Monday, November 11, 2019

আশেকে রসূল সঃ এর প্রকারভেদ

আশেকে রসুল সঃ এর প্রকারভেদঃ
‌ ‌ _-_- _-_-
পাক ভারত উপ মহাদেশে রবিউল আওয়াল মাস আসলে এক শ্রেনীর লোকের মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুহাব্বতের জোশ উতলে উঠে। বিশেষ করে ১২ই রবিউল আওয়াল, অন্য সময় যেমন-তেমন এই তারিখে কাফের, ফাছেক ও ফাজেরদের উদ্ভাবিত অন্যান্য দিবস যেমন: মা দিবস, বাবা দিবস, ভালবাসা দিবস, এর মত করে এ দিবসটি পালন করতে এরা উঠে-পড়ে লেগে যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে নিয়ে অদ্যাবধি পর্যন্ত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা এধরণের বেশ কয়েক শ্রেনীর মৌসুমী আশেকে রাসূল দেখতে পাই। নিম্নে তাদের কর্ম পদ্ধতি ও পরিণতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হল।
(১) যারা শুধু মৌখিকভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুন-কির্তন গায় কিন্তু তাঁর সীরাত তথা আদর্শে আদর্শবান হতে রাজী নয়।
এ শ্রেনীর লোক স্বয়ং নবী যুগেও ছিল বর্তমানে ও আছে। যেমন: উম্মতে মুহাম্মাদীর " ফিরআউন " নামে খ্যাত আবু জাহাল, যে চল্লিশ ‌বৎসর পর্যন্ত রাসূলের গুন গান গেয়েছে, এমনকি " আল্ আমীন " তথা জগৎস্রেষ্ঠ সত্য বাদী, আমানতদার বলে আখ্যায়িত করে ছিল, কিন্তু তাঁর আদর্শ গ্রহনে রাজী হওয়া তো‌ দূরের কথা বরং চরম ও পরম শত্রু ই ছিল আজীবন।
পরিণতিঃ
এ শ্রেনীর আশেকদের পরিনতি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেনঃ
" ان شجرت الزقوم، طعام الاثيم، كالمهل-يغلى فى البطون كغلى الحميم، خذوه فاعتلوه الى سواء الجحيم ثم صبوا فوق رأسه من عذاب الحميم*
নিশ্চয় জাক্কুম বৃক্ষ, পাপীর ( আবু জাহল ও তার অনুসারীদের ) খাদ্য হবে; যা গলিত তাম্রের ন্যায় পেটে ফুটতে থাকবে, যেমন ফুটে পানি। (অতপর ফেরেস্তাদের
বলা হবে একে ধর এবং টেনে নিয়ে‌ যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে, অতপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। ( দুখানঃ ৪৩-৪৮ )
(২) যারা রাসূলের মুহাব্বতে জান দিতে প্রস্তুত কিন্তু তাঁর আনিত দ্বীন মানতে রাজী নয়। ওদের অস্তিত্ব সে যুগেও ছিল এ যুগে ও আছে, যেমন: আবু তালিব, যিনি ‌নবীর মুহাব্বতে সদা জান, মান ও প্রান দিতে প্রস্তুত ছিলেন ।
পরিণতিঃ
জীবনের শেষ মূহুর্তে রাসূলের দাওয়াত অগ্রাহ্য করে যখন বলে ছিলেন, " اخترت النار على العار " আমি তোমার দ্বীন গ্রহন করে পরকালে নাজাত পাব নিশ্চিত কিন্তু লোকজন যে আমাকে ধিক্কার দিবে। অতএব আমি এর বিনিময়ে জাহান্নামের আগুনকে ই বরণ করে নিলাম। রাসূল (দঃ) এরশাদ করেন যে, পর কালে জাহান্নামে আমার চাচা আবু তালিবের পায়ে আগুনের তৈরী একজোড়া জুতা পড়িয়ে দেয়া হবে, যার তাপে তার মাথার মগজ পর্যন্ত বুদবুদের মত টগবগ করে উৎলাতে থাকবে, আর এ আজাবে তাকে থাকতে হবে চির কাল।
(৩) যাদের নবী প্রেম শুধু তাঁর জন্মদিন কেন্দ্রিক, যারা তাঁর জন্মদিনে বিজাতিদের অনুকরণে মিলাদুন্নবী নামে অনুষ্ঠান করে আনন্দ-ফুর্তি করে বেড়ায়। বর্তমানে আমাদের সমাজে এদেরকে কোন-কোন এলাকায় বেশ তৎপর দেখা যায়। এ শ্রেনীটির অস্তিত্ব ও রাসূলের যুগে ছিল আর বর্তমানে ও আছে। এদের জন্মদাতা গুরুর নাম " আবু লাহাব "। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিনে, তাঁর জন্মের সু-সংবাদ প্রদানকারীনি মহা মূল্যবান দাসী সুরাইয়া কে চিরমুক্ত করে দিয়ে ছিল। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে রাসূলের আদর্শ গ্রহনে শুধু নারাজ ই নারাজ ছিল না, বরং তা প্রতিহতে করণে ছিল বদ্ধ পরিকর।
পরিণতিঃ
এ গুরুজির পরিনতি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেনঃ تبت يدا ابى لهب وتب، ما اغنى عنه ماله وما كسب *
আবু লাহাবের ইহ ও পরকাল হবে। তার সহায়-সম্পদ ও সন্তান -সন্ততি আমার ধ্বংসজজ্ঞ থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবে না।
(৪) যারা মনে-প্রানে তাঁকে শুধু ভালই বাসেন না বরং তাঁর আনিত ধর্ম আন্তরিকতার সাথে গ্রহন করে বিজাতীয় অনুকরণে যে কোন প্রকারের আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করতঃ তাঁর সীরত তথা জীবন চরিত অনুস্বরণে জীবন পরিচালনায় বদ্ধপরিকর। তাঁরা ঐ শ্রেনীটির অন্তর্ভূক্ত যে শ্রেনীটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পবিত্র তত্বাবধানে গঠন করে গিয়েছেন, এবং তাঁরাই হলেন একমাত্র সত্যিকার নবী প্রেমিক বা আশেকে রাসূল।
পরিণতিঃ
এঁদের পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলার ঘোষনাঃ " ومن يطع الله والرسول فاولاءك مع الذين انعم الله عليهم من النبين والصديقين والشهداء والصالحين، وحسن اولأك رفيقا*
যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য করবে , তাহলে যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন সে তাদের সঙ্গী হবে। তাঁরা ‌হলেন নবী,ছিদ্দীক,শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের ‌সান্নিধ্যই হল উত্তম।
উপরোক্ত আলোচনা হতে ইহা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, একমাত্র চতুর্থ শ্রেনীর আশেকে রাসূলগনই প্রকৃত পক্ষে আশেকে রাসূল এবং তাদের জন্যই পরকালে জান্নাতে নবীজির সাক্ষাতের ওয়াদা রয়েছে।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের কে এ শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...