Monday, April 22, 2019

আল্লাহর ঊর্ধ্বে (আরশে) থাকাকে অস্বীকারকারীর হুকুম কি?

❒ আল্লাহ তা'আলার ঊর্ধ্বে থাকাকে অস্বীকারকারীর
হুকুম!
.
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত ঐক্যমতে এমনকি সমস্ত
ঐশী ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহ তা'আলা আসমানের ঊর্ধ্বে।
অসংখ্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা এ আকীদাহ সুপ্রমাণিত।
সাহাবী, তাবিয়ী, তাবি-তাবিয়ীসহ সমস্ত সালাফের
এটাই আকীদাহ ছিল। তাদের ইজমা হচ্ছে, কেউ যদি
আল্লাহর ঊর্ধ্বে থাকাকে অস্বীকার করে, সে কাফির
হয়ে যাবে।
.
ইমাম আবূ হানীফাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ﻻ ﺃﻋﺮﻑ ﺭﺑﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﻡ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻓﻘﺪ ﻛﻔﺮ ﻷﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻘﻮﻝ :
‏( ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﺳﺘﻮﻯ ‏) ﻭﻋﺮﺷﻪ ﻓﻮﻕ ﺳﺒﻊ ﺳﻤﺎﻭﺍﺕ ‏( ﻗﻠﺖ ‏) : ﻓﺈﻥ ﻗﺎﻝ :
ﺇﻧﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻭﻟﻜﻨﻪ ﻳﻘﻮﻝ : ﻻ ﺃﺩﺭﻱ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﻡ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻗﺎﻝ : ﻫﻮ
ﻛﺎﻓﺮ ; ﻷﻧﻪ ﺃﻧﻜﺮ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ
যে ব্যক্তি বলে, "আমি জানি না আমার রব আসমানে না
জমীনে", সে কাফির হয়ে গেল। কেননা আল্লাহ তা'আলা
বলেছেন, "রহমান আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন"। তাঁর আরশ
সাত আসমানের উপরে। আবূ মুতী' বলেন, "আমি জিজ্ঞাসা
করলাম, যদি সে ব্যক্তি বলে, "আল্লাহ আরশের উপর
কিন্তু আমি জানি না আরশ আসমানে না জমীনে"। তিনি
বললেন, "সে কাফির। কেননা সে আল্লাহর আসমানে
উপরে থাকাকে অস্বীকার করেছে।"
(আল-ফিকহুল আবসাত, ৮৩-৮৫)
.
ইমাম দারিমী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
ﻭﺑﻜﻔﺮﻫﻢ ﻓﻲ ﺃﻧﻬﻢ ﻻ ﻳﺪﺭﻭﻥ ﺃﻳﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭﻻ ﻳﺼﻔﻮﻧﻪ ﺑﺄﻳﻦ ﻭﻻ ﻳﺜﺒﺘﻮﻥ ﻟﻪ ﻣﻄﻠﻖ
ﺍﻟﻔﻮﻗﻴﺔ ﺍﻟﺜﺎﺑﺘﺔ ﺑﺎﻟﻨﺼﻮﺹ ﺍﻟﺼﺮﻳﺤﺔ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭﺳﻨﺔ ﻧﺒﻴﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ".
তাদেরকেও কাফির বলব এজন্য যে, তারা জানে না
"আল্লাহ কোথায়"; আল্লাহকে "কোথায়" গুণে গুণান্বিত
করে না এবং কুরআনের স্পষ্ট আয়াত এবং রাসূল স. এর
সুন্নাহর মাধ্যমে প্রমাণিত "আল্লাহ সকল দিক থেকে
সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকাকে" সাব্যস্ত করে না।
(নাকযুদ দারিমী, পৃ. ১১০)
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন মুস'আব রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
ﻣﻦ ﺯﻋﻢ ﺃﻧﻚ ﻻ ﺗﺘﻜﻠﻢ ﻭﻻ ﺗﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﻓﻬﻮ ﻛﺎﻓﺮ ﺑﻮﺟﻬﻚ ﻻ ﻳﻌﺮﻓﻚ ، ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻧﻚ
ﻓﻮﻕ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻓﻮﻕ ﺳﺒﻊ ﺳﻤﺎﻭﺍﺕ ﻟﻴﺲ ﻛﻤﺎ ﻳﻘﻮﻝ ﺃﻋﺪﺍﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺰﻧﺎﺩﻗﺔ
যে মনে করে "আল্লাহ, তুমি কথা বলো না, তোমাকে
দেখা যাবে না"—সে তোমাকে অস্বীকারকারী, সে
তোমাকে চিনতে পারেনি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি
সাত আসমানের ঊর্ধ্বে আরশের উপরে। আল্লাহর দুশমন
যিন্দিকরা যেমনটা বলে তুমি তেমন নও।
(আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ, আস-সুন্নাহ, ১৬৮)
.
ইমাম ইবনু খুযাইমাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮ ﺑﺄﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻋﺮﺷﻪ، ﺍﺳﺘﻮﻯ ﻓﻮﻕ ﺳﺒﻊ ﺳﻤﺎﻭﺍﺗﻪ، ﺑﺎﺋﻦ ﻣﻦ ﺧﻠﻘﻪ، ﻓﻬﻮ
ﻛﺎﻓﺮ ﻳﺴﺘﺘﺎﺏ، ﻓﺈﻥ ﺗﺎﺏ ﻭﺇﻻ ﺿﺮﺑﺖ ﻋﻨﻘﻪ، ﻭﺃﻟﻘﻲ ﻋﻠﻰ ﻣﺰﺑﻠﺔ؛ ﻟﺌﻼ ﻳﺘﺄﺫﻯ ﺑﺮﻳﺤﻪ
ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻭﺃﻫﻞ ﺍﻟﺬﻣﺔ )
যে ব্যক্তি স্বীকার করে না "আল্লাহ তা'আলা তাঁর
আরশের উপর, সাত আসমানের ঊর্ধ্বে সমুন্নত হয়েছেন,
মাখলূকের বিপরীতে" —সে কাফির। তাকে তাওবা করতে
বলা হবে। (তাওবা করলে বেঁচে গেল অন্যথায়) তার গর্দান
উড়িয়ে দিয়ে নর্দমায় নিক্ষেপ কর‍তে হবে। যাতে তার
দুর্গন্ধে মুসলিম ও যিম্মীরা কষ্ট না-পায়।
(মুখতাসারুল উলূ, পৃ. ২২৫)
.
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺑﺄﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ ﻣﻌﻠﻮﻡ ﺑﺎﻻﺿﻄﺮﺍﺭ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺇﺟﻤﺎﻉ
ﺳﻠﻒ ﺍﻷﻣﺔ ﺑﻌﺪ ﺗﺪﺑﺮ ﺫﻟﻚ. ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻣﻄﺒﻘﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺗﻜﻔﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﻧﻜﺮ ﺫﻟﻚ .
"আল্লাহ তা'আলা বিশ্বজগতের ঊর্ধ্বে" এটা কুরআন,
সুন্নাহ ও সালাফদের ইজমা নিয়ে গবেষণার পর
স্বতঃসিদ্ধভাবে জানা বিষয়। এ জন্য যে-ব্যক্তি তা
অস্বীকার করে, তাকে কাফির বলার ব্যাপারে
সালাফগণ একমত।
(দারউ তা'আরুযিল আকল ওয়ান নাকল, ৭/২৭)
.
আল্লামাহ ইবনু সাহমান রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
ﻭَﺇِﺫﺍ ﺃﻧﻜﺮ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺼِّﻨْﻒ ﻋﻠﻮ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻬﻢ ﻛﻔﺎﺭ ﻟِﺄَﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻓِﻲ ﺃَﻋﻠَﻰ ﻋﻠﻴﻴﻦ
ﻭَﺃَﻧﻪ ﻳﺪﻋﻰ ﻣﻦ ﺃَﻋﻠَﻰ ﻟَﺎ ﻣﻦ ﺃَﺳْﻔَﻞ ﻭَﻣﻦ ﺯﻋﻢ ﺃَﻥ ﺍﻻﺳْﺘﻮَﺍﺀ ﺑِﻤَﻌْﻨﻰ ﺍﻟِﺎﺳْﺘِﻴﻠَﺎﺀ ﺃَﻭ ﺍﻟْﻘُﺪْﺭَﺓ
ﻋﻠﻰ ﺍﻟْﺄَﺷْﻴَﺎﺀ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﻘﻮﻟﻪ ﺍﻟْﺠَﻬْﻤِﻴﺔ ﻓﻘﺪ ﺟﺤﺪ ﻋﻠﻮ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺧﻠﻘﻪ
এই শ্রেণির লোকেরা যদি "মাখলূকের উপরে আল্লাহর
ঊর্ধ্বে থাকাকে" অস্বীকার করে, তারা কাফির। কেননা
আল্লাহ সর্বোর্ধ্বে। তাঁকে উপরে ডাকতে হয়, নিচে নয়।
যে মনে করে "সমুন্নত হওয়া" মানে "বিজয়ী হওয়া" অথবা
"বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান হওয়া"—যেমনটি জাহমিয়ারা বলে
—সে "মাখলূকের উপর আল্লাহর ঊর্ধ্বে থাকাকে"
অস্বীকার করে ফেলল।
(তাময়ীযুল হক, ১৩৯)
.
আল্লামাহ আব্দুর রহমান বিন হাসান আলুশ শাইখ
আশ'আরীদের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
ﻭﻗﺪ ﺣﻜﻰ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﻴﻢ - ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ - ﻋﻦ ﺧﻤﺴﻤﺎﺋﺔ ﺇﻣﺎﻡ ﻣﻦ ﺃﺋﻤﺔ ﺍﻹﺳﻼﻡ، ﻭﻣﻔﺎﺗﻴﻪ
ﺍﻟﻌﻈﺎﻡ ﺃﻧﻬﻢ ﻛﻔّﺮﻭﺍ ﻣﻦ ﺃﻧﻜﺮ ﺍﻻﺳﺘﻮﺍﺀ، ﻭﺯﻋﻢ ﺃﻧﻪ ﺑﻤﻌﻨﻰ ﺍﻻﺳﺘﻴﻼﺀ، ﻭﻣﻦ ﺟﻤﻠﺘﻬﻢ
ﺇﻣﺎﻣﻚ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ - ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ - ، ﻭﺟﻤﻠﺔ ﻣﻦ ﺃﺷﻴﺎﺧﻪ ﻛﻤﺎﻟﻚ ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻣﻬﺪﻱ
ﻭﺍﻟﺴﻔﻴﺎﻧﻴﻦ، ﻭﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﺃﺑﻮ ﻳﻌﻘﻮﺏ ﺍﻟﺒﻮﻳﻄﻲ ﻭﺍﻟﻤﺰﻧﻲ، ﻭﺑﻌﺪﻫﻢ ﺇﻣﺎﻡ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﺍﺑﻦ
ﺧﺰﻳﻤﺔ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ، ﻭﺍﺑﻦ ﺳﺮﻳﺞ، ﻭﺧﻠﻖ ﻛﺜﻴﺮ .
ইবনুল কাইয়িম রাহি. পাঁচশত মহান ইমামের ব্যাপারে
বলেছেন, "তাঁরা তাদের কাফির বলতেন যারা আল্লাহর
সমুন্নত হওয়াকে অস্বীকার করে এবং মনে করে, সমুন্নত
হওয়া মানে বিজয়ী হওয়া।" তন্মধ্যে রয়েছেন ইমাম
শাফিয়ী, মালিক, আব্দুর রহমান বিন মাহদী, সুফইয়ান
সাওরী, সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ, আবূ ইয়াকুব বুওয়াতী,
মুযানী, ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু সুরাইজ ও আরও অনেকেই।
(মাজমু'আতুর রাসায়িল ওয়াল মাসায়িল, ১/২২১)
.
লেখক: উস্তায আব্দুল্লাহ মাহমুদ।
শিক্ষক, মাদরাসাতুল হাদিস -
নাযিরাবাজার, ঢাকা।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...