Sunday, May 5, 2019

মুয়াবিয়া ও ইবনে আব্বাস রঃ এর হাদিসের বিশ্লেষন


⏩নিজ দেশে চাঁদ দেখে স্বওম ও ঈদ পালন কারীদের যুক্তি খন্ডন-১
.......................................................
#প্রশ্নঃ
কুরাইব (রহঃ) হতে বর্ণিত,
মুয়াবিয়া (রাযিঃ) এর উদ্দেশ্য উম্মুল ফাজল বিনতুল হারিস (রাযিঃ) তাকে শামে প্রেরণ করেন। কুবাইব (রাহঃ) বলেন সিরিয়ায় পৌছানোর পর আমি উম্মুল ফাজলের কাজটি শেষ করলাম। আমি সিরিয়ায় থাকা অবস্থায় রমজান মাসের চাঁদ দেখতে পাওয়া গেল। আমরা জুমুয়ার রাতে(বৃহঃবার) চাঁদ দেখতে পেলাম। রমজান মাসের শেষের দিকে মদিনায় ফিরে আসলাম। ইবনে আব্বাস আমাকে (কুশলাদী) জিজ্ঞাস করার পর চাঁদ দেখার প্রসঙ্গ উল্লেক করে বললেন কোনদিন তোমরা চাঁদ দেখতে পেয়েছিলে.? আমি জুমুয়ার রাতের কথা বললাম। তিনি বললেন জুমুয়ার রাতে তুমি সয়ং চাঁদ দেখতে পেয়েছো.? আমি বললাম লোকেরা দেখতে পেয়েছে ও রোজা রেখেছে।মুয়াবিয়া(রাযিঃ) ও রোজা রেখেছেন। তিনি বললেন আমরা কিন্তু শনিবার(শুক্রবার রাত্রে) চাঁদ দেখেছি। অতএব ত্রিশ দিন পূর্ন না হওয়া পর্যন্ত অথবা চাঁদ না দেখা পর্যন্ত আমরা স্বওম পালন করতে থাকব। আমি বললাম [কুরাইব(রহ) ]মুয়াবিয়া (রাযিঃ) এর স্বওম পালন করা কি আপনার জন্য যতেষ্ট নয়.? তিনি বললেন(ইবনে আব্বাস) না, রাসুল (সাঃ) আমাদের এরুপ করতে নির্দেশ করেছেন।
(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী)
এই হাদিস থেকে বুঝা গেল এক দেশের চাঁদ অন্য দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়....
#উত্তর
#এই ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। ভালভাবে লক্ষ্য করুন,
"আমি কুরাইব (রহঃ) বললাম মুয়াবিয়ার স্বওম পালন করা এবং চাঁদ দেখা কি আপনার জন্য যতেষ্ট নয়.? তিনি বললেন (ইবনে আব্বাস) না রাসুল (সাঃ) আমাদের এরুপ করতেই নির্দেশ দিয়েছেন।"
#হাদিস থেকে দুইটি বিষয় বাহ্যিকভাবে বুঝা যায়ঃ
১/ মুয়াবিয়া (রাযিঃ) এর চাঁদ দেখাকে না মেনে ইবনে আব্বাস(রাযিঃ) বললেন রাসুল (সাঃ) আমাদের এরুপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে কি রাসুল (সাঃ) মুয়াবিয়ার চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন.? নিশ্বই না। মুয়াবিয়া (রাযিঃ) একজন উচু মানের সাহাবী। রাসুল কখনোই এটা বলতে পারেন না।
২/ তাহলে কি ইবনে আব্বাস(রাযিঃ) বুঝিয়েছেন মদীনার বাহির থেকে চাঁদের সংবাদ নিয়ে আসলে সেটা গ্রহন করতে রাসুল(সাঃ) নিষেধ করেছেন.? এমন হওয়াও সম্ভব নয়। কারণ, রাসুল(সাঃ) সয়ং নিজেই মদীনার বাহিরের সংবাদ গ্রহন করেছেন।
আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণিত,
"তিনি বলেন রাসুল(সাঃ) এর সাহাবী আনসার পিতৃব্য আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, একবার শাওয়ালের নতুন চাঁদ আমাদের নিকট গোপন থাকে। আমরা পরের দিন স্বওম পালন করি।এমতাবস্থায়, ঐদিনের শেষ ভাগে একটি কাফেলা নবী (সাঃ) এর কাছে এসে বিগতকাল চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য প্রদান করে। রাসুল (সাঃ) স্বওম ভাঙতে নির্দেশ দিলেন এবং তার পরের দিন স্বালাতের জন্য বের হতে বললেন।"
আবু দাউদ ২৯৩৯,ইবনে মাজাহ ১৬৫৩।
এখন বুঝা গেল ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) রাসুল (সাঃ) এর কোন আদেশের কথা বুঝিয়েছেন তা সুস্পষ্ট নয়। কারণ ইবনে আব্বাস(রাযিঃ) রাসুল (সাঃ) এর হুবহু কথাটি উল্লেক করেন নি। তাই হাদিস থেকে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে রাসুল(সাঃ) এর হাদিস থেকে বুঝা যায় যে রমজানের চাঁদের দুইজন স্বাক্ষি লাগবে। নাসাঈ ২১১৬ নং হাদিস, যা আমরা পূর্বের পোষ্টেই আলোচনা করেছি।
#কুরাইব (রাহঃ) যেহেতু একজন ব্যাক্তি যিনি মদীনায় চাঁদের সংবাদ নিয়ে এসেছিলেন আর রাসুল(সাঃ) চাঁদের স্বাক্ষির জন্য দুইজন শর্ত লাগবে বলেছিলেন। তাই ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) মুয়াবিয়া (রাযিঃ) এর চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য গ্রহন না করে বলেছিলেন "লা হাকাযা আমারনা রাসুলুল্লাহ"। অর্থ না, রাসুল আমাদের এরুপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বুঝিয়েছেন রাসুল (সা) দুইজন স্বাক্ষির স্বাক্ষ্য গ্রহন করতে আদেশ দেন। একজন নয়। যে কারনে উনি কুরাইব (রাহঃ) এর স্বাক্ষ্য মানলেন না।
#আর এইভাবে বুঝ নিলেই এই হাদিস টি বুঝা সম্ভব হবে।
##অতএব এই হাদিসটি কোনভাবেই নিজ দেশের চাঁদ অনুযায়ী স্বওম পালন করার দলিল হতে পারে না।।


⏩নিজ দেশে চাঁদ থেকে স্ওম ও ঈদ পালন করে তাদের যুক্তি খন্ডন-২
................................................

#প্রশ্নঃ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসুল (সাঃ) রমজানের কথা আলোচনা করে বললেন, চাঁদ না দেখে তোমরা স্বওম পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ফিতর(ইদুল ফিতর) উদযাপন করবে না। -বুখারী,মুসলিম, নাসাঈ।
এই হাদিসটি বলেছে যে,আমাদেরকে নতুন চাঁদ দেখে স্বওম ঈদ পালন করতে হবে। এ থেকেই প্রমান হয়ে গেল যে, যার-যার দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী স্বওম ও ঈদ পালন করতে হবে।
#উত্তরঃ
আপনাদের ব্যাখ্যাটি সত্যিই হাস্যকর। কারণ, হাদিসে "তোমরা" শব্দটি আম (সর্বজনিন) শব্দ। আপনারা কিভাবে এই "তোমরা" শব্দটিকে খাস বা নির্দিষ্ট করে যার যার দেশের চাঁদ অনুযায়ী স্বওম ও ঈদ পালনের জন্য ব্যাখ্যা করলেন.?
#এখানে "তোমরা" শব্দটি দ্বারা রাসুল(সাঃ) পুরো মুসলিম জাতিকে সম্বোধন করেছেন। হাদিসটির সঠিক ব্যাখ্যা হবে..
" রাসুল (সাঃ) রমজানের কথা আলোচনা করে বললেন, চাঁদ না দেখে তোমরা (পুরো মুসলিম জাতি) স্বওম পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ফিতর(ইদুল ফিতর) উদযাপন করবে না।"..
#এখন হাদিসে "তোমরা" শব্দটি দ্বারা প্রত্যেক দেশের মুসলিমদের বুঝানো হয়, তাহলে ভাই বলুনতো ১৯৭১ইং সালের পূর্বে যখন আমাদের এই বাংলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন রাসুল (সাঃ) এর "তোমরা" শব্দটি দ্বারা কি পাকিস্তানিদের বুঝানো হয়েছিল.?
এর পূর্বে যখন পাকিস্তান ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন কি "তোমরা" বলতে ভারতবর্ষের মুসলিমদের বুঝানো হয়েছিল.?
ধরুন, কখনো হবিগঞ্জ বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে গেল, তখন কি "তোমরা" বলতে হবিগঞ্জের মুসলিম দের বুঝানো হবে.?
স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যাক্তিই বলবে বিষয়টি হাস্যকর।
অতএব, হাদিসে "তোমরা" শব্দটি আম ভাবে ব্যাবহার হওয়ায় তা পুরো মুসলিম জাতীকেই বুঝানো হয়েছে।
#কোনভাবেই মানুষের তৈরি করা সিমানাকে বুঝানো হবে না।
আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্বই রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
"যদি দুইজন (মুসলিম দের) স্বাক্ষ্য দেয় (নতুন চাঁদ উদয়ের ব্যাপারে) তাহলে তোমরা স্বওম ও ঈদ পালন করো।" নাসাঈ (এই হাদিসটি নিয়ে আমরা পূর্বের পোষ্টেই আলোচনা করেছি)
#এই হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, দুইজন মুসলিম স্বাক্ষ্য দিলেই আমরা ঈদ ও স্বওম পালন করতে পারব। আর কোন অঞ্চলের মুসলিমকে আলাদা ভাবে বলেন নি। বরং আমভাবে যে কোন অঞ্চল থেকে দুইজন মুসলিম নতুন চাঁদ উদয়ের স্বাক্ষ্য দেওয়ার তথ্য পৌছালেই স্বওম ও ঈদ পালন করতে হবে।।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...