Sunday, May 5, 2019

বিশ্ববিখ্যাত মনীষী ও প্রখ্যাত হানাফি ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে তারাবীর রাকাআত সংখ্যা

❒ বিশ্ববিখ্যাত মনীষী ও প্রখ্যাত হানাফি ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে তারাবীর রাকাআত সংখ্যা

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ، وَلاَ فِي غَيْرِهَا عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا‏.‏ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ ‏ "‏ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَىَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي ‏"‏‏.‏
আবূ সালামা ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রহঃ)
তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমযানে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, রমযান মাসে ও রমযানে ব্যতীত অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাক’আত হতে বৃদ্ধি করতেন না। তিনি প্রথমে (২+২) চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি (২+২) চার রাক’আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আমি (‘আয়িশা রাঃ) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশা! আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কাল্‌ব নিদ্রাভিভূত হয়না।(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৩)

উক্ত হাদীসের আলোচনা :
--------------------­­­­­----------------­-­-­-­-­---
হাদীসটি প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থেই বর্নিত হয়েছে । এর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনার প্রশ্নই উঠে না

কারন ইমাম বুখারী ও মুসলিম স্ব স্ব সহীহ গ্রন্থে এটি বর্ননা করেছেন

বিশেষ করে ইমাম বুখারী (রহঃ) হাদীসটি ‘তারাবীহর সালাত’ অধ্যায়ে বর্ননা করেছেন । (সহীহ বুখারী হা/২০১৩)

তিনি ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়ে রমাযান ও অন্য মাসে রাসূল (স:) এর রাত্রির সালাত অনুচ্ছেদেও হাদীসটি উল্লেখ করেছেন । (সহীহ বুখারী হা/১১৪৭)

এছাড়াও ইমাম বুখারী (র:) অন্য আরেকটি অধ্যায়ে হাদীসটি বর্ননা করেছেন । (সহীহ বুখারী হা/৩৫৬৯)

উল্লেখ্য যে ইমাম বুখারী উক্ত শিরোনাম উল্লেখ করলেও ভারত উপমহাদেশের ছাপা সহীহ বুখারী থেকে তা বাদ দেয়া হয়েছে । কারন হল --

প্রথমত :
--------------
মুসলিম সমাজে মিথ্যাচার করা হয় যে, ‘আয়েশা (রা:) এর উক্ত হাদীসে তাহাজ্জুদের কথা বলা হয়েছে’, ‘তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পৃথক সালাত’, ‘তারাবীহ ২০ রাকআত আর তাহাজ্জুদ ১১ রাকআত’ ইত্যাদি ইত্যাদি ।
*
কিন্তু ইমাম বুখারীর শিরোনামের মাধ্যমে উক্ত দাবীগুলো মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে ।
*
দ্বিতীয়ত :
---------------
সহীহ বুখারী পাঠদান ও পাঠগ্রহনকারী লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-ছাত্র ও ওলামায়ে কেরামকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ।
*
কারন ইমাম বুখারীর বিষয়টি যখন তারা বুঝতে পারবেন তখন তাদের নিকট বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, তারাবীহর সালাত ৮ রাকআত ২০ রাকআত নয় ।

তাই এই ন্যক্কারজনক কৌশল গ্রহন করা হয়েছে

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ছলচাতুরি করে ইসলামী শরীয়তকে কখনো গোপন রাখা যায়না

ছহীহ বুখারী শুধু উপমহাদেশেই ছাপা হয় না; বরং বিশ্বের বহু দেশে মহান আল্লাহ তার ছাপানোর ব্যবস্থা করে রেখেছেন ।
*
তাই সিরিয়া, মিশর, কুয়েত, লেবানন, সৌদি আরব সহ অন্যান্য দেশে সহীহ বুখারী যত বার ছাপানো হয়েছে সেখানেই উক্ত শিরোনাম বহাল রয়েছে, তা পুরাতন হোক আর নতুন হোক ।
*
আফসোস হক্ব গোপন করার এই কৌশলী ব্যবসা আর কতদিন চলবে ?

সহীহ বুখারীর উক্ত হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমানিত হয় যে, রমাযান মাসে হোক আর অন্য মাসে হোক রাসূল (স:) রাত্রির সালাত ১১ রাকআতের বেশি পড়তেন না ।

যার মধ্যে ৮ রাকআত তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ এবং তিন রাকআত বিতর ।
## তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ একই সলাত প্রমান হিসেবে দেখুন,,দেওবন্দের মাদ্রাসার প্রতিষ্টাতা কাসেম নানুতুবি তার কিতাবে তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ একই নামাজ তা স্বীকার করেছেন( ফয়েজে কাসিমিয়ার ১৩ পৃঃ)
আরো দেখুন,,দেওবন্দী আলেম আনোয়ার শাহ কাস্মিরি তাহাজ্জুদ ও তারাবীহকে একই নামাজ স্বীকার করেছেন( বোখারীর শরাহ,ফয়জুল বারী,২য় খন্ড)
আরো প্রমানিত হল যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই সালাত ভিন্ন কোন সালাত নয় ।

দ্বর্থহীন কন্ঠে বলা যায় যে , রাসূল (স:) এর রাত্রির সালাত অর্থাৎ তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের রাকআত সংখ্যার ব্যপারে এর চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ হাদীস পৃথিবীতে আর নেই ।

এছাড়া আবু সালামা আয়েশা (রা:) কে রাসূল (স:) এর রমাযান মাসের রাত্রির সালাত সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করেছিলেন । আর তারই জবাবে তিনি ১১ রাকআতের কথা উল্লেখ করেন ।

আরো স্পষ্ট হয় যে, হাদীসটি বর্ননা করেছেন মা আয়েশা (রা:) । আর রাসূল (স:) এর রাত্রিকালিন অবস্থা সম্পর্কে অন্যান্যদের চেয়ে মা আয়েশা (রা:) - ই সবচেয়ে বেশি জানবেন ।

যেমনটি ইবনে হাজার আসকালীন (র:) উক্ত হাদীসের আলোচনায় বলেন, ‘রাসূল (স:) এর রাত্রিকালীন অবস্থা সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে মা আয়েশা (রা:)-ই বেশি জানবেন এটাই স্বাভাবিক’ ।(ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী ৪র্থ খন্ড, হা/২০১৩),,

## ৮ রাকাত তারাবীহ সম্পর্কে জানার জন্য দেখুন,,জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ( রাঃ) থেকে কয়েকটি সুত্রে হাসান সনদে বর্নিত হাদীসটি ( দেখুন ইবনে খুযাইমাহ,মাজমাউয যাওয়ায়েদ,,আওনুল মাবুূদ শরাহ আবু দাউদ,ইত্যাদি)

❒ বিশ্ববিখ্যাত মনীষীদের দৃষ্টিতে তারাবীর রাকআত সংখ্যাঃ-
(১) মুহাদ্দিস আবুল মানছুর আল- জুরী,ইমাম মালেক( রহঃ) থেকে বর্ননা করেন,,তিনি বলেন,,ওমর ইবনুক খাত্বাব( রাঃ) লোকদেরকে যার উপরে একত্রিত করেছিলেন,,আমার নিকট তাই সর্বাধিক পছন্দনীয়, আর তিনি যা চালু করেছিলেন তা ছিলো ১১ রাকাআত,,আর এটাই ছিলো রসুল( সাঃ) এর ছলাত,,অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হলো,,বিতরসহ ১১ রাকাত? তিনি উত্তরে বললেন,হ্যা,,এরপর মুহাদ্দীস আল- জুরী বিস্ময়ের সাথে বলেন,,,আমি অবগত নই যে,,কোথা থেকে ( তার নামে) এর অধিক রাকাআত সংখ্যা আবিষ্কৃত হলো( ছলাতুত তারাবীহ ৭৯ পৃঃ) ইমাম মালেক( রহঃ) বেতের ও তারাবীহ সহ ১১ রাকাতের পক্ষে ছিলেন,, একারনে তিনি তার কিতাব* মুয়াত্তা মালেকে* ওমর( রাঃ) থেকে ১১ রাকাতের হাদীস এনেছেন

(২)মুসলিমের শরাহতে ইমাম নববী( রহঃ) মা আয়েশা( রাঃ) এর হাদীসের উপর লিখেছেন,,এ হাদীস থেকে ও অন্যান্যা যেসব হাদীস এখানে বর্ণিত হয়েছে,,তা থেকে কেরাত ও কিয়াম দীর্ঘ করার দলিল হচ্ছে ইমাম শাফি( রহঃ) ও অন্যান্যাদের,,,তারা দীর্ঘ কেরাত ও দীর্ঘ কিয়ামকে বেশী রাকাতের চেয়ে উত্তম মনে করতেন( ইমাম নববীর মুসলিমের শরাহ,১ম খন্ড)
(৩) শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী ( রহঃ) ৮ রাকাত তারাবীর পক্ষে ছিলেন,,যা তার তারাবীহ সম্পর্কে কিতাব প্রমান বহন করে

(৪) শায়েখ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল উছাইমীন, রাকাআত সংখ্যার ব্যাপারে তিনি বলেন,সমস্ত বক্তব্যের মধ্যে আমি ১১ বা ১৩ রাকাতকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকি( মাজালিসু শাহরী রমাজান( সউদি আরব ওয়াযারাতুশ শুয়ূন আল ইসলামিয়াহ,১৪১৯ হিঃ,১/৩৩ পৃঃ)

❒ প্রখ্যাত হানাফি আলেমদের দৃষ্টিতে তারাবীর রাকআত সংখ্যাঃ-
(১) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী হানাফি,ছহিহ বুখারীর ভাষ্যগন্হ,,ফায়যুল বারীতে বলেন,,,নিশ্চয় তারাবীহর সলাত ১৩ রাকাতের অতিরিক্ত মারফু সুত্রে প্রমানিত হয়নি,,তবে যঈফ সুত্রে আছে,,অর্থাৎ তিনি ১৩ এর অধিক বর্ননাগুলোকে যঈফ বলেছেন( ফাইযুল বারী আলা ছহীহিল বুখারী( দিল্লী রব্বানী বুক ডিপু,,তাবি,২য় খন্ড,পৃঃ৪২০),,তিনি আরো বলেন,,নবী( সাঃ) থেকে ছহিহ সুত্রে ৮ রাকাত প্রমানিত হয়েছে,,আর ২০ রাকাতের সনদ যঈফ প্রমানিত হয়েছে,,বরং তা সর্বসম্মতিত্রুমে যঈফ( আল- আরফুশ শাযী,শরহে বিজামে,তিরমিজী( দেওবন্দ মুখতার এন্ড কোম্পানি,১৯৮৫),১ম খন্ড,পৃঃ ১৬৬,,রমাজান মাসে রাত্রীর ছলাত অনুচ্ছেদ,ছিয়াম অধ্যায়)

(২)উপমহাদেশের খ্যাতনামা হানাফি মনীষী আব্দুল হাই লাখনৌবি, জাবির( রাঃ) থেকে বর্নিত ৮ রাকাআতের হাদীস উদ্ধৃত করার পর দ্বীধাহীনচিত্তে বলেন,মোদ্দাকথা হলো,যদি প্রশ্ন করা হয় রসুল( সাঃ) যে রাতগুলোতে তারাবীহ পড়েছিলেন তা কত রাকাত ছিলো? তাহলে জাবির( রাঃ) কর্তৃত বর্নিত হাদীসের আলোকে এর উত্তর হবে ৮ রাকাত পড়েছিলেন,আর যদি প্রশ্ন করা হয়,,তিনি কি কখনো ২০ রাকআত পড়েছেন,,তাহলে উত্তর হবে হ্যা,,এ মর্মে যঈফ হাদীস রয়েছে( তুহফাতুল আখবার পৃঃ ২৮)

(৩) শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী,,মুয়াত্তা মালেকের ভাষ্য,,আল- মুছাফফা গ্রন্হে ঘোষনা করেন যে,,রসুল( সাঃ) এর আমল দ্বারা তারাবীহর সলাত বিতরসহ ১১ রাকাত প্রমানিত( আল- মুছাফফা শরহে মালেক মুয়াত্তা( ফার্সি),পৃঃ১৭৭)

(৪) আব্দুল হক মুহাদ্দেসী দেহলভী হানাফি বলেন,,রসুল( সাঃ) হতে বিশ রাকাতের কোন ছহিহ হাদীস নেই,,আর তার পক্ষ থেকে ২০ রাকাতের যে বর্ননা রয়েছে তার সনদ যঈফ,,বরং যঈফ হওয়ার ক্ষেত্রে সকল মুহাদ্দিস একমত( ফাৎহু সিররিল মান্নান লি তাঈদে মাযহাবে নুমান পৃঃ ৩২৭)

(৫) ইবনু নুজায়েম হানাফি বলেন,তারাবীহ বেতের ছাড়া ৮ রাকাআত,যা বুখারী ও মুসলিমে মা আয়েশা( রাঃ) এর হাদীসে এসেছে( বাহারুর রায়েক ২য় খন্ড,৭২ পৃঃ)

(৬) ইমাম আহমদ তহাবী হানাফি বলেন,,রসুল( সাঃ) ২০ রাকাত তারাবীহ মোটেও পড়েননি,,পড়েছেন ৮ রাকাআত( হাসিয়া দুররে মুখতার,১ম খন্ড)

(৭) বুখারীর ভাষ্যগন্হ আহমদ আলী সাহারানপুরী হানাফি,,তিনি খোদ বোখারীর হাশিয়ায় বলেন,,রসুল( সাঃ) ১১ রাকাতের বেশী পড়তেন না,( বোখারী হাশিয়ার ১ম খন্ড)

(৮)হেদায়াহ'র ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম,,তারাবীর রাকআত সংখ্যার ব্যাপারে বিশদ আলোচনার পর বলেন,,এ সমস্ত আলোচনা থেকে প্রমানিত হলো যে,,রমজানের রাতের সলাত জামাআতের সাথে বিতরসহ ১১ রাকাত পড়া সুন্নত,,যা স্বয়ং রসুল( সাঃ) আদায় করেছেন( ফাৎহুল কাদীর ১ম খন্ড পৃঃ ৪০৭)

❒  পরিশেষে বলতে চাই আসুন,,রমজান মাসে তারাবীহ সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী বেতেরসহ ১১ রাকাত পড়ার চেষ্টা করি,,এবং যয়ীফ ও জাল হাদীসের উপর আমল থেকে নিজেকে হেফাজত করি,আল্লাহ কবুল করুক,আমিন

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...