Saturday, June 22, 2019

মৃতের জন্য বা তার সামনে কুরআন খতম বা পাঠ করা কি জায়েজ

#মৃত_ব্যক্তির_সামনে_কুরআন_খতম_করা_কি_শরিয়তসম্মত??

আমাদের সমাজে মৃতের জন্য কুরআন খতমের রেওয়াজ এত ব্যাপকভাবে প্রচলিত যা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনেই মানুষ করে থাকে। কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করলে সওয়াব আছে, শুনলেও সওয়াব আছে। কিন্তু মৃতের
পাশে কুরআন তেলাওয়াত করলে কোন সওয়াব হবে না। কারণ মৃত ব্যক্তি কুরআন পাঠ শুনতে পারে না। মহান আল্লহ বলেন,

ﺇِﻧَّﻚَ ﻟَﺎ ﺗُﺴْﻤِﻊُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺗَﻰٰ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺴْﻤِﻊُ ﺍﻟﺼُّﻢَّ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀَ ﺇِﺫَﺍ ﻭَﻟَّﻮْﺍ ﻣُﺪْﺑِﺮِﻳﻦَ

-হে নাবী! আপনি আহ্বান (কথা) শুনাতে পারবেন না মৃতদেরকে।
[সূরা আল-নামল ৮০]
:
☞হানাফী ফিকাহর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাতাওয়া শামিয়াতে বলা হয়েছেঃ
-মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরআন পাঠ করার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা মাকরূহ এবং খতমে
কুরআনের জন্য সাধু সজ্জন ও কারীদের সমবেত করা নিষিদ্ধ।
[ফাতাওয়া ও মাসাইলঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা- ৩০৬]
:
☞শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী ‘মাদারিজুন নবুয়াহ’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ
-রসূলুল্লহ ﷺ এর পবিত্র যুগে মৃতের জন্য জানাযা নামাযের সময় ব্যতীত অন্য
সময়ে সমবেত হওয়া ও কুরআন তিলাওয়াত করা বা খতম করার রীতি ছিল না-
কবরের কাছেও নয়, অন্য স্থানেও নয়- এসব কাজ বিদআত ও মাকরূহ।
[ফাতাওয়া ও মাসাইলঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা- ৩০৭]
:
☞সহীহ হাদীস হতে বর্ণীত মৃত মানুষের জন্য স্থায়ী জনকল্যাণ মূলক কাজগুলো
হলোঃ-
:
✔ মানুষের কল্যাণার্থে নলকূপ খনন।
✔ খাল-পুকুর খনন।
✔ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ।
✔ মাদরাসা-মসজিদ, পাঠাগার নির্মাণ। দ্বীনি কিতাবাদী-বই-পুস্তক দান।
✔ গরিব-দু:খী, অভাবী, সম্বলহীনদের দান-সদকা করা।
✔ মসজিদ, মাদরাসা, ইসলামী প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা হয় -এমন সদকা বা দান।

অতএব বিদ’আত হতে সাবধান। কেননা নাবী করীম ﷺ বলেন,
-যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে এমন বিষয় সৃষ্টি করল, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।
[বুখারী হা/২৬৯৭; মুসলিম হা/১৭১৮; মিশকাত হা/১৪০]
:
৮-কুরআন খতম বা কুরআনখানি মৃত ব্যক্তির প্রতি সওয়াব পাঠানোর জন্য
কুরআন খতম বা কুরআন খতমের অনুষ্ঠান করা হয়। মৃতের জন্য কুরআন খতমের এ রেওয়াজ এত ব্যাপকভাবে প্রচলিত যে, দীন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ বহু সংখ্যক মুসলিম মনে করেন : কুরআন নাযিল হয়েছে মৃত ব্যক্তিদের জন্য মুক্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে!!
:
  অথচ আল্লহ বলেন—
ﺇِﻥْ ﻫُﻮَ ﺇِﻟَّﺎ ﺫِﻛْﺮٌ ﻭَﻗُﺮْﺁَﻥٌ ﻣُﺒِﻴﻦٌ ﴿৬৯ ﴾ ﻟِﻴُﻨْﺬِﺭَ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻴًّﺎ
ﻭَﻳَﺤِﻖَّ ﺍﻟْﻘَﻮْﻝُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﴿ ৭০ ﴾ ( ﻳـﺲ)

এতো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন; যাতে সে সতর্ক করতে পারে জীবিতদেরকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা সত্য হতে পারে।
(সূরা ইয়াসীন : ৬৯-৭০)
:
কুরআন খতমের যত অনুষ্ঠান হয়, তার পঁচানব্বই ভাগই মৃত ব্যক্তির জন্য উৎসর্গিত। বাকিগুলো ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নতি, বিদেশ যাত্রায় সাফল্য, চাকুরি লাভ, পরীক্ষায় পাস, মামলা-মকদ্দমায় খালাস, দোকান, বাড়িঘর, লঞ্চ- জাহাজ, বাস-ট্রাকের উদ্বোধন— ইত্যাদি উদ্দেশ্যে করা হয়। মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের জন্য কুরআন খতম করে বিনিময় গ্রহণ জায়েয কি-না, এ নিয়ে বিতর্ক দেখা যায় আলেম-উলামাদের মাঝে। মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে কুরআন খতম।করলে তার বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয— এ রকম ঐক্যমতের খবরও শোনা যায় সংশ্লিষ্ট মহলে। আর পারিশ্রমিক দিয়ে কুরআন খতমের ব্যবস্থা সর্বত্রই দেখা যায়। অথচ বিষয়টি কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে কতটুকু সহীহ তা ভাবতে চায় না অনেকেই।

★হানাফী ফিকাহর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাতাওয়া শামিয়াতে বলা হয়েছে :
“মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরআন পাঠ করার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা মাকরূহ এবং খতমে
কুরআনের জন্য সাধু সজ্জন ও কারীদের সমবেত করা নিষিদ্ধ।”[৭]
★শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী ‘মাদারিজুন নবুয়াহ’ গ্রন্থে লিখেছেন:
“রসূলুল্লহ (সঃ) এর পবিত্র যুগে মৃতের জন্য জানাযা নামাযের সময় ব্যতীত অন্য
সময়ে সমবেত হওয়া ও কুরআন তিলাওয়াত করা বা খতম করার রীতি ছিল না- কবরের কাছেও নয়, অন্য স্থানেও নয়- এসব কাজ বিদআত ও মাকরূহ।”[৮]
:
১৬-লাশ ও কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াতঅনেককে দেখা যায়, মৃত ব্যক্তির কবর যিয়ারত করতে গিয়ে কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত করেন। মৃতের লাশের কাছেও কুরআন পাঠ করতে দেখা যায়। কেউ সূরা ইয়াসীন পড়েন, কেউ পড়েন সূরা তাকাসুর। কেউ সূরা ফাতেহা পড়েন। আবার কেউ তিন বার সূরা ইখলাস পড়ে তার সওয়াব মৃত ব্যক্তির জন্য পাঠিয়ে দেন। রসূলুল্লহ (সঃ)
জীবনে বহু বার কবর যিয়ারত করেছেন। তিনি কখনো কোন কবরের কাছে
গিয়ে সূরা ফাতেহা, কুরআন থেকে কোন সূরা বা কোন আয়াত পাঠ করেননি। কুরআনের ফযীলত তার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সকলের চেয়ে বেশি অবগত ছিলেন রসুল (সঃ)।

কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে ইমামদের তিনটি মত পাওয়া যায়। ★এক. না- জায়েয ও বিদআত। ইমাম আবু হানিফা রহ. ইমাম মালেক রহ. ও ইমাম আহমদ রহ. এ মত পোষণ করতেন।
★দুই. জায়েয: ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান এ মত পোষণ করতেন।
★তিন. শুধু দাফনকালে কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত জায়েয। ইমাম শাফিয়ী রহ. এ মত পোষণ করেন এবং ইমাম আহমদ থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়।[১৩]
:
ইমাম নববী রহ. বলেন, রসুলুল্লহ (সঃ) দু ব্যক্তির কবরে খেজুর ডাল গেড়ে দিয়েছিলেন এ জন্য যে খেজুর ডাল যতক্ষন তাজা থাকবেততক্ষণ জিকির
করবে ফলে কবরে আযাব হবে না। যদি খেজুর ডালের জিকিরের কারণে কবর
আযাব বন্ধ হয় তাহলে কুরআন তিলাওয়াত করলে কবরের আযাব বন্ধ হবে না কেন? তাই কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। [১৪] কিন্তু তার এ মত অনুমান নির্ভর মাত্র। এ সমর্থনে অনুমান ছাড়া অন্য কোন প্রমাণ নেই। কেননা, রসুলুল্লহ (সঃ) কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি অধিক যত্নবান ছিলেন। তবে এ দু কবরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত করেননি।
:
♦মুজতাহিদ ইমামদের মতামত যা-ই হোক, রসুলুল্লহ (সঃ) বা তার সাহাবাদের থেকে যা অনুমোদিত নয়, তা শরীয়ত সম্মত বলে স্বীকৃতি পাবে না কখনো। ইমামদের মতামত হল ব্যক্তিগত ইজতিহাদ। এ ইজতিহাদে ভুল করলেও তারা সওয়াব পাবেন আল্লহর কাছে। কোন কবরের কাছে রসুলুল্লহ (সঃ) বা তাঁর
সাহাবাদের কেউ কুরআন থেকে কোন কিছুই পাঠ করেননি—না সূরা ফাতেহা
না সূরা ইখলাস বা সূরা তাকাসুর। রসুলুল্লহ (সঃ)  কবর যিয়ারতকালে
কবরবাসীকে সালাম দিয়েছেন, ও তাদের জন্য দুআ করেছেন। বহু হাদীসে
কীভাবে তিনি সালাম দিয়েছেন ও দুআ করেছেন—তার বর্ণনা এসেছে।
যেমন তিনি কবর যিয়ারতকালে বলতেন
-
ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺪﻳﺎﺭ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻭﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻭﺇﻧﺎ ﺇﻥ
ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻜﻢ ﻻﺣﻘﻮﻥ، ﻧﺴﺄﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻨﺎ ﻭﻟﻜﻢ ﺍﻟﻌﺎﻓﻴﺔ . (ﺭﻭﺍﻩ
ﻣﺴﻠﻢ ৯৭৩)
হে মুমিন মুসলিম কবরবাসী ! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লহর
ইচ্ছায় আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব। আল্লহর কাছে আমাদের ও
তোমাদের জন্য সুখ ও শান্তি প্রার্থনা করছি।[১৫]
:
[৭] ফাতাওয়া ও মাসাইলঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা- ৩০৬
[৮] ফাতাওয়া ও মাসাইলঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা- ৩০৭
[১৩] রিয়াজুস সালেহীন
[১৪] শরহে মুসলিম : ইমাম নববী, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৩৩
[১৫] সহীহ মুসলিম, জানাযা অধ্যায়
:
জাঝাকুমুল্লহুখইর

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2096617540572306&id=100006722419436

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...