★ প্রশ্ন: শাওয়াল মাসের যে কয়দিন বাকী আছে সেদিনগুলো যদি রমজানের কাযা রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার জন্য যথেষ্ট না হয় তাহলে কি কাযা রোজার আগে ছয় রোজা রাখা জায়েয হবে?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
সঠিক মতানুযায়ী শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের রোজা পূর্ণ করার সাথে সম্পৃক্ত। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
( مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّامِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ ) ، رواه مسلم (1164)
“যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল অতঃপর এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।” [সহিহ মুসলিম (১১৬৪)]
হাদিসে উল্লেখিতثُمَّ শব্দটিحرف عطف যাالترتيب (বিন্যাস) ও التعقيب (ক্রমধারা) অর্থে ব্যবহৃত হয়।এদিক থেকেহাদিসটি প্রমাণ করছে যে, আগে রমজানের রোজাপূর্ণ করতে হবে। সেটা সুনির্দিষ্ট সময়ে আদায় হিসেবে হোক অথবা (শাওয়াল মাসে) কাযাপালন হিসেবেহোক। অর্থাৎ রমজানের রোজা পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে হবে। তাহলে হাদিসে উল্লেখিত সওয়াব পাওয়া যাবে।কারণ যে ব্যক্তির উপর রমজানের কাযা রোজা বাকী আছে সেতো পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখেনি। রমজান মাসের কিছুদিনরোজা রেখেছে। তবে কারো যদি এমন কোন ওজর থাকে যার ফলে তিনি শাওয়াল মাসে রমজানের কাযা রোজা রাখতে গিয়ে শাওয়ালের ছয়রোজা রাখতে পারেননি। যেমন কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত (প্রসবোত্তর স্রাবগ্রস্ত) হন এবং গোটা শাওয়াল মাস তিনি রমজানের রোজা কাযা করেন তাহলে তিনি জিলক্বদ মাসে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে পারবেন। কারণ এ ব্যক্তির ওজর শরিয়তেগ্রহণযোগ্য। অন্য যাদের এমন কোন ওজর আছে তারা সকলে রমজানের রোজা কাযা করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা জিলক্বদ মাসে কাযা পালন করতে পারবেন। কিন্তু কোন ওজর ছাড়া কেউ যদি ছয় রোজা না রাখে এবং শাওয়াল মাস শেষ হয়ে যায় তাহলে সে ব্যক্তি এই সওয়াব পাবেন না। শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: কোন নারীর উপর যদি রমজানের রোজার ঋণ থেকে যায় তাহলে তার জন্য কি রমজানের ঋণের আগে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা জায়েয হবে; নাকি শাওয়ালের ছয়রোজার আগে রমজানের ঋণের রোজা রাখতেহবে? জবাবে তিনি বলেন: যদি কোন নারীর উপর রমজানের কাযা রোজা থাকে তাহলে তিনি কাযা রোজা পালনের আগে ছয়রোজা রাখবেন না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
( مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّامِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ ) ، رواه مسلم (1164)
“যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।” [সহিহ মুসলিম (১১৬৪)]
যার উপর কাযা রয়ে গেছে সেতো রমজানের রোজা পূর্ণ করেনি। সুতরাং সে কাযা আদায়ের আগে এই রোজা পালনের সওয়াব পাবে না। যদি ধরে নেয়া হয় যে, কাযা রোজা পালন করতে গোটা মাস লেগে যাবে(যেমন-কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত হন এবং তিনি গোটা রমজানে একদিনও রোজা রাখতে না পারেন, শাওয়াল মাসে তিনি রমজানের কাযা রোজা রাখা শুরু করেন, কিন্তু কাযা রোজা শেষ করতে করতে জিলক্বদ মাস শুরু হয়ে যায়) তাহলে তিনিজিলক্বদ মাসে ছয়রোজা রাখবেন।এতে করে তিনি শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখার সওয়াব পাবেন। কেননা তিনি বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব করেছেন (যেহেতু শাওয়াল মাসে তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভবপর ছিল না)। তাই তিনি সওয়াব পাবেন।[ফতোয়া সমগ্র ১৯/২০]
এর সাথে আরেকটু যোগ করে বলা যায়, যে ব্যক্তি বিশেষ কোন ওজরের কারণে রমজানের রোজা ভেঙ্গেছে সেটা কাযা করা তার দায়িত্বেফরজ। রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদের অন্যতম। তাই এই ইবাদত পালনপ্রাধান্য পাবে এবং ফরজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়াকে অন্য মুস্তাহাব আমলের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।
★★★ আরো বিস্তারিত জানার ও বুঝার জন্য নিম্ন আর্টিকেল পড়া যেতে পারে।
★প্রশ্ন: জনৈক নারী শাওয়ালের চারটি রোজা রাখার পর মাসের শেষ দিকে তার হায়েয শুরু হয়ে গেছে। তাই তিনি ছয় রোজা শেষ করতে পারেননি; দুইদিন বাকী ছিল। শাওয়াল মাস চলে যাওয়ার পর তিনি কি এ রোজাগুলো রাখতে পারবেন?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
ইমাম মুসলিম আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজান মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখবে সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।” এ হাদিসের আপাত অর্থ হচ্ছে- যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখবে সে এ সওয়াব পাবে।
যে ব্যক্তি কোন ওজরের কারণে কিংবা ওজর ছাড়া ‘শাওয়াল’ ছাড়া অন্য মাসে ছয় রোজা রেখেছে সে কি শাওয়াল মাসে রোজা রাখার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে- এ ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন:
#প্রথম মত:
মালেকি মাযহাবের একদল আলেম ও কতিপয় হাম্বলি আলেমের অভিমত হচ্ছে- যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে অথবা শাওয়ালের পর (যে কোন সময়) ছয়টি রোজা রাখবে সে এ সওয়াব পাবে। হাদিসে শাওয়াল মাসের কথা এসেছে- মুকাল্লাফ (শরয়িদায়িত্বপ্রাপ্ত) এর জন্য সহজীকরণার্থে; যেহেতু রমজানের পরপর শাওয়াল মাসে রোজা রাখা তৎপরবর্তী মাসে রোজা রাখার চেয়ে সহজতর।
আল-আদাবি তাঁর রচিত “শারহুল খারশি” এর ‘পাদটীকা’ (২/২৪৩) তে বলেন: শরিয়তপ্রণেতা শাওয়াল মাসের এর কথা উল্লেখ করেছেন রোজা রাখা সহজী করণার্থে; রোজা রাখার হুকুমকে এ সময়ের সাথে খাস করে দেয়ার জন্য নহে। অতএব, যে ব্যক্তি যিলহজ্বের দশদিনে এ রোজাগুলো রাখল তার কোন গুনাহ হবে না; বরঞ্চ যিলহজ্বের এ দিনগুলোতে রোজা রাখার ব্যাপারে ফজিলতের কথা এসেছে। তাই এ দিনগুলোর ফজিলতও যদি পাওয়া যায় এবং উদ্দেশ্যও যদি হাছিল হয় সেটা আরও ভাল। বরং যিলক্বদ মাসে রোজাগুলো রাখাও ভাল। মূলকথা: দিন যত পেরিয়ে যাবে কষ্ট বেশি হওয়ার কারণে সওয়াব তত বাড়বে। সমাপ্ত
ইমাম মুসলিম আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজান মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখবে সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।” এ হাদিসের আপাত অর্থ হচ্ছে- যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখবে সে এ সওয়াব পাবে।
যে ব্যক্তি কোন ওজরের কারণে কিংবা ওজর ছাড়া ‘শাওয়াল’ ছাড়া অন্য মাসে ছয় রোজা রেখেছে সে কি শাওয়াল মাসে রোজা রাখার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে- এ ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন:
#প্রথম মত:
মালেকি মাযহাবের একদল আলেম ও কতিপয় হাম্বলি আলেমের অভিমত হচ্ছে- যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে অথবা শাওয়ালের পর (যে কোন সময়) ছয়টি রোজা রাখবে সে এ সওয়াব পাবে। হাদিসে শাওয়াল মাসের কথা এসেছে- মুকাল্লাফ (শরয়িদায়িত্বপ্রাপ্ত) এর জন্য সহজীকরণার্থে; যেহেতু রমজানের পরপর শাওয়াল মাসে রোজা রাখা তৎপরবর্তী মাসে রোজা রাখার চেয়ে সহজতর।
আল-আদাবি তাঁর রচিত “শারহুল খারশি” এর ‘পাদটীকা’ (২/২৪৩) তে বলেন: শরিয়তপ্রণেতা শাওয়াল মাসের এর কথা উল্লেখ করেছেন রোজা রাখা সহজী করণার্থে; রোজা রাখার হুকুমকে এ সময়ের সাথে খাস করে দেয়ার জন্য নহে। অতএব, যে ব্যক্তি যিলহজ্বের দশদিনে এ রোজাগুলো রাখল তার কোন গুনাহ হবে না; বরঞ্চ যিলহজ্বের এ দিনগুলোতে রোজা রাখার ব্যাপারে ফজিলতের কথা এসেছে। তাই এ দিনগুলোর ফজিলতও যদি পাওয়া যায় এবং উদ্দেশ্যও যদি হাছিল হয় সেটা আরও ভাল। বরং যিলক্বদ মাসে রোজাগুলো রাখাও ভাল। মূলকথা: দিন যত পেরিয়ে যাবে কষ্ট বেশি হওয়ার কারণে সওয়াব তত বাড়বে। সমাপ্ত
মক্কাতে মালেকি মাযহাবের মুফতি মুহাম্মদ বিন আলি বিন হুসাইন এর ‘তাহযিবু ফুরুকি ক্বারাফি’ নামক গ্রন্থে (ফুরুক গ্রন্থের সাথে ছাপাকৃত ২/১৯১) ইবনুল আরাবি মালেকি থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “শাওয়াল মাসে” কথাটি এসেছে- উদাহরণস্বরূপ। উদ্দেশ্য হচ্ছে- রমজান মাসের রোজা দশমাস রোজা রাখার সমতুল্য; আর ছয় রোজা দুইমাস রোজা রাখার সমতুল্য। এটাই মাযহাবের অভিমত (অর্থাৎ মালেকি মাযহাবের অভিমত)। তাই যদি এ রোজাগুলো শাওয়াল ছাড়া অন্য মাসে রাখা হয় হুকুম অভিন্ন। তিনি বলেন: এটি সূক্ষ্ম দৃষ্টির নির্যাস; সুতরাং তোমরা তা জেনে রেখো। সমাপ্ত
ইবনুল মুফলিহ (রহঃ) ‘আল-ফুরু’ নামক গ্রন্থে বলেন: কিছু কিছু আলেমের মতানুযায়ী শাওয়াল ছাড়া অন্য মাসে রোজা রাখলেও এ ফজিলত পাওয়া যাবে- এমন একটি সম্ভাবনা রয়েছে। কুরতুবী এ মতটি উল্লেখ করেছেন। কারণ রোজার ফজিলত হচ্ছে- এর সওয়াব দশগুণ বৃদ্ধি পাওয়া। যেমনটি সাওবান এর হাদিস থেকে জানা যায়। আর শাওয়াল মাসে এ রোজাগুলো রাখার জন্য শর্ত করা হয়েছে- রুখসত (সহজীকরণ) হিসেবে। শরিয়তের রুখসত বা সহজটা গ্রহণ করা উত্তম।
‘আল-ইনসাফ’ গ্রন্থ প্রণেতা এ মতটি উল্লেখ করে এর সমালোচনা করে বলেন: আমি বলব: এটি দুর্বল অভিমত; হাদিসের খেলাফ। এ রোজাগুলোকে রমজানের ফজিলতের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে যেহেতু এ রোজাগুলো রমজানের সীমানার সন্নিকটে; এ কারণে নয় যে, এ রোজাগুলোর প্রতিদান দশগুণ। তাছাড়া যেহেতু এ রোজাগুলো রাখা রমজানের ফরজ রোজা রাখার সমান ফজিলতপূর্ণ।[আল-ইনসাফ (৩/৩৪৪) থেকে সমাপ্ত]
#দ্বিতীয় মত:
শাফেয়ী মাযহাবের একদল আলেমের মতে, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে রোজাগুলো রাখতে পারেনি সে যিলক্বদ মাসে রোজাগুলো কাযা করবে। তবে সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির চেয়ে কম সওয়াব পাবে যিনি শাওয়াল মাসে রোজাগুলো পালন করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি রমজানের সিয়াম পালন করার পর শাওয়াল মাসে ছয়রোজা পালন করল সে গোটা বছর ফরজ রোজা পালন করার সওয়াব পাবে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি রমজান মাস সিয়াম পালন করল ও শাওয়াল ছাড়া অন্য মাসে ছয় রোজা রাখল সে রমজান মাসে রোজা রাখার ও ছয়দিন নফল রোজা রাখার সওয়াব পাবে।
ইবনে হাজার মক্কি ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ নামক গ্রন্থে (৩/৪৫৬) বলেন: “যে ব্যক্তি প্রতি বছর রমজানের সাথে রোজাগুলো রাখবে সে যেন আজীবন ফরজ রোজা রাখল; সওয়াব কয়েকগুণ বাড়বে না। আর যে ব্যক্তি শাওয়াল ছাড়া অন্য মাসে ছয়টি রোজা রাখবে সে ব্যক্তি আজীবন নফল রোজা রাখার সওয়াব পাবে; সওয়াব কয়েকগুণ বাড়বে না।
আল্লাহই ভাল জানেন।” সমাপ্ত
#তৃতীয় মত:
এ ফজিলত শাওয়াল মাসে রোজাগুলো রাখা ছাড়া অর্জিত হবে না। এটি হাম্বলি মাযহাবের অভিমত।
কাশশাফুল ক্বিনা (২/৩৩৮) গ্রন্থে বলেছেন: “হাদিসের প্রকাশ্য ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, শাওয়াল মাসে রোজাগুলো রাখা ছাড়া এ ফজিলত পাওয়া যাবে না।” সমাপ্ত
কেউ যদি কিছু রোজা রাখে; কিন্তু কোন ওজরের কারণে সবগুলো রোজা রাখতে না পারে আশা করা যায় সে সওয়াব পাবে ও ফজিলত অর্জন করবে।
শাইখ বিন বায বলেন: শাওয়াল মাসে শেষ হয়ে যাওয়ার পর এ রোজাগুলো কাযা করার কোন বিধান নেই। কারণ এটি সুন্নত এবং এ সুন্নত পালন করার সময় পার হয়ে গেছে; হোক না সে ব্যক্তি কোন ওজরের কারণে কিংবা ওজর ছাড়া রোজাগুলো রাখেনি।
যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসের চারদিন রোজা রাখতে পেরেছে; বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ছয়দিন পূর্ণ করতে পারেনি তার ব্যাপারে বলেন: শাওয়াল মাসের ছয়দিন রোজা রাখা একটি মুস্তাহাব আমল; ফরজ আমল নয়। সুতরাং আপনি যে কয়দিন রোজা রেখেছেন সে কয়দিনের সওয়াব পাবেন এবং যদি শরিয়ত অনুমোদিত কোন ওজরের কারণে রোজাগুলো রাখতে না পারেন সে ক্ষেত্রে আশা করা যায় আপনি পূর্ণাঙ্গ সওয়াব পাবেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে এসেছে- “যখন কোন বান্দা অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে তখন আল্লাহ তার জন্য সে আমলগুলোর সওয়াব লিখে দেন যে আমলগুলো সে মুকীম বা সুস্থ থাকাবস্থায় পালন করত।”[সহিহ বুখারি] আপনি যে রোজাগুলো রাখতে পারেননি সেগুলো কাযা করতে হবে না। আল্লাহই তাওফিকদাতা।[বিন বাযের ফতোয়াসমগ্র থেকে (১৫/৩৮৯,৩৯৫) সমাপ্ত]
সারকথা হচ্ছে-
ছয় রোজা শাওয়াল মাস ছাড়া অন্য মাসে রাখলে আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন এ রোজাগুলো শাওয়াল মাসে রাখার মতই। আবার কোন কোন আলেম সে রোজাগুলোর ফজিলত সাব্যস্ত করলেও বলেন যে, এর ফজিলত শাওয়াল মাসে রাখার চেয়ে কম। আর কোন কোন আলেমের মতে, যদি ওজরের কারণে কেউ রোজাগুলো রাখতে না পারে তাহলে সে পূর্ণ সওয়াব পাবে। আল্লাহর অনুগ্রহ প্রশস্ত। আল্লাহর দানের কোন সীমা নেই।
ব্যক্তিগত অভিমতঃ
ফরজ কাযা ছিয়ামের প্রাধান্য আগে দেয়া উচিৎ। কেননা হঠাৎ মারা গেলে আল্লাহ নফল ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না কিন্তু ফরজ কাযা থাকলে তার হিসাব দিতে হবে। ফরজ ছিয়ামের কাযা পালন করতে করতে যদি নফল ছিয়ামের সময় অতিবাহিত হয়ে যায় বা অল্প কয়েকটা ছিয়াম রাখার সময় থাকে তাহলে যে কয়টা রাখা যাচ্ছে সেগুলো রাখা উচিত আর ওজরবশত নিয়ত থাকার কারণে আল্লাহ পূর্ণাঙ্গ সওয়াব দিবেন ইংশাআল্লাহ। উল্লেখ্য শাওয়ালের ছিয়াম শাওয়াল মাসেই রাখতে হবে এই মতকেই আমি প্রাধান্য দিবো। যেহেতু হাদিসে শাওয়াল মাসের কথাই বলা হয়েছে। আর এটা ফরজ ছিয়াম না যে অন্যমাসে কাযা পালন করা যাবে।
আল্লাহই ভাল জানেন।
ইবনুল মুফলিহ (রহঃ) ‘আল-ফুরু’ নামক গ্রন্থে বলেন: কিছু কিছু আলেমের মতানুযায়ী শাওয়াল ছাড়া অন্য মাসে রোজা রাখলেও এ ফজিলত পাওয়া যাবে- এমন একটি সম্ভাবনা রয়েছে। কুরতুবী এ মতটি উল্লেখ করেছেন। কারণ রোজার ফজিলত হচ্ছে- এর সওয়াব দশগুণ বৃদ্ধি পাওয়া। যেমনটি সাওবান এর হাদিস থেকে জানা যায়। আর শাওয়াল মাসে এ রোজাগুলো রাখার জন্য শর্ত করা হয়েছে- রুখসত (সহজীকরণ) হিসেবে। শরিয়তের রুখসত বা সহজটা গ্রহণ করা উত্তম।
‘আল-ইনসাফ’ গ্রন্থ প্রণেতা এ মতটি উল্লেখ করে এর সমালোচনা করে বলেন: আমি বলব: এটি দুর্বল অভিমত; হাদিসের খেলাফ। এ রোজাগুলোকে রমজানের ফজিলতের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে যেহেতু এ রোজাগুলো রমজানের সীমানার সন্নিকটে; এ কারণে নয় যে, এ রোজাগুলোর প্রতিদান দশগুণ। তাছাড়া যেহেতু এ রোজাগুলো রাখা রমজানের ফরজ রোজা রাখার সমান ফজিলতপূর্ণ।[আল-ইনসাফ (৩/৩৪৪) থেকে সমাপ্ত]
#দ্বিতীয় মত:
শাফেয়ী মাযহাবের একদল আলেমের মতে, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে রোজাগুলো রাখতে পারেনি সে যিলক্বদ মাসে রোজাগুলো কাযা করবে। তবে সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির চেয়ে কম সওয়াব পাবে যিনি শাওয়াল মাসে রোজাগুলো পালন করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি রমজানের সিয়াম পালন করার পর শাওয়াল মাসে ছয়রোজা পালন করল সে গোটা বছর ফরজ রোজা পালন করার সওয়াব পাবে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি রমজান মাস সিয়াম পালন করল ও শাওয়াল ছাড়া অন্য মাসে ছয় রোজা রাখল সে রমজান মাসে রোজা রাখার ও ছয়দিন নফল রোজা রাখার সওয়াব পাবে।
ইবনে হাজার মক্কি ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ নামক গ্রন্থে (৩/৪৫৬) বলেন: “যে ব্যক্তি প্রতি বছর রমজানের সাথে রোজাগুলো রাখবে সে যেন আজীবন ফরজ রোজা রাখল; সওয়াব কয়েকগুণ বাড়বে না। আর যে ব্যক্তি শাওয়াল ছাড়া অন্য মাসে ছয়টি রোজা রাখবে সে ব্যক্তি আজীবন নফল রোজা রাখার সওয়াব পাবে; সওয়াব কয়েকগুণ বাড়বে না।
আল্লাহই ভাল জানেন।” সমাপ্ত
#তৃতীয় মত:
এ ফজিলত শাওয়াল মাসে রোজাগুলো রাখা ছাড়া অর্জিত হবে না। এটি হাম্বলি মাযহাবের অভিমত।
কাশশাফুল ক্বিনা (২/৩৩৮) গ্রন্থে বলেছেন: “হাদিসের প্রকাশ্য ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, শাওয়াল মাসে রোজাগুলো রাখা ছাড়া এ ফজিলত পাওয়া যাবে না।” সমাপ্ত
কেউ যদি কিছু রোজা রাখে; কিন্তু কোন ওজরের কারণে সবগুলো রোজা রাখতে না পারে আশা করা যায় সে সওয়াব পাবে ও ফজিলত অর্জন করবে।
শাইখ বিন বায বলেন: শাওয়াল মাসে শেষ হয়ে যাওয়ার পর এ রোজাগুলো কাযা করার কোন বিধান নেই। কারণ এটি সুন্নত এবং এ সুন্নত পালন করার সময় পার হয়ে গেছে; হোক না সে ব্যক্তি কোন ওজরের কারণে কিংবা ওজর ছাড়া রোজাগুলো রাখেনি।
যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসের চারদিন রোজা রাখতে পেরেছে; বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ছয়দিন পূর্ণ করতে পারেনি তার ব্যাপারে বলেন: শাওয়াল মাসের ছয়দিন রোজা রাখা একটি মুস্তাহাব আমল; ফরজ আমল নয়। সুতরাং আপনি যে কয়দিন রোজা রেখেছেন সে কয়দিনের সওয়াব পাবেন এবং যদি শরিয়ত অনুমোদিত কোন ওজরের কারণে রোজাগুলো রাখতে না পারেন সে ক্ষেত্রে আশা করা যায় আপনি পূর্ণাঙ্গ সওয়াব পাবেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে এসেছে- “যখন কোন বান্দা অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে তখন আল্লাহ তার জন্য সে আমলগুলোর সওয়াব লিখে দেন যে আমলগুলো সে মুকীম বা সুস্থ থাকাবস্থায় পালন করত।”[সহিহ বুখারি] আপনি যে রোজাগুলো রাখতে পারেননি সেগুলো কাযা করতে হবে না। আল্লাহই তাওফিকদাতা।[বিন বাযের ফতোয়াসমগ্র থেকে (১৫/৩৮৯,৩৯৫) সমাপ্ত]
সারকথা হচ্ছে-
ছয় রোজা শাওয়াল মাস ছাড়া অন্য মাসে রাখলে আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন এ রোজাগুলো শাওয়াল মাসে রাখার মতই। আবার কোন কোন আলেম সে রোজাগুলোর ফজিলত সাব্যস্ত করলেও বলেন যে, এর ফজিলত শাওয়াল মাসে রাখার চেয়ে কম। আর কোন কোন আলেমের মতে, যদি ওজরের কারণে কেউ রোজাগুলো রাখতে না পারে তাহলে সে পূর্ণ সওয়াব পাবে। আল্লাহর অনুগ্রহ প্রশস্ত। আল্লাহর দানের কোন সীমা নেই।
ব্যক্তিগত অভিমতঃ
ফরজ কাযা ছিয়ামের প্রাধান্য আগে দেয়া উচিৎ। কেননা হঠাৎ মারা গেলে আল্লাহ নফল ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না কিন্তু ফরজ কাযা থাকলে তার হিসাব দিতে হবে। ফরজ ছিয়ামের কাযা পালন করতে করতে যদি নফল ছিয়ামের সময় অতিবাহিত হয়ে যায় বা অল্প কয়েকটা ছিয়াম রাখার সময় থাকে তাহলে যে কয়টা রাখা যাচ্ছে সেগুলো রাখা উচিত আর ওজরবশত নিয়ত থাকার কারণে আল্লাহ পূর্ণাঙ্গ সওয়াব দিবেন ইংশাআল্লাহ। উল্লেখ্য শাওয়ালের ছিয়াম শাওয়াল মাসেই রাখতে হবে এই মতকেই আমি প্রাধান্য দিবো। যেহেতু হাদিসে শাওয়াল মাসের কথাই বলা হয়েছে। আর এটা ফরজ ছিয়াম না যে অন্যমাসে কাযা পালন করা যাবে।
আল্লাহই ভাল জানেন।
No comments:
Post a Comment