Monday, December 2, 2019

"মানুষ দুনিয়াতে যাকে ভালবাসত কিয়ামতের দিন সে তার সাথেই থাকবে" এর ব্যাখ্যা কি?

"মানুষ দুনিয়াতে যাকে ভালবাসত কিয়ামতের দিন সে তার সাথেই থাকবে",,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
∆প্রশ্ন: "হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,,,“মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে,,,” কুরআন-হাদিসের আলোকে এ হাদিসটির ব্যাখ্যা জানতে চাই"।।
.
∆উত্তর:
" প্রথমে আমরা এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো এবং এ প্রসঙ্গে সাহাবীদের অনুভূতি সম্পর্কে জানব। তারপর এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মনিষীদের বক্তব্য দেখব ইনশাআল্লাহ। তাহলে আশা করি,,,হাদীসটির মর্মার্থটি আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আল্লাহ সাহায্যকারী।
.
▪️ "হাদিসটির: আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,,,আমি ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ে মসজিদে নববী হতে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় মসজিদের দরজায় এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ হল।
সে বলল: “হে আল্লাহর রসূল,,,কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে.....??
"রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: "‏ مَا أَعْدَدْتَ لَهَا“তুমি কিয়ামাতের জন্যে কী প্রস্তুত করেছো...??
"আনাস রা. বলেন: তখন লোকটি যেন (এত বড় প্রশ্ন শুনে) ভয়ে পেয়ে নরম হয়ে গেল। তারপর বলল: “হে আল্লাহর রসূল..! আমি তো কিয়ামতের জন্য বেশি পরিমাণ সলাত,,,সিয়াম ও দান-সদকা সংগ্রহ করি নি তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি।”
"রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ “তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালবেসেছ।”
[সহীহ মুসলিম, হা/6608, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার (كتاب البر والصلة والآداب) পরিচ্ছদ: যাকে যে মানুষ ভালবাসে সে তার সাথেই থাকবে- হাদিস একাডেমী]
.
▪️"আরেকটি হাদী: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন:
، جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْمًا وَلَمَّا يَلْحَقْ بِهِمْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ ‏"‏
“জনৈক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল,,,“সে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন, যে একটি কউম বা জাতিকে ভালবাসে অথচ সে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয় নি....??
"রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ “মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে।”
[সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৭৭, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার (كتاب البر والصلة والآداب) পরিচ্ছদ: মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে- হাদিস একাডেমী]
.
▪️" আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন:
: فَمَا فَرِحْنَا بِشَيْءٍ ، فَرَحَنَا بِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ
" فَأَنَا أُحِبُّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ بِحُبِّي إِيَّاهُمْ ، وَإِنْ لَمْ أَعْمَلْ بِمِثْلِ أَعْمَالِهِمْ "
"এই হাদিসটি শুনে এত বেশি বেশি আনন্দিত হয়েছি যে,,,আর কোন কিছুতে এত আনন্দিত হই নি। কারণ আমি নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম,,,আবু বকর রা. এবং ওমর রা. কে ভালবাসি। সুতরাং আমি আশা করি,,,তাদেরকে আমার ভালোবাসার কারণে কেয়ামতের দিন তাদের সাথেই থাকব যদিও আমি তাদের মত আমল করিনি।”
.
▪️" ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন,,,,“মানুষ তার প্রিয়জনের কাছে থাকার বিষয়টি স্বভাবজাত প্রবণতা; এর ব্যতিক্রম হয় না।” (মজুম ফতোয়া)
.
▪️" ইবনুল কাইয়েম রহঃ. বলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তিকে কর্মগতভাবে তার সমগোত্রীয় ব্যক্তির সাথে মিলিত করা হবে। সুতরাং যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবাসত তারা একসাথে জান্নাতে থাকবে আর যারা শয়তানের অনুসরণে একে অপরকে ভালবাসত তারা দুজন একসাথে জাহান্নামে থাকবে। সুতরাং মানুষ ইচ্ছা করুক অথবা না করুন তাকে তার সাথেই রাখা হবে যাকে সে ভালবাসত।”
(যাদুল মাআদ ৪/২৪৮)
.
▪️"মোটকথা,,,কেউ যদি সৎ-পরহেজগার ও দ্বীনদার-আল্লাহ ওয়ালা লোকদেরকে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসে তাহলে সে তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সৎকর্ম করবে,,, পাপাচার থেকে দূরে থাকবে এবং তার প্রতিদান হিসেবে সে জান্নাতবাসী হবে এবং দুনিয়াতে যাদেরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসত সে সে তাদের সাথেই অবস্থান করবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি কাফের- মুশরিক,,,শয়তানের অনুসারী ও পাপাচারী লোকদেরকে ভালোবাসে তাহলে সে স্বভাবতই তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পাপ ও অন্যায়-অপকর্ম করবে এবং তার প্রাপ্য হিসেবে কেয়ামতের দিন তাদের সাথে জাহান্নামে অবস্থান করবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।।।
.
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব৷

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...