Monday, May 13, 2019

০৬ই মে পৃথিবীতে কোথাও রবিবার বা মঙ্গলবার হতে পারে না

২০১৯ সালের "০৬ই মে" পৃথিবীতে কোথাও রবিবার বা মঙ্গলবার হতে পারে না । তেমনি ১৪৪০ হিজরীর "পহেলা রমাদান" পৃথিবীতে কোথাও রবিবার বা মঙ্গলবার হতে পারে না। সারা পৃথিবীতে সোমবার ০৬ই মে । তেমনি সারা পৃথিবীতে সোমবার পহেলা রমজান।

♦♦ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
- ﻳﺴﺌﻠﻮﻧﻚ ﻋﻦ ﺍﻻﻫﻠﺔ ﻗﻞ ﻫﻰ ﻣﻮﺍﻗﻴﺖ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻭﺍﻟﺤﺞ
অর্থাৎ “(হে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারা আপনাকে নতুন চাঁদ সমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন তা মানুষের জন্য সময়ের (তারিখ) নির্দেশক এবং হজ্জের (সময় অর্থাৎ তারিখ নির্ধারণকারী)”। [(সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৯)]

বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় এই আয়াতে “ ﺍﻻﻫﻠﺔ” শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ একেবারে (কয়েক মিনিটের) “নতুন চাঁদ সমূহ”। প্রতি চান্দ্র মাসে চাঁদ একদিনই নতুন থাকে। তারপরের দিনগুলোর চাঁদ কখনো নতুন চাঁদ হতে পারেনা।

এখানে আরো লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, এই আয়াতের মধ্যে “ﻟﻠﻨﺎﺱ ” শব্দের শুরুতে “ﺍﻝ” টি “ ﺍﻟﻒ ﻻﻡ ﺟﻨﺴﻰ ” অর্থাৎ “জাতি বোধক ﺍﻝ” (ইংরেজিতে অর্থ “The” এবং এটা Common Noun) । অতএব “ﻟﻠﻨﺎﺱ ” অর্থ হলো “মানুষের জন্য” বা “মানব জাতির জন্য”। আল্লাহ এখানে কোনো দেশের বর্ডারের ভিতরের মানুষ বলেননি, বরং গোটা “মানবজাতি” বলেছেন।

আর সময় বলে এই আয়াতে তারিখ বুঝানো হয়েছে। তাহলে আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে “পূর্ববর্তী চান্দ্র মাস শেষ হওয়ার পর পুনরায় নতুন করে পৃথিবীর আকাশে সর্বপ্রথম যে চাঁদ দেখা যায়, সেই নতুন চাঁদ বিশ্বের সকল মানুষের জন্যই তারিখ নির্ধারক এবং হজ্জ্বের তারিখ নির্ধারক”।

হজ্জ্বের তারিখ সারা পৃথিবীতে একটাই হয়।

সুতরাং নতুন চাঁদ নির্দেশিত এই নতুন মাসের ১ তারিখ এলাকা, দেশ, মহাদেশের ভিন্নতায় কখনই আলাদা হবে না। কারণ পৃথিবীর আকাশে “নতুন চাঁদ” উদয়ের দিনে সকল এলাকা, দেশ, মহাদেশের বাসিন্দারাই “মানুষ” ছিলেন, আছেন, থাকবেন।

♦♦রাসূল সঃ এর ক্বওলী হাদীস (বাণী):
আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন,
“...যদি (মুসলিমদের) দু’জন স্বাক্ষ্য দেয় যে, তারা (নতুন চাঁদ উদয়ের ব্যাপারে) দেখেছে, তাহলে তোমরা সাওম (রোজা) ও ঈদ পালন কর”। [নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, হাদিস # ২১১৬।]

এখানে রাসূল সঃ দুইজন স্বাক্ষ্যের কথা বলেছেন। রাসূল সঃ বলেননি শুধু মদীনার বর্ডারের ভিতরের দুইজন বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের দু'জন বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের দুইজন। দুইজন বলতে গোটা বিশ্বের যেকোন দুইজন মুসলিম।

আর "তোমরা" বলতে শুধু মদীনার বর্ডারের ভিতরের মানুষ, বা শুধু সৌদির সীমান্তের ভিতরের মানুষ, বা শুধু বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের মানুষকে নির্দিষ্ট করেননি। বরং "তোমরা" বলতে পৃথিবীর সকল মানুষ।

♦♦রাসূল সঃ এর ফে’লী হাদীস (আমল বা কাজ):
হযরত আবু উমাইর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
“রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট একদল আরোহী আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মানুষকে রোযা ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন প্রাতঃকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন”। [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ১১৫৭, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ১১৫৩, নাসায়ী, মিশকাত-১২৭)]

অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের উক্ত পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-
“তারা ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমাবেত হল। আল্লামা মাজহার বলেন যে ঐ বছর মদীনায় ২৯শে রমযান দিবাগত রাতে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মদীনা বাসী ৩০ রমযানের রোযা রেখে ছিলেন। এমতাবস্থায় ঐ দিন দ্বিপ্রহরে একদল ছাওয়ারী দূর থেকে আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, নিশ্চয়ই তারা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নুতন চাঁদ দেখেছে। অতপর, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদের এ সংবাদ গ্রহণ করে সকলকে রোযা ভঙ্গের নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন (২রা শাওয়াল) ঈদের নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন”। (মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৫/১৫৩)]

এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরে গ্রহণযোগ্য বলেই মদীনাবাসী চাঁদ না দেখার পরও রাসূল সঃ অন্য শহর থেকে আসা সংবাদে সিয়াম ভেঙেছেন। আর শুধু দেশের কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবে অথবা বর্ডারের বাইরের চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করা যাবেনা, এ মর্মে কোন আয়াত বা হাদীস নেই।

বৃটিশের দেয়া কাঁটাতারের বেড়ার একপাশে লাইলাতুল ক্বদর একরাতে আর অপর পাশে লাইলাতুল ক্বদর তার পরের রাতে, এটা হতে পারেনা। তেমনি বর্ডারের একপাশে প্রধান শয়তানকে যেদিন বাঁধা হয়, অপরপাশে তার পরের দিন বাঁধা হয়, এটাও হতে পারেনা। তেমনিভাবে সীমান্তের একপাশে যেদিন ঈদ, অন্যপাশে সেদিন রোজা এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।

সুতরাং কেউ পালন করুক আর নাই করুক, ২ জন মুসলিমের সংবাদ পৌঁছালে রোযা ফরজ হবে। যতদূর পৌঁছাবে ততদূর হবে। কেউ পালন করুক আর নাই করুক, ২ জন মুসলিমের চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছালে ঈদের দিন হয়ে যাবে। যতদূর পৌঁছাবে ততদূর হবে।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...