Sunday, September 15, 2019

জীন আগুন থেকে সৃষ্টি হলে তারা জাহান্নামে আগুন দ্বারা শাস্তি পাবে কিভাবে?

প্রথমেই বলবো যে, মাটির মানুষ যদি মাটির তৈরী ইটের আঘাতে আহত হয় তাহলে আগুনের তৈরী জীনকেও কেন আগুন দিয়েই শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়??
.
মহান আল্লহ বলেন,
আর যারা ন্যায় ও সত্য থেকে বিমুখ তারা হবে জাহান্নামের ইন্ধন৷ (সুরা জ্বিনঃ১৫)
.
কুরআনের ভাষ্য অনুসারে জিনেরা আগুন থেকে সৃষ্ট৷ তাই প্রশ্ন হতে হতে পারে যে, জাহান্নামের আগুন দ্বারা তাদের আবার কি কষ্ট হবে?
এর জবাব হলো, কুরআনের ভাষ্য অনুসারে মানুষ ও মাটি থেকে সৃষ্ট৷ তা সত্ত্বেও তাদের মাটির ঢিল ছুঁড়ে মারলে ব্যাথা পায় কেন?
প্রকৃত সত্য হলো মানুষের গোটা দেহ মাটির উপাদান দ্বারা তৈরী হলেও এসব উপাদান থেকে যখন একজন রক্ত-মাংসের জীবন্ত মানুষ অস্তিত্ব লাভ করে তখন সে এসব উপাদান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিসে রূপান্তরিত হয় এবং একই উপাদান থেকে তৈরী অন্যান্য জিনিস তার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ ঠিক তেমনিভাবে গঠনাকৃতির দিক থেকে জিন যদিও আগুণের তৈরী৷ কিন্তু আগুণ থেকে তৈরী একটি জীবন্ত ও চেতনা সম্পন্ন সৃষ্টি যখন অস্তিত্ব লাভ করে তখন সে আগুনই তার জন্যের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমূল কোরআন, সূরা আর রহমান, টীকা ১৫)
.
সূরা আর রহমান
১৫) আর জিনদের সৃষ্টি করেছেন আগুণের শিখা থেকে ৷

১৫. মূল আয়াতে যে কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে৷ ( ) অর্থ এক বিশেষ ধরনের আগুন৷ কাঠ বা কয়লা জ্বালালো যে আগুন সৃষ্টি এটা সে আগুন নয়৷ আর ( ) অর্থ ধোঁয়াবিহীন শিখা৷ এ কথার অর্থ হচ্ছে প্রথম মানুষকে যেভাবে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার সময় তার মাটির সত্তা অস্থি-মাংসে তৈরী জীবন্ত মানুষের আকৃতি লাভ করেছে এবং পরবর্তী সময়ে শুক্রের সাহায্যে তার বংশধারা চালু আছে৷ অনুরূপ প্রথম জিনকে নিছক আগুনের শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ এবং তার বংশধরদের থেকে পরবর্তী সময়ে জিনদের অধস্তন বংশধররা সৃষ্টি হয়ে চলেছে৷ মানব জাতির জন্য আদমের মর্যাদা যা, জিন জাতির জন্য সেই প্রথম জিনের মর্যাদাও তাই৷ জীবন্ত মানুষ হয়ে যাওয়ার পর হযরত আদম এবং তার বংশ থেকে জন্ম লাভকারী মানুষের দেহের সেই মাটির সাথে যেমন কোন মিল থাকলো না যে মাটি দ্বারা তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ যদিও এখানো আমাদের দেহে পুরোটাই মাটির অংশ দ্বারাই গঠিত৷ কিন্তু মাটির ঐ সব অংশ রক্ত-মাংসের রূপান্তরিত হয়েছে এবং প্রাণ সঞ্চরিত হওয়ার পর তা শুধু মাটির দেহ না থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিসে রূপান্তরিত হয়েছে৷ জিনদের ব্যাপারটিও তাই৷ তাদের সত্তাও মূলত আগুনের সত্তা৷ কিন্তু আমরা যেমন মাটির স্তুপ নই, অনূরূপ তারাও শুধু অগ্নি শিখা নয়৷

এ থেকে দ্বিতীয় যে বিষয়টি জানা যায় তা হচ্ছে, জিনরা মানুষ থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র সৃষ্টিই শুধু নয়, বরং তাদের সৃষ্টি উপাদানই মানুষ, জীবজন্তু, উদ্ভিদরাজি এবং চেতনা পদার্থসমূহ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ যারা জিনদেরকে মানুষেরই একটি শ্রেনী বলে মনে করে এ আয়াত স্পষ্ট ভাষায় তাদের ভ্রান্তি প্রমাণ করছে৷ তারা এর ব্যাখ্যা করে বলেন, মাটি থেকে মানুষকে এবং আগুন থেকে জিনকে সৃষ্টি করার অর্থ প্রকৃত পক্ষে দুই শ্রেনীর মানুষের মেজাজের পার্থক্য বর্ণনা করা ৷ এক প্রকারের মানুষ নম্র মেজাজের হয়ে থাকেন৷ সত্যিকার অর্থে তারাই মানুষ৷ আরেক প্রকারের মানুষের মেজাজ হয় অগ্নিষ্ফুলিঙ্গের মত গরম৷ তাদের মানুষ না বলে শয়তান বলাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত৷ তবে এ ধরনের ব্যাখ্যা প্রকৃতপক্ষে কুরআনের তাফসীর নয়, কুরআনের বিকৃত সাধন করা৷ উপরে ১৪ নম্বর টীকায় আমরা দেখিয়েছি যে, কুরআন নিজেই মাটি দ্বারা মানুষের সৃষ্টির অর্থ কতটা স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে৷ বিস্তারিত এসব বিবরণ পড়ার পর কোন বিবেকবান ব্যক্তি কি এর এ অর্থ গ্রহণ করতে পারে যে, এসব কথার উদ্দেশ্য শুধু উত্তম মানুষের নম্র মেজাজ হওয়ার প্রশংসা করা? তার পরেও সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষের মগজে একথা কি করে আসতে পারে যে, মানুষকে পঁচা আঠাল মাটির শুকনো ঢিলা থেকে সৃষ্টি করা এবং জিনদেরকে নিরেট অগ্নি শিখা থেকে সৃষ্টি করার অর্থ একই মানব জাতির দুটি ভিন্ন ভিন্ন মেজাজের ব্যক্তিদের বা গোষ্ঠীর স্বতন্ত্র নৈতিক গুণাবলীর পার্থ্যক্য বর্ণনা করা?এ আয়াত থেকে দুটি দু'টি বিষয় জানা যায়ঃ এক, জিনেরা, নিছক আত্মিক সত্তা নয়, বরং তাদেরও এক ধরনের জড় দেহ আছে৷ তবে তা যেহেতু নিরেট আগুনের উপাদানে গঠিত তাই তারা মাটির উপাদানে গঠিত মানুষের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না৷ নীচে বর্ণিত এ আয়াতটি এ বিষয়ের প্রতিই ইংগিত করেঃ "শয়তান ও তার দলবল এমন অবস্থান থেকে তোমাদের দেখছে যেখানে তোমরা তাদের দেখতে পাও না" ( আল আ'রাফ-২৭) ৷ অনুরূপভাবে জিনদের দ্রুত গতিসম্পন্ন হওয়া, অতি সহজেই বিভিন্ন আকার-আকৃতি গ্রহণ করা এবং যেখানে মাটির উপাদানে গঠিত বস্তুসমূহ প্রবেশ করতে পারে না, কিংবা প্রবেশ করলেও তা অনুভূত হয় বা দৃষ্টি গোচর হয়, সেখানে তাদের প্রবেশ অনুভূত বা দৃষ্টিগোচর না হওয়া -এসবই এ কারণে সম্ভব ও বোধগম্য যে, প্রকৃতই তারা আগুনের সৃষ্টি৷
.
জ্ঞাতব্য, আল্লাহ্‌র দেওয়া শাস্তিতে অসম্ভব কিছু নেই। মহান আল্লাহ জীনদের কথা উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘অপরপক্ষে সিমালঙ্ঘনকারীরা তো জাহান্নামেরই ইন্ধন।’(জীনঃ ১৫) আর বিদিত যে, দুনিয়ার আগুনের চাইতে জাহান্নামের আগুনের তেজ সত্তর গুণ বেশি। অবশ্য এমনও হতে পারে যে, তাদেরকে আযাব দেওয়ার জন্য পৃথক আগুন প্রস্তুত আছে। যেহেতু পরকালের বিষয়াবলী ইহকালের বিষয়াবলী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ৬৮ মানুষ মাটি থেকে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও যদি মাটির (ঢেলা ইত্যাদির) আঘাতে কষ্ট পায়, তাহলে জীন আগুন থেকে তৈরি হওয়া সত্বেও তাদের আগুন দ্বারা কষ্ট পাওয়া কোন বিচিত্র কথা নয়। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।


ফেজবুক পোস্ট লিংকঃ https://www.facebook.com/kmarifin98/posts/526322538121596?__tn__=K-R




No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...