Sunday, May 5, 2019

চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার এ ভৌগলিক ভিন্নতা ইসলামী শরী‘য়াতে গৃহীত হবে কিনা

চান্দ্রমাসের তারিখ গণনার ক্ষেত্রে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার এ ভৌগলিক ভিন্নতা ইসলামী শরী‘য়াতে গৃহীত হবে কি না? এ প্রশ্নের জবাব পেতে এরপর দৃষ্টি দেয়া উচিত ইসলামী আইনের দ্বিতীয় উৎস পবিত্র সুন্নাহ-এর দিকে।

রমাদ্বানের রোযা শুরু ও সমাপ্ত করার বিষয়ে হাদীস শরীফের ঘোষণা হল- ﺻﻮﻣﻮﺍ ﻟﺮﺅﻳﺘﻪ ﻭﺍﻓﻄﺮﻭﺍ ﻟﺮﺅﻳﺘﻪ “নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা রাখ এবং নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা ছাড় (ঈদ কর)।” (সহীহ মুসলিম, পৃ. ৩৪৭)

অত্র হাদীসে কারীমে বর্ণিত নতুন চাঁদ দেখাকে বিশ্বজনীনভাবে গ্রহণ করা হবে? না কি অঞ্চলভিত্তিকভাবে গ্রহণ করা হবে? তার সামাধান নিন্মের হাদীস শরীফে দেয়া হয়েছে-
 ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿـ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡُ ﻳَﻮْﻡَ ﺗَﺼُﻮﻣُﻮﻥَ ﻭَﺍﻟْﻔِﻄْﺮُ ﻳَﻮْﻡَ ﺗُﻔْﻄِﺮُﻭﻥَ ﻭَﺍﻷَﺿْﺤَﻰ ﻳَﻮْﻡَ ﺗُﻀَﺤُّﻮﻥَ . অর্থাৎ, হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা‘য়ালা ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “রোযা হবে একই দিনে, যে দিন তোমরা সকলেই রোযা রাখবে। ঈদ হবে একই দিনে, যে দিন তোমরা সকলেই ঈদ করবে। কুরবাণী হবে একই দিনে, যে দিন তোমরা সকলেই কুরবাণী করবে।” (সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩২৪, সুনানে ইবনু মাজাহ- ১৬০৭, সুনান আল-বায়হাকী- ৭৯৯৭, মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক- ৭৩০৪, দায়লামী- ৩৮১৯, দারুকুতনী- ৩৫, কানযুল উম্মাল, খ- ৮, পৃ. ৪৮৮, মাযমাউ ফাতওয়া ইবনে বায, খ- ১৫, পৃ. ৭৭/৭৮)

অত্র হাদীস দু’খানায় ‘তোমরা’ বলে সম্বোধন কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডের নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠির জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্বের সকল উম্মতকে সম্বোধন করা হয়েছে।

৭. উল্লেখিত হাদীস শরিফ অনুযায়ী রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিজ আ’মাল কি ছিল? তিনি কি নিজে চাঁদ দেখে রোযা রেখেছেন? ঈদ করেছেন? নাকি অন্যের দেখার সংবাদের মাধ্যমেও রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীস শরিফে যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে-
 ﻋَﻦِ ﺍﺑﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﺗَﺮَﺍﺀَﻯ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ﻓَﺄَﺧْﺒَﺮْﺕُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧِّﻲ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻪُ ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ
অর্থাৎ, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন কিছু সংখ্যক মানুষ (রমাদ্বানের) নতুন চাঁদ দেখল। আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সংবাদ দিলাম যে আমিও উক্ত চাঁদ দেখেছি। ফলে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রোযা রাখলেন এবং মানুষকেও রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন।” (সুনান আবু দাউদ, খ--২, হাদীস নং ২৩৪৪)
।।।।।।:::::::
অথচ চান্দ্রমাসকে পিছানো বা কমানোর কাজটি হলো কুফরির মাত্রা বৃদ্ধি করা। সুরা-তাওবা, আয়াত ৩৭ দ্রঃ


একদিনের পক্ষের দলিল:
মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং১৮৪১৬:আবু দাউদে ২৩৩৮:আবু দাউদ পৃষ্ঠা ৩২০,সহিহ ইবনে হিব্বান ৮/৩৪৪৬;তিরমিযি ১৪৮,৬৯১পৃ:
একদিনের পক্ষের কিছু সৌদির আলেমের ফতোয়ার দলিল:
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া(মাজমুআয়ে ফাতাওয়া, ২৫/১০৩ পৃ:)
আল্লামা শায়খ বিন বায র:(মাজমু ফাতাওয়া ওয়া মাকালাত মুতানাওয়াহ কিতাবে।
মুফতি মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন তার মাজালিসে শাহরি রামাযান(ছাপা ১৪০৭ হিজরি, ১৯৮৭ইং)


আপনি মদিনার/ মরক্কোর নিষ্ঠাবান ২ মুসলিমের চাঁদ দেখার নিখুত সংবাদ প্রত্যাখ্যান করে সিয়াম শুরু থেকে বিরত থাকলেন, আর চট্টগ্রামের ২জনের(সংবাদ দাতা বেদাতি কিম্বা কবর পুজারি কিনা, এবিষয়েও আপনি সন্দেহমুক্ত নন) সংবাদ গ্রহন করলেন,
এই একটি বর্জন আরেকটি গ্রহন এর সারিঈ ভিত্তি কি???????
# একটু ভেবে দেখবেন কি, চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে দেশের শর্তটি কে দিল??? কখন দিল????
দুইজন মুসলিমের চাঁদ দেখার নিখুত সংবাদ পাওার পরেও সিয়াম শুরু করার জন্য নিজ দেশের চাঁদের সংবাদের জন্য আরও একদিন/দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে এমন বিধান রসুল সঃ এর রেখে যাওয়া শরিয়তে নেই।
এমন কি ইবনে আব্বাস রা বর্ণিত হাদিসেও দেশের কথা উল্লেখ নেই।

নিজ এলাকায় চাঁদ না দেখা গেলেও দূরের চাঁদ দেখার সংবাদে রাসূল সঃ ঈদ করেছেন কিন্তু দূরের সূর্য দেখার সংবাদ অনুযায়ী সলাত (নামাজ) পড়েননি:
মদীনায় চাঁদ না উঠলেও দূর দেশের চাঁদের সংবাদ শুনে রাসূল সঃ ঈদ করেছেন, কিন্তু দূর দেশের সূর্য অনুযায়ী সলাত (নামাজ) পড়েননি এবং দূর দেশের সূর্য অনুযায়ী সাহরী ইফতারও করেননি।
দলীল:
হযরত আবু উমাইর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
“রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট একদল আরোহী আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মানুষকে রোযা ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন প্রাতঃকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন”। [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ১১৫৭, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ১১৫৩, নাসায়ী, মিশকাত-১২৭)]
অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের উক্ত পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-
“তারা ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমাবেত হল। আল্লামা মাজহার বলেন যে ঐ বছর মদীনা শরীফে ২৯শে রমযান দিবাগত রাতে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মদীনা বাসী ৩০ রমযানের রোযা রেখে ছিলেন। এমতাবস্থায় ঐ দিন দ্বিপ্রহরে একদল ছাওয়ারী দূর থেকে আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, নিশ্চয়ই তারা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নুতন চাঁদ দেখেছে। অতপর, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদের এ সংবাদ গ্রহণ করে সকলকে রোযা ভঙ্গের নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন (২রা শাওয়াল) ঈদের নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন”। (মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৫/১৫৩)]
সুতরাং সলাত (নামাজ), সাহরী ও ইফতার যার যার স্থানীয় সূর্য অনুযায়ী আদায় করতে হবে পক্ষান্তরে রোজা ঈদ করতে হবে পৃথিবীর যেখান থেকেই প্রথম চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ পাওয়া যাবে সেই সংবাদ অনুযায়ী।
আর সেকারনেই ‘মাআরিফুস সুনান’ কিতাবে লিখিত হয়েছে
“আমাদের ফিকহের কিতাব সমূহের উপর ভিত্তি করে আমরা লিখেছি যে, এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে গ্রহণীয় হবে। যদিও দেশ দুটির মধ্যে পশ্চিম ও পূর্বের দূরত্ব হয়। আর এ মাসয়ালা ফকীহ্গণের এ নীতিমালার উপর ভিত্তি করে যে চাঁদ উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে না। তবে ফকিহগণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, নামায ও ইফতারের ওয়াক্ত সমূহের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে এবং যার যার স্থানীয় সময় অনুযায়ী নামায পড়বে ও ইফতার করবে”। (মায়ারিফুস্ সুনানের উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মায়ারিফুস্ সুনান, খন্ড-৫, পৃঃ-৩৩৭)]





No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...