Wednesday, May 8, 2019

মহিলারা কি সলাতের ইমামতি করতে পারবে

প্রশ্নঃ মহিলারা কি সলাতের ইমামতি করতে পারবে?


উত্তরঃ মহিলাদের সলাত ইমামত (صلاة النساء وإمامتهن) :
মহিলার জন্য মহিলাদের ইমামতি করা বৈধ। নাবী সঃ  উম্মু অরাকা (রাযিঃ) কে আদেশ করেন, তিনি যেন তার বাড়ির সদস্যদের ইমামতি করেন। বদর যুদ্ধের সময় উম্মে ওয়ারাক্বাহ (রাঃ)-কে তার পরিবারের ইমামতি করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তার জন্য একজন বৃদ্ধ মুওয়াযযিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। [আবু দাঊদ, সালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ মহিলার ইমামতি,নং ৫৯১-৯২ছহীহ ইবনু খুযায়মা, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ /৩২২; নায়ল /৬৩ ; ইরওয়া হা/৪৯৩, ইবনু খুযায়মা বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন] 

আয়েশা (রাযিঃ) হতে প্রমাণিত,
তিনি মহিলাদের ইমামতি করতেন এবং লাইনের মাঝে দাঁড়াতেন। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক,নং৫০৭৬, দারাকুত্বনী/ বায়হাক্বী]

মা আয়েশা (রাঃ) উম্মে সালামাহ (রাঃ) প্রমুখ মহিলাদের জামাআতে ইমামতি করতেন। [বায়হাক্বী, /৪০৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ /৯১, ১৭৭]

তবে তারা ইমামতির সময় পুরুষের মত লাইন থেকে আগে বেড়ে পৃথক স্থানে দাঁড়াবে না; বরং লাইনের মাঝেই অবস্থান করতঃ ইমামতি করবে। এটা কিছু সাহাবিয়ার আমল দ্বারা প্রমাণিত। [আর রাওদা আন নাদিয়্যাহ, সিদ্দীক হাসান খাঁন,/৩২২]

মহিলাগণ (নিম্নস্বরে) আযান ইক্বামত দিবেন এবং মহিলা জামাআতের প্রথম কাতারের মধ্যস্থলে সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে ইমামতি করবেন। [ভূপালী, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ (ছান, ইয়ামন : ১৪১১/১৯৯১) /৩২২ পৃঃ]

কিন্তু মহিলার জন্য বৈধ নয় যে, তারা পুরুষের ইমামতি করবে। [প্রাগুক্ত,৩১২-৩১৩]
মহিলারা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না। [আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ /৩১২]

কেননা আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল (নিসা /৩৪)

তাছাড়া ব্যাপারে রসূল (সঃ)-এর কোন নির্দেশ নেই এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামের যুগে এর কোন নযীর বা প্রচলন নেই। আর এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, রসূলুল্লহ (সঃ) খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সময় যা দ্বীন ছিল না, পরে তা দ্বীন হিসাবে গৃহীত হবে না। [আহমাদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/১৬৫ ঈমান অধ্যায়-, ‘কিতাব সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরাঅনুচ্ছেদ-]

বিষয়ে নাবী সঃ এর আমল, খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল এবং ধারাবাহিক মুসলিম উম্মার আমলই বড় প্রমাণ, যে তাঁরা কেউ মহিলাকে পুরুষের ইমাম নিযুক্ত করেন নি আর না তাদের যুগে এমন কোন নজীর ছিল।

নাবী সঃ বলেনঃ
‘‘ সম্প্রদায় কখনো সফলকাম হতে পারে না, যারা কোন মহিলাকে তাদের বিষয়াদির নেতা নিযুক্ত করে [বুখারী, অধ্যায়ঃ মাগাযী, নং৪৪২৫]

যেহেতু ইমামতি এক প্রকারের নেতৃত্ব, তাই তাদের পদে নিযুক্ত করা অবৈধ। [দেখুন শারহুল মুমতি,/২২২]

মহিলাদের জন্য বাড়ীতে গৃহকোণে নিভৃতে একাকী বা জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করা উত্তম। [আবুদাঊদ হা/৫৬৭, ৫৭০; মিশকাত হা/১০৬২-৬৩]

হযরত উম্মে হুমাইদ আস সাআদী রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ এর নিকট এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাই। রাসুলুল্লাহ উত্তরে বললেন,

قد علمت أنك تحبين الصلاة معي وصلاتك في بيتك خير لك من صلاتك في حجرتك وصلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك وصلاتك في دارك خير لك من صلاتك في مسجد قومك وصلاتك في مسجد قومك خير لك من صلاتك في مسجدي ، قال : فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها وأظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت الله عز وجل

আমি ভালো করেই জানি, তুমি আমার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে নামাজ আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোনো রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের (এলাকার ) মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের (এলাকার ) মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার পিছনে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয়। এবং মৃত্যু পর্যমত সেখানেই নামাজ আদায় করতে থাকে। (মুসনাদে আহমাদ ৩৭/৪৫)

#মাযহাবের_ইমামদের_মত :
#হানাফি মাযহাবের মত :যদি কোন মহিলা শুধুমাত্র মহিলাদের জামায়াতে কোন নামাজের ইমামতি করে তাহলে সে নামাজ সঠিক হবে । হিদায়া খন্ড : ১ পৃষ্ঠা : ৩০৫ ।বাদাউস সানাইখন্ড ১ পৃষ্ঠা : ১৫৭ ।
# শাফেয়ী মাযহাবের মত :একজন মহিলাশুধুমাত্র মহিলাদের জামায়াতের ইমাম হতে পারবেন । তাদের এভাবে নামাজ পড়া মুস্তাহাব ।আল মুগনি খন্ড : ১২ পৃষ্ঠা : ১৯৯ । বাদাই খন্ড :১, পৃষ্ঠা : ১৫৭ ।
# হান্বালী মাযহাবের মত : মেয়েদের মহিলা ইমামের পেছনে নামাজ পড়া গ্রহণযোগ্য ।আল মুগনি খন্ড : ১২ পৃষ্ঠা : ১৯৯ । শাফেয়ী ও হান্বলী মাযহাবের গবেষকগণ আবুদাউদ শরিফের মহিলা সাহাবী উম্মুওয়ারাকাহ (রা.) উপর ভিত্তি করে তাদের মতপ্রদর্শন করেছেন । তবে উম্মু সালমাহ রা. ও আয়িশা রা. নিয়মিত মহিলাদের নামাজে ইমামতি করতেন ।( মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবাহ খন্ড ২, পৃষ্ঠা৮৮-৮৯ )

১.ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﻭَﺭَﻗَﺔَ ﺑِﻨْﺖِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِﻱِّ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْﻗَﺪْ ﺟَﻤَﻌَﺖِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺪْﺃَﻣَﺮَﻫَﺎ ﺃَﻥْ ﺗَﺆُﻡَّ ﺃَﻫْﻞَ ﺩَﺍﺭِﻫَﺎ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻟَﻬَﺎ ﻣُﺆَﺫِّﻥٌ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺆُﻡُّﺃَﻫْﻞَ ﺩَﺍﺭِﻫَﺎ ‏( ﺣﻢ : ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﺎﺋﻞ : ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲﺇﻣﺎﻣﺔ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ، ﺩ : ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ 500 ) উম্মে ওয়ারাক্বাহ বিনতে আব্দুল্লাহ ইবনিলহারিছ আল-আনসারী, যিনি ক্বুরআন শরীফজমা করেছিলেন/কুরআন শরীফ পড়েছিলেন,নবী করীম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘর বাসীদের নামাজের ইমামতি করার জন্য উম্মেওয়ারাক্বাহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি ঘরবাসীদের নামাজের ইমামতি করতেন৷( দেখুন : ১.মুসনাদুল ক্বাবাইল, বাবু মা জা-আফী ইমামাতিল মারআহ, ২.সুনান আবূ-দাঊদ,কিতাবুস সালাহঃবাবুন ফী জিকরিলজামাআতি ওয়া আহলিহা ওয়া সিফাতিলইমাম৷ ৩.মুসনাদ ইমাম আহমদ)

২. “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মর্মে উম্মে ওয়ারাক্বাহরাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে অনুমতি দিয়েছিলেন যে, আজান ও ইক্বামত দেয়া হবে এবং তিনি (উম্মে ওয়ারাক্বাহ) মহিলাদের নামাজের ইমামতি করবেন (ওয়াতাউম্মা নিসা-আহা)”

৩. আয়িশা (রা.) বর্ণিত, আয়েশা রা. এবং উম্মে সালামাহ মেয়েদের নামাজের জামায়াতে ইমামতি করেছেন এবং এমনকি মেয়েদের ফরজ নামাজে তিনি ইমামতি করেছেন।উৎস: বাইহাকি ৩/১৩১, দারে কুতনী ১/৪০৪,আব্দুর রাজিক ৫০৮৬ ।

৪. ইবনে আবু লায়লা হতে আতা (রা.) বর্ণনা করেন, আয়েশা রা. আযান ও ইকামাত দিতেন এবং মেয়দের নামাজের জামায়াতে ইমামতি করতেন এবং তিনি তাদের মধ্যে একই সারিতে দাড়াতেন । উৎস: ইবনে আবু শায়বাহ ২/৮৯.

৫. লাইস ইবনে আবু সুলাইম হতে আতা (রা.)বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) আযান ও ইকামাতদিতেন এবং মেয়েদের নামাজের জামায়াতে ইমামতি করতেন এবং তিনি তাদের মধ্যে একই সারিতে দাড়াতেন ।উৎস: মুসতাদরাকে হাকিম

৬. আম্মার আদ্দাহ্নি বর্ণিত, হুজাইরাহ্ নামকতার গোত্রীয় মহিলা বলেন, উম্মে সালামাহ(রা.) মহিলাদের নামাজে ইমামতি করার সময়একই সারিতে দাড়াতেন ।আশ্শাফি : ৩১৫, ইবন আবি শাইবাহ : ৮৮/২,আব্দুর রাজিক : ৫০৮২
৭. আব্দুর রাজিক একই হাদিসে বলেন, উম্মে সালামাহ মহিলাদের আসর নামাজ পড়ালেন একই সারিতে দাড়িয়ে

৮.মুহাম্মদ ইবন আল-হুসাইন ইব্রাহিম আন্নাখিহতে বর্ণনা করেন : আয়িশা রা. রমজান মাসে মহিলাদের নামাজে একই সারিতে দাড়িয়ে ইমামতি করতেন ।আদ্দিরাইয়াহ ১/১৬৯

৯. ইবনে আব্বাস বলেন, এক জন মহিলা মহিলাদের জামায়াতে তাদের মাঝে দাড়িয়ে ইমামতি করতে পারে । আব্দুররাজিক ৫০৮৩
এসব হাদিস হতে প্রমাণ হলো :
১.মহিলাদের জামায়াতে একজন মহিলা ইমাম হয়ে নামাজ পড়াবেন ।
২.যখন একজন মহিলা নামাজে অন্য মহিলাদের ইমামতি করবেন তখন তিনি সারির মধ্যে খানে দাঁড়াবেন ।
৩.মহিলাদের মহিলা ইমাম-এর পেছনে নামাজ পড়ার সুন্নত । সুতরাং এভাবে নামাজ পড়ার মধ্য বরকত রয়েছে । মেয়েদের নামাযে মেয়েদের ইমামতি কিছুতেই বিদআত হতে পারে না। 

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...