Sunday, September 29, 2019

কাফের আবু রাফে কে অন্যায় ভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নবী মুহাম্মদ (সা) এর অনুসারীরা ?

প্রশ্নঃ কাফের আবু রাফে কে অন্যায় ভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নবী মুহাম্মদ (সা) এর অনুসারীরা ?


উত্তরঃ প্রথমে এই বিষয়ে হাদিস সমূহ আমরা জেনে নিব আসুন

* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিস ৩০২২ , সহিহ হাদিসঃ কাফের আবু রাফিকে ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় অথবা ঘুমন্ত অবস্তায় হত্যা করা হয় ।

*  ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিস ৩০২৩ , সহিহ হাদিসঃ  বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারীদের একদলকে আবূ রাফি’ ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ করেন। তখন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আতীক (রাঃ) রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করে যখন সে ঘুমিয়ে ছিল।

উপরের হাদিসে সমূহে শুধু বলা হয়েছে আবু রাফেকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে কিন্তু এটি বলা হয়নি যে কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, কি তার অপরাধ ছিল । প্রশ্নকর্তাকে বলতে চাই আপনি যদি এই হাদিসের উপর ভিত্তি করেই নিজেই রায় দিয়ে দেন তাহলে আমি বলব এটি আপনার জালিয়াতি অথবা ইচ্ছা করেই মিথ্যাচার করলেন ইসলাম বিদ্বেষীতার কারনে । আর প্রশ্নকর্তা হয়ত জানেন না যে আবু রাফে একজন কাফের সন্ত্রাসী ছিল । একজন মানবিক দেশপ্রেমিক হিসেবে আমরা সন্ত্রাসীদের সমর্থন করতে পারি না এটিই ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়।

সন্ত্রাসী কাফের আবু রাফের ভয়ংকর অপরাধ সমূহঃ

* ই,ফাঃ আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া , ৪/২৫০ = খন্দক যুদ্ধে এবং বনু কুরাইজার ঘটনার পর আবু রাফে সালাম ইবনে আবুল হুকায়ক ছিল রাসুল (সা) এর বিরুদ্ধে যারা সম্মিলিত বাহিনীকে একত্র করে তাদের একজন । 

* সীরাতুর রাসুল (সা) , আসাদুল্লাহ আল গালিব , পৃষ্ঠাঃ ৪২৪ =  সালাম ইবন আবুল হুকায়ক এর উপনাম ছিল আবু রাফি । সে ছিল কাব বিন আশরাফের মত প্রচণ্ড ইসলাম ও রাসুল বিদ্বেষী ইহুদী নেতা । মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বদা সে শত্রুপক্ষকে সাহায্য করত ।

* সীরাতুল মোস্তফা (সা) , ২/১৫৮ , আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) = কাফের আবু রাফে রাসুল (সা) এর ভয়ংকর শত্রু এবং তাঁকে নানা ভাবে কষ্ট দিত । সে ছিল কাব বিন আশরাফের হিতাকাঙ্ক্ষী ও সাহায্যকারী । এই ব্যাক্তিই আহজাব যুদ্ধে মক্কার কুরাইশদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করে । এছাড়া প্রচুর ধন-সম্পদ দিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য করত । সে সব সময়ই মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় প্রচুর অর্থ খরচ করত । অর্থাৎ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করতে চাইত । 

* ই,ফা, সীরাত বিশ্বকোষ , ৬/৩১০ = খন্দক যুদ্ধের জন্য (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) কুরাইশ বা অন্যান্য গোত্রকে সংগঠিত এবং তাদেরকে প্রচুর অর্থ দিয়ে সাহায্য করে এই ইহুদী (আবু রাফে) বণিকটি ইসলামের প্রচুর ক্ষতিসাধন করে ।

* ই,ফা, সীরাতে ইবনে হিশাম , ৩/২৭৯ = আবু রাফে যে রাসুল (সা) এর বিরুদ্ধে খেপিয়ে বিভিন্ন বাহিনীকে সংঘবদ্ধ করেছিল । অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ (সা) কে হত্যা করতে চাইত সব সময় ।

= কেন সন্ত্রাসী আবু রাফেকে গোপনে হত্যা করা হয় ?

* ই,ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, ৬/৩১১ =  শত্রুদের সাথে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে পরাস্ত করার মত এই সমস্ত শত্রু সর্দার ও বড় বড় কবি ও দলনেতাকে গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করায় শত্রুপক্ষ দুর্বল ও নেতৃশুন্য হয়ে পড়ে । সেই যুগে এই কবিরা বর্তমান যুগের প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা পালন করত । এই কবিদের কবিতা মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে বিদ্বেষ ও উত্তেজনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ত । তাই তাদেরকে নির্মূল করা ইসলামের স্বার্থে ও রাসুল (সা) এর নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল । রাসুল (সা) এর আত্মউৎসর্গকারী সাহাবীগণ প্রানের ঝুঁকি নিয়ে তাই এই গুরুদায়িত্ব পালন করে ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন । গুপ্তহত্যার মাধ্যমে এই অপশক্তিকে নির্মূল না করলে এরা আরও অনেক যুদ্ধ ও রক্তপাতের কারন হয়ে দাঁড়াত । এদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পর মুসলমানগন ও আল্লাহর রাসুল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন ।

* ই,ফা, সীরাত বিশ্বকোষ, ৬/৩১২ এবং স্টাডিজ ইন এ মসক, পৃষ্ঠা ৬৮ = সারকথা হল মদিনায় তখন কোন পুলিশ বা আধুনিক সময়ের মত কোন আদালত ছিল না যে ঐ দুষ্কৃতকারীদের হত্যার আদেশ কার্যকর করবে । তাই মোহাম্মদ (সা) এর কোন না কোন সহচরকেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হত । সেটা প্রকাশে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির গোত্রের সামনে করতে গেলে সেটা হত আরও রক্তক্ষয়ী এবং গোটা শহর সেই দন্ধে জড়িয়ে পড়ত। চুপিসারে সেই কর্ম সমাপ্ত করা ছিল শ্রেয় ও যুক্তি সম্মত । নতুবা হিংসা-প্রতিহিংসার অনেক বিস্তার ঘটত । নবী মুহাম্মদ (সা) এই কাজ কোন ব্যাক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছিল না , সেটি ছিল সময়ের এবং রাষ্ট্র ও জাতির প্রয়োজনে । সুতরাং গুপ্তহত্যার অপবাদ দেয়া এবং সেটার নিন্দা করা অবশ্যই অযৌক্তিক ।

উপরের অভিযোগ নির্মূল সমাপ্ত করে এবং বিশুদ্ধ তথ্য প্রমান হাতে রেখে আমরা খুবই শক্তিশালীভাবে কিছু দাবী এবং কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিবঃ

১/ কাফের আবু রাফে একজন জঙ্গি সন্ত্রাসী ছিল ।

২/ কাফের আবু রাফে মুসলিমদের হত্যা করে চিরতরে ধ্বংস করতে চেয়েছিল ।

৩/ কাফের আবু রাফে মদিনার রাষ্ট্র প্রধান নবী মুহাম্মদ (সা) এর কে হত্যার চেষ্টা করেছিল বার বার ।

৪/ নবী মুহাম্মদ (সা)কে হত্যার জন্য কাফের আবু রাফে তার দলবল একত্র করছিল এবং তাদেরকে টাকা দিয়েও সাহায্য করত এর জন্য ।

৫/ কাফের আবু রাফে ইসলামকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল এবং দুনিয়ার বুক থেকে যেন ইসলাম উঠে যায় সেই পরিকল্পনা করছিল ।

৬/ নবী মুহাম্মদ (সা)এর অনুসারীরা কাফের আবু রাফেকে হত্যা করে আসলে সন্ত্রাসীদের দমন করেছিলেন ।

৭/ সন্ত্রাসী কাফের আবু রাফেকে গোপনে হত্যা করার কারন ছিল যেন তার সন্ত্রাসী দলবল মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পায় যেহেতু সন্ত্রাসী আবু রাফে একজন ইহুদী নেতাও ছিল ।

৮/ নাস্তিকরা কেন এই সন্ত্রাসী তথা আবু রাফের পক্ষে কথা বলছেন আপনারা কি তাহলে সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করেন ?

৯/ আবু রাফে নবী মুহাম্মদ (সা) হত্যার জন্য বিশাল দলকে একত্রে করছিল নাস্তিকরা কি চায় যে একজন দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে এইভাবে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হক ? নবী মুহাম্মদ (সা) তো কোন অপরাধ করেন নি তাহলে ?

১০/ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করার জন্য আবু রাফে প্রচুর অর্থ সম্পদ খরচ করেছে এখন একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এইভাবে সম্পর খরচ করা আমাদের সভ্য চিন্তাশীল মানুষের জন্য অন্যায় কিন্তু আপনারা কি এই অন্যায় কাজকে সমর্থন করছেন ?

১১/ মুসলিমদের বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে কাফের আবু রাফে নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা কি এখন তার এই কাজকে সাধুবাদ জানাবেন ?

১২/ বর্তমানেও কোন শান্তিপূর্ণ দেশে যদি কেউ রাষ্ট্র প্রধানের বিরুদ্ধে হত্যা করার জন্য বাহিনী ঘটন করে তাহলেও এই অপরাধের নাম বলা হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যা সম্পূর্ণ নিষেধ এবং অমানবিক । মদিনাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল সন্ত্রাসী আবু রাফি এই পরিবেশ নষ্ট করতে নবী মুহাম্মদ (সা) যিনি রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন তাঁকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসী আবু রাফে বাহিনী তৈরি করে যা খুবই ভয়াবহ তাই এই সন্ত্রাসীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা) এবং তাঁর অনুসারীরা তথা সাহাবীরা মানবতার কল্যাণের কাজটাই করেছেন ।

১৩/ সন্ত্রাসী আবু রাফে কাব বিন আশরাফকে সাহায্য করেছিল যখন কাব বিন আশরাফ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল । সন্ত্রাসী কাব বিন আশরাফকেও নবী মুহাম্মদ (সা) দমন করেন কারন ওর অপরাধ ছিলঃ সুনানে আল কুবরা - বায়হাকি ৯/১৮৩ এবং যুরকানি ২/১০ পৃষ্ঠা আছেঃ ইহুদি কবি কাব আল আশরাফ ছিল মদিনার অধিবাসী । বনী নাদির গোত্রের নেতা । আরবের লোকদের অন্যতম পেশা ছিল বিজনেস আর কাব আল আশরাফ নিজের ছিল অস্রের বিজনেস । বদর যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় দেখে সে হিংসায় ফেটে পড়ে এবং বুঝতে পারে তার অস্ত্র বিজনেসে ধস নামবে । এ জন্য সে পালিয়ে মক্কার কুরাইশদের কাছে চলে যায় । সেখানে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশদের স্বজনদের সাথে সহমর্মিতা পোষণ করে এবং নবী (সা) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উস্কানি দেয় । শুধু তাই নয় বরং এ ছাড়া "মোস্তফা চরিত্র" লিখেছেনঃ মোঃ আকরাম খা, পৃষ্ঠা ৪৪৭, কাকলী প্রকাশনীঃ কাব বিন আশরাফ এর অপরাধ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন যার মাঝে মূল অপরাধ হল সে দেশদ্রোহী এবং নবী মুহাম্মদ (সা) সহ পুরা মুসলিম জাতিকে হত্যা করে ধ্বংস করতে চেয়েছিল এই কাব বিন আশরাফ । আর একেই সাহায্য করত কাফের আবু রাফে ।

১৪/ নবী মুহাম্মদ (সা) তাঁর শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রকে  রক্ষা করতে ,  জাতিকে রক্ষা করতে মানবতার খাতিরেই মুলত সন্ত্রাসীদের গোপনে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ।

১৫/  যেহেতু নবী মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর অনুসারীরা সন্ত্রাসীদের দমন করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেহেতু অবশ্যই তাঁরা ইতিহাসে সব সময় সম্মানিত হয়ে থাকবেন মানবতাবাদী মানুষের কাছে ।

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

Saturday, September 28, 2019

পৃথিবী আগে সৃষ্টি নাকি মহাকাশ ?

পৃথিবী আগে সৃষ্টি নাকি মহাকাশ ?
খগেন কুমীনদের দাবীঃ মহাকাশ আগে সৃষ্টি করা হয়েছে এরপরে পৃথিবী এটাই বিজ্ঞান আমাদের বলছে আর ইসলাম আমাদের বলছে আগে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে এরপরে মহাকাশ সুতরাং ইসলাম বিজ্ঞান অনুযায়ী ভুল প্রমান হচ্ছে ।
আমরা প্রথমে "পৃথিবী আগে সৃষ্টি নাকি মহাকাশ" এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু পয়েন্ট দাড় করাব এবং সেগুলা বিভিন্ন তথ্য প্রমানের আলোকে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করব এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পোঁছানর পরে একটি ফলাফল উল্লেখ করব । এবং যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম বিজ্ঞান যা বলছে সেটাই সত্য এবং ইসলাম যেটা বলছে সেটাও সত্য কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফলাফলে ফাইনাল রেজাল্ট প্রকাশ পেয়ে আসলে বুঝা যাবে যে আসলে ইসলাম নাকি বিজ্ঞান সত্য । চলুন শুরু হল ।
১/ প্রথমে মহাকাশ সৃষ্টি এরপরে পৃথিবী । - বিজ্ঞান এটাই বলে ।
২/ আগে বিস্তৃত না করা অবস্থায় পৃথিবীকে সৃষ্টি করা হয় এরপরে মহাকাশ এরপরে কমপ্লিট ভাবে পৃথিবীকে সৃষ্টি করা হয় । - এটি ইসলাম বলে।
৩/ যদি দুটিই দৃষ্টি সত্য হয় সত্য হয় তাহলে !
৪/ সিদ্ধান্ত ফলাফল ?
উপরের উল্লেখিত পয়েন্ট আমরা যাচাই করব বিশ্লেষণ করব ওকে । ফাইন ।
১/ প্রথমে মহাকাশ সৃষ্টি এরপরে পৃথিবী । - বিজ্ঞান এটাই বলে ।
বিশ্লেষণঃ বিজ্ঞান মামা আমাদেরকে বলেন যে একটি মহাবিস্ফোরণের ফলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং আজ থেকে প্রায় ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। তার মানে পৃথিবী পরে সৃষ্টি হয়েছিল আগে মহাকাশ সৃষ্টি হয়েছিল । কিন্তু প্রশ্ন মনে আসে যখন বিস্ফোরণ হয়েছিল এবং পৃথিবী সৃষ্টি হচ্ছিল তখন কি বিজ্ঞানীরা কেউ সেখানে উপস্থিত ছিল ? উত্তর হচ্ছে না । কিন্তু যিনি মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কিন্তু তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ । আচ্ছা বিজ্ঞান কি পরিবর্তনশীল ? হ্যাঁ । ইসলামের কোন বিধান কি পরিবর্তনশীল ? না । আচ্ছা যেহেতু মহাকাশ অথবা পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার সময় কোন বিজ্ঞানী সেখানে ছিলেন না তাহলে খামাখা প্রথমে মহাকাশ এবং পরে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল এর আগে পৃথিবীর অস্তিত্ব ছিল না এই দাবী কি শক্তিশালী নাকি দুর্বল ? উত্তর দুর্বল এবং শুধুই ধারনা ।
আচ্ছা ধরে নিলাম আগেই মহাকাশ সৃষ্টি হয়েছে এবং পরে পৃথিবী । কিন্তু মহাকাশ অস্তিত্বে আসার আগে আল্লাহর কাছে আগেই থেকেই পৃথিবীর অস্তিত্ব ছিল পরে আল্লাহ মহাকাশ সৃষ্টির পরে পৃথিবীকে সেখানে ফিট করে দেন এটি কি আল্লাহর কাছে পসিবল ? উত্তর হল হ্যাঁ । একে বারেই সহজ কিন্তু ।
২/ আগে বিস্তৃত না করা অবস্থায় পৃথিবীকে সৃষ্টি করা হয় পরে মহাকাশ এরপরে পৃথিবী সৃষ্টি কমপ্লিট করা হয়েছে । - এটি ইসলাম বলে ।
বিশ্লেষণঃ এই বিষয় ইসলামের তথ্য প্রমান সমূহ দেখে নেই চলুন ।
= সুরা বাকারা ২:২৯ = তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু পৃথিবীতে (আরবি শব্দ "উলআরদ্দ") রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।
* ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/২১৩ = মহান আল্লাহ প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তারপরে সাতটি আকাশ নির্মাণ করেছেন ।
* ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত, তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/২১৫ = হযরত মুজাহিদ (রহ) বলেন যে মহান আল্লাহ পৃথিবীকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টি করেছেন । ওটা হতে যে ধোয়া উপরের দিকে উঠেছে তা হতে আকাশ নির্মাণ করেন - যা একটির উপর আর একটি এভাবে সাতটি এবং যমীনও একটির নিচে আরেকটি এভাবে সাতটি । এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে পৃথিবীকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছে । যেমন সুরা সিজদাহর মধ্যে রয়েছে । আলেমগন এ বিষয়ে একমত ।
* ই,ফা, তাফসীরে ইবনে আব্বাসের ১/২৬ = আগে পৃথিবী এরপরে আকাশ সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে ।
= আকাশের পরে পৃথিবীকে বিকশিত করা হয়েছেঃ কুরআনের আয়াতসমূহ প্রমাণ করে যে, পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পরে। আল্লাহ বলেনঃ
* সুরা ফুসসিলাত ৪১:৯ থেকে ১২ = বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।
* নাযিআত ৭৯ : ২৭ থেকে ৩০ = “তোমাদেরকে সৃষ্টি করা অধিক কঠিন, নাকি আকাশ সৃষ্টি? তিনিই আল্লাহ তা বানিয়েছেন।”এরপরে আল্লাহ বলেছেন, “এবং পৃথিবীকে এরপরে বিস্তৃত করেছেন।”
এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে পৃথিবীর বিস্তৃতকরণ প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়েছে আকাশমণ্ডলী সৃষ্টির পরে।
এ প্রসঙ্গে আদওয়াউল বায়ানে হযরত আশ শানকিতী (রহ) তাঁর তাফসিরে লিখেছেন,
“ইবন আব্বাস(রা.)কে সুরা ফুসসিলাত এবং সুরা নাযিআতের আয়াতগুলো সমন্বয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তর দেন – আল্লাহ তা’আলা প্রথমে বিস্তৃত না করা অবস্থায় পৃথিবীকে সৃষ্টি করেন। এরপরে তিনি আকাশ সৃষ্টি করেন এবং ২ দিনে (বা পর্যায়কালে) একে ৭ আকাশে পরিনত করেন। এরপর তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেন এবং এতে পাহাড়, নদী এবং অন্যান্য জিনিস সৃষ্টি করেন। অতএব পৃথিবীর সৃষ্টি আকাশের আগে, কিন্তু পাহাড়-পর্বত, গাছ এবং অন্যান্য বস্তুসহ একে বিস্তৃত করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পরে। এর প্রমাণ সুরা নাযিআত ৭৯:৩০ = আল্লাহ তা’আলার বক্তব্য তথা এবং পৃথিবীকে এরপরে বিস্তৃত করেছেন” - এখানে তিনি বলেননি “সৃষ্টি করেছেন” (বরং বলেছেন “বিস্তৃত করেছেন”। এরপর আল্লাহ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি কিভাবে তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন –নাযিআত ৭৯:৩১ = তিনি এর (পৃথিবী) ভিতর থেকে বের করেছেন এর পানি ও এর তৃণ। ইবন আব্বাস(রা.) কর্তৃক আয়াত ২টির এই সমন্বয়ে কোনো প্রকারের অস্পষ্টতা নেই বরং কুরআনের প্রকাশ্য অর্থ ও ইঙ্গিত থেকেই এই ব্যাপারটি বোঝা যাচ্ছে। ।
৩/ যদি দুটিই দৃষ্টি সত্য হয় সত্য হয় তাহলে !
বিশ্লেষণঃ দেখুন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিজ্ঞান সঠিক কারন মহাবিশ্বের আগে পরিবেশ কেমন বস্তু ছিল সেটি বিজ্ঞান গ্যারান্টি সহকারে আমাদের পেশ করতে অক্ষম কলিকাতা হারবাল সেবন করালেও বিজ্ঞান এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে না । যেহেতু বিজ্ঞান প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না তাই বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সে বলতেই পারে যে আগে মহাবিশ্ব হয়েছে এরপরে পৃথিবী । "মহাবিশ্বর আগে পৃথিবীও ছিল" - এটিকেও বিজ্ঞান অস্বীকার করার ক্ষমতা রাখে না যেহেতু সে জানেই না যে মহাবিশ্বর আগে কিছু ছিল ।
আবার ইসলামের দৃষ্টিতেও ইসলাম সঠিক । আল্লাহ হলেন সময়ের সৃষ্টিকর্তা এমনকি সব কিছুই তিনি সৃষ্টি করেছেন তাই মহাবিশ্বর আগে পৃথিবী সৃষ্টি করা কি তাঁর পক্ষে ইম্পসিবল ? উত্তর হচ্ছে না । আল্লাহ মহাবিশ্বর আগে পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন পরে সেটিকে বিকশিত করে দিয়েছেন ব্যাস কিন্তু বিজ্ঞানের এই ক্ষমতা নেই যে ইসলামের এই তথ্যকে ভুল দাবী করার যেহেতু বিজ্ঞান নিজেই জানে না আসলে মহাবিশ্বর আগে কি ছিল কিনা !
= আল্লাহ্‌ সর্বশক্তিমানঃ তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবানঃতিনি সব কিছু করতে সক্ষমঃ
* সুরা বাকারা ২:২৮৪
* সুরা আল ইমরান ৩:১৮৯
* সুরা মায়দা ৫:১
* সুরা মায়দা ৫:১২০
* সুরা আনাআম ৬:৬৫
* সুরা আনআম ৬:৭৩
* সুরা নাহল ১৬:৭০
* সুরা হজ ২২:৬
* সুরা নুর ২৪:৪৫
* সুরা আনকাবুত ২৯:২০
* সুরা রুম ৩০:৫০
* সুরা ফাতির ৩৫:১
* সুরা ফাতির ৩৫:৪৪
* সুরা ফুসসিলাত ৪১:৩৯
* সুরা শুরা ৪২:৯
* সুরা হাদিদ ৫৭:২
* সুরা তাগাবুন ৬৪:১
৪/ সিদ্ধান্ত ফলাফল ?
* কাহফ ১৮ : ৫১ = “আমি তাদেরকে আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির সাক্ষী করিনি আর না তাদের নিজেদের সৃষ্টির।
মনোযোগের সাথে এই আয়াত পড়লে আমরা পরিস্কার বাস্তবতা বুঝতে পারি যে আমরা মানুষ আর আমরা বাস্তবেও তখন ছিলাম না শুধুই তাই নয় এমনকি আমাদের বিজ্ঞানও তখন ছিল না যখন আল্লাহ আসমান অথবা পৃথিবী সৃষ্টিকরছিলেন । তাহলে বিজ্ঞান যেহেতু সেখানে ছিল না তাই বিজ্ঞান কখনো বলার ক্ষমতা রাখে না যে "মহাবিশ্বর আগে পৃথিবী ছিল না এটি ভুল" । তারপরে মজার ব্যাপার হল মহাকাশ আর পৃথিবী যেহেতু আল্লাহর সৃষ্টি তাই আল্লাহ একটিকেই আগেই বানাক অথবা পরেই তৈরি করুক এটি আল্লাহর কাছে খুবই সহজ ।
নর্মাল কথা যা আমরা প্রাই বলে থাকি যে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য গবেষণা ইসলাম সম্মত এটি সত্য কিন্তু বিজ্ঞান যে বিষয়ে গ্যারান্টি দিতে পারে না অথবা বিজ্ঞান যেই বিষয়ে গবেষণাই করতে অক্ষম সেই বিষয়ে বিজ্ঞানের রায় নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক । উদাহরণ স্বরূপ ধরুন আপনি অংকই করতে জানেন না তাহলে অংক নিয়ে কেন আপনি রায় দিতে যাবেন । আরও মজার কথা হল কুরআন ও সুন্নাহ মুসলিমদের নিকট সর্বাধিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। যেখানে বিজ্ঞান ও কুরআন-সুন্নাহর তথ্য একমত হয় না, সেখানে আমরা মুসলিমরা কুরআন-সুন্নাহর দিকেই ফিরে যাই। বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, বিজ্ঞানের তথ্য নিয়ত পরিবর্তনশীল।
আর নাস্তিক ধর্মের অন্ধ বিশ্বাসীরা বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস করলেও আমরা মুসলিমরা কখনোই বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস করি না । কারন মরহুম গ্রীক জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমী হুজুর আমাদের ফতয়া দিয়েছিলেন যে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে । বিজ্ঞান ফতয়া বিভাগে এই ভুল মিথ্যা ফতোয়া টিকে ছিল পুরো ২৫০ বছর । এই ২৫০ বছরে ধরে পৃথিবীর মানুষ , যাদের মধ্যে আবার বড় বড় বিজ্ঞানী , ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার ছিল তারাও বিশ্বাস করত যে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে । এই ২৫০ বছরে তাদের মধ্যে যারা ইন্তেকাল করেছেন তারা এই ভুল বিশ্বাস নিয়েই মারা গিয়েছেন যে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে ।
আবার মরহুম টলেমী হুজুরের বৈজ্ঞানিক ফতোয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন আরেক মরহুম বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস কিন্তু এই মরহুম বিজ্ঞানীও ঘাবলা করে গেছেন সেটি হল সে বলেছে "সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে না বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে আর সূর্য ঘোরে না কিন্ত আজ আজকের জীবিত বিজ্ঞানীরা আমাদের বলছে যে সূর্য স্থির নয় বরং সূর্যও নিজের কক্ষপথে অবিরাম ঘুরছে । শুনলে অবাক হবেন মরহুম বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপারনিকাস হুজুরের ফতোয়া টিকে ছিল ৫০ বছর ।
সুতরাং আমরা বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস করে খগেনদের মত হতে চাই না তবে আমরা এটাই মানি যে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য গবেষণা ইসলাম সম্মত হলে আমরা স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করি না আর করবোও না - হ্যাঁ এটাই আমাদের প্রস্তাব ।
উপরের আলোচনার সারমর্ম হলঃ
১/ বিজ্ঞান বলে প্রথমে মহাকাশ সৃষ্টি হয়েছে এরপরে পৃথিবী ।
২/ বিজ্ঞান জানে না মহাবিশ্বর আগের পরিবেশ কেমন ছিল ।
৩/ বিজ্ঞান এটাও জানে না যে পৃথিবী মহাবিশ্বর আগে থাকতে পারে কিনা ।
৪/ ইসলাম বলে আগে বিস্তৃত না করা অবস্থায় পৃথিবীকে সৃষ্টি করা হয় এরপরে মহাকাশ এরপরে কমপ্লিট ভাবে পৃথিবীকে সৃষ্টি করা হয় ।
৫/ ইসলাম বলে যেহেতু আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা তাই আল্লাহর পক্ষে পৃথিবীকে বিস্তৃত না করা অবস্থায় মহাবিশ্বর আগে সৃষ্টি করা একেবারেই সহজ।
৬/ যখন মহাবিশ্ব অথবা পৃথিবী সৃষ্টি করা হচ্ছিল তখন বিজ্ঞানীরা সেখানে কেউই ছিলেন না কিন্তু স্রষ্টাই এসব সৃষ্টি করছিলেন তাই স্রষ্টা যা বলবেন সেটাই সত্য বলে প্রমানিত হয়ে যাচ্ছে ।
৭/ বিজ্ঞান ইসলামের দৃষ্টি কখনো ভুল প্রমান করতে সক্ষম হবে না কারন মহাবিশ্ব পৃথিবী ইত্যাদি সৃষ্টিতে বিজ্ঞানীরা সেখানে ছিল না । যেখানে বিজ্ঞানীরাই ছিল না সেখানে বিজ্ঞান কি ভাবে ফতোয়া দিবে ?
৮/ বিজ্ঞানের উপর নাস্তিক ধর্মের অন্ধ বিশ্বাসী অনুসারীরা অন্ধ বিশ্বাস করলেও মুসলিমরা বিজ্ঞানের উপর অন্ধ বিশ্বাস করে না ।
৯/ বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য ইসলাম সম্মত হলে সেখানে মুসলিমরা বিজ্ঞান মানতে কোন আপত্তি নেই ।
১০/ বিজ্ঞান কখনো ইসলামের প্রস্তাব ভুল প্রমান করতে সক্ষম হবে না । এটাই ফাইনাল ।

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

Monday, September 23, 2019

দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য- আয়াতের শানে নূযূল

দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা নারীদের জন্য। আর সচ্চরিত্রা নারীরা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা নারীদের জন্য; লোকেরা যা বলে, তারা তা থেকে মুক্ত। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্ক। সুরা নূর আয়াত ২৬। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এইরূপ মন্দ কথা মন্দ লোকদের জন্যেই শোভা পায়। ভাল কথা ভাল লোকদের জন্যেই শোভনীয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ মুনাফিকরা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)-এর উপর যে অপবাদ আরোপ করেছে এবং তাঁর সম্পর্কে যে জঘন্য কথা উচ্চারণ করেছে তার যোগ্য তারাই। কেননা, তারাই অশ্লীল ও ম্লেচ্ছ। হযরত আয়েশা (রাঃ) সতী-সাধ্বী বলে তিনি পবিত্র কথারই যোগ্য। এ আয়াতটিও হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। আয়াতটির পরিষ্কার অর্থ এই যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ), যিনি সব দিক দিয়েই পবিত্র, তাঁর বিবাহে যে আল্লাহ তা'আলা অসতী ও ম্লেচ্ছা নারী প্রদান করবেন এটা অসম্ভব। কলুষিতা নারী কলুষিত পুরুষের জন্যে শোভনীয়। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ লোকে যা বলে তারা তা হতে পবিত্র। এই দুষ্ট লোকদের মন্দ ও ঘৃণ্য কথায় তারা যে দুঃখ ও কষ্ট পেয়েছে এটাও ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা লাভের কারণ। তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর স্ত্রী বলে জান্নাতে আদনে তাঁর সাথেই থাকবে।

একদা হযরত উসায়েদ ইবনে জাবির (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে বলেন- “আজ আমি ওয়ালীদ ইবনে উকবা (রাঃ)-এর এক অতি মূল্যবান ও উত্তম কথা শুনেছি।” তখন হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে বলেনঃ “ঠিকই বটে। মুমিনের অন্তরে একটি কথা আসে। তারপরে ওটা তার বক্ষের উপর চলে আসে এবং এরপর সে ওটা মুখ দ্বারা প্রকাশ করে। কথাটি ভাল বলে ভাল কথা শ্রবণকারী ওটাকে নিজের অন্তরে বসিয়ে নেয়। অনুরূপভাবে মন্দ কথা মন্দ লোকদের অন্তর হতে বক্ষের উপর এবং বক্ষ হতে জিহ্বা পর্যন্ত চলে আসে। মন্দ লোক ওটাকে শোনা দ নিজের অন্তরে বসিয়ে নেয়।” অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) (আরবি)-এই আয়াতটি পাঠ করেন। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি বহু কিছু কথা শোনার পর ওগুলোর মধ্যে যে কথা সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওটাই বর্ণনা করে তার দৃষ্টান্ত হলো ঐ ব্যক্তি যে কোন বকরীর মালিকের কাছে একটি বকরী চাইলো। তখন বকরীর মালিক তাকে বললোঃ “তুমি বকরীর যুথ বা খোয়াড়ে গিয়ে তোমার ইচ্ছামত একটি বকরী নিয়ে নাও।” তার কথামত সে যুথে গিয়ে বকরীর (প্রহরী) কুকুরের কান। ধরে নিয়ে আসলো।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) অন্য হাদীসে রয়েছেঃ “জ্ঞানের কথা মুমিনের হারারো সম্পদ। সে ওটা যেখানেই পাবে নিয়ে নিবে।”

মুনাফিকরা যখন আয়িশাহ -কে মিথ্যা অপবাদ দিল তখন আল্লাহ তা‘আলা অভিযোগ থেকে মুক্ত করার জন্য এ আয়াতটি নাযিল করেন।

উক্ত আয়াতে মূলত বলা হচ্ছে যে, নাবী-রাসূলগণ যেমন সৎ ও পূতঃপবিত্র, তাদের স্ত্রীগণও কখনো অসৎ হতে পারে না। সুতরাং তাদের স্ত্রীগণও সৎ ও সতী-সাধ্বী। আর অসৎ স্ত্রীগণ তো অসৎ লোকদের জন্য, কোন সৎ লোকদের জন্য অসৎ স্ত্রী নয়।

আয়িশাহ (رضي الله عنها) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎-এর অভ্যাস ছিল যে, সফরে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর স্ত্রীদের নামে লটারী করতেন। লটারীতে যার নাম উঠতো তাকে তিনি সাথে নিয়ে যেতেন। ঘটনাক্রমে তাঁর এক যুদ্ধে গমনের সময় লটারীতে আমার নাম উঠে আসে। আমি তাঁর সাথে গমন করি। আর এটা ছিল পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা। আমি আমার হাওদাতে বসে থাকতাম। যখন যাত্রীদল কোন জায়গায় নামতো তখন আমার হাওদা নামিয়ে নেয়া হত। আমি হাওদার মধ্যেই বসে তাকতাম। আবার যখন কাফেলা চলতে শুরু করত তখন আমার হাওদাও উটের ওপর উঠিয়ে দেয়া হত।
এভাবে আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই। যুদ্ধ শেষে আমরা মদীনায় ফিরতে শুরু করি। আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলে রাতে গমনের ঘোষণা দেয়া হয়। আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরণের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়ি এবং সেনা বাহিনীর তাঁবু থেকে বহু দূরে চলে যাই। প্রয়োজন পুরো করে আমি ফিরে এসে গলায় হাত দিয়ে দেখি যে, গলায় হার নেই। তখন হার খুঁজতে পুনরায় সেখানে যাই। আর তখন সেনাবাহিনী যাত্রা শুরু করে দিল। যে লোকগুলো আমার হাওদা উঠিয়ে দিত তারা মনে করল যে, আমি ঐ হাওদার মধ্যেই আছি, তাই তারা আমার হাওদাটি উটের পিঠে উঠিয়ে দিল এবং চলতে শুরু করল। ঐসময় পর্যন্ত স্ত্রীলোকেরা বেশি পানাহার করত না, ফলে তাদের দেহ বেশি ভারী হতো না। তাই আমাকে বহনকারীরা হাওদার মধ্যে আমার থাকা না থাকার কোন টেরই পেল না। তাছাড়া আমি ছিলাম ঐ সময় খুবই অল্প বয়সের মেয়ে। দীর্ঘক্ষণ পর আমি আমার হারানো হারটি খুঁজে পেলাম। সেনাবাহিনীর বিশ্রামস্থলে পৌঁছে সেখানে কাউকে পেলাম না। আমি যেখানে আমার উটটি ছিল সেস্থানে পৌঁছলাম। সেখানে আমি এ অপেক্ষায় বসে পড়লাম যে, সেনাবাহিনী সামনে অগ্রসর হয়ে যখন আমার না থাকার খবর জানবে তখন অবশ্যই এখানে লোক পাঠাবে। এমতাবস্থায় আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আর সফওয়ান বিন মুআত্তাল আস-সুলামী আয-যাকওয়ানী যিনি সেনাবাহিনীর পিছনে ছিলেন এবং শেষ রাত্রে চলতে শুরু করলেন সকালে এখানে পৌঁছেন। তিনি একজন ঘুমন্ত মানুষকে দেখতে পেয়ে আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে দেখে চিনতে পারলেন।

তার শব্দ শুনে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে নিজেকে চাদর দ্বারা সামলিয়ে নেই। তৎক্ষণাৎ তিনি তার উটটি বসিয়ে দেন এবং ওর হাতের ওপর নিজের পা রেখে সওয়ারীর ওপর আরোহণ করি। তিনি উটকে উঠিয়ে চালাতে শুরু করেন। আল্লাহ তা‘আলার শপথ! তিনি আমার সাথে কোন কথা বলেননি এবং আমিও তার সাথে কোন কথা বলিনি। প্রায় দুপুর বেলায় আমরা আমাদের যাত্রীদলের সাথে মিলিত হই। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যুকেরা অপবাদের ঘটনা রটিয়ে দেয়। আর এই افك বা মিথ্যা অপবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সূরা নূরের ১১-২০ নং আয়াত পর্যন্ত নাযিল হয় এবং প্রমাণিত হয় যে, আয়িশাহ  সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৫০, সহীহ মুসলিম হা: ২৭৭০)
الْإِفْكِ বলতে সে মিথ্যা অপবাদ রটনার ঘটনাকে বুঝানো হয়েছে, যে ঘটনায় আয়িশাহ -কে অপকর্মের অপবাদ দেয়া হয়েছে।
(عُصْبَةٌ مِّنْكُمْ)
অর্থাৎ যারা এ মিথ্যা অপবাদ দানে জড়িত তারা তোমাদের মধ্যকার একটি জামাত, যারা নিজেদেরকে মু’মিন বলে থাকে। এদের মধ্যে কেউ মুনাফিক, আর কেউ প্রকৃত মু’মিন, কিন্তু মুনাফিকদের প্ররোচনায় সে সব হয়েছে। তারা হলেন হাসসান বিন সাবেত যিনি রাসূলের কবি বলে পরিচিত, মিসত্বাহ বিন আসাসাহ ও হামনাহ বিনতে জাহাশ।

এ মিথ্যা অপবাদ রটানোর ঘটনাকে নিজেদের জন্য খারাপ মনে করো না। মান-সম্মানের ব্যাপার বলে যদিও বাহ্যিকভাবে খারাপ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু এর মাধ্যমে যাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে তাকে অপবাদ থেকে মুক্ত করা হবে, তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়া হবে এবং এর মাধ্যমে এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান দেয়া হবে যা তোমাদের উপকারে আসবে। আর যারা অপবাদ দিয়েছে তাদের মধ্যে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী এবং কে মূল হোতা তা চিহ্নিত করা হবে।
(وَالَّذِيْ تَوَلّٰي كِبْرَه)
‘এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে’ প্রধান ভূমিকা পালন করেছে মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সুলুল। সে এ অপবাদ রটনার ব্যাপারে অন্যদেরকে প্ররোচিত করেছে।
(لَوْلَآ إِذْ سَمِعْتُمُوْهُ ظَنَّ....)
মু’মিনরা যখন নিজেদের মাঝে এরূপ অপবাদমূলক কথা শুনবে তখন কী করণীয় হবে সে দিক নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা এরূপ অপবাদমূলক কথা শুনলে কেন নিজেদের ব্যাপারে ভাল ধারণা করলে না? তা হলন যে অপবাদ দেয়া হয়েছে তা থেকে তিনি মুক্ত, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ। অথচ অপবাদের জন্য চারজন সাক্ষী উপস্থিত করা উচিত তাও তারা করতে পারেনি, তারপরেও তোমরা মিথ্যা বলনি। উক্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার পরে হাসসান, মিসত্বাহ ও হামনাহ বিনতে জাহাশকে অপবাদের শাস্তি প্রদান করা হয়। (তিরমিযী হা: ৩১৮১, আবূ দাঊদ হা: ৪৪৭৪, হাসান) কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে শাস্তি দেয়া হয়নি। বরং তার জন্য আখেরাতের শাস্তি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, অপর দিকে মু’মিনদেরকে শাস্তি দিয়ে দুনিয়াতেই পবিত্র করা হয়েছে। ফলে আখিরাতে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না।
অর্থাৎ তোমরা যে মিথ্যা অপবাদ রটিয়েছ, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে পাকড়াও করতেন যদি তোমাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার রহমত না থাকত।

তোমরা বিষয়টি সত্য-মিথ্যা না জেনে, না বুঝে মুখে মুখে প্রচার শুরু করছ, আর বিষয়টিকে খুবই তুচ্ছ মনে করছ অথচ এটা আল্লাহ তা‘আলার নিকট খুবই বড় ধরণের অপরাধ। তোমাদের উচিত ছিল প্রচার না করে আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করা। যেমন হাদীসে এসেছে: কোন কোন সময় মানুষ আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টির এমন কথা উচ্চারণ করে ফেলে যার কোন গুরুত্ব তার কাছে নেই। কিন্তু ঐ কারণে সে জাহান্নামের এত নিম্নে পৌঁছে যায় যত নিম্নে আকাশ হতে জমিন রয়েছে। এমনকি তার চেয়েও নিম্নে চলে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ৬৪৭৮,
এখানে মু’মিনদেরকে দ্বিতীয়বার শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে যে, যখন তারা এ অপবাদের কথা শুনেছিল তখন এ ব্যাপারে কোন কথা না বলে তাদের এমনটি বলা উচিত ছিল যে, আমাদের এ ব্যাপারে কিছুই বলা উচিত নয়। যখন তারা এমনটি করেনি তখন তাদের প্রথম বারের ঘটনার জন্য সর্তক করে বলা হচ্ছে যে, দ্বিতীয়বার যেন তারা আর এমনটি না করে। মূলত তাদেরকে এ বিষয়ে সর্তক করে হচ্ছে।
‘নিশ্চয়ই‎ যারা পছন্দ করে যে, মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হোক’ এটা তৃতীয় সতর্ক বাণী যে, যারা এ ধরণের কথা শুনবে তার জন্য ওটা ছড়ানো হারাম। কারণ যারা ছড়ায় তাদের মূল উদ্দেশ্য হল মু’মিনদেরকে কষ্ট দেয়া এবং তাদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার করা। যারা এ রকম জঘন্য কথা ছড়িয়ে বেড়ায় তাদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি (হদ) এবং পরলৌকিক শাস্তি জাহান্নামে দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে:
সাওবান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদেরকে কষ্ট দিও না। এবং তাদের গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করো না। যে তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করবে আল্লাহও তার গোপনীয় দোষের পিছনে লাগবেন এবং তাকে এমনভাবে লাঞ্ছিত করবেন যে, তাকে তার বাড়ির লোকেরাও খারাপ দৃষ্টিতে দেখতে থাকবে। (মুসানাদ আহমাদ ৫/২৭৯)

মাসজিদে ভিক্ষা চাওয়া কি জায়েজ?

▌মাসজিদে ভিক্ষা চাওয়ার বিধান
·
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: يجلس كثير من المشوهين والسائلين في الحرم الشريف بمكة المكرمة يمدون أيديهم للحجاج والزوار والمعتمرين، ولا سيما في الطريق ما بين الصفا والمروة، وقد سمعت مرة أنه لا يجوز التصدق في المساجد، والسؤال هنا: هل يجوز إعطاء هؤلاء من الصدقات وهم في داخل الحرم، وهل تجوز الصدقة في الحرمين الشريفين خاصة وفي المساجد عامة؟ أفتونا جزاكم الله خيرا.
الجواب: أجاب شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله عن حكم السؤال في المسجد بما نصه: (أصل السؤال محرم في المسجد وخارج المسجد إلا لضرورة، فإن كان به ضرورة وسأل في المسجد ولم يؤذ أحدا؛ بتخطيه رقاب الناس، ولا غير تخطيه، ولم يكذب فيما يرويه ويذكر من حاله، ولم يجهر جهرا يضر الناس مثل أن يسأل والخطيب يخطب، أو وهم يستمعون علما يشغلهم به ونحو ذلك جاز والله أعلم).
أما الصدقة في المسجد فلا بأس بها، روى مسلم في صحيحه عن جرير قال: «كنا عند رسول الله صلى الله عليه وسلم في صدر النهار، قال: فجاءه قوم حفاة عراة مجتابي النمار أو العباء، متقلدي السيوف، عامتهم من مضر، بل كلهم من مضر، فتمعر وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم لما رأى بهم من الفاقة، فدخل ثم خرج فأمر بلالا فأذن وأقام فصلى ثم خطب فقال: (يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ...َ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا)، والآية التي في الحشر: (اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ)، تصدق رجل من ديناره، من درهمه، من ثوبه، من صاع بره، من صاع تمرة. حتى قال: ولو بشق تمرة، قال: فجاء رجل من الأنصار بصرة كادت كفه تعجز عنها، بل قد عجزت، قال: ثم تتابع الناس حتى رأيت كومين من طعام وثياب، حتى رأيت وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتهلل كأنه مذهبة ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من سن في الإسلام سنة حسنة، فله أجرها وأجر من عمل بها بعده من غير أن ينقص من أجورهم شيء، ومن سن في الإسلام سنة سيئة كان عليه وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير أن ينقص من أوزارهم شيء». وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
প্রশ্ন: “অনেক বিকলাঙ্গ ও ভিখারী মক্কা মুকাররমায় হেরেম শরীফের মধ্যে হাজি, জেয়ারতকারী ও ওমরাকারীদের কাছে হাত পাতে। বিশেষ করে সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী রাস্তায় তারা হাত প্রসারিত করে। আমি একবার এরকম কথা শুনেছি যে, মাসজিদের মধ্যে দান-খয়রাত করা না-জায়েজ। প্রশ্ন হলো—হেরেমের মধ্যে তাদেরকে দান করা কি জায়েজ? বিশেষত দুই হেরেম শরীফে এবং আমভাবে সকল মাসজিদে দান-খয়রাত করা কি জায়েজ? আমাদেরকে বিষয়টি অবহিত করুন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”
উত্তর: “মাসজিদে ভিক্ষা চাওয়ার বিধান প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) যে উত্তর দিয়েছেন, তা হলো—“মাসজিদের ভিতরে হোক, চাই বাহিরে হোক, মৌলিকভাবে জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ভিক্ষা চাওয়া হারাম। যদি তার প্রয়োজন থাকে, আর সে মাসজিদে ভিক্ষা চায়, মানুষের ঘাড় ডিঙিয়ে যেয়ে অথবা অন্য কোনোভাবে মানুষকে কষ্ট দেয় না, সে যা বর্ণনা করে এবং নিজের যে অবস্থা ব্যক্ত করে—সে ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নেয় না, এত জোরে কথা বলে না, যার কারণে লোকেরা কষ্ট পায়—যেমন: খুতবা চলাকালীন সময়ে ভিক্ষা চাওয়া, অথবা লোকেরা মনোযোগ দিয়ে ‘ইলমী আলোচনা শুনছে, সেখানে সে লোকদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে প্রভৃতি—তাহলে তার জন্য ভিক্ষা চাওয়া জায়েজ আছে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।”
পক্ষান্তরে মাসজিদের অভ্যন্তরে দান-খয়রাত করায় কোনো সমস্যা নেই। ইমাম মুসলিম তাঁর ‘সাহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, জারীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “আমরা ভোরের দিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় তাঁর কাছে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, গলায় চামড়ার আবা পরিহিত ও নিজেদের তরবারি ঝুলন্ত অবস্থায় একদল লোক আসল। এদের অধিকাংশ কিংবা সকলেই মুদ্বার গোত্রের লোক ছিল। অভাব অনটনে তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মুখমণ্ডল পরিবর্তিত ও বিষণ্ন হয়ে গেল। তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন, অতঃপর বেরিয়ে আসলেন। তিনি বিলাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে আজান দিতে নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) আজান ও ইকামাত দিলেন। নামাজ শেষ করে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং এ আয়াত পাঠ করলেন: “হে মানবজাতি, তোমরা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। ... নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী।” (সূরাহ নিসা: ১) অতঃপর তিনি সূরা হাশরের এ আয়াত পাঠ করলেন: “হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতের জন্য নিজে কী সঞ্চয় করেছে, সেদিকে লক্ষ করে।” (সূরাহ হাশর: ১৮)
অতঃপর উপস্থিত লোকদের কেউ তার দিনার, কেউ দিরহাম, কেউ কাপড়, কেউ এক সা‘ আটা ও কেউ এক সা‘ খেজুর দান করল। অবশেষে তিনি বললেন, “এক টুকরা খেজুর হলেও নিয়ে আসো।” বর্ণনাকারী বলেন, আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি একটি বিরাট থলি নিয়ে আসলেন। এর ভারে তার হাত অপারগ হয়ে যাচ্ছিল কিংবা অপারগ হয়ে গেল। অতঃপর লোকেরা সারিবদ্ধভাবে একের পর এক দান করতে থাকল। ফলে খাদ্য ও কাপড়ের দুটি স্তুপ হয়ে গেল। এ দেখে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চেহারা মুবারক খাঁটি সোনার ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে হাসতে লাগল।
তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো উত্তম প্রথা বা কাজের প্রচলন করে, সে তার উক্ত কাজের সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা করবে, সে এর বিনিময়েও সওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সওয়াব কোনো অংশে হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো খারাপ প্রথা বা কাজের প্রচলন করবে, তাকে তার এ কাজের পাপ বহন করতে হবে। তারপর যারা তাকে অনুসরণ করে এ কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ পাপও তাকে বইতে হবে। তবে এতে তাদের পাপ কোনো অংশেই হ্রাস করা হবে না।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; ‘জাকাত’ অধ্যায়; অধ্যায় নং: ১৩ পরিচ্ছেদ: ২০)
আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
ফতোয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)।
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)। [১]
·
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: أنا إمام مسجد وأواجه كثيرًا من المتسولين بعد الصلاة، فهل يجوز لي أن أمنع المتسول من الكلام وآمرهم بالذهاب إلى جوار الباب، أم لا؟
الجواب: لا أعلم دليلاً شرعيًا يوجب منع الفقير من السؤال في المسجد، إلا إذا علم أنه كذاب وليس بفقير فإنه يمنع من ذلك، وفق الله الجميع.
প্রশ্ন: “আমি একটি মাসজিদের ইমাম। নামাজের পর আমি অনেক ভিক্ষুকের মুখোমুখি হই। আমার জন্য ভিক্ষুকদেরকে কথা বলা থেকে বারণ করা এবং তাদেরকে মাসজিদের গেটের পাশে চলে যেতে বলা কি জায়েজ হবে, না কি না-জায়েজ হবে?”
উত্তর: “আমি এমন কোনো শার‘ঈ দলিল জানি না, যা মাসজিদের মধ্যে ভিক্ষা চাওয়া থেকে অভাবী ব্যক্তিকে বাধা দেওয়া আবশ্যক গণ্য করে। তবে যদি জানা যায় যে, সে একজন মিথ্যুক, সে আসলে অভাবী নয়, তাহলে তাকে এই কাজে বাধা দিতে হবে। আল্লাহ সবাইকে উত্তম কাজের তৌফিক দিন।” [২]
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৯০; ফতোয়া নং: ৬৬৫১; প্রশ্ন নং: ৪; ফতোয়ার আরবি টেক্সট আল-আইম্মাহ (alaemmah) ডট কম থেকে সংগৃহীত।
[২]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ৩০; পৃষ্ঠা: ১৭২; গৃহীত: binbaz.org.sa।

মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার শার‘ঈ নীতিমালা

▌মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার শার‘ঈ নীতিমালা
·
আলজেরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. মুহাম্মাদ ‘আলী ফারকূস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৪ হি./১৯৫৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
প্রশ্ন: “বাজারে যাওয়ার সময় মহিলার সাথে কি মাহরাম থাকা শর্ত? জাঝাকুমুল্লহু খইর।”
উত্তর: ❝যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, যাঁকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ, এবং দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার পরিজন, সঙ্গিবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃমণ্ডলীর ওপর। অতঃপর:
যদি মহিলার এমন কোনো প্রয়োজন থাকে, যার ফলে তার বাড়ির বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়—যেমন: চিকিৎসা নেওয়া, বাজারসদাই করা, মসজিদে যাওয়া প্রভৃতি—তাহলে তার দ্বীন পালনের স্বার্থে ও স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বাড়ির বাইরে বের হওয়া জায়েজ। কেননা নাবী ﷺ সাওদাহ বিনতে যাম‘আহর উদ্দেশে বলেছেন, قَدْ أَذِنَ اللهُ لَكُنَّ أَنْ تَخْرُجْنَ لِحَوَائِجِكُنَّ “আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫২৩৭; সাহীহ মুসলিম, হা/২১৭০]
তবে প্রয়োজনের কারণে বৈধভাবে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই তা শরিয়তের একগুচ্ছ নীতিমালার মাধ্যমে পরিবেষ্টিত হতে হবে। নিম্নে মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার শার‘ঈ নীতিমালা ধারাবাহিকভাবে আলোকপাত করা হলো।
প্রথমত, মহিলাকে তার অভিভাবক কিংবা তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে বের হতে হবে, এবং তার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে স্বামীর সন্তুষ্টি থাকতে হবে। মূলত উক্ত শর্ত যাবতীয় ভালোকাজে স্বামীর আনুগত্য করার আওতাভুক্ত। যাতে করে তাদের দাম্পত্যজীবন হয় সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ও কলহমুক্ত। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ “পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে ওই বিষয়ের হেফাজত করে, যা আল্লাহ হেফাজত করেছেন।” [সূরাহ নিসা: ৩৪]
নাবী ﷺ বলেছেন, إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا؛ قِيلَ لَهَا: ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الجَنَّةِ شِئْتِ “যদি কোনো মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি সে দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করো।” [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬১; সাহীহুল জামি‘, হা/৬৬১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
নাবী ﷺ আরও বলেছেন, إِذَا اسْتَأْذَنَكُمْ نِسَاؤُكُمْ بِاللَّيْلِ إِلَى المَسْجِدِ فَأْذَنُوا لَهُنَّ “তোমাদের স্ত্রীগণ রাত্রিবেলায় তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তোমরা তাদের অনুমতি দাও।” [সাহীহুল বুখারী, হা/৮৬৫; সাহীহ মুসলিম, হা/৪৪২]
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মসজিদে যাওয়ার জন্যই যদি অনুমতির প্রয়োজন হয়, তাহলে বাজারসদাই করা বা অন্যান্য কাজের জন্য বাইরে যেতে হলে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আরও বেশি, আরও উপযোগী।
দ্বিতীয়ত, মহিলা তার স্বামী বা অভিভাবকের সম্পদ থেকে কেবল ততটুকু নিবে, যতটুকু নেওয়ার অনুমতি তাকে দেওয়া হয়েছে। স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি ও পরামর্শ না নিয়ে সে সম্পদ খরচে স্বেচ্ছাচারিতা করবে না; এমনকি মহিলা তার নিজের সম্পদ খরচেও স্বেচ্ছাচারিতা করবে না। যাতে করে মহিলার ওপর তার স্বামীর পূর্ণ কর্তৃত্ব বজায় থাকে। কেননা নাবী ﷺ বলেছেন, وَلَيْسَ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَنْتَهِكَ شَيْئًا مِنْ مَالِهَا إِلَّا بِإِذْنِ زَوْجِهَا “কোনো মহিলার জন্য বৈধ নয় যে, সে তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার নিজের সম্পদ নষ্ট করবে।” [ত্বাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, ২২/৮৩; সাহীহুল জামি‘, হা/৫৪২৪; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
তৃতীয়ত, যদিও সফর ব্যতীত অন্যক্ষেত্রে মহিলার জন্য মাহরাম থাকা ওয়াজিব নয়, তথাপি সে কোনো বিশ্বস্ত সখীর সাথে বাইরে বেরোবে। যাতে তার ইজ্জত-আবরু ও দ্বীন-ধর্ম নিরাপদে থাকে। কেননা নাবী ﷺ বলেছেন, لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ تُسَافِرُ مَسِيرَةَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ عَلَيْهَا “আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, এমন মহিলার জন্য বিনা মাহরামে একদিন ও একরাতের পথ সফর করা জায়েজ নয়।” [সাহীহ বুখারী, হা/১০৮৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৯]
নতুবা একাকী বাজারে বের হলে সে ফেতনা, ফাসাদ ও অনিষ্ট ডেকে আনে—এমন বিষয়ের সম্মুখীন হতে পারে। কেননা নাবী ﷺ বলেছেন, خَيْرُ البِقَاعِ المَسَاجِدُ، وَشَرُّ البِقَاعِ الأَسْوَاقُ “সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদ। আর সর্বনিকৃষ্ট স্থান হলো বাজার।” [ত্বাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/১৩৭৯৮, হাকেম, মুস্তাদরাক, হা/৩০৬; সাহীহুল জামি‘, হা/৫৪২৪; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
চতুর্থত, মহিলা বাজারের পানে বাড়ি থেকে বের হলে, নিজের সম্পূর্ণ শরীর পর্দা দিয়ে আবৃত করবে। তার জন্য সৌন্দর্য প্রকাশ করে, সুগন্ধি ব্যবহার করে, নানাবিধ অলঙ্কার দ্বারা সুশোভিত হয়ে, সৌন্দর্যবর্ধক পাউডার ব্যবহার করে, অর্ধনগ্ন পোশাক পরিধান করে, অহংকারী হয়ে, নিজের দেহসৌষ্ঠব ও রূপের ব্যাপারে আত্মগর্বিতা হয়ে, পুরুষদেরকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে বাইরে বের হওয়া না-জায়েজ। তাই পোশাক ও লজ্জার ভূষণে নিজেকে আবৃত করা তার জন্য আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ “আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে; প্রাক-জাহেলি যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।” [সূরাহ আহযাব: ৩৩]
মহান আল্লাহ আরও বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا “হে নাবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। বস্তুত আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরাহ আহযাব: ৫৯]
নাবী ﷺ বলেছেন, وأَيُّمَا امْرَأَةٍ وَضَعَتْ ثِيَابَهَا فِي غَيْرِ بَيْتِ زَوْجِهَا فَقَدْ هَتَكَتْ سِتْرَ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ “যে নারী তার স্বামীর বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও তার কাপড় খোলে, সে আল্লাহ ও তার মধ্যকার পর্দা ছিঁড়ে ফেলে।” [সুনানে তিরমিযী, হা/২৮০৩; সাহীহুল জামি‘, হা/২৭১০; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
নাবী ﷺ আরও বলেছেন, ثَلَاثَةٌ لَا تَسْأَلْ عَنْهُمْ، وفيه: وَامْرَأَةٌ غَابَ عَنْهَا زَوْجُهَا قَدْ كَفَاهَا مُؤْنَةَ الدُّنْيَا فَتَبَرَّجَتْ بَعْدَهُ “তিন ব্যক্তিকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না (সরাসরি জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে)। তার মধ্যে রয়েছে ওই নারী, যার স্বামী বাইরে গিয়েছে, তার দুনিয়ার খোরপোশের জোগান দিতে, অথচ সে (স্বামীর অনুপস্থিতিতে) তার সৌন্দর্য প্রকাশ করেছে।” [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৯৪৩, আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৯০; সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/৫৪২; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
নাবী ﷺ অন্যত্র বলেছেন, وَشَرُّ نِسَائِكُمُ المُتَبَرِّجَاتُ المُتَخَيِّلَاتُ وَهُنَّ المُنَافِقَاتُ، لَا يَدْخُلُ الجَنَّةَ مِنْهُنَّ إِلَّا مِثْلُ الْغُرَابِ الأَعْصَمِ “তোমাদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট নারী তারাই, যারা সৌন্দর্য প্রকাশ করে, আর অহংকার করে। তারা তো মুনাফেক রমনী। ওই নারীদের মধ্য থেকে ‘সাদা পা-বিশিষ্ট কাকের মতো’ অতীব বিরল সংখ্যক নারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৩৪৭৮; সিলসিলাহ সাহীহাহ, হা/১৮৪৯; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
নাবী ﷺ বলেছেন, أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ “কোনো নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, আর সম্প্রদায়ের লোকেরা তার ঘ্রাণ পায়, তাহলে সে একজন ব্যভিচারিণী।” [সুনানে নাসায়ী, হা/৫১২৬; সাহীহুল জামি‘, হা/২৭০১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
নাবী ﷺ আরও বলেছেন, صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، وذَكَر: وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ المَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا “দুই শ্রেণির জাহান্নামীকে আমি কখনো দেখিনি। তার মধ্যে এক শ্রেণি হলো—ওই সমস্ত নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ। তারা পুরুষদের আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও তাদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের পিঠের কুঁজোর মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২১২৮; ‘পোশাক-পরিচ্ছদ ও প্রসাধনী’ অধ্যায়]
পঞ্চমত, সে যখন বাজারে বা অন্য কোথাও যাবে, তখন সে তার স্বামী অথবা অভিভাবকের আমানত রক্ষা করবে। সে কোনোভাবেই তার স্বামী বা অভিভাবকের সাথে খেয়ানত করবে না। তাই সে কোনো পরপুরুষের দিকে দৃষ্টিপাত করবে না, এমনকি ইতস্তত দৃষ্টিতেও পরপুরুষকে দেখবে না। সে পরপুরুষের সাথে সম্মোহনকারী প্রলোভিত কথা বলবে না এবং নিষিদ্ধ অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত হবে না। সে স্বামী বা অভিভাককে ধোঁকা দিয়ে পরপুরুষের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করবে না এবং পাপাচারমূলক সাক্ষাতে লিপ্ত হবে না। বস্তুত এগুলো এমন সব কাজ, যা তার দ্বীন-ধর্ম ও ইজ্জত-আবরুকে কদর্য করে দেয়। সুতরাং স্বীয় চোখের চাহনি অবনমিত করা, গলার আওয়াজ নিচু করা এবং স্বীয় জবান ও হাতকে অন্যায়, অশ্লীলতা ও কদর্যতা থেকে হেফাজত করা তার জন্য অপরিহার্য—ওয়াজিব।
কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ “পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে ওই বিষয়ের হেফাজত করে, যা আল্লাহ হেফাজত করেছেন।” [সূরাহ নিসা: ৩৪]
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, وَقُل لِّلْمُؤْمِنَٰتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَٰرِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَاۖ “আপনি মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।” [সূরাহ নূর: ৩১]
মহান আল্লাহ বলেছেন, يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِىِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ ٱلنِّسَآءِۚ إِنِ ٱتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِٱلْقَوْلِ فَيَطْمَعَ ٱلَّذِى فِى قَلْبِهِۦ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا “হে নাবীপত্নীরা, তোমরা অন্য নারীদের মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে থাক, তাহলে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বল না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। বরং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।” [সূরাহ আহযাব: ৩২]
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, لَّا يُحِبُّ ٱللَّهُ ٱلْجَهْرَ بِٱلسُّوٓءِ مِنَ ٱلْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا “আল্লাহ কোনো মন্দকথার প্রচারণা ভালোবাসেন না, তবে কেউ অত্যাচারিত হয়ে থাকলে তার কথা স্বতন্ত্র; বস্তুত আল্লাহ শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।” [সূরাহ নিসা: ১৪৮]
ষষ্ঠত, মহিলার জন্য বাইরে বের হওয়ার সময় পরপুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত হওয়া জায়েজ নয়। যেমনভাবে তার জন্য বৈধ নয়—কোনো পরপুরুষের ব্যবসাকেন্দ্রে বা অন্য কোনো জায়গায় একাকী সেই পরপুরুষের কাছে প্রবেশ করে তার সাথে হারাম নির্জনতা অবলম্বন করা। ফিতনার রাস্তা রুদ্ধ করার জন্যই তা বৈধ নয়। যেহেতু সে কুনজর, কুকথা ও কুকর্মের বেষ্টন থেকে নিরাপদ নয়। কেননা অন্তর যে কাজের প্রতি প্ররোচিত করে, আর শয়তান যে কাজ করার কুমন্ত্রণা দেয়, সে কাজের পুরো পরিণামই কেবল ক্ষতি আর ক্ষতি, নিন্দা আর নিন্দা! তাইতো নাবী ﷺ বলেছেন, أَلَا لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ “কোনো মহিলা পরপুরুষের সাথে একাকী মিলিত হলেই, তাদের তৃতীয়জন হিসেবে সেখানে উপস্থিত হয় শয়তান।” [সুনানে তিরমিযী, হা/২১৬৫; সাহীহুল জামি‘, হা/২৫৪৬; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
সপ্তম ও সর্বশেষ মূলনীতি হলো—মহিলা যদি তার দ্বীন ও দুনিয়ার প্রয়োজনে বাইরে বেরও হয়, তথাপি তার স্কন্ধে যে আমানত অর্পিত হয়েছে, তার দাবি অনুযায়ী তার জন্য স্বেচ্ছাচারিতা করে এমন কাজ করা জায়েজ নয়, যা আল্লাহ’র কাছে পছন্দনীয় নয়। তাই সে এমন জায়গায় যাবে না, যেখানে অসার ক্রিয়াকলাপ ও পাপাচার সংঘটিত হয়। সে এমন জায়গায় যাবে না, যেসব জায়গা অশ্লীল কর্মকাণ্ডে ভরপুর, অথবা যেসব জায়গায় মন্দ ও অকল্যাণ ছড়ানো হয়; সাধারণত যে জায়গাগুলোতে অসভ্য ও ইতর শ্রেণির লোকেরাই যেয়ে থাকে। কেননা সন্দেহাতীতভাবে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারমূলক পদচারণা আমানতের খেয়ানত, নিজের বিনাশ এবং ধ্বংস ও দুর্যোগে নিপাতিত হওয়ার অসিলা।
বস্তুত প্রকৃত ‘ইলম আল্লাহ’র নিকট রয়েছে। সর্বোপরি যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃবর্গের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।❞

Sunday, September 22, 2019

মৃতকে গোসল দেয়ার পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি ও বিধিবিধান

মৃতের গোসল, কাফন, জানাযার সলাত এবং দাফন করা ফরযে কেফায়া। (অর্থাৎ কিছু লোকে কাজটি করলে অন্যরা দায়মুক্ত হবে। অন্যথা সকলেই গুনাহগার হবে)

➤ মাইয়েতকে কে গোসল দেবে ?
যে ব্যক্তি গোসলের সুন্নাত সম্পর্কে বেশী অবগত সেই গোসল দিবে। তাতে তার জন্য সওয়াব রয়েছে যদি সে আল্লহর সন্তুষ্টির জন্যে করে এবং মৃতের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে ও যা কিছু খারাপ দেখবে তা মানুষের নিকট না বলে।(বায়হাক্বী ৩/৩৯৫, সহীহ আত তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ সহীহ)।
তবে গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তি হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি ওছিয়ত করে গিয়েছে। তারপর তার স্ত্রী বা পিতা বা ছেলে। তারপর অপরাপর নিকটাত্মীয় রক্তসম্পর্কিত ‘আসাবা’ (নিকটাত্মীয় না থাকা অবস্থায় দূরবর্তী যেসব আত্মীয়-স্বজন মৃতের উত্তরাধিকার লাভ করে) তাদের নিকট তরতীবে যে আগে। আর মহিলার গোসলে প্রথম হকদার হল তার ওছিয়তকৃত মহিলা। তারপর তার স্বামী বা মা। তারপর তার মেয়ে। তারপর অন্যান্য নিকটাত্মীয় রক্তসম্পর্কিত ‘আসাবা’ মহিলাগণ।
মৃতকে চাই পুরুষ হোক বা নারী হোক সমস্তশরীর একবার ধৌত করা যথেষ্ট। মৃতকে গোসলের সময় গোসলদাতা ও যারা তাকে সাহায্য করবে তারা উপস্থিত হবে এবং অন্যান্যদের হাজির হওয়া মকরুহ।
স্বামী আগে মৃত্যুবরণ করলে স্ত্রী কিংবা স্ত্রী আগে মৃত্যুবরণ করলে উভয় উভয়কে গোসল দেওয়ার বেশি হকদার।
>> কিন্তু আমাদের সমাজে তথাকথিত আলেম গণ ফতওয়া জারি করে রেখেছেন, স্বামী বা স্ত্রী কেউ মারা গেলে অপর জন এর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই তাকে গোসল দেওয়া, ছোয়া, দেখতে দেওয়া না জায়েজ। কিন্তু মৃত্যুর কয়েকদিন পর সম্পদ ভাগাভাগি হয় ব্যস্ততার সঙ্গে।
শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বায (রহঃ) সাবেক সৌদি ফতওয়া বোর্ড প্রধান বলেন, অনেক ফিকাহ বিদ মন্তব্য করেন যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু নশ্বর এই জীবনে সীমাবদ্ধ। এই মন্তব্য হাদীসের পরিপন্থী, বিধায় তার দিকে কর্ণপাত না করাই ভাল। (জানাযার কিছু বিধান পৃষ্ঠা-১২, বঙ্গঃ)।

➤ চলুন হাদীসের দলীলে কি আছেঃ
➧ আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বাকীউল গারকাদ থেকে যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি আমাকে মাথার যন্ত্রনা অবস্থায় পেলেন। আমি বলেছিলাম, হ্যায় আমার মাথা ব্যাথা। তখন রাসূল বলেছিলেন, আয়েশা! বরং আমারই মাথা ব্যাথা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমার কোন সমস্যা নেই। তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও তবে আমি তোমার পাশে থাকবো, তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং জানাযার সালাত আদায় করবো।
(ইবনু মাজাহ হ/১৪৬৫; ইরওয়াল গালীল হা/৭০০, সনদ হাসান)।
➝ এই হাদীস  পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট মৃত্যুর পর স্বামী-স্ত্রী একজন অপরজনকে গোসল দেওয়া বৈধ! বরং এটাই ছিলো নবী ﷺ ও তাঁর স্ত্রীদের নিকট আকাংখিত। সুতরাং যেখানে গোসল দেওয়া ইসলামী শরীয়তে জায়েজ সেখানে দেখা দেওয়া না-জায়েজ হয় কি করে?

➧ আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) বলেন, আমি এবং আলী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) এর কণ্যা ফাতেমাকে গোসল দিয়েছি।(হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭, বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, ইওয়াউল গালীল হা/৭০১)। 
ফাতেমা (রাঃ) এর মৃত্যুর পর তার জানাযাও পড়েছিল তার স্বামী আলী (রাঃ)। (বুখারী হা/৪২৪০, মুসলিম হা/১৭৫৯)।

➧ আবু বকর (র) ওছিয়ত করেছিলেন যে, তার স্ত্রী যেন তাঁকে গোসল দেয়। (মুসান্নাফ আবর্দু রাজ্জাক- হা/৬১৬৭)
আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) তার স্বামী আবু বকর (রাঃ) কে গোসল করান। যখন তিনি ইন্তেকাল করেন।----(মুয়াত্ত্বা মালিক ১/২৮৪ পৃষ্ঠা, ইঃ ফাঃ, আল জানাইযঃ৪৬৬)।

➧ অন্য দিকে আয়েশা (রাঃ) বলেন, পরে যা জানলাম তা যদি আগে জানতাম, তবে রাসূল কে তার স্ত্রীরা ছাড়া অন্য কেউ গোসল দিত না। (ইবনু মাজাহ হ/১৪৬৪, আবু দাউদ হা/৩১৪১, ইরওয়াল গালীল হা/৭০২, সনদ হাসান)।

➜ এখান থেকে জানা যায় রাসূল স.এর মৃত্যুর সময় আয়েশা রা.জানতেন না যে স্ত্রীরাও স্বা্মীকে গোসল দিতে পারে, জানা থাকলে অন্যদের দিয়ে গোসল করাতেন না। রাসূল স.এর স্ত্রীরাই গোসল দিতেন তা উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায়।

➤ আগুনে পুড়ে মারা গেলে তার গোসলের বিধান:
১. যদি মুসলিম ও কাফের একত্রে পুড়ে ইত্যাদি ভাবে মারা যায় এবং পার্থক্য করা সম্ভব না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা মুসলিম তাদের উদ্দেশ্যে সকলকে গোসল, কাফন ও জানাযা করে দাফন করবে।
২. আগুনে পুড়ে মরা বা শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে ইত্যাদি ব্যক্তির গোসল দেওয়া যদি সম্ভব না হয় কিংবা পানি না থাকে, তাহলে গোসল, ওযু ও তায়াম্মুম ছাড়াই কাফন পরিয়ে তার জানাযা পড়তে হবে। শরীরের কিছু অংশ যেমন হাত-পা ইত্যাদির উপর জানাযা পড়া জায়েজ যদি বাকি অংশ পাওয়া অসম্ভব হয়।
➧ সাত বছর বা তার কম বয়সের ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তাকে নারী বা পুরুষ গোসল দিতে পারবে। (ফিকাহুস সুন্নাহ ১/২৬৮ পৃষ্ঠা)।
➧ যদি কোন পুরুষ অপরিচিত নারীদের মাঝে বা কোন নারী অপরিচিত পুরুষদের মাঝে মারা যায় অথবা গোসল দেওয়া সমস্যা হয় তবে গোসল ছাড়াই জানাযা পড়ে দাফন করতে হবে। অর্থাৎ গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হল, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করে (মুছে) দিবে।
➧ আল্লহর রাস্তায় যুদ্ধের ময়দানে মৃত শহীদকে গোসল দেওয়া চলবে না। ধর্ম যুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না, এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদদেরকে তাদের রক্তমাখা কাপড় নিয়েই দাফন করতে নির্দেশনা দেন, তিনি তাদেরকে গোসল দেন নি।” [বুখারী, ১৩৪৬] “এমনিভাবে তাদের ছালাতে জানাযাও পড়েন নি।” (বুখারী ও মুসলিম) (তালখিছ ২৮-৩৩ পৃষ্ঠা)। এ ছাড়া আর যত শহীদ আছে তাদেরকে গোসল দিতে হবে।

 ঋতুমতী মহিলাও-তার ঋতু অবস্থায় থাকলেও-মৃতের গোসল দিতে পারবে। (মুগনী)।
আলকামাহ, আত্বা প্রভৃতি ইমামগণ বলেন, ঋতু বা বীর্যপাত জনিত নাপাকে থেকেও মৃতকে গোসল দেওয়ায় কোন ক্ষতি নেই।(ইবনে আবী শায়বাহ ১০৯৫৮, ১০৯৬০)।

উরওয়াহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁকে (‘উরওয়াহ্‌কে) প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ঋতুবতী স্ত্রী কি স্বামীর খিদমত করতে পারে? অথবা গোসল ফরয হওয়ার অবস্থায় কি স্ত্রী স্বামীর নিকটবর্তী হতে পারে? ‘উরওয়াহ (রহঃ) জবাব দিলেন, এ সবই আমার নিকট সহজ। এ ধরনের সকল মহিলাই স্বামীর খিদমত করতে পারে। এ ব্যাপারে কারো অসুবিধা থাকার কথা নয়। আমাকে ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, তিনি হায়েযের অবস্থায় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল আঁচড়ে দিতেন। আর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’তাফিক অবস্থায় মসজিদ হতে তাঁর (‘আয়িশার) হুজরার দিকে তাঁর নিকট মাথাটা বাড়িয়ে দিতেন। তখন তিনি মাথার চুল আঁচড়াতেন অথচ তিনি ছিলেন ঋতুবতী। (বুখারী, হাদিস নং ২৯৬)

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হায়েযের অবস্থায় ছিলাম। (বুখারী, হাদিস নং ২৯৭)

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু শাদ্দাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি আমার খালা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মাইমূনা (রাঃ) হতে শুনেছি যে, তিনি হায়েয অবস্থায় সালাত আদায় করতেন না; তখন তিনি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের সিজদার জায়গায় সোজাসুজি শুয়ে থাকতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার চাটাইয়ে সালাত আদায় করতেন। সিজদা করার সময় তাঁর কাপড়ের অংশ আমার (মাইমূনাহ্‌র) শরীর স্পর্শ করতো।(বুখারী, হাদিস নং ৩৩৩; ৩৭৯, ৩৮১, ৫১৭, ৫১৮ দ্রষ্টব্য) (আ.প্র. ৩২১, ই.ফা. ৩২৬)

সুতরাং এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে হায়েজ অবস্থায় গোসল করাতে কোন বাধা নেই। কেননা মুমিন কখনই নাপাক হয়না তবে সাময়িক শারীরিক নাপাক হতে পারে কিন্তু অন্তর সর্বদা পবিত্রই থাকে। আর যারা কাফের তারা সর্বদাই নাপাক থাকে।

জানাযার লাশের গোসল সম্বন্ধে পূর্ণ অবগত যেকোন মুসলমান ব্যক্তিগণ গোসল দিতে পারে।
রসূল (ছাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয় সে যেন গোসল করে আর যে ব্যক্তি তাকে বহন করে সে যেন ওযু করে। (তিরমীযি,ইবনে মাজাহ হা/ ১৪৬৩আহকামুল জানায়েয)

 হজ্জ বা ওমরায় গিয়ে ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ মারা যায়, তবে তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দিবে। কিন্তু কোন সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পুরুষ হলে কাফনের সময় তার মাথা ঢাঁকবে না। বিদায় হজ্জে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে নবী (সা বলেন: “তাকে কোন সুগন্ধি লাগাবে না, এবং তার মাথা ঢাঁকবে না। কেননা সে ক্বিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক ব্যক্তি আরাফাতে ওয়াকুফ অবস্থায় হঠাৎ তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে গেল অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার ঘাড় মটকিয়ে দিল। (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৫।]


 গর্ভস্থ সন্তান যদি চার মাস অতিক্রম হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে তার গোসল ও জানাযার সালাত আদায় করবে। আর তার বয়স যদি চার মাসের কম হয়, তবে তাতে প্রাণ না থাকার কারণে সাধারণ একটি গোশতের টুকরা গণ্য হবে। যা কোনো গোসল বা জানাযা ছাড়াই যে কোনো স্থানে মাটিতে গেড়ে দেওয়া হবে। 
কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “তোমাদের প্রত্যেকের শুক্র তার মাতৃ উদরে চল্লিশ দিন জমাট থাকে। এরপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। এরপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে তা একটি গোশত পিণ্ডের রূপ নেয়। এরপর আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে একজন ফিরিশতা পাঠানো হয়। সে তাতে রুহ ফুকে দেয়। আর তাঁকে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তা হল এই তার রিযিক, তার মৃত্যুক্ষণ, তার কর্ম এবং তার বদকার ও নেককার হওয়া। সেই সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ জান্নাতবাসীদের মতো আমল করতে থাকে, অবশেষ তার মধ্যে ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। এরপর তাকদীরের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের কাজ-কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোনো কোন ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করতে থাকে। অবশেষে তার ও জাহান্নামের মাঝখানে একহাত মাত্র ব্যবধান থাকে। এরপর ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে। অবশেষে জান্নাতে দাখিল হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৪৩।]
সাঈদ ইবন মুসাইয়্যিব রহ. মৃত গর্ভপাত সম্পর্কে বলেন,  “চার মাস হলে তাতে রূহ ফুক দেওয়া হয় তখন জানাযা পড়া হবে”। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ১১৫৯৪।]
➤ কাফেরকে গোসল দেওয়ার বিধান:
কোন কাফেরকে গোসল দেয়া এবং দাফন করা মুসলমানের উপর হারাম।
আল্লাহ্ বলেন: (ولاَ تُصَلِّ عَلىَ أحَدٍ مِنْهُمْ ماَتَ أبَداً)
“আপনি তাদের (কাফের মুনাফেকদের) উপর কখনই জানাযা সালাত আদায় করবেন না।” (তওবাহ্- ৪৮)
কোন মুসলিমের জন্য কোন কাফেরকে গোসল দেওয়া বা কাফন পরানো কিংবা তার উপর জানাজা পড়া বা তার মৃতদেহকে বিদায় জানানো কিংবা দাফন করা হারাম। বরং যদি তার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ না থাকে তবে মাটি দ্বারা তাকে ঢেকে দিবে। আর মুশরিক ব্যক্তির মুসলিম আত্মীয়-স্বজনদের জন্য তার (মুশরিক) মৃতদেহকে দাফনের জন্য সাথে যাওয়া বৈধ নয়।

➤ মাইয়েতের সুন্নাতী পন্থায় গোসলের পদ্ধতি: 
মৃতের গোসল ডান দিক থেকেই শুরু করা মুস্তাহব। (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ হা/১৪৫৮)।
 উম্মে আতিয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যার গোসলের ব্যাপারে বলেছেন,“তোমরা তার ডান দিক থেকে এবং অযুর স্থানসমূহ থেকে শুরু করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৫]
যখন কেউ কোন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিতে চাইবে তখন তাকে গোসলের খাটে রাখবে। এরপর তার আওরতকে ঢেকে দিয়ে (লজ্জাস্থান সমূহ ঢেকে দেওয়া) তার শরীরের কাপড় খুলে নিবে। অত:পর প্রায় বসার মত করে তার মাথাকে উঁচু করবে। এরপর নরম করে তার পেটকে চাপবে ও বেশী করে পানি ঢেলে ময়লা বের করে নিবে। এরপর গোসলদাতার হাতে একটি নেকড়া পেঁচিয়ে বা হাত মোজা পরিধান করবে। অত:পর গোসলের নিয়ত করে প্রথমে সলাতের ওযুর মত করে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা আঙ্গুলয় নাকে ও মুখে প্রবেশ করাবে ( একখন্ড ভেজা কাপড়ের সাহায্যে)। 
অত:পর কুল পাতা (বা সাবান) মিশ্রিত পানি দ্বারা (বুখারি হা/১২৫৩,১৬৭)প্রথমে মাইয়েতের মাথা ও দাড়ি ধৌত করবে। পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। এরপর ঘাড় হতে পা পর্যন্ত প্রথমে ডান পার্শ্ব ধৌত করবে। এরপর বাম পার্শ্বের উপর রেখে ডান দিকের পিঠ ধৌত করবে। অত:পর অনুরূপ ভাবে বাম পার্শ্ব ধৌত করবে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার প্রথম বারের মত ধৌত করবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে। যদি পরিস্কার না হয় তবে বেজোড় করে পরিস্কার হওয়া পর্যন্ত ধৌত করবে।

উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাগণের মধ্যে একজন মারা গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং বললেন, তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পূর (অথবা তিনি বলেন) ‘কিছু কর্পূর’ ব্যবহার করবে। গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। উম্মে আতিয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা শেষ করে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটি তার ভিতরের কাপড় হিসেবে পরাও। আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং তাতে তিনি (উম্মে আতিয়্যাহ) বলেছেন, তিনি বলেছেন, তাঁকে তিন, পাঁচ, সাত বা প্রয়োজনবোধে তার চাইতে অধিকবার গোসল দাও। হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা তার মাথার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে দেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৫৮, ১২৫৯।]

উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যার মাথা তিনটি বেণী করে দেন। তারা তা খুলেছেন, এরপর তা ধুয়ে তিনটি বেণী করে দেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬০।]

গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। আর গোসলের শেষ বারে পানির সঙ্গে কাফূর বা আতর-সেন্ট মিশিয়ে ধৌত করবে। এরপর একটি কাপড় দ্বারা মুছে নিতে হবে। আর যদি মৃতের মোচ বা নখ বেশী লম্বা হয় তবে কেটে ফেলা মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নীচের চুল কাটা যাবে না। মহিলার চুলকে তিনটি বেণী করে পিছনের দিকে রাখা মুস্তাহাব।(বুখারি হা/১২৬২,১৬৭;তালখিছ ২৮-৩০ পৃষ্ঠা)।
আর যদি গোসলের পর মৃতের দেহ থেকে নোংরা কিছু বের হয় তবে বের হওয়ার স্থান ধৌত করে তুলা দ্বারা বন্ধ করে আবার ওযু করাতে হবে।
যদি গোসলের পর মাইয়েতের শরীর থেকে কোন না-পাক বস্তু বের হয় তবে নতুন করে গোসল দেয়ার প্রয়োজন নেয়; কারণ এতে কষ্ট ও জটিলতা সৃষ্টি হবে। (তোয়াইজুরী, ইসলামী ফিকাহ ২/১১০-১১ পৃষ্ঠা বঙ্গঃ)।



লিংকঃ https://youtu.be/NAhk20EOFZQ
সম্পূর্ণ আলোচনার লিংকঃ https://youtu.be/vbNepmALR1w



আলোচ্য ভিডিও বক্তব্যটিতে আলোচক মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার ফযীলত ও মৃত ব্যক্তির সম্মান রক্ষা করার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। সেই সাথে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, মুহরিম অবস্থায় ইন্তেকাল করা এবং কাফন এর বিধান উপস্থাপন করেছেন। অতপর মৃত ব্যক্তিকে গোসলদাতার গুণাবলী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোসল পর্যালোচনান্তে কাফন পরানোর বাস্তব পদ্ধতি খুব সুন্দর ভাবে দেখিয়েছেন। পরিষেশে সরাসরি বিষয় সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু প্রশ্নের কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জবাব দিয়েছেন।
লিংকঃ https://youtu.be/l81pv7kbL6s


Wednesday, September 18, 2019

নারী-পুরুষের সলাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি ও এর আনুসঙ্গিক কার্যাবলী দলিলসহ

নারী-পুরুষের সলাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি ও এর আনুসঙ্গিক কার্যাবলী দলিলসহ (নিয়ত, ওজু, তাইমুম, গোসল, সলাত) বিস্তারিত আলোচনাঃ 


🔰  নিয়ত কী ও কাকে বলে এর বাস্তব প্রমাণ দেখুন

❐ নিয়ত হলো মনের ইচ্ছা।
আর মুখে নিয়ত পড়া বিদআত।
❐ যে কোনও আমলের জন্য নিয়ত জরুরী। নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদত বা আমল শুদ্ধ হয় না। মহানবী (সাঃ) বলেন, “আমলসমূহ তো নিয়তের উপরেই নির্ভরশীল।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১নং)
ইমাম নওবী (রহঃ) বলেন, নিয়ত বলে মনের সংকল্পকে। (যার স্থল হল হৃদয় ও মস্তিষ্ক।) সুতরাং নামাযী নির্দিষ্ট নামাযকে তার মন-মস্তিষ্কে উপস্থিত করবে। যেমন যোহ্‌র, ফরয ইত্যাদি নামাযের প্রকার ও গুণ মনে মনে স্থির করবে। অতঃপর প্রথম তকবীরের সাথে সাথে (মন-মস্তিষ্কে উপস্থিতকৃত কর্ম করার) সংকল্প করবে। (রওযাতুত ত্বালেবীন ১/২২৪, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৮৫পৃ:)
এই সংকল্প করার জন্য নির্দিষ্ট কোন শব্দ শরীয়তে বর্ণিত হয় নি। আরবীতে বাঁধা মনগড়া নিয়ত বা নিজ ভাষায় কোন নির্দিষ্ট শব্দাবলী দ্বারা রচিত নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বা আওড়ানো বিদআত। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩১৪, ৩১৫) সুতরাং নিয়ত করা জরুরী, কিন্তু পড়া বিদআত।
ইবনুল কাইয়েম (রহঃ) বলেন, নবী (সাঃ) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। এর পূর্বে তিনি কিছু বলতেন না এবং মোটেই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতেন না। তিনি এ কথাও বলতেন না যে, (নাওয়াইতু আন) ‘উসাল্লী লিল্লাহি সালাতান---, আল্লাহর উদ্দেশ্যে অমুক নামায, কেবলাহ্‌ মুখে, চার রাকআত, ইমাম বা মুক্তাদী হয়ে পড়ছি।’ আর না তিনি আদায়, কাযা বা বর্তমান ফরযের কথা উল্লেখ করতেন। উক্ত ১০ প্রকার বিদআতগুলির কোন একটি শব্দও তাঁর নিকট হতে কেউই বর্ণনা করেন নি; না সহীহ সনদ দ্বারা, না যয়ীফ দ্বারা, না মুসনাদ রুপে, আর না-ই মুরসাল রুপে। বরং তাঁর কোন সাহাবী হতেও ঐ নিয়তের কথা বর্ণিত হয়নি। কোন তাবেয়ীও তা বলা উত্তম মনে করেন নি, আর না-ই চার ইমামের কেউ---। (যাদুল মাআদ ১/২০১)
নিয়ত করতে হয়,,পড়তে হয় না,,পড়লে এটা বিদায়াত।
কেনো না আল্লাহর রাসূল করেনি ও করতে বলেনি।।
এভাবে, প্রত্যেকটা কাজের ইচ্ছা বা
সংকল্প করা হলো নিয়ত। তাই শুধু শুধু কষ্ট
করে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়তে হবে
না। আপনি কাজটা কেন করছেন, আল্লাহ
মনের খবর জানেন। "মানুষ তার নিয়ত
অনুযায়ী প্রতিদান পাবে।" (সহিহ বুখারি,
হাদিস নং ১)
মুখে নিয়ত পাঠ করা জঘন্যতম বিদআত।
❐ সবাই মনে রাখবেন,
দ্বীন (ইসলাম) হচ্ছে সহজ। (বুখারি ৩৯)
নিয়ত পড়তে হয় না। নিয়ত করতে হয়।
(বুখারি ১)
এটা দীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি,,
তাই এটা প্রত্যাখ্যাত।
তাই এটা বাতিল করতে হবে।
এটা অাল্লাহর রাসূল বলেছেন।
(মিশকাত হাদিস : ১৪০,বুখারী হাদিস : ২৬৯৭, ইবনে মাজাহ হাদিস : ১৪)
❐নিয়তের এর বাস্তব কিছু প্রমান দেখুনঃ
❐প্রসংগ সিয়ামঃ------------------
❐ আপনি রাত্রে ঘুম থেকে ওঠে সাহরি খাচ্ছেন? কেন খাচ্ছেন? অবশ্যই সিয়াম রাখার জন্য। অন্তরে সিয়াম রাখার এই সংকল্প করাই হলো প্রকৃত নিয়ত।
❐ আবার, আপনি হঠাৎ করে সন্ধ্যার সময় শরবত, খেজুর ইত্যাদি খাবার নিয়ে মাগরিবের আজানের জন্য অপেক্ষা করছেন? কেন অপেক্ষা করছেন? খাবার আপনার সামনে থাকা সত্ত্বেও কেন খাচ্ছেন না? অন্যান্য মাসে তো এরকম করেন না! অবশ্যই সারাদিন সিয়াম রেখেছেন, এখন সিয়াম ভাঙ্গার জন্যই মাগরিবের আজানের জন্য অপেক্ষা করছেন। এটাই হলো প্রকৃত নিয়ত।
❐প্রসংগঃ সলাতঃ----------------
ধরুন আছরের আজান দিলো। আপনি অজু করতে গেলেন।
এখন আপনি কেন অজু করতে গেলেন????
নিশ্চয়ই আছরের সলাত পরার জন্য!! মানে অন্তরে নিয়ত হয়ে গেছে।
আবার, জায়নামাজ বিছালেন বা সলাত পরার স্থানে গেলেন। কিন্তু কেন?? উদ্দেশ্য কি??
নিশ্চয়ই আছরের সলাত পড়ার জন্য?? তার মানে নিয়ত হয়ে গেছে।
আবার, আপনি সলাতের জন্য দাড়ালেন। কিসের সলাত?? নিশ্চয় আছরের সলাত?? এটা আপনার আগেই জানা আছে। (কোন ওয়াক্তের সলাত তার নিয়ত হয়ে গেছে)
আসরের সলাত কয় রাকাত তাও আপনার জানা আছে।(কয় রাকাত সলাত পরবেন তার নিয়তও হয়ে গেল)
এখন ফরজ সলাত পরবেন নাকি সুন্নাত সলাত পরবেন এটাও অলরেডি আপনি মনে মনে ঠিক করে ফেলেছেন। (মানে আপনার ফরজ বা সুন্নাত সলাতের নিয়তও হয়ে গেল)
❐ এভাবে, প্রত্যেকটা কাজের ইচ্ছা বা সংকল্প করা হলো নিয়ত। তাই শুধু শুধু কষ্ট করে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়তে হবে না। আপনি কাজটা কেন করছেন, আল্লাহ মনের খবর জানেন। "মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে।" (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১)
❐ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই দ্বীন (ইসলাম) সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর..।" (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৯)
❐ অতএব, শুধু শুধু কষ্ট করে সুন্নাহ পরিপন্থি আরবি নিয়ত মুখস্হ করবেন কেন? এসব নিয়ত মুখস্হ না করে কুর'আনের অন্তত ৩ টা আয়াত মুখস্হ করুন। নামাযে পড়তে পারবেন। সওয়াবও হবে। ইংশা'আল্লাহ।
❐ সবাই মনে রাখবেন,
দ্বীন (ইসলাম) হচ্ছে সহজ। (বুখারি ৩৯)
নিয়ত পড়তে হয় না। নিয়ত করতে হয়। (বুখারি ১)
❐ আল্লাহ, আমাদের সবাইকে সঠিক ও সহজ দ্বীন বুঝার ও বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দিন।
আমিন ছুম্মা আমিন

➥➥➥➥➥➥

🔰ওজুর নিয়মাবলীঃ

 নামাযী প্রথমে মনে মনে ওযুর নিয়ত করবে। কারণ নিয়ত ছাড়া কোন কর্মই শুদ্ধ হয় না।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১নং)
‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলে ওযু শুরু করবে। কারণ শুরুতে তা না বললে ওযু হয় না। (আবূদাঊদ, সুনান ৯২নং)
 তিনবার দুইহাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে।হাতে ঘড়ি, চুড়ি, আংটি প্রভৃতি থাকলে তা হিলিয়ে তার তলে পানি পৌঁছাবে। আঙ্গুল দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করবে।
(আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৪০৭নং)
এরপর পানির পাত্রে হাত ডুবিয়ে পানি নিতে পারে। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ ৩৯৪নং) প্রকাশ যে, নখে নখ পালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত ওযু হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় ওযু-গোসল হয়ে যাবে।
(ইং শা আল্লাহ)
তারপর ডানহাতে পানি নিয়ে ৩ বার কুল্লি করবে।
অতঃপর পানি নিয়ে নাকের গোড়ায় লাগিয়ে টেনে নিয়ে বামহাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। এরুপ ৩ বার করবে। তবে রোযা অবস্থায় থাকলে সাবধানে নাকে পানি টানবে, যাতে গলার নিচে পানি না চলে যায়।
(তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান ৮৯, মিশকাত ৪০৫, ৪১০নং)
অবশ্য এক লোট পানিতেই একই সাথে অর্ধেক দিয়ে কুল্লি করে বাকি অর্ধেক দিয়ে নাক ঝাড়লেও চলে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩৯৪নং)
অতঃপর মুখমন্ডল (এক কান থেকে অপর কানের মধ্যবর্তী এবং কপালের চুলের গোড়া থেকে দাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত অঙ্গ) ৩ বার পানি লাগিয়ে দুইহাত দ্বারা ধৌত করবে। (বুখারী ১৪০নং) এক লোট পানি দাড়ির মাঝে দিয়ে দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে আঙ্গুল চালিয়ে তা খেলাল করবে। (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৪০৮নং) মহিলাদের কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না।
[তবে টিপ দেয়া মুসলিমের জন্য বৈধ নয় বরং তা হারম]
অতঃপর প্রথমে ডানহাত আঙ্গুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত এবং তদনুরুপ বামহাত ৩ বার (প্রত্যেক বারে পুরোহাতে পানি ফিরিয়ে রগড়ে) ধৌত করবে।
 অতঃপর একবার মাথা মাসাহ্‌ করবে; নতুন পানি দ্বারা দুই হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুল গুলিকে মুখোমুখি করে মাথার সামনের দিক (যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান) থেকে পিছন দিক (গর্দানের যেখানে চুল শেষ হয়েছে সেখান) পর্যন্ত স্পর্শ করে পুনরায় সামনের দিকে নিয়ে এসে শুরুর জায়গা পর্যন্ত পূর্ণ মাথা মাসাহ্‌ করবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩৯৪নং) মাথায় পাগড়ি থাকলে তার উপরেও মাসাহ্‌ করবে। (মুসলিম, মিশকাত ৩৯৯নং)
অতঃপর আর নতুন পানি না নিয়ে ঐ হাতেই দুই কান মাসাহ্‌ করবে; শাহাদতের (তর্জনী) দুই আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের ভিতর দিক এবং দুই বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের পিঠ ও বাহির দিক মাসাহ্‌ করবে। (আবূদাঊদ, সুনান ৯৯, ১২৫নং)
[বি.দ্রঃগর্দান মাসাহ্‌ করা বিধেয় নয়। বরং এটা বিদআত]
১০অতঃপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা গাঁট পর্যন্ত ৩ বার করে রগড়ে ধোবে। কড়ে আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করে রগড়ে ধৌত করবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৪০৭নং)
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “পূর্ণাঙ্গরুপে ওযু কর, আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল কর আর রোযা না থাকলে নাকে খুব ভালরুপে পানি চড়াও। (তারপর তা ঝেড়ে ফেলে উত্তমরুপে নাক সাফ কর।) (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৪০৫-৪০৬ নং)
১১এরপর হাতে পানি নিয়ে কাপড়ের উপর থেকে শরমগাহে ছিটিয়ে দেবে। বিশেষ করে পেশাব করার পর ওযু করলে এই আমল অধিকরুপে ব্যবহার্য। যেহেতু পেশাব করে তাহারতের পর দু-এক কাতরা পেশাব বের হওয়ার অসঅসা থাকে। সুতরাং পানি ছিটিয়ে দিলে ঐ অসঅসা দূর হয়ে যায়। (আবূদাঊদ, সুনান ১৫২-১৫৪, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৩৭৪-৩৭৬নং) এই আমল খোদ জিবরাঈল (আঃ) মহানবী (সাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী।)
🔰ওজুর শেষে নিম্নক্ত দুয়া পাঠঃ
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউই পরিপূর্ণরুপে ওযু করার পর (নিম্নের যিক্‌র) পড়ে তার জন্যই জান্নাতের আটটি দ্বার উন্মুক্ত করা হয়; যে দ্বার দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করতে পারে।
أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ।
“আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু অরাসূলুহ্‌।”
অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক তাঁর কোন অংশী নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রসূল। (মুসলিম ২৩৪নং, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ্‌)
তিরমিযীর বর্ণনায় এই দুআর শেষে নিম্নের অংশটিও যুক্ত আছে:-
اَللّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ، وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ।
উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মাজ আলনী মিনাত তাওয়াবীনা, অজ্‌আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্‌হিরীন।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের দলভুক্ত কর। (মিশকাত ২৮৯নং)
ওযুর শেষে নিম্নের দুআ পাঠ করলে তা শুভ্র নিবন্ধে লিখে সীল করা হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা নষ্ট করা হয় না।
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ।
“সুবহানাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত , আস্তাগফিরুকা অ আতূবু ইলাইক।”
অর্থাৎ, তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমিই একমাত্র সত্য উপাস্য। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন (তওবা) করছি। (ত্বাহাবী, সহিহ তারগিব ২১৮নং, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/১৩৫, ৩/৯৪)
[বি.দ্রঃএ ছাড়া প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় নির্দিষ্ট দুআ অথবা শেষে ‘ইন্না আনযালনা’ পাঠ বিদআত।]

নোটঃওজুর অঙ্গ গুলির মধ্যে সামান্যতম যায়গা শুকনো থাকলে তার অজু হবে না (সহিহ বুখারি)

🔰ওজুর ফরজ ৪টিঃ
মুখমণ্ডল ধৌত করা।
দুই হাত কনুই সহ ধৌত করা।
মাথা মাসাহ করা।ও
দুই পা টাখনু সহ ধৌত করা।
(বাকি সব সুন্নত)
মহান আল্লাহর বানী,
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসাহ্‌ করবে। আর পা দু’টিকে গাঁট পর্যন্ত ধৌত করবে।
(কুরআন মাজীদ ৫/৬)
বড় নাপাকী না থাকার ফলে গোসলের দরকার না হলেও নামাযের জন্য ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে ওযু ফরয। এ ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) ও বলেন, “ওযু নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় ওযু না করা পর্যন্ত আল্লাহ কারো নামায কবুল করেন না।”
(বুখারী, মুসলিম, সহীহ মিশকাত ৩০০নং)
নবী মুহাম্মদ সঃ বলেন,,
“কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে আহ্বান করা হবে; আর সেই সময় ওযুর ফলে তাদের মুখমন্ডল ও হাত-পা দীপ্তিময় থাকবে।”
(বুখারী ১৩৬, মুসলিম, সহীহ ২৪৬নং)

➥➥➥➥➥➥

🔰ওজু ভঙ্গের কারন সমুহঃ


পেশাব ও পায়খানা দ্বার হতে কিছু (পেশাব, পায়খানা, বীর্য, মযী, হাওয়া, রক্ত, কৃমি, পাথর প্রভৃতি) বের হলে ওযু ভেঙ্গে যায়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/২২০)
তদনুরুপ দেহের অন্যান্য অঙ্গ থেকে (যেমন অপারেশন করে পেট থেকে পাইপের মাধ্যমে) অপবিত্র (বিশেষ করে পেশাব-পায়খানা) বের হলেও ওযু নষ্ট হয়ে যাবে। (ঐ১/২২১)
যাতে গোসল ওয়াজেব হয়, তাতে ওযুও নষ্ট হয়।
কোন প্রকারে বেহুশ বা জ্ঞানশূন্য হলে ওযু নষ্ট হয়।
গাঢ়ভাবে ঘুমিয়ে পড়লে ওযু ভাঙ্গে। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “ চোখ হল মলদ্বারের বাঁধন। সুতরাং যে ঘুমিয়ে যায়, সে যেন ওযু করে।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৩১৬, জামে ৪১৪৯নং)
অবশ্য হাল্কা ঘুম বা ঢুল (তন্দ্রা) এলে ওযু ভাঙ্গে না। সাহাবায়ে কেরাম নবী (সাঃ) এর যুগে এশার নামাযের জন্য তাঁর অপেক্ষা করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ঢুলতেন। অতঃপর তিনি এলে তাঁরা নামায পড়তেন, কিন্তু নতুন করে আর ওযু করতেন না। (মুসলিম, সহীহ ৩৭৬নং, আবূদাঊদ, সুনান ১৯৯-২০১নং)
৫ পেশাব অথবা পায়খানা-দ্বার সরাসরি স্পর্শ করলে ওযু নষ্ট হয়। (কাপড়ের উপর থেকে হাত দিলে নষ্ট হয় না।) (জামে ৬৫৫৪, ৬৫৫৫নং) মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিনা পর্দায় ও অন্তরালে নিজের শরমগাহ্‌ স্পর্শ করে, তার উপর ওযু ওয়াজেব হয়ে যায়।”
(জামে ৩৬২, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১২৩৫ নং)
হাতের কব্জির উপরের অংশ দ্বারা স্পর্শ হলে ওযু ভাঙ্গবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/২২৯)
 উটের গোশত খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এক ব্যক্তি মহানবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, ‘উটের গোশত খেলে ওযু করব কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, উটের গোশত খেলে ওযু করো।” (মুসলিম, সহীহ ৩৬০নং)
তিনি বলেন, “উটের গোশত খেলে তোমরা ওযু করো।”
(আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, জামে ৩০০৬ নং)

ওজু ভাংগার ভ্রান্ত ধারনাঃ----
🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻
হাটুর উপর কাপড় উঠলে ওজু ভংগ হয়।
মেয়েদের মাথার কাপড় পড়ে গেলে ওজু নষ্ট হয়।
স্ত্রীকে চুমু দিলে ওজু নষ্ট হয়।
পড়নের কাপড় পরিবর্তন করলে ওজু নষ্ট হয়।
ওজুতে ঘার মাসাগ না করলে ওজুই হয়না।
আকশের দিকে তাকালে ওজু নষ্ট হয়।
বাচ্চাদের দুধ পান করালে ওজু নষ্ট হয়।
ছোট বাচ্চাকে সৌচ কাজ কড়ালে ওজু নষ্ট হয়।
কুকুরের গায়ের সংগে কাপড় লেগে গেলে ওজু নষ্ট হয়।
সলাতের মধ্য অট্ট হাসি দিলে ওজু নষ্ট হয়।

🔰ওজু যে কারনে নষ্ট হয় নাঃ-------
 নারীদেহ্‌ স্পর্শ করলে ওযু ভাঙ্গে না। কারণ, মহানবী (সাঃ) রাত্রে নামায পড়তেন, আর মা আয়েশা (রাঃ) তাঁর সম্মুখে পা মেলে শুয়ে থাকতেন। যখন তিনি সিজদায় যেতেন, তখন তাঁর পায়ে স্পর্শ করে পা সরিয়ে নিতে বলতেন। এতে তিনি নিজের পা দু’টিকে গুটিয়ে নিতেন। (বুখারী ৫১৩, মুসলিম, সহীহ ৫১২নং)
তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ)কে চুম্বন দিতেন। তারপর ওযু না করে নামায পড়তে বেরিয়ে যেতেন।
(আবূদাঊদ, সুনান ১৭৮-১৭৯ নং, আহমাদ, মুসনাদ ৬/২১০, দি: ৮৬, নাসাঈ, সুনান ১৭০, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৫০২নং, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১/১৩৮, বায়হাকী ১/১২৫)
অবশ্য স্পর্শ বা চুম্বনে মযী বের হলে তা ধুয়ে ওযু জরুরী।
(ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন১/২৮৫-২৮৬)
 হো-হো করে হাসলে; এ প্রসঙ্গের হাদীসটি দলীলের যোগ্য নয়। তাই হাসলে ওযু ভাঙ্গে না।
(ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১/৫০-৫১, বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৩৩৬)
বমি করলে; একদা নবী (সাঃ) বমি করলে রোযা ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর তিনি ওযু করলেন।
(আহমাদ, মুসনাদ ৬/৪৪৯, তিরমিযী, সুনান) এই হাদীসে তাঁর কর্মের পরস্পর অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। বমি করলেন বলে ওযু ভেঙ্গে গিয়েছিল, তাই তিনি ওযু করেছিলেন -তা প্রমাণ হয় না। (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/১৪৮, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/২২৪-২২৫)
 গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলালে; গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলানো কাবীরা গুনাহ। কিয়ামতে আল্লাহ সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি তার পরনের কাপড় পায়ের গাঁটের নিচে পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরে। (বুখারী ৫৭৮৪, মুসলিম, সহীহ ২০৮৫নং) কিন্তু এর ফলে ওযু ভাঙ্গে না। এক ব্যক্তি ঐরুপ কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়লে মহানবী (সাঃ) তাকে পুনরায় ওযু করে নামায পড়তে হুকুম দিয়েছিলেন বলে যে হাদীস আবূ দাঊদে বর্ণিত হয়েছে, তা যয়ীফ এবং দলীলের যোগ্য নয়। (যয়ীফ আবূদাঊদ, সুনান ১২৪, ৮৮৪নং)
নাক থেকে রক্ত পড়লে; এতে ওযু নষ্ট হয় বলে হাদীস ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে, তা যয়ীফ। (যয়ীফ ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ২৫২, যয়ীফ জামে ৫৪২৬নং)
দেহের কোন অঙ্গ কেটে রক্ত পড়লে, দাঁত থেকে রক্ত ঝরলে, তীরবিদ্ধ হয়ে রক্ত পড়লে; যা-তুর রিকা’ যুদ্ধে নবী (সাঃ) উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এক ব্যক্তি তীরবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত হলেও সে রুকু সিজদা করে নামায সম্পন্ন করেছিল। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, মুসলিমরা এ যাবৎ তাদের রক্তাক্ত ক্ষত নিয়েই নামায পড়ে আসছে। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) একটি ফুসকুরি গেলে দিলে তা থেকে রক্ত বের হল। কিন্তু তিনি ওযু করলেন না। ইবনে আবী আওফা রক্তমাখা থুথু ফেললেন। অতঃপর তিনি তাঁর নামায সম্পন্ন করলেন। ইবনে উমার ওহাসান বলেন, কেউ শৃঙ্গ লাগিয়ে বদ-রক্ত বের করলে কেবল ঐ জায়গাটা ধুয়ে নেবে। এ ছাড়া ওযু-গোসল নেই। (বুখারী ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৩৩৬)
পূর্বোক্ত তীরবিদ্ধ লোকটি ছিল একজন আনসারী। তার সঙ্গী এক মুহাজেরী তার রক্তাক্ত অবস্থা দেখে বলল, ‘সুবহানাল্লাহ্‌! (তিন তিনটে তীর মেরেছে?!) প্রথম তীর মারলে তুমি আমাকে জাগিয়ে দাওনি কেন?’ আনসারী বলল, ‘আমি এমন একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা সম্পূর্ণ না করে ছেড়ে দিতে পছন্দ করিনি!’ (আবূদাঊদ, সুনান ১৯৮নং)
মুর্দা গোসল দিলে; মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মুর্দা কে গোসল দেবে, সে যেন নিজে গোসল করে নেয়। আর যে ব্যক্তি জানাযা বহন করবে, সে যেন ওযু করে নেয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ ২/২৮০ প্রভৃতি) কিন্তু এই নির্দেশটি মুস্তাহাব। অর্থাৎ না করলেও চলে। তবে করা উত্তম। কারণ, গোসলদাতার দেহে নাপাকী লেগে যাওয়ার সন্দেহ্‌ থাকে তাই। তাই তো অন্য এক বর্ণনায় আছে; তিনি বলেন, “মুর্দাকে গোসল দিলে তোমাদের জন্য গোসল করা জরুরী নয়। কারণ তোমাদের মুর্দা তো আর নাপাক নয়। অতএব তোমাদের হাত ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট।” (হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩৮৬, বায়হাকী ৩/৩৯৮)
হযরত উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমরা মাইয়্যেতকে গোসল দিতাম। তাতে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ গোসল করে নিত। আবার অনেকে করত না।’ (দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৯১নং)
অবশ্য মাইয়্যেতকে গোসল দেওয়ার সময় তার শরমগাহে হাত লেগে থাকলে ওযু অবশ্যই নষ্ট হবে। আর জানাযা বহন করাতে ওযু নষ্ট হয় না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ২৬/৯৬)
 মৃতদেহের পোষ্টমর্টেম করাতেও ওযু ভাঙ্গে না।
(ঐ ২৭/৪০)
ওযু করে মায়েরা যদি তাদের শিশুর পেশাব বা পায়খানা সাফ করে, তবে তা হাতে লাগলেও ওযু ভাঙ্গে না। অবশ্য পায়খানাদ্বার বা পেশাবদ্বার ধোয়ার সময় কোন দ্বারে হাত লাগলে ওযু নষ্ট হয়ে যায়। (ঐ ২২/৬২)
১০ কোনও নাপাক বস্তু (মানুষ বা পশুর পেশাব, পায়খানা, রক্ত প্রভৃতি)তে হাত বা পা দিলে ওযু ভাঙ্গে না। (ঐ ৩৫/৯৬)
১১ ওযু করার পর ধূমপান করলে ওযু নষ্ট হয় না। তবে ধূমপান করা অবশ্যই হারাম।
(ঐ ১৮/৯২-৯৩)
১২কোলন, কোহল বা স্পিরিট-মিশ্রিত আতর বা সেন্টব্যবহার করলে ওযুর কোন ক্ষতি হয় না। তবে তা ব্যবহার বৈধ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২০৩)
১৩ চুল, নখ ইত্যাদি সাফ করলে ওযু ভাঙ্গে না। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/২৯২, বুখারী ১/৩৩৬) তদনুরুপ অশ্লীল কথা বললে, হাঁটুর উপর কাপড় উঠে এলে, মহিলার মাথা খোলা গেলে, কাউকে বা নিজেকে উলঙ্গ দেখলে ওযু নষ্ট হয় না।
দুধ পান করলে নামাযের পূর্বে কুল্লি করা মুস্তাহাব।
(বুখারী ২১১, মুসলিম, সহীহ ৩৫৮নং)
মনে রাখবেন দ্বীন (ইসলাম)হচ্ছে সহজ৷
( বুখারী ৩৯)আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং (মধ্যপন্থার) নিকটে থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে
(‘ইবাদাত সহযোগে)

➥➥➥➥➥➥

🔰 তায়াম্মুম এর নিয়মাবলী

তায়াম্মুম অর্থ,সংকল্প করা। পানি না পাওয়া গেলে ওজু বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি ( ধুলো বালি) দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে তায়াম্মুম বলে।
তায়াম্মুমের নির্দেশ মহান আল্লহ্ তাআলা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَإِنْ كُنْتُمْ مَّرْضَى أَوْ عَلى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْداً طَيِّباً فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ مِّنْهُ
অর্থাৎ, যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক, কিংবা তোমাদের মধ্যে কেউপায়খানা করে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী-সঙ্গম কর, অতঃপর পানি না পাও, তাহলে পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও; তোমাদের মুখমন্ডল ও হাতকে মাটি দ্বারা মাসাহ্‌ কর---।
(সুরা মায়েদা /৬)
সরল ও সহ্‌জ দ্বীনের নবী (সাঃ) বলেন, “সকল মানুষ (উম্মতের) উপর আমাদেরকে ৩টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে; আমাদের কাতারকে করা হয়েছে ফিরিশ্‌তাবর্গের কাতারের মত, সারা পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদ করে দেওয়া হয়েছে এবং পানি না পাওয়া গেলে মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত ৫২৬নং)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং (মধ্যপন্থার) নিকটে থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (‘ইবাদাত সহযোগে) সাহায্য চাও।(সহিহ বুখারীঃ৩৯)

🔰যে অবস্থায় তায়াম্মুম করা বৈধ:

একেবারেই পানি না পাওয়া গেলে অথবা পান করার মত থাকলে এবং ওযু-গোসলের জন্য যথেষ্ট পানি না পাওয়া গেলে।
হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমরা নবী (সাঃ) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। এক সময় তিনি লোকেদের নিয়ে নামায পড়লেন। যখন তিনি নামায শেষ করলেন, তখন দেখলেন একটি লোক একটু সরে পৃথক দাঁড়িয়ে আছে। সে জামাআতে নামাযও পড়েনি। তিনি তাকে বললেন, “কি কারণে তুমি জামাআতে নামায পড়লে না?” লোকটি বলল, ‘আমি নাপাকে আছি, আর পানিও নেই।’ তিনি বললেন, “পাক মাটি ব্যবহার কর। তোমার জন্য তাই যথেষ্ট।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ মিশকাত ৫২৭নং)
তিনি আরো বলেন, “দশ বছর যাবৎ পানি না পাওয়া গেলে মুসলিমের ওযুর উপকরণ হল পাক মাটি। পানি পাওয়া গেলে গোসল করে নেওয়া উচিৎ। আর এটা অবশ্যই উত্তম।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৫৩০নং)
অবশ্য আশে-পাশে বা সঙ্গীদের কারো নিকট পানি আছে কি না, তা অবশ্যই দেখে নিতে হবে। যখন একান্ত পানি পাওয়ার কোন আশাই থাকবে না, তখন তায়া ম্মু ম করে নামায পড়তে হবে।
অসুস্থ থাকলে অথবা দেহে কোন প্রকার ক্ষত বা ঘা থাকলে এবং পানি ব্যবহারে তা বেড়ে যাওয়া বা সুস্থ হতে বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা হলে।
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, একদা আমরা কোন সফরে বের হ্‌লাম। আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির মাথায় পাথরের আঘাত লেগে ক্ষত হয়েছিল। এরপর তার স্বপ্ন দোষও হল। সে সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার জন্য কি তায়াম্মুম বৈধ মনে কর?’ সকলে বলল, ‘তুমি পানি ব্যবহার করতে অক্ষম নও। অতএব তোমার জন্য আমরা তায়াম্মুম বৈধ মনে করি না।’ তা শুনে লোকটি গোসল করল এবং এর প্রতি ক্রি য়ায় সে মারা গেল। অতঃপর আমরা যখন নবী (সাঃ)-এর নিকট ফিরে এলাম তখন তাঁকে সেই লোকটার ঘটনা খুলে বললাম। তা শুনে তিনি বললেন, “ওরা ওকে মেরে ফেলল, আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুক! যদি ওরা জানত না, তবে জেনে কেন নেয়নি? অজ্ঞতার ওষুধ তো প্রশ্নই।” (সহীহ আবূদাঊদ, সুনান ৩২৫, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারাক্বুত্বনী, সুনান, মিশকাত ৫৩১নং)
পানি অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে এবং তাতে ওযু-গোসল করাতে অসুখ হবে বলে দৃঢ় আশঙ্কা হলে, পরন্তু পানি গরম করার সুযোগ বা ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম বৈধ।
হযরত আম্‌র বিন আস (রাঃ) বলেন, যাতুস সালাসিল যুদ্ধ-সফরে এক শীতের রাতে আমার স্বপ্ন দোষ হল। আমার ভয় হল যে, যদি গোসল করি তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তাই আমি তায়াম্মুম করে সঙ্গীদেরকে নিয়ে (ইমাম হয়ে) ফজরের নামায পড়লাম। আমার সঙ্গীরা একথা নবী (সাঃ)-এর নিকটে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, “হে আম্‌র! তুমি নাপাক অবস্থায় তোমার সঙ্গীদের ইমামতি করেছ?” আমি গোসল না করার কারণ তাঁকে বললাম। আরো বললাম যে, আল্লাহ তাআলার এ বাণীও আমি শুনেছি, তিনি বলেন, “তোমরা আত্মহ্‌ত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড় দয়াশীল।” (কুরআন মাজীদ ৪/২৯)
একথা শুনে তিনি হাসলেন এবং আর কিছুই বললেন না। (বুখারী, সহীহ আবূদাঊদ, সুনান ৩২৩নং, আহমাদ, মুসনাদ,হাকেম, মুস্তাদরাক, দারাক্বুত্বনী, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ)
 পানি ব্যবহারে ক্ষতি না হলে এবং পানি নিকটবর্তী কোন জায়গায় থাকলেও তা আনতে জান, মাল বা ইজ্জতহানির আশঙ্কা হলে, পানি ব্যবহার করতে গিয়ে সফরের সঙ্গীদের সঙ্গ-ছাড়া হওয়ার ভয় হলে, বন্দী অবস্থায় থাকলে অথবা ( কুঁয়ো ইত্যাদি থেকে) পানি তোলার কোন ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করা বৈধ। কারণ উক্ত অবস্থাগুলো পানি না পাওয়ার মতই অবস্থা।
 পানি কাছে থাকলেও তা ওযুর জন্য ব্যবহার করলে পান করা, রান্না করা ইত্যাদি হবে না আশঙ্কা হলেও তায়াম্মুম বৈধ। (মুগনী, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১/৬১-৬২)

🔰 তায়াম্মুম নষ্ট হওয়ার কারন

যে যে কারণে ওযু নষ্ট হয়, ঠিক সেই সেই কারণে তায়াম্মুমও নষ্ট হয়ে যায়। কারণ তায়াম্মুম হল ওযুর বিকল্প। এ ছাড়া যে অসুবিধার কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, সেই অসুবিধা দূর হয়ে গেলেই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যায়। যেমন পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করলে পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম শেষ হয়ে যায়। অসুখের কারণে করলে, অসুখ দূর হয়ে যাওয়ার পর পরই আর তায়াম্মুম থাকে না।
(ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১/৬৩)
(বিঃদ্রঃ প্রত্যেকটি কথার দলিল যথাস্থানে দেয়া আছে)

➥➥➥➥➥➥

🔰গোসলের নিয়মাবলিঃ

গোসল আরবী শব্দ এর অর্থ ধৌত করা। শারঈ পরিভাষায় গোসলের অর্থঃ পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ওজু করে সর্বাঙ্গ ধৌত করা।
গোসল ২ প্রকার ফরজ(অপরিহার্য) ও মুস্তাহাব (অপরিহার্য নয়)
#ফরজঃ ঐ গোসলকে বলা হয় যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হলে গোসল করা ফরজ।যেমন আল্লহ বলেন,, وَ إِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا
যদি তেমরা নাপাক হয়ে থাক তাহলে গোসল কর।
[সুরা মায়িদা ৫:৬]
#মুস্তাহাবঃ ঐ গোসলকে বলা হয়, যা অপরিহার্য নয়। কিন্তু করলে নেকী আছে। যেমন- জুম‘আর দিনে বা দুই ঈদের দিনে গোসল করা। সাধারণ গোসলের পূর্বে ওযূ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাইয়িদ সাবিক্ব একে ‘মানদূব’ (পসন্দনীয়) বলেছেন। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১]

গোসলের পদ্ধতিঃ

নাপাকীর গোসল করতে হলে গোসলের নিয়ত করে মুসলিম প্রথমে ৩ বার দুইহাত কব্জি পর্যন্ত ধুবে। অতঃপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দেহের নাপাকী ধুয়ে ফেলবে। তারপর বাম হাতকে মাটি অথবা সাবান দ্বারা ধুয়ে নামাযের জন্য ওযু করার মত পূর্ণ ওযু করবে। অবশ্য গোসলের জায়গা পরিষ্কার না হলে পা দুটি গোসল শেষে ধুয়ে নেবে। ওযুর পর ৩ বার মাথায় পানি ঢেলে ভাল করে চুলগুলো ধোবে, যাতে সমস্ত চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সারা দেহে ৩ বার পানি ঢেলে ভালরুপে ধুয়ে নেবে।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৩৫-৪৩৬ নং)
মহিলাদের গোসলও পুরুষদের অনুরুপ। অবশ্য মহিলার মাথার চুলে বেণী বাঁধা (চুটি গাঁথা) থাকলে তা খোলা জরুরী নয়। তবে ৩ বার পানি নিয়ে চুলের গোড়া অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। (বুখারী, মিশকাত ৪৩৮নং) নখে নখপালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট্‌ থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত গোসল হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় গোসল হয়ে যাবে।ইংশা আল্লহ কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ গোসল হবে না।
বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও মাসিকের গোসল, অথবা মাসিক ও ঈদ, অথবা বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও জুমআ বা ঈদের গোসল নিয়ত হলে একবারই যথেষ্ট। পৃথক পৃথক গোসলের দরকার নেই। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ৬০পৃ: দ্র:)
গোসলের পর নামাযের জন্য আর পৃথক ওযুর প্রয়োজন নেই। গোসলের পর ওযু ভাঙ্গার কোন কাজ না করলে গোসলের ওযুতেই নামায হয়ে যাবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৪৪৫নং)
রোগ-জনিত কারণে যদি কারো লাগাতার বীর্য, মযী, স্রাব বা ইস্তিহাযার খুন ঝরে তবে তার জন্য গোসল ফরয নয়; প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযুই যথেষ্ট। এই সকল অবস্থায় নামায মাফ নয়।
[আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৫৬০-৫৬১ নং]
প্রকাশ যে, গোসল, ওযু বা অন্যান্য কর্মের সময় নিয়ত আরবীতে বা নিজ ভাষায় মুখে উচ্চারণ করা বিদআত।
সতর্কতার বিষয় যে, নাপাকী দূর করার জন্য কেবল গা-ধোয়া বা গা ডুবিয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়। পূর্বে ওযু করে যথানিয়মে গোসল করলে তবেই পূর্ণ গোসল হয়। নচেৎ অনেকের মতে কুল্লি না করলে এবং নাকে পানি না নিলে গোসলই শুদ্ধ হবে না।
[আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/৩০৪]
[]সংক্ষেপেঃফরয গোসলের জন্য প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুবে ও পরে নাপাকী ছাফ করবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ছালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করবে। অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবে ও গোসল সম্পন্ন করবে।
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৫][]

জ্ঞাতব্য :

 গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর সারা দেহে পানি ঢালবে। [মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৮।]
রাসূল (ছাঃ) এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন।
[ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯; চার মুদ্দে এক ছা‘ হয়। ইরওয়া, উক্ত হাদীছের টীকা ১/১৭০ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৯৬]
 নারী হৌক পুরুষ হৌক সকলকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[ আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৭]
বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে বা দূরে লোকচক্ষুর অন্তরালে নগ্নাবস্থায় গোসল করায় কোন দোষ নেই।[মুসলিম হা/৩৩৯; বুখারী হা/২৭৮; ঐ, মিশকাত হা/৫৭০৬-০৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৮।]
 ওযূ সহ গোসল করার পর ওযূ ভঙ্গ না হ’লে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই।
[আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫।]
 ফরয গোসলের পূর্বে নাপাক অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। তবে মুখে কুরআন পাঠ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয আছে।[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২।]
°° সাধারণ অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ করা বা বহন করা জায়েয আছে।°°
[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৩।]

মুস্তাহাব গোসল সমূহ :

 জুম‘আর ছালাতের পূর্বে গোসল করা।
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৩৭-৩৯, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মাসনূন গোসল’ অনুচ্ছেদ-১১]
মোর্দা গোসল দানকারীর জন্য গোসল করা।
[ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪১।]
 ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করা।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৪৩।]
 হজ্জ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা।
[দারাকুৎনী, হাকেম, ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৯, ১/১৭৯ পৃঃ।]
আরাফার দিন গোসল করা।
[বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭।]
দুই ঈদের দিন সকালে গোসল করা।
[ বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭]

 গোসলের পূর্বে উযূ করা।
বিস্তারিত 
وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى )وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ( وَقَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ )يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاَةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلاَ جُنُبًا إِلاَّ عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُورًا. (
★এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ কিন্তু যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে উত্তমরূপে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে-ঐ মাটি দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও হাত মাসহ করে নিবে। আল্লাহ্ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পাক-পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নিয়ামাত পূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
(সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫/৬)
হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নেশায় মত্ত অবস্থায় সালাতের কাছেও যেও না যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার; আর অপবিত্র অবস্থায় নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর, তবে মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও- মাসেহ করবে স্বীয় মুখমন্ডল ও হাত। নিশ্চয় আল্লাহ্ হলেন অতিশয় মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল। (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/৪৩)
★ ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। অতঃপর সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর তাঁর উভয় হাতের তিন আজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি ঢেলে দিতেন।
(২৬২, ২৭২; মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৬, আহমাদ ২৫৭০৪)

➥➥➥➥➥➥

🔰 নারী-পুরুষের সলাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতিসমূহঃ

📖১- বড় পবিত্রতা বা ফরয গোসলের পূর্বে অযু করতে হবে তারপর আর ওজু না ভাঙলে ফরয গোসলের পরে নতুন করে অযু করার দরকার নেই ।
(বুখারী হাদীস নং ২৪৮- পৃষ্ঠা ১৩৪)
📖২- ছোট পবিত্রতা বা অযুর সময় ঘাড় মাসাহ করা যাবে না, মাথা মাসাহ করতে হবে ১বার এবং তার পদ্ধতি হচ্ছে ২হাতকে মাথার সামনে থেকে পিছনে নিয়ে যেতে হবে এবং পিছন থেকে সামনে আনতে হবে তারপর ২তর্জনী আঙ্গুল ২কানের ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং তারপর কানের ছিদ্রের উপরের ভাজ তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে এবং শেষে ২বৃদ্ধাঙ্গুল দারা ২কানের পিছনে মূছে দিতে হবে। অন্যান্য অঙ্গগুলো ৩বার করে ধুতে হবে এবং হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে ভালকরে খিলাল করে পরিষ্কার করতে হবে। মুখে পানি নিয়ে গড়গড়া করতে হবে এবং নাকে পানি নেওয়ার সময় পানি নাকের মধ্যে টেনে নিতে হবে তারপর নাক ঝেরে ফেলতে হবে।(বুখারী হাদীস নং ১৬৪-১৬৫-পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮)
📖৩- স্বলাতে দাড়িয়ে অন্তরে নিয়ত করতে হবে কিন্তু মুখে পড়তে হবে না(কোন ব্যক্তি স্বলাত আদায় করবে বলেই সে স্বলাতে দাড়িয়েছে, এটাই তার নিয়ত। সে যদি স্বলাতের নিয়ত না করতো তবে সে অযুও করতো না এবং স্বলাতেও দাঁড়াতো না আর সবচেয়ে বড় কথা মুখে নিয়ত করার কোন প্রমাণ নেই সুতরাং একাজ বিদয়াত)।(বুখারী ৭৯৩, ৮০৩ -পৃষ্ঠা ৩৮৫, ৩৯০)
ফজর বা যোহর বা আসরের ফরজ সলাত বা সুন্নাত সলাত আদায় করছি মনে মনে এই সংকল্প করে আল্লাহু আকবার দিয়ে সলাত আরম্ভ করবে।
📖৪- তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্ল-হু আকবার বলে কাধ বরাবর বা কাঁন বরাবর হাত উঠিয়ে(তবে কাঁন বা কাঁনের লতি স্পর্শ করতে হবে না) বুকে হাত বাধতে হবে।
(নাসাঈ ১১০২- পৃষ্ঠা ৩৫৩, বুখারী ৭৩৮, ৭৪০ - পৃষ্ঠা ৩৫৪, ৩৫৭। আবু দাউদ ৭৫৯ - পৃষ্ঠা ৫১০)
📖৫- স্বলাতের কাতারে একে অন্যের পায়ের সাথে পা এবং কাধের সাথে কাধ মিলীয়ে দাড়াতে হবে অর্থাৎ একে অন্যের মাঝে কোন ফাকা রাখা যাবে না।
(বুখারী হাদীস নং ৭২৫ - পৃষ্ঠা ৩৪৯)
📖৬- স্বলাতে দাড়িয়ে কোন কাজ ইমামের আগে বা ইমামের সাথে সাথে করা যাবে না বরং ইমাম করার পর করতে হবে।
(বুখারী হাদীস নং ৬৮৯, ৬৯১ - পৃষ্ঠা ৩৩৩-৩৩৪)
📖৭- একাকী বা ইমামের পিছনে, সরবে কিরাত বা নিরবে কিরাত সর্বোবস্থায় সবাইকে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।(মুসলিম হাদিস নং ৭৬৪, বুখারী হাদীস নং ৭৫৬ - পৃষ্ঠা ৩৬৭, তিরমিযী ৩১১ – পৃষ্ঠা ২৭৪)
📖৮- সরবে কিরাতের স্বলাতে সূরা ফাতিহা শেষে ইমামের সাথে জোরে আমীন বলতে হবে এবং নিরবে কিরাতের স্বলাতে সূরা ফাতিহা শেষে নিরবে আমীন বলতে হবে।(বুখারী ৭৮০ - পৃষ্ঠা ৩৭৮)
📖৯- রুকু করার আগে রফউল ইয়াদাইন করতে হবে(২হাতকে প্রথম তাকবীরে তাহরীমায় উঠানোর মতো কাধ বরাবর বা কাঁন বরাবর ঊঠাতে হবে)।
(বুখারী হাদীস ৭৩৫-পৃষ্ঠা ৩৫৩, মুসলিম ৭৪৭ পৃষ্ঠা-৩৭৫)
📖১০- রুকু করার সময় পিঠ একেবারে সোজা করতে হবে।
(বুখারী হাদীস নং ৭৯১, ৭৯৩ - পৃষ্ঠা ৩৮৪-৩৮৫)
📖১১- রুকু থেকে উঠে রফউল ইয়াদাইন করতে হবে এবং ধীর-স্থিরতার সাথে অবশ্যই সোজা হয়ে দাড়াতে হবে নইলে স্বলাত হবে না।
(বুখারী হাদীস নং ৭৩৫,। ৮০০ - পৃষ্ঠা ৩৫৩,। ৩৮৮)
📖১২- সেজদায় যাওয়ার সময় আগে ২ হাত মাটিতে রাখতে হবে, অবশ্য হাঁটু আগে রাখলেও চলে।
(আবু দাউদ ৮৪০ - পৃষ্ঠা ৫৭৯)
📖১৩- সেজদার সময় ২পা মিলে যাবে, ২হাত মাটীতে কাধ বরাবর বা কাঁন বরাবর থাকবে, আঙ্গুলের মাঝে কোন ফাকা থাকবে না। ২হাতের বাহুকে কুকুরের মতো মাটীতে বিছিয়ে দেওয়া যাবে না এবং হাতকে পেট এবং পা থেকে এতোটা দূরে রাখতে হবে যাতে পেটের নিচ দিয়ে ১টা ছাগলের বাচ্চা যাওয়ার মতো জায়গা থাকে।
(বুখারী ৮২২, ৮০৭ – পৃষ্ঠা ৪০০, ৩৯৪, মুসলিম ৯৯৪ – পৃষ্ঠা ৪৬৩, নাসাঈ ১১০২- পৃষ্ঠা ৩৫৩, সহীহ্ ইবনে খুযাইমা)
📖১৪- রুকু এবং সেজদা ধীর-স্থিরতার সাথে করতে হবে। কাঁকের মতো দ্রুত ঠোকর মারলে স্বলাত হবে না।
(বুখারী হাদীস নং ৭৯১, ৭৯৩ - পৃষ্ঠা ৩৮৪-৩৮৫)
📖১৫- সেজদাতে কপালের সাথে নাকও অবশ্যই মাটীতে রাখতে হবে, নাক উপরে উঠে গেলে হবে না।
(বুখারী হাদীস নং ৮১২ - পৃষ্ঠা ৩৯৬, আবু দাউদ ৮৯৪ – পৃষ্ঠা ৩২)
📖১৬- প্রথম সেজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসতে হবে এবং এ সময় পঠনীয় যে দোয়া রয়েছে (রব্বিগফিরলি রব্বিগফিরলি) তা অবশ্যই বলতে হবে।
(বুখারী হাদীস নং ৮০১ - পৃষ্ঠা ৩৮৮.। আবু দাউদ ৮৫০, ৮৭৪ - পৃষ্ঠা ৫)
📖১৭- স্বলাতের মধ্যে ১ বা ৩ রাকাতের সময় দ্বিতীয় সেজদা শেষে কিছুসময় বসতে হবে তারপর ২ হাত জমিনের উপর ভর করে উঠতে হবে।
(বুখারী হাদীস নং ৮২৪ - পৃষ্ঠা ৪০১)
📖১৮- স্বলাত যদি ২ রাকাতের বেশী হয় তবে ২য় রাকাতের বৈঠক শেষ করে উঠে আবার রফউল ইয়াদাইন করতে হবে।
(বুখারী হাদীস নং ৭৩৯ - পৃষ্ঠা ৩৫৫)
📖১৯- ২ রাকাতের বেশী স্বলাতের ক্ষেত্রে শেষ বৈঠকে তাওয়াররুক করতে হবে অর্থাৎ ডান পা খাড়া রেখে বাম পাকে ডান পায়ের ভীতরে ঢুকিয়ে নিতম্বের উপর বসতে হবে।
(বুখারী হাদীস ৮২৮ – পৃষ্ঠা ৪০৩)
📖২০- তাশাহুদের বৈঠকে সবসময় তর্জনী আঙ্গুল নাড়াতে হবে এবং চোখ তর্জনী আঙ্গুলের দিকে থাকবে।
(মিশকাত ৯১৩ - পৃষ্ঠা ৫৩৯, নাসাঈ ১১৬০, ১১৫৯ - পৃষ্ঠা ৩৭০, মুসলিম ১১৯৬-১১৯৮ – পৃষ্ঠা ৫৫, তিরমিযী ২৯৪, ৩৫৫৭ – পৃষ্ঠা ২৫৭, ৪১৪)
📖২১- পুরো স্বলাতের সময় চোখ সেজদার জায়গায় রাখতে হবে শুধু তাশাহুদের বৈঠকে চোখ তর্জনী আঙ্গুলের দিকে রাখতে হবে। (বাইহাকী, হাকেম)
📖২২- সালাম দিয়ে স্বলাত শেষ হয়ে যাবে।
(বুখারী হাদীস নং ৮৩৭ - পৃষ্ঠা ৪০৮, মুসলিম ৯৯৭ – পৃষ্ঠা ৪৬৪)
📖২৩- সলাতের পদ্ধতিতে নারি এবং পুরুষের কোন পার্থক্য নেই, সলাত আদায়ের পদ্ধতি উভয়ের জন্য একই রকম। (বুখারি হাদিস ৬৩১)
🖋মহান আল্লহ বলেন,,
((সুরা আহযাব ৩৬))
وَ مَا کَانَ لِمُؤۡمِنٍ وَّ لَا مُؤۡمِنَۃٍ اِذَا قَضَی اللّٰہُ وَ رَسُوۡلُہٗۤ اَمۡرًا اَنۡ یَّکُوۡنَ لَہُمُ الۡخِیَرَۃُ مِنۡ اَمۡرِہِمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیۡنًا ﴿ؕ۳۶﴾
মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।
🖋নবী ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াছাল্লামের জীবনাদর্শকে পূর্ণাঙ্গরূপে মেনে নেওয়াই একজন মুমিনের কর্তব্য। তার জীবনাদর্শের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করা মুমিন কল্পনা করতে পারেন না। সুন্নাতের বাইরে যাওয়াকে তিনি তার আখিরাতের ঝুঁকি মনে করেন। মুমিন জায়েয না-জায়েযের বাহাসে লিপ্ত না হয়ে হুবহু নবীর আদর্শের উপর থাকাকেই কর্তব্য মনে করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস তাকে এক সুঁতো পরিমাণ বাইরে যেতে দেয় না। কদাচিৎ এমন হয়ে গেলে তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
«ما من نبى بعثه الله فى أمة قبلى إلا كان له من أمته حواريون وأصحاب يأخذون بسنته ويقتدون بأمره ثم إنها تخلف من بعدهم خلوف يقولون ما لا يفعلون ويفعلون ما لا يؤمرون فمن جاهدهم بيده فهو مؤمن ومن جاهدهم بلسانه فهو مؤمن ومن جاهدهم بقلبه فهو مؤمن وليس وراء ذلك من الإيمان حبة خردل ». )
صحيح مسلم، كتاب الايمان، باب كون النهي عن المنكر من الايمان...، رقم:188)
‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমার পূর্বে যখনই কোনো জাতির মাঝে নবী প্রেরণ করেছেন তখনই উম্মাতের মধ্যে তার এমন হাওয়ারী ও সাথী দিয়েছেন, যারা তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে চলতেন, তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। অনন্তর তাদের পরে এমনসব লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, যারা মুখে যা বলে বেড়াত কাজে তা পরিণত করত না, আর সেসব কর্ম সম্পাদন করত যেগুলোর জন্য তারা আদিষ্ট ছিল না। এদের বিরুদ্ধে যারা হাত দ্বারা জিহাদ করবে তারা মুমিন, যারা এদের বিরুদ্ধে মুখের কথা দ্বারা জিহাদ করবে তারাও মুমিন এবং যারা এদের বিরুদ্ধে অন্তরের ঘৃণা দ্বারা জিহাদ করবে তারাও মুমিন। এর বাইরে সরিষার দানা পরিমানও ঈমান নেই।’
[সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা ঈমানের অঙ্গ....,নং: ১৮৮।]
🖋মহান আল্লহ আরও বলেন,
فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا عَلَیۡکَ الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ ﴿۸۲﴾
সুতরাং যদি তারা পৃষ্ঠ-প্রদর্শন করে(মুখ ফিরিয়ে নেয়), তবে তোমার দায়িত্ব তো শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।
[সুরা আন নাহল আয়াত ৮৩]
(তাওহিদ পাব্লিকেসনের থেকে হাদিসের নাম্বার মিলিয়ে দেখা যেতে পারে)



বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...