মৃতের গোসল, কাফন, জানাযার সলাত এবং দাফন করা ফরযে কেফায়া। (অর্থাৎ কিছু লোকে কাজটি করলে অন্যরা দায়মুক্ত হবে। অন্যথা সকলেই গুনাহগার হবে)
➤ মাইয়েতকে কে গোসল দেবে ?
যে ব্যক্তি গোসলের সুন্নাত সম্পর্কে বেশী অবগত সেই গোসল দিবে। তাতে তার জন্য সওয়াব রয়েছে যদি সে আল্লহর সন্তুষ্টির জন্যে করে এবং মৃতের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে ও যা কিছু খারাপ দেখবে তা মানুষের নিকট না বলে।(বায়হাক্বী ৩/৩৯৫, সহীহ আত তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ সহীহ)।
যে ব্যক্তি গোসলের সুন্নাত সম্পর্কে বেশী অবগত সেই গোসল দিবে। তাতে তার জন্য সওয়াব রয়েছে যদি সে আল্লহর সন্তুষ্টির জন্যে করে এবং মৃতের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে ও যা কিছু খারাপ দেখবে তা মানুষের নিকট না বলে।(বায়হাক্বী ৩/৩৯৫, সহীহ আত তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ সহীহ)।
তবে গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তি হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি ওছিয়ত করে গিয়েছে। তারপর তার স্ত্রী বা পিতা বা ছেলে। তারপর অপরাপর নিকটাত্মীয় রক্তসম্পর্কিত ‘আসাবা’ (নিকটাত্মীয় না থাকা অবস্থায় দূরবর্তী যেসব আত্মীয়-স্বজন মৃতের উত্তরাধিকার লাভ করে) তাদের নিকট তরতীবে যে আগে। আর মহিলার গোসলে প্রথম হকদার হল তার ওছিয়তকৃত মহিলা। তারপর তার স্বামী বা মা। তারপর তার মেয়ে। তারপর অন্যান্য নিকটাত্মীয় রক্তসম্পর্কিত ‘আসাবা’ মহিলাগণ।
মৃতকে চাই পুরুষ হোক বা নারী হোক সমস্তশরীর একবার ধৌত করা যথেষ্ট। মৃতকে গোসলের সময় গোসলদাতা ও যারা তাকে সাহায্য করবে তারা উপস্থিত হবে এবং অন্যান্যদের হাজির হওয়া মকরুহ।
স্বামী আগে মৃত্যুবরণ করলে স্ত্রী কিংবা স্ত্রী আগে মৃত্যুবরণ করলে উভয় উভয়কে গোসল দেওয়ার বেশি হকদার।
>> কিন্তু আমাদের সমাজে তথাকথিত আলেম গণ ফতওয়া জারি করে রেখেছেন, স্বামী বা স্ত্রী কেউ মারা গেলে অপর জন এর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই তাকে গোসল দেওয়া, ছোয়া, দেখতে দেওয়া না জায়েজ। কিন্তু মৃত্যুর কয়েকদিন পর সম্পদ ভাগাভাগি হয় ব্যস্ততার সঙ্গে।
শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বায (রহঃ) সাবেক সৌদি ফতওয়া বোর্ড প্রধান বলেন, অনেক ফিকাহ বিদ মন্তব্য করেন যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু নশ্বর এই জীবনে সীমাবদ্ধ। এই মন্তব্য হাদীসের পরিপন্থী, বিধায় তার দিকে কর্ণপাত না করাই ভাল। (জানাযার কিছু বিধান পৃষ্ঠা-১২, বঙ্গঃ)।
➤ চলুন হাদীসের দলীলে কি আছেঃ
➧ আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বাকীউল গারকাদ থেকে যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি আমাকে মাথার যন্ত্রনা অবস্থায় পেলেন। আমি বলেছিলাম, হ্যায় আমার মাথা ব্যাথা। তখন রাসূল বলেছিলেন, আয়েশা! বরং আমারই মাথা ব্যাথা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমার কোন সমস্যা নেই। তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও তবে আমি তোমার পাশে থাকবো, তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং জানাযার সালাত আদায় করবো।
(ইবনু মাজাহ হ/১৪৬৫; ইরওয়াল গালীল হা/৭০০, সনদ হাসান)।
➝ এই হাদীস পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট মৃত্যুর পর স্বামী-স্ত্রী একজন অপরজনকে গোসল দেওয়া বৈধ! বরং এটাই ছিলো নবী ﷺ ও তাঁর স্ত্রীদের নিকট আকাংখিত। সুতরাং যেখানে গোসল দেওয়া ইসলামী শরীয়তে জায়েজ সেখানে দেখা দেওয়া না-জায়েজ হয় কি করে?
➧ আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) বলেন, আমি এবং আলী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) এর কণ্যা ফাতেমাকে গোসল দিয়েছি।(হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭, বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, ইওয়াউল গালীল হা/৭০১)।
ফাতেমা (রাঃ) এর মৃত্যুর পর তার জানাযাও পড়েছিল তার স্বামী আলী (রাঃ)। (বুখারী হা/৪২৪০, মুসলিম হা/১৭৫৯)।
➧ আবু বকর (র) ওছিয়ত করেছিলেন যে, তার স্ত্রী যেন তাঁকে গোসল দেয়। (মুসান্নাফ আবর্দু রাজ্জাক- হা/৬১৬৭)
আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) তার স্বামী আবু বকর (রাঃ) কে গোসল করান। যখন তিনি ইন্তেকাল করেন।----(মুয়াত্ত্বা মালিক ১/২৮৪ পৃষ্ঠা, ইঃ ফাঃ, আল জানাইযঃ৪৬৬)।
➜ এখান থেকে জানা যায় রাসূল স.এর মৃত্যুর সময় আয়েশা রা.জানতেন না যে স্ত্রীরাও স্বা্মীকে গোসল দিতে পারে, জানা থাকলে অন্যদের দিয়ে গোসল করাতেন না। রাসূল স.এর স্ত্রীরাই গোসল দিতেন তা উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায়।
➤ আগুনে পুড়ে মারা গেলে তার গোসলের বিধান:
১. যদি মুসলিম ও কাফের একত্রে পুড়ে ইত্যাদি ভাবে মারা যায় এবং পার্থক্য করা সম্ভব না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা মুসলিম তাদের উদ্দেশ্যে সকলকে গোসল, কাফন ও জানাযা করে দাফন করবে।
২. আগুনে পুড়ে মরা বা শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে ইত্যাদি ব্যক্তির গোসল দেওয়া যদি সম্ভব না হয় কিংবা পানি না থাকে, তাহলে গোসল, ওযু ও তায়াম্মুম ছাড়াই কাফন পরিয়ে তার জানাযা পড়তে হবে। শরীরের কিছু অংশ যেমন হাত-পা ইত্যাদির উপর জানাযা পড়া জায়েজ যদি বাকি অংশ পাওয়া অসম্ভব হয়।
➧ সাত বছর বা তার কম বয়সের ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তাকে নারী বা পুরুষ গোসল দিতে পারবে। (ফিকাহুস সুন্নাহ ১/২৬৮ পৃষ্ঠা)।
➧ যদি কোন পুরুষ অপরিচিত নারীদের মাঝে বা কোন নারী অপরিচিত পুরুষদের মাঝে মারা যায় অথবা গোসল দেওয়া সমস্যা হয় তবে গোসল ছাড়াই জানাযা পড়ে দাফন করতে হবে। অর্থাৎ গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হল, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করে (মুছে) দিবে।
➧ যদি কোন পুরুষ অপরিচিত নারীদের মাঝে বা কোন নারী অপরিচিত পুরুষদের মাঝে মারা যায় অথবা গোসল দেওয়া সমস্যা হয় তবে গোসল ছাড়াই জানাযা পড়ে দাফন করতে হবে। অর্থাৎ গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হল, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করে (মুছে) দিবে।
➧ আল্লহর রাস্তায় যুদ্ধের ময়দানে মৃত শহীদকে গোসল দেওয়া চলবে না। ধর্ম যুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না, এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদদেরকে তাদের রক্তমাখা কাপড় নিয়েই দাফন করতে নির্দেশনা দেন, তিনি তাদেরকে গোসল দেন নি।” [বুখারী, ১৩৪৬] “এমনিভাবে তাদের ছালাতে জানাযাও পড়েন নি।” (বুখারী ও মুসলিম) (তালখিছ ২৮-৩৩ পৃষ্ঠা)। এ ছাড়া আর যত শহীদ আছে তাদেরকে গোসল দিতে হবে।
➧ ঋতুমতী মহিলাও-তার ঋতু অবস্থায় থাকলেও-মৃতের গোসল দিতে পারবে। (মুগনী)।
আলকামাহ, আত্বা প্রভৃতি ইমামগণ বলেন, ঋতু বা বীর্যপাত জনিত নাপাকে থেকেও মৃতকে গোসল দেওয়ায় কোন ক্ষতি নেই।(ইবনে আবী শায়বাহ ১০৯৫৮, ১০৯৬০)।
আলকামাহ, আত্বা প্রভৃতি ইমামগণ বলেন, ঋতু বা বীর্যপাত জনিত নাপাকে থেকেও মৃতকে গোসল দেওয়ায় কোন ক্ষতি নেই।(ইবনে আবী শায়বাহ ১০৯৫৮, ১০৯৬০)।
উরওয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁকে (‘উরওয়াহ্কে) প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ঋতুবতী স্ত্রী কি স্বামীর খিদমত করতে পারে? অথবা গোসল ফরয হওয়ার অবস্থায় কি স্ত্রী স্বামীর নিকটবর্তী হতে পারে? ‘উরওয়াহ (রহঃ) জবাব দিলেন, এ সবই আমার নিকট সহজ। এ ধরনের সকল মহিলাই স্বামীর খিদমত করতে পারে। এ ব্যাপারে কারো অসুবিধা থাকার কথা নয়। আমাকে ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, তিনি হায়েযের অবস্থায় আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল আঁচড়ে দিতেন। আর আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’তাফিক অবস্থায় মসজিদ হতে তাঁর (‘আয়িশার) হুজরার দিকে তাঁর নিকট মাথাটা বাড়িয়ে দিতেন। তখন তিনি মাথার চুল আঁচড়াতেন অথচ তিনি ছিলেন ঋতুবতী। (বুখারী, হাদিস নং ২৯৬)
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হায়েযের অবস্থায় ছিলাম। (বুখারী, হাদিস নং ২৯৭)
‘আবদুল্লাহ ইব্নু শাদ্দাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি আমার খালা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মাইমূনা (রাঃ) হতে শুনেছি যে, তিনি হায়েয অবস্থায় সালাত আদায় করতেন না; তখন তিনি আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের সিজদার জায়গায় সোজাসুজি শুয়ে থাকতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার চাটাইয়ে সালাত আদায় করতেন। সিজদা করার সময় তাঁর কাপড়ের অংশ আমার (মাইমূনাহ্র) শরীর স্পর্শ করতো।(বুখারী, হাদিস নং ৩৩৩; ৩৭৯, ৩৮১, ৫১৭, ৫১৮ দ্রষ্টব্য) (আ.প্র. ৩২১, ই.ফা. ৩২৬)
সুতরাং এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে হায়েজ অবস্থায় গোসল করাতে কোন বাধা নেই। কেননা মুমিন কখনই নাপাক হয়না তবে সাময়িক শারীরিক নাপাক হতে পারে কিন্তু অন্তর সর্বদা পবিত্রই থাকে। আর যারা কাফের তারা সর্বদাই নাপাক থাকে।
জানাযার লাশের গোসল সম্বন্ধে পূর্ণ অবগত যেকোন মুসলমান ব্যক্তিগণ গোসল দিতে পারে।
রসূল (ছাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয় সে যেন গোসল করে আর যে ব্যক্তি তাকে বহন করে সে যেন ওযু করে। (তিরমীযি,ইবনে মাজাহ হা/ ১৪৬৩আহকামুল জানায়েয)
➧ হজ্জ বা ওমরায় গিয়ে ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ মারা যায়, তবে তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দিবে। কিন্তু কোন সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পুরুষ হলে কাফনের সময় তার মাথা ঢাঁকবে না। বিদায় হজ্জে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে নবী (সা বলেন: “তাকে কোন সুগন্ধি লাগাবে না, এবং তার মাথা ঢাঁকবে না। কেননা সে ক্বিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক ব্যক্তি আরাফাতে ওয়াকুফ অবস্থায় হঠাৎ তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে গেল অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার ঘাড় মটকিয়ে দিল। (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৫।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক ব্যক্তি আরাফাতে ওয়াকুফ অবস্থায় হঠাৎ তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে গেল অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার ঘাড় মটকিয়ে দিল। (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৫।]
➧ গর্ভস্থ সন্তান যদি চার মাস অতিক্রম হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে তার গোসল ও জানাযার সালাত আদায় করবে। আর তার বয়স যদি চার মাসের কম হয়, তবে তাতে প্রাণ না থাকার কারণে সাধারণ একটি গোশতের টুকরা গণ্য হবে। যা কোনো গোসল বা জানাযা ছাড়াই যে কোনো স্থানে মাটিতে গেড়ে দেওয়া হবে।
কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “তোমাদের প্রত্যেকের শুক্র তার মাতৃ উদরে চল্লিশ দিন জমাট থাকে। এরপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। এরপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে তা একটি গোশত পিণ্ডের রূপ নেয়। এরপর আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে একজন ফিরিশতা পাঠানো হয়। সে তাতে রুহ ফুকে দেয়। আর তাঁকে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তা হল এই তার রিযিক, তার মৃত্যুক্ষণ, তার কর্ম এবং তার বদকার ও নেককার হওয়া। সেই সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ জান্নাতবাসীদের মতো আমল করতে থাকে, অবশেষ তার মধ্যে ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। এরপর তাকদীরের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের কাজ-কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোনো কোন ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করতে থাকে। অবশেষে তার ও জাহান্নামের মাঝখানে একহাত মাত্র ব্যবধান থাকে। এরপর ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে। অবশেষে জান্নাতে দাখিল হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৪৩।]
সাঈদ ইবন মুসাইয়্যিব রহ. মৃত গর্ভপাত সম্পর্কে বলেন, “চার মাস হলে তাতে রূহ ফুক দেওয়া হয় তখন জানাযা পড়া হবে”। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ১১৫৯৪।]
➤ কাফেরকে গোসল দেওয়ার বিধান:
কোন কাফেরকে গোসল দেয়া এবং দাফন করা মুসলমানের উপর হারাম।
আল্লাহ্ বলেন: (ولاَ تُصَلِّ عَلىَ أحَدٍ مِنْهُمْ ماَتَ أبَداً)
“আপনি তাদের (কাফের মুনাফেকদের) উপর কখনই জানাযা সালাত আদায় করবেন না।” (তওবাহ্- ৪৮)
“আপনি তাদের (কাফের মুনাফেকদের) উপর কখনই জানাযা সালাত আদায় করবেন না।” (তওবাহ্- ৪৮)
কোন মুসলিমের জন্য কোন কাফেরকে গোসল দেওয়া বা কাফন পরানো কিংবা তার উপর জানাজা পড়া বা তার মৃতদেহকে বিদায় জানানো কিংবা দাফন করা হারাম। বরং যদি তার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ না থাকে তবে মাটি দ্বারা তাকে ঢেকে দিবে। আর মুশরিক ব্যক্তির মুসলিম আত্মীয়-স্বজনদের জন্য তার (মুশরিক) মৃতদেহকে দাফনের জন্য সাথে যাওয়া বৈধ নয়।
➤ মাইয়েতের সুন্নাতী পন্থায় গোসলের পদ্ধতি:
মৃতের গোসল ডান দিক থেকেই শুরু করা মুস্তাহব। (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ হা/১৪৫৮)।
উম্মে আতিয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যার গোসলের ব্যাপারে বলেছেন,“তোমরা তার ডান দিক থেকে এবং অযুর স্থানসমূহ থেকে শুরু করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৫]
যখন কেউ কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিতে চাইবে তখন তাকে গোসলের খাটে রাখবে। এরপর তার আওরতকে ঢেকে দিয়ে (লজ্জাস্থান সমূহ ঢেকে দেওয়া) তার শরীরের কাপড় খুলে নিবে। অত:পর প্রায় বসার মত করে তার মাথাকে উঁচু করবে। এরপর নরম করে তার পেটকে চাপবে ও বেশী করে পানি ঢেলে ময়লা বের করে নিবে। এরপর গোসলদাতার হাতে একটি নেকড়া পেঁচিয়ে বা হাত মোজা পরিধান করবে। অত:পর গোসলের নিয়ত করে প্রথমে সলাতের ওযুর মত করে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা আঙ্গুলয় নাকে ও মুখে প্রবেশ করাবে ( একখন্ড ভেজা কাপড়ের সাহায্যে)।
অত:পর কুল পাতা (বা সাবান) মিশ্রিত পানি দ্বারা (বুখারি হা/১২৫৩,১৬৭)প্রথমে মাইয়েতের মাথা ও দাড়ি ধৌত করবে। পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। এরপর ঘাড় হতে পা পর্যন্ত প্রথমে ডান পার্শ্ব ধৌত করবে। এরপর বাম পার্শ্বের উপর রেখে ডান দিকের পিঠ ধৌত করবে। অত:পর অনুরূপ ভাবে বাম পার্শ্ব ধৌত করবে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার প্রথম বারের মত ধৌত করবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে। যদি পরিস্কার না হয় তবে বেজোড় করে পরিস্কার হওয়া পর্যন্ত ধৌত করবে।
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাগণের মধ্যে একজন মারা গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং বললেন, তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পূর (অথবা তিনি বলেন) ‘কিছু কর্পূর’ ব্যবহার করবে। গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। উম্মে আতিয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা শেষ করে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটি তার ভিতরের কাপড় হিসেবে পরাও। আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং তাতে তিনি (উম্মে আতিয়্যাহ) বলেছেন, তিনি বলেছেন, তাঁকে তিন, পাঁচ, সাত বা প্রয়োজনবোধে তার চাইতে অধিকবার গোসল দাও। হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা তার মাথার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে দেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৫৮, ১২৫৯।]
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যার মাথা তিনটি বেণী করে দেন। তারা তা খুলেছেন, এরপর তা ধুয়ে তিনটি বেণী করে দেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬০।]
গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। আর গোসলের শেষ বারে পানির সঙ্গে কাফূর বা আতর-সেন্ট মিশিয়ে ধৌত করবে। এরপর একটি কাপড় দ্বারা মুছে নিতে হবে। আর যদি মৃতের মোচ বা নখ বেশী লম্বা হয় তবে কেটে ফেলা মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নীচের চুল কাটা যাবে না। মহিলার চুলকে তিনটি বেণী করে পিছনের দিকে রাখা মুস্তাহাব।(বুখারি হা/১২৬২,১৬৭;তালখিছ ২৮-৩০ পৃষ্ঠা)।
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাগণের মধ্যে একজন মারা গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং বললেন, তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পূর (অথবা তিনি বলেন) ‘কিছু কর্পূর’ ব্যবহার করবে। গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। উম্মে আতিয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা শেষ করে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটি তার ভিতরের কাপড় হিসেবে পরাও। আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং তাতে তিনি (উম্মে আতিয়্যাহ) বলেছেন, তিনি বলেছেন, তাঁকে তিন, পাঁচ, সাত বা প্রয়োজনবোধে তার চাইতে অধিকবার গোসল দাও। হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা তার মাথার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে দেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৫৮, ১২৫৯।]
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যার মাথা তিনটি বেণী করে দেন। তারা তা খুলেছেন, এরপর তা ধুয়ে তিনটি বেণী করে দেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬০।]
গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। আর গোসলের শেষ বারে পানির সঙ্গে কাফূর বা আতর-সেন্ট মিশিয়ে ধৌত করবে। এরপর একটি কাপড় দ্বারা মুছে নিতে হবে। আর যদি মৃতের মোচ বা নখ বেশী লম্বা হয় তবে কেটে ফেলা মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নীচের চুল কাটা যাবে না। মহিলার চুলকে তিনটি বেণী করে পিছনের দিকে রাখা মুস্তাহাব।(বুখারি হা/১২৬২,১৬৭;তালখিছ ২৮-৩০ পৃষ্ঠা)।
আর যদি গোসলের পর মৃতের দেহ থেকে নোংরা কিছু বের হয় তবে বের হওয়ার স্থান ধৌত করে তুলা দ্বারা বন্ধ করে আবার ওযু করাতে হবে।
যদি গোসলের পর মাইয়েতের শরীর থেকে কোন না-পাক বস্তু বের হয় তবে নতুন করে গোসল দেয়ার প্রয়োজন নেয়; কারণ এতে কষ্ট ও জটিলতা সৃষ্টি হবে। (তোয়াইজুরী, ইসলামী ফিকাহ ২/১১০-১১ পৃষ্ঠা বঙ্গঃ)।
লিংকঃ https://youtu.be/NAhk20EOFZQ
সম্পূর্ণ আলোচনার লিংকঃ https://youtu.be/vbNepmALR1w
আলোচ্য ভিডিও বক্তব্যটিতে আলোচক মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার ফযীলত ও মৃত ব্যক্তির সম্মান রক্ষা করার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। সেই সাথে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, মুহরিম অবস্থায় ইন্তেকাল করা এবং কাফন এর বিধান উপস্থাপন করেছেন। অতপর মৃত ব্যক্তিকে গোসলদাতার গুণাবলী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোসল পর্যালোচনান্তে কাফন পরানোর বাস্তব পদ্ধতি খুব সুন্দর ভাবে দেখিয়েছেন। পরিষেশে সরাসরি বিষয় সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু প্রশ্নের কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জবাব দিয়েছেন।
লিংকঃ https://youtu.be/l81pv7kbL6s
No comments:
Post a Comment