প্রশ্নঃ স্ত্রী স্বামীর সহবাসের ক্ষেত্রে সারা না দিলে ফেরেশতারা সারারাত স্ত্রীকে অভিশাপ দিবে - এটা কি প্রমান করে না যে ইসলাম একজন স্বামীকে স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি করছে সহবাসের ক্ষেত্রে ?
উত্তরঃ হাদিস গুলি আগে পড়ে নেই আসুনঃ
* ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৪৩২, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রান । কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহ্বান করে কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত সে তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি না হয়, ততক্ষণ আসমানবাসী তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে ।
* ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৪৩৩, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন, স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে এবং সে না আসে তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে , সে স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতারা ভোর হওয়া পর্যন্ত লানত করতে থাকে।
উপরের হাদিস পড়ে আমরা যা পেলামঃ
১/ নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা "ফেরেশতা" তারপর "অভিশাপ" এসবে বিশ্বাস করে না তাহলে উপরের হাদিস থেকে তাদের কষ্ট পাওয়াই বৃথা ।
২/ খেয়াল করুন, স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ায় স্বামী মনে কষ্ট পেয়েছে কিন্তু এরপরে কি করেছে ? স্ত্রীর সাথে জবরদস্তি করেছে নাকি ঘুমিয়ে পরেছে ? হাদিসে কি এই লাইন আছে যে "স্বামী কষ্ট পেয়ে জবরদস্তী করবে স্ত্রীর সাথে" ? উত্তর হল এই লাইন নাই । আর হাদিস এই দিকে ইশারাও করছে না । তাই প্রশ্নকর্তার অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হল ।
৩/ উপরের হাদিসে স্বামীর ডাকে আহ্বান না দেয়ার ফলে স্ত্রীর সমালোচনা করা হলেও পুরুষকে কিন্তু জোর জবরদস্তি করে নিজ অধিকার আদায়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে না ।
৪/ ফেরেশতাদের লানত যেহেতু নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে না তাই ফেরেশতাদের লানতে কষ্ট পাওয়া নাস্তিকদের জন্য অযৌক্তিক ।
৫/ স্ত্রী যদি অসুস্থ থাকে বা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ কারন থাকে তাহলে এই হাদিসের সমালোচনা স্ত্রীর জন্য প্রয়োগীয় নয় । কারন সুরা বাকারা ২:২৮৬ এবং সুরা মুমিনুন ২৩:৬২ = আল্লাহ্ কোন ব্যাক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে কাজ দেন না ।
ইসলাম আইনে যেমন স্ত্রীদেরকে স্বামীর যৌন চাহিদার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে কিন্তু স্বামীকেও কিন্তু নিজ চাহিদার জন্য উগ্র হবার অনুমতি দেয় নি। স্বামীকেও স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি যত্নবান হবার নির্দেশ দিচ্ছে , দিয়েছেঃ
* সুরা নিসা ৪:১৯ = তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। আর তোমরা তাদের অপছন্দ করো তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ্ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন ।
* ihadis.com, সুনানে তিরমিজি হাদিসঃ ১১৬২, হাসান সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তি উত্তম যে তার নিজের স্ত্রীর কাছে উত্তম ।
* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৫৯ এবং ৬০৩৫, সহিহ হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন নবী (সা) স্বভাবগত ভাবে অশালীন কথা বলতেন না,ইচ্ছা করে তিনি অশালীন কথা বলতেন না,অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না । তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব চরিত্র উত্তম সেই তোমাদের মধ্যে সর্ব উত্তম।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন নবী (সা) স্বভাবগত ভাবে অশালীন কথা বলতেন না,ইচ্ছা করে তিনি অশালীন কথা বলতেন না,অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না । তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব চরিত্র উত্তম সেই তোমাদের মধ্যে সর্ব উত্তম।
ইসলামের শিক্ষা হলঃ
(ক) মুমিন স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষ রাখতে পারবে না ।
(খ) ভাল ব্যাবহারকারী হওয়া এবং স্ত্রী-পরিবারের প্রতি কমল ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া মুমিনের পরিচয় ।
(গ) কোন পুরুষ যদি উত্তম হতে চায় অবশ্যই তার নিজ স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে হবে।
এখন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলামঃ
+ যে স্বামী তার স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি এমনকি তার ইচ্ছার প্রতি লক্ষ্য রাখে না , সে কি উত্তম স্বামী হতে পারে ?
+ যে স্বামী তার স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধা প্রতি লক্ষ্য না রেখে যখন তখন স্ত্রীর সাথে সহবাস লিপ্ত হয় সে কি স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে পারে ?
উত্তর সহজঃ না ।
ইসলামী উপদেশঃ একজন ভাল মুসলিম স্বামী যেমন স্ত্রীর জৈবিক চাহিদার প্রতি যত্নবান হবেন তেমনি নিজ চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে না যে তার নিজ স্ত্রীর কাছে কষ্টকর । স্ত্রীর প্রতি খারাপ আচরণ করে কেউ তার স্ত্রীর কাছে উত্তম ও পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারে না।
স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পুরনে স্বামীর দায়িত্বঃ
* মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিসঃ ১০৪৬৮, সহিহ হাদিসঃ নবী মুহাম্মদ (সা) বলেন, যখন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন সে যেন পরিপূর্ণ (সহবাস) করে ।আর যখন তার চাহিদা পূরণ হয়ে যায় অথচ স্ত্রীর চাহিদা অপূর্ণ থাকে তখন সে যেন তাড়াহুড়ো না করে ।
* সুরা তওবা ৯:৭১ = মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু । তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে ।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্বঃ
* সুরা নিসা ৪:১৯ = তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। আর তোমরা তাদের অপছন্দ করো তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ্ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০৩৯, সহিহ হাদিসঃ এক লোক আয়েশা (রা) কে জিজ্ঞেস করেন, নবী (সা) নিজ গৃহে কি কাজ করতেন ? তিনি বলেন, তিনি পারিবারিক কাজকর্মে বাস্ত থাকতেন । যখন সালাতের সময় উপস্থিত হত তখন উঠে সালাতে চলে যেতেন।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬০৭৯, সহিহ হাদিসঃ আয়েশা (রা) বলেন , আমার জ্ঞান হবার পর থেকেই আমি আমার বাবা-মাকে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত পেয়েছি । আমাদের উপর এমন কোন দিন যায়নি , যে দদিনের দু প্রান্তে সকালে ও বিকালে রাসুল (সা) আমাদের নিকট আসতেন না । একদিন দুপুর বেলা আমরা আবু বকর (রা) এর কক্ষে উপবিষ্ট ছিলাম । একজন বলল এই যে রাসুল (সা) ! । তিনি এমন সময় এসেছেন যে সময় তিনি আমাদের এখানে আসেন না । আবু বকর (সা) বলেন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাঁকে এ মুহূর্তে নিয়ে এসেছে । নবী (সা) বললেন আমাকে মক্কা থেকে বহির্গমনের আদেশ দেয়া হয়েছে ।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬১১৪, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেন, প্রকৃত বীর সে নয় , যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় , বরং সেই আসল বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে ।
* সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৪৪, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেন তোমরা যা খাবে স্ত্রীদেরকেও তাই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে , তাদেরকেও তা পরিধান করাবে । তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না ।
* সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৪৬, সহিহ হাদিসঃনবী (সা) বলেছেনঃ যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম না।
*সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৫, সহিহ হাদিসঃরাসুল (সা) বলেছেনঃমানুষ স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সদাক্বাহ হয়ে যায়।
*সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬, সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃ ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।’
* সুনানে আন নাসায়ি,স্ত্রীকে ভালবাসা অধ্যায়, হাদিস নং ৩৯৩৯ এবং ৩৯৪০, হাসান সহিহঃ রাসুল (সা) বলেছেনঃপার্থিব বস্তুর মধ্যে স্ত্রী ও সুগন্ধী আমার নিকট পছন্দনীয় করা হয়েছে এবং নামাযে রাখা হয়েছে আমার নয়নের প্রশান্তি।
* সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৫৯ এবং ৬০৩৫, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন নবী (সা) স্বভাবগত ভাবে অশালীন কথা বলতেন না,ইচ্ছা করে তিনি অশালীন কথা বলতেন না,অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না । তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব চরিত্র উত্তম সেই তোমাদের মধ্যে সর্বউত্তম।
* সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৪১৭৭, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ যে তার পরিবারের কাছে ভাল ।
* জামে আত তিরমিজি, হাদিস নং ২২৬৩, সহিহ হাদিসঃ নবী (সা) বলেন, সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম যার নিকট কল্যাণ কামনা করা যায় এবং যার ক্ষতি হতে মুক্ত থাকা যায়। আর সেই লোক তোমাদের মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট যার নিকট কল্যাণের আশা করা যায় না এবং যার ক্ষতি হতেও নিরাপদ থাকা যায় না।
উপরের হাদিস হতে আমরা জানতে পারলাম স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব হলঃ
১/ স্ত্রীর সাথে ভালভাবে , সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করতে হবে । স্ত্রীদের এক কাজ স্বামীর প্রতি ভাল না লাগলেও অন্য কাজ ভাল লাগবে ।
২/ স্ত্রীর কাজ কর্মে সাহায্য করা ।
৩/ নিজের শ্বশুরবাড়ির লোকদের খোজখবর নেয়া ।
৪/ স্ত্রীর কোন কাজে স্বামী রেগে গেলে অবশ্যই ধৈর্য ধারন করা । এটাই বীর হওয়ার লক্ষন ।
৫/ স্ত্রীদের খাওয়ানো, পোশাক কিনে দেওয়া স্বামীর দায়িত্ব । গালাগালি এবং প্রহার করা যাবে না স্ত্রীদের ।
৬/ যারা স্ত্রীদের প্রহার করে তারা ভাল স্বামী না ।
৭/ নিজ পরিবারের জন্য সম্পদ খরচ করা ।
৮/ মাঝে মাঝে স্ত্রীর মুখে খাবার খাইয়ে দেয়া , স্বামী স্ত্রীর রোম্যান্টিকতা ।
৯/ নবী (সা) স্ত্রীদের পছন্দ করতেন তাই তার অনুসারীরাও স্ত্রীদের ভালবাসবেন, নারীদের সম্মান করবেন, নারীদের অধিকার আদায়ে লড়বেন এটাই স্বাভাবিক ।
১০/ যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী সেই উত্তম মুসলিম।
১১/ পরিবারের কাছে যে ভাল সেই উত্তম মুসলিম ।
১২/ যার কাছে কল্যাণ কামনা করা যায় সে উত্তম আর যার কাছে কল্যাণ কামনা করা যায় না যে নিকৃষ্ট । আর স্ত্রী তার স্বামীর কাছে কল্যাণ চাইলে সে স্বামী তার জন্য উত্তম ।
পরিশেষে কিছু কথা
উপরের প্রশ্নকর্তা যেই এঙ্গেলে প্রশ্ন করেছে তার সাথে ইসলামের বিন্দুমাত্র কি কোন সম্পর্ক আছে ? উত্তর হচ্ছে না । ভেবে দেখেছেন কখনো নাস্তিকরা আসলে যেই ইসলাম জানে সেটা আসলে ইসলাম না সেটাই নাস্তিক ধর্ম! এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই , নাই , বিন্দুমাত্র নাই । একজন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কি দায়িত্ব এই বিশুদ্ধ তথ্য গুলা কি নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীরা জানে না ? উত্তর হল জানে কিন্তু ঐ যে নাস্তিকিও বিজনেস লস হবে , বুঝেন নাই হিসাবটা ! হাহাহা
আমি একটি কথা প্রাই বলি ইসলামের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে সে কখনো নাস্তিক ধর্ম গ্রহণ করতেই পারে না কারন নাস্তিক ধর্ম মানতে হলে উপরের যেই কয়টি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন মুসলিমকে সেই কাজের বিরোধিতা করতে হবে। তা না হলে একজন নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসী, সে নাস্তিক ধর্মের অনুসারী হতেই পারবে না যেহেতু তার আসলে টার্গেট দুনিয়া থেকে ইসলাম ধর্ম ধ্বংস হয়ে যাওয়া ! এরমানে ইসলাম যাই বলুক সেটার বিরোধিতা একজন নাস্তিককে করতেই হবে , নাস্তিক ধর্মে ইসলামের বিরোধিতা করা ফরজ !
ইসলাম এবং নাস্তিক ধর্মে পার্থক্য এখানেই
লিখেছেনঃ এম ডি আলী
No comments:
Post a Comment