Monday, August 26, 2019

স্বামী স্ত্রী সর্বোচ্চ কতদিন পরস্পর দূরে থাকতে পারবে?

যায়দ বিন আলমাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনএক রাতে উমর রা. জনগণের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য প্রহরী বেশে বের হলেন। এক বাড়ির পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় ঘর থেকে নারী কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি শুনতে পেলেন। ঘরের ভিতরে এক মহিলা কবিতা আবৃত্তি করছিল। কবিতার অর্থ : রজনি দীর্ঘ হয়েছে এবং তার এক পার্শ কৃষ্ণ বর্ণ ধারন করেছে। এদিকে দীর্ঘ দিন যাবত আমার বন্ধু আমার কাছে নেই যে তার সাথে আমোদ-প্রমোদ করবো। আল্লাহর শপথ! যদি এক আল্লাহর ভয় না থাকত তাহলে এ খাটের চার পাশ নড়ে উঠত। যখন ভোর হলো উমর রা. রাতের কবিতা আবৃত্তি কারিনী মহিলাকে ডেকে পাঠালেন। মহিলা রাজ দরবারে এসে উপস্থিত হলে উমর রা. তাকে জিজ্ঞেস করলেনতুমি কি গত রাতে এ জাতীয় কবিতা আবৃত্তি করেছিলে
মহিলা বললহ্যাঁ। উমর রা. বললেনকেনউত্তরে মহিলা বললদীর্ঘ দিন যাবত আমার স্বামী জিহাদের ময়দানে আছে। উমর রা. এ কথা শুনে একজন মহিলাকে তার সাথে পাঠিয়ে দিলেন। এবং বললেনতার স্বামী আসা পর্যন্ত তুমি তার সাথে থাকবে। এদিকে উমর রা. ঐ মহিলার স্বামীর নিকট ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়ে শাহী ফরমান প্রেরণ করে দিলেন। এরপর তিনি তার কন্যা হাফসা রা. এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেনহে মেয়ে! নারীরা তাদের স্বামী থেকে কতদিন ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে
হাফসা রা. বললেনআব্বা আপনার মত ব্যক্তি আমার মত মানুষের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে
তখন উমর রা. বললেনপ্রজাদের স্বার্থ রক্ষার ইচ্ছা যদি না হতো তবে আমি তোমার নিকট এ বিষয়ে প্রশ্ন করতাম না। তখন হাফসা রা. বললেনমেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। এরপর থেকে উমর রা. চার মাস অন্তর তার মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন এবং নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন। সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূরহাদীস ২৪৬৩মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকহাদীস ১২৫৯৪, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বায়হাক্বীঃ ১৪/২৪৯।
উল্লেখ্য কোন বর্ণনামতে ৪ মাসের স্থলে ৬ মাস বলা হয়েছে।  এজন্য ইসলামী শরীয়তের বিধান হলোবিবাহ করে যুবতী স্ত্রী রেখে দীর্ঘ দিনের জন্য বিদেশ-বিভূইয়ে যাবে না। তবে যদি স্ত্রী মন থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদেশ যাত্রার সন্তোষজনক অনুমতি প্রদান করে এবং এ দীর্ঘ সময়ে স্ত্রী নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারবে বলে প্রবল ধারণা হয় কেবল তখনই দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদেশে গমন করতে পারবে। 
সারকথাএকজন স্বামী তার স্ত্রী থেকে ৪ বা ৬ মাস দূরে থাকতে পারবে। এর বেশি সময় দূরে থাকতে হলে স্ত্রীর সন্তোষজনক অনুমোদন প্রয়োজন হবে। আর স্বামী স্ত্রীর সাথে ছয় মাস দৈহিক সম্পর্ক না রাখলে আপনা আপনি তালাক হয়ে যায় না। তবে স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে ছয় মাস দৈহিক সম্পর্ক না রাখা বৈধ আছে। আর সন্তোষজনক অনুমতি ব্যতীত ছয় মাস দৈহিক সম্পর্ক না রাখলে গুনা হবে।-সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূরহাদীস ২৪৬৩মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকহাদীস ১২৫৯৪সুনানে নাসায়ীহাদীস ৩৪৬৫আদ-দুররুল মুখতার ৪/১৪৪রদ্দুল মুহতার ৪/৩৮০ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২৯/৪৮


পাপ থেকে হেফাযত এবং পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যে থাকার শর্তে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পারস্পরিক সম্মতিতে দীর্ঘ সময় দূরে থাকায় শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে পাপের সাথে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে অল্প দিনের জন্য হলেও দূরে থাকা বৈধ নয়। ওমর (রাঃ) নিজ কন্যা হাফছাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে সে সময়ে মুজাহিদদের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস বাইরে থাকার ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করেছিলেন (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/১২৫৯৪)।

রসূলুল্লহ (সঃ) বলেছেনঃ
"তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো না; যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোঁমাদের রক্তের শিরায়, উপ-শিরায় প্রবাহিত হয়।"
***তিরমিযীঃ ১৭২।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...