Monday, March 23, 2020

মিরাজ এক বিস্ময়কর অভিযাত্রা

নৈশ ভ্রমণ ও উর্ধ্বগমন বা মি'রাজ (الإِسْــرَاءُ وَالْمِعْــرَاجُ)

নাবী কারীম (সাঃ)-এর তাবলীগ ও দাওয়াতের কৃতকার্যতা এবং অন্যায় ও উৎপীড়নের মধ্য পর্যায়ে অতিক্রম করে চলছে। সুদূর আকাশের প্রান্তে আশার ক্ষীণ আলো এবং ধূলিযুক্ত ঝলক দৃষ্টি গোচর হতে আরম্ভ করেছে। ঠিক এমন সময়ে নৈশ ভ্রমণ ও উর্ধ্বগমনের ঘটনাটি সংঘটিত হয়। (একে আরবী ভাষায় বলা হয় মি’রাজ এবং এ নামেই ঘটনাটির সমধিক প্রসিদ্ধ রয়েছে)।

মি’রাজের এ বিশ্ববিশ্রুত অলৌকিক ঘটনাটি কোন্ সময় সংঘটিত হয়েছিল সে ব্যাপারে জীবনচরিতকারগণের মধ্যে যে মতভেদ লক্ষ্য করা যায় তা নিম্নে লিপিবদ্ধ করা হল,

১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে যে নবুওয়াত প্রদান করা হয়েছিল সে বছর মি’রাজ সংঘটিত হয়েছিল (এটা তাবারীর কথা)।

২. নবুওয়াতের পাঁচ বছর পর মি’রাজ সংঘটিত হয়েছিল (ইমাম নাবাবী এবং ইমাম কুরতুবী এ মত অধিক গ্রহণযোগ্য বলে স্থির করেছেন)।

৩. দশম নবুওয়াত বর্ষের ২৭শে রজব তারীখে মি’রাজ সংঘটিত হয়েছিল। (আল্লামা মানসুরপুরী এ মত গ্রহণ করেছেন)।

৪. হিজরতের ষোল মাস পূর্বে, অর্থাৎ নবুওয়াত দ্বাদশ বর্ষের রমযান মাসে মি’রাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

৫. হিজরতের এক বছর দু’মাস পূর্বে অর্থাৎ নবুওয়াত ত্রয়োদশ বর্ষের মুহারম মাসে মি’রাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

৬. হিজরতের এক বছর পূর্বে অর্থাৎ নবুওয়াত ত্রয়োদশ বর্ষের রবিউল আওয়াল মাসে মি’রাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এর মধ্যে প্রথম তিনটি মত এ জন্য সহীহুল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না যে, উম্মুল মু’মিনীন খাদীজাহ (রাঃ)-এর মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হওয়ার পূর্বে। অধিকন্তু, এ ব্যাপারে সকলেই এক মত যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হয়েছে মি’রাজের রাত্রিতে। কাজেই, এ থেকে এটা পরিস্কার বুঝা যায় যে, খাদীজাহ (রাঃ)-এর মৃত্যু হয়েছিল মি’রাজের পূর্বে। তাছাড়া, এটাও সর্বজনবিদিত ব্যাপার যে, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল দশম নবুওয়াত বর্ষের রমাযান মাসে। এ প্রেক্ষিতে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, মি’রাজের ঘটনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরে, পূর্বে নয়।

অবশিষ্ট থাকে শেষের তিনটি মত। এ তিনটির কোনটিকেই কোনটির উপর অগ্রাধিকার দানের প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে সূরাহ ‘ইসরার’ বর্ণনাভঙ্গি থেকে অনুমান করা যায় যে, এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মক্কা জীবনের শেষ সময়ে।[1]

হাদীস বিশারদগণ এ ঘটনার যে বিস্তারিত রিওয়ায়াত প্রদান করেছেন পরবর্তী পঙ্ক্তিগুলোতে তার সার সংক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হল :

ইবনুল কাইয়্যেম লিখেছেনঃ প্রাপ্ত তথ্যাদি মোতাবেক প্রকৃত ব্যাপারটি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সশরীরে বুরাকের উপর আরোহন করিয়ে জিবরাঈল (আঃ) মসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে অবতরণের পর সেখানে সমাগত নাবীগণ (আঃ)-এর জামাতে ইমামত সহকারে সালাত আদায় করেন। সালাত আদায়ের পর পুনরায় তাঁকে বুরাকে আরোহন করিয়ে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম আসমানের দরজা খোলা হল সেখানে মানুষের আদি পিতা আদম (আঃ)-এর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। জিবরাঈল (আঃ) এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন যে, ‘ইনি হচ্ছেন আপনার আদি পিতা আদম (আঃ)। একে সালাম করুন। এ কথা শ্রবণের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে শ্রদ্ধাভারে সালাম জানান। আদম (আঃ) আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ‘খোশ আমদেদ!’ হে বংশের মধ্যমণি! খোশ আমদেদ! হে আমার বংশের গৌরব!’ তারপর তিনি তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি করলেন এবং ডান দিকে আল্লাহর নেককার বান্দাগণের এবং বাম দিকে বদকার বান্দাগণের আত্মাসমূহ তাঁকে প্রদর্শন করালেন।

এরপর তাঁকে দ্বিতীয় আসমানে নিয়ে যাওয়া হল। দরজা খোলা হলে সেখানে ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া এবং ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ)-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। পরিচয় পর্বের পর তিনি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। উভয়েই সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মুবারাকবাদ ও উষ্ণ অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করে তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি করেন।

তৃতীয় পর্যায়ে তাঁকে তৃতীয় আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইউসুফ (আঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। তিনিও সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মুবারকবাদ জানান এবং তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি করেন।

তারপর তাঁকে চতুর্থ আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি ইদরীস (আঃ)-কে দেখেন এবং শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। তিনি সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মুবারকবাদ জানান এবং তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি করেন।

পঞ্চম আসমানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি হারুন বিন ইমরান (আঃ)-কে দেখতে পান এবং তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। তিনি যথারীতি সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মুবারকবাদ জানান এবং তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি জ্ঞাপন করেন।

তারপর রাসূলে কারীম (সাঃ)-কে ৬ষ্ঠ আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মুসা বিন ইমরান (আঃ)-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তিনি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানিয়ে কুশলাদি বিনিময় করেন। মুসা (আঃ) সম্ভ্রমের সঙ্গে সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মুবারকবাদ জানান এবং তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি জ্ঞাপন করেন।

এরপর রাসূলুল্লাহ যখন সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন তখন তিনি ক্রন্দন করতে থাকেন। তাঁকে ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে, ‘আমার পূর্বে এমন এক যুবককে নাবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে যাঁর উম্মতগণ আমার উম্মতদের তুলনায় অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবেন।’’

অগ্রযাত্রার পরবর্তী পর্যায়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সপ্তম আসমানে। সপ্তম আসমানে তাঁর সাক্ষাৎলাভ হয় ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আঃ)-এর সঙ্গে, তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)) তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম ও মুবারকবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনিও সসম্ভ্রমে সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মুবারকবাদ জানান এবং তাঁর নবুওয়াতের স্বীকারোক্তি জ্ঞাপন করেন।

অতঃপর তাঁকে সিদরাতুল মুনতাহায় উঠিয়ে নেয়া হয়। তথাকার কূল বৃক্ষের এক একটা ফল ‘হাজার’ অঞ্চলের কুল্লাহ’র ন্যায়। আর তার পত্র-পল্লবগুলো হাতির কানের মতো। অতঃপর সেই বৃক্ষকে স্বর্ণের প্রজাপতি, জ্যোতি ও বিভিন্ন বিচিত্র রং আচ্ছন্ন করে ফেলল। ফলে তা এমন রুপে পরিবর্তিত হলো যে, কোন সৃষ্টির পক্ষেই তার সৌন্দর্য বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

চলার শেষ পর্যায়ে  তাঁকে বায়তুল মা’মুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বায়তুল মা’মূর এমন এক ঘর যাতে প্রত্যেক দিন সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রবেশ করে। অতঃপর তারা আর সেখানে দ্বিতীয়বার প্রবেশ করার সুযোগ লাভ করে না। এরপর তিনি (সাঃ) জান্নাতে প্রবেশ করেন। সেখানে রয়েছে মোতি নির্মিত রশি, জান্নাতের মাটি হলো মেশক নামক সুগন্ধির তৈরী। অতঃপর তাঁর নিকট এমন বিষয় পেশ করা হয় যে, শেষ পর্যন্ত তিনি কলমের খসখস শব্দ শুনতে পান।

তারপর এ বিশ্বের মহা গৌরব, চির আকাঙ্ক্ষিত মানব নাবী, দোজাহানের মহাসম্মানিত সম্রাট, তাজদারে মদীনা, নাবীকুল শিরোমণি, রহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন্নাবিয়ীন নীত হলেন অনাদি অনন্ত, অবিনশ্বর, অসীম শক্তি-সামর্থ্য ও হিকমতের মালিক আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে। পর্দার একপাশে চির বিশ্ব জাহানের চির আরাধ্য, চির উপাস্য, অদ্বিতীয় স্রষ্টা প্রতিপালক প্রভূ, অন্যপাশে তাঁর একান্ত অনুগ্রহভাজন সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও প্রিয়তম নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ), মধ্যখানে রয়েছে দু’ধনুকের জ্যার সমপরিমাণ ব্যবধান কিংবা তার চাইতেও কম। অনুষ্ঠিত হল স্রষ্টা ও সৃষ্টির অভূতপূর্ব সাক্ষাৎকার, অশ্রুত পূর্ব সম্মেলন। অত্যন্ত প্রতাপান্বিত স্রষ্টা প্রভূ এবং মনোনীত প্রিয়তম সৃষ্টির মধ্যে হল আল্লাহর বাণী বিনিময়। তোহফা স্বরূপ বরাদ্দ করা হল পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরজ সালাত।

এরপর শুরু হল নাবীজী (সাঃ)-এর মর্তলোকে প্রত্যাবর্তনের পালা। এক পর্যায়ে সাক্ষাৎ হল মুসা (আঃ)-এর সঙ্গে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কী কী নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাঁকে। উত্তরে নাবী কারীম (সাঃ) বললেন পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের কথা।

উত্তরে মুসা (আঃ) বললেন, ‘আপনার উম্মতের পক্ষে সম্ভব হবে না পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। আপনি ফিরে গিয়ে আপনার উম্মতের উপর আরোপিত এ গুরু দায়িত্ব হালকা করে নেয়ার জন্য আল্লাহর সমীপে আবেদন পেশ করুন।

এ কথা শ্রবণের পর জিবরাঈল (আঃ)-এর পরামর্শ গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। জিবরাঈল (আঃ) ইঙ্গিতে বুঝালেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে তা করতে পারেন। এরপর জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে মহাপরাক্রশালী আল্লাহ তা‘আলার দরবারে নিয়ে গেলেন, তিনি নিজ স্থানেই ছিলেন। কোন কোন বর্ণনায় সহীহুল বুখারীতে এ কথা আছে যে, পরম করুণাময় আল্লাহ তা‘আলা দশ ওয়াক্ত সালাত কমিয়ে দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে নীচে আনা হল।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মুসা (আঃ)-এর নিকট আগমন করে দশওয়াক্ত কমানোর কথা বললেন, তখন তিনি পুনরায় পরামর্শ দিলেন আল্লাহর সমীপে ফিরে গিয়ে এ গুরুভার আরও লাঘব করার জন্য আরও আবেদন পেশ করতে। শেষমেষ পাঁচওয়াক্ত সালাত নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত মুসা (আঃ) এবং আল্লাহ তা‘আলার দরবারে এ দু’মঞ্জিলের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যাতায়াত অব্যাহত থাকল। শেষ দফায় যখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দেয়া হল তখনো মুসা (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে পরামর্শ দিলেন পুনরায় আল্লাহ তা‘আলার দরবারে ফিরে গিয়ে আরও কিছুটা হালকা করে নেয়ার জন্য। প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘এ ব্যাপারটি নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে পুনরায় যেতে আমি খুবই লজ্জাবোধ করছি। অত্যন্ত সন্তুষ্টির সঙ্গে আমি দিন ও রাতের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিলাম।’ এ বলে তিনি সম্মুখের দিকে এগিয়ে চললেন। যখন তিনি বেশ কিছুটা দূরত্ব অতিক্রম করলেন তখন নিম্নোক্ত কথাগুলো তাঁর শ্রুতিগোচর হল।

‘‘আমি আমার বান্দাদের জন্য আপন ফরজ জারী করে দিলাম এবং বান্দাদের দায়িত্বভার কিছুটা হালকা করে দিলাম।[2]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপন প্রভূকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখেছেন কিনা সে ব্যাপারে ইবতুল কাইয়্যেম মতভেদ বর্ণনা করেছেন। এরপর ইবনে তাইমিয়ার এক সূক্ষ্ণ বর্ণনার আলোচনা করেছেন, যার মূল বক্তব্য হচ্ছে ‘আল্লাহকে চাক্ষুস দেখার কোন প্রমাণ নেই।’ কোন সাহাবীও এরকম কোন কথা বলেন নি। আর ইবনে আব্বাস থেকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখার এবং অন্তর্দৃষ্টিতে দেখার যে দুটি মত বর্ণিত হয়েছে এর মধ্যে প্রথতুটি দ্বিতীয়টির বিপরীত নয়।

এরপর ইবনুল কাইয়্যেম লিখেছেন, সূরাহ নাজমে আল্লাহ তা‘আলার যে ইরশাদ,

‏(‏ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰى‏)‏ ‏[‏النجم ‏: ‏8‏]‏

‘‘তারপর সে (নাবীর) নিকটবর্তী হল, তারপর আসল আরো নিকটে,’ (আন-নাজ্ম ৫৩ : ৮)

‘তৎপর সে নিকটে আসল এবং আরও নিকটে আসল।’ এটা ঐ নৈকট্য থেকে ভিন্ন যেটা মি’রাজের ঘটনায় ঘটেছিল। কেননা, সূরাহ নাজমে যে নৈকট্যের উল্লে­খ রয়েছে তাতে জিবরাঈল (আঃ)-এর নৈকট্যের কথা বলা হয়েছে। যেমনটি ‘আয়িশাহ সিদ্দীকা (রাঃ) এবং ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন এবং বর্ণনা ভঙ্গিতেও এটাই নির্দেশিত হচ্ছে। এর বিপরীত মি’রাজের হাদীসে যে নৈকট্য লাভের কথা বলা হয়েছে তাতে সর্বশক্তিমান প্রভূ আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের কথা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। সূরাহ নাজমে একথার কোন উল্লে­খ নেই। বরং তাতে বলা হয়েছে যে, রাসূল (সাঃ) তাঁকে দ্বিতীয়বার দেখেছিলেন সিদরাতুল মুনতাহার নিকট এবং তিনি ছিলেন জিবরাঈল (আঃ)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুবার তাঁকে তাঁর আসলরূপে দেখেছিলেন। একবার পৃথিবীতে এবং অন্যবার সিদরাতুল মুনতাহার নিকট।[3] এ সম্পর্কে সঠিক কী, সেটা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।

এ সময় পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বক্ষ বিদারণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল এবং এ সফরকালে তাঁকে কয়েকটি জিনিসও দেখানো হয়েছিল। তাঁর সম্মুখে দুধ ও মদ পেশ করা হয়েছিল। তিনি দুধ পছন্দ করেছিলেন। এতে তাঁকে বলা হয়েছিল ‘আপনাকে ফিতরাতের (ইসলামের) পথ দেখানো হয়েছে আপনার উম্মত পথ ভ্রষ্ট হয়ে যেতেন। তিনি জান্নাতে চারটি নদী দেখেছিলেন। এর মধ্যে দুটি প্রকাশ্যে এবং দুটি গোপন। প্রকাশ্য দুটি হচ্ছে নীল ও ফোরাত। সম্ভবতঃ এর তাৎপর্য এই ছিল যে, তাঁর রেসালাত নীল ও ফোরাত নদের শস্য শ্যামল এলাকায় ইসলামের বিস্তৃতি ঘটাবে এবং এখানকার মানুষ বংশপরম্পরা সূত্রে মুসলিম হবে। ব্যাপারটি এ নয় যে, এ দু’পানির উৎস জান্নাত থেকে উৎসারিত হচ্ছে। অবশ্য আল্লাহই সব কিছু ভাল জানেন। তিনি জাহান্নামের মালিক এবং দারোগাকেও দেখেছেন। তাঁরা হাসছিলেন না এবং তাঁদের মুখমন্ডলে আনন্দ এবং প্রফুল্লতাও ছিল না। তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছিলেন।

তিনি তাদেরকেও দেখেছিলেন যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করে চলেছে। তাদের ঠোঁটের আকার আকৃতি উটের ঠোঁটের মতো। তারা পাথরের টুকরোর মতো আগুনের ফুলকি মুখের মধ্যে পুরছিল এবং সেগুলো গুহ্যদ্বার দিয়ে নির্গত হয়ে আসছিল।

তিনি সুদখোরদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাদের পেটগুলো এতই প্রকান্ড আকারের ছিল যে, পেটের ভার বহন করা ছিল তাদের জন্য খুবই কষ্টকর ব্যাপার এবং পেটের ভারে এদিক ওদিক নড়াচড়া তাদের পক্ষে ক্রমেই সম্ভব হচ্ছিল না। অধিকন্তু, ফেরাউনের বংশধরগণকে যখন অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের জন্য পেশ করা হচ্ছিল তখন তারা এদেরকে পদদলিত করে অতিক্রম করছিল।

এক পর্যায়ে তিনি ব্যভিচারীদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাদের সম্মুখে টাটকা ও মোটা গোস্ত ছিল এবং তার পাশে দুঃসহ দুর্গন্ধযুক্ত পচা মাংস ছিল। এরা টাটকা ও মোটা গোস্ত বাদ দিয়ে পচা গোস্ত খাচ্ছিল।

তিনি সেই সকল স্ত্রীলোকদেরকেও দেখেছিলেন যারা স্বামীদেরকে অন্যের ঔরষ জাত সন্তান প্রদান করত। (অর্থাৎ তারা ছিল ব্যভিচারিণী, ব্যভিচারের কারণে তারা পর পুরুষের বীর্যে গর্ভ ধারণ করত কিন্তু স্বামীর অজানতে সে সন্তান স্বামীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিত)। তিনি দেখলেন তাদের বক্ষস্থল বড় বড় বড়শী দ্বারা বিদ্ধ করে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

যাতায়াতের সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরববাসীদের এক বণিক দলকেও দেখেছিলেন এবং তাদের এক পলাতক উট দেখিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাদের পানিও পান করেছিলেন। ঐ পানি একটি পাত্রে ঢাকা ছিল। এ সময়ে বণিকেরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। পানি পান করার পর পুনরায় তিনি পাত্রটিকে ঢেকে রেখেছিলেন। মি’রাজের রাত্রিশেষে সকাল বেলা এ ঘটনাটি তাঁর (সাঃ) দাবীর সত্যতা প্রমাণার্থে দলিল হিসেবে প্রতিপন্ন হয়।[4]

ইবনুল কাইয়্যেম বলেছেন, ‘যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সকালবেলায়  স্বগোত্রীয় লোকজনদের নিকট আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রদর্শিত নিদর্শনসমূহের কথা বর্ণনা করলেন, তখন তারা এ সব কিছুকে মিথ্যা এবং বাজে গল্প বলে উড়িয়ে দিল এবং তাঁর প্রতি যুলম নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। শুধু তাই নয়, তারা তাঁকে নানাভাবে পরীক্ষা করতে থাকে এবং প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাস সম্পর্কে তাঁকে নানা প্রশ্ন করতে থাকে এবং উত্তরের জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে। এমন অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দৃষ্টি সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি সেই চিত্র প্রত্যক্ষ করে তাদের প্রশেণর জবাব দিতে থাকেন। এর ফলে নির্দ্বিধায় তাদের সকল প্রশ্নের জবাব দেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়। তারা তাঁর কোন কথার প্রতিবাদ করতে সক্ষম হয়নি।

অধিকন্তু যাতায়াতের সময় তাদের যে কাফেলা তিনি দেখেছিলেন তার আগমনের সময় এবং বিবরণ ও তিনি বর্ণনা করে শোনালেন। এমন কি কাফেলার অগ্রগামী উটের চিহ্নও তিনি বলে দিলেন। তাছাড়া কাফেলার যে যা কিছু বলেছিল সবকিছুই সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে গেল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কুরাইশ মুশরিকগণ এ সব কিছুকেই সত্য বলে মেনে নিতে চাইল না।[5]

পক্ষান্তরে আবূ বাকর (রাঃ) এ সব কথা শোনামাত্র একে সত্য বলে মেনে নেন এবং এর সত্যতার ঘোষণা দিতে থাকেন। এ সময়ে আবূ বাকর (রাঃ) কে সিদ্দীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কারণ, সকলে যখন এ ঘটনাকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছিল তখন তিনি একে সর্বান্তঃকরণে সত্য বলে মেনে নিয়েছিলেন।[6]

মি’রাজের প্রসঙ্গ এবং উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে সব চাইতে সংক্ষিপ্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ কথা যেটা বলা হয়েছে সেটা হচ্ছে,

‏(‏لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا‏)‏ ‏[‏الإسراء‏:‏ 1‏]‏

‘‘এ জন্য যে, আমি (আল্লাহ তা‘আলা) তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাব।’ (আল-ইসরা ১৭ : ১)

নাবী (আঃ)-দের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার এটাই নীতি। সূরাহ আনআমে বলেছেন, ‏

(‏وَكَذٰلِكَ نُرِيْ إِبْرَاهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَلِيَكُوْنَ مِنَ الْمُوْقِنِيْنَ‏)‏ ‏[‏الأنعام‏:‏75‏]

‘‘ এভাবে আমি ইবরাহীমকে আকাশ ও পৃথিবী রাজ্যের ব্যবস্থাপনা দেখিয়েছি যাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।’ (আল-আন‘আম ৬ : ৭৫)

তারপর আল্লাহ মূসাকে বললেন,

‏(‏لِنُرِيَكَ مِنْ آيَاتِنَا الْكُبْرَى‏)‏ ‏[‏طه‏:‏23‏]‏

‘যাতে আমি তোমাকে আমার বড় বড় নিদর্শনগুলোর কিছু দেখাতে পারি।’ (ত্ব-হা ২০ : ২৩)

ফলে যখন আম্বিয়ায়ে কিরামের জ্ঞান এভাবে প্রত্যক্ষদর্শিতার সনদ প্রাপ্ত হয়ে যায় তখন তাঁদের আয়নুল ইয়াকীনের (স্বচক্ষে দর্শনের) ঐ পর্যায় হাসেল হয়ে যায়। যার সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব নয়। যেমন শোনা কি দেখার মতো হয়। আর এই কারণেই নাবীগণ (আঃ) আল্লাহর পথে এমন সব দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারেন অন্য কেউ তা পারেন না। একারণে ঐ শক্তির পক্ষ থেকে আসা কোন প্রকার কঠোরতা কিংবা দুঃখ কষ্টকে তাঁরা দুঃখ কষ্ট বলে মনেই করতেন না।

এ মি’রাজের ঘটনার অন্তরালে যে সকল বিজ্ঞানময় এবং রহস্যজনক ব্যাপার রয়েছে তার আলোচনার স্থান হচ্ছে শরীয়ত দর্শনের পুস্তকাবলী। কিন্তু এমন কিছু তত্ত্ব রয়েছে যার দ্বারা এ বরকতময় সফরের স্রোতস্বিনী থেকে প্রবাহিত হয়ে নাবী (সাঃ)-এর জীবন উদ্যান অভিমুখে প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে সে সব সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল,

পাঠকেরা দেখতে পায় যে, আল্লাহ তা‘আলা সূরাহ বণী ইসরাঈলে রাত্রি ভ্রমণের ঘটনা কেবলমাত্র একটি আয়াতে বর্ণনা করে কথার মোড় ইহুদীদের অন্যায় ও পাপকার্যের বর্ণনার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপর তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে যে, এ কুরআন ঐ পথের সন্ধান দেয় যে পথ হচ্ছে সব চাইতে সোজা-সরল ও শুদ্ধ। কুরআন পাঠকেরা হয়তো সন্দেহ করতে পারে যে, কথা দুটির মধ্যে কোন মিল নেই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়, বরং আল্লাহ তা‘আলা এ বর্ণনাভঙ্গি দ্বারা ঐ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, ইহুদীগণকে মানুষের নেতৃত্ব দেয়া থেকে বরখাস্ত করা হবে। কারণ তারা এমন সব অন্যায় করেছে যে, ঐ সকল কর্ম করার পর তাদেরকে ঐ পদে আর অধিষ্ঠিত রাখা সঙ্গত নয়। কাজেই এ পদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রদান করা হবে এবং ইবরাহীমী দাওয়াতের দুটি কেন্দ্রকেই তাঁর নেতৃত্বাধীনে স্থাপন করা হবে। অন্য কথায় বলা যায় যে, এখন এমন এক অবস্থার সূত্রপাত হয়েছে যার ফলে আত্মিক নেতৃত্বের প্রসঙ্গটি এক সম্প্রদায়ের নিকট হতে অন্য সম্প্রদায়ের নিকট হস্তান্তর করা দরকার। অর্থাৎ এমন এক সম্প্রদায় যাদের ইতিহাস বিশ্বাস ঘাতকতা, খেয়ানত, আসাধূতা, অন্যায়, অত্যাচার ও অপকর্মে ভরপুর তাদের হাত থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে অন্য এক উম্মত বা সম্প্রদায়কে দায়িত্বভার দেয়া দরকার যাঁরা প্রবাহিত হবেন কল্যাণ ও পুণ্যের প্রস্রবন হয়ে এবং যাঁদের নাবী (সাঃ) সর্বাধিক হেদায়েত প্রাপ্ত, সঠিক পথ প্রদর্শক ও আল্লাহর বাণী কুরআনের দ্বারা লাভবান হবেন।

কিন্তু যখন এ উম্মতের রাসূল (সাঃ) মক্কার পর্বত শ্রেণীতে মানুষের মাঝে ঠক্কর খেয়ে বেড়াচ্ছেন তখন এ প্রত্যাবর্তন কিভাবে সম্ভব হতে পারে? এটা একটা সে সময়ের প্রশ্নমাত্র, যে সময় এক অন্য রহস্যের আবরণ উন্মোচিত হচ্ছিল। আর সেই রহস্যটি ছিল, ইসলামী দাওয়াতের একটি পর্যায় শেষ যার ধারা থেকে কিছুটা ভিন্ন। এ জন্য আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কোন আয়াতে অংশীবাদীদেরকে খোলাখুলি সতর্ক করে ধমক দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

‏(وَإِذَا أَرَدْنَا أَن نُّهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيْهَا فَفَسَقُوْا فِيْهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيْرًا وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنَ الْقُرُوْنِ مِن بَعْدِ نُوْحٍ وَكَفَى بِرَبِّكَ بِذُنُوْبِ عِبَادِهِ خَبِيْرًَا بَصِيْرًا‏)‏ ‏[‏الإسراء‏:‏16، 17‏]

‘‘আমি যখন কোন জনবসতিকে ধ্বংস করতে চাই তখন তাদের সচ্ছল ব্যক্তিদেরকে আদেশ করি (আমার আদেশ মেনে চলার জন্য)। কিন্তু তারা অবাধ্যতা করতে থাকে। তখন সে জনবসতির প্রতি আমার ‘আযাবের ফায়সালা সাব্যস্ত হয়ে যায়। তখন আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে দেই। ১৭. নূহের পর বহু বংশধারাকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, বান্দাহ্দের পাপকাজের খবর রাখা আর লক্ষ্য রাখার জন্য তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। ’ [আল-ইসরা (১৭) : ১৬-১৭]

পক্ষান্তরে এ সকল আয়াতের পাশে পাশে এমন সব আয়াতও রয়েছে যার মাধ্যমে মুসলিমগণকে তাহযীব, তমদ্দুনের এমন সব নিয়ম-কানুন এবং প্রতিরক্ষার সাধারণ নিয়মাবলী শিক্ষা দেয়া হয়েছে যার উপর ভিত্তি করে নবাগত ইসলামী জিন্দেগীর ভিত্তি নির্মিত, নিয়ন্ত্রিত ও সুদৃঢ় হতে পারে। মনে হয় মুসলিমগণ এখন এমন এক সরজমিনের উপর নিজ ঠিকানা বানিয়েছেন সেখানে সকল দিক দিয়ে নিজেদের সমস্যাবলী আপন হাতের মুঠোর মধ্যে রয়েছে এবং সমাজ জীবন যাত্রার ক্ষেত্রে তাঁরা এমন এক ঐকমত্য গঠনে সক্ষম হয়েছেন যার উপর ভিত্তি করে সমাজের যাঁতা ঘুরছে। অধিকন্তু, এ আয়াতে আরও ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অচিরেই এমন এক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করবেন, যা সম্পূর্ণ নিরাপদ হবে এবং তাঁর প্রচারিত ধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।

এই নৈশ ভ্রমণ ও মি’রাজ বরকতময় ঘটনার তলদেশে হিকমত ও রহস্যসমূহের মধ্যে এমন একটি হিকমত যা আমাদের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এ জন্য বর্ণনা উপযোগী মনে করে আমি এখানে তা লিপিবদ্ধ করলাম। এরকম দুটি বিরাট হিকমতের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপের পর আমি এ ব্যাপারে মতস্থির করেছি যে, এ নৈশ ভ্রমণের ঘটনা ‘আক্বাবাহর প্রথম বাইআতের ঘটনার কিছু পূর্বের অথবা দু’বাইআতের মধ্যবর্তী সময়ের ঘটনা হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা সব চাইতে ভাল জানেন।

✍ আব্দুল্লাহ আল-ফয়সাল

সূত্রসমূহঃ
[1] বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে দেখুন যা’দুল মা’আদ ২য় খন্ড ৪৯ পৃঃ মুকতাসারুস সীরাহ শাইখ আবদুল্লাহ পৃঃ ১৪৮-১৪৯। রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ৭৬ পৃঃ।
[2] যা’দুল মা’আদ ২য় খন্ড ৪৭-৪৮ পৃঃ।
[3] যা’দুল মায়দ ২য় খন্ড ৪৭-৪৮ পৃঃ, সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০, ৪৫৫, ৪৫৬, ৪৭০, ৪৮১, ৫৪৮, ৫৫০, ২য় খন্ড ৬৮৪ মসলিম ১ম খন্ড ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৬।
[4] পূর্ববর্তী উদ্ধৃতি, এ ছাড়া ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৩৯৭, ৪০২ ও ৪০৬ পৃঃ। তফসীরের কিতাব সমূহের সূরাহ ইসরার তফসীর দ্রষ্টব্য।
[5] যা’দুল মাদ ১/৪৮ পৃঃ, এটা ছাড়া সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬৮৪, সহীহুল মুসলিম ১ম খন্ড ৯৬ পৃঃ, ইবনে হিশাম ১/৪০২-৪০৩ পৃঃ।
[6] ইবনে হিশাম ১/৩৯৯ পৃঃ।।

Sunday, March 22, 2020

উত্তর-দক্ষিণ মেরুতে কিভাবে ছিয়াম রাখবে যেখানে ৬ মাস দিন ও রাত থাকে?

নাস্তিকই প্রশ্ন:

কুরআন বলে যে একজন মুসলিমকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালন করতে হবে (Quran 2:187)! আবার প্রার্থনার ব্যাপারটাও সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সাথে সম্পর্কিত (Quran 17:78)! কিন্তু সমগ্র মানুষের এই জীবন বিধানে Eskimo-দের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই! এটা কি কুরআন রচয়িতার অজ্ঞতা নয়?



একই জাতীয় প্রশ্ন, মেরুর বাসিন্দারা নামায পড়বে কিভাবে যেহেতু সেখানে ৬ মাস পর পর দিন-রাতের পরিবর্তন হয়?



উত্তর:

নাস্তিকদের করা খুবই বিখ্যাত প্রশ্নগুলোর মধ্যে এটি একটি। এই প্রশ্নের উদ্ভাবক Wikiislam খুব চমৎকারভাবে (!) ‘Ramadan Pole Paradox’ শিরোনামের লেখা দিয়ে বহু মানুষকে অত্যন্ত সফলতার সাথে বিভ্রান্ত করেছে। আজকে উপরোক্ত প্রশ্নের সাথে তাদের এই paradox-এরও সমাধান করবো ইনশাল্লাহ। তাহলে চলুন একেক করে তাদের দাবিগুলো খণ্ডন করি।



দাবি ১:

মুসলিমরা রোযা রাখে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, অথচ মেরুতে ৬ মাস পর পর দিন-রাত্রির পরিবর্তন হয়। তাই মেরুতে রোযা রাখতে গেলে তো মুসলিমরা না খেয়েই মারা যাবে!



খণ্ডন:

গোটা পৃথিবীতে মানুষ আছে প্রায় ৭৫০ কোটি।[1] সেখানে উত্তর আর দক্ষিণ মেরু মিলিয়ে মানুষের সংখ্যা কত? সংখ্যাটা পাঁচ অঙ্ক পার হয় না। উত্তর মেরুতে প্রকৃত পক্ষে কোন মানুষই বাস করে না। না, ভাই! Eskimo বা Inuit-রা উত্তর মেরুতে না, উত্তর মেরুর কাছাকাছি বাস করে।[2] আর দক্ষিণ মেরুতেও কোন স্থায়ী বাসিন্দা নেই। এখানে দুই ধরণের মানুষ আসে- বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে এবং টুরিস্ট। গ্রীষ্মকালে জনসংখ্যা থাকে ৪০০০, শীতকালে যেটা এসে দাঁড়ায় মাত্র ১০০০-এ।[3] এখন আপনার কি মনে হয় এত বিশাল জনসংখ্যার হিসেবে তাদের কথা আলাদাভাবে বলা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ? এবার দাজ্জাল সংক্রান্ত একটা বড় হাদিসের সামান্য অংশ উল্লেখ করছি।



“… আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে তাতে একদিনের নামায পড়লেই কি তা আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা সে দিনের সঠিক অনুমান করে নিবে এবং তদনুযায়ী নামায পড়বে (দিন রাতের ২৪ ঘণ্টা হিসেবে)।’”[4]



ইসলামি স্কলারগণ এই হাদিসের উপর ভিত্তি দুইটি ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। প্রথমত, নামাজের ব্যাপারে- এখানে স্পষ্টভাবেই নির্দেশ দেয়া আছে মেরুতে কিভাবে নামায পড়তে হবে। দ্বিতীয়ত, রোজার ব্যাপারে- যেহেতু, নামাযের মতো রোযাও সূর্য উদয়-অস্তের সাথে সম্পর্কিত, তাই এই হাদিসে নিশ্চিতভাবেই আমাদের জন্য পথনির্দেশ রয়েছে।



যদি কোন মুসলিম মেরুতে থাকা অবস্থায় রমযান পায়, তাহলে সে নিকটবর্তী কোন দেশ, যে দেশে দিন এবং রাতের পার্থক্য করা যায়- সেই দেশের সময়সূচী অনুসরণ করে রোযা রাখবে। একইকথা, নামাযের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।[5] [6]



তাই মুসলিমরা মেরুতে রোযা রাখতে পারবে না, এই কুযুক্তি ধোপে টিকলো না।



দাবি ২:

এখানে তারা নরওয়ে, আলাস্কা এবং আইসল্যান্ডের রোযার সময়কাল হিসাব করে দেখিয়েছে যে সেখানে একজন মুসলিমকে প্রায় সারাদিনই রোযা রাখতে হয়!



খণ্ডন:

২০১৭ সালে সবচেয়ে দীর্ঘ রোযার সময়কাল হল ২১ ঘণ্টা, গ্রিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ডে।[7] অস্বীকার করছি না যে, এত লম্বা সময় ধরে রোযা রাখা আসলেই কষ্টসাধ্য ব্যাপার, কিন্তু অসম্ভব না। ফিনল্যান্ডের এক মুসলিমের সাক্ষাৎকার দেখুন- তারা কিন্তু ভালোভাবেই পালন করে আসছে।[8]



সাওমের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন। আল্লাহর কথা মনে রেখে নিজেকে অন্যায় থেকে দূরে রাখা। আল্লাহ্‌ বলেছেন-

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।”[9]



তাই কে কত ঘণ্টা রোযা রাখলো, সেটা মুখ্য বিষয় না। যে বেশি সময় ধরে সাওম পালন করছে আল্লাহ্ তার তাকওয়া দেখবেন। এটা তার জন্য একটা পরীক্ষা। আর কারও পক্ষে যদি এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী রমযান মাসে সাওম পালন করা কষ্টকর হয়, তাহলে সে অন্য সময় কাযা আদায় করে নিবে। এই ‘অন্য সময়’ হতে পারে বছরের সবথেকে ছোট দিনগুলো- তাতেও কোন সমস্যা নেই।[10] আল্লাহ্ তো সে ঘোষণাও কুরআনেই দিয়ে দেখেছেন- “রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে — তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে।”[11]



“…আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, তিনি তোমাদের জন্য কঠিনটা চান না।…”[12]



দাবি ৩:

তারপরেও প্রশ্ন থেকে যায়। কেন একজনকে অন্য দেশের সময়সূচী অনুসরণ করতে হবে? এটা তো কোন যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না!



খণ্ডন:

এবার আমাদের নাস্তিক-মিশনারি বন্ধুগণদের কাছে ইসলামী সমস্যার সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হতে হবে!! যে সমাধান আমাদের রাসূল (সা)-এর হাদিসের আলোকে করা হয়েছে সেখানে তাদের আপত্তি! আচ্ছা ভাই, একটা দেশ কি সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ? তার যে সমস্ত জিনিসের ঘাটতি আছে, সে অন্য দেশ থেকে সেটা আমদানি করে পুষায়। একইভাবে মেরু অঞ্চলে সময়ের কিছুটা অসুবিধা, তাই নিকটস্থ দেশের সাথে সামঞ্জস্য করে নেয়া।



মেরুর বাসিন্দাদের ব্যাপারে নির্দেশনা না দেয়া থেকে কুরআন পৃথিবীকে সমতল বলছে এই সিদ্ধান্তটা নিতান্তই হাস্যকর। আমি যদি কোনো বক্তৃতায় বলি, ‘আমরা তো সবাই কথা বলতে পারি, নাকি?’ কথাটা কিন্তু ভুল হবে না। কারণ কথাটা generalized-ভাবে বলা এবং অধিকাংশ মানুষই কথা বলতে পারে সেই প্রেক্ষিতে উল্লেখ করা। একইভাবে আল্লাহ্‌ শুধু সাওম পালনের কিছু নীতিমালার কথা বলেছেন, কোনো জটিলতা করেন নি। কুরআন যে পৃথিবীকে সমতল বলছে না এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন- https://goo.gl/WuKkoI



অতএব, মেরু অঞ্চলে মুসলিমদের সালাত এবং সাওম পালনের সময়সূচী নিয়ে কোন প্রকার বিভ্রান্তি নেই। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে সঠিক পথে থাকার তাওফিক দান করুক।





তথ্যসূত্র:

[1]. http://www.worldometers.info/world-population/

[2]. https://www.nationalgeographic.org/encyclopedia/north-pole/

[3]. http://www.coolantarctica.com/Antarctica fact file/science/can_you_live_in_antarctica.php

[4]. জামে’ তিরমিজি ২২৪০, সুনানে ইবেন মাজাহ ৪০৭৫, হাদিসে কুদসি ১৬২

[5]. https://islamqa.info/en/5842

[6]. https://islamqa.info/en/106527

[7]. https://www.y-oman.com/2017/05/fyi-top-5-longest-ramadan-fasting-times-world-2017/

[8]. http://www.independent.co.uk/news/world/europe/ramadan-2017-how-muslims-fast-in-countries-where-the-sun-never-sets-a7070871.html

[9]. সূরা আল-বাকারাহ ২: ১৮৩

[10]. ফাসিঃ মুসনিদ ৮১পৃঃ

[11]. সূরা আল-বাকারাহ ২: ১৮৪

[12]. সূরা আল-বাকারাহ ২: ১৮৫

রসুল ছঃ মোট ১৯ টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন

🌹 "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম মোট উনিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।"
.

وحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، سَمِعَهُ مِنْهُ، «أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزَا تِسْعَ عَشْرَةَ غَزْوَةً، وَحَجَّ بَعْدَ مَا هَاجَرَ حَجَّةً لَمْ يَحُجَّ غَيْرَهَا، حَجَّةَ الْوَدَاعِ»

যায়দ ইবনু আরকাম (রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনিশটি যুদ্ধ করেছেন। হিজরাতের পর একবার মাত্র হাজ্জ করেছিলেন, যেটি ছাড়া আর কোন হাজ্জ করেননি- তা হল বিদায় হাজ্জ।”

[দেখুন: সহিহ মুসলিম,হা/৪৫৮৭(১৪৪/১২৫৪)]
.

وحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، ح وحَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْجَرْمِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو تُمَيْلَةَ، قَالَا جَمِيعًا: حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ وَاقِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: «غَزَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعَ عَشْرَةَ غَزْوَةً، قَاتَلَ فِي ثَمَانٍ مِنْهُنَّ»

বুরাইদাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনিশটি যুদ্ধে শরীক হন। তন্মধ্যে আটটিতে তিনি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন।”

[সহিহ মুসলিম,হা/৪৫৮৯(১৪৬/১৮১৪)]
....

জানাযার ছলাতের নিয়ম

🌹 জানাযার সলাত আদায় করার নিয়ম:

১.উদ্বু করে পবিত্র হয়ে নিন। (মুসলিম,হা/৬৩৫; বুখারী,হা/৬২৫১)

২.ক্বিবলামুখী হোন।

৩.তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করুন।
[কিবারে তাবে'ঈ সাইয়িদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, জানাযার সলাতে সুন্নাত হল 'তাকবীর বলা' (দেখুনঃ মুনতাক্বা ইবনুল জারূদ,হা/৫৪০)]
তাকবীর পাঠ করার সহিত দুই হাত উত্তোলন করুন।
[ইবনু 'উমার রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু জানাযার সলাতে প্রত্যেক তাকবীরে হাত উত্তোলন করতেন. (দেখুন: মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ,হা/১১৩৮০)]

৪.বাম হাতের যিরা' এর উপর ডান হাত রেখে তা বুকে স্থাপন করুন।
(সহিহ বুখারী,হা/৭৪০; আত তাহক্বীক্ব ফি মাসায়িল আল খিলাফ লি ইবনুল জাওযী,হা/৪৩৪,১/৩৩৮)

৫.আ'উযুবিল্লাহ,বিসমিল্লাহ পাঠ করুন।
(সুনান আবূ দাউদ,হা/৭৭৫; সুনান নাসাঈ,হা/৯০৬]

৬.সূরা ফাতিহা পাঠ করুন।
(সহিহ বুখারী,হা/১৩৩৫; মুসান্নাফ ইবনু 'আব্দুর রাযযাক্ব,হা/৬৪২৮)

এবং পাঠ শেষে 'আমিন' বলুন।
(সুনান নাসাঈ,হা/৯০৬)

৭.তারপর চাইলে যেকোন সূরা পড়তে পারেন.
(সুনান নাসাঈ,হা/১৯৮৯)

৮.তাকবীর পাঠ করুন এবং দুই হাত উত্তোলন করুন।
(বুখারী,হা/১৩৩৪; মুসলিম,হা/৯৫২; মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ,হা/১১৩৮০)

৯.তারপর দুরূদ পাঠ করুন।

১০.এরপর তাকবীর পাঠ করুন এবং দুই হাত উত্তোলন করুন।
(বুখারী,হা/১৩৩৪; মুসলিম,হা/৯৫২; মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ,হা/১১৩৮০)

১১.মৃত ব্যক্তির জন্য দু'আ পাঠ করুন।
(সুনান আবূ দাউদ,হা/৩১৯৯,সুনান ইবনু মাজাহ,হা/১৪৯৭; মুসান্নাফ ইবনু 'আব্দুর রাযযাক্ব,হা/৬৪২৮)

١- ”اللهم اغفر لحينا وميتنا وشاهدنا وغائبنا وصغيرنا وكبيرنا وذكرنا وأنثانا. اللهم من أحييته منا فأحيه على الإسلام ومن توفيته منا فتوفه على الإيمان“

(জামি' আত তিরমিযী,হা/১০২৪)

٢- «اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ - أَوْ مِنْ عَذَابِ النَّارِ»
(সহিহ মুসলিম,হা/৯৬৩)

٣- "اللهم إن فلانَ بن فلانِفي ذمتِك وحَبْلِ جِوارك فقِهِ من فتنةِ القبرِ وعذابِ النار، وأنت أهلُ الوفاءِ والحمدِ، اللهم فاغفرْ له وارحمْهُ إنك أنت الغفورُ الرحيمُ"
(সুনান আবূ দাউদ,হা/৩২০২)

٤- «اللَّهُمَّ إِنَّهُ عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ كَانَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ. وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ. وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ. اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُحْسِنًا، فَزِدْ فِي إِحْسَانِهِ. وَإِنْ كَانَ مُسِيئًا، فَتَجَاوَزْ عَنْ سَيِّئَاتِهِ. اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلَا تَفْتِنَّا بَعْدَهُ»

(মুয়াত্ত্বা মালিক,১/২২৮; ফুয়াদ 'আব্দুল বাক্বীর তাহক্বীক্বকৃত)

٥- «اللَّهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ»
(মুয়াত্ত্বা মালিক,১/২২৮; ফুয়াদ 'আব্দুল বাক্বীর তাহক্বীক্বকৃত)

٦- "اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِهَذِهِ النَّفْسِ الْحَنِيفِيَّةِ الْمُسْلِمَةِ، وَاجْعَلْهَا مِنَ الَّذِينَ تَابُوا، وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ، وَقِهَا عَذَابَ الْجَحِيمِ"

(মুসান্নাফ আবী শাইবাহ,হা/১১৩৬৬)

১২.তাকবীর পাঠ করুন।
(বুখারী,হা/১৩৩৪; মুসলিম,হা/৯৫২)

১৩.সবশেষে শুধু ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে সলাত শেষ করুন।
(মুসান্নাফ ইবনু 'আব্দুর রাযযাক্ব,হা/৬৪২৮; মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ,হা/১১৪৯১)

[শাইখ যুবাইর আলী যাঈ এর 'মুখতাসার সলাতুন নাবী (ইংরেজি ভার্শন) বই থেকে, পেজ:৩৯-৪৫]
......

রজব মাসের ২৭ তারিখের 'ইবাদাত ১০০ বছরের 'ইবাদাতের সমান" মর্মে হাদিসটি জাল পর্যায়ের

🔘 হাদিস নং:৩৬
.

🔲 "রজব মাসের ২৭ তারিখের 'ইবাদাত  ১০০ বছরের 'ইবাদাতের সমান" মর্মে হাদিসটি জাল পর্যায়ের"🔲

🍁সানাদসহ বর্ণনা:

أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، حَدَّثَنِي أَبُو نَصْرٍ رَشِيقُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الرُّومِيُّ إِمْلَاءً مِنْ كِتَابِهِ بالطَّابِرانِ، أَخْبَرَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ الْأَنْصَارِيُّ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ الْهَيَّاجِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ سُلَيْمَانَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "فِي رَجَبٍ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ مَنْ صَامَ ذَلِكَ الْيَوْمَ، وَقَامَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ كَانَ كَمَنْ صَامَ مِنَ الدَّهْرِ مِائَةَ سَنَةٍ، وَقَامَ مِائَةَ سَنَةٍ وَهُوَ ثَلَاثٌ بَقَيْنَ مِنْ رَجَبٍ، وَفِيهِ بَعَثَ اللهُ مُحَمَّدًا "
 " وَرُوِيَ ذَلِكَ بِإِسْنَادٍ آخَرَ أَضْعَفُ مِنْ هَذَا كَمَا "

অর্থাৎ, "রজাব মাসে এমন একটি দিবস এবং একটি রজনী রয়েছে,যদি কোন ব্যক্তি ঐ রজনীতে ক্বিয়াম করে,তাহলে সে যেন ১০০ বছর ক্বিয়াম করল এবং ঐ দিবসে সিয়াম পালন করে,তাহলে সে যেন ১০০ বছর সিয়াম রাখল। সেই দিবসটি হচ্ছে রজাব মাসের ২৭ তারিখ (এই তারিখ থেকে রজাব মাস শেষ হতে আর ৩ দিবস বাকি) এবং এর মাঝে আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদকে প্রেরণ  করেছেন।"

(শু'আবুল ইমান লিল বাইহাক্বী,হা/৩৫৩০)

🍀তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল।

🎓ইমাম নুরুদ্দীন ইবনে 'ইরাক্ব আল কানানী (মৃ:৯৬৩ হিঃ) তার 'تنزيه الشريعة المرفوعة عن الأخبار الشنيعة الموضوعة (জাল হাদিসের সংকলন সংক্রান্ত)' গ্রন্থে এই বর্ণনাটি দাখিল করেছেন।

[দেখুন: তানযীয়াতুল শারী'য়াহ আল মারফু'আহ 'আনীল আখবারীল শানী'য়াহ আল মাওদ্বু'আহ, হা/৪১, ২/১৬১]

🎓 'আলিম বিল হাদিস ওয়া রিজীলুহু 'মুহাম্মদ ত্বহীর ইবনে 'আলী আল ফাত্তানী' (মৃ:৯৮৬ হিঃ) তার 'تذكرة الموضوعات (জাল হাদিসের সংকলন সংক্রান্ত)' নামক গ্রন্থে এই বর্ণনাটি পেশ করে বলেন, "فِيهِ هياج تَرَكُوهُ (এই বর্ণনার সানাদে হাইয়্যাজ নামক রাবী রয়েছে,সে বর্জিত রাবী)"

[দেখুন: তাজকীরাতুল মাওদ্বু'আহ,১/১১৬]

🎓 ইমাম শাওকানী (মৃ:১২৫০ হিঃ) তার 'الفوائد المجموعة في الأحاديث الموضوعة (জাল হাদিসের সংকলন সংক্রান্ত)' গ্রন্থে এই বর্ণনাটি পেশ করে বলেন, "فِي إسناده: هياج، تركوه (এই বর্ণনার সানাদে হাইয়্যাজ নামক রাবী রয়েছে,সে বর্জিত রাবী)"

[দেখুন: আল ফাওয়ায়ীদুল মাজমু'আহ ফিল আহাদীসুল মাওদ্বু'আহ,১/৪৩৯]

🎓'আলিম বিল হাদীস,হানাফী বিদ্বান 'মুহাম্মাদ 'আব্দুল হাই লাকনাভী আল হিন্দী' (মৃ:১৩০৪ হিঃ) তার 'الآثار المرفوعة في الأخبار الموضوعة (জাল হাদিস সংকলন সংক্রান্ত)' গ্রন্থে এই বর্ণনাটি পেশ করে বলেন,
”وَأَخْرَجَهُ الْحَافِظ ابْن حجر الْعَسْقَلَانِي فِي كِتَابِهِ تَبْيِينِ الْعَجَبِ مِمَّا وَرَدَ فِي فَضْلِ رَجَبٍ، وَأَدْخَلَهُ فِي الْمَوْضُوعَاتِ،
হাফিয ইবনু হাজার আল 'আসক্বালানী তার 'তাবয়ীন আল 'আজাব মিম্মা ওয়া রদা ফি ফাদ্বলুল রজাব' নামক গ্রন্থে এই বর্ণনাটি জাল বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন।”

[দেখুন: আল আসারুল মারফু'আহ ফিল আখবার আল মাওদ্বু'আহ,১/৫৮-৫৯]
.

🍃সানাদের বিশ্লেষণ:

১.সানাদের রাবী 'خَالِدُ بْنُ الْهَيَّاجِ' এর পিতা 'هياج بن بسطام التيمي البرجمي' মুহাদ্দিসগণের ঐক্যমতে মাতরূক (বর্জিত) রাবী। তার হাদিস মুহাদ্দিসগণ বর্জন করেছেন। তিনি জাল হাদিস বর্ণনা করতেন।

[দেখুন: তাহযীবুত তাহযীব লিল হাফিয,১১/৮৮-৮৯]
...

💠সুতরাং, "রজব মাসের ২৭ তারিখের 'ইবাদাত ১০০ বছরের 'ইবাদাতের সমান" মর্মে হাদিসটি জাল পর্যায়ের।" পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগণ তাদের জাল হাদিস সংকলন সংক্রান্ত কিতাবে এই বর্ণনাকে পেশ করেছেন। তাই,এই হাদিস প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 💠

© Sysh sharar

লাইলাতুল মিরাজ কি?

** #লাইলাতুল_মিরাজ_কি ??
** #কোনদিন??
**#এ_দিনের_বিশেষ_কোন_আমল_রয়েছে_কি ??

#যে রাতে মহান আল্লহ পাকের ডাকে সাড়া দিয়ে রসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) প্রথমে  বুরাক ও পরে  রফরফ নামক বাহনের মাধ্যমে সাত আসমানের উপর পরিভ্রমণ করে মহান আল্লহর সাক্ষাত পেয়েছিলেন,, আখিরাতের অনেক অজানা জিনিস স্বচক্ষে দেখেছিলেন , সেই রাত-ই লাইলাতুল মিরাজ নামে পরিচিত। #লাইলাতুল মিরাজ নিঃসন্দেহে সত্য তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই . . 

#মি’রাজ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ রসূলে কারীম (ছঃ) হাতীমে কা’বা অথবা হাজরে আসওয়াদ বা কৃষ্ণপাথরের নিকটে কোথাও শয়নাবস্থায় ছিলেন । হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং ঈমানে পরিপূর্ণ একখানা স্বর্ণ পাত্রে ধৌত করে পূর্ববৎ ঠিক করে দিলেন । অতঃপর গর্ধবের চেয়ে বড় খচ্চরের চেয়ে ছোট একটি উজ্জ্বল শ্বেত বর্ণের সওয়ারী যাকে ‘বোরাক’ বলা হয় সওয়ারী হিসেবে উপস্থিত হল, যার গতিবেগ ছিল দৃষ্টি সীমা রেখার বাইরে । এতে আরোহন করে রসূলুল্লাহ (ছঃ) অগ্রসর হলেন । রসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন, পথে এক বৃদ্ধার সাথে আমার দেখা হল, আর একটি বস্তু আমাকে ঝুঁকে ডাকছিল এবং আর একটি জীব আমাকে সালাম দিল । রাস্তার তিন জায়গায় আমাকে নামায পড়ানো হয়েছেঃ ১ম, মাদীনায় এবং বলা হয়, এটি আপনার হিজরতগাহ বা প্রবাস স্থান, ২য় সীনাই পর্বতে এবং বলা হয় যে, এটি হযরত মূসা (আঃ) ও আল্লহর কথোপকথনের স্থান; ৩য় বাইতুল মুকাদ্দাসে এবং বলা হয় যে, এখানে হযরত ঈসা (আঃ) ভূমিষ্ট হয়েছিলেন । অতঃপর বাইতুল মুকাদ্দাসের সে পাথরের ছিদ্রের সাথে আমার বোরাক বাঁধা হল, যেখানে নবীদের সওয়ারী বাঁধা হত । তারপর আযান দেয়া হল, আর জিবরাঈল (আঃ) নবী কারীম (ছঃ)-কে ইমাম বানালেন এবং সমস্ত নবী তাঁর (ছঃ) পেছনে নামায পড়লেন । সেখান থেকে তাঁকে ১ম আসমানে আরোহণ করানো হল, অতঃপর ২য়, ৩য় ও ৪র্থ আসমানে তদ্রুপ সপ্তম আসমান পর্যন্ত নেয়া হল এবং প্রত্যেক আসমানের দরজা খোলার সময় জিজ্ঞেস করা হত । “কে এবং তোমার সঙ্গে কে? ” উত্তরে বলা হত “জিবরাঈল এবং আমার সঙ্গী হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) । ” তিনি সপ্তম আসমানে বায়তুল মামূরের প্রাচীরে হেলান দেয়া অবস্থায় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কেও দেখতে পান এবং অন্যান্য আসমানসমূহেও অন্যান্য নবীদের সাথেও তার সাক্ষাৎ হয় । রসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন, আমি বাইতুল মামূলে নামায আদায় করেছি; এটি সেই পবিত্র স্থান যেখানে দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা তওয়াফ করেন যারা পুনরায় তওয়াফ করার সুযোগ পান না।  *[সুবহান'আল্লহ]*

**#শবে_মিরাজ_বা_লাইলা¬তুল_মিরাজ_কোনদিন ?
উত্তরঃ #২৭ রজব এ যে লাইলাতুল মিরাজ সংঘটিত হয়েছে তা নির্ভরযোগ্য কোন হাদিসগ্রন্থ দ্বারা #প্রমানিত_নয় । #কেননা মিরাজের ঘটনা কোন মাসে , কোন দিনে কোন তারিখে ঘটেছে এর নির্ভরযোগ্য কোন #দলীল নেই। কোনো কোনো বইয়ে লিখা আছে যে, মিরাজের ঘটনা রজবের ২৭ তারিখ সংঘটিত হয়েছে। এ কথাটি ইতিহাসের একটি বর্ণণার ভিত্তিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে । যার সূত্র #সহীহ_নয় । নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুধু এটা উল্লেখ আছে, যে মিরাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছে ।

**#এদিনের_বিশেষ_কোন_আম¬ল_রয়েছে_কি ??
উত্তরঃ #এ_দিনের  বিশেষ_কোন_আমল_নেই . . যেহেতু দিনও নির্দিষ্ট নেই!! #সুতরাং ২৭ রজব মিরাজের  সওম (রোযা) রাখা , বারো রাকাত নফল নামাজ পড়া. . অত্যন্ত সওয়াব মনে করে আমল করা #বিদাআত, কারণ তা নবীজি ও সাহাবায়ের আমল থেকে প্রমাণিত নয়।
#আর, এই ব্যপারে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন কোন কর্ম/ইবাদত করলো, যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (অর্থাৎ আল্লহতায়ালার নিকটে কবুল হবে না।)  (সহীহ মুসলিম-৪৩৮৫)
অনেক আলেমগণ বলেছেন যে, #মিরাজের রাতটি নিঃসন্দেহে একটি বরকতময় রাত ছিল। কিন্তু এই রাতে যেহেতু বিশেষ কোন আমল বা ইবাদাত উম্মতের জন্য #বিধিবদ্ধ হয়নি তাই এর দিন তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত থাকেনি ।

Reference :
[আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ ৮/১৮-১৯, আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া , ইমাম ইবনে কাসির ২/৪৭১, ইমাম ইবনে রজব ১৩৪, আল্লামা মুহাম্মদ তাকী ওসমানি, ১/৪৬-৪৮]

পবিত্র সেই রাতেই আল্লহপাক আমাদের #৫_ওয়াক্ত_নামাজ উপহার দিয়েছেন ,
আল্লহ আমাদের ৫ ওয়াক্ত নামাজ সহীহ শুদ্ধভাবে কায়েম করার তৌফিক দিন. . . (আমীন )

 এবং আল্লহতালা আমাদের প্রত্যেকেই সঠিক জানা, বুঝা এবং গ্রহণযোগ্য সহিহ আমল করার তৌফিক দান করুন ; ((আমিন, ছুম্মা আমিন।))

নবী (ﷺ) ও সাহাবীগন রাঃ শবে মিরাজ পালন করেননি তাহলে আপনি কেন করছেন?

নবী (ﷺ) ও সাহাবীগন রাঃ শবে মিরাজ পালন করেননি তাহলে আপনি কেন করছেন?
.
জ্ঞানহীন ও দ্বীন এর ব্যপারে গাফেল কিছু নামধারি
মাওলানাদের ফতোয়ার ভিত্তিতে আমাদের সমাজের মুসলীমদের মেরাজ উপলক্ষে সারা রাত
নফল নামাজ এবং দিনে রোজা রাখতে দেখা যায়।
অথচ তাঁদের কাছে এর প্রমানে কোন দলিল নেই।
তাঁদের দলিল হলো বিদ’আতি বই-পুস্তক!
.
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে-
নফল সালাত পড়া, নফল রোজা রাখা এগুলো কি
বিদ’আত?
নফল ইবাদতের আবার দলিল লাগবে কেন?
ঐ দিন এই সকল নফল ইবাদত করা যাবে না তার
দলিল কোথায়?
.
→আপনার কথা সত্য, কিন্তু উদ্দেশ্য খারাপ।
.
এগুলো সব শয়তানের শয়তানী যুক্তি! সমাজে বিদ’আত এই ভাবেই প্রতিষ্ঠা পায়।

এক বিদআতি বিদআতের পক্ষে সাফাই গাইতে যেয়ে বলে আমরা তো ভাল কাজই করছি জবাবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,,
وَكَمْ مِنْ مُرِيدٍ لِلْخَيْرِ لَنْ يُصِيبَهُ
অনেক মানুষেরই উদ্দেশ্য ভালো হয়, তবে সে ভালো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না।

সুনান দারেমি,,, ২১০

কোন কিছুকে যখন ইবাদত বলবেন তখন অবশ্যই তার দলিল লাগবে।
.
নবী (ﷺ) বলেন,
 الْبَيِّنَةُ عَلَى الْمُدَّعِي
 যে কোন ব্যাপারে দাবীদারকে দলীল পেশ করতে হবে।
.
 (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৭৬৯, হাদীছ ছহীহ)।
.
রাসূল (ﷺ) বলেন,
 مَنِ ادَّعَى مَا لَيْسَ لَهُ فَلَيْسَ مِنَّا وَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি এমন কিছুর দাবী করে যা তার নয় অথবা তার অবগতিতে নেই, তাহ’লে সে আমার শরী‘আতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে তার বাসস্থান জাহান্নামে করে নেয়’
(মুসলিম, মিশকাত হা/৩৭৬৫)
.
দলিলবিহীন আমল করলে তা কখনও আল্লাহ গ্রহন করবেন না; বরং বিদ’আত করার কারনে আপনি কঠিন গুনাহগার হবেন।
.
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
 নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
.
 مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا، فَهْوَ رَدٌّ ‘
.
যে কেউ এমন কোন আমল করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা বাতিল ।
.
আর দলিল হলো কোরআন ও সহীহ হাদিস।
.
দেখুন!,
রাসুল (ﷺ) কিন্তু মেরাজের পরের দিন-ই
ইন্তিকাল করেন নাই; পরের বছরও ইন্তিকাল করেন নাই, তিনি বেঁচে ছিলেন আরও প্রায় ১১/১২ বছর! এই ১১/১২ বছর তিনি কোনদিন মেরাজের রাত উপলক্ষে ১২ রাক’আত সালাত আদায় করেছেন অথবা নফল রোজা রেখেছেন এর প্রমানে ১টি সহীহ হাদীসও পৃথিবীতে নেই।
.
রাসুল (ﷺ) যেই দিনকে কোন ইবাদতের উপলক্ষ
বানানেল না, সেই দিবসকে আপনি কোন ইবাদতের
উপলক্ষ বানাবেন কি করে?
.
আপনি কি রাসুল (ﷺ) থেকে শরীয়ত বেশী বুঝে গেছেন?
অথবা আপনি মনে করেন যে, রাসুল (ﷺ) এই ইবাদত করার কথা তাঁর উম্মতদের বলতে ভুলে গেছেন! [নাউযুবিল্লাহ]?
.
রাসুল (ﷺ) এর মৃত্যূর পর তার সাহাবী, তাবেঈ, তাবে- তাবেঈন থেকেও এদিনকে উপলক্ষ করে কোন ইবাদত করার প্রমান পাওয়া যায় না; অথচ সকল ভাল কাজে তারা ছিলেন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী!
.
সুতরাং শবে মেরাজ পালন করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট
বিদ’আতের অর্ন্তভূক্ত।
.
বিদআত করার আগে মনে রাখবেন ..
যে কেউ বিদআত করবে বিদআতিকে সাহায্য করবে তার কোন ফরয নফল ইবাদত কবুল হবেনা! তার উপর আল্লাহ ও ফেরেশতাদের লানত!
.
আলী রাঃ থেকে বর্ণিতঃ
.
রাসুল (ﷺ) বলেছেন...

فَمَنْ أَحْدَثَ حَدَثًا، أَوْ آوَى مُحْدِثًا، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لاَ يُقْبَلُ مِنْهُ عَدْلٌ وَلاَ صَرْفٌ
যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদআত উদ্ভাবন করে কিংবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তাআলা ফিরিশতা ও সকল মানুষের লানত। তা কোন ফরয কিংবা নফল ইবাদত কবূল হবে না।
.

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ২৯৫৫
.

 বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
لم يرد في فضل شهر رجب، ولا في صيامه، ولا في صيام شيء منه، - معين، ولا في قيام ليلة مخصوصة فيه - حديث صحيح يصلح للحجة، وقد سبقني إلى الجزم بذلك الإمام أبو إسماعيل الهروي الحافظ، رويناه عنه بإسناد صحيح، وكذلك رويناه عن غيره،
অর্থাৎ রজব মাসের মর্যাদা, সে মাসে রোজা রাখা এবং সে মাসের বিশেষ কোনো রাতের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে দলীলযোগ্য কোনো সহিহ হাদিস নেই। আমার পূর্বে দৃঢ়তার সাথে এমনটা বলেছেন হাফেজ ইমাম আবু ইসমাইল আল হারাওয়ী। আমরা তাঁর থেকে সহিহ সনদে এমনটা বর্ণনা করেছি। এমনভাবে অন্য থেকেও এমনটা বর্ণিত হয়েছে।

( তাবয়িনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফি শরহি রজব, পৃষ্ঠা নং ২, মাকতাবাতুশ শামেলা।)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এখানে স্পষ্ট বলেছেন যে, রজব মাসের কোন রাতের বিশেষ নামাজের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। শবে মেরাজ যেহেতু আমাদের দেশে ২৭ তারিখে পালন করা হয়, সুতরাং এ রাতের বিশেষ নামাজ সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

আল্লামা ইববে রজব হাম্ভলি রহ. বলেন,
ومن أحكام رجب ما ورد فيه من الصلاة والزكاة والصيام والإعتمار فأما الصلاة فلم يصح في شهر رجب صلاة مخصوصة تختص به
অর্থাৎ রজব মাসের  বিশেষ কোন নামাজ  সহিহভাবে প্রমাণিত নয়।

(লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা নং ১৬৪, দারুল হাদীস কাহেরা।)

আসুন এই বিদ’আত থেকে
নিজে বাঁচি ও পরিবার পরিজনকে বাঁচাই। আল্লাহ
আমাদের বিদ’আত ছেড়ে সারা জীবন সহিশুদ্ধ আমল করার তৌফিক দিন।
আমিন...!

কৃত্রিম চুল বা পরচুলা বা পট চুল লাগানো কি জায়েজ?

ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পরচুলা ব্যবহার নিষিদ্ধ ।
পরচুলা ব্যবহারকারীর উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের লা’নতঃ
 ইবন আবু শাইবাহ (রহঃ) আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আল্লাহ তায়ালা লা’নত করেন সে সব নারীদেরকে যারা নিজে পরচুলা লাগায় এবং যারা অন্যদেরকে তা লাগিয়ে দেয়, আর যারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্কি আঁকে এবং অন্যকে এঁকে দেয়’’ বুখারী ৫৯৩৩
 আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত।। তিনি বলেন কোনো এক আনসারী মহিলা তার মেয়েকে বিয়ে দিলেন। কিন্তু তার মাথার চুলগুলো উঠে যেতে লাগলো। এরপর সে নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে এ ঘটনা বর্ণনা করে বলল, তার স্বামী আমাকে বলেছে যে, আমি যেন আমার মেয়ের মাথায় কৃত্রিম চুল লাগিয়ে দেই। তখন নবী (সাঃ) বললেনঃ না, তা করো না। কারন, আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের মহিলাদের উপর লা’নত বর্ষণ করেন, যারা মাথায় কৃত্রিম চুল পরিধান করে’’ বুখারী ৫২০৫
আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক মহিলা নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার এক মেয়ের বসন্ত রোগ হয়ে মাথার চুল পড়ে গেছে। আমি তাকে বিয়ে দিয়েছি। তার মাথায় কি পরচুলা লাগাব? নবী (সাঃ) বললেনঃ ‘’যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় ও পরচুলা লাগিয়ে নেয় এমন নারীর উপর আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন’’ ৫৯৪১; মুসলিম ৫৪৫৮-(১১৫/২১২২)
 
 ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আল্লাহ ঐ নারীর উপর লা’নত করেছেন, যে পরচুলা লাগায় আর অপরকে পরচুলা লাগিয়ে দেয়। আর যে নারী উল্কি অঙ্কন করে এবং যে তা করায় (তাদেরকেও লা’নত করেছেন)’’ বুখারী ৫৯৩৭
হ আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ ‘’উল্কি অঙ্কনকারী, পরচুলা ব্যবহারকারী, পরচুলা লাগানোর পেশাধারী নারীকে নবী (সাঃ) লা’নত করেছেন’’ বুখারী ৫৯৪২
 আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে মহিলা পরচুলা লাগায়, আর যে অপরকে পরচুলা লাগিয়ে দেয়, নবী (সাঃ) তাদের লা’নত করেছেন’’ বুখারী ৫৯৩৬
 
হ ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘’পরচুলা লাগিয়ে দেয়ার পেশাধারী নারী, যে নিজের মাথায় পরচুলা লাগায়, উল্কি অঙ্কনকারী নারী এবং যে অঙ্কন করে- আল্লাহর নবী (সাঃ) তাদের লা’নত করেছেন’’ বুখারী ৫৯৪০
পরচুলা ব্যবহার মিথ্যা ও প্রতারনা এবং ইয়াহুদী রীতি। বনী ইসরাইলগণ এই অভিশপ্ত রীতির কারনেই ধংসপ্রাপ্ত হয়েছেঃ
 হুমাইদ ইবন আবদুর রহমান ইবন আওফ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, তাঁর হজ্জ পালনের বছর মিম্মরে নববীতে উপবিষ্ট অবস্থায় তাঁর দেহরক্ষীদের কাছ থেকে মহিলাদের একগুচ্ছ চুল নিজ হাতে নিয়ে তিনি বলেন, হে মদীনাবাসি! কোথায় তোমাদের আলিম সমাজ? আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে এরকম পরচুলা ব্যবহার করতে নিষেধ করতে শুনেছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’বনী ইসরাইল তখনই ধ্বংস হয়েছে, যখন তাদের নারীরা এরুপ পরচুলা ব্যবহার করতে শুরু করে’’ বুখারী ৩৪৬৮, ৫৯৩২; মুসলিম ৫৪৭১-(১২২/২১২৭) অন্য বর্ণনায় আছেঃ এ কারনে বনী ইসরাইল সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে’’ মুসলিম ৫৪৭২
 সাঈদ ইবন মুসাইয়েব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুয়াবিয়া (রাঃ) যখন শেষবারের মতো মদীনায় আসেন, তখন তিনি আমাদের সামনে খুৎবা দেন। তিনি এক গোছা চুল বের করে বললে,। আমি ইয়াহুদী ছাড়া অন্য কাউকে এ জিনিস ব্যবহার করতে দেখিনি। নবী (সাঃ) এঁকে অর্থাৎ পরচুলা ব্যবহারক করাকে প্রতারনা বলেছেন’’ বুখারী ৩৪৮৮, ৫৯৩৮
 মুয়াবিয়া (রাঃ) একদিন বললেন, তোমরা একটি নিকৃষ্ট বেশভূষা তৈরি করেছ। অথচ নবী (সাঃ) মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় একজন লোক একটি লাঠি নিয়ে আসলো যার মাথায় একটি কৃত্রিম চুলের খোপা ছিল। মুয়াবিয়া (রাঃ) বললেন, দেখো! এটাই মিথ্যা ও অলীক। বর্ণনাকারী কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ মেয়েরা তাদের চুলের পরিমান যেসব গোছা দিয়ে বাড়িয়ে দেখায়’’ মুসলিম ৫৪৭৪

চুলে দাড়িতে কালো রং বা খেজাব করা কি জায়েজ?

১) চুলে খেজাব বা কলপ করার বিধান।
২) চূল ও দাড়ীতে কালো রং লাগানো হারাম এবং
৩) অল্প বয়সে চুল পাকলে করণীয়।

মূলকথা হলো, ইসলামী শরীয়াতে পাকা চুলে কাল খেজাব বা কলপ ব্যবহার করা হারাম।
চুলকে কাল রঙে রঞ্জিত করা হারাম। হাদিসে কাল খেজাব বা কলপ সম্পর্কে যে হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে তাতে একথাই প্রমাণিত হয়।
এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"শেষ যামানায় একদল লোক কবুতরের বুকের রঙের ন্যায় কাল খেজাব বা কলপ ব্যবহার করবে । আর এ কারণেই তারা জান্নাতের কোন সুগন্ধিও পাবে না।”
***আবু দাউদ: ৪/৪১৯; আহমদ, নাসায়ী, আবু দাঊদ: ৪২১২; জামে: ৮১৫৩।
অনেক চুল পাকা ব্যক্তিকে এ কাজ করতে দেখা যায়। তারা কাল রঙ দ্বারা সাদা চুল রাঙিয়ে নিজেদেরকে যুবক কিংবা অপেক্ষাকৃত কম বয়সী যাহির করে। এতে প্রতারণা, আল্লাহর সৃষ্টিকে গোপন করা ("আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই" [সুরা রুম; আয়াত: ৩০:৩০]) ও মিথ্যা আত্ম তৃপ্তি ছাড়া আর কোন কিছুই হয় না। এর ফলে ব্যক্তিগত চালচলনের উপর নিঃসন্দেহে এক প্রকার কুপ্রভাব পড়ে। আর অন্য মানুষ এতে প্রতারিত হয়। নাবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাকা চুলে খেজাব লাগাতে বলেছিলেন মেহেদী বা এ ধরনের কোন জিনিস দ্বারা, যাতে হলুদ, লাল ইত্যাদি মৌলিক রঙ ফুটে ওঠে। তবে কাল রঙ দ্বারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই খেজাব লাগানোর অনুমতি দেন নাই।
আবু বকর (রা:)-এর পিতা আবু কুহাফা (রা:)-কে মক্কা বিজয়ের দিন যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে হাজির করা হয় তখন তাঁর চুল দাড়ি এত সাদা হয়ে গিয়েছিলো যে, তা সাগামা অর্থাৎ কাশ ফুলের ন্যায় ধবধবে দেখাচ্ছিল। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখে বলেছিলেন: “তোমরা কোন কিছু দ্বারা এটা পরিবর্তন করে দাও। তবে কাল রঙ থেকে বিরত থাকো।”
***মুসলিম: ৩/১৬৬৩।
খেজাব মানে সাদা চুলে কালো রং লাগানো। চুল, দাঁড়িতে কালো রং ব্যতীত যে কোন রঙের খেজাব লাগানো সুন্নাত। যেমন,
জাবির (রাযিঃ) বলেনঃ
মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফা [আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ)-এর পিতা] সাদা ধবধবে চুল, দাঁড়ি নিয়ে রাসুল (সাঃ)-এর সামনে আসলেন। নবী (সাঃ) তাঁকে বললেনঃ
"এগুলিকে কোন কিছু দ্বারা পরিবর্তন কর। তবে কালো রং থেকে বিরত থাকো বা ব্যতীত।"
***মুসলিম, মিশকাত: ৩৮০ পৃঃ।
রাসূল (সা:) বলেছেন:
"মেহেদীর রং হল সর্বোত্তম খেজাব।"
***আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত: ৪৪৫১।
উল্লেখ্য যে, নারীদের চুলে কলপ ব্যবহার করার বিধান পুরুষদের চুলে কলপ ব্যবহার করার বিধান একই। কোন তফাৎ নাই।
এই দুনিয়াতে আমাদের মধ্যে নিষিদ্ধ যে কোন বস্তুর প্রতি আকর্ষণ যে কোন সিদ্ধ বা হালাল বস্তুর তুলনায় অতুলনীয় ভাবে বেশী। সকল রঙকে চুলে লাগানোর জন্য বৈধ করা হয়েছে মাত্র একটি রঙ (কালো) বাদে। অথচ এই একটি রঙের প্রতি আকর্ষণ অন্য সকল রঙের তুলনায় হাজারো গুন বেশী। ইচ্ছা করলেই আমরা শরীয়াত বিরোধী এ কাজ থেকে বেচে থাকতে পারি।
হাদিসে এসেছে যে. মুসলিম/মুমিনের একটি চুল সাদা হলে একটি গোনাহ ঝরে যায়, একটি নেকী ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং মহান আল্লাহর রহমত লাভ হয়।
পাকা চুল ও দাড়িতে রহমত ও বরকত:
পাকা চুল ও দাড়ি উঠানো যাবে না। কারণ,
রাসূল (সা:) বলেছেন:
‘তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা পাকা চুল হ’ল মুসলমানের জ্যোতি। কোন মুসলমানের একটি চুল পেকে গেলে আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লিখেন, একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার একটি পাপ মোচন করেন।’
***নাসাঈ, মিশকাত: ৪৪৫৮ ‘সনদ হাসান’।
অন্য বর্ণনায় আছে:
‘পাকা চুল মুসলমানদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর হবে।'
***তিরমিযী: ১৬৩৫, মিশকাত: ৪৪৫৯ ‘পোষাক’ অধ্যায় ‘চুল আঁচড়ানো’ অনুচ্ছেদ।
সুতরাং এগুলি উপড়ানোর কোন সুযোগ নেই।
সুত্র: মাসিক আত-তাহরিক।
মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।
▒░▓ চূল ও দাড়ীতে কালো রং লাগানো হারাম ▓░▒
আমি নিজেকে দিয়েই শুরু করছি। অনেক বছর হলো আমার মাথার কিছু চূল এবং দাড়ী সাদা রং ধারন করেছে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের যে দেশেই আমি অবস্থান করেছি এবং করছি সেখানকার নাপিতরা অনেক চেষ্টা করেছে চূলের সাদা রং কে কালো করে দেওয়ার। কিন্তু আমার সাদা চূল ও দাড়ী আজ অবধিও কেউ কালো করে দিতে পারে নাই। অবশ্য আমি নিজে আমার মাথার চুলে পাতার মেহেদি লাগিয়েছি যদিও বেশী চূল সাদা হয় নাই। আমি অনেক বছর আগে থেকেই জেনেছিলাম যে, সাদা চূল ও দাড়ীকে অন্য রং ব্যতীত কালো রং করা বড় গোনাহের কাজ। সেই থেকে মহান আল্লাহ আমাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করেছেন। আমাকে যদি কেউ সারা দুনিয়ার সকল সম্পদও দেয় তবুও আমার একটি সাদা চূলকে কালো রং এ পরিবর্তন করতে পারবে না ইন-শা-আল্লাহ। শুধু তাই নয়, অনেকেই সাদা চূলকে উপড়ে ফেলে বা তূলে ফেলে। আমি আজ অবধিও কোন সাদা চূল জ্ঞান থাকাবস্থায় তূলে ফেলিনি বা উপড়িয়ে ফেলি নাই। কারন, আমি জানি যে, আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই এবং আমি এই মুহূর্তেও দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে পারি। আমি যত পাপীই হই না কেন, আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে কিভাবে যাবো?
অনেক মসজিদের ইমামদের দেখেছি তারা চূলে কালো রং লাগিয়ে মিম্বরে দাড়িয়ে আল্লাহর কালাম পাঠ করে। আসলে তারা অনেক যুক্তি দেখায় যে, একটূ সমস্যা আছে তাই কালো রং লাগিয়েছি। আসলে তাদের তাকওয়া নেই। তারা দুনিয়াকে লোভনীয় হিসাবে ধারন করেছে এবং দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা অন্তরে ধারন করতে পারে নাই। আমি এটুকু বুঝতে পারি যে, আজকে যদি সাদা চূলকে কালো রং বানিয়ে নেই তাহলে কয়েকদিন পরে আবার সেই চূলগুলো সাদা হয়ে যাবে। সাদা চূলকে কেউই চিরদিনের জন্য কালো বানিয়ে দিতে পারবে না। মুমিনদের জন্য সাদা চূল হলো মহান আল্লাহর রহমত এবং যার যার জীবনের পরিসমাপ্তির ইংগিত বহন করে। হাদিসে সাদা চূলকে অন্য রং ব্যতীত কালো রং লাগানোকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।"
***সূরা রুমঃ আয়াতঃ ৩০:৩০।
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এখানে আল্লাহর সৃষ্টি বলতে প্রকৃতিগতভাবে মহান আল্লাহর সৃষ্ট সকল সৃষ্টিকেই বুঝানো হয়েছে। যেমনঃ সাদা, কালো চূল-দাড়ীও প্রকৃতিগতভাবে মহান আল্লাহর সৃষ্টি এবং কোন সৃষ্টিরই পরিবর্তন করা হারাম।
রং দিয়ে চুল- দাড়ী রঙ্গানোর হাদিসসমূহঃ
চুল বা দাড়ীতে কালো রং লাগানো একটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু সাদা চুল-দাড়ী মেহেদি বা অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করা নবী (সাঃ)- এর সুন্নাত। তিনি সাদা চুলকে কালো রং বাদ দিয়ে অন্য রং দিয়ে পরিবর্তন করতে আদেশ দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রাদিঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাঃ) বলেছেনঃ
“ইয়াহুদী ও নাসারারা চুল ও দাড়ীতে খেযাব লাগায় না। সুতরাং তোমরা খেযাব লাগিয়ে তাদের বিপরীত কর”।
***বুখারীঃ অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বিয়া।
কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে লোকেরা এ আদেশ অমান্য করে কালো রং দিয়ে খেজাব (কলপ) লাগাবে।
নবী (সাঃ) বলেছেনঃ
“আখেরী যামানায় একদল লোকের আগমণ হবে যারা সাদা চুল-দাড়ী কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করবে। তারা জন্নাতের গন্ধও পাবেনা”।
***আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তারাজ্জুল, আলবানী (রহিঃ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
হাদীসের ভাষ্য বাস্তবে পরিণত হয়েছে। পুরুষদের মাঝে দাড়ী ও মাথার চুল কালো রং দিয়ে পরিবর্তন করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেছেনঃ
“অর্থাৎ শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা (চুল বা দাড়ীতে) কালো রং লাগাবে। যা দেখতে কবুতরের পেটের ন্যায়। তারা জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না”।
***আবু দাউদঃ ৪২১২; নাসাযঈঃ ৫০৭৭।
কারোর মাথার চুল বা দাড়ী সাদা হয়ে গেলে তাতে কালো ছাড়া যে কোন রং লাগানো সুন্নাত।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাদিঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেছেনঃ
“মক্কা বিজয়ের দিন (আবূ বকর (রাদিঃ) এর পিতা ) আবূ কোহাফাহকে (রাসূল (সাঃ) এর সামনে উপস্থিত করা হলো । তখন তার মাথায় চুল ও দাঁড়ী সাদা ফল ও ফুল বিশিষ্ট গাছের ন্যায় দেখাচ্ছিলো। তা দেখে রাসূল (সাঃ) সাহাবাদেরকে বললেনঃ তোমরা কোন কিছু দিয়ে এর রং পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং কিন্তু লাগাবে না”।
***আবু দাউদঃ ৪২০৪; নাসাঈঃ ৫০৭৮।
তবে রাসূল (সাঃ) সাধারণত মেহেদি, জাফরান ও অর্স (লাল গোলাপের রস) দিয়ে রং করতেন।
আবূ রিমসাহ (রাদিঃ) থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেছেনঃ
আমি ও আমার পিতা রাসূল (সাঃ) - এর কাছে আসলে তিনি আমার পিতাকে বলেনঃ এ ছেলেটি কে? তখন আমার পিতা বললেনঃ সে আমারই ছেলে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তুমি তার সাথে অপরাধমূলক আচরণ করো না । হযরত আবূ নিমসাহ বলেনঃ তখন তাঁর দাড়ী মেহেদি লাগানো ছিলো।
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাদিঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেনঃ
“নবী (সাঃ) চামড়ার জুতো পরিধান করতেন এবং অর্স তথা লাল গোলাপের রস ও জাফরান দিয়ে দাঁড়িটুকু হলুদ করে নিতেন”।
***আবূ দাউদঃ ৪২১০।
রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেনঃ
“নিশ্চয় সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু যা দিয়ে বার্ধক্যের সাদা বর্ণকে পরিবর্তন করা যায় তা হচ্ছে মেহেদি ও কাতাম; যার ফল মরিচের ন্যায়”।
***আবূ দাউদঃ ৪২০৫; নাসাঈঃ ৫০৮০।
উল্লেখ্য যে, কালো রং দিয়ে কলপ বা খেজাব লাগানোর যে হাদিস বলা হয় তা সবই জাল।
[অসমাপ্ত]
----------------------------------------------
অল্প বয়সে চুল পাকা ও করনীয়:
অল্প বয়সে চুল পাকে নিচের কারণগুলোতে:
১) স্পাইসি ফুড বেশী খাওয়া।
২) ঘুম কম হওয়া।
৩) চুলের যত্ন না করা।
৪) কম দামী হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা এবং
৫) জেনেটিক বা হরমোনের সমস্যা।
অল্প বয়সে চুল পাকলে করনীয় কিছু পরামর্শ: বংশগত হলে, অর্থাৎ আপনার বাবা-চাচা-কাকা-দাদার মত করে আপনারও চুল দ্রুত সাদা হয়ে পরলে ব্যাপারটা একটু কঠিন।
আর তা না হলে, এগুলো মেনে চলুনঃ
১) অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা করবেন না।
২) অতিরিক্ত চা-কফি-ড্রিংক্স খাবেন না।
৩) বেশী তেলযুক্ত খাবার খাবেন না। বেশী মশলাযুক্ত খাবার খাবেন না।
৪) বেশী টক বা এসিডিক খাবার খাবেন না।
এগুলো খাবেনঃ
আটার রুটি, সিরিয়াল, মাংস সব ধরনের, সয়া, গাঢ় সবুজ সবজি, হলুদ ফলমূল, সবুজ শাক, কলা, টমেটো, ফুলকপি, গরু-খাশির কলিজা-ফুসফুস, দই, পাউরুটি, কাজু-পেস্তা আর কাঠ বাদাম, ডিম, চিংড়ি মাছ, গাজর।

Tuesday, March 10, 2020

কুরআনে বর্ণিত নারীর ১০ বৈশিষ্ট্য

কুরআনে বর্ণিত নারীর ১০ বৈশিষ্ট্যঃ
পবিত্র কুরআনের একাধিক জায়গায় নারীদের আলোচনা এসেছে। আল্লহ নারীবাচক বিভিন্ন শব্দ ও গুণাবলির দ্বারা তাদের উল্লেখ করেছেন। যেমন—কন্যা, স্ত্রী, বোন, মা, নারী, যুবতি, মুমিনা, মুসলিমা ইত্যাদি। এতে যেমন নারীদের সামগ্রিক আলোচনা এসেছে, তেমনি কয়েকজন মহীয়সী নারীর প্রশংসামূলক বর্ণনাও এসেছে। এসেছে পাপী নারী ও তার পরিণতির কথাও। কোরআনে নারী আলোচনা যেভাবেই আসুক না কেন, তা অবশ্যই মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয়। নিম্নে কোরআনে বর্ণিত নারীর ১০টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
#চারিত্রিক পবিত্রতাঃ-
অশ্লীলতা, অনৈতিকতা ও অমার্জিত আচার-আচরণ থেকে বেঁচে থাকা। নারী চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষায় আল্লাহ তাদের সংযত চলাফেরা, দৃষ্টি অবনত রাখা ও লজ্জাস্থান হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন নারীকে বলুন, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’
(সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)
আল্লহ শুধু নারীদের সাধ্বী হওয়ার নির্দেশ দেননি; বরং সাধ্বী নারীর সপ্রশংস উল্লেখও করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইমরানের কন্যা মারইয়াম—যে তার লজ্জাস্থান হেফাজত করেছে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১২)
#লজ্জা ও শালীনতাঃ-
লজ্জা ও শালীনতা মানুষের ব্যক্তিত্বের মূল ভিত্তি। নারীর ক্ষেত্রে তা বেশি মূল্য বহন করে। শালীনতা মুমিন নারীর মর্যাদা ও সৌন্দর্যের ভিত্তি, যা তার পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়। পবিত্র কোরআনে আল্লহ একজন নারীর শালীন আচরণের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘তখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পায়ে তার কাছে এলো।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৫)
অন্য আয়াতে আল্লহ বলেন, ‘... তারা যেন তাদের গোপন আবরণ প্রকাশের জন্য সজোরে পা না ফেলে। হে মুমিনরা! তোমরা সবাই আল্লহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো। যেন তোমরা সফল হও।’
(সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)
সুতরাং নারী এমনভাবে চলাফেরা করবে না, যা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় এবং যা মানুষকে পাপে উদ্বুদ্ব করে।
#স্বামীর আনুগত্য ও আত্মত্যাগঃ-
ইসলামী পারিবারিক ব্যবস্থায় স্বামী পরিবারপ্রধান। পরিবারের ভালো-মন্দ প্রধানত তার ওপর বর্তায়। তাই ইসলাম পারিবারিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্ত্রীকে ইসলামী শরিয়ত অনুমোদিত বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করতে এবং সুখে-দুঃখে তার পাশে থেকে সাহস জোগাতে বলেছে। কুরআনে আল্লহ আইয়ুব (আ.)-এর স্ত্রীর প্রশংসা করেছেন—যিনি চরম অসুস্থতা ও দরিদ্রতার মধ্যেও স্বামীর পাশে ছিলেন এবং অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, আমার বান্দা আইয়ুবকে, যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল, শয়তান আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে। আমি তাকে বললাম, তুমি তোমার পা দিয়ে ভূমিতে আঘাত করো। এই তো গোসলের সুশীতল পানি ও পানীয়। আমি তাকে দান করেছিলাম তাঁর পরিজনবর্গ ও তাদের মতো আরো, আমার অনুগ্রহ- স্বরূপ এবং বোধসম্পন্ন মানুষের জন্য উপদেশস্বরূপ।
’ (সুরা : সাদ, আয়াত : ৪১-৪৩)
আত্মমর্যাদা বোধ মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। নারী-পুরুষ সবার ভেতর তা থাকে। তবে নারীর ভেতর তা আরো প্রবল হয়। যদিও তা অনেক সময় ঈর্ষা ও আত্মচিন্তারূপে প্রকাশ পায় এবং নারীকে ভুল পথে পরিচালিত করে। মহানবী (সা.)-এর কয়েকজন স্ত্রী এই প্রবণতার শিকার হলে আল্লাহ তাঁদের সতর্ক করে বলেন, ‘স্মরণ করো—নবী তাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপন একটি কথা বলেছিলেন। অতঃপর যে যখন তা অন্যকে বলে দিল এবং আল্লহ তা নবীকে জানিয়ে দিলেন, তখন নবী এই ব্যাপারে কিছু ব্যক্ত করলেন এবং কিছু অব্যক্ত রাখলেন। যখন নবী তা সেই স্ত্রীকে জানালেন, তখন সে বলল, আপনাকে এটা কে অবহিত করল। নবী বললেন, আমাকে অবহিত করেছেন তিনি, যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত।’ (সুরা : তাহরিম : ৩)
#মার্জিত ভাষাঃ-
আল্লহ কুরআনে নারীদের মার্জিত ভাষা ব্যবহার করতে বলেছেন। যা অস্পষ্টতা, জড়তা ও পাপের ইঙ্গিতবহ হবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ন্যায়- সংগতভাবে কথা বলো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র.) এই আয়াতে ব্যবহৃত ‘কাওলাম-মারুফা’-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘নারীরা অনুচ্চ ভাষায় এমনভাবে কথা বলবে, যা শরিয়ত নিষেধ করেনি এবং মানুষের কাছেও তা শুনতে খারাপ মনে হয় না।’ (তাফসিরে কুরতুবি)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘নারীরা সুন্দর, মার্জিত ও কল্যাণবহ কথা বলবে।’
(তাফসিরে ইবনে কাসির)
বহু নারী নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ভাবতে পছন্দ করে। এমনকি নিজের ও নিজ পরিবারের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়। কুরআনে এমন অহঙ্কারের ব্যাপারে নারীকে সতর্ক করা হয়েছে। মহানাবী (ছঃ) জয়নব বিনতে জাহাস (র.)-কে জায়েদ বিন হারিসা (র.)-এর সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে তিনি তাতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। কেননা তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের আর জায়েদ (র.) আগে দাস ছিলেন। এই জাত্যভিমানের ব্যাপারে ইরশাদ হয়, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ বা কোনো মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লহ ও তাঁর রসুলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে
’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৬)
#মোহনীয় বাকভঙ্গিঃ-
নারীর রূপ, ভঙ্গি ও কথার মোহময়তা সর্বজনবিদিত। রূপের মতো কথার মায়াজালেও সে আটকাতে পারে পুরুষকে। দুর্বল চরিত্রের পুরুষ সহজেই মোহগ্রস্ত হয় তার কথায়। পবিত্র কুরআনে নারীর কথার জাদুময়তার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা আল্লহকে ভয় করো, তবে তোমরা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয়।
’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২)
কুরআনের ব্যাখ্যাকারগণ এই আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, কথার এই কোমলতা ও মোহনীয় ভঙ্গি নারীর বিশেষ গুণ। যা তার স্বামী ও আপনজনের জন্য যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি দুর্বল ঈমানের পুরুষ—যার প্রলুব্ধ হওয়ার ভয় আছে তার সামনে তা প্রকাশ করা নিন্দনীয়
(তাফসিরে ইবনে কাসির ও তাফসিরে তাবারি)
#জিহ্বার ব্যাধিঃ-
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) মানুষের জবান বা কথার ১৪টি ব্যাধি উল্লেখ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে অর্থহীন কথা, পরচর্চা, পরনিন্দা, রুক্ষতা, অশ্লীলতা, ঝগড়া-বিবাদ, অভিশাপ, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, উপহাস, গোপনীয়তা প্রকাশ, মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আশ্বাস ইত্যাদি।
(ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, পৃষ্ঠা ১০৪)।
এর কোনো কোনোটি নারীর ভেতর বেশি পাওয়া যায়, আবার কোনো কোনোটি পুরুষের ভেতর। তাই আল্লাহ পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে নারীকেও এসব ব্যাধির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো নারী যেন অপর নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয়েছে সে উপহাসকারিণীর চেয়ে উত্তম হতে পারে
(সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১১)
#দ্বীন পালনে পুরুষের সহযোগীঃ-
দ্বিন পালন এবং সমাজে দ্বিন প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় পুরুষের সহযোগী নারী। প্রত্যেক নারী ও পুরুষ নিজ নিজ জায়গা থেকে পরস্পরকে দ্বিনের ব্যাপারে সহযোগিতা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সত্কাজে আদেশ করে, অসৎ কাজে নিষেধ করে, তারা ছলাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করে। আল্লহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)
#পুরুষের মানসিক আশ্রয়ঃ-
বাহ্যত পুরুষ নারীর অভিভাবক হলেও আল্লহ নারীকে পুরুষের মানসিক আশ্রয় বানিয়েছেন এবং দাম্পত্য জীবন সুখময় করতে তাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতি দান করেছেন। আল্লহ বলেন, ‘আল্লহর নিদর্শন হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের ভেতর থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে বহু নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা : রোম, আয়াত : ২১)
আয়াতে ব্যবহৃত ‘যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও’ বাক্য থেকে পুরুষের জন্য নারীর মানসিক আশ্রয় হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...