তারাবীহর সালাতের কুয়ানটিটির চাইতে কুয়ালিটির প্রতি গুরুত্ব বেশি দেওয়া উচিত।
```````````````````````````````````````````
বন্ধুরা, তারাবীহর সালাতের রাকায়াত ও পড়ার ধরন নিয়ে আমাদের দেশে ইদানিং বেশ বিতর্ক শুরু হয়েছে! তাই আসুন হাদীস থেকে তারাবীহ বা কিয়ামুল্লাইল এর শুরু ও গুরুত্বটা আমরা জেনে নিই।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। তখন তাঁর সঙ্গে লোকজন সালাত আদায় করল। এরপর পরবর্তী রাতে তিনি সালাত আদায় করলেন এতে বহু লোক হল। পরে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতেও তাঁরা সমবেত হলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের দিকে বের হলেন না। পরে সকালে তিনি বললেন, তোমরা যা করেছ তা তো আমি দেখেছি। তোমাদের কাছে বের হয়ে আসতে আমাকে শুধু এ ই বাধা দিয়েছে যে, আমি আশংকা কছিলাম যে, সে সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যেতে পারে। এ ঘটনা রমযানের।।”সহীহ মুসলিম- ১৬৫৬। বুখারী- ১০৬২ । (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
রাসুল সাঃ রমজান মাসে তিন দিন সাহাবীদের নিয়ে জামায়াতের সহিত কিয়ামুল্লাইল বা তারাবীহ আদায় করেন ৷ এই তিন রাতে তিনি কত রাকাত তারাবীহ পড়ছিলেন তার স্পষ্ট বর্ণনা হাদীসে নাই।
রাসূল সাঃ এর রাতের সালাত সম্পর্কে আমরা জানতে পারি
“আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত কিরূপ ছিল? আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযান ছাড়াও এগার রাকআতের অধিক পড়তেন না। চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই, তারপর চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর তিনি তিন রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার বিতর আদায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, হে আয়িশা! উভয় চোখ তো ঘূমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।” সহীহ মুসলিম-১৫৯৬। বুখারী- ১৮৮৬। (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
অন্য হাদীসে “আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আম্মাজান! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে অবহিত করতন। তিনি বললেন, তাঁর সালাত ছিল রমযান এবং রমযানের বাইরে রাতের বেলায় তের রাক’আত। এর মধ্যে ফজরের দু’রাক’আত (সুন্নাত) ও রয়েছে।”সহীহ মুসলিম-১৫৯৯ (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
অন্য হাদীসে “আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে রাত্রি জাগরণের জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশ না দিয়ে তাদের উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রমযানে রাত্রি জাগরণ করবে তার বিগত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয় আর বিষয়টি এরূপই ছিল। পরে আবূ বাকর (রাঃ) এর খিলাফত যুগে অবস্থা অনুরূপ থাকে, উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকেও অবস্থা অনুরূপ অব্যাহত ছিল।”সহীহ মুসলিম-১৬৫৩। বুখারী-১৮৮৫। (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
হযরত ওমর রাঃ এর খেলাফত কালে প্রথম জামায়াতের শহীদ তারাবীহ পাঠ শুরু হয়।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। হাদীসের রাবী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে ও ‘উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল।
ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) সূত্রে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রমযানের এক রাতে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যাক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে।”সহীহ বুখারী ১৮৮৩ (ইফাঃ)।
সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (র) থেকে বর্ণিত “উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-উবাই ইবনু কা’ব এবং তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজনের (মুসল্লিগণের) জন্য এগার রাক’আত (তারাবীহ) কায়েম করতে (পড়াইতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারী একশত আয়াতবিশিষ্ট সূরা পাঠ করতেন, আর (আমাদের অবস্থা এই ছিল) আমরা নামায দীর্ঘ সময় দাঁড়াইতে দাঁড়াইতে (ক্লান্ত হয়ে পড়লে) সাহায্য গ্রহণ করতাম অর্থাৎ লাঠির উপর ভর দিতাম। (এইভাবে নামায পড়তে পড়তে রাত শেষ হত) আমরা ভোর হওয়ার কিছু পূর্বে ঘরে ফিরে আসতাম।”মুয়াত্তা ইমাম মালিক,মুয়াত্তা ইমাম মালিক, অধ্যায়-৬ রেওয়ায়ত-৪ (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
তারাবীর সালাত ৮ রাকাত ১২রাকাত ২০ রাকাত বা ব্যক্তি তার সাধ্য অনুযায়ী যত রাকাত সম্ভব তত রাকাত পড়বে, এতে জোর জবরদস্তীর কিছু নেই৷
যদি কোনো ব্যক্তি ৮ রাকাত নামাজে ১ ঘন্টা ব্যয় করে এবং অপরজন ২০ রাকাত নামাজে ২০ মিনিট ব্যয় করে তাহলে প্রথমজনের নামাজটা কুরআন সুন্নার বেশী নিকটবর্তী..
আবার যদি একজন ৮ রাকাতে ৮ মিনিট ব্যয় করে এবং অপরজন ২০ রাকাতে ২ ঘন্টা ব্যয় করে তাহলে দ্বিতীয় জনের নামাজটা কুরআন সুন্নার বেশী নিকটবর্তী।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে যে ভাবে তারাবীহ ডিজিটাল কায়দায় পড়ে,( নিচের ভিডিওটি তার প্রমাণ) এটা নামাজের
সাথে একরকম কৌতুক করাহয়! এতে নামাজের খুশু খুজু নষ্ট হয়ে যায়।
এক হাদীসে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, “রাতে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম। (আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেন) আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি ইচ্ছা করেছিলেন? তিনি বললেন, ইচ্ছা করেছিলাম, বসে পড়ি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইকতিদা ছেড়ে দেই।” সহীহ বুখারী হাদিস নম্বরঃ ১০৬৯ (ইফাঃ)।
আল্লহ তায়ালা বলেন, “যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম।” সূরা মূলক-২। এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত আল্লাহ তায়ালা মানুষের আমলের কুয়ালিটি বা উত্তমতা টাই দেখবেন।
মোট কথা, রাকাত ধর্তব্য নয়, সালাতের মানটাই আসল ৷ তাই আমাদের কুয়ানটিটির চাইতে কুয়ালিটির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কাছে কুয়ানটিটির চাইতে কুয়ালিটির মূল্য অনেক বেশী।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক কথা গুলো বুঝে সঠিক আমলটা করার তৌফিক দান করুক, আমিন৷
```````````````````````````````````````````
বন্ধুরা, তারাবীহর সালাতের রাকায়াত ও পড়ার ধরন নিয়ে আমাদের দেশে ইদানিং বেশ বিতর্ক শুরু হয়েছে! তাই আসুন হাদীস থেকে তারাবীহ বা কিয়ামুল্লাইল এর শুরু ও গুরুত্বটা আমরা জেনে নিই।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। তখন তাঁর সঙ্গে লোকজন সালাত আদায় করল। এরপর পরবর্তী রাতে তিনি সালাত আদায় করলেন এতে বহু লোক হল। পরে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতেও তাঁরা সমবেত হলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের দিকে বের হলেন না। পরে সকালে তিনি বললেন, তোমরা যা করেছ তা তো আমি দেখেছি। তোমাদের কাছে বের হয়ে আসতে আমাকে শুধু এ ই বাধা দিয়েছে যে, আমি আশংকা কছিলাম যে, সে সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যেতে পারে। এ ঘটনা রমযানের।।”সহীহ মুসলিম- ১৬৫৬। বুখারী- ১০৬২ । (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
রাসুল সাঃ রমজান মাসে তিন দিন সাহাবীদের নিয়ে জামায়াতের সহিত কিয়ামুল্লাইল বা তারাবীহ আদায় করেন ৷ এই তিন রাতে তিনি কত রাকাত তারাবীহ পড়ছিলেন তার স্পষ্ট বর্ণনা হাদীসে নাই।
রাসূল সাঃ এর রাতের সালাত সম্পর্কে আমরা জানতে পারি
“আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত কিরূপ ছিল? আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযান ছাড়াও এগার রাকআতের অধিক পড়তেন না। চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই, তারপর চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর তিনি তিন রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার বিতর আদায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, হে আয়িশা! উভয় চোখ তো ঘূমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।” সহীহ মুসলিম-১৫৯৬। বুখারী- ১৮৮৬। (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
অন্য হাদীসে “আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আম্মাজান! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে অবহিত করতন। তিনি বললেন, তাঁর সালাত ছিল রমযান এবং রমযানের বাইরে রাতের বেলায় তের রাক’আত। এর মধ্যে ফজরের দু’রাক’আত (সুন্নাত) ও রয়েছে।”সহীহ মুসলিম-১৫৯৯ (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
অন্য হাদীসে “আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে রাত্রি জাগরণের জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশ না দিয়ে তাদের উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রমযানে রাত্রি জাগরণ করবে তার বিগত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয় আর বিষয়টি এরূপই ছিল। পরে আবূ বাকর (রাঃ) এর খিলাফত যুগে অবস্থা অনুরূপ থাকে, উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকেও অবস্থা অনুরূপ অব্যাহত ছিল।”সহীহ মুসলিম-১৬৫৩। বুখারী-১৮৮৫। (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
হযরত ওমর রাঃ এর খেলাফত কালে প্রথম জামায়াতের শহীদ তারাবীহ পাঠ শুরু হয়।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। হাদীসের রাবী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে ও ‘উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল।
ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) সূত্রে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রমযানের এক রাতে ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যাক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে।”সহীহ বুখারী ১৮৮৩ (ইফাঃ)।
সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (র) থেকে বর্ণিত “উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-উবাই ইবনু কা’ব এবং তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজনের (মুসল্লিগণের) জন্য এগার রাক’আত (তারাবীহ) কায়েম করতে (পড়াইতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারী একশত আয়াতবিশিষ্ট সূরা পাঠ করতেন, আর (আমাদের অবস্থা এই ছিল) আমরা নামায দীর্ঘ সময় দাঁড়াইতে দাঁড়াইতে (ক্লান্ত হয়ে পড়লে) সাহায্য গ্রহণ করতাম অর্থাৎ লাঠির উপর ভর দিতাম। (এইভাবে নামায পড়তে পড়তে রাত শেষ হত) আমরা ভোর হওয়ার কিছু পূর্বে ঘরে ফিরে আসতাম।”মুয়াত্তা ইমাম মালিক,মুয়াত্তা ইমাম মালিক, অধ্যায়-৬ রেওয়ায়ত-৪ (ইসলামী ফাউন্ডেশন)।
তারাবীর সালাত ৮ রাকাত ১২রাকাত ২০ রাকাত বা ব্যক্তি তার সাধ্য অনুযায়ী যত রাকাত সম্ভব তত রাকাত পড়বে, এতে জোর জবরদস্তীর কিছু নেই৷
যদি কোনো ব্যক্তি ৮ রাকাত নামাজে ১ ঘন্টা ব্যয় করে এবং অপরজন ২০ রাকাত নামাজে ২০ মিনিট ব্যয় করে তাহলে প্রথমজনের নামাজটা কুরআন সুন্নার বেশী নিকটবর্তী..
আবার যদি একজন ৮ রাকাতে ৮ মিনিট ব্যয় করে এবং অপরজন ২০ রাকাতে ২ ঘন্টা ব্যয় করে তাহলে দ্বিতীয় জনের নামাজটা কুরআন সুন্নার বেশী নিকটবর্তী।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে যে ভাবে তারাবীহ ডিজিটাল কায়দায় পড়ে,( নিচের ভিডিওটি তার প্রমাণ) এটা নামাজের
সাথে একরকম কৌতুক করাহয়! এতে নামাজের খুশু খুজু নষ্ট হয়ে যায়।
এক হাদীসে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, “রাতে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম। (আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেন) আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি ইচ্ছা করেছিলেন? তিনি বললেন, ইচ্ছা করেছিলাম, বসে পড়ি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইকতিদা ছেড়ে দেই।” সহীহ বুখারী হাদিস নম্বরঃ ১০৬৯ (ইফাঃ)।
আল্লহ তায়ালা বলেন, “যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম।” সূরা মূলক-২। এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত আল্লাহ তায়ালা মানুষের আমলের কুয়ালিটি বা উত্তমতা টাই দেখবেন।
মোট কথা, রাকাত ধর্তব্য নয়, সালাতের মানটাই আসল ৷ তাই আমাদের কুয়ানটিটির চাইতে কুয়ালিটির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কাছে কুয়ানটিটির চাইতে কুয়ালিটির মূল্য অনেক বেশী।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক কথা গুলো বুঝে সঠিক আমলটা করার তৌফিক দান করুক, আমিন৷
No comments:
Post a Comment