَكِلْنِيْ তাকিলনী [ছেড়ে দিবেন]
إِلٰى ইলা [দিকে]
نَفْسِيْ নাফসী [আমার নিজের]
طَرْفَةَ ত্বরফাতা [পলক]
عَيْنٍ আইন [চোখ]
[চোখের পলক] আমরা এর অনুবাদে বলেছি ‘এক মুহূর্ত’—মর্ম ও ভাব একই।
.
এবার মুখস্থ করুন এভাবে—
.
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ ইয়া ‘হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু
[হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী!]
.
بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ বিরাহমাতিকা আসতাগীস
[আমি আপনার রহমতের উসিলায় আপনার কাছে সাহায্য চাই]
.
أَصْلِحْ لِيْ আসলিহ লী
[আপনি আমার সংশোধন করে দিন]
.
شَأْنِيْ كُلَّهُ শাঅ্নী কুল্লাহ
[সার্বিক অবস্থার]
.
وَلاَ تَكِلْنِيْ ওয়া লা তাকিলনী
[আমাকে ছেড়ে দেবেন না]
.
إِلٰى نَفْسِيْ ইলা নাফসী
[আমার নিজের দায়িত্বে]
.
طَرْفَةَ عَيْنٍ ত্বরফাতা ‘আইন
[এক মুহূর্তের জন্যও]
.
নবীজির খাদেম ও একনিষ্ঠ সহচর আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রা.)-কে বলেন, ‘‘আমি ওসিয়ত করছি যে, তুমি সকালে ও সন্ধ্যায় এই কথা (দু'আ) বলবে।’’
.
[মুসতাদরাক হাকিম: ১/৫৪৫, সহিহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: ১/২৭৩; হাদিসটি সহিহ]
.
দু'আর অর্থটি আবার পড়ুন। এত চমৎকার ভাষায় আল্লাহর কাছে দু'আ করলে আল্লাহ্ কি ফিরিয়ে দিবেন? দু'আটি পড়ার সময় অর্থের দিকে মনোযোগ রেখে পড়বেন। তাহলে পড়তেও ভালো লাগবে, ফায়দাও বেশি হবে ইনশাআল্লাহ্। নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে, সকাল-সন্ধ্যায়, যেকোনো দু‘আর মধ্যে (আবেগ সৃষ্টি করতে) এই দু‘আটি পড়ুন।
.
.
(পর্বঃ ৯)
.
.
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আ‘উযু বি কালিমা~ তিল্লা~হিত তা~ম্মা~তি, মিন গাদ্বাবিহি, ওয়া ‘ইক্বা~বিহি, ওয়া শাররি ‘ইবা~দিহি, ওয়া মিন হামাযা~তিশ শায়াত্বীনি, ওয়া আন ইয়াহদ্বুরুন] (আরবি দেখে না শিখলে নির্ঘাত ভুল শিখতে হবে। অতএব, আরবির সাথে মিলিয়ে সঠিকভাবে শিখুন)
.
[অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যসমূহ দ্বারা আশ্রয় চাই—তাঁর রাগ ও শাস্তি থেকে; তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে; শয়তানদের উসকানি থেকে এবং আমার কাছে তাদের (শয়তানদের) উপস্থিতি থেকে।]
.
এবার শব্দার্থগুলো জেনে নেওয়া যাক—
.
أَعُوذُ আ‘উযু [আমি আশ্রয় চাই]
بِكَلِمَاتِ বি কালিমা~তি [বাক্যসমূহ দ্বারা]
اللّٰهِ আল্লাহ্ [আল্লাহ]
التَّامَّاتِ তা~ম্মা~তি [পরিপূর্ণ]
مِنْ মিন [হতে]
غَضَبِهِ গাদ্বাবিহি [তাঁর রাগ]
وَعِقَابِهِ ওয়া ‘ইক্বাবিহি [তাঁর শাস্তি]
وَشَرِّ ওয়া শাররি [অনিষ্ট]
عِبَادِهِ ইবাদিহি [তাঁর বান্দাদের]
وَمِنْ ওয়া মিন [এবং হতে]
هَمَزَاتِ হামাযা~তি [উসকানি]
الشَّيَاطِينِ আশ শায়াত্বীন [শয়তানগুলো]
وَأَنْ يَحْضُرُونِ ওয়া আন ইয়া‘হদ্বুরুন
[উপস্থিত হওয়া]
.
মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّاتِ আ‘উযু বি কালিমা ~তিল্লা~হিত তা~ম্মা~তি
[আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যসমূহ দ্বারা আশ্রয় চাই]
.
مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ মিন গাদ্বাবিহি, ওয়া ‘ইক্বা~বিহি
[তাঁর রাগ ও শাস্তি থেকে]
.
وَشَرِّ عِبَادِهِ ওয়া শাররি ‘ইবা~দিহি
[তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে]
.
وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ ওয়া মিন হামাযা~তিশ শায়াত্বীনি
[শয়তানদের উসকানি থেকে]
.
وَأَنْ يَحْضُرُونِ ওয়া আন ইয়াহদ্বুরুন
[এবং (আমার কাছে) তাদের (শয়তানদের) উপস্থিতি থেকে]
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে, সে যেন বলে (উপরের দু‘আটি)। তা হলে, তারা (জ্বীন শয়তানেরা) তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’’ [তিরমিযি: ৩৫২৮, হাদিসটি হাসান]
.
১. যাদের ঘুমের মধ্যে সমস্যা হয়, তারা ঘুমের পূর্বে এবং ভয়ার্ত হয়ে ঘুম ভাঙার পর এই দু‘আটি পড়বেন।
২. যারা সাধারণভাবে দু‘আ করতে চান, তারাও এটি যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়তে পারেন। কারণ এর অর্থটি খুবই সুন্দর এবং ব্যাপক—শুধু ঘুমের মধ্যে ভয় পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
৩. নামাজের সিজদায় এবং সালাম ফেরানোর পূর্বেও পড়তে পারেন।
৪. অর্থের দিকে খেয়াল রেখে দু‘আ পড়বেন। তাহলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়—ইনশাআল্লাহ্।
.
.
( পর্বঃ ১০)
.
জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু/কেউ চলে গেলে/হারিয়ে গেলে ভেঙে পড়বেন না। হাদিসে এ ব্যাপারে সহিহ দু‘আ বর্ণিত হয়েছে। সেটি পড়ুন—উত্তম বিকল্প পাবেন। আজ আমরা সেই দু‘আটি শব্দে শব্দে অর্থসহ তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্।
.
সাহাবাদের মধ্যে আবু সালামা ও উম্মে সালামা জুটি ছিলো ঈর্ষা করার মতো। দুজন স্বামী-স্ত্রী, একে অপরকে ভীষণ ভালবাসতেন। তাঁদের ভালবাসা ছিলো রূপকথার মতো। একদিন হঠাৎ আবু সালামাহ্ (রা.) মারা যান। এতে উম্মে সালামাহ (রা.) মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
.
উম্মে সালামাহ্ (রা.) বলেন, ‘‘আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
.
إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اَللّٰهُمَّ اَجُرْنِي فِي مُصِيْبَتِي ، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জি‘ঊন। আল্লাহুম্মা আজুরনি ফী মুসী-বাতি, ওয়া আখলিফ লি খাইরাম মিনহা (শুধু বাংলা উচ্চারণ দেখে শিখলে ভুল উচ্চারণ শিখবেন। সাবধান করছি সবাইকে)]
.
[অর্থ: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার এই মুসিবতে প্রতিদান দিন। আমাকে এর পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম কিছু দিন।]
.
যদি কোনো মুসলিম বিপদগ্রস্ত হয়ে এ কথাগুলো বলে, তবে আল্লাহ্ তাকে অবশ্যই উক্ত ক্ষতির পরিবর্তে উত্তম বিষয় দান করবেন।’’
.
উম্মে সালামাহ্ বলেন, আমার স্বামী আবু সালামার মৃত্যুর পর আমি চিন্তা করলাম, আবু সালামার চেয়ে আর কে ভালো হতে পারে? তারপরও আমি এই (উপরে বর্ণিত) কথাগুলো বললাম। তখন আল্লাহ্ আমাকে আবু সালামার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বামী হিসেবে প্রদান করেন। [সহিহ মুসলিম: ১/৬৩১-৬৩২]
.
দু‘আটির শব্দার্থগুলো জেনে নিন—
.
إِنَّا ইন্না [নিশ্চয়ই আমরা]
لِلّٰهِ লিল্লাহি [আল্লাহর জন্য]
وَإِنَّا ওয়া ইন্না [এবং আমরা]
إِلَيْهِ ইলাইহি [তাঁর দিকেই]
رَاجِعُونَ রাজি‘ঊন [প্রত্যাবর্তনকারী]
اَللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
اَجُرْنِي আজুরনি [আমাকে বিনিময় দিন]
فِي ফী [মধ্যে]
مُصِيبَتِي মুসীবাতি [আমার মুসিবত]
وَأَخْلِفْ ওয়া আখলিফ [এবং বদলা দিন]
لِي লি [আমার জন্য]
خَيْرًا খাইরান [উত্তম]
مِنْهَا মিনহা [তা হতে]
.
মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
[নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী]
.
اَللّٰهُمَّ أَجُرْنِي আল্লাহুম্মা আজুরনি
[হে আল্লাহ! আপনি আমাকে প্রতিদান দিন]
.
فِي مُصِيبَتِي ফী মুসীবাতী
[আমার মুসিবতে]
.
وَأَخْلِفْ لِي ওয়া আখলিফ লী
[এবং আমার জন্য বদলা দিন]
.
خَيْرًا مِنْهَا খাইরাম মিনহা
[এর চেয়েও উত্তম কিছু দিয়ে]
.
আম্মাজান উম্মে সালামাহ্ (রা.) দু'আর পুরস্কার কী চমৎকার পেয়েছেন! এই দু‘আর বরকতে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির জীবনসঙ্গী হয়েছেন। আমরাও যদি পূর্ণ ইয়াকিন (দৃঢ় বিশ্বাস) নিয়ে দু‘আটি পড়ি, তবে আল্লাহ্ আমাদের অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিবেন ইনশাআল্লাহ্।
.
হঠাৎ চাকরিটা চলে গেলে; স্ত্রী, সন্তানাদি অথবা কোন নিকটাত্মীয় মারা গেলে; কাছের বন্ধু/ভাই দূরে চলে গেলে বা মৃত্যুবরণ করলে—এমনসব মুসিবতের সময় আমাদের উচিত এই দু'আটি বারবার পড়া। বিশেষত নামাজে সিজদায় গিয়ে এবং দু'আ কবুলের বিভিন্ন সময় ও মুহূর্তগুলোতে। আশা করা যায়, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বেটার কিছু দিয়ে আমাদেরকে সন্তুষ্ট করবেন এবং আমাদের দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনকে প্রশান্ত করবেন।
.
.
(পর্বঃ ১১)
.
নামাজের পরে একটি চমৎকার দু‘আ পড়ার অভ্যাস করতে পারেন। দু‘আটি আমরা শব্দে শব্দে অর্থসহ উপস্থাপন করছি।
.
প্রথমে দু'আটির প্রেক্ষাপট জেনে নেওয়া যাক; তাহলে আমল করতে আগ্রহ বাড়বে ইনশাআল্লাহ্।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয় একজন সাহাবি ছিলেন মু'আয ইবনু জাবাল (রা.)। তাঁকে তিনি ইয়ামানে ইমাম ও শাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই মু'আয (রা.) বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে বলেন, ‘‘মু'আয! আমি তোমাকে ভালোবাসি।... মু'আয! আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি—প্রত্যেক সালাতের পর এ দু'আটি বলা কখনো বাদ দিও না।’’ (দু'আটি হলো)—
.
اللّٰهُمَّ أَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ‘ইন্নি '
‘আলা যিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া ‘হুসনি ‘ইবাদাতিকা (শুধু বাংলা উচ্চারণ দেখে শিখবেন না। তাহলে নিশ্চিতভাবে ভুল শিখতে হবে)]
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সাহায্য করুন—আপনার যিকর করতে, আপনার শুকরিয়া আদায় করতে এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করতে।’’
[আবু দাউদ: ১৫২২, হাকিম: ৬৭৭, সহিহ আত-তারগিব: ২/২১৯; হাদিসটি সহিহ]
.
শব্দে শব্দে মুখস্থ করে নিতে পারেন—
.
اللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা
[হে আল্লাহ!]
.
أَعِنِّيْ আ‘ইন্নি
[আমাকে সাহায্য করুন]
.
عَلٰى আলা
[উপরে]
.
ذِكْرِكَ، যিকরিকা
[আপনার যিকর (করতে)]
.
وَشُكْرِكَ، ওয়া শুকরিকা
[আপনার শুকরিয়া (আদায় করতে)]
.
وَحُسْنِ ওয়া হুসনি
[এবং উত্তম (ভাবে)]
.
عِبَادَتِكَ. ইবাদাতিকা
[আপনার ইবাদত (করতে)]
.
প্রথমত, হাদিসটির বর্ণনা খুবই সুন্দর। নবীজি অত্যন্ত স্নেহ করে মু'আয (রা.)-কে এই সুন্দর দু'আটি শিখিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, তিনি এটা ওসিয়ত করেছেন—নামাযের পরে পড়তে। সাধারণ উপদেশ এবং ওসিয়তের মধ্যে পার্থক্য অনেক। মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারেই কেবল ওসিয়ত করে থাকে।
তৃতীয়ত, দু'আটির অর্থও খুবই সুন্দর ও ব্যাপক—গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয়ের চাওয়া।
চতুর্থত, এটি শুধু প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরই নয়, নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে এবং অন্যান্য যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়া যাবে। তবে, সারাজীবন রেগুলার আমল করতে পারেন কেবল ফরজ নামাজের পর। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে পড়লে মাঝেমধ্যে ছেড়ে দেবেন আবার পড়বেন।
.
.
.
#বিঃদ্রঃ আরবি দেখে উচ্চারণ করবেন নচেত বাংলা দেখে উচ্চারণ করলে ভূল হবে শিওর।
.
(পর্বঃ ১)
.
বিশেষ করে সিজদায় পড়ুন এই মহিমান্বিত দু‘আটি। এক দু‘আতেই সবকিছু অন্তর্ভুক্ত। আমরা শব্দে শব্দে অর্থসহ উপস্থাপন করছি।
.
اَللّٰهُمَّ أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا فِي الأُمُورِ كُلِّهَا، وَأجِرْنَا
مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الآخِرَةِ
.
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ‘হসিন ‘আক্বিবাতানা, ফিল উমূরি কুল্লিহা, ওয়া আজিরনা— মিন খিযয়িদ দুনইয়া, ওয়া ‘আযাবিল আ~খিরাহ (আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়; তাই আরবির সাথে মিলিয়ে পড়ুন)
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! সকল কাজে আমাদের উত্তম পরিণতি দাও। আর আমাদের রক্ষা করো—দুনিয়ার লাঞ্ছনা-অপমান থেকে ও আখিরাতের আযাব থেকে]
.
এবার শব্দে শব্দে অর্থ:
.
اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ
أَحْسِنْ উত্তম করো
عَاقِبَتَنَا আমাদের পরিণতি
فِي الأُمُورِ কাজের মধ্যে
كُلِّهَا সকল
وَأجِرْنَا এবং রক্ষা করো
مِنْ হতে
خِزْيِ লাঞ্ছনা-অপমান
الدُّنْيَا দুনিয়ার
وَعَذَابِ এবং আযাব
الآخِرَةِ আখিরাতের
.
এবার এভাবে সহজে মুখস্থ করুন—
.
اَللّٰهُمَّ - হে আল্লাহ
أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا - আমাদের উত্তম পরিণতি দাও
فِي الأُمُورِ كُلِّهَا - সকল কাজে
وَأجِرْنَا - এবং রক্ষা করো
مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا - দুনিয়ার লাঞ্ছনা-অপমান হতে
وَعَذَابِ الآخِرَةِ - ও আখিরাতের আযাব হতে
.
বুসর ইবনু আরতাআ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘‘আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে দু'আ পড়তে শুনেছি...(অতপর তিনি উপরের দু'আটি বর্ণনা করেন)।’’
[বুখারি, আত তারিখুল কাবির: ১/৩০, ২/১২৩, হাদিসটি হাসান]
.
আপনারা অর্থটি খেয়াল করে, বিভিন্ন অবস্থাকে অন্তরে ধারণ করে দু'আটি পড়বেন।
.
.
(পর্বঃ ২)
.
স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝি ও বন্ধু-বান্ধবের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দূর করতে এই দু'আটি পড়তে পারেন নামাজের সিজদায় অথবা সালাম ফেরানোর পূর্বে।
.
اللّٰهُمَّ أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا وَاهْدِنَا سُبُلَ السَّلاَمِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আল্লিফ বাইনা ক্বুলূবিনা, ওয়া আসলিহ যা~তা বাইনিনা, ওয়াহদিনা সুবুলাস সালাম
(আরবির উচ্চারণ বাংলায় লেখা কখনই সম্ভব নয়; সুতরাং আরবি দেখে মিলিয়ে শিখুন। না হয় ভুল শিখবেন)]
———————————————————
শব্দে শব্দে মনে রাখুন—
.
اللّٰهُمَّ হে আল্লাহ
أَلِّفْ সম্প্রীতি-মহব্বত দাও
بَيْنَ মাঝে
قُلُوبِنَا আমাদের অন্তরের
وَ এবং
أَصْلِحْ সংশোধন করে দাও
ذَاتَ بَيْنِنَاআমাদের মধ্যকার(বিষয়াবলী)
وَاهْدِنَا আর দেখাও
سُبُلَ পথসমুহ
السَّلاَمِ শান্তির
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
এবার মুখস্থ করুন এভাবে—
.
[আল্লাহুম্মা]
اللّٰهُمَّ
হে আল্লাহ!
.
[আল্লিফ বাইনা ক্বুলূবিনা]
أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا
আমাদের অন্তরসমূহের মাঝে সম্প্রীতি ও মিল-মহব্বত দাও।
.
[ওয়া আসলিহ যা~তা বাইনিনা]
وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا
এবং আমাদের মধ্যকার বিষয়াবলী সংশোধন করে দাও
.
[ওয়াহদিনা সুবুলাস সালাম]
وَاهْدِنَا سُبُلَ السَّلاَمِ
আর আমাদের দেখাও তুমি—শান্তির পথসমূহ।
.
সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সালাতে (নামাযে) বসে কী পড়ব, তা আমরা জানতাম না। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেখানো হয়েছে ব্যাপক অর্থবোধক ও সর্বোত্তম বাক্যসমূহ।’ এরপর তিনি তাশাহহুদের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহহুদের মত করে আমাদের আরো কিছু বাক্য শেখাতেন। এরপর তিনি উপরের বাক্যগুলোসহ অনেকগুলো বাক্য উল্লেখ করেন। [আবু দাউদ, হাদিস: ৯৬৯; হাদিসটি সহিহ]
.
‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোমালিন্য হলে এই দু'আ পড়তে হবে’ এমন কথা নবীজি বলেননি। আমরা কেবল অর্থের দিক থেকে মিল থাকায় আপনাদের নিকট এই বাক্যগুলো তুলে ধরছি। উদ্দেশ্য দুটো: এক. সিজদায় আরবিতে দু'আ করার জন্য কিছু বাক্য উল্লেখ করা; দুই. সেই বাক্যগুলো সরাসরি সুন্নাহ্ থেকে নেওয়ার চেষ্টা করা। ইনশাআল্লাহ্, এতে বরকত হবে। আপনারা অন্তরে আপনাদের সমস্যা চিন্তা করে উপরে বর্ণিত দু'আটি সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে সালাম ফেরানোর পূর্বে পড়তে থাকবেন।
-----------------------------------------------------
সিজদায় দু'আর ক্ষেত্রে:
.
• প্রথমে তিনবার সিজদার তাসবিহ পড়ুন।
• এরপর দু'আ করুন নিজের মত করে।
• ফরয নামাজের সিজদায় দু'আ না পড়াই উত্তম; তবে পড়লেও নামায হবে।
.
.
(পর্বঃ ৩)
.
মুমিনদের মা ও রাসূলের স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.) বলেন—রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দু'আটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন, তা হলো–
.
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব! সাব্বিত ক্বালবী ‘আলা দীনিকা (আরবি হরফের উচ্চারণ বাংলায় লেখা অসম্ভব, মূল আরবির সাথে মিলিয়ে পড়ুন। না হয় ভুল পড়বেন)]
.
[অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল রাখুন।]
.
এবার শব্দে শব্দে শিখে নিন—
.
يَا ইয়া [হে]
مُقَلِّبَ মুক্বাল্লিব [পরিবর্তনকারী]
الْقُلُوبِ আল-ক্বুলূব [অন্তরসমূহ]
ثَبِّتْ সাব্বিত [অটল-অবিচল রাখুন]
قَلْبِي ক্বালবী [আমার অন্তর]
عَلٰي আলা [উপরে]
دِيْنِكَ দীনিকা [আপনার দ্বীন(-এর)]
.
এভাবে মুখস্থ করুন—
.
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব
[হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী!]
.
ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ সাব্বিত ক্বালবী আলা দীনিকা
[আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল-অবিচল রাখুন।] [তিরমিযি, হাদিস: ৩৫২২, হাসান]
.
আরেকটি দু'আ একই ভাব ও মর্মের। তবে, সেটি আরো বেশি হৃদয়গ্রাহী। সেই দু'আটি পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আ~লে ইমরানের ৮ নং আয়াতে এসেছে।
.
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
.
আরবি উচ্চারণ বাংলায় লেখা সম্ভব নয়, তবুও আমরা হাদিসের ক্ষেত্রে লেখি। কিন্তু কুরআনের ক্ষেত্রে লিখি না। কারণ এটা আলেমগণ নিষেধ করেছেন। ভুল উচ্চারণে অর্থ বিকৃতির আশঙ্কা থাকে।
.
[অর্থ: হে আমাদের রব! যখন তুমি আমাদের সঠিক পথে চালিয়েছো, তখন আর আমাদের অন্তরকে (সত্যপথ থেকে) বাঁকা করে দিও না। তোমার রহমতের ভান্ডার হতে আমাদের জন্য রহমত দাও। নিশ্চয়ই প্রকৃত দাতা তো তুমিই।]
.
رَبَّنَا হে আমাদের রব
لاَ না
تُزِغْ বাঁকা করো
قُلُوبَنَا আমাদের অন্তর
بَعْدَ পরে
إِذْ যখন
هَدَيْتَنَا সঠিক পথে চালিয়েছো
وَهَبْ দান করো
لَنَا আমাদের জন্য
مِن হতে
لَّدُنكَ তোমার নিকট
رَحْمَةً রহমত
إِنَّكَ নিশ্চয়ই তুমি
أَنتَ তুমি
الْوَهَّابُ প্রকৃত দাতা
.
মুখস্থ করুন এভাবে—
.
رَبَّنَا হে আমাদের রব
.
لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا আমাদের অন্তরকে (সত্যপথ থেকে) বাঁকা করে দিও না।
.
بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا যখন তুমি আমাদের সঠিক পথে চালিয়েছো
.
وَهَبْ لَنَا আমাদের জন্য রহমত দাও
.
مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً তোমার রহমতের ভান্ডার হতে রহমত
.
إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ নিশ্চয়ই প্রকৃত দাতা তো তুমিই
.
দু'আ দুটোর গুরুত্ব:
হাদিসে এসেছে—শেষ যামানায় নিজের ঈমানকে ধরে রাখা, হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার চেয়েও কঠিন হবে। আমরা জানি না—সেই সময়েই আমরা আছি কীনা। তবে, বর্তমান সময়েও দীনের উপর অটল-অবিচল থাকা-যে কত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমানকে হরণ করার জন্য শয়তানি তৎপরতার শেষ নেই। এমতাবস্থায় আমাদের মত দুর্বল মুমিনদের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
.
হাদিসে এসেছে—মানুষের অন্তর আল্লাহর দুই আঙুলের মাঝে। তিনিই সেটিকে এদিক-ওদিক করেন। [আহমাদ: ৬/৩০২, সহিহ]
সুতরাং আমরা তো জানি না, আমাদের কোন্ অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ্ রাগ করে আমাদের অন্তরকে বক্রতার দিকে ঘুরিয়ে দেন আর আমরা হয়ে যাই চিরস্থায়ীভাবে মহাক্ষতিগ্রস্ত। তাই, নিজের ঈমানকে নিরাপদ রাখতে, এই দু'আ দুটো নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর আগে, সাধারণ দু'আয় ও সদা-সর্বদা পাঠ করতে হবে খুব বেশি বেশি। এই দুটো দু'আ পাঠের সময় মনে মনে ভাবতে থাকবেন—‘‘আল্লাহ! আমি তোমার খুবই দুর্বল এক বান্দা। আমি সহজেই শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যাই। আমার অন্তর দ্রুত পাল্টে যায়। আর তোমার হাতেই তো অন্তরের চাবি। যদি তুমি আমার অন্তরকে দ্বীনের উপর অটল না রাখো, তাহলে তো আমি ধ্বংস হয়ে যাব!’’ এভাবে নিজের মত করে ভাবতে থাকবেন আর আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরবেন।
.
.
(পর্বঃ ৪)
.
দু'আ তিনটির মাধ্যমে দুনিয়াতে অবিচ্ছিন্ন নিয়ামত, মানসিক প্রশান্তি এবং আখিরাতে স্বাচ্ছন্দময় জীবন—সবই অন্তর্ভুক্ত আছে, আলহামদুলিল্লাহ!
.
নবীজির প্রিয় সাহাবি আম্মার ইবনু ইয়াসার (রা.) নামাজে এসব বাক্য দিয়ে দু'আ করেছিলেন আর বলেছিলেন, এগুলো তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিখেছেন। [নাসাঈ, হাদিস: ১৩০৪, সহিহ]
.
দু'আটি ছিলো অনেক অনেক লম্বা। সেখান থেকে আমরা সহজ তিনটি বাক্য তুলে ধরছি, যাতে সবাই শিখতে পারেন।
.
اللّٰهُمَّ أَسْأَلُكَ نَعِيْماً لَا يَنْفَدُ وَأَسْأَلُكَ الرِّضٰى بَعْدَ الْقَضَاءِ وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসআলুকা না‘ঈমান লা ইয়ানফাদ, ওয়া আসআলুকার রিদ্বা বা‘অদাল ক্বাদ্বা, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘অদাল মাওত]
(আরবি ع ‘আইন’সহ বিভিন্ন হরফের উচ্চারণ বাংলায় লেখা যায় না। সুতরাং আমরা অনুরোধ করব—আপনারা আরবির সাথে মিলিয়ে পড়ুন। না হয়, নিশ্চিত ভুল শিখবেন)
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার কাছে এমন নিয়ামত (অনুগ্রহ) চাই, যা কখনো শেষ হবে না; তোমার কাছে চাই, যেন তোমার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারি এবং তোমার কাছে মৃত্যুর পর আরামদায়ক জীবন চাই]
.
এবার শব্দে শব্দে অর্থ মুখস্থ করুন—
.
اللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
أَسْأَلُكَ আসআলুকা [আমি তোমার কাছে চাই]
نَعِيْماً না‘ঈমান [নিয়ামত বা অনুগ্রহ]
لَا يَنْفَدُ লা ইয়ানফাদ [শেষ হবে না]
وَأَسْأَلُكَ ওয়া আসআলুকা [তোমার কাছে চাই]
الرِّضٰى আর-রিদ্বা [সন্তুষ্টি/খুশি]
بَعْدَ বা‘অদা [পরে]
الْقَضَاءِ আল-ক্বাদ্বা [সিদ্ধান্ত]
وَأَسْأَلُكَ ওয়া আসআলুকা [তোমার কাছে চাই]
بَرْدَ বারদা [শীতল (আরাম]
الْعَيْشِ আল-‘আইশ [জীবন]
بَعْدَ বা‘অদা [পরে]
الْمَوْتِ আল-মাওত [মৃত্যু]
.
এবার মুখস্থ করুন এভাবে—
.
اللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
.
أَسْأَلُكَ نَعِيْماً لَا يَنْفَدُ আসআলুকা না‘ঈমান লা ইয়ানফাদ
[তোমার কাছে এমন নিয়ামত (অনুগ্রহ) চাই, যা কখনো শেষ হবে না]
.
وَأَسْأَلُكَ الرِّضٰى بَعْدَ الْقَضَاءِ ওয়া আসআলুকার রিদ্বা বা‘অদাল ক্বাদ্বা
[তোমার কাছে চাই, যেন তোমার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারি]
.
وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘অদাল মাওত
[তোমার কাছে মৃত্যুর পর আরামদায়ক জীবন চাই]
.
কয়েকটি কথা:
--------------------
[এক.] প্রথম বাক্যটি দিয়ে দুনিয়ার সকল নিয়ামতই সম্পৃক্ত করা যায়। অন্তত দু'আর সময় মাথায় এমনটিই রাখবেন।
.
[দুই.] আমরা বিভিন্ন খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে হতাশ হয়ে যাই; আল্লাহর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে পারি না। এমনটি করা খুবই খারাপ অভ্যাস। তাই এ থেকে মুক্তি পেতে আমরা দু'আ করব ‘তোমার কাছে চাই, যেন তোমার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারি'। আর, যে সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকতে পারে, তার চেয়ে সুখী মানুষ পৃথিবীতে নেই।
.
[তিন.] তৃতীয় বাক্যে মৃত্যুর পর আরামদায়ক জীবন চাওয়া হচ্ছে। এটা তো জরুরি। কারণ কেউ সর্বাধিক আনন্দে জীবন কাটাক অথবা সর্বাধিক দুঃখী জীবন কাটাক, তাদের প্রত্যেকের মৃত্যু আছে। আসলে মৃত্যুর পরের জীবনটাই মূল জীবন। তাই, সেই জীবনটা সুন্দর হওয়ার জন্যও এখানে দু'আ করা হচ্ছে।
.
[চার] তাশদিদের উপরের হরকত যবর হয় এবং তাশদিদের নিচের হরকত যের হয় (যদিও তা হরফের উপরে হোক না কেন)।
.
.
(পর্বঃ ৫)
.
এই বাক্যগুলো এত চমৎকার, যা প্রত্যেকের দু'আর মধ্যে থাকা উচিত। আমরা শুরু করছি ইনশাআল্লাহ্—
.
اللَٰهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ، وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ، غَيرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِينَ
.
[মোটিমুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা তাওয়াফফানা মুসলিমীন, ওয়া আ‘হয়িনা মুসলিমীন, ওয়া আলহিক্বনা বিস স-লিহীন, গায়রা খাযা-য়া ওয়া লা মাফতূ-নীন] (আরবিটা দেখে দেখে শিখুন, শুধু বাংলা শিখলে নিশ্চিত ভুল উচ্চারণ শিখবেন)
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! মুসলিম অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিও; মুসলিম অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো; (মৃত্যুর পর) ভালো মানুষদের সাথে আমাদের জুড়ে দিয়ো; আমাদের অপদস্থ করো না এবং পরীক্ষায় ফেলো না]
.
এবার শব্দার্থগুলো শিখে নিন—
.
اللَٰهُمَّ আল্লা-হুম্মা [হে আল্লাহ]
تَوَفَّنَا তাওয়াফফানা [আমাদের মৃত্যু দিও]
مُسْلِمِينَ، মুসলিমীন [মুসলিম (অবস্থায়)]
وَأَحْيِنَا ওয়া আহয়িনা [আমাদের বাঁচিয়ে রেখো]
مُسْلِمِينَ، মুসলিমীনা [মুসলিম অবস্থায়]
وَأَلْحِقْنَا ওয়া আলহিক্বনা [আমাদের জুড়ে দিয়ো]
بِالصَّالِحِينَ، বিস স-লিহীন [ভালো মানুষদের সাথে]
غَيرَ গায়রা [ব্যতীত]
خَزَايَا খাযা-য়া [অপমান-অপদস্থতা]
وَلَا ওয়া লা [এবং নয়]
مَفْتُونِين মাফতূ-নীন [পরীক্ষায় আক্রান্ত]
.
মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
اللَٰهُمَّ আল্লা-হুম্মা [হে আল্লাহ্]
.
تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ তাওয়াফফানা মুসলিমীন
[মুসলিম অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিও]
.
وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، ওয়া আ‘হয়িনা মুসলিমীন
[মুসলিম অবস্থায় আমাদের বাঁচিয়ে রাখো]
.
وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ، ওয়া আলহিক্বনা বিস স-লিহীন
[(মৃত্যুর পর) ভালো মানুষদের সাথে আমাদের জুড়ে দিয়ো]
.
غَيرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِين গায়রা খাযা-য়া ওয়া লা মাফতূ-নীন
[আমাদের অপদস্থ করো না এবং পরীক্ষায় ফেলো না]
.
উহুদ যুদ্ধের দিন মুশরিকরা চলে যাওয়ার পর, সাহাবাদেরকে পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করেছিলেন ও অনেকগুলো দু'আ করেছিলেন। সেগুলো থেকে মাত্র চারটি বাক্য (দু'আ) উপরে উপস্থাপন করা হয়েছে। [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ৬৯৯, সহিহ]
.
দুটো কথা:
ঈমানি হালতে চলতে পারা এবং ঈমানি হালতে মরতে পারার মত সৌভাগ্য এই পৃথিবীতে আর নেই। উপরের দু'আর মধ্যে এ দুটো চাওয়াই আছে। ভালো মানুষদের সঙ্গে থাকার দু'আর মধ্যে মনে মনে ভাববেন—নবী, সিদ্দিক, শুহাদা, সালিহিনের সাহচর্যের আকাঙ্ক্ষা। সর্বশেষ— অপদস্থতা ও পরীক্ষায় যাতে না পড়তে হয়, তার দু'আ। এটিও অত্যন্ত জরুরি। কারণ অপদস্থতা বা অপমান যেমন দুনিয়াতেও খারাপ, তেমনি আখিরাতে আরো খারাপ আর শেষ যামানায় ঈমানের পরীক্ষা হবে ভয়াবহ কঠিন, যা আমরা ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারছি।
.
অতএব, আমরা নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর আগে, সাধারণ দু'আর মধ্যে এবং সর্বাবস্থায় উপরের বাক্যগুলো বেশি বেশি বলতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্।
.
.
(পর্বঃ ৬)
.
আমরা কঠিন কোনো বিপদ-আপদে পড়লে নামাজের সিজদায় গিয়ে এটি পড়তে পারব। দু'আটি শব্দে শব্দে অর্থসহ উপস্থাপন করা হলো—ইনশাআল্লাহ্।
.
اللَّهُمَّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً وَ أَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ إِذَا شِئْتَ سَهْلً.
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জা'আলতাহু সাহলান, ওয়া আনতা তাজ'আলুল হাযনা ইযা শিঅ্তা সাহলান] আরবি দেখে উচ্চারণ শিখুন, না হয় নির্ঘাত ভুল শিখবেন!
.
[অর্থ: হে আল্লাহ্! আপনি যা সহজ করেন, তা ছাড়া কিছুই সহজ নয়। আর আপনি যখন চান, পেরেশানিকে সহজ করে দেন।]
.
[সহিহ ইবনু হিব্বান: ৩/২৫৫, সিলসিলা সহিহাহ: ৬/৯০২, হাদিসটি সহিহ]
.
শব্দে-শব্দে, ভেঙে-ভেঙে শিখুন—
.
اللَّهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
لاَ লা [নয়]
سَهْلَ সাহলা [সহজ]
إِلاَّ ইল্লা [ব্যতীত]
مَا মা [যা]
جَعَلْتَهُ জা‘আলতাহু [তুমি যেটিকে করো]
سَهْلاً সাহলান [সহজ]
وَ ওয়া [এবং]
أَنْتَ আনতা [তুমি]
تَجْعَلُ তাজ‘আলু [করো]
الْحَزْنَ আল-হাযন [পেরেশানি/দুশ্চিন্তা]
إِذَا ইযা [যখন]
شِئْتَ শিঅ্তা [তুমি চাও]
سَهْلً. সাহলান [সহজ]
.
এবার মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
اللَّهُمَّ لاَ سَهْلَ আল্লাহুম্মা লা সাহলা
[হে আল্লাহ! কোনো কিছুই সহজ নয়]
.
إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً ইল্লা মা জা'আলতাহু সাহলান
[তুমি যেটি সহজ করে দাও, সেটি বাদে]
.
وَ أَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ ওয়া আনতা তাজ'আলুল হাযনা
[আর তুমি পেরেশানিকে করে দাও]
.
إِذَا شِئْتَ سَهْلً ইযা শিঅ্তা সাহলান
[সহজ, যখন তুমি চাও]
.
ধরুন, কোনো টার্গেটে কাজ করছেন বা বিপদে পড়েছেন। সেখানে আপনার নিকট পর্যাপ্ত উপকরণ নেই, ফলে কাজটি সমাপ্ত করা কঠিন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর আগে বা যেকোনো দু'আর মধ্যে খুব দরদ দিয়ে এই দু'আটি অর্থের দিকে লক্ষ রেখে বেশি করে পড়বেন। নিজেকে আল্লাহর সামনে খুবই তুচ্ছ, মিসকিন হিসেবে উপস্থাপন করবেন, সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবেন।
.
.
(পর্বঃ ৭)
.
দু‘আ দুটো করেছিলেন দুজন নবী। এগুলো কীভাবে পড়বেন, সেটিও ইনশাআল্লাহ্ বলা হবে।
.
প্রথম দু‘আটি পড়ার সময় আমি প্রচণ্ড আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। অর্থ বোঝে পড়লে যে কেউ এটা অনুভব করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্। এটি মূসা (আ.)-এর দু‘আ। তিনি এমন এক সময় এই দু‘আটি করেছিলেন, যখন তিনি ফেরারি ছিলেন। পুরো দুনিয়া তাঁর জন্য সংকীর্ণ হয়ে আসছিলো। দু‘আটি হলো—
.
رَبِّ إِنِّيْ لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
.
[কুরআনের আয়াতের বাংলা উচ্চারণ লিখতে ‘আলিমগণ নিষেধ করেন। কারণ উচ্চারণের বিকৃতির কারণে এতে অর্থ বিকৃত হতে পারে।]
.
[অর্থ: (হে আমার) রব! আপনি আমার প্রতি যে-অনুগ্রহই অবতীর্ণ করবেন, আমি তারই মুখাপেক্ষী। (সূরা ক্বাসাস, আয়াত: ২৪)]
.
এবার শব্দে শব্দে অর্থসহ—
.
رَبِّ হে আমার রব (প্রতিপালক)
إِنِّيْ নিশ্চয়ই আমি
لِمَا যা
أَنْزَلْتَ আপনি অবতীর্ণ করবেন
إِلَيَّ আমার প্রতি
مِنْ হতে
خَيْرٍ অনুগ্রহ
فَقِيْرٌ মুখাপেক্ষী
.
সহজে মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
رَبِّ إِنِّيْ
[হে আমার রব! আমি]
.
لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ
[যা আমার প্রতি অবতীর্ণ করবেন]
.
مِنْ خَيْرٍ فَقِيْرٌ
[সেই অনুগ্রহেরই মুখাপেক্ষী]
.
দু‘আর সময় নিজেকে তুচ্ছ, হীন ও ক্ষুদ্র হিসেবে উপস্থাপন করবেন আর বলতে থাকবেন উপরের দু‘আটি। কারণ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত আমাদের একটি সেকেন্ডও চলা সম্ভব নয়। দু‘আর মধ্যে আবেগ তৈরি করতে এবং আল্লাহর প্রতি ভালবাসা অনুভব করতে দু‘আটি নামাজের সিজদায় এবং অন্যান্য সময়ে পড়তে পারেন।
.
দ্বিতীয় (যা নীচে উল্লেখ করা হচ্ছে) দু‘আটি বিশেষত যখন কোনো গুনাহ করে ফেলবেন, তখন অর্থের দিকে লক্ষ রেখে পড়বেন। এই দু‘আটি মোটামুটি প্রত্যেকেরই মুখস্থ, মাশাআল্লাহ!
.
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
.
[অর্থ: (হে আল্লাহ!) আপনি ব্যতীত কোন সার্বভৌম সত্তা নেই। আপনি পবিত্র। আমি তো জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭)]
.
এবার শব্দে শব্দে অর্থ শিখে নিন—
.
لَا নেই
إِلٰهَ সার্বভৌম সত্তা
إِلَّا ব্যতীত
أَنْتَ আপনি
سُبْحَانَكَ আপনি পবিত্র
إِنِّيْ নিশ্চয়ই আমি
كُنْتُ ছিলাম
مِنَ হতে
الظَّالِمِيْنَ জালিমদের
.
সহজে মুখস্থ করতে চাইলে—
.
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ
[আপনি ব্যতীত কোন সার্বভৌম সত্তা নেই]
.
سُبْحَانَكَ
[আপনি পবিত্র]
.
إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
[আমি তো জালিমদের অন্তর্ভুক্ত]
.
ইউনুস (আ.) তাঁর অবাধ্য সম্প্রদায়ের ব্যাপারে একপর্যায়ে রাগান্বিত ও বিরক্ত হয়ে তাদের ছেড়ে চলে যান। কারণ তারা আল্লাহর আযাবের অপেক্ষায় ছিলো। ইউনুস (আ.) এক্ষেত্রে একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেন—আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসার অপেক্ষা করেননি। ফলে, আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর উপর কঠিন এক মুসিবত চাপিয়ে দেন। সমুদ্রের বিশাল এক মাছ তাঁকে গিলে ফেলে! কল্পনা করে দেখুন! একজন মানুষের জীবনে এরচেয়ে বড় মুসিবত কী হতে পারে? ইউনুস (আ.) হতাশ হননি। নিজের ভুল বোঝতে পেরে নিঃশর্তভাবে আল্লাহর কাছে ভুল স্বীকার করেন।
.
এই দু‘আটিকে বলা হয় ‘দু‘আ ইউনুস’।
আমরা তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করতে চাই।
.
এক.
যে দু‘আর মধ্যে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা থাকে এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করা হয়, সেটি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই দু‘আর মধ্যে দুটোই আছে।
.
দুই.
দু‘আ মানেই ‘আল্লাহ্ আমাকে এই দাও সেই দাও’ এমনই হতে হবে, সেটা জরুরি নয়। অনেক সময় স্রেফ নিজের ভুলটা মন থেকে স্বীকার করাটাই যথেষ্ট হয়। বিভিন্ন নবীর ঘটনাতে এমন অনেক উদাহরণ আছে।
.
তিন.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম যে বিষয়েই দু‘আ ইউনুস দিয়ে আল্লাহকে ডেকেছে, আল্লাহ্ তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। [তিরমিযি: ৩৫০৫]
.
সুতরাং, বুঝতেই পারছেন—এর গুরুত্ব কত। যেকোনো বিপদ-আপদে দু‘আর মধ্যে এবং নামাজের সিজদায় এই দু‘আটি পড়তে ভুলবেন না। কোনো গুনাহ করলেও এই দু‘আটি দিয়ে ক্ষমা চাবেন।
.
.
(পর্বঃ ৮)
.
একটি গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ শিখুন। দু‘আটি নবীজি তাঁর অতি প্রিয় কন্যা ফাতিমা (রা.)-কে সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার জন্য তাগিদ দিয়ে গেছেন, ওসিয়ত করেছেন। শব্দে শব্দে অর্থসহ সেই দু‘আটি আমরা উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ্।
.
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইয়া ‘হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আসতাগীস, আসলিহ লী শাঅ্নী কুল্লাহ, ওয়া লা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বরফাতা ‘আইন]
.
[অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের উসিলায় আপনার কাছে সাহায্য চাই; আপনি আমার সার্বিক অবস্থার সংশোধন করে দিন; আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের দায়িত্বে ছেড়ে দেবেন না।]
.
এবার শব্দে শব্দে শিখুন—
.
يَا ইয়া [হে]
حَيُّ হাইয়ু [চিরঞ্জীব]‘
يَا ইয়া [হে]
قَيُّوْمُ ক্বাইয়ূমু [চিরস্থায়ী]
بِرَحْمَتِكَ বিরাহমাতিকা [আপনার রহমত দ্বারা]
أَسْتَغِيْثُ আসতাগীস [আমি সাহায্য চাই]
أَصْلِحْ আসলি‘হ [সংশোধন করুন]
لِيْ লী [আমার]
شَأْنِيْ শাঅ্নী [আমার বিষয়গুলো]
كُلَّهُ কুল্লাহ [সকল]
وَلاَ ওয়া লা [এবং না]
تَكِلْنِيْ তাকিলনী [ছেড়ে দিবেন]
إِلٰى ইলা [দিকে]
نَفْسِيْ নাফসী [আমার নিজের]
طَرْفَةَ ত্বরফাতা [পলক]
عَيْنٍ আইন [চোখ]
[চোখের পলক] আমরা এর অনুবাদে বলেছি ‘এক মুহূর্ত’—মর্ম ও ভাব একই।
.
এবার মুখস্থ করুন এভাবে—
.
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ ইয়া ‘হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু
[হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী!]
.
بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ বিরাহমাতিকা আসতাগীস
[আমি আপনার রহমতের উসিলায় আপনার কাছে সাহায্য চাই]
.
أَصْلِحْ لِيْ আসলিহ লী
[আপনি আমার সংশোধন করে দিন]
.
شَأْنِيْ كُلَّهُ শাঅ্নী কুল্লাহ
[সার্বিক অবস্থার]
.
وَلاَ تَكِلْنِيْ ওয়া লা তাকিলনী
[আমাকে ছেড়ে দেবেন না]
.
إِلٰى نَفْسِيْ ইলা নাফসী
[আমার নিজের দায়িত্বে]
.
طَرْفَةَ عَيْنٍ ত্বরফাতা ‘আইন
[এক মুহূর্তের জন্যও]
.
নবীজির খাদেম ও একনিষ্ঠ সহচর আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রা.)-কে বলেন, ‘‘আমি ওসিয়ত করছি যে, তুমি সকালে ও সন্ধ্যায় এই কথা (দু'আ) বলবে।’’
.
[মুসতাদরাক হাকিম: ১/৫৪৫, সহিহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: ১/২৭৩; হাদিসটি সহিহ]
.
দু'আর অর্থটি আবার পড়ুন। এত চমৎকার ভাষায় আল্লাহর কাছে দু'আ করলে আল্লাহ্ কি ফিরিয়ে দিবেন? দু'আটি পড়ার সময় অর্থের দিকে মনোযোগ রেখে পড়বেন। তাহলে পড়তেও ভালো লাগবে, ফায়দাও বেশি হবে ইনশাআল্লাহ্। নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে, সকাল-সন্ধ্যায়, যেকোনো দু‘আর মধ্যে (আবেগ সৃষ্টি করতে) এই দু‘আটি পড়ুন।
.
.
(পর্বঃ ৯)
.
.
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আ‘উযু বি কালিমা~ তিল্লা~হিত তা~ম্মা~তি, মিন গাদ্বাবিহি, ওয়া ‘ইক্বা~বিহি, ওয়া শাররি ‘ইবা~দিহি, ওয়া মিন হামাযা~তিশ শায়াত্বীনি, ওয়া আন ইয়াহদ্বুরুন] (আরবি দেখে না শিখলে নির্ঘাত ভুল শিখতে হবে। অতএব, আরবির সাথে মিলিয়ে সঠিকভাবে শিখুন)
.
[অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যসমূহ দ্বারা আশ্রয় চাই—তাঁর রাগ ও শাস্তি থেকে; তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে; শয়তানদের উসকানি থেকে এবং আমার কাছে তাদের (শয়তানদের) উপস্থিতি থেকে।]
.
এবার শব্দার্থগুলো জেনে নেওয়া যাক—
.
أَعُوذُ আ‘উযু [আমি আশ্রয় চাই]
بِكَلِمَاتِ বি কালিমা~তি [বাক্যসমূহ দ্বারা]
اللّٰهِ আল্লাহ্ [আল্লাহ]
التَّامَّاتِ তা~ম্মা~তি [পরিপূর্ণ]
مِنْ মিন [হতে]
غَضَبِهِ গাদ্বাবিহি [তাঁর রাগ]
وَعِقَابِهِ ওয়া ‘ইক্বাবিহি [তাঁর শাস্তি]
وَشَرِّ ওয়া শাররি [অনিষ্ট]
عِبَادِهِ ইবাদিহি [তাঁর বান্দাদের]
وَمِنْ ওয়া মিন [এবং হতে]
هَمَزَاتِ হামাযা~তি [উসকানি]
الشَّيَاطِينِ আশ শায়াত্বীন [শয়তানগুলো]
وَأَنْ يَحْضُرُونِ ওয়া আন ইয়া‘হদ্বুরুন
[উপস্থিত হওয়া]
.
মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّاتِ আ‘উযু বি কালিমা ~তিল্লা~হিত তা~ম্মা~তি
[আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যসমূহ দ্বারা আশ্রয় চাই]
.
مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ মিন গাদ্বাবিহি, ওয়া ‘ইক্বা~বিহি
[তাঁর রাগ ও শাস্তি থেকে]
.
وَشَرِّ عِبَادِهِ ওয়া শাররি ‘ইবা~দিহি
[তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে]
.
وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ ওয়া মিন হামাযা~তিশ শায়াত্বীনি
[শয়তানদের উসকানি থেকে]
.
وَأَنْ يَحْضُرُونِ ওয়া আন ইয়াহদ্বুরুন
[এবং (আমার কাছে) তাদের (শয়তানদের) উপস্থিতি থেকে]
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে, সে যেন বলে (উপরের দু‘আটি)। তা হলে, তারা (জ্বীন শয়তানেরা) তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’’ [তিরমিযি: ৩৫২৮, হাদিসটি হাসান]
.
১. যাদের ঘুমের মধ্যে সমস্যা হয়, তারা ঘুমের পূর্বে এবং ভয়ার্ত হয়ে ঘুম ভাঙার পর এই দু‘আটি পড়বেন।
২. যারা সাধারণভাবে দু‘আ করতে চান, তারাও এটি যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়তে পারেন। কারণ এর অর্থটি খুবই সুন্দর এবং ব্যাপক—শুধু ঘুমের মধ্যে ভয় পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
৩. নামাজের সিজদায় এবং সালাম ফেরানোর পূর্বেও পড়তে পারেন।
৪. অর্থের দিকে খেয়াল রেখে দু‘আ পড়বেন। তাহলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়—ইনশাআল্লাহ্।
.
.
( পর্বঃ ১০)
.
জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু/কেউ চলে গেলে/হারিয়ে গেলে ভেঙে পড়বেন না। হাদিসে এ ব্যাপারে সহিহ দু‘আ বর্ণিত হয়েছে। সেটি পড়ুন—উত্তম বিকল্প পাবেন। আজ আমরা সেই দু‘আটি শব্দে শব্দে অর্থসহ তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্।
.
সাহাবাদের মধ্যে আবু সালামা ও উম্মে সালামা জুটি ছিলো ঈর্ষা করার মতো। দুজন স্বামী-স্ত্রী, একে অপরকে ভীষণ ভালবাসতেন। তাঁদের ভালবাসা ছিলো রূপকথার মতো। একদিন হঠাৎ আবু সালামাহ্ (রা.) মারা যান। এতে উম্মে সালামাহ (রা.) মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
.
উম্মে সালামাহ্ (রা.) বলেন, ‘‘আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
.
إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اَللّٰهُمَّ اَجُرْنِي فِي مُصِيْبَتِي ، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জি‘ঊন। আল্লাহুম্মা আজুরনি ফী মুসী-বাতি, ওয়া আখলিফ লি খাইরাম মিনহা (শুধু বাংলা উচ্চারণ দেখে শিখলে ভুল উচ্চারণ শিখবেন। সাবধান করছি সবাইকে)]
.
[অর্থ: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার এই মুসিবতে প্রতিদান দিন। আমাকে এর পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম কিছু দিন।]
.
যদি কোনো মুসলিম বিপদগ্রস্ত হয়ে এ কথাগুলো বলে, তবে আল্লাহ্ তাকে অবশ্যই উক্ত ক্ষতির পরিবর্তে উত্তম বিষয় দান করবেন।’’
.
উম্মে সালামাহ্ বলেন, আমার স্বামী আবু সালামার মৃত্যুর পর আমি চিন্তা করলাম, আবু সালামার চেয়ে আর কে ভালো হতে পারে? তারপরও আমি এই (উপরে বর্ণিত) কথাগুলো বললাম। তখন আল্লাহ্ আমাকে আবু সালামার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বামী হিসেবে প্রদান করেন। [সহিহ মুসলিম: ১/৬৩১-৬৩২]
.
দু‘আটির শব্দার্থগুলো জেনে নিন—
.
إِنَّا ইন্না [নিশ্চয়ই আমরা]
لِلّٰهِ লিল্লাহি [আল্লাহর জন্য]
وَإِنَّا ওয়া ইন্না [এবং আমরা]
إِلَيْهِ ইলাইহি [তাঁর দিকেই]
رَاجِعُونَ রাজি‘ঊন [প্রত্যাবর্তনকারী]
اَللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা [হে আল্লাহ]
اَجُرْنِي আজুরনি [আমাকে বিনিময় দিন]
فِي ফী [মধ্যে]
مُصِيبَتِي মুসীবাতি [আমার মুসিবত]
وَأَخْلِفْ ওয়া আখলিফ [এবং বদলা দিন]
لِي লি [আমার জন্য]
خَيْرًا খাইরান [উত্তম]
مِنْهَا মিনহা [তা হতে]
.
মুখস্থ করতে পারেন এভাবে—
.
إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
[নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী]
.
اَللّٰهُمَّ أَجُرْنِي আল্লাহুম্মা আজুরনি
[হে আল্লাহ! আপনি আমাকে প্রতিদান দিন]
.
فِي مُصِيبَتِي ফী মুসীবাতী
[আমার মুসিবতে]
.
وَأَخْلِفْ لِي ওয়া আখলিফ লী
[এবং আমার জন্য বদলা দিন]
.
خَيْرًا مِنْهَا খাইরাম মিনহা
[এর চেয়েও উত্তম কিছু দিয়ে]
.
আম্মাজান উম্মে সালামাহ্ (রা.) দু'আর পুরস্কার কী চমৎকার পেয়েছেন! এই দু‘আর বরকতে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির জীবনসঙ্গী হয়েছেন। আমরাও যদি পূর্ণ ইয়াকিন (দৃঢ় বিশ্বাস) নিয়ে দু‘আটি পড়ি, তবে আল্লাহ্ আমাদের অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিবেন ইনশাআল্লাহ্।
.
হঠাৎ চাকরিটা চলে গেলে; স্ত্রী, সন্তানাদি অথবা কোন নিকটাত্মীয় মারা গেলে; কাছের বন্ধু/ভাই দূরে চলে গেলে বা মৃত্যুবরণ করলে—এমনসব মুসিবতের সময় আমাদের উচিত এই দু'আটি বারবার পড়া। বিশেষত নামাজে সিজদায় গিয়ে এবং দু'আ কবুলের বিভিন্ন সময় ও মুহূর্তগুলোতে। আশা করা যায়, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বেটার কিছু দিয়ে আমাদেরকে সন্তুষ্ট করবেন এবং আমাদের দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনকে প্রশান্ত করবেন।
.
.
(পর্বঃ ১১)
.
নামাজের পরে একটি চমৎকার দু‘আ পড়ার অভ্যাস করতে পারেন। দু‘আটি আমরা শব্দে শব্দে অর্থসহ উপস্থাপন করছি।
.
প্রথমে দু'আটির প্রেক্ষাপট জেনে নেওয়া যাক; তাহলে আমল করতে আগ্রহ বাড়বে ইনশাআল্লাহ্।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয় একজন সাহাবি ছিলেন মু'আয ইবনু জাবাল (রা.)। তাঁকে তিনি ইয়ামানে ইমাম ও শাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই মু'আয (রা.) বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে বলেন, ‘‘মু'আয! আমি তোমাকে ভালোবাসি।... মু'আয! আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি—প্রত্যেক সালাতের পর এ দু'আটি বলা কখনো বাদ দিও না।’’ (দু'আটি হলো)—
.
اللّٰهُمَّ أَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ‘ইন্নি '
‘আলা যিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া ‘হুসনি ‘ইবাদাতিকা (শুধু বাংলা উচ্চারণ দেখে শিখবেন না। তাহলে নিশ্চিতভাবে ভুল শিখতে হবে)]
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সাহায্য করুন—আপনার যিকর করতে, আপনার শুকরিয়া আদায় করতে এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করতে।’’
[আবু দাউদ: ১৫২২, হাকিম: ৬৭৭, সহিহ আত-তারগিব: ২/২১৯; হাদিসটি সহিহ]
.
শব্দে শব্দে মুখস্থ করে নিতে পারেন—
.
اللّٰهُمَّ আল্লাহুম্মা
[হে আল্লাহ!]
.
أَعِنِّيْ আ‘ইন্নি
[আমাকে সাহায্য করুন]
.
عَلٰى আলা
[উপরে]
.
ذِكْرِكَ، যিকরিকা
[আপনার যিকর (করতে)]
.
وَشُكْرِكَ، ওয়া শুকরিকা
[আপনার শুকরিয়া (আদায় করতে)]
.
وَحُسْنِ ওয়া হুসনি
[এবং উত্তম (ভাবে)]
.
عِبَادَتِكَ. ইবাদাতিকা
[আপনার ইবাদত (করতে)]
.
প্রথমত, হাদিসটির বর্ণনা খুবই সুন্দর। নবীজি অত্যন্ত স্নেহ করে মু'আয (রা.)-কে এই সুন্দর দু'আটি শিখিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, তিনি এটা ওসিয়ত করেছেন—নামাযের পরে পড়তে। সাধারণ উপদেশ এবং ওসিয়তের মধ্যে পার্থক্য অনেক। মানুষ খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারেই কেবল ওসিয়ত করে থাকে।
তৃতীয়ত, দু'আটির অর্থও খুবই সুন্দর ও ব্যাপক—গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয়ের চাওয়া।
চতুর্থত, এটি শুধু প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরই নয়, নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে এবং অন্যান্য যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়া যাবে। তবে, সারাজীবন রেগুলার আমল করতে পারেন কেবল ফরজ নামাজের পর। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে পড়লে মাঝেমধ্যে ছেড়ে দেবেন আবার পড়বেন।
.
.
No comments:
Post a Comment