Wednesday, May 8, 2019

রোজা ঈদ পালন কি লোকাল নাকি গ্লোবাল


রোজা ও ঈদ কিভাবে পালন করবেন
( গ্লোবাল না লোকাল ) ???

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব "ফতহুল বারী" তে আল্লামা ইবনু হাযার আসকালানী(রহঃ) লেখেনঃ
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর বাণী (তোমরা চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সিয়াম রাখবে না) এর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখতে হবে এমন উদ্দেশ্য নেয়া যাবে না। বরং পবিত্র বাণীটির উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু ব্যক্তির চাঁদ দেখা। জমহুর ফকিহগণের মতানুসারে রমযানের চাঁদ একজনের দেখাই যথেষ্ঠ হবে। যা হানাফী ফকিহগণের মত। আর অন্য মতে দুজনের দেখা যথেষ্ঠ হবে। এ মতামত অপরিচ্ছন্ন আকাশের ক্ষেত্রে, কিন্তু যদি আকাশ পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এমন সংখ্যক ব্যক্তির চাঁদ দেখতে হবে যাদের সংখ্যা দ্বারা চাঁদ দেখার সংবাদ প্রমাণিত হবে। যারা এক দেশের দেখা অন্য দেশের জন্য প্রযোজ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন এটা তাদের মত। আর যারা প্রত্যেক দেশের জন্য চাঁদ দেখার মত প্রকাশ করেছেন তারা বলেছেন, "যতক্ষন না তাকে দেখবে" এর মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চলের মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে। যা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের এই মত হাদীসের প্রকাশ্য বক্তব্যের পরিবর্তন ও বিকৃতি। অতএব চাঁদ দেখাকে প্রত্যেক মানুষের সাথে এবং প্রত্যেক দেশের সাথে সীমিত করা যাবে না। (ফাতহুল বারী ফি শরহে সহীহীল বুখারী ৪খন্ড ১২৩পৃঃ)

দ্বিতীয় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমান মুসলিম(রহঃ) তার সহীহ মুসলিম শরীফে। এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুসলিম শরীফের প্রসিদ্ধ ভাষ্যকার ইমাম নবভী(রহঃ) বলেনঃ
"এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা সাওম ছাড়ো ও ঈদ করো।" এর অর্থ হলো কিছু মুসলিমের দেখার মাধ্যমে উদয় প্রমাণিত হওয়া। এ শর্ত করা যাবেনা যে প্রত্যেক মানুষেরই চাঁদ দেখতে হবে। বরং যে কোন দেশের যে কোন দুজন ন্যায় পরায়ন ব্যক্তির দেখাই সকল মানুষের জন্য যথেষ্ঠ হবে। বরং সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে সাওমের ক্ষেত্রে একজন সত্‍ ব্যক্তির দেখাই সকলের আমলের জন্য যথেষ্ঠ। আর অধিকাংশ ফকিহগণের মতে শাওয়ালের নতুন চাঁদ প্রমানের জন্য এক জনের সাক্ষ্য যথেষ্ট হবেনা। (শরহে নববী আলা মুসলিম ৭/১৯০)

জামে তিরমিযী শরীফের মুকাদ্দামায় লেখা হয়েছেঃ
"প্রত্যেক দেশের মানুষ নিজ নিজ দেশের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আমল করবে কিনা এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) থেকে তিনটি মত বর্ণিত হয়েছে। ১. এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে গ্রহণীয় হবে না। ২. এক দেশের চাঁদ অন্য দেশে গ্রহণীয় হবে। ৩. বিশেষ সতর্কতা, যেমন- সাওম রেখে ইবাদতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে গ্রহণীয় হবে, অন্যথায় গ্রহণীয় হবেনা। কিন্তু তিনটি মতের মধ্যে প্রসিদ্ধ হলো ২য়টি এবং এই মতের উপরই হানাফী মাযহাব প্রতিষ্ঠিত।" (তিরমিযী শরীফ মুকাদ্দামা ২২পৃঃ)

সম্মানিত চার ঈমাম, সকল মুজতাহিদ এবং জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের সর্বসম্মত মত হলো, ভৌগলিক কারণে চান্দ্রমাসের ১তারিখের চাঁদ কখনোই প্রথম দিন সারা পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। বরং সমগ্র পৃথিবীতে নতুন চাঁদ দেখা যেতে ২-৩দিন সময় লেগে যায়। এখন প্রশ্ন হলো, প্রথম দিন ভূ-পৃষ্টের যে সব দেশে নতুন চাঁদ দেখা গেল ঐ সব দেশের চান্দ্র মাসে ১তারিখ, আবার ২য় দিন যে সব দেশে চাঁদ দেখা গেল সেসব দেশে নতুন করে ২য় ৬তারিখ, আবার ৩য় দিন যেসব দেশে নতুন চাঁদ দেখা গেল সেসব দেশে নতুন ৩য় ১তারিখ গণনা করা হবে ?? অর্থাত্‍ নতুন চাদ দেখার ভিন্নতায় একই চান্দ্রমাসের ভিন্ন ভিন্ন তিনটি ১তারিখ হবে ?? নাকি প্রথম দিনের দেখার ভিত্তিতেই সমগ্র পৃথিবীতে বিশ্ব জনীন একটি তারিখ গণনা হবে ??

সুতরাং, দলিল ও যুক্তি সাপেক্ষে এটা প্রমাণিত যে রোজা ও ঈদ গ্লোবালই পালন করতে হবে, লোকাল ভাবে পালনের আর সুযোগ এখন আর থাকছে না।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...