Sunday, May 5, 2019

একই দিনের বিপক্ষের দলিলের ভূল ব্যাখ্যার বিশ্লেষণ

যারা সারা বিশ্বে একইদিন রোজা শুরু ও ঈদ করার বিপক্ষে দলিল দেয় এবং দলিল গুলোর কিভাবে ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলিমদের বিভ্রান্ত করছে আসুন দেখি।
====================¬==========

১ নাম্বার দলিল :
"""কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেছেন:
ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥُ .… ﻓَﻤَﻦْ ﺷَﻬِﺪَ ﻣِﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻓَﻠْﻴَﺼُﻤْﻪُ
“রামাদান মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে… অতএব তোমাদের মধ্যে যে-ই এ মাসটিতে উপস্থিত হবে সে তাতে সিয়াম পালন করবে।” (সূরা বাকারা: ১৮৫ আয়াত)
এ থেকে জানা যায় যে মুমিন রামাদান মাস প্রত্যক্ষ করলে বা রামাদান মাস উপস্থিত হলেই মুমিনকে সিয়াম পালন করতে হবে। ""


১নাম্বার দলিল এর সঠিক বিশ্লেষণ :
--------------------¬--------------------¬------------
এখানে মাসে উপস্থিত হওয়া বলতে মাস প্রত্যক্ষ করা কেন বলা হলো?? আকাশের সীমানা ভাগাভাগিরর জন্য কি এই অপব্যাখ্যা??? প্রষিধ্য তাফসির ইবনে কাসিরেতো এখানে মাসে উপস্থিত হওয়া বলতে বুঝানো হয়েছে, সিয়াম রাখার উপযুক্ত যে ব্যক্তি এই মাস পরযন্ত আয়ু পেলো।


২নাম্বার দলিল :
"""রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সমাজের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ঈদ পালন করতে নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
ﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﻔْﻄِﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻷَﺿْﺤَﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﻀَﺤِّﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ
“যে দিন সকল মানুষ ঈদুল ফিত্র পালন করবে সে দিনই ঈদুল ফিত্র-এর দিন এবং যেদিন সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করবে সে দিনই ঈদুল আযহার দিন।” তিরমিযী, আস-সুনান ৩/১৬৫ (কিতাবুস সাওম, বাবু মা জাআ ফিল ফিতরি ওয়াল আদহা মাতা ইয়াকূনু) তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।"""


২ নাম্বার দলিল এর সঠিক বিশ্লেষণ :
--------------------¬--------------------¬-------------
এখানেও হাদিসের অপব্যাখ্যা হয়েছে। হাদিসে দেখা যাচ্ছে --
"""ইয়াওমা ইফতার আন্নাস"""
এখানে "" আন্নাস "" বলতে কি বিষেশ কোনো দেশের জনসমষ্টিকি বুঝানো হচ্ছে????
মহান আল্লাহ্ "" ইয়া আইয়ুহা আন্নস "" বলে ডেকে বলছেন,
"" তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর ""
সুরা : নিসা (৪), ১।
এখানে আল্লাহ্ তায়ালা কোন দেশের মানুষকে বলছেন??? নিশ্চয় সারা বিশ্বের লোকের জন্য এই শব্দ """আন্নাস"""।


৩ নাম্বার দলিল :
হাদীসটি দেখুন:
ﻋَﻦْ ﻛُﺮَﻳْﺐٍ ﺃَﻥَّ ﺃُﻡَّ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ ﺑِﻨْﺖَ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺑَﻌَﺜَﺘْﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﺑِﺎﻟﺸَّﺎﻡِ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻘَﺪِﻣْﺖُ ﺍﻟﺸَّﺎﻡَ ﻓَﻘَﻀَﻴْﺖُ ﺣَﺎﺟَﺘَﻬَﺎ ﻭَﺍﺳْﺘُﻬِﻞَّ ﻋَﻠَﻰَّ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺑِﺎﻟﺸَّﺎﻡِ ﻓَﺮَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟْﻬِﻼَﻝَ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺛُﻢَّ ﻗَﺪِﻣْﺖُ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔَ ﻓِﻰ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ ﻓَﺴَﺄَﻟَﻨِﻰ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ – ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ – ﺛُﻢَّ ﺫَﻛَﺮَ ﺍﻟْﻬِﻼَﻝَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺘَﻰ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻬِﻼَﻝَ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎﻩُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺃَﻳْﺘَﻪُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻧَﻌَﻢْ ﻭَﺭَﺁﻩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺻَﺎﻣُﻮﺍ ﻭَﺻَﺎﻡَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻜِﻨَّﺎ ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎﻩُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﺴَّﺒْﺖِ ﻓَﻼَ ﻧَﺰَﺍﻝُ ﻧَﺼُﻮﻡُ ﺣَﺘَّﻰ ﻧُﻜْﻤِﻞَ ﺛَﻼَﺛِﻴﻦَ ﺃَﻭْ ﻧَﺮَﺍﻩُ . ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺃَﻭَﻻَ ﺗَﻜْﺘَﻔِﻰ ﺑِﺮُﺅْﻳَﺔِ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻭَﺻِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻻَ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﺃَﻣَﺮَﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ -.
তাবিয়ী কুরাইব বলেন, উম্মুল ফাদল বিনতুল হারিস (রা) তাঁকে সিরিয়ায় মুআবিয়া (রা)-এর নিকট প্রেরণ করেন। কুরাইব বলেন, আমি সিরিয়া আগমন করি এবং তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ করি। আমি সিরিয়া থাকতেই রামাদান শুরু হলো। আমি শুক্রবারের রতে নতুন চাঁদ দেখলাম। এরপর মাসের শেষে আমি মদীনায় আগমন করলাম। তখন আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- চাঁদের কথা উল্লেখ করে বললেন, তোমরা কখন নতুন চাঁদ দেখেছিলে? আমি বললাম শুক্রবারের রাতে। তিনি বললেন: তুমি নিজে দেখেছিলে? আমি বললাম: হ্যাঁ এবং মানুষেরাও দেখেছিল এবং তারা সিয়াম পালন করেন এবং মুআবিয়া (রা) ও সিয়াম পালন করেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) বলেন: কিন্তু আমরা নতুন চাঁদ দেখেছি শনিবার রাতে, কাজেই আমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ করা পর্যন্ত সিয়াম পালন করতে থাকব অথবা (শাওয়ালের) নতুন চাঁদ দেখব। আমি বললাম: মুআবিয়া (রা)-এর চাঁদ দেখা ও তাঁর সিয়াম পালনকেই কি যথেষ্ট হিসেবে গণ্য করবেন না? তিনি বলেন: না, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন।
"""হাদীসের ব্যাখ্যায় ফকীহগণের অনেক বক্তব্য বিদ্যমান। কিন্তু সব কিছুর বাইরে আমরা এখানে নিশ্চিত হচ্ছি যে, সাাহাবীগণের যুগে একাধিক দিনে সিয়াম ও ঈদ পালন করা হতো এবং এ বিষয়টিকে তাঁরা কোনোভাবেই কুরআন ও সুন্নাহের নির্দেশের সাথে সাংঘর্ষিক বলে কল্পনা করেন নি। কুরআন ও হাদীস থেকে আমরা এখন যে অর্থ বুঝার দাবি করছি সাহাবীগণ সে অর্থ বুঝেন নি। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ অনুসারে আমাদের বিশ্বাস করা উচিত দীন পালন ও দীন অনুধাবনে সাহাবীগণ আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁদের চেয়ে অধিক ধার্মিক, দীনদরদী বা দীন অনুধাবনকারী হওয়ার প্রচেষ্টা বিভ্রান্তির দরজা খুলে দেয়।"""


৩ নাম্বার দলিল এর সঠিক বিশ্লেষণ :
--------------------¬--------------------¬--------------
এখানেও হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
হাদিসে ইবনে আব্বাস রাঃ বলেছেন- “নবিজি (স) আমাদের এরুপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।” এখানে স্পস্ট উল্লেখ নেই কিরুপ করার নির্দেশ। তাই আসুন বেপারটা বিশ্লেষণ করা যাক।
-
“এরুপ” বলতে এখানে ২ টি জিনিস ধরা যেতে পারে-
-
ক* নবিজির (স) আমাদের মুয়াবিয়া রাঃ এর কথা না মানতে নির্দেশ দিয়েছেন।
-
খ* নবিজি (স) দূরের থেকে চাঁদ দেখার খবর না মানতে নির্দেশ দিয়েছেন।
-
-
ক* এর ক্ষেত্রে দেখা যায়- নবিজির (স) এমন নির্দেশ কখনই দেননি যে, মুয়াবিয়া রাঃ এর কথা মানা যাবে না। এছাড়াও মুয়াবিয়া রাঃ ছিলেন তখনকার (যখন হাদিসটি বর্ণিত হয়) সময়ের খলিফা। (খলিফা কোন নির্দিষ্ট এলাকার হয় না বরং সারা বিশ্বের খলিফা একজন ই হয়।) আর ইবনে আব্বাস রাঃ মদিনার দায়িত্তে একজন নিযুক্ত আমীর। তাই খলিফার কথা অমান্ন করাটা আরো বড় অন্যায়। সুতারাং ক* এর বেক্ষাটি সঠিক নয়।
-
-
খ* তাহলে কি “এরুপ” বলতে নবিজি (স) দূরের থেকে চাঁদ দেখার খবর মানতে নিশেধ করেছেন? নিশ্চয় না। কারন- দেখা যায় নবিজি নিজেই চাঁদ দেখা খবরের বেপারে দূরের (মদিনার বাইরে থেকে আসা খবর)ও গ্রহন করেছেন।
-
- প্রমান- -
- “ইবনু মালিক রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সঃ এর সাহাবি আমার কতিপয় আনসার পিতৃব্য আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, একবার শাওয়ালের নতুন চাঁদ আমাদের উপর গোপন থাকে। আমরা পরের দিন সিয়াম পালন করি। এমতাবস্তায়, ঐ দিনের শেষ ভাগে মদিনার বাইরে থেকে একটি কাফেলা রাসুলুল্লাহ সঃ এর কাছে এসে বিগত কাল চাঁদ দেখার সাক্ষ প্রদান করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সঃ আমাদের সিয়াম ভাঙতে নির্দেশ দিলেন এবং তার পরের দিন ঈদের সলাতের জন্য বের হতে বললেন।” - - - ( আবুদ দাউদ- ২৯৩৯, ইবনু মাজাহ- ১৬৫৩, বায়হাকী- ৮১৮৮ হাদিসের মান- সহীহ)
-
তাই এখানে দেখা যায় নবিজি (স) দূরের থেকে আসা চাঁদ দেখা খবর মেনে নিতে নিশেধ করেননি। বরং উনি নিজেই দূরের খবর মেনে নিয়েছেন।
-
-
তাহলে “এরুপ” বলতে এখানে নবিজি(স) কিরপু বুঝিয়েছেন?
-
উত্তরঃ
চাঁদ দেখা খবরের ক্ষেত্রে ২ জন সাক্ষী থাকতে হবে। প্রমান-
-
“আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ রাঃ থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন- যদি মুসলিমদের ২ জন সাক্ষ্য দেয় নতুন চাঁদ উদয়ের ব্যাপারে তাহলে তোমরা সিয়াম ও ঈদ পালন করবে।”- - - (নাসাঈ- ২১১৬- হাদিসের মান সহিহ)
-
-
কুরাইব রঃ যেহেতু একজন বেক্তি সশরীরে সিরিয়া থেকে মদিনায় এসে সাক্ষ্য দিচ্ছেন এবং নবিজি (স) যেহেতু চাঁদ দেখা খবরের ব্যাপারে সর্ত দিয়েছেন- ২ জন সাক্ষী তাই ইবনে আব্বাস রাঃ মুয়াবিয়া রাঃ এর চাঁদ দেখার সাক্ষ্য না মেনে বলেছিলেন- “নবিজি (স) আমাদের এরুপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন” অর্থাৎ ২ জন সাক্ষী এর সাক্ষ্য মেনে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন একজনের নয়। যে কারনে তিনি কুরাইব রঃ এর সাক্ষ্য মেনে নেননি।
-
-
এছাড়াও আপনি ভেবে দেখেছেন কি? যদি হাদিসটিতে দুরত্ত সর্ত থাকত তবে সেই দুরত্তের পরিমানও ইসলামে নির্দিষ্ট থাকত।
-
কেউ কি বলতে পারে- নির্দিষ্ট কত দুরত্তের পরে আর চাঁদ দেখার খবর গ্রহণযোগ্য হবে না? উত্তরঃ না। কারন কুরান/হাদিসে এমন কোন নির্দিষ্ট দুরত্তের প্রমান পাওয়া যাবে না।
-
-
যখন ই আপনি দুরত্তের সীমানা উল্লেখ করবেন তখনি সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের মদ্ধে এমন উদ্ভট ঘটনা ঘটবে-
-
* (সীমান্ত এলাকায়) রাস্তার এপারে ঈদ কিন্তু ওপারে রোজা
* (সীমান্ত এলাকায়) রাস্তার এপারে ১৩ তারিখ কিন্তু ওপারে ১২ তারিখ

৪ নাম্বার দলিল :
"রাষ্ট্রীয়ভাবে তার সাক্ষ্য গৃহীত হলে বা চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলেই শুধু ঈদ করা যাবে।
রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সমাজের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ঈদ পালন করতে নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
ﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﻔْﻄِﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻷَﺿْﺤَﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﻀَﺤِّﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ
“যে দিন সকল মানুষ ঈদুল ফিত্র পালন করবে সে দিনই ঈদুল ফিত্র-এর দিন এবং যেদিন সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করবে সে দিনই ঈদুল আযহার দিন।” তিরমিযী, আস-সুনান ৩/১৬৫ (কিতাবুস সাওম, বাবু মা জাআ ফিল ফিতরি ওয়াল আদহা মাতা ইয়াকূনু) তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।"

৪ নাম্বার দলিল এর সঠিক বিশ্লেষণ :
--------------------¬--------------------¬-------------
হাদিসের ভিতর তো রাষ্ট্র কথা কোথাও উল্লেখ নাই। তাই কথাটা রাষ্ট্রকেন্দ্রিক করা কি নাবী (স) এর নামে মিথ্যাচার হবেনা???

৫ নাম্বার দলিল :
" আয়েশা (রা) বলেন:
ﺍَﻟﻨَّﺤْﺮُ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻨْﺤَﺮُ ﺍﻹِﻣَﺎﻡُ ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﻔْﻄِﺮُ ﺍﻹِﻣَﺎﻡُ
যেদিন রাষ্ট্রপ্রধান কুরবানীর দিন হিসাবে পালন করবেন সে দিনই কুরবানীর দিন। আর যেদিন রাষ্ট্রপ্রধান ঈদুল ফিতর পালন করবে সে দিনই ঈদের দিন।” বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৫/১৭৫; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৯০; মুনযিরী, তারগীব ২/৬৮। মুনযিরী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।"


৫ নাম্বার দলিল এর সঠিক বিশ্লেষণ :
--------------------¬--------------------¬-------------
হাদিসটিতে বলা হচ্ছে,..... ইয়াওমা ইয়া নাহারা আল ইমাম.....
স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে "ইমাম" শব্দের আগে Definite Article " আল " আছে।
আমাদের ইসলাম এর শরীয়ত কি বলে, বিশ্বের সমস্ত মুসলিম কি একজন ইমাম বা আমির এর অধিন এক আর অভিন্নভাবে চালিত হবেনা??? যদি দেশ ভাগাভাগি করে যার যার মতো চলি তাহলে, আমরা সকলে মিলে ইসলাম এর রজ্জু দ্রীঢ়ভাবে কি করে ধরবো???
তাই হাদিসে "আল ইমাম" বলাতে হাদিস তো আমাদেরই পক্ষের হাদিস। সারা বিশ্বে একইদিনেই ঈদ করতে হবে। দেশীয় সীমানা মূল্যহীন।

<><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><>

চাঁদ দেখা না গেলে রাসুলুল্লাহ (স) যদি দুজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি পালনের নির্দেশ দিতে পারেন,যেখানে সারা বিশ্বের লোক হাজির থাকে, তাহলে আমরা কেনো সারা বিশ্বে একইদিন রোজা শুরু ও ঈদ করতে পারবো না??? দেখুন প্রমাণ নিচের হাদিসে -


হুসাইন ইবনুল হারিস আল - জাদালী (র) সূত্রে বর্ণীত। একদা মক্কার আমীর ভাষণ প্রদানের সময় বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) আমাদেরকে চাঁদ দেখে হাজ্জের অনুষ্ঠান আদায়ের উপদেশ দিয়েছন। যদি চাঁদ না দেখি তাহলে দুজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে যেনো আমাদের হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি পালন করি। আবু মালিক (র) বলেন, আমি হুসাইন ইবনুল হারিস (র) কে জিজ্ঞেস করি, মক্কার আমীর কে? তিনি বললেন, আমার জানা নেই। পরবর্তীতে তার সাথে আমার সাক্ষাত হলে তিনি বলেন, মক্কার আমীর হলেন মুহাম্মদ ইবনু হাতিবের ভাই হারিস ইবনু হাতিব। অতঃপর উক্ত আমীর বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন একজন আছেন যিনি আমার চাইতে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (স) সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত। আর তিনিই এ কথাটি রাসুলুল্লাহ (স) থেকে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন। একথা বলে তিনি এক লোকের দিকে ইংগিত করলেন। হুসাইন (র) বলেন, আমার পাশে বসা এক বৃদ্ধ লোককে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমীরের ইংগিতকৃত এই লোকটি কে? তিনি বললেন, ইনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (র)। তিনি যে বলেছেন, উনি (ইবনে উমার) আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত, তাও সঠিক। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (র) বললেন, রাসুলুল্লাহ (স) আমাদেরকে উক্ত নির্দেশ দিয়েছন।
আবু দাউদ
অধ্যায় : সওম
হাদিস নং : ২৩৩৮
আলবানী (র) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

<><><><><><>

,২০১৮ সালের "১৫ই জুন" পৃথিবীতে কোথাও বৃহঃ বা শনিবারে হয়নি । তেমনি ১৪৩৯ হিজরীর "১লা শাওয়াল" পৃথিবীতে কোথাও বৃহঃ বা শনিবারে হতে পারে না। সারা পৃথিবীতে শুক্রবার ১৫ই জুন। তেমনি সারা পৃথিবীতে শুক্রবার পহেলা শাওয়াল।
.
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
- ﻳﺴﺌﻠﻮﻧﻚ ﻋﻦ ﺍﻻﻫﻠﺔ ﻗﻞ ﻫﻰ ﻣﻮﺍﻗﻴﺖ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻭﺍﻟﺤﺞ
অর্থাৎ “(হে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারা আপনাকে নতুন চাঁদ সমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন তা মানুষের জন্য সময়ের (তারিখ) নির্দেশক এবং হজ্জের (সময় অর্থাৎ তারিখ নির্ধারণকারী)”। [(সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৯)]
.
বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় এই আয়াতে “ ﺍﻻﻫﻠﺔ ” শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ একেবারে (কয়েক মিনিটের) “নতুন চাঁদ সমূহ”। প্রতি চান্দ্র মাসে চাঁদ একদিনই নতুন থাকে। তারপরের দিনগুলোর চাঁদ কখনো নতুন চাঁদ হতে পারেনা।
.
এখানে আরো লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, এই আয়াতের মধ্যে “ ﻟﻠﻨﺎﺱ ” শব্দের শুরুতে “ ﺍﻝ ” টি “ ﺍﻟﻒ ﻻﻡ ﺟﻨﺴﻰ ” অর্থাৎ “জাতি বোধক ﺍﻝ ” (ইংরেজিতে অর্থ “The” এবং এটা Common Noun) । অতএব “ ﻟﻠﻨﺎﺱ ” অর্থ হলো “মানুষের জন্য” বা “মানব জাতির জন্য”।
.
আর সময় বলে এই আয়াতে তারিখ বুঝানো হয়েছে। তাহলে আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে “পূর্ববর্তী চান্দ্র মাস শেষ হওয়ার পর পুনরায় নতুন করে পৃথিবীর আকাশে সর্বপ্রথম যে চাঁদ দেখা যায়, সেই নতুন চাঁদ বিশ্বের সকল মানুষের জন্যই তারিখ নির্ধারক এবং হজ্জ্বের তারিখ নির্ধারক”।
.
হজ্জ্বের তারিখ সারা পৃথিবীতে একটাই হয়।
.
সুতরাং নতুন চাঁদ নির্দেশিত এই নতুন মাসের ১ তারিখ এলাকা, দেশ, মহাদেশের ভিন্নতায় কখনই আলাদা হবে না। কারণ পৃথিবীর আকাশে “নতুন চাঁদ” উদয়ের দিনে সকল এলাকা, দেশ, মহাদেশের বাসিন্দারাই “মানুষ” ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
.
আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন,
“...যদি (মুসলিমদের) দু’জন স্বাক্ষ্য দেয় যে, তারা (নতুন চাঁদ উদয়ের ব্যাপারে) দেখেছে, তাহলে তোমরা সাওম (রোজা) ও ঈদ পালন কর”। [নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, হাদিস # ২১১৬।]
.
এখানে রাসূল সঃ দুইজন স্বাক্ষ্যের কথা বলেছেন। রাসূল সঃ বলেননি শুধু মালয়েশিয়ার বর্ডারের ভিতরের দুইজন বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের দু'জন বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের দুইজন। দুইজন বলতে গোটা বিশ্বের যেকোন দুইজন মুসলিম।
.
আর "তোমরা" বলতে শুধু মালয়েশিয়ার বর্ডারের ভিতরের মানুষ, বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের মানুষ, বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের মানুষকে নির্দিষ্ট করেননি। বরং "তোমরা" বলতে পৃথিবীর সকল মানুষ।
.
সুতরাং কেউ পালন করুক আর নাই করুক, ২ জন মুসলিমের সংবাদ পৌঁছালে রোযা ফরজ হবে। যতদূর পৌঁছাবে ততদূর হবে। কেউ পালন করুক আর নাই করুক, ২ জন মুসলিমের চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছালে ঈদের দিন হয়ে যাবে। যতদূর পৌঁছাবে ততদূর হবে।

আল্লাহ্! আমাকেসহ সকলকে হেদায়েত দাও!

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...