#প্রশ্নঃ মক্কা-মদীনায় কি ‘করোনা’ বা মহামারী প্রবেশ করতে পারবে?
.
বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকের মধ্যেই এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ একটি হাদীছে মক্কা-মদীনায় মহামারী প্রবেশ করবে না মর্মে বক্তব্য এসেছে। অথচ করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য জায়গার মতো মক্কা-মদীনার মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি মক্কা-মদীনা সহ গোটা সঊদী আরবে কারফিউ জারী করা হয়েছে। তাহলে বিষয়টা কী?
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, عَلَى أَنْقَابِ المَدِينَةِ مَلاَئِكَةٌ لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ، وَلاَ الدَّجَّالُ ‘মদীনার প্রবেশপথ সমূহে ফেরেশতা প্রহরায় নিয়োজিত। অতএব, মহামারী (الطَّاعُونُ) এবং দাজ্জাল সেখানে প্রবেশ করবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৭৫৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৩২২০)।
সম্মানিত পাঠক! আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তার শতভাগ সঠিক ও সত্য; এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। লক্ষ্য করুন! হাদীছটিতে ‘ত্ব‘ঊন’ (الطَّاعُونُ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘ত্ব‘ঊন’ হচ্ছে ঘা-পাঁচড়া, যা বগল, কনুই, হাত, আঙ্গুল সহ সারা শরীরে বের হয়। এর কারণে শরীর ফুলে যায় এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। সেই ঘাগুলো যেন অগ্নিশিখা নিয়ে বেরিয়ে আসে। এর চারপাশে কালো, সবুজ বা লালচে (খয়রী) রং ধারণ করে। এর সাথে হৃৎযন্ত্রের কম্পন ও বমি হয় (আল-মিনহাজ, ১৪/২০৪)। ক্বাযী আয়ায রহিমাহুল্লাহও ‘ত্ব‘ঊন’-এর ব্যাখ্যায় ঘা-পাঁচড়ার কথা বলেছেন (ইবন হাজার, ফাতহুল বারী, ১০/১৮০)। অন্যান্য আলেম-উলামার পক্ষ থেকেও এমন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। উলামায়ে কেরামের এ ব্যাখ্যা কিন্তু একটি হাদীছের সাথেও মিলে যায়, যেখানে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ত্ব‘ঊন কী? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, غُدَّةٌ كَغُدَّةِ الْبَعِيرِ ‘উটের ফোঁড়ার মতো ফোঁড়া’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১১৮, সনদ ‘জাইয়্যেদ’)।
অতএব, ত্ব‘ঊন একটি বিশেষ অসুখ, যার নির্দিষ্ট লক্ষণ ও উপসর্গ রয়েছে। সেকারণে সব মহামারী ‘ত্ব‘ঊন’ নয়।
মহামারীর আরেকটি আরবী হচ্ছে, ‘অবা’ (الْوَبَاء)। তবে, ‘অবা’ শব্দটি নির্দিষ্ট কোনো মহামারীকে বুঝায় না; বরং সব ধরনের মহামারী এর আওতাভুক্ত হতে পারে। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ ‘ত্ব‘ঊন’ ও ‘অবা’-এর মধ্যে পার্থক্য করেছেন (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: ফাতহুল বারী, ১০/১৮০-১৮১)। অতএব, প্রত্যেক ‘ত্ব‘ঊন’ অবা; কিন্তু প্রত্যেক ‘অবা’ ত্ব‘ঊন নয়।
আর মক্কা-মদীনায় যা প্রবেশ করতে পারবে না, তা হচ্ছে ‘ত্ব‘ঊন’; ‘অবা’ নয়। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ এমন কথাই বলেছেন (ফাতহুল বারী, ১০/১৮০)। বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার ওয়েবসাইট islamqa.info–এর ১৩১৮৮৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তরেও একথাই বলা হয়েছে (লিঙ্ক: https://islamqa.info/ar/answers/131887/)। ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘মক্কা-মদীনায় কখনও ত্ব‘ঊন প্রবেশ করেনি’ (আযকার, পৃ: ২৭৬)। অতএব, বর্তমান বিশ্বের মরণঘাতি করোনা ভাইরাস মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করতে পারে। কারণ করোনা ভাইরাস হচ্ছে ‘অবা’; ‘ত্ব‘ঊন’ নয়। বরং মক্কা-মদীনায় ‘অবা’ (ত্ব‘ঊন ছাড়া অন্যান্য মহামারী) প্রবেশ করেছে। আবুল আসওয়াদ বলেন, أَتَيْتُ المَدِينَةَ وَقَدْ وَقَعَ بِهَا مَرَضٌ وَهُمْ يَمُوتُونَ مَوْتًا ذَرِيعًا ‘একবার আমি মদীনায় আসলাম। সেখানে তখন মহামারী দেখা দিয়েছিলো। এতে ব্যাপকহারে লোক মারা যাচ্ছিলো’…(ছহীহ বুখারী, হা/২৬৪৩)।
মহান রব্বুল আলামীন আমাদেরকে বুঝার তাওফীক্ব দান করুন। বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে তিনি মানবতাকে রক্ষা করুন। আমীন।
اللهم ارفع عنا البلاء والوباء يا أرحم الراحمين.
.
বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকের মধ্যেই এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ একটি হাদীছে মক্কা-মদীনায় মহামারী প্রবেশ করবে না মর্মে বক্তব্য এসেছে। অথচ করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য জায়গার মতো মক্কা-মদীনার মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি মক্কা-মদীনা সহ গোটা সঊদী আরবে কারফিউ জারী করা হয়েছে। তাহলে বিষয়টা কী?
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, عَلَى أَنْقَابِ المَدِينَةِ مَلاَئِكَةٌ لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ، وَلاَ الدَّجَّالُ ‘মদীনার প্রবেশপথ সমূহে ফেরেশতা প্রহরায় নিয়োজিত। অতএব, মহামারী (الطَّاعُونُ) এবং দাজ্জাল সেখানে প্রবেশ করবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৭৫৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৩২২০)।
সম্মানিত পাঠক! আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তার শতভাগ সঠিক ও সত্য; এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। লক্ষ্য করুন! হাদীছটিতে ‘ত্ব‘ঊন’ (الطَّاعُونُ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘ত্ব‘ঊন’ হচ্ছে ঘা-পাঁচড়া, যা বগল, কনুই, হাত, আঙ্গুল সহ সারা শরীরে বের হয়। এর কারণে শরীর ফুলে যায় এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। সেই ঘাগুলো যেন অগ্নিশিখা নিয়ে বেরিয়ে আসে। এর চারপাশে কালো, সবুজ বা লালচে (খয়রী) রং ধারণ করে। এর সাথে হৃৎযন্ত্রের কম্পন ও বমি হয় (আল-মিনহাজ, ১৪/২০৪)। ক্বাযী আয়ায রহিমাহুল্লাহও ‘ত্ব‘ঊন’-এর ব্যাখ্যায় ঘা-পাঁচড়ার কথা বলেছেন (ইবন হাজার, ফাতহুল বারী, ১০/১৮০)। অন্যান্য আলেম-উলামার পক্ষ থেকেও এমন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। উলামায়ে কেরামের এ ব্যাখ্যা কিন্তু একটি হাদীছের সাথেও মিলে যায়, যেখানে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ত্ব‘ঊন কী? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, غُدَّةٌ كَغُدَّةِ الْبَعِيرِ ‘উটের ফোঁড়ার মতো ফোঁড়া’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১১৮, সনদ ‘জাইয়্যেদ’)।
অতএব, ত্ব‘ঊন একটি বিশেষ অসুখ, যার নির্দিষ্ট লক্ষণ ও উপসর্গ রয়েছে। সেকারণে সব মহামারী ‘ত্ব‘ঊন’ নয়।
মহামারীর আরেকটি আরবী হচ্ছে, ‘অবা’ (الْوَبَاء)। তবে, ‘অবা’ শব্দটি নির্দিষ্ট কোনো মহামারীকে বুঝায় না; বরং সব ধরনের মহামারী এর আওতাভুক্ত হতে পারে। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ ‘ত্ব‘ঊন’ ও ‘অবা’-এর মধ্যে পার্থক্য করেছেন (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: ফাতহুল বারী, ১০/১৮০-১৮১)। অতএব, প্রত্যেক ‘ত্ব‘ঊন’ অবা; কিন্তু প্রত্যেক ‘অবা’ ত্ব‘ঊন নয়।
আর মক্কা-মদীনায় যা প্রবেশ করতে পারবে না, তা হচ্ছে ‘ত্ব‘ঊন’; ‘অবা’ নয়। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ এমন কথাই বলেছেন (ফাতহুল বারী, ১০/১৮০)। বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার ওয়েবসাইট islamqa.info–এর ১৩১৮৮৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তরেও একথাই বলা হয়েছে (লিঙ্ক: https://islamqa.info/ar/answers/131887/)। ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘মক্কা-মদীনায় কখনও ত্ব‘ঊন প্রবেশ করেনি’ (আযকার, পৃ: ২৭৬)। অতএব, বর্তমান বিশ্বের মরণঘাতি করোনা ভাইরাস মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করতে পারে। কারণ করোনা ভাইরাস হচ্ছে ‘অবা’; ‘ত্ব‘ঊন’ নয়। বরং মক্কা-মদীনায় ‘অবা’ (ত্ব‘ঊন ছাড়া অন্যান্য মহামারী) প্রবেশ করেছে। আবুল আসওয়াদ বলেন, أَتَيْتُ المَدِينَةَ وَقَدْ وَقَعَ بِهَا مَرَضٌ وَهُمْ يَمُوتُونَ مَوْتًا ذَرِيعًا ‘একবার আমি মদীনায় আসলাম। সেখানে তখন মহামারী দেখা দিয়েছিলো। এতে ব্যাপকহারে লোক মারা যাচ্ছিলো’…(ছহীহ বুখারী, হা/২৬৪৩)।
মহান রব্বুল আলামীন আমাদেরকে বুঝার তাওফীক্ব দান করুন। বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে তিনি মানবতাকে রক্ষা করুন। আমীন।
اللهم ارفع عنا البلاء والوباء يا أرحم الراحمين.
No comments:
Post a Comment