ইফতারের দুআ,
اللهم لك صمت وعلى رزقك أفطرت
"আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু"এই দুআ
তাহক্কীক্ব:- মুসলেহুদ্দীন মাযহারী
প্রিয় পাঠক!
সমাজে বহুল প্রচলিত এই দুআটির বিস্তারিত তাহক্বীক্ব চলুন দেখি।
হাদীসটি হলো:-
১) এই হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ রহঃ উল্লেখ করেছেন:-
حدثنا مسدد حدثنا هشيم عن حصين عن معاذ بن زهره انه بلغه ان النبي صلى الله عليه وسلم كان اذا افطر قال اللهم لك صمت وعلى رزقك افطرت( سنن ابي داود ٢/٣٠٦ رقم الحديث ٢٣٥٨)
অর্থাৎ:-
২৩৫৮। মুয়ায ইবনু যুহরা (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তাঁর নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় বলতেনঃ ‘‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া ‘আলা রিযকিকা আফতারতু।’’ অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার উদ্দেশ্যেই সওম পালন করেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দ্বারাই ইফতার করেছি।
তাখরীজ:-
( সুনান আবী দাউদ ২/৩০৬ হাদীস নং ২৩৫৮ আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪/৪০৩ হাদীস নং ৮১৩৪ আয যুহ্দ অর রক্বাইক্ব লিইবনিল মুবারাক ১/৪৯৫ হাদীস নং ১৪১০ আল মারাসীল লি আবী দাউদ ১/১২৪ হাদীস নং ৯৯ শারহুস সুন্নাহ লিল বাগাবী ৬/২৬৫ হাদীস নং ১৭৪১ আদ দা'ওয়াতুল কাবীর লিল বায়হাক্বী ২/৯৮ হাদীস নং ৫০০ ফাযাইলুল আওকাত লিল বায়হাক্বী ১/৩০১ হাদীস নং ১৪৩ শুআবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী ৫/৪০৫ )।
তাহক্বীক্ব:-এই হাদীস যঈফ:-
কারণ:-
উক্ত হাদীসের সমস্ত সানাদে বা সুত্রে "معاذ بن زهرة" "মুআয বিন যুহরাহ" রাবী রয়েছেন।
এই রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কিরামদের উক্তি:-
১/ ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী রহঃ বলেন,মাক্ববূল, তৃতীয় স্তরের, তিনি হাদীস ইরসাল করেছেন।তারা ভুলে পতিত হয়েছেন যারা তাঁকে সাহাবাহ উল্লেখ করেছেন ( তাক্বরীবুত তাহযীব রাবী নং ৭৫৮২ রুয়াতুত তাহযিয়্যীন ৬৭৩১)।
২) ইমাম বুখারী রহঃ আলী ইবনুল মাদীনী রহঃ থেকে বলেন, তাঁর হাদীস মুরসাল ( আল ইসাবাহ ফী তাময়ীযিস সাহাবাহ ৬/২৮৫ রাবী নং ৮৬০১)।
৩) ইমাম জা'ফার রহঃ বলেন, তিনি তাবিঈদের অন্তর্ভুক্ত।যারা তাঁকে সাহাবাহ বলেছেন তাঁরা ভুল করেছেন ( ইকমাল তাহযীবিল কামাল ১১/২৪৯ রাবী নং ৪৬১৮)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
উক্ত উদ্ধৃতি থেকে মুহাদ্দিসীনে কিরামদের উক্তি পেলাম যে,"মুআয বিন যুহরাহ" তাবিঈ।
প্রিয় পাঠক!
এবারে আসুন জেনে নিন যে,
তাবিঈ কাকে বলে।
هو من لقي صحابيا مسلماً و مات على الإسلام وقيل هو من صحب الصحابي ( تيسير مصطلح الحديث ٢٤٧ص)
অর্থাৎ:- যিনি মুসলিম অবস্থায় সাহাবীর সাক্ষাৎ বা সান্নিধ্য পেয়েছেন এবং ইসলামের উপর মৃত্যু বরণ করেছেন, এবং এটা বলা হয় যে, যিনি সাহাবীর সংস্পর্শ পেয়েছেন তিনি তাবিয়ী( তাইসীরু মুসত্বলাহিল হাদীস ২৪৭ পৃষ্ঠা )।
উক্ত সংজ্ঞা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে,তাবিঈ হলেন যিনি সাহাবীর সংস্পর্শ পেয়েছেন।
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংস্পর্শ বা সাক্ষাৎ কিছুই পাননি।
আর এই মুআয বিন যুহরাহ তাবিঈ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না দেখেও মধ্যে সাহাবীর নাম উল্লেখ না করেই বলছেন যে, তাঁর নিকট হাদীস পৌঁছেছে!
তিনি কোন সাহাবীর নাম উল্লেখ করেননি।
এই ধরণের হাদীসকে মুরসাল হাদীস বলা হয়।
المرسل
هو ما سقط من آخر إسناده من بعد التابعي
অর্থাৎ:-
মুরসাল হল:- তাবিঈর পরে সানাদে শেষে যা বিলুপ্ত করা হয়।
আর সেটা হলো :-
والذي بعد التابعي هو الصحابي، وآخر الإسناد هو طرفه الذي فيه الصحابي .
অর্থাৎ:- যিনি তাবিয়ীর পর তিনি হলেন সাহাবী,আর সানাদের শেষ প্রান্তে সাহাবী থাকেন ( তাইসীরু মুসত্বলাহিল হাদীস ৮৭ পৃষ্ঠা নুযহাতুন নাযার ৪৩ পৃষ্ঠা)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
মুরসাল হাদীসের সংজ্ঞা সম্পর্কেও আমরা অবগত হলাম ।
এবারে আসুন মুরসাল হাদীসের হুকুম সম্পর্কে জেনে নিই।
المرسل في الأصل ضعيف مردود ،لفقد شرطا من شروط المقبول، وهو اتصال السند
অর্থাৎ:- মুরসাল আসলেই যঈফ প্রত্যাখ্যাত, হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্ত বিলুপ্ত হওয়ার জন্য,আর সেটা হলো মিলিত সানাদ ( তাইসীরু মুসত্বলাহিল হাদীস ৮৮ পৃষ্ঠা)।
ইবনুস স্বলাহ রহঃ বলেন,
اعلم أن حكم المرسل حكم الحديث الضعيف ( مقدمة ابن الصلاح ١/٥٣).
জেনে নিন নিশ্চয় মুরসাল হাদীসের হুকুম হলো যঈফ হাদীসের হুকুম ( মুক্বাদ্দামা ইবনিস স্বলাহ ১/৫৩)।
ইমাম মুসলিম রহঃ বলেন,
المرسل في أصل قولنا وقول أهل العلم بالأخبار ليس بحجة ( صحيح مسلم ١/٢٢)
আমাদের এবং বিদ্বানদের মৌলিক কথা হলো মুরসাল দলীলযোগ্য নয় ( মুক্বাদ্দামা সহীহ মুসলিম ১/২২ মুক্বাদ্দামা ইবনিস স্বলাহ মা'রিফাতু আনওয়াঈ উলূমিল হাদীস ১/৫৫)।
ইমাম নববী রহঃ বলেন,
ثم المرسل حديث ضعيف عند جماهير المحدثين وكثير من الفقهاء و أصحاب الأصول ( تقريب النووي مع تدريب الراوي ١/١٩٨).
অতঃপর মুরসাল হাদীস অধিকাংশ মুহাদ্দিস, প্রচুর ফক্বীহ এবং উসূলবিদ উলামায়ে কেরামদের নিকট যঈফ ( তাক্বরীবুন নববী মাআ তাদরীবির রাবী ১/১৯৮)।
আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ বলেন,
إن الحديث المرسل من أقسام الحديث الضعيف عند جمهور علماء الحديث ( سلسلة الأحاديث الضعيفة ١/٥٥).
নিশ্চয় মুরসাল হাদীস জমহুর মুহাদ্দিসীনে কিরামদের নিকট যঈফ হাদীসের অংশ ( সিলসিলা যঈফাহ ১/৫৫)।
হাফিয যুবাইর আলী যাঈ রহঃ মুরসাল হাদীস গ্রহণযোগ্য নয় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ( তাহক্বীক্বী ইসলাহী আওর ইলমী মাক্বালাত ৬/৪৭৫ ফাতাওয়া আল ইলমিয়্যাহ ২/২৯০)।
প্রিয় পাঠক! লেখনীর কলেবর বৃদ্ধি না করে বলতে চাই মুরসাল হাদীস গ্রহণযোগ্য যারা বলছেন তাঁরা ভালো করে (ফাতাওয়া আল ইলমিয়্যাহ লিহাফিয যুবাইর আলী যাঈ রহঃ ২/২৯০-২৯৩ পৃষ্ঠা) পড়ুন।
মুরসাল হাদীস সর্ব সম্মতিক্রমে যঈফ।
বিস্তারিত জানতে দেখুন:-
( মুক্বাদ্দামাহ মুসলিম ১/২২ জামিউত তাহসীল ৩৫ আল বায়িসুল হাসীস ১/১৪২ শারহুল মুহাযযাব ১/৯৫ মা'রিফাতু উলূমিল হাদীস ২৫ পৃষ্ঠা মুক্বাদ্দামাহ ইবনিস স্বলাহ ১/৫৩ আত তাক্বরীব অত তাইসীর লিন নববী ১/৩৪ আল বায়িসুল হাসীস ইলা ইখতিসারি উলূমিল হাদীস ১/৪৮)।
অতএব " আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু" এই দুআটি মুরসালে তাবিয়ী।
যা সর্ব সম্মতিক্রমে যঈফ।
প্রকাশ থাকে যে,মুরসালে সাহাবী হুজ্জাত বা গ্রহণযোগ্য ( আন নুকাত আলা মুক্বাদ্দামাতিবনিস স্বলাহ ১/৫০৮ শারহু ইলালিত তিরমিযী ২/৬০১)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী !
উপরোক্ত উসূল থেকে এই হাদীসটি যঈফ হিসেবেই প্রমাণিত হলো আলহামদুলিল্লাহ।
এই হাদীস যঈফ বলেছেন যে সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কিরাম।
১) আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ যঈফ বলেছেন ( যঈফ আবী দাউদ ২/২৬৪ হাদীস নং ৪০৬ যঈফুল জামে হাদীস নং ৪৩৪৯ তাখরীজ আল কালিমিত তইয়্যিব ১/১৩৯ হাদীস নং ১৬৫ )।
আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ মিশকাতের হাদীস নং ১৯৯৪ টিকা নং ৫ এর প্রথম তাহক্বীক্বে বলেছিলেন,
ولكن له شواهد يقوي بها
এটা মুরসাল। কিন্তু এর সমার্থক বর্ণনার কারণে এটা শক্তিশালী।
পরবর্তীতে আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ মিশকাতের দ্বিতীয় তাহক্বীক্ব করেন এবং বইটির নাম দেন "هداية الرواة" হিদায়াতুর রুয়াত।
এই বইয়ের ১৯৩৫ নং হাদীসের ৩ নং টিকায় বলেন,
ثم تبين لي أن الشواهد مشار إليها أنس و إبن عباس لضعف شديد فصلت في الارواء رقم الحديث ٩١٩
আমার কাছে স্পষ্ট হলো যে,যেই সমার্থকের দিকে ইঙ্গিত করেছিলাম,আনাস এবং ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা এর হাদীসের দিকে সেটা নিতান্তই দূর্বল।এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ইরওয়াউল গালীল হাদীস নং ৯১৯ এ ।
অর্থাৎ আলবানী রহঃ মিশকাতের দ্বিতীয় তাহক্বীক্বে এই হাদীস যঈফ বলেছেন।
তিনি প্রথমে শক্তিশালী বলার পর প্রত্যাবর্তন করেছেন অর্থাৎ যঈফ বলেছেন ( তারাজুআত আল আলবানী ১/১৩ হাদীস নং ৩৫,৩৮)।
২) হাফিয যুবাইর আলী যাঈ রহঃ বলেন,সানাদ যঈফ ( আনওয়ারুস সহীফাহ ফিল আহাদীসিয যঈফাহ, যঈফ আবী দাউদ হাদীস নং ২৩৫৮)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে চলুন দেখি এই সম্পর্কিত একটি হাদীসের সানাদ।
ইমাম ত্ববারানী রহঃ মৃত ৩৬০ হিজরী এই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন,
حدثنا محمد بن ابراهيم ،ثنا اسماعيل بن عمرو البجلي ،نا داود بن الزبرقان ،نا شعبة عن ثابت البناني عن أنس بن مالك قال : كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا أفطر قال : اللهم لك صمت وعلى رزقك أفطرت ( المعجم الاوسط ٧/٢٩٨ رقم الحديث ٧٥٤٩ المعجم الصغير للطبراني ٢/١٣٣ رقم الحديث ٩١٢).
এই হাদীসের সানাদে " داود بن الزبرقان" "দাউদ বিন যাবারক্বান"রয়েছে।
এই কারণেই আলবানী বলেছেন এই হাদীস নিতান্তই দূর্বল ( হিদায়াতুর রুয়াত হাদীস নং ১৯৩৫)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
চলুন এই রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কিরামদের উক্তি জেনে নিই।
আল্লামাহ্ আযদী রহঃ তাকে মিথ্যুক বলেছেন ( রুয়াতুত তাহযিয়্যীন ১৭৮৫)।
ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ বলেন,মাতরুক বা পরিত্যক্ত ( তাক্বরীবুত তাহযীব রাবী নং ১৯৫৫)।
তাক্বরীবুত তাহযীবের মুহাক্বিক্ব শায়খ খলীল মা'মূন শীহা রহঃ এই হাদীসের টিকায় উল্লেখ করেছেন।
ইমাম ইবনু মাঈন রহঃ বলেন,সে কিছুই নয়।
আল্লামাহ জূযজানী রহঃ বলেন সে মিথ্যুক।
ইমাম আবু দাউদ যঈফ বলেছেন।
ইমাম নাসাঈ রহঃ বলেন,সে শক্তিশালী নয়।
আল্লামাহ ইজলী রহঃ বলেন,যঈফুল হাদীস।
ইমাম বাযযার রহঃ বলেন,মুনকারুল হাদীস ( বিস্তারিত এই সমস্ত গ্রন্থে পাবেন তারীখ আদ দূরী ২/১৫২ আহওয়ালুর রিজাল ১৮২ আল জারহু অত তা'দীল ৩/৪১২ আল কামিল ৩/৯৫ আল মাজরুহীন ১/২৯২)।
ইবনু খিরাশ রহঃ বলেন,যঈফুল হাদীস ( ইকমাল তাহযীবিল কামাল ৪/২৪৯ রাবী নং ১৪৪৪)।
ইমাম আবু হাতিম রহঃ বলেন,যঈফ ( তারীখুল ইসলাম ৪/৬১৫)।
ইমাম আবু যুরআহ রহঃ বলেন,মাতরুক বা পরিত্যক্ত ( মীযানুল ই'তিদাল ২/৭ রাবী নং ২৬০৬)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে চলুন দেখি এই হাদীস যঈফ বলেছেন যে সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কিরাম।
ইমাম হায়সামী রহঃ যঈফ বলেছেন ( মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৫৬ হাদীস নং ৪৮৯২)।
ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ যঈফ বলেছেন ( তালখীসুল হাবীর ২/৪৪৫)।
আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ যঈফ বলেছেন ( ইরওয়াউল গালীল ৪/৩৮ হাদীস নং ৯১৯ সিলসিলা যঈফাহ হাদীস নং ৬৯৯৬)।
প্রিয় পাঠক! উক্ত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস "দাউদ বিন যাবারক্বান" রাবীর কারণে যঈফ প্রমাণিত হলো।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী! এবারে চলুন দেখি
ইবনু আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসের অবস্থা।
এই হাদীসটি হলো:-
حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي،ثنا يوسف بن قيس البغدادي،ثنا عبد الملك بن هارون بن عنترة،عن أبيه عن جده عن إبن عباس قال : كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا أفطر قال: لك صمت،وعلى رزقك أفطرت فتقبل مني إنك أنت السميع العليم ( المعجم الكبير للطبراني ١٢/١٤٦ رقم الحديث ١٢٧٢٠)
অর্থাৎ:- ইবনু আব্বাস রাঃ বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন বলতেন,লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম ( আল মু' জামুল কাবীর লিত ত্ববারানী ১২/১৪৬ হাদীস নং ১২৭২০)।
এই হাদীস নিতান্তই যঈফ বা জালের কাছাকাছি।
কারণ:-
এই হাদীসের সানাদে মিথ্যুক রাবী রয়েছে।
১) আব্দুল মালিক বিন হারুন
ইমাম সা'দী রহঃ বলেন, আব্দুল মালিক বিন হারুন দাজ্জাল কাযযাব ( মীযানুল ই'তিদাল ২/৬৬৬)।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহঃ বলেন,যঈফুল হাদীস ( আল কামিল ফী যুআফাইর রিজাল ৬/৫২৯ রাবী নং ১৪৪৮)।
ইমাম বুখারী রহঃ বলেন,মুনকারুল হাদীস ( আত তারীখুল কাবীর ৫/৪৩৬ রাবী ১৪২৩)।
ইমাম বারক্বানী রহঃ বলেন, ইমাম দারাক্বুতনী রহঃ কে আব্দুল মালিক বিন হারুন বিন আনতারাহ সম্পর্কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, পরিত্যক্ত মিথ্যুক ( মাউসূআতু আক্বওয়ালি আবিল হাসান আদ দারাক্বুতনী ২/৪২৬ রাবী নং ২২৪২)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে চলুন দেখি এই হাদীস কোন কোন মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন।
১) ইমাম হায়সামী রহঃ যঈফ বলেছেন ( মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৫৬ হাদীস নং ৪৮৯৩)।
২) ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ যঈফ বলেছেন ( তালখীসুল হাবীর ২/৪৪৪)।
৩) ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আলজাওযী রহঃ বলেন, প্রমাণিত নয় বা সাব্যস্ত নয় ( যাদুল মাআদ ২/৪৯)।
৪) আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ নিতান্তই দূর্বল বলেছেন ( ইরওয়াউল গালীল হাদীস নং ৯১৯ যঈফুল জামে হাদীস নং ৪৩৫০ )।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে চলুন আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে এই দুআটা ইফতারের পর পড়ার মর্মে বর্ণিত হাদীসটির অবস্থা দেখি।
আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
يا علي وإذا كنت صائماً في شهر رمضان فقل بعد افطارك : اللهم لك صمت،وعليك توكلت،وعلى رزقك أفطرت( اتحاف الخيرة المهرة للبوصيري ٣/٤١٣ رقم الحديث ٣٠٠٤).
অর্থাৎ:- হে আলী,যখন তুমি রমাযান মাসে সিয়াম থাকবে তুমি ইফতারের পর বলো, আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু,অ আলাইকা তাওয়াক্কালতু,অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু ( ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ লিল বূসীরী ৩/৪১৩ হাদীস নং ৩০০৪ আল মাতালিবুল আলিয়াহ ৬/১৪১ হাদীস নং ৩১০৭৪)।
এই হাদীস জাল।
কারণ,এই হাদীসের সানাদে তিনজন যঈফ রাবী রয়েছেন ।
লেখক এই হাদীসের শেষেই এই কথা উল্লেখ করেছেন ।
১) আব্দুর রাহীম বিন ওয়াক্বিদ।
২) হাম্মাদ বিন আমর।
৩) আস সার্রি ইবনু খালিদ।
( ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ হাদীস নং ৩০০৪)।
খাতীব বাগদাদী রহঃ বলেন,আব্দুর রাহীম বিন ওয়াক্বিদের হাদীস মুনকার ( তারীখুল ইসলাম ৫/৩৭৩ রাবী নং ২৩০ তারীখে বাগদাদ ১২/৩৭০ রাবী নং ৫৭২০ মীযানুল ই'তিদাল ২/৬০৭ রাবী নং ৫০৩৮)।
২) হাম্মাদ বিন আমর হাদীস জালকারী মিথ্যুক।
( তারীখুল ইসলাম ৪/৮৩৯ রাবী নং ৮৩)।
ইমাম বুখারী রহঃ বলেন,মুনকারুল হাদীস
( আত তারীখুল কাবীর ৩/২৮ রাবী ১১৭)।
ইমাম নাসাঈ রহঃ বলেন,মাতরূকুল হাদীস ।
ইবনে হিব্বান রহঃ বলেন, হাদীস জালকারী ছিল ( মীযানুল ই'তিদাল ১/৫৯৮ রাবী নং ২২৬২)।
আলিয়্যিবনুল হাজার রহঃ বলেন,যঈফ ( আল কামিল ফী যুআফাইর রিজাল ৩/১০ রাবী নং ৪১৫)।
এই হাদীসটিকে ইমাম সুয়ূতী রহঃ ( আল আ'লী আল মাসনূআহ ফিল আহাদীসিল মাউযুআহ ২/৩১২) উল্লেখ করেছেন।
প্রিয় পাঠক! আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে এই বর্ণনা জাল হিসাবে প্রমাণিত হলো।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে আসুন একটা মূলনীতি বা উসূল দেখে নিন।
ইমাম ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ আল ক্বাত্তান রহঃ বলেন,
لا تنظروا إلى الحديث ولكن أنظروا إلى الإسناد فإن صح الإسناد وإلا فلا تغتر بالحديث إذا لم يصح الإسناد ( الجامع لأخلاق الراوي للخطيب البغدادي ٢/١٠٢ رقم ١٣٠١ تحرير علوم الحديث ١/٢٤).
অর্থাৎ:- তোমরা হাদীসের দিকে দেখ না বরং সানাদের দিকে দেখ,তার সুত্র সহীহ না হলে ধোঁকায় পতিত হবে না ( আল জামি লিআখলাক্বির রাবী ২/১০২ নং ১৩০১ তাহরীরু উলূমিল হাদীস ১/২৪)।
প্রিয় পাঠক এই উসূল থেকে প্রমাণিত হলো যে,কেউ যদি এই সমস্ত হাদীস সহীহ বলেন,তা দেখে ধোঁকায় পতিত হলে হবে না।
সার কথা:-
ইফতারের দুআ "আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু" উসূলে হাদীসের মানদণ্ডে যঈফ এবং এর প্রত্যেকটা সানাদ যঈফ থেকে আরো নিতান্তই যঈফের দিকেই এগিয়ে গেলো।
اللهم لك صمت وعلى رزقك أفطرت
"আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু"এই দুআ
তাহক্কীক্ব:- মুসলেহুদ্দীন মাযহারী
প্রিয় পাঠক!
সমাজে বহুল প্রচলিত এই দুআটির বিস্তারিত তাহক্বীক্ব চলুন দেখি।
হাদীসটি হলো:-
১) এই হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ রহঃ উল্লেখ করেছেন:-
حدثنا مسدد حدثنا هشيم عن حصين عن معاذ بن زهره انه بلغه ان النبي صلى الله عليه وسلم كان اذا افطر قال اللهم لك صمت وعلى رزقك افطرت( سنن ابي داود ٢/٣٠٦ رقم الحديث ٢٣٥٨)
অর্থাৎ:-
২৩৫৮। মুয়ায ইবনু যুহরা (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তাঁর নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় বলতেনঃ ‘‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া ‘আলা রিযকিকা আফতারতু।’’ অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার উদ্দেশ্যেই সওম পালন করেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দ্বারাই ইফতার করেছি।
তাখরীজ:-
( সুনান আবী দাউদ ২/৩০৬ হাদীস নং ২৩৫৮ আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪/৪০৩ হাদীস নং ৮১৩৪ আয যুহ্দ অর রক্বাইক্ব লিইবনিল মুবারাক ১/৪৯৫ হাদীস নং ১৪১০ আল মারাসীল লি আবী দাউদ ১/১২৪ হাদীস নং ৯৯ শারহুস সুন্নাহ লিল বাগাবী ৬/২৬৫ হাদীস নং ১৭৪১ আদ দা'ওয়াতুল কাবীর লিল বায়হাক্বী ২/৯৮ হাদীস নং ৫০০ ফাযাইলুল আওকাত লিল বায়হাক্বী ১/৩০১ হাদীস নং ১৪৩ শুআবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী ৫/৪০৫ )।
তাহক্বীক্ব:-এই হাদীস যঈফ:-
কারণ:-
উক্ত হাদীসের সমস্ত সানাদে বা সুত্রে "معاذ بن زهرة" "মুআয বিন যুহরাহ" রাবী রয়েছেন।
এই রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কিরামদের উক্তি:-
১/ ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী রহঃ বলেন,মাক্ববূল, তৃতীয় স্তরের, তিনি হাদীস ইরসাল করেছেন।তারা ভুলে পতিত হয়েছেন যারা তাঁকে সাহাবাহ উল্লেখ করেছেন ( তাক্বরীবুত তাহযীব রাবী নং ৭৫৮২ রুয়াতুত তাহযিয়্যীন ৬৭৩১)।
২) ইমাম বুখারী রহঃ আলী ইবনুল মাদীনী রহঃ থেকে বলেন, তাঁর হাদীস মুরসাল ( আল ইসাবাহ ফী তাময়ীযিস সাহাবাহ ৬/২৮৫ রাবী নং ৮৬০১)।
৩) ইমাম জা'ফার রহঃ বলেন, তিনি তাবিঈদের অন্তর্ভুক্ত।যারা তাঁকে সাহাবাহ বলেছেন তাঁরা ভুল করেছেন ( ইকমাল তাহযীবিল কামাল ১১/২৪৯ রাবী নং ৪৬১৮)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
উক্ত উদ্ধৃতি থেকে মুহাদ্দিসীনে কিরামদের উক্তি পেলাম যে,"মুআয বিন যুহরাহ" তাবিঈ।
প্রিয় পাঠক!
এবারে আসুন জেনে নিন যে,
তাবিঈ কাকে বলে।
هو من لقي صحابيا مسلماً و مات على الإسلام وقيل هو من صحب الصحابي ( تيسير مصطلح الحديث ٢٤٧ص)
অর্থাৎ:- যিনি মুসলিম অবস্থায় সাহাবীর সাক্ষাৎ বা সান্নিধ্য পেয়েছেন এবং ইসলামের উপর মৃত্যু বরণ করেছেন, এবং এটা বলা হয় যে, যিনি সাহাবীর সংস্পর্শ পেয়েছেন তিনি তাবিয়ী( তাইসীরু মুসত্বলাহিল হাদীস ২৪৭ পৃষ্ঠা )।
উক্ত সংজ্ঞা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে,তাবিঈ হলেন যিনি সাহাবীর সংস্পর্শ পেয়েছেন।
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংস্পর্শ বা সাক্ষাৎ কিছুই পাননি।
আর এই মুআয বিন যুহরাহ তাবিঈ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না দেখেও মধ্যে সাহাবীর নাম উল্লেখ না করেই বলছেন যে, তাঁর নিকট হাদীস পৌঁছেছে!
তিনি কোন সাহাবীর নাম উল্লেখ করেননি।
এই ধরণের হাদীসকে মুরসাল হাদীস বলা হয়।
المرسل
هو ما سقط من آخر إسناده من بعد التابعي
অর্থাৎ:-
মুরসাল হল:- তাবিঈর পরে সানাদে শেষে যা বিলুপ্ত করা হয়।
আর সেটা হলো :-
والذي بعد التابعي هو الصحابي، وآخر الإسناد هو طرفه الذي فيه الصحابي .
অর্থাৎ:- যিনি তাবিয়ীর পর তিনি হলেন সাহাবী,আর সানাদের শেষ প্রান্তে সাহাবী থাকেন ( তাইসীরু মুসত্বলাহিল হাদীস ৮৭ পৃষ্ঠা নুযহাতুন নাযার ৪৩ পৃষ্ঠা)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
মুরসাল হাদীসের সংজ্ঞা সম্পর্কেও আমরা অবগত হলাম ।
এবারে আসুন মুরসাল হাদীসের হুকুম সম্পর্কে জেনে নিই।
المرسل في الأصل ضعيف مردود ،لفقد شرطا من شروط المقبول، وهو اتصال السند
অর্থাৎ:- মুরসাল আসলেই যঈফ প্রত্যাখ্যাত, হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্ত বিলুপ্ত হওয়ার জন্য,আর সেটা হলো মিলিত সানাদ ( তাইসীরু মুসত্বলাহিল হাদীস ৮৮ পৃষ্ঠা)।
ইবনুস স্বলাহ রহঃ বলেন,
اعلم أن حكم المرسل حكم الحديث الضعيف ( مقدمة ابن الصلاح ١/٥٣).
জেনে নিন নিশ্চয় মুরসাল হাদীসের হুকুম হলো যঈফ হাদীসের হুকুম ( মুক্বাদ্দামা ইবনিস স্বলাহ ১/৫৩)।
ইমাম মুসলিম রহঃ বলেন,
المرسل في أصل قولنا وقول أهل العلم بالأخبار ليس بحجة ( صحيح مسلم ١/٢٢)
আমাদের এবং বিদ্বানদের মৌলিক কথা হলো মুরসাল দলীলযোগ্য নয় ( মুক্বাদ্দামা সহীহ মুসলিম ১/২২ মুক্বাদ্দামা ইবনিস স্বলাহ মা'রিফাতু আনওয়াঈ উলূমিল হাদীস ১/৫৫)।
ইমাম নববী রহঃ বলেন,
ثم المرسل حديث ضعيف عند جماهير المحدثين وكثير من الفقهاء و أصحاب الأصول ( تقريب النووي مع تدريب الراوي ١/١٩٨).
অতঃপর মুরসাল হাদীস অধিকাংশ মুহাদ্দিস, প্রচুর ফক্বীহ এবং উসূলবিদ উলামায়ে কেরামদের নিকট যঈফ ( তাক্বরীবুন নববী মাআ তাদরীবির রাবী ১/১৯৮)।
আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ বলেন,
إن الحديث المرسل من أقسام الحديث الضعيف عند جمهور علماء الحديث ( سلسلة الأحاديث الضعيفة ١/٥٥).
নিশ্চয় মুরসাল হাদীস জমহুর মুহাদ্দিসীনে কিরামদের নিকট যঈফ হাদীসের অংশ ( সিলসিলা যঈফাহ ১/৫৫)।
হাফিয যুবাইর আলী যাঈ রহঃ মুরসাল হাদীস গ্রহণযোগ্য নয় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ( তাহক্বীক্বী ইসলাহী আওর ইলমী মাক্বালাত ৬/৪৭৫ ফাতাওয়া আল ইলমিয়্যাহ ২/২৯০)।
প্রিয় পাঠক! লেখনীর কলেবর বৃদ্ধি না করে বলতে চাই মুরসাল হাদীস গ্রহণযোগ্য যারা বলছেন তাঁরা ভালো করে (ফাতাওয়া আল ইলমিয়্যাহ লিহাফিয যুবাইর আলী যাঈ রহঃ ২/২৯০-২৯৩ পৃষ্ঠা) পড়ুন।
মুরসাল হাদীস সর্ব সম্মতিক্রমে যঈফ।
বিস্তারিত জানতে দেখুন:-
( মুক্বাদ্দামাহ মুসলিম ১/২২ জামিউত তাহসীল ৩৫ আল বায়িসুল হাসীস ১/১৪২ শারহুল মুহাযযাব ১/৯৫ মা'রিফাতু উলূমিল হাদীস ২৫ পৃষ্ঠা মুক্বাদ্দামাহ ইবনিস স্বলাহ ১/৫৩ আত তাক্বরীব অত তাইসীর লিন নববী ১/৩৪ আল বায়িসুল হাসীস ইলা ইখতিসারি উলূমিল হাদীস ১/৪৮)।
অতএব " আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু" এই দুআটি মুরসালে তাবিয়ী।
যা সর্ব সম্মতিক্রমে যঈফ।
প্রকাশ থাকে যে,মুরসালে সাহাবী হুজ্জাত বা গ্রহণযোগ্য ( আন নুকাত আলা মুক্বাদ্দামাতিবনিস স্বলাহ ১/৫০৮ শারহু ইলালিত তিরমিযী ২/৬০১)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী !
উপরোক্ত উসূল থেকে এই হাদীসটি যঈফ হিসেবেই প্রমাণিত হলো আলহামদুলিল্লাহ।
এই হাদীস যঈফ বলেছেন যে সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কিরাম।
১) আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ যঈফ বলেছেন ( যঈফ আবী দাউদ ২/২৬৪ হাদীস নং ৪০৬ যঈফুল জামে হাদীস নং ৪৩৪৯ তাখরীজ আল কালিমিত তইয়্যিব ১/১৩৯ হাদীস নং ১৬৫ )।
আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ মিশকাতের হাদীস নং ১৯৯৪ টিকা নং ৫ এর প্রথম তাহক্বীক্বে বলেছিলেন,
ولكن له شواهد يقوي بها
এটা মুরসাল। কিন্তু এর সমার্থক বর্ণনার কারণে এটা শক্তিশালী।
পরবর্তীতে আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ মিশকাতের দ্বিতীয় তাহক্বীক্ব করেন এবং বইটির নাম দেন "هداية الرواة" হিদায়াতুর রুয়াত।
এই বইয়ের ১৯৩৫ নং হাদীসের ৩ নং টিকায় বলেন,
ثم تبين لي أن الشواهد مشار إليها أنس و إبن عباس لضعف شديد فصلت في الارواء رقم الحديث ٩١٩
আমার কাছে স্পষ্ট হলো যে,যেই সমার্থকের দিকে ইঙ্গিত করেছিলাম,আনাস এবং ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা এর হাদীসের দিকে সেটা নিতান্তই দূর্বল।এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ইরওয়াউল গালীল হাদীস নং ৯১৯ এ ।
অর্থাৎ আলবানী রহঃ মিশকাতের দ্বিতীয় তাহক্বীক্বে এই হাদীস যঈফ বলেছেন।
তিনি প্রথমে শক্তিশালী বলার পর প্রত্যাবর্তন করেছেন অর্থাৎ যঈফ বলেছেন ( তারাজুআত আল আলবানী ১/১৩ হাদীস নং ৩৫,৩৮)।
২) হাফিয যুবাইর আলী যাঈ রহঃ বলেন,সানাদ যঈফ ( আনওয়ারুস সহীফাহ ফিল আহাদীসিয যঈফাহ, যঈফ আবী দাউদ হাদীস নং ২৩৫৮)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে চলুন দেখি এই সম্পর্কিত একটি হাদীসের সানাদ।
ইমাম ত্ববারানী রহঃ মৃত ৩৬০ হিজরী এই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন,
حدثنا محمد بن ابراهيم ،ثنا اسماعيل بن عمرو البجلي ،نا داود بن الزبرقان ،نا شعبة عن ثابت البناني عن أنس بن مالك قال : كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا أفطر قال : اللهم لك صمت وعلى رزقك أفطرت ( المعجم الاوسط ٧/٢٩٨ رقم الحديث ٧٥٤٩ المعجم الصغير للطبراني ٢/١٣٣ رقم الحديث ٩١٢).
এই হাদীসের সানাদে " داود بن الزبرقان" "দাউদ বিন যাবারক্বান"রয়েছে।
এই কারণেই আলবানী বলেছেন এই হাদীস নিতান্তই দূর্বল ( হিদায়াতুর রুয়াত হাদীস নং ১৯৩৫)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
চলুন এই রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কিরামদের উক্তি জেনে নিই।
আল্লামাহ্ আযদী রহঃ তাকে মিথ্যুক বলেছেন ( রুয়াতুত তাহযিয়্যীন ১৭৮৫)।
ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ বলেন,মাতরুক বা পরিত্যক্ত ( তাক্বরীবুত তাহযীব রাবী নং ১৯৫৫)।
তাক্বরীবুত তাহযীবের মুহাক্বিক্ব শায়খ খলীল মা'মূন শীহা রহঃ এই হাদীসের টিকায় উল্লেখ করেছেন।
ইমাম ইবনু মাঈন রহঃ বলেন,সে কিছুই নয়।
আল্লামাহ জূযজানী রহঃ বলেন সে মিথ্যুক।
ইমাম আবু দাউদ যঈফ বলেছেন।
ইমাম নাসাঈ রহঃ বলেন,সে শক্তিশালী নয়।
আল্লামাহ ইজলী রহঃ বলেন,যঈফুল হাদীস।
ইমাম বাযযার রহঃ বলেন,মুনকারুল হাদীস ( বিস্তারিত এই সমস্ত গ্রন্থে পাবেন তারীখ আদ দূরী ২/১৫২ আহওয়ালুর রিজাল ১৮২ আল জারহু অত তা'দীল ৩/৪১২ আল কামিল ৩/৯৫ আল মাজরুহীন ১/২৯২)।
ইবনু খিরাশ রহঃ বলেন,যঈফুল হাদীস ( ইকমাল তাহযীবিল কামাল ৪/২৪৯ রাবী নং ১৪৪৪)।
ইমাম আবু হাতিম রহঃ বলেন,যঈফ ( তারীখুল ইসলাম ৪/৬১৫)।
ইমাম আবু যুরআহ রহঃ বলেন,মাতরুক বা পরিত্যক্ত ( মীযানুল ই'তিদাল ২/৭ রাবী নং ২৬০৬)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে চলুন দেখি এই হাদীস যঈফ বলেছেন যে সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কিরাম।
ইমাম হায়সামী রহঃ যঈফ বলেছেন ( মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৫৬ হাদীস নং ৪৮৯২)।
ইমাম ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ যঈফ বলেছেন ( তালখীসুল হাবীর ২/৪৪৫)।
আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ যঈফ বলেছেন ( ইরওয়াউল গালীল ৪/৩৮ হাদীস নং ৯১৯ সিলসিলা যঈফাহ হাদীস নং ৬৯৯৬)।
প্রিয় পাঠক! উক্ত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস "দাউদ বিন যাবারক্বান" রাবীর কারণে যঈফ প্রমাণিত হলো।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী! এবারে চলুন দেখি
ইবনু আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসের অবস্থা।
এই হাদীসটি হলো:-
حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي،ثنا يوسف بن قيس البغدادي،ثنا عبد الملك بن هارون بن عنترة،عن أبيه عن جده عن إبن عباس قال : كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا أفطر قال: لك صمت،وعلى رزقك أفطرت فتقبل مني إنك أنت السميع العليم ( المعجم الكبير للطبراني ١٢/١٤٦ رقم الحديث ١٢٧٢٠)
অর্থাৎ:- ইবনু আব্বাস রাঃ বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন বলতেন,লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম ( আল মু' জামুল কাবীর লিত ত্ববারানী ১২/১৪৬ হাদীস নং ১২৭২০)।
এই হাদীস নিতান্তই যঈফ বা জালের কাছাকাছি।
কারণ:-
এই হাদীসের সানাদে মিথ্যুক রাবী রয়েছে।
১) আব্দুল মালিক বিন হারুন
ইমাম সা'দী রহঃ বলেন, আব্দুল মালিক বিন হারুন দাজ্জাল কাযযাব ( মীযানুল ই'তিদাল ২/৬৬৬)।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহঃ বলেন,যঈফুল হাদীস ( আল কামিল ফী যুআফাইর রিজাল ৬/৫২৯ রাবী নং ১৪৪৮)।
ইমাম বুখারী রহঃ বলেন,মুনকারুল হাদীস ( আত তারীখুল কাবীর ৫/৪৩৬ রাবী ১৪২৩)।
ইমাম বারক্বানী রহঃ বলেন, ইমাম দারাক্বুতনী রহঃ কে আব্দুল মালিক বিন হারুন বিন আনতারাহ সম্পর্কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, পরিত্যক্ত মিথ্যুক ( মাউসূআতু আক্বওয়ালি আবিল হাসান আদ দারাক্বুতনী ২/৪২৬ রাবী নং ২২৪২)।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে চলুন দেখি এই হাদীস কোন কোন মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন।
১) ইমাম হায়সামী রহঃ যঈফ বলেছেন ( মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৫৬ হাদীস নং ৪৮৯৩)।
২) ইবনু হাজার আসক্বালানী রহঃ যঈফ বলেছেন ( তালখীসুল হাবীর ২/৪৪৪)।
৩) ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আলজাওযী রহঃ বলেন, প্রমাণিত নয় বা সাব্যস্ত নয় ( যাদুল মাআদ ২/৪৯)।
৪) আল্লামাহ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ নিতান্তই দূর্বল বলেছেন ( ইরওয়াউল গালীল হাদীস নং ৯১৯ যঈফুল জামে হাদীস নং ৪৩৫০ )।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে চলুন আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে এই দুআটা ইফতারের পর পড়ার মর্মে বর্ণিত হাদীসটির অবস্থা দেখি।
আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
يا علي وإذا كنت صائماً في شهر رمضان فقل بعد افطارك : اللهم لك صمت،وعليك توكلت،وعلى رزقك أفطرت( اتحاف الخيرة المهرة للبوصيري ٣/٤١٣ رقم الحديث ٣٠٠٤).
অর্থাৎ:- হে আলী,যখন তুমি রমাযান মাসে সিয়াম থাকবে তুমি ইফতারের পর বলো, আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু,অ আলাইকা তাওয়াক্কালতু,অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু ( ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ লিল বূসীরী ৩/৪১৩ হাদীস নং ৩০০৪ আল মাতালিবুল আলিয়াহ ৬/১৪১ হাদীস নং ৩১০৭৪)।
এই হাদীস জাল।
কারণ,এই হাদীসের সানাদে তিনজন যঈফ রাবী রয়েছেন ।
লেখক এই হাদীসের শেষেই এই কথা উল্লেখ করেছেন ।
১) আব্দুর রাহীম বিন ওয়াক্বিদ।
২) হাম্মাদ বিন আমর।
৩) আস সার্রি ইবনু খালিদ।
( ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ হাদীস নং ৩০০৪)।
খাতীব বাগদাদী রহঃ বলেন,আব্দুর রাহীম বিন ওয়াক্বিদের হাদীস মুনকার ( তারীখুল ইসলাম ৫/৩৭৩ রাবী নং ২৩০ তারীখে বাগদাদ ১২/৩৭০ রাবী নং ৫৭২০ মীযানুল ই'তিদাল ২/৬০৭ রাবী নং ৫০৩৮)।
২) হাম্মাদ বিন আমর হাদীস জালকারী মিথ্যুক।
( তারীখুল ইসলাম ৪/৮৩৯ রাবী নং ৮৩)।
ইমাম বুখারী রহঃ বলেন,মুনকারুল হাদীস
( আত তারীখুল কাবীর ৩/২৮ রাবী ১১৭)।
ইমাম নাসাঈ রহঃ বলেন,মাতরূকুল হাদীস ।
ইবনে হিব্বান রহঃ বলেন, হাদীস জালকারী ছিল ( মীযানুল ই'তিদাল ১/৫৯৮ রাবী নং ২২৬২)।
আলিয়্যিবনুল হাজার রহঃ বলেন,যঈফ ( আল কামিল ফী যুআফাইর রিজাল ৩/১০ রাবী নং ৪১৫)।
এই হাদীসটিকে ইমাম সুয়ূতী রহঃ ( আল আ'লী আল মাসনূআহ ফিল আহাদীসিল মাউযুআহ ২/৩১২) উল্লেখ করেছেন।
প্রিয় পাঠক! আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে এই বর্ণনা জাল হিসাবে প্রমাণিত হলো।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী!
এবারে আসুন একটা মূলনীতি বা উসূল দেখে নিন।
ইমাম ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ আল ক্বাত্তান রহঃ বলেন,
لا تنظروا إلى الحديث ولكن أنظروا إلى الإسناد فإن صح الإسناد وإلا فلا تغتر بالحديث إذا لم يصح الإسناد ( الجامع لأخلاق الراوي للخطيب البغدادي ٢/١٠٢ رقم ١٣٠١ تحرير علوم الحديث ١/٢٤).
অর্থাৎ:- তোমরা হাদীসের দিকে দেখ না বরং সানাদের দিকে দেখ,তার সুত্র সহীহ না হলে ধোঁকায় পতিত হবে না ( আল জামি লিআখলাক্বির রাবী ২/১০২ নং ১৩০১ তাহরীরু উলূমিল হাদীস ১/২৪)।
প্রিয় পাঠক এই উসূল থেকে প্রমাণিত হলো যে,কেউ যদি এই সমস্ত হাদীস সহীহ বলেন,তা দেখে ধোঁকায় পতিত হলে হবে না।
সার কথা:-
ইফতারের দুআ "আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু অ আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু" উসূলে হাদীসের মানদণ্ডে যঈফ এবং এর প্রত্যেকটা সানাদ যঈফ থেকে আরো নিতান্তই যঈফের দিকেই এগিয়ে গেলো।
No comments:
Post a Comment