Sunday, September 1, 2019

আশুরার সিয়াম, ইতিহাস ও ফজিলত


আমরা অনেকে আশুরার ভুল ইতিহাস জানি।আসুন আজ হাদিস কোরআন থেকে আসল ইতিহাস জেনে নেইঃ

#আশুরার_সঠিক_ইতিহাস__ফজিলতঃ
=============================
#মহান আল্লাহ আমাদের জন্য টি মাস যথা- যিলকদ, জিলহজ্ব, মোহরম রজবকে হারাম তথা সম্মানিত মাস করেছেন।

আল্লাহ্ বলেন,
ﺇِﻥَّ ﻋِﺪَّﺓَ ﺍﻟﺸُّﻬُﻮﺭِ ﻋِﻨﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﺛْﻨَﺎ ﻋَﺸَﺮَ ﺷَﻬْﺮًﺍ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺃَﺭْﺑَﻌَﺔٌ ﺣُﺮُﻡٌ ۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦُ ﺍﻟْﻘَﻴِّﻢُ ۚ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻈْﻠِﻤُﻮﺍ ﻓِﻴﻬِﻦَّ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ۚ ﻭَﻗَﺎﺗِﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﻛَﺎﻓَّﺔً ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻧَﻜُﻢْ ﻛَﺎﻓَّﺔً ۚ ﻭَﺍﻋْﻠَﻤُﻮﺍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ
-আসলে যখন আল্লাহ আকাশ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই আল্লাহর লিখন গণনায় মাসের সংখ্যা বারো চলে আসছে৷ এর মধ্যে চারটি হারাম মাস৷ এটিই সঠিক বিধান৷ কাজেই চার মাসের নিজেদের ওপর জুলুম করো না৷ আর মুশরিকদের সাথে সবাই মিলে লড়াই করো যেমন তারা সবাই মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে৷ এবং জেনে রাখো আল্লাহ মুক্তাকীদের সাথেই আছেন৷[সুরা তওবাহ ৯ঃ৩৬]
-
#বছরের প্রথম মাস মোহররমের দশ তারিখ কে আশুরা বলা হয়। আশূরা শব্দটি শুনতেই সাধারণ মানুষের যেন গা শিউরে ওঠে। কারণ, আশূরা বলতেই তাদের ধারণা কারবালা।
আর কারবালা মানেই নবী এর নাতি ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ)-এর পরিবারের মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনা।

#মুহাররামের সিয়াম :
রাসূল বলেছেন
أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ
রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সাওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের নামায। [সহিহ মুসলিম/২৬২৬ ইফাঃ]  

#আশূরারর সিয়ামের মুল ইতিহাসঃ
==========================
মুহাররম মাসের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আরবি আশারা থেকে এর উৎকলণ। যার অর্থ হচ্ছে দশ। আমরা আশূরার যে সিয়ামের কথা এতকাল শুনে আসছি তার সাথে কারবালার এই ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই! মূলতঃ দিনে মূসা (আঃ) তার জাতি বনী ইসরাঈল ফেরাউনের অন্যায়-অত্যাচার, নিষ্পেষণের জাঁতাকল গোলামী থেকে মিশর ছেড়ে সাগর পার হয়ে নাজাত পেয়ে ছিলেন, তাই তিনি আল্লাহ্র শোকরিয়া কৃতজ্ঞার্থে দিনে সিয়াম রেখেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে বনী ইসরাঈলরাও এই দিনে সিয়াম রাখত।
.
#কোরআনে বর্নিত ইতিহাস:
মহান আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺇِﺫْ ﻓَﺮَﻗْﻨَﺎ ﺑِﻜُﻢُ ﺍﻟْﺒَﺤْﺮَ ﻓَﺄَﻧﺠَﻴْﻨَﺎﻛُﻢْ ﻭَﺃَﻏْﺮَﻗْﻨَﺎ ﺁﻝَ ﻓِﺮْﻋَﻮْﻥَ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺗَﻨﻈُﺮُﻭﻥَ
-স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমরা সাগর চিরে তোমাদের জন্য পথ করে দিয়েছিলাম , তারপর তার মধ্য দিয়ে তোমাদের নির্বিঘ্নে পার করে দিয়েছিলাম , আবার সেখানে তোমাদের চোখের সামনেই ফেরাউনী দলকে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম। [সুরা বাক্বরা -৫০]
.
#মহান আল্লাহ আরও বলেন,
ﻭَﺟَﺎﻭَﺯْﻧَﺎ ﺑِﺒَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﺍﻟْﺒَﺤْﺮَ ﻓَﺄَﺗْﺒَﻌَﻬُﻢْ ﻓِﺮْﻋَﻮْﻥُ ﻭَﺟُﻨُﻮﺩُﻩُ ﺑَﻐْﻴًﺎ ﻭَﻋَﺪْﻭًﺍ ۖ ﺣَﺘَّﻰٰ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺩْﺭَﻛَﻪُ ﺍﻟْﻐَﺮَﻕُ ﻗَﺎﻝَ ﺁﻣَﻨﺖُ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﺇِﻟَٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺁﻣَﻨَﺖْ ﺑِﻪِ ﺑَﻨُﻮ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ
ﺁﻟْﺂﻥَ ﻭَﻗَﺪْ ﻋَﺼَﻴْﺖَ ﻗَﺒْﻞُ ﻭَﻛُﻨﺖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﻔْﺴِﺪِﻳﻦَ
ﻓَﺎﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧُﻨَﺠِّﻴﻚَ ﺑِﺒَﺪَﻧِﻚَ ﻟِﺘَﻜُﻮﻥَ ﻟِﻤَﻦْ ﺧَﻠْﻔَﻚَ ﺁﻳَﺔً ﻭَﺇِﻥَّ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻋَﻦْ ﺁﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻟَﻐَﺎﻓِﻠُﻮﻥَ

-আর আমি বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করে নিয়ে গেলাম৷ তারপর ফেরাউন তার সেনাদল জুলূম নির্যতন সীমালংঘন করার উদ্দেশ্য তাদের পেছনে চললো৷ অবশেষে যখন ফেরাউন ডুবতে থাকলো তখন বলে উঠলো, আমি মেনে নিলাম, নবী ইসরাঈল যার উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, এবং আমিও আনুগত্যের শির নতকারীদের অন্তরভুক্ত৷
(জবাব দেয়া হলো) এখন ঈমান আনছো! অথচ এর আগে পর্যন্ত তুমি নাফরমানী চালিয়ে এসেছো এবং তুমি বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের একজন ছিলে৷ এখন তো আমি কেবল তোমার লাশটাকেই রক্ষা করবো যাতে তুমি পরবর্তীদের জন্য শিক্ষনীয় নিদর্শন হয়ে থাকো৷যদিও অনেক মানুষ এমন আছে যারা আমার নিদর্শনসমূহ থেকে উদাসীন৷ [সুরা ইউনুস ৯০-৯২]
.
#হাদীসে বর্ণিত ইতিহাস:
* আশুরার সিয়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সিয়াম।*
রাসূলুল্লাহ যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন দেখলেন যে, ইহুদীরা আশূরার সিয়াম পালন করছে। তখন রাসূলুল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন,
-তোমরা দিকে কেন সিয়াম পালন কর? তারা বলল,
-এটা এক মহান দিবস। এদিনে আল্লাহ্ মুসা (আঃ) তার জাতিকে নাজাত দেন এবং ফেরাউন তার জাতিকে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেয়। তাই মূসা (আঃ) তার জাতি এদিনে আল্লাহ্র শোকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্য সিয়াম পালন করে জন্য আমরাও পালক করি। রাসূলুল্লাহ বললেনঃ
-আমরা মূসা (আঃ) এর অনূসরণ করার বেশি হকদার। এরপর রাসূলুল্লাহ আশূরার সিয়াম পালন করেন এবং সাহাবাগনকেও সিয়াম পালন করার নির্দেশ দেন। [বুখারীঃ ২০০৪, ৩৩৯৭, ৩৯৪২, ৪৩২৩, ১৮৬৫, মুসলিম ৩য় খণ্ড, কিতাবুস স্বাওম, হাদিস নং ২৬৫৩, ইফাঃ২৫২৯]
.
#ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ কে যেভাবে আশূরা রমযানের সিয়ামের গুরুত্ব সহকারে অনুসন্ধান করতে দেখেছি, অনুরূপ অন্য কোন সিয়ামের ব্যপারে দেখিনি। [বোখারী হা/১৮৬৭; মুসলীম হা/১১৩২] 
হাদিসে يتحرى শব্দের অর্থ- সওয়াব প্রাপ্তি আগ্রহের কারণে তিনি রোজার প্রতীক্ষায় থাকতেন।
.
#ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণীত, নাবী (সাঃ) আশুরার দিন সিয়াম পালন করেছেন এবং সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমজানের সিয়াম ফরজ হয় তখন তা ছেড়ে দেয়া হয়। [সহিহ বুখারী, ৩য় খণ্ড, সিয়াম অধ্যায়, হাদিসঃ ৩৮৩১, ইফাঃ ১৭৭১ ]
.
#আয়েশা ؓ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহেলিয়াতের জামানায় কুরাইশরা আশূরার সিয়াম পালন করত এবং রাসূলুল্লাহ পালন করতেন। এরপর যখন তিনি মদিনায় আগমন করলেন তখনও তিনি আশূরার সিয়াম পালন করেন এবং পালন করার জন্য নির্দেশ করেন। অতঃপর যখন রমযানের সিয়াম ফরজ হলো তখন রাসূলুল্লাহ আশূরার সিয়াম (ফরজ হিসাবে) পালন করেননি (সুন্নত হিসাবে পালন করেছেন) এরপর যে চাইত পালন করত এবং যে না পালন করতে চাইত সে পালন করত না। [বোখারী হা/১৮৬৩; মুসলীম হা/১৮৯৯]
অর্থাৎ দিনে সিয়াম রমাযানে সিয়াম ফরজ হওয়ার পূর্বে ফরজ ছিল।
.
#আবদুল্লাহ ইব্নু উমার (রঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া ছল্লাম) বলেছেনঃ আশূরার দিনে কেউ ইচ্ছা করলে সওম পালন করতে পারে। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০০০]
.

#আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া ছল্লম) প্রথমে আশূরার দিনে সওম পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরে যখন রমযানের ছওম ফার্য (ফরজ) করা হলো তখন যার ইচ্ছা (আশুরার) ছওম পালন করত আর যার ইচ্ছা করত না। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০০১]
.
#আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ আশূরার ছওম পালন করত এবং আল্লাহর রছূল( ছঃ) - ছওম পালন করতেন। যখন তিনি মাদীনায় আগমন করেন তখনও ছওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমযানের সওম ফরয করা হল তখন আশূরার সওম ছেড়ে দেয়া হলো, যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০০২]
.
#আশূরার সিয়াম পালন করার নিয়মঃ
==============================
শুধুমাত্র দশম তারিখে সিয়াম রাখা জায়েয, যা ইবনে আব্বাস ؓ -এর হাদীসের উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ আশূরার সিয়াম পালন করার জন্য তা তালাশ করতেন, দশম তারিখের সাথে নবম তারিখেও পালন করা সুন্নত, যাতে করে ইহুদীর-খৃষ্টানদের সাথে সদৃশ না হয়, আর ইহাই হলো সর্বোত্তম যা সাহাবায়ে কেরাম নবী এর পর করতেন।
.
#আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ؓ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
যখন রাসূলুল্লাহ আশূরার সিয়াম পালন করতেন এবং পালন করার জন্য নির্দেশ করেন, পরবর্তীতে সাহাবীগন বললেন, দিনটিকে ইহুদী-খৃষ্টানরা বড় সম্মান করে, সূলুল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ্ চাহে তো যখন আগামী বছর আসবে তখন আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব, কিন্তু পরের বছর আশূরা আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন [মুসলীম হা/১৯১৬, ১৯১৭, ইফাঃ ২৫৩৮]
.
* ১০ই মহররম ২দিন সিয়াম রাখাই সর্বোত্তম* (মুসলিম ২৫৫৬) 
তবে মিস গেলে *১০ ১১তারিখে ২দিন সিয়াম রাখা যাবে।* (আহমদ ২১৫৪) 
.
#আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
-রমাযানের পরে সর্বোত্তম সিয়াম হলো মুহাররম মাসের ছিয়াম (অর্থাৎ আশূরার ছিয়াম) এবং ফরয সালাতের পরে সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের নফল সালাত (অর্থা তাহাজ্জুদের ছালাত)[মুসলিম হা/১১৬৩, ২৬৪৫মিশকাত হা/২০৩৯ নফল ছিয়াম অনুচ্ছেদ; , বঙ্গানুবাদ হা/১৯৪১]
.
#আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
-আমি আশা করি আশূরা বা ১০ই মুহাররমের সিয়াম আল্লাহর নিকটে বান্দার বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসাবে গণ্য হবে। [সহীহ মুসলিমঃ ২৬৩৬, ৩য় খণ্ড, সাওম অধ্যায়, ২৬১৮ ইফাঃমুসলিম হা/১১৬২, মিশকাত হা/২০৪৪; , বঙ্গানুবাদ হা/১৯৪৬ইবনে মাজাহঃ ১৭৩৮] 
→ #অর্থাৎ ইহা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ।
.
আশুরার রোজা দ্বারা শুধু সগিরা গুনাহ মার্জনা হবে। কবিরা গুনাহ বিশেষ তওবা ছাড়া মোচন হয় না।ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহ মোচন করে। হাদিসের বাণীর মর্ম রূপ হচ্ছে- কবিরা গুনাহ ছাড়া সকল গুনাহমোচন করে দেয়।এরপর তিনি আরও বলেন: আরাফার রোজা দুই বছরের গুনাহ মোচন করে। আর আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে। মুক্তাদির আমীন বলা যদি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়... উল্লেখিত আমলগুলোর মাধ্যমে পাপ মোচন হয়। যদি বান্দার সগিরা গুনাহ থাকে তাহলে সগিরা গুনাহ মোচন করে। যদি সগিরা বা কবিরা কোন গুনাহ না থাকে তাহলে তার আমলনামায় নেকি লেখা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। ... যদি কবিরা গুনাহ থাকে, সগিরা গুনাহ না থাকে তাহলে কবিরা গুনাহকে কিছুটা হালকা করার আশা করতে পারি।[আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড-]


শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: পবিত্রতা অর্জন, নামায আদায়, রমজানের রোজা রাখা, আরাফার দিন রোজা রাখা, আশুরার দিন রোজা রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু সগিরা গুনাহ মোচন হয়।[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-]
.
সিয়াম পালনের একটি দিক লক্ষণীয়ঃ
#হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (:) বলেছেন:
''যে ব্যক্তি (রোযা রাখার পরও) মিথ্যা বলা খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকতে পারল না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় মহান আল্লাহ তায়ালার কোন প্রয়োজন নেই।'' [সহিহ বুখারী, ৩য় খণ্ড, সিয়াম অধ্যায়, হাদিসঃ ১৭৮২]
.
#আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্ রছুল (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া ছল্লম) বলেছেনঃ ছিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি ছওম পালন করছি। সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্ নিকট মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট (পছন্দনীয়) , সে আমার জন্য আহার, পান কামাচার পরিত্যাগ করে। ছিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ। [বুখারী হাদিস নং ১৮৯৪]
.
শুধু খাওয়া পান করা থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম নয়। বরং সিয়াম হচ্ছে পানাহার প্রবৃত্তি ত্যাগ করার নাম। পানাহার থেকে বিরত থাকা সহজ কিন্তু প্রবৃত্তি ত্যাগ করা কঠিন। আর প্রবৃত্তি ত্যাগ করতে না পারলে সেই সিয়ামের আল্লাহ্র কোন দরকার নেই, সেই সিয়ামের প্রতিদান আল্লাহ্ নিজ হাতে দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ সিয়াম সংযমের সাথে পালন করার তৌফিক দান করুন।। আমিন



No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...